#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২৫
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
বিষন্নকে নিজের দখলে নিলাম।এক হাতে ওড়নাটা ছুড়ে ফেলে দিলাম ফ্লোরে।আজ নিজেকে উৎসর্গ করার রাত।এই রাত সুখময় অনুভূতির রাত।এই মুহুর্ত যেন কখনো শেষ না হয়।
—————–
” শুনলাম ছেলেটার নাকি এক্সিডেন্ট হয়েছে? ”
” হ্যা,নীলুকে দেখে চলে যাওয়ার সময় নাকি একটা ট্রাক ধাক্কা দিয়েছে ”
” বলো কি? ”
” হুম,তবে ঘটনাটা সত্যি না।মিথ্যা বলেছে ওরা ”
” মানে? বুঝলাম না, মিথ্যা কেন বলবে? ”
” খবরটা শুনে আমি ওদের বাড়িতে গিয়েছিলাম গাড়িটা দেখতে।গিয়ে দেখি ড্রাইভার একটা লাল গাড়ি দেখিয়ে বললো এই গাড়িটায় নাকি এ’ক্সি’ডে’ন্ট হইছে ”
” কেন গাড়িতে কি ভাঙ্গাচোরা কিছু ছিলো না? ”
” ছিলো।সামনের পুরোটাই উড়ে গেছে ”
” তাহলে তো সত্যি সত্যিই এ’ক্সি’ডে’ন্ট হইছে ”
” ওরা কালো একটা গাড়িতে করে এসছিলো ”
” তুমি গাড়িও চিনে রেখেছিলে? ”
বিষন্নের বাবা আর কিছু বললেন না।তার মতে তার স্ত্রী অতি বোকা টাইপের একজন মহিলা।কাজেই তার সাথে এই বিষয়ে কথা বলার কোনো মানেই হয় না।এই মহিলাস্বামী সন্তানকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই পারে না।তিনি হাতে সিগারেট নিয়ে ছাঁদের দিকে গেলেন।ইদানিং রাতে ছাঁদে যেতে তার ভিষণ ভালোলাগে।প্রচুর বৃষ্টি হচ্ছে, তবুও তিনি ঘর থেকে বেড় হলেন।দোগলা বেয়ে ছাঁদের কাছে যেতে লাগলেন।
————
বিষন্নকে জরিয়ে ধরে দাড়িয়ে আছে মিষ্টি।তারা দু’জনে মিলেমিশে এক হয়েছে।বিষন্ন আলতো একটা চু’মু একে দিলো মিষ্টির কপালে।মিষ্টিও লজ্জায় নুইয়ে পড়লো বিষন্নর বু’কে গাল থেকে হাতটা সরিয়ে কো’ম’ড়ে রাখতেই মিষ্টি একটু কেঁপে উঠলো।শক্ত করে চোখ বন্ধ করে রইলো।কো’ম’ড়ে হাত চেপে ধরে মিষ্টির ঘাড়ে নাক ডুবিয়ে দিলো বিষন্ন।প্রতিটি স্পর্শে মিষ্টির সারা শরীর শিউরে উঠছে।ওদের দুজনে মধ্যেই এক চাহিদার সৃষ্টি করছে।যেটা অবজ্ঞা করার সাধ্য হয়তো ওদের নেই।এই নেশা হাজার হাজার বছর ধরে নর-নারীর সঙ্গি হয়ে আসছে।
————–
ছাঁদে ওঠার দরজাটায় হাত দিতেই দরজাটা খুলে গেলো।বিষন্নর বাবা মনে মনে ভিষণ রেগে গেলেন।এই বাড়ির সবাই এতো কেয়ারলেস কেন? ছাঁদের দরজাটা যল লাগিয়ে দিবে সেটারও মানুষ নেই।প্রচন্ড বিরক্তি নিয়ে তিনি হাতে থাকা সিগারেটটা ধরালেন।ধোঁয়া ছাড়তেই ছাঁদে কোনে কিছু একটার ছায়া দেখতে পেলেন।সামনের বিল্ডিংগুলোর আলোয় আবছা আবছা ছায়া বোঝা যাচ্ছে।চোখের ভুল হবে হয়তো, এই ভেবে ছাঁদে নামলেন।মুহুর্তেই বৃষ্টিতে তার শরীর ভিজে গেলো।তিনি এগিয়ে যাচ্ছেন সেই ছায়ার দিকে।আরেকটু কাছে আসতেই তার নজরে পড়লো দু’জন মানুষ। আর একটু সামনে যেতেই পায়ে একটা দড়ির মতো আটকে গেলো।হাতে নিয়ে বুঝতে পারলেন এটা ওড়না।ওড়না হাতে নিয়েই তিনি বললেন
” কে? কে ওখানে? ”
—————
হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে জুনায়েদ। তার মাথায় ব্যা’ন্ডে’জ প্যাচানো।একটা মেয়েলি কন্ঠে সে চোখ তুলে পাশে তাকালো।মৃদু স্বরে বললো
” পরী তুই,,এতোরাতে এইখানে? ”
” হ ভাইজান।আপনে কেমন আছেন? ”
” ভালো।তুই যা এখান থেকে।বাবা হঠাৎ চলে আসবে। তোকে দেখলে সমস্যায় পড়ে যাবো ”
” ভাইজান আমি একখান কথা কইবার জন্য আসছি ”
” কি কথা ”
” আপনে বলছিলেন না যে ওই বাড়ির সব ঘটনা যেন আপনেরে জানাই।মিষ্টি আপা কি করে,কই যায় সবকিছু ”
” হ্যা,তো? ”
” ভাইজান আমি তো আপনের সব কথাই শুনছি”
” এতো না পেঁচিয়ে সোজাসাপটা কথা বল,কি টাকা লাগবে? ”
” না ভাইজান।আসলে..আসলে ”
” এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন, তাড়াতাড়ি বলে বিদেয় হয়ে যা ”
” বিষন্ন ভাইজানরে আমার অনেক ভাল্লাগে,ওনারে বিয়ে করবার চাই ”
” একটা লা”থি দিয়ে চেয়ার থেকে ফালায় দিবো বে’শ্যা’র বাচ্চা, ”
” ভাইজান এমনে কেন বলতাছেন, ভালোবাসা তো অপরাধ না ”
” তুই আমার সামনে থেকে সর,নইলে কিন্তু…”
পরী আর কিছু না বলে কেবিন থেকে বেড় হয়ে গেলো।কিছুক্ষণপর জুনায়েদের বাবা কেবিনে এসে বসলেন।গম্ভীর স্বরে বললেন
” কার এতো বড় সাহস, আমার ছেলেকে এইভাবে মা’রে ”
” বাবা আমি জানি ”
” কে? কে সে? শুধু নাম বল,দেখ ওর কি অবস্থা করি ”
” বিষন্ন,নীলুর ছোট ভাই ”
” যে মেয়েকে দেখতে গেলাম তোর জন্য,তার ছোট ভাই? ”
” হ্যা ”
” তুই কিভাবে বুঝলি? ওদের নাকি মুখ ঢাকা ছিলো? ”
” হ্যা,মা’রার আগে ছেলেটা বলছিলো যে মিষ্টির দিকে চোখ দেওয়ার সাহস হয় কি করে আমার,”
” মিষ্টি কে? ”
” তুমি চিনবে না। তোমায় কিছু করতে হবে না বাবা,যা করার আমিই করবো ”
একটা ইম্পরটেন্ট কল আসায় জুনায়েদের বাবা চলে গেলেন।জুনায়েদ বিড়বিড় করে বললো ” বিষন্ন,তুই জানিস না কার লেজে পা দিয়েছিস।আমার জীবন তুই শেষ করে দিলি।তুই শেষ, শেষ ”
—————
বিষন্ন বুঝতে পারলো এটা তার বাবার স্বর।মিষ্টিও ইতোমধ্যে বুঝে ফেলেছে।মুহুর্তেই বু’কের ভেতরে ছ্যাত করে উঠলো।সবকিছু শূন্য হয়ে যাচ্ছে দু’জনের।আবারো একটা স্বর ভেসে এলো
” কি হলো কে ওখানে? কথা বলে না কেন? ”
আমি বুঝতে পারছি না কি বলবো।মিষ্টি ভয়ে বড় বড় চোখ করে ঘনঘন শ্বাস নিচ্ছে।এই অবস্থায় যদি বাবা আমাদের দেখে ফলে তাহলে তো, নাহ আর কিচ্ছু ভাবতে পারছি না।তবে যা হবার হবে,সত্যিটাতো একদিন সামনে আসতোই।বাবা ইতোমধ্যে কাছে চলে এলেন।আমায় আর মিষ্টিকে এই অবস্থায় দেখে তিনি গম্ভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে।আমি বুঝত পারছি না এখন আমার কি করা উচিৎ বা বলা উচিৎ।
চলবে?#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ২৬
#জয়ন্ত_কুমার_জয়
আমাকে আর মিষ্টিকে এই অবস্থায় দেখে বাবা গম্ভীর দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন আমার দিকে।আমি বুঝতে পারছি না এখন আমার কি করা উচিৎ বা বলা উচিৎ।মিষ্টির দিকে তাকালাম,আবছা আলোয় ভয়ার্ত মুখে দারিয়ে আছে।
বাবা কিছু বললেন না,পেছন ফিরে ছাঁদ থেকে নেমে গেলেন।তার এরকম মৌনতা ভয়াবহ।বাবা চলে যেতেই মিষ্টি ধপ করে বসে পড়লো।মিষ্টির কাঁ’ধে হাত রেখে বললাম
” কান্না করছো কেন? আর এতো ভয় কেন পাচ্ছো,আমরা একে অপরকে ভালোবাসি এটাতো একদিন সবাই জানতোই, তাই না? ”
মিষ্টি কিছু বলছে না,শুধু দুহাতে মুখ চেপে কান্না করছে।ওর হাতে হাত রেখে বললাম
” এই মিষ্টি,আমার দিকে তাকাও ”
মিষ্টি তাকালো।আমি স্বাভাবিকভাবে বললাম
” কান্না থামাও না,প্লিজ ”
” সব দোষ আমার,আমার জন্যই এরকম বাজে একটা ঘটনা ঘটলো ” বলে মিষ্টি আবারো কান্নায় ভেঙ্গে পড়লো।
” কিসব ভাবছো তুমি।এরকম পাগলামি করবা না,তোমার দোষ মানে কি হ্যা? আর আমার মনে হয় সত্যিটা সবার জানা দরকার,আর সে সময়টা এসে গেছে ”
মিষ্টি রেগে কঠিন স্বরে বললো ” মাথা ঠিক আছে তোর? কিসের সত্যি? কি বলবি সবাই কে? ”
” এটাই যে আমি তোমাকে ভালোবাসি,আর তুমিও আমায় ভালোবাসো,”
” সবটা তোর কাছে কি এতো সহজ লাগছে?দুই বছরের সিনিয়র একটা মেয়েকে ভালোবাসি বলবি আর সবাই মেনে নিবে?আঙ্কেল আন্টি কি মনে করবে?আমায় কত বিশ্বাস করতো।আমি কিভাবে পারলাম তাদের বিশ্বাসের সুযোগ নিতে ”
” না মানলে কি হবে?বাসা থেকে বেড় করে দিবে তাই তো?তোমার সাথে তোমার হোস্টেলে থাকবো সমস্যা কোথায়? ”
মিষ্টি হতভম্ব হয়ে তাকালো আমার দিকে।ওর হাত ধরে টেনে ছাঁদ থেকে সোজা চলে আসলাম বাবার রুমের সামনে।বু’ক খুব দ্রুত ওঠানামা করছে,জানিনা কি আছে কপালে।দরজায় টোকা দিতেই মা দরজা খুলে দিলো,তার চোখে জল,চাহনিতে রাগ,ঘৃণা।দরজা খুলে দিয়েই মা বিছানায় বসলেন।বাবা সিগারেট মুখে চোখ বন্ধ করে চেয়ারে বসে আছেন।বাবা কি মাকে সবটা বলে দিছে? বললেও কি বলছে? ” তোমার ছেলে ছাদে মিষ্টির সাথে রোমান্স করছে “এরকম কিছু বলেছে হয়তো।মিষ্টি আমার টি-শার্ট শক্ত করে টে’নে ধরে দারিয়ে আছে,ওর চোখে ভয়ঙ্কর ভয় খেলা করছে।ভয়ে ভয়ে বললাম
” বাবা ”
বাবা কিছু বললেন না।তবে তার কপাল কুচকে গেলো।আবারো বললাম
” বাবা আমি কিছু বলতে চাই ”
মা ভয়ঙ্কর চিৎকার করে বললো ” কি বলবি তুই? লজ্জা করছে না? ”
” মা আমার কথা তো শুনো ”
বাবা সিগারেট মুখেই বললেন ” বল কি বলবি ”
” বাবা আমি মিষ্টিকে…. মানে…. ”
কিছু বলতে পারলাম না,বারবার কথা আটকে যাচ্ছে।মিষ্টিকে ভালোবাসি কথাটা বলবো তার আগেই মা সজোরে আমার গালে চ’ড় বসিয়ে দিলেন।হাতে হাত রেখে দাড়িয়ে রইলাম।মিষ্টির কাছে গিয়ে মা বললো
” তুই এরকম একটা কাজ করতে পারলি?তোকে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্নে বড় করলাম।বিষন্নর কি এমন বয়স? ও নাহয় ভুল করেছে, কিন্তু তুই কিভাবে করলি এটা? ”
” আন্টি ”
” চুপ,একদম চুপ।কিচ্ছু বলবি না তুই।এই বাড়ি তোর জন্য চিরদিনের জন্য বন্ধ ”
কথা শেষ হতেই মা মিষ্টির হাত ধরে রুম থেকে বেড় হয়ে গেলেন।পেছন পেছন আমিও গেলাম।মিষ্টিকে দরজার বাহিরে রেখে করে দরজা বন্ধ করে পেছন ফিরতেই মাকে বললাম
” মা তুমি কি করছো,আমাদের কথা বলার একটা সুযোগ তো দিবে ”
” ওই মেয়ের সাথে কোনো যোগাযোগ রাখবি না ”
” তাহলে আমিও এই বাড়িতে থাকবো না মা ”
কথাটা বলার সাথে সাথে আমাকে দরজার বাহিরে রেখে মা দরজা বন্ধ করে দিলো।
বৃষ্টি আরো বেড়েছে,তার সঙ্গে যোগ হয়েছে হিমেল বাতাস।রাস্তায় গুটিসুটি মেরে আমরা দু’জন হাটছি।পাশেই একটা দোকান দেখে সেখানে চলে গেলাম।দোকান বন্ধ। বন্ধ দোকানের বারান্দায় মিষ্টি আর আমি দারিয়ে আছি।ল্যাম্পোষ্টের হলুদ আলো পড়ছে পায়ে।মিষ্টি থরথর করে কাঁপছে।আমারো খুব শীত লাগছে।মিষ্টি ঠান্ডায় কাঁপা গলায় বললো
” তুই বেড় হয়ে আসলি কেন? ”
” বেড় হইনি,শুধু বললাম আমিও তাহলে এই বাড়িতে থাকবো না।তারপর মা নিজেই বেড় করে দিছে ”
মিষ্টি ফ্যালফ্যাল করে আমার দিকে তাকালো।কঠিনভাবে বললো ” তারমানে আমার জন্য তুই বেড় হয়ে আসিস নি? আন্টি বেড় করে দিছে জন্য বেড় হয়েছিস? তাছাড়া আসতি না? ভালো, খুব ভালো ”
মিষ্টিকে রাগাতে বরাবরই আমার ভিষণ ভালোলাগে।সুযোগ পেলেই এই রাগি মুখটা দেখার জন্য ওকে রাগিয়ে দেই।ওর একটু কাছে দারিয়ে বললাম
” শীত করছে তোমার?”
মিষ্টি সরে দাড়ালো।কিছু বললো না।আমি আবারো ওর কাছাকাছি দাড়ালাম।ও সরে যেতে চাইলে কো’মড় চেপে ধরে নিজের কাছে টানলাম।
” আয়নায় নিজের চেহারা কখনো দেখছো? রাগলে তোমায় যে কত্তো সুন্দর লাগে সেটা যদি দেখতা তাহলে সবসময় রাগি চেহারায় থাকতা ”
” তুই বাড়িতে চল,আমি আঙ্কেল আন্টির পা ধরে মাফ চেয়ে বলবো সব দোষ আমার,তোর কোনো দোষ নেই ”
” আর আমি যে তোমার জন্য বাড়ি থেকে বেড় হয়ে আসলাম ”
” মিথ্যা বলবি না একদম,তুই বেড় হইতি না,আন্টি বেড় করে দিছে জন্য বেড় হইছিস ”
” মা বেড় করে না দিলেও ঠিকি হতাম,হুহ ”
” মেয়েদের মতো উকুন কেন মারতেছিস ”
” এতো কথা বলো কেন তুমি? এখন তো আমরা একসাথে থাকবো, এতে খুশি হওনি নাকি? ”
” অতিরিক্ত টেনশনে আমি বেশি কথা বলি।আর বারবার যে বলছিস আমার সাথে থাকবি, তোর কাছে কি এটা স্বাভাবিক মনে হচ্ছে? ”
” হ্যা, স্বাভাবিক ই তো,”
” তা আমার সাথে থাকবি কোথায়? গার্লস হোস্টেলে? ”
” ওখানে কেন থাকবো,দুজনে মিলে একটা বাসা ভাড়া নিবো,”
” আহারে,কত্তো শখ! আমি কি তোর বিয়ে করা বউ নাকি?যে বাসা ভাড়া নিয়ে থাকবি?আচ্ছা থাকবি ভালো কথা,টাকা পাবি কোথায়?”
” বাবার কার্ড আছে না,আর আমার নামে ব্যাংকে একাউন্ট ও খোলা আছে, ”
” তোর মাথা পুরা গেছে ”
” এখন এসব বাদ দাও, রাতটা কি এখানেই পার করবো? ”
” সেটাই ভাবছি,আমার হোস্টেল তো এখানেই।তুই তোর বন্ধুদের ফোন করে বল আজ রাতটা ওদের বাসায় থাকবি ”
মিষ্টিকে হোস্টেলের সামন পর্যন্ত রেখে আসলাম।এখন যাচ্ছি সাকিবের মেসে।মিষ্টিকে হোস্টেলে নিয়ে আসার পথে আমাদের অনেক কথা হলো।এরমধ্যে মিষ্টি বাড়িতে ফিরে যেতে বললো
” বিষন্ন তুই যেটা করছিস সেটা ঠিক হচ্ছে না,বিষয়টা আরো জোড়ালো হয়ে যাচ্ছে,প্লিজ তুই বাড়িতে ফিরে যা ”
” কখনোই না ”
” কেন জাবি না? ”
আমি জানি মিষ্টি চাইছে এর উত্তরে আমার থেকে রোমান্টিক কোনো উত্তর পেতে,যেমন ওকে ছাড়া আমি ওই বাড়িতে যাবো না,অথবা যাই হয়ে যাক না কেন ওকে কিছুতেই একা রেখে লে যাবো না।কিন্তু আমি এরকম কিছু বললাম না।উত্তরে বললাম
” এমন একটা ঘটনার পর বাবা মায়ের সামনে দাড়াতেই তো আমার লজ্জা করবে, এর থেকে কিছুদিন পরে যাবো তাহলে লজ্জাটা আর থাকবে না ”
মিষ্টি মুখ ভোতা করে গাল ফুলিয়ে আবারো হাটা নিলো, পেছন পেছন হাটছি আমি।হাহাহা,এই মেয়েটাকে রাগাতে এতো কেন ভালোলাগে?
মেসের সামনে এসে সাকিনকে ফোন দিলাম কিন্তু ফোন বন্ধ। নিরুপায় হয়ে দেয়াল টপকে মেসের ভেতর ঢুকলাম।মনে মনে ভাবছিলাম কেউ যেন চোর ভেবে আবার না পেটায়। সাকিবের রুমের দরজায় কড়া নাড়তেই সাকিব দরজা খুলে দিলো।
” কিরে ফোন বন্ধ কেন ”
” কারেন্ট তো নাই,ফোন চার্জেও দিতে পারিনি,ভেতরে আয় ”
রুমের ভেতরে ঢুকলাম।টাওয়েলটা এগিয়ে দিয়ে সাকিব বললো
” রাত বাজে তিনটা,এতো রাতে তুই বাