তোমাতে রহিব বিলীন পর্ব ৩+৪

#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৩
#নিশাত_জাহান_নিশি

অল্প সময় মৌণ থেকে আমি রুদ্ধশ্বাস ছেড়ে তেজর্শিনী কন্ঠে বললাম,,

“ওকে ওকে, যেতে দিন আমায়। অয়েন্টমেন্ট এনে দিচ্ছি আমি!”

আহনাফ বাঁকা হেসে বিদ্রুপের কন্ঠে বললেন,,

“ওহো, সো স্যাড ফর ইউ মিসেস প্রভা! অবশেষে আপনাকে নাস্তানাবুদ হয়ে এই চাশমিশ আহনাফের শর্তেই রাজি হতে হলো! কেনো যে আগ বাড়িয়ে নাটক টা করতে গেলেন। গড নৌজ!”

ফট করে চোখ জোড়া খুলে আমি আহনাফের দিকে ক্ষিপ্ত দৃষ্টি নিক্ষেপ করলাম। মুহূর্তের মধ্যেই যেনো উনার মুখ থেকে বাঁকা হাসিটা নিশ্চিহ্ন হয়ে গেলো। ভাবশূণ্য ভঙ্গিতে উনি নির্বিকার নিষ্পলক দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন। অদ্ভুত এক মুখ ভঙ্গি নিয়ে উনি অকস্মাৎ একটু একটু করে আমার কপালের দিকে এগিয়ে আসতে আরম্ভ করলেন। খড়তড় ভাবে কপাল কুঁচকে আমি উনার দিকে রাগীতে দৃষ্টিতে চেয়ে আছি। আমার রাগী দৃষ্টিকে সম্পূর্ণ উপেক্ষা করে উনি এক অদ্ভুত ঘোরে ডুবে গেলেন। অকস্মাৎ উনি আমার কপালে লেপ্টে থাকা ঘামে সিক্ত চুল গুলোতে আলতো হাত স্পর্শ করতেই আমি উনাকে জোরচে এক ধাক্কা মেরে দৌঁড়ে ছাদ থেকে প্রস্থান নিচ্ছি আর পিছু ঘুড়ে তেজী কন্ঠে আহনাফকে উদ্দেশ্য করে বলছি,,

“ইউ লুচু আহনাফ শেখ৷ আপনার ক্যারেক্টারে সত্যিই দোষ আছে৷ একলা একা একটা মেয়েকে পেয়ে তার সুযোগ নিতে চাইছিলেন তাই না? ছিঃ ছিঃ ছিঃ আহনাফ! আপনি এতো বেহায়া, নির্লজ্জ? আপনাকে উডবি হাজবেন্ড হিসেবে মানতেই আমার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে!”

বিশ্বাস করুন, ননস্টপ কথা গুলো বলে দম নেওয়ার সময়টা ও পেলাম না, ছাদের দরজার সাথে ধাক্কা খেয়ে ধপাস করে আমি ছাদের মেঝেতে ছিটকে পড়লাম। কোমঁড়ের সমস্ত হাড়, গোড় বোধ হয় ভেঙ্গে চূড়ে গুড় গুড় হয়ে গেছে। কোঁমড়ে হাত রেখেই আমি অসহনীয় ব্যাথায় আহ্ শব্দে আর্তনাদ করতেই আহনাফ তড়িঘড়ি করে ছুটে এলেন আমার কাছে। চোখ বুজে আমি ব্যাথায় আত্নচিৎকার করে চোখের জল ছাড়ছি আর আহনাফকে দোষারোপ করে বলছি,,

“আপনার জন্যই আমাকে পা পিছলে পড়তে হলো মিঃ চাশমিশ আহনাফ! এসবের জন্য আপনি দায়ী। আমার কোঁমড়টা বোধ হয় ভেঙ্গেই গেলো গো! এই লোকটার জন্য আমার কোঁমড়টা ভেঙ্গে গেলো!”

আহনাফ উদ্বিগ্নতায় ভরা মুখভঙ্গি পাল্টে তটস্থ কন্ঠে বললেন,,

“এক্সকিউজ মি! আমি কি তোমাকে বলেছিলাম? দৌঁড়োয় দৌঁড়োয়, আগে পিছে না দেখেই দৌঁড়োয়? নিজের নির্বুদ্ধিতার জন্যই পা পিছলে পড়ে তুমি আঘাত পেয়েছ। ওকে?”

কোনো প্রতিত্তুর না করে আমি বিরামহীনভাবে ফুঁফিয়ে কেঁদে চলছি। যদি কোঁমড়টায় সামান্যতম আঘাত ও পেতাম না? তবে এই চাশমিশ আহনাফকে আজ আমি ছেড়ে কথা বলতাম না। ঠিক মুখে মুখে তর্ক করে যেতাম! কিন্তু আমি তো কোঁমড়টায় সাংঘাতিক আঘাত পেয়েছি। মুখে মুখে তর্ক করব কিভাবে? শক্ত নাকি আছি শরীরে?

আমার কান্নার ঢেউ দেখে আহনাফ তাৎক্ষণিক আমাকে পাজাকোলে তুলে শান্ত কন্ঠে বললেন,,

“হেই প্রভা, ডোন্ট ক্রাই। কিচ্ছু হবে না। কোমঁড়ে সামন্য একটু ব্যাথা পেয়েছ। আই থিংক ব্যাথা যুক্ত জায়গাটায় একটু বরফ ঘঁষলেই ঠিক হয়ে যাবে।”

ব্যাথায় চোখ, মুখ খিঁচে আমি নিরুপায় হয়ে আহনাফের গলায় দুহাত ঝুলিয়ে ফুঁফিয়ে কেঁদে বললাম,,

“আমার কোঁমড়টা হয়তো ভেঙ্গে গেছে আহনাফ। প্লিজ আমাকে ডক্টরের কাছে নিয়ে চলুন।”

আহনাফ সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছেন আর ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে আমায় বলছেন,,

“কোঁমড় ভাঙ্গার মতো কোনো আঘাতই পাও নি তুমি। ডক্টর নয়, তোমাকে আমার রুমেই নিয়ে যাচ্ছি। কান্না থামাও, চুপ থেকে ব্যাথাটা একটু সহ্য করে নাও।”

আহনাফের বুকের পাজরের সাথে একাত্ন হয়ে মিশে আছি আমি। ব্যাথায় যতোটা না ছটফট করছি তার’চে অধিক উনার কম্পায়মান হার্টবিটের স্পন্দনে মুর্ছে যাচ্ছি আমি। দ্রুত বেগে সিঁড়ি বেয়ে নামছেন বলেই কি উনার হার্টবিট এতোটা দ্রুত গতিতে কম্পিত হচ্ছে নাকি আমার ব্যাথায় উনি ও অত্যধিক ব্যথিত হচ্ছেন বলে বুকটা উত্তেজনায় কাঁপছে? যদি ও সঠিক উত্তরটা জানা নেই আমার, তবে এটা জানি, আমার চোখে উনার ক্যারেক্টারে হাজার দোষ থাকলে ও উনি মানুষ হিসেবে ততোটা ও খারাপ নন। উনি যদি সত্যিই খারাপ হতেন তাহলে নিশ্চয়ই এতো অপমান সহ্য করার পরে ও আমাকে সাহায্য করতে ছুটে আসতেন না। উদ্বিগ্ন হয়ে আমাকে কোলে ও তুলে নিতেন না! আমার ব্যাথা উপসম করার জন্য এতোটা ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতেন না। এসব ভাবতে ভাবতেই হঠাৎ চোখ দুটো আমার মিইয়ে এলো। প্রচন্ড ব্যাথায় শরীরটা অসাড় হয়ে এলো। একটু একটু করে আমার মস্তিষ্কের বিকিরণ সমতা লোপের পথে এগিয়ে এলো। যন্ত্রণায় কাতরাতে কাতরাতে এক পর্যায়ে আমি সেন্সলেস হয়ে পড়লাম!

,
,

জানি না এভাবে কতোটা সময় অজ্ঞান ছিলাম আমি। আধ খোলা চোখে নিজেকে আহনাফ শেখের রুমে আবিষ্কার করলাম। কোঁমড়ের যন্ত্রণাটা যেনো অনেকটাই কমে গেছে। ব্যাথা যুক্ত জায়গাটাতে ও আমি নির্দ্বিধায় হাত ছোঁয়াতে পারছি৷ স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে আমি কপাল কুঁচকে পুরো রুমটায় চোখ বুলাতেই রুমের ঠিক ডান পাশের সোফা সেটটায় আহনাফ শেখকে দেখলাম। ল্যাপটপের দিকে ঝুঁকে উনি খুব মনযোগ দিয়ে হয়তোবা অফিসিয়াল কোনো কাজ করছেন। উনার সমস্ত ধ্যান, জ্ঞান জুড়ে শুধু গম্ভীরতা এবং খুব ব্যস্ততা উপলব্ধি করতে পারছি আমি৷ দেয়ালের ডান পাশে লম্বভাবে ডেকোরেট করা নীল রঙ্গের ঝাড়বাতির রোশনাইয়ে আহনাফের শুভ্র মুখের আদলটা ও নীলে নীলে ছেঁয়ে গেছে। কালো চুল গুলো ও গাঢ় নীল রঙ্গে অনেকটা ঝিলমিলিয়ে গ্লো করছে। কেনো জানি না, উনাকে দেখতে ভীষণ স্নিগ্ধ, সুন্দর, অমায়িক লাগছে। চোখ যেনো কিছুতেই সরানো যাচ্ছে না। অপর দিকে, জানালা দিয়ে হুড়মুড়িয়ে প্রবেশ করা রাতের স্নিগ্ধ হিমেল বাতাসটা বরাবরই উনার কপালে লেপ্টে থাকা চুল গুলোকে এলোমেলো করে দিচ্ছে। ভেবেছিলাম উনি বড্ড বেসামাল হয়ে পড়বেন, বিরক্তিতে কপাল কুঁচকাবেন, অবাধ্য চুলদের সাথে উনি ও অবাধ্যতার পরিচয় দিবেন। কিন্তু না, উনি আমার সমস্ত ধারনা গুলোকে পাল্টে দিয়ে কোনো রকম বিরক্তিবোধ ছাড়াই চুল গুলো বেহায়া হাত দিয়ে ডান দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। মানতে হবে, এই লোকটার ভীষণ ধৈর্য্য আছে! আশ্চর্যের বিষয় কি জানেন? এই প্রথম বার আমি উনাকে এতোটা নিঁখুতভাবে লক্ষ্য করছি। অগোচড়ে উনাকে লুকিয়ে দেখতে দেখতে বিরক্তিকর লোকটা ও ভালো লাগার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে! অস্বস্তি বোধ তো মোটে ও হচ্ছে না বরং প্রতিটা মুহূর্তকে আমি ভীষণভাবে এন্জ্ঞয় করছি। কোথাও একটা ভীষণ ভালো লাগা খুঁজে পাচ্ছি!

উনাকে চুপিচুপি দেখার এক পর্যায়ে হঠাৎই উনি ল্যাপটপ থেকে চোখ তুলে ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ উঁচিয়ে আমার দিকে তাকালেন। দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি জিগ্যাসু দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে আছেন। আচ্ছা? এই লোকটা বুঝল কিভাবে? আমি চুপিচুপি উনাকে দেখছি? বুঝার তো কোনো সম্ভাবনা ছিলো না! চোখ তো আর কথা বলতে পারে না… যে চোখের কথা শব্দে আশেপাশের লোকজন চোখ তুলে তাকাবে!

যাই হোক, তড়িঘড়ি করে আমি উনার থেকে চোখ দুটো সরিয়ে চরম বিচলিত হয়ে শোয়া থেকে উঠে বসলাম। শাড়ির আঁচলের দিকটা কোনো রকমে ঠিক করে আমি হুড়মুড়িয়ে বিছানা ছেড়ে দাঁড়াতেই উনি ল্যাপটপটা উচ্চ শব্দে বন্ধ করে বাতাসের বেগে আমার একদম মুখোমুখি এসে দাঁড়ালেন। শুকনো মুখে আমি উনার দিকে চেয়ে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কিকিকি হলো? এএএভাবে পথ আগলে দাঁড়ালেন কেনো?”

আহনাফ চশমাটা খানিক উঁচিয়ে ভাবশূণ্য কন্ঠে বললেন,,

“কারণ, এই রুম থেকে তোমার কোথাও যাওয়া হবে না তাই!”

“মানে কি? আমি বাড়ি যাবো না?”

উনি আশেপাশ তাকিয়ে গাঁ ছাড়া ভাব নিয়ে বললেন,,

“নো। আজ যাওয়া হবে না। বাবা অর্ডার করেছেন, কাল সকালেই তোমরা বাড়ি ফিরবে!”

পরক্ষণে আহনাফ কিছু একটা মনে করে ডেস্কের দু নম্বর ড্রয়ার থেকে একটা অয়েন্টমেন্ট হাতে নিয়ে খুব ব্যস্ত ভঙ্গিতে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। অয়েন্টমেন্টটা আমার দিকে এগিয়ে দিয়ে উনি ভ্রু উঁচিয়ে বললেন,,

“কি ভুলে গেছো শর্তটার কথা? শর্তটা কিন্তু এখনো পুরো হয় নি!”

থতমত খেয়ে আমি নাক, মুখ অসহনীয়ভাবে কুঁচকে মাথায় শয়তানী বুদ্ধি এঁটে কোমঁড়ে হাত দিয়ে ব্যথিত কন্ঠে বললাম,,

“উফফফফ মা, কোঁমড়টা এখনো ব্যাথা করছে! কি অসহ্য এই ব্যাথা!”

আহনাফ ভ্রু যুগল কুঁচকে অবিশ্বাস্য কন্ঠে বললেন,,

“ওহ্ রিয়েলি? এখনো তোমার কোঁমড় ব্যাথা করছে?”

আমি অতিশয় বিপাকে পড়ে অযথাই ডানে, বায়ে মাথা নাঁড়িয়ে হ্যাঁ বোধক সম্মতি জানালাম। আহনাফ আমার মুখের দিকে খানিক ঝুঁকে এসে বাঁকা হেসে বললেন,,

“আসলে আমি বুঝতে পেরেছি, কেনো তোমার কোমঁড়টা আবারো ব্যাথা করছে!”

এই লোক আবার বুঝে গেলো নাকি আমার শয়তানী বুদ্ধি? শঙ্কা ভুলে আমি কম্পিত চোখে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কেকেকেনো?”

“ঐ যে। আবারো আমার উষ্ণ হাতের স্পর্শ পেতে! বরফ এবং নিক্স দুটোই তো আমি ঘঁষে দিয়েছিলাম তাই না?”

চোখ যেনো আমার মুহূর্তের মধ্যেই চড়কগাছ হয়ে গেলো৷ কোঁমড় থেকে হাতটা সরিয়ে আমি চোখে, মুখে বিপুল তেজ ফুটিয়ে আহনাফের পাঞ্জাবির কলার চেপে ধরে বললাম,,

“আপনাকে এই অধিকার কে দিয়েছে হুম? আমার শরীরে স্পর্শ করার অধিকার আপনাকে কে দিয়েছে? আমার অনুমতি ব্যতীত আপনি কোন সাহসে আমার গাঁয়ে টাচ করলেন? বলুন কেনো টাচ করলেন?”

আহনাফ সরল, সোজা এবং সাবলীল কন্ঠে বললেন,

“আমি যদি বলি, তোমার ও কোনো অধিকার নেই ছেলেদের ফিলিংস নিয়ে ছিনিমিনি খেলার, তখন তুমি কি উত্তর দিবে? আছে এর কোনো যুক্তিযুক্ত জবাব তোমার কাছে?”

আহনাফের শার্টের কলারটা ছেড়ে আমি একদম তব্দিত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। উনার এক কথায় আমার বাকশক্তি রুদ্ধ হয়ে সম্পূর্ণ নিস্তব্ধতায় রূপ নিয়েছে। অপমানে, লজ্জায় মাথা কাটা যাচ্ছে আমার। প্রসঙ্গ পাল্টাতে আমি মাথা নিচু করে ভীষণ ইতস্তত বোধ করে বললাম,,

“আআম্মু, আব্বু কোথায়?”

উনি পাঞ্জাবির কলারটা ঠিক করে ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,,

“পাশের রুমে।”

“আম্মু, আব্বু হঠাৎ থেকে গেলেন কেনো? এনগেজমেন্টটা এ বাড়ি থেকে হওয়ার কথা ছিলো আমি মানছি, তবে আজ রাতটা ও কেনো এই বাড়িতে থাকতে হবে? যদি আমি বেশিই অসুস্থ হয়ে থাকতাম তাহলে আম্মু, আব্বু আমাকে জোর করে ডেকে বাড়ি ফিরে গেলো না কেনো?”

আহনাফ সন্দিহান কন্ঠে বললেন,,

“তুমি কি সত্যিই এখনি বাড়ি ফিরতে চাও প্রভা?”

আমি হ্যাঁ সূচক মাথা নাঁড়ালাম। উনি পুনরায় ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“রাত ক’টা বাজছে দেখেছ?”

আগ্রহ নিয়ে আমি দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকাতেই আকস্মিকতায় চোখ দুটো প্রকান্ড করে বললাম,,

“রাত ১২ টা?”

আহনাফ আমার দিকে খানিক ঝুঁকে বাঁকা হেসে বললেন,,

“ইয়েস। রাত ১২ টা। এখন ডিসিশান নাও, কি করবে? এই মধ্য রাতে বাড়ি ফিরে যাবে নাকি এই আহনাফ শেখের সাথে একই রুমে রাত কাটাবে?”

“হোয়াট? আপনার সাথে রাত কাটাবো মানে?”

উনি পাঞ্জাবির কলারটা উঁচিয়ে বিস্তর ভাব নিয়ে বললেন,,

“উডবি হাজবেন্ড হই, ডিমান্ড তো থাকতেই পারে!”

আমি কপাল চাঁপড়ে তেজী কন্ঠে উনাকে উদ্দেশ্য করে বললাম,,

“ইসসস কিছুক্ষন আগে ও আপনাকে কতো মহানটাই না ভাবছিলাম আমি। অথচ আমার সেন্সলেসের সুযোগ নিয়ে আপনি আমার গোপন অঙ্গে তো হাত দিলেনই সাথে এখন পুনরায় নিজের ফর্মে ফিরে এলেন! আচ্ছা? এতোটা অসভ্য, নির্লজ্জ কেনো আপনি? বিয়ে না হতেই উডবি ওয়াইফের সাথে রাত কাটাতে চাইছেন?”

আহনাফ আচমকা আমার কোমড়ের দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“কি করব বলো? যে হারে তুমি নিজের লোভনীয় অঙ্গ প্রতঙ্গ গুলোকে আমার সামনে প্রেজেন্ট করছ। বিশ্বাস করো? না চাইতে ও নজরটা বেসামাল হয়ে ঐ দিকেই চলে যাচ্ছে। ভুলভাল কিছু হওয়ার সম্ভাবনাটা ও অসম্ভব কিছু না।”

ফটাফট আমি উনার থেকে চোখ হাটিয়ে কোঁমড়ের দিকটায় নজর দিতেই দেখলাম কোমঁড় থেকে সম্পূর্ণ শাড়িটা অনেকখানি সরে গেছে। যেকোনো ব্যক্তির এই দিকে নজর পড়বেই। হম্বিতম্বি হয়ে আমি শাড়ি দিয়ে কোঁমড়ের অংশটা ঢেকে আহনাফের দিকে ক্ষিপ্র দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললাম,,

“নজরটা একটু সামলে রাখতে পারেন না? সবদিকেই নজর থাকতে হবে আপনার? বিদেশ থেকে এসব শিখে এসেছেন?”

আহনাফ পাঞ্জাবির হাতা দুটো ফোল্ড করতে করতে বললেন,,

“ধ্যাত, বিদেশে এসব শিখতে হয় নাকি? বিদেশীনিরা এমনিতেই সব খোলসা করে রাখতেন। যাদের ইচ্ছে হতো তারা দেখে নিতো। যদি ও আমি এসব দিকে কখনো নজর দেই নি তেমন। তবে তোমার দিকে নজর পড়ে গেলো! নিষিদ্ধ জিনিসগুলোতে নজর পড়ে বেশি। অদ্ভুত না?”

আমি উনার দিকে তেড়ে এসে উনাকে শাসিয়ে বললাম,,

“আপনি চূড়ান্ত, লুচু টাইপের একটা লোক বুঝেছেন? আপনার সাথে থাকা, আপনাকে বিয়ে করা সত্যি বলছি, সম্ভব না আমার!”

উনি আমার দিকে রুখে এসে দাঁতে দাঁত চেঁপে বললেন,,

“সেবা যত্ন করে সুস্থ করে তুলেছি তো তাই মুখ দিয়ে খুব পটর পটর কথা বের হচ্ছে তাই না? তোমার সাথে থাকা, তোমাকে বিয়ে করার বিন্দুমাএ ইচ্ছে আমার ও নেই বুঝতে পেরেছ? শোধ বুঝো তো শোধ? সেই শোধ নেওয়ার জন্যই আমি তোমাকে বিয়ে করছি। তোমার উপর সামান্যতম দয়া মায়া দেখানোটা ও আমার ঘোর পাপ ছিলো।”

“কে বলেছিলো আপনাকে দয়া মায়া দেখাতে? আমি বলেছিলাম? আমি বলেছিলাম আমাকে কোলে তুলে নিতে? সেবা যত্ন করে সারিয়ে তুলতে?”

ফুসফুসে শ্বাস সঞ্চার করে আমি আহনাফের মুখের কাছে তুড়ি মেরে পুনরায় প্রশ্নবিদ্ধ কন্ঠে বললাম,,

“এক সেকেন্ড, এক সেকেন্ড। আমার উপর আপনার কিসের শোধ হুম? কিসের শোধ? কি করেছি আমি?”

রাগে গজগজ করে আহনাফ উনার চশমাটা চোখ থেকে খুলে বেডের উপর ছুড়ে মারলেন। বেডের কর্ণারে জোরে এক লাথ মেরে উনি চোয়াল শক্ত করে জোরে চেঁচিয়ে বললেন,,

“তোমার উপর মায়া দেখানোটাই আমার সব’চে বড় ভুল ছিলো। আসলে তুমি কারো দয়া, মায়ার যোগ্যই না।”

পরমুহূর্তে উনি রাগটা কিঞ্চিৎ শান্ত করে সামনের চুল খুব জোরালো টেনে আমার দিকে তেজী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললেন,,

“ওকে, কোনো ব্যাপার না। ফিরিয়ে নিচ্ছি আমি সেই দয়া, মায়া। এক্ষনি তোমাকে আবারো আগের জায়গায় নিক্ষেপ করে আসছি!”

কথা গুলো এক নিশ্বাসে বলে উনি দমটা পর্যন্ত নিলেন কিনা সন্দেহ হচ্ছে৷ এক ঝটকায় আমাকে কোলে তুলে রুম থেকে প্রস্থান নিতে উদগ্রীব হয়ে উঠলেন। শুকনো ঢোক গিলে আমি হাত, পা ছুড়াছুড়ি করে অধৈর্য্য কন্ঠে বললাম,,

“আহনাফ ছাড়ুন আমায়। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়? আর এভাবে আমাকে হুটহাট কোলে তুলে নেওয়াটা আপনার কোন অভ্যাস?”

আহনাফ দাঁতে দাঁত চেপে ঘাড়ের রগ গুলো টান টান করে বললেন,,

“যখন বিপদে পড়েছিলে, তখন তো খুব আহনাফ আহনাফ করেছিলে। আহনাফ আমাকে এখানে নিয়ে যান, আহনাফ আমাকে ওখানে নিয়ে যান, আহনাফ আমাকে ডক্টর দেখান, বলে বলে আমার মাথা খেয়ে নিচ্ছিলে। আর এখন? বিপদ থেকে যখন উদ্ধার হয়ে গেলে তখন সামান্য কোলে তোলা নিয়ে খুব অভিযোগ দেখাচ্ছ তাই না? জাস্ট ওয়েট এ্যা মিনিট মিসেস প্রভা। তোমাকে পুনরায় বিপদে ছাড়তে যাচ্ছি আমি। এবার দেখব কে তোমাকে উদ্ধার করে! কার সাহায্য তুমি চাও।”

আমি বিচলিত হয়ে কম্পিত কন্ঠে বললাম,,

“এএএএই। কিকিকি বলছেন আপনি? কোকোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমায়?”

আহনাফ আলুথালু ভাবে হেঁটে খালি চোখে যতোটা ঠাওর করতে পারছেন আমাকে কোলে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলেন! যে স্থানটায় পড়ে আমার কোঁমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম, উনি ঠিক সেই স্থানটায় আমাকে ধপ করে ফেলে ছাদের দরজা টা বাহির থেকে লক করে জল্লাদের মতো চলে গেলেন!
#তোমাতেই_রহিব_বিলীন
#পর্ব_৪
#নিশাত_জাহান_নিশি

আহনাফ আলুথালু ভাবে হেঁটে খালি চোখে যতোটা ঠাওর করতে পারছেন আমাকে কোলে নিয়ে সোজা ছাঁদে চলে এলেন! যে স্থানটায় পড়ে আমার কোঁমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলাম, উনি ঠিক সেই স্থানটায় আমাকে ধপ করে ফেলে ছাদের দরজাটা বাহির থেকে লক করে জল্লাদের মতো প্রস্থান নিলেন!

হতভম্ব হয়ে আমি অস্থির দৃষ্টিতে ছাঁদের দরজার দিকে চেয়ে আছি। যদি ও বিভিন্ন ঝাঁড় বাতির আলোতে পুরো ছাঁদ বাহারী রঙ্গে রঙ্গিন হয়ে আছে। এতো আলোক রশ্মিতে, ভয় পাওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই। তবু ও এতো গভীর রাতে এই খোলা অন্ধকার আকাশের নিচে একলা থাকাটা খুব একটা সাহসের ব্যাপার নয়। দুর্দান্ত ভয় এবং গভীর আতঙ্কের একটা বিষয়। রীতিমতো ছমছমে একটা পরিবেশ বিরাজ করছে সর্বএ। রাতের বৈশিষ্ট্যই যেনো এই ঘোর অন্ধকার এবং ব্যাপক ভয় ভীতির পরিবেশ তৈরী করা। ছাঁদ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে আমি আশেপাশের বৃক্ষরাজির দিকে দৃষ্টিলোকন করতেই মনে হলো গাছের প্রতিটা শাখা, প্রশাখা, পাতার ফাঁক-ফোঁকড় এবং প্রতিটা ঢালের পেছন থেকে কয়েক জোড়া লাল হিংস্র চোখ আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টি নিক্ষেপ করছে। তারা যেনো প্রখরভাবে নাক টেনে তাজা টগবগে রক্তের ঘ্রাণ নিচ্ছে। তাদের প্রতিটা শ্বাস-প্রশ্বাসের শব্দ বোধ হয় আমার কর্ণকুহরে খুব বিশ্রি ভাবে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে। তারা আমাকে সশরীরে ইঙ্গিত দিচ্ছে, একই জায়গায় আর একটুখানি অবস্থান করলেই আমাকে খাবলে খুবলে খেতে তাদের দু মিনিট ও সময় ব্যয় হবে না। তাদের সতর্ক বার্তা পাওয়া মাএই আমার গাঁয়ের প্রতিটা লোমরাশি সূঁচালোভাবে দাঁড়িয়ে পড়ল৷ হিমশীতল বাতাসে সেই লোমরাশি গুলো অনবরত দোল খেয়ে আমার মনে অত্যধিক কাঁপনের সঞ্চার করছিলো। গলাটা শুকিয়ে একদম কাঠ হয়ে আসছে। যদি ও এবার কোঁমড়ে কোনো রকম ব্যাথা পাই নি আমি। কারণ আহনাফ অতোটা নির্মম ভাবে ও আমাকে ফ্লোরে ছুড়ে ফেলেন নি, তা ও আমি আহনাফকে ফাঁসানোর জন্য, উনাকে রাগানোর জন্য বিশেষ করে মনের মধ্যে ঝেঁকে বসা ভয়টা কাটানোর জন্য গলা ছেড়ে অযথাই আর্তনাদ করে বললাম,,

“ইউ জল্লাদ আহনাফ। ইচ্ছে করে দ্বিতীয় বার আমার কোঁমড়টা ভেঙ্গে দিলো। এবার আমার কি হবে? কে আমায় বিয়ে করবে? তখন তো আপনি ও আমাকে বিয়ে করবেন না! বলবেন, মেয়ের খুঁত আছে। এই আহনাফ আপনি শুনতে পাচ্ছেন? প্লিজ দরজাটা খুলে দিন।”

ঐ পাশ থেকে কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে আমি অভিনয় ভুলে ফটাফট বসা থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আশেপাশে তাকাতেই মনে হলো কোনো কালো ছায়া আমার পিছু পিছু হাঁটছে। ঘর্মাক্ত শরীরে রুদ্ধ শ্বাস ছেড়ে আমি দ্রুত পায়ে হেঁটে ছাদের দরজায় খুব জোরে কড়া নেড়ে কাঠ কাঠ গলায় বললাম,,

“এই আহনাফ? কোথায় আপনি? প্লিজ দরজাটা খুলে দিন। আমার ভীষণ ভয় করছে আহনাফ, প্লিজ দরজাটা খুলে দিন।”

এবার ও কোনো প্রতিত্তুর এলো না ঐ পাশ থেকে। ভয়ে আমি অনবরত চোখের জল ছেড়ে কম্পিত কন্ঠে পুনরায় বললাম,,

“আহনাফ প্লিজ দরজাটা খুলুন। আমি আপনার সাথে আর ঝগড়া করব না বলছি তো। আপনার প্রতিটা উপকার স্বীকার করব। প্লিজ আর একটা বার আমাকে সুযোগ দিয়ে দেখুন। এই মুহূর্তে আপনি দরজাটা না খুললে হয়তো আমি আতঙ্কে দম আটকেই মরে যাবো! মনে হচ্ছে কোনো অশুভ, কালো ছায়া আমার আশেপাশে ঘুড়ছে। প্লিজ হেল্প মি আহনাফ, প্লিজ হেল্প মি।”

ইতোমধ্যেই আহনাফ হম্বিতম্বি হয়ে ছাদের দরজা খুলে পেরেশানগ্রস্থ হয়ে আমার মুখোমুখি দাঁড়ালেন। উনাকে দেখা মাএই আমি কাঁদতে কাঁদতে শরীরের বেঁচে থাকা সমস্ত শক্তি দিয়ে উনাকে ঝাপটে ধরে কান্নাজড়িত কন্ঠে বললাম,

“আমার খুব ভয় করছিলো আহনাফ৷ আপনি এতো নির্দয় কেনো বলুন তো? দয়া মায়া নেই আপনার মধ্যে? আমি ঐ সময় কি না কি বলেছি এর জেরে আপনি এতো বড় স্টেপটা নিতে পারলেন? এভাবে একলা একা আমাকে ছাঁদে বন্দি রেখে পারলেন তো আমাকে ছেড়ে চলে যেতে? যদি আমি মরে যেতাম তখন কি হতো বলুন?”

আহনাফের মন একরত্তি ও গলল না। একবারের জন্যে ও উনি আমাকে ঝাপটে ধরে শান্তনা দিলেন না। উল্টে নির্বিকার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে উনি অট্ট হেসে বিদ্রুপের কন্ঠে বললেন,,

“আমার কি মনে হয় জানো প্রভা? আমরা দুজনই একই ক্যাটাগরীর। তুমি যেমন নির্দয়, দয়ামায়াহীনা। তদ্রুপ আমি ও অতোটাই নির্দয় এবং দয়া মায়াহীন! বুঝা পড়াটা ও এবার সমানে সমানে হবে। খেলা জমে জাস্ট ঘি হয়ে যাবে।”

ভয়ের রেশ এখনো কাটে নি আমার। থরথরিয়ে কেঁপে আমি সন্দিহান দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে তাকাতেই ঘর্মাক্ত শরীর নিয়ে মাথা ঘুড়ে আহনাফের বুকে লুটিয়ে পড়লাম। বোধ হয় জ্ঞান হারিয়েছি। এরপর আমার সাথে কি ঘটল, না ঘটল, এর কিছুই স্মরণে নেই আমার। সেই স্মরণ আমার সকাল ঠিক ৮ টায় ফিরল। সম্মতি ফিরে পেতেই আমি আধ খোলা চোখে আশপাশটায় দৃষ্টি বুলাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম। জানালার পর্দা ভেদ করে আসা ঝাঁঝালো রোদের তীর্যক আলোটা আমার আধ খোলা চোখ দুটোকে নাজেহাল করে তুলছিলো রীতিমতো। রোদের তেজী ঝলকানিতে চোখ দুটো সম্পূর্ণ ভাবে তাদের মেলে ধরতে পারছে না। চরম বিরক্তি ভর করল আমার কপালের প্রতিটা ভাঁজে। তড়িঘড়ি করে আমি শোয়া থেকে উঠে চারিদিকে প্রস্ফুটিত দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বুঝতে পারলাম, এটা আপুর রুম! রাতটা তাহলে আমি আপুর সাথেই কাটিয়েছি।

নিশ্চিন্ত হয়ে আমি স্বস্তির শ্বাস ছেড়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়াতেই আপু দ্রুত পায়ে হেঁটে রুমে প্রবেশ করলেন। পিছু ফিরে আমি আপুর দিকে নজর দিতেই আপু মৃদ্যু হেসে আমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে বললেন,,

“গুড মর্ণিং।”

আমি ও মৃদ্যু হেসে বললাম,,

“গুড মর্ণিং।”

“তারপর বল? কাল রাতের ঘুমটা কেমন হয়েছে?”

“ভালো। আহনাফ নিশ্চয়ই আমাকে এই রুমে দিয়ে গেছেন?”

“হুম। রাতে নাকি তুই খুব ভয় পেয়েছিলি?”

“তোমার দেবরের জন্যই তো ভয় পেয়েছিলাম। পুরো জল্লাদ এই চাশমিশ আহনাফ। তোমরা হাতে ধরে আমার জীবনটা নষ্ট করে দিলে আপু। বিশ্বাস করো, উনার সাথে আমার কখনো মনের মিল হবে না। আমরা কখনো সংসার করতে পারব না। অযথাই আমরা একটা অবাঞ্চিত সম্পর্কে জড়িয়ে আছি আপু। যার আদৌতো কোনো নাম নেই।”

আপু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে আমার দিকে চেয়ে গুরুগম্ভীর ভাব নিয়ে বললেন,,

“জানিস? কাল তুই সামান্য কোঁমড়ে ব্যাথা পেয়েছিলি বলে আহনাফ কতোটা উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিলো? আমাদের সবার চে আহনাফ বেশি ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। বরফ থেকে আরম্ভ করে নিক্স পর্যন্ত সে আমার হাতে তুলে দিয়েছিলো। যতক্ষন না আমি বরফ এবং নিক্স ম্যাসাজ করে রুম থেকে বের হচ্ছিলাম, ততক্ষণ পর্যন্ত সে ননস্টপ আমাকে ফোন করে জিগ্যেস করছিলো সব ঠিক আছে কিনা, ডক্টর ডাকতে হবে কিনা, তুই সুস্থ আছিস কিনা? রাতে আমরা সবাই ডিনার করলে ও, আহনাফ তোর জন্য ডিনার করে নি। কারণ তুই ও কাল রাতে কিছু খাস নি তাই। ছাঁদে যখন আবার তুই সেন্সলেস হয়ে পড়েছিলি, আহনাফ পেরেশান হয়ে পুনরায় তোর সেন্স ফেরাতে ব্যস্ত হয়ে পড়েছিলো। তোর সেন্স ফেরার সাথে সাথেই আহনাফ নিশ্চিন্ত হয়ে এরপর তার রুমে ফিরেছিলো। যাওয়ার সময় আমাকে পই পই করে বলে গিয়েছিলো, তোর খেয়াল রাখতে, তোর যত্ন নিতে, একটু নজর রাখতে তোর উপর। আমার দেবর আর যাই হোক প্রভা। অতোটা খারাপ, নির্দয় বা নিচ মন মানসিকতার নয়। বিয়েটা করে দেখ, শান্তিতে থাকবি তুই, আমি গ্যারান্টি দিলাম।”

আমি জিভ কেটে আপন মনে বিড়বিড় করে বললাম,,

“ইসসস গত রাতে তাহলে আমি আহনাফকে ভুল বুঝেছিলাম, উনি আমাকে কোনো রকম ভাবে স্পর্শ করেন নি। উল্টে আমার জন্য উনি টেনশান করছিলেন, আমার কথা ভাবছিলেন, আমাকে সুস্থ করার জন্য উদগ্রীব হয়ে উঠেছিলেন!”

পুনরায় আমি মাথা নত করে মনে হাজারো কুন্ঠা নিয়ে বললাম,,

“আসলে আহনাফ উপরে উপরে যা দেখান, উনি আসলে তা নন। উনার ভালো মানুষির পিছনে আমার জন্য এক রাশ ঘৃণা আর হীনমন্যতা কাজ করছে। যা উনি শুধুমাএ আমার সামনেই প্রকাশ করছেন। যার দরুন আপু উনাকে এতো ভালো ভেবে সাপোর্ট করছেন। আসলে, উনার চোখে আমি খুব খারাপ। কারণ, উনি আমার আসল সত্যিটা জেনে গেছেন! আর বিশেষ করে আমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য উনি বিয়েটা করছেন!”

কিছু সময় পর আপু বিছানা গুছিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিচ্ছেন আর আমাকে উদ্দেশ্য করে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বলছেন,,

“ফ্রেশ হয়ে তাড়াতাড়ি ব্রেকফাস্ট টেবিলে চলে আয়। আম্মু, আব্বু এক্ষনি রওনা দিবেন। তোর ও তো আজ ভার্সিটি আছে।”

আমি গম্ভীর কন্ঠে বললাম,,

“আসছি!”

কিছুক্ষনের মধ্যে ফ্রেশ হয়ে আপুর কাবার্ড থেকে একটা নরমাল ইয়োলো কালার চুড়িদার নামিয়ে আমি পড়নের শাড়িটা পাল্টে সোজা ডাইনিং রুমের দিকে অগ্রসর হলাম। ব্রেকফাস্ট টেবিলে দু পরিবারের সবাই থাকলে ও আহনাফকে কোথাও দেখা যাচ্ছে না। উচাটন চোখ জোড়া উনাকে অনেকক্ষণ যাবত খুঁজে ও ব্যর্থ হলো। হতাশ চোখে আমি ডাইনিং টেবিল ঘেঁষে দাঁড়াতেই ইয়ানাত আঙ্কেল মৃদ্যু হেসে বললেন,,

“গুড মর্নিং প্রভা।”

আমি ও বিনিময়ে মৃদ্যু হেসে বললাম,,

“গুড মর্নিং আঙ্কেল।”

“দাঁড়িয়ে না থেকে বসে পড়ো। অনেক দিন পর আজ আমরা সবাই একসাথে ব্রেকফাস্ট করব।”

“জ্বি আঙ্কেল!”

“আঙ্কেল কেনো? বাবা ডাকতে সংকোচবোধ হচ্ছে?”

আমি ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললাম,,

“না না আঙ্কেল। তেমন কিছু না। আসলে, আমি ভাবছি একেবারে বিয়ের পরই আপনাকে বাবা ডাকব৷ যদি আপনার আপত্তি না থাকে তো!”

আঙ্কেল সাবলীল কন্ঠেই বললেন,,

“কোনো আপত্তি নেই। তোমার ইচ্ছে মতোই সব হবে। এখন বসো। খেয়ে নাও।”

সম্মতি জানিয়ে আমি ইয়ানাত আঙ্কেলের পাশের টেবিলটায় বসে পড়লাম। ইয়ানাত আঙ্কেল ভীষণ শৌখিন মানুষ। সবর্দা উনি নিজেকে নতুন রূপে নতুন পোষাকে প্রেজেন্ট করতে পছন্দ করেন। নিজের সৌন্দর্যের প্রতি এবং নিজ ব্যবহার্য প্রতিটা জিনিসের প্রতি উনার খুব নজর। মানানসইয়ের বিষয়টা উনি খুব ভালো জানেন। যেমন উনি আজ ইন করা ব্লু কালার একটা শার্টের সঙ্গে ব্ল্যাক কালার একটা কোট পড়েছেন, গলায় অবশ্য শার্টের সাথে ম্যাচ করে ব্লু কালার একটা টাই ও পড়েছেন। হাতে ইউনিক ডিজাইনের ব্ল্যাক ওয়াচ। কালো চুল গুলো হালকা লাল রঙ্গে গ্লেইস করছে। কালো দাঁড়িতে ও উনি মেহেন্দি ব্যবহার করেন। যার দরুন দাঁড়ি গুলো ও লাল রঙ্গে সেজে আছে। চুল গুলো এমনভাবে সেট করা মনে হয় যেনো ২৫ বছরের একটা যুবক খুব যত্নশীল ভাবে জেল মেখে তার চুলের যত্ন নিচ্ছে, চুলের সাইন ধরে রাখছে! হয়তো প্রিয়তমাকে পাগল করার জন্য!একটা জিনিস আমি প্রায় অনেকবার লক্ষ্য করেছি, আঙ্কেলের চেহারার গড়নের সাথে আহনাফের চেহারার গড়ন অনেকটাই মিলে যায়। দেখলেই বুঝা যায়, দুজন বাপ ছেলে। আঙ্কেল বোধ হয়, অফিসে যাবেন তাই ফরমাল গেট আপে ব্রেকফাস্ট করতে বসেছেন। খারাপ লাগার একটা কারণ কি জানেন? আঙ্কেলের পাশে আমি আন্টিকে কখনো দেখি নি। তাই খুব অসম্পূর্ণ লাগে উনাকে দেখতে। আপুর বিয়ের প্রায় দু বছর পূর্বেই আন্টি হঠাৎ ঘুমের মধ্যে ব্রেন স্ট্রোক করে মারা যান। তখন থেকেই আঙ্কেল সম্পূর্ণ একা হয়ে যান।

ভাব চিন্তাগুলোকে আপাতত মাথা থেকে ঝেড়ে আমি জেলি মাখানো পাউরুটির পিসে বাইট দিয়ে আপুকে উদ্দেশ্য করে অস্পষ্ট স্বরে বললাম,,

“জিজু কই আপু? খাবেন না উনি?”

আপু রান্না ঘর থেকে ব্যতিব্যস্ত কন্ঠে বললেন,,

“তোর জিজু এবং আহনাফ দুজনই এখনো নাক ডেকে ঘুমুচ্ছেন। অফিসের টাইম হলেই দুজন ছুটোছুটি আরম্ভ করবে। তখন দেখা যাবে না খেয়েই দুজন অফিসে ছুটেছে। প্রতিদিন এসব দেখতে দেখতে আমার অভ্যেস হয়ে গেছে।”

কোনো প্রতিত্তুর না করে আমি নাস্তায় মনযোগ দিলাম। আপু ও আমার পাশে বসে নিশ্চিন্তে চায়ে চুমুক দিলেন। নাস্তা শেষে আঙ্কেল সবার থেকে বিদায় নিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওনা হলেন৷ আম্মু এবং আব্বু নিজেদের রুমে পৌঁছে বাড়ি যাওয়ার জন্য রেডি হতে ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। ডাইনিং টেবিলে আপুর পাশের চেয়ারে বসে আমি ফোনে স্ক্রলিং করছি আর আপুর হাত থেকে রসমালাই খাচ্ছি। ইতোমধ্যেই জিজু ঘুম জড়ানো চোখে হেলেদুলে আহনাফের রুম থেকে বের হচ্ছেন আর আপুকে অস্পষ্ট স্বরে উদ্দেশ্য করে বলছেন,,

“পল্লবী, আহনাফ কফি চাইছে। কফিটা দিয়ে এসো।”

আপু চেয়ার ছেড়ে উঠে জিজুকে উদ্দেশ্যে করে বললেন,,

“দিচ্ছি। তুমি কুইকলি ফ্রেশ হয়ে নাও। টেবিলে নাস্তা সাজানো আছে।”

জিজু আমার দিকে একবার চেয়ে মৃদ্যু হেসে বললেন,,

“কি শালীসাহেবা? ব্রেকফাস্ট কমপ্লিট?”

আমি বাঁকা হেসে বললাম,,

“আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন। আপনার সাথে আরেক দফা খাওয়ার বাকি আছে।”

জিজু হু হা শব্দে হেসে নিজের রুমে প্রবেশ করলেন। মিনিট পনেরোর মধ্যে আপু হন্তদন্ত হয়ে কিচেন রুম থেকে বেরিয়ে ব্ল্যাক কফির মগটা আমার হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,,

“যা৷ কফিটা আহনাফকে দিয়ে আয়।”

আমি বিস্ময় ভরা দৃষ্টিতে আপুর দিকে চেয়ে বললাম,,

“আমি?”

“তুই নয় তো কে? আশেপাশে তুই ছাড়া তো নেই!”

আমি রগচটা ভাব নিয়ে বললাম,,

“আমি পারব না আপু৷ আমাকে দেখলেই উনি অযথা আমার উপর রাগ ঝাড়বেন। তোমার দেবর তুমিই নিয়ে যাও।”

“যেতে বলেছি যা। এতো কথা বাড়াচ্ছিস কেনো?”

আপুর রাগী দৃষ্টির দিকে একবার ভয়াল দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আমি শুকনো ঢোক গিলে কফির মগটা হাতে নিয়ে সোজা আহনাফের রুমের দিকে পা বাড়ালাম। কাঁপা কাঁপা শরীরে আমি দুতলায় আহনাফের বাঁ পাশের রুমের দরজাটার সম্মুখীন হয়ে দাঁড়ালাম। বুকে থু থু ছিটিয়ে আমি ভেজানো দরজাটায় আলতো হাত স্পর্শ করতেই দরজাটা প্রসারিত হলো। অস্থির দৃষ্টিতে আমি পুরো রুমে চোখ বুলাতেই আহনাফকে বেডের পাশে ঠিক আমার বিপরীত মুখি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখলাম। দূর থেকে দেখেই বুঝা যাচ্ছে উনি গলায় টাই বাঁধছেন। ফরমাল গেটাপে হয়তো অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছেন। নিস্তব্ধ ঠোঁটে আমি দ্রুত পা ফেলে কফির মগটা দরজার পাশে থাকা টি টেবিলটার উপর রেখে কোনো রকমে জান নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান নিতেই মনে হলো পেছন থেকে কেউ আমার উড়নাটা শক্ত হাতে আঁকড়ে ধরেছে। ধুকপুক বুকে আমি শুকনো ঢোক গিলে কাঁধে লেগে থাকা অর্ধ উড়নাটায় হাত দিতেই কেউ হেচকা টানে আমার পিঠের অংশটা তার বুকের পাজরে চেঁপে ধরল। আতঙ্কগ্রস্থ হয়ে আমি শুকনো গলায় চোখ দুটো বুজে নিতেই আহনাফ ক্ষীণ কন্ঠে বললেন,,

“চোরের মতো পালিয়ে যাচ্ছিলে কেনো? ছেলেদের মন চুরি করতে করতে চুরির অভ্যেসটা খুব ভালোভাবেই জব্দ হয়ে গেছে না?’

ফট করে চোখ জোড়া খুলে আমি মাথাটা খানিক উপরের দিকে তুলে কটমট দৃষ্টিতে আহনাফের চশমার ফ্রেমের বিপরীতে থাকা শান্ত চোখ গুলোর দিকে তাকিয়ে বললাম,,

“ছেলেরা নিজ থেকে আসে কেনো জব্দ হতে? তারা বুঝতে পারে না? কে ভুল কে সঠিক? দু একদিন একটু মিষ্টি মিষ্টি কথা বললেই তাদের গলে যেতে হবে? অল্প একটু সময়ের মধ্যেই সম্পূর্ণ একটা অপরিচিত মেয়েকে মন দিয়ে দিতে হবে? এতো দুর্বল কেনো তাদের আবেগ? একটু বিবেক খাঁটাতে পারে না?”

আহনাফ তেজী কন্ঠে বললেন,,

“দু দিনের পরিচয়ে কোনো ছেলের পক্ষেই সম্ভব না একটা মেয়েকে মন দেওয়া, তাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবাসা, তার জন্য বাঁচতে শেখা, তার কারণে মরতে শেখা, তার কারণে প্রতিশোধপরায়ন হয়ে উঠা!”

“স্যরি টু সে আহনাফ, আমি কখনো কোনো ছেলের সাথে দুদিনের বেশি যোগাযোগ করি নি, না আমি তাদের বাঁচতে শিখিয়েছি, মরতে শেখিয়েছি। আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে। নয়তো অন্য কারো সাথে আমাকে গুলিয়ে ফেলছেন!”

আহনাফ এক ঝটকায় আমাকে উনার গাঁ থেকে সরিয়ে প্রায় দু ফুট দূরত্বে আমাকে ছিটকে ফেলে চোয়াল শক্ত করে বললেন,,

“আমার গলার স্বরটা ও কি চেইঞ্জ হয়ে গেছে? চিনতে পারছ না তুমি আমার কন্ঠস্বর?”

আমি স্তিমিত দৃষ্টিতে ঘোর কৌতুহল নিয়ে বললাম,,

“কোন কন্ঠ স্বর? কার কন্ঠ স্বর? আপনার কন্ঠস্বর আমি চিনতে পারব না মানে? এসব আপনি কি বলছেন আহনাফ?”

“তুমি শুধু ছলনাময়ী নও প্রভা, তুমি একটা মিথ্যেবাদী ও। খুব ভালো অভিনয় জানো তুমি। কথার জালে তুমি আমাকেই মিথ্যে প্রমাণ করছ? এই আহনাফ শেখকে?”

আহনাফের কথার কোনো আগা মাথা না বুঝে আমি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে আহনাফের দিকে চেয়ে বললাম,,

“আমি কখন কি মিথ্যে বললাম আহনাফ? আমি কোথায় আপনার সাথে ছলনা করলাম? কোথায় আপনাকে কথার জালে ফাঁসালম? প্লিজ আমাকে সবটা খোলসা করে বলুন। সত্যি বলছি, আপনার কথার আগা মাথা আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।”

চশমাটা কিঞ্চিৎ উপরের দিকে টেনে আহনাফ দ্রুত পায়ে আমার দিকে অগ্রসর হয়ে ক্ষিপ্ত কন্ঠে বললেন,,

“এতো আগ্রহ কিসের জানার হুম? এতো আগ্রহ কিসের? সবকিছু তোমার জানতে হবে? জেনে ও তো সব কিছু না জানার অভিনয়টা বেশ ভালোই জানো।”

ফুসফুসে দম সঞ্চার করে উনি পুনরায় বললেন,,

“কোনো ব্যাপার না, বিয়ের পর আপনা আপনিই মুখ থেকে সব কুকীর্তি গড়গড়িয়ে বের করবে। এক আগে কয়েকটা দিন একটু রিপেন্ড করো! একটু ভাবো, একটু দ্বিধা দ্বন্ধে ভুগো!”

কথার বিপরীতে কোনো প্রতিত্তুর করার সুযোগ না দিয়ে আহনাফ টি টেবিলের উপর থেকে কফির মগটা হাতে নিয়ে ভ্রু উঁচিয়ে আমাকে জিগ্যাসু কন্ঠে বললেন,,

“কফিটা কে বানিয়েছে?”

“আপু।”

“তুমি করলে না কেনো?”

আমি উগ্র মেজাজে সোজা, শাপ্টা কন্ঠে বললাম,,

“আপনার বাড়িতে আমি কাজ করতে আসি নি। কারো জন্য কফি বানানোর ঠেকা পড়ে নি আমার।”

দ্রুত পায়ে হেঁটে আহনাফ দক্ষিন দিকের জানালাটা দিয়ে পুরো মগ কফিটা গড়গড়িয়ে নিচে ঢেলে দিলেন। মুহূর্তের মধ্যেই উনি কফি শূণ্য মগটা আমার মুখের সামনে ধরে ঝাঁঝালো কন্ঠে বললেন,,

“আরেক মগ কফি নিয়ে এসো। আর হ্যাঁ, এবার কফিটা তুমি নিজ হাতে বানাবে। ওকে?”

আমি বিপুল রেগে উনার দিকে তেড়ে এসে জিগ্যাসু কন্ঠে বললাম,,

“কফিটা এভাবে নষ্ট করলেন কেনো? কি করেছে কফিটা আপনাকে?”

আমার গাঁয়ের সঙ্গে ঘেঁষে দাঁড়িয়ে উনি তটস্থ কন্ঠে বললেন,

“নতুন করে তুমি কফিটা আবার বানিয়ে আনবে তাই!”

“বিয়ে না করতেই অত্যাচারী স্বামীদের মতো হিংস্র আচরণ করছেন?”

“করছি। সো হোয়াট? তোমাকে কষ্ট দেওয়াটাই আমার মেইন প্রায়েরিটি!”

আমি আঙ্গুল তুলে উনাকে শাসিয়ে বললাম,,

“বিয়েটা ভেঙ্গে দিতে আমার কিন্তু বেশি সময় লাগবে না!”

“ভেঙ্গেই দেখো না! বেশি কিছু না জাস্ট মুখ দিয়ে একবার বলে দেখো- ” আমি বিয়ে ভাঙ্গতে চাই!”

“বলব৷ কি করবেন আপনি?”

“ভাবীকে যদি একবার বলি না? আপনার বোন প্রতিদিন নতুন নতুন ছেলেদের সাথে প্রেমের অভিনয় করে তাদের জীবনটা নরক করে তুলছে, তখন তুমি কি করবে বলো? সবার সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারবে তো?”

থমকালাম আমি। আতঙ্কগ্রস্থ চোখে আহনাফের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করতেই আহনাফ ভ্রু উঁচিয়ে বাঁকা হেসে বললেন,,

“যাও, কফিটা করে আনো!”

আমি পুনরায় এক রোঁখা ভাব নিয়ে বললাম,,

“পারব না আমি। আপনার মেড সার্ভেন্ট হয়ে এই বাড়িতে খাঁটতে আসি নি। কলেজ আছে আমার। কলেজে যেতে হবে।”

আহনাফের অগ্নিঝড়া দৃষ্টিতে জমে থাকা জেদ টুকু ও যেনো আমার নিমিষে গলে একদম বরফ হয়ে গেলো। কম্পিত শরীরে আমি তাড়াহুড়ো করে আহনাফের হাত থেকে কফির মগটা নিয়ে দৌঁড়ে রুম থেকে প্রস্থান নিয়ে বললাম,,

“ইউ ভায়োলেন্ট আহনাফ, আমি আপনাকে মোটে ও ভয় পাই না। মানবিকতার খাতিরে কফিটা বানাতে আমি রাজি হলাম।”

#চলবে….?
#চলবে…?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here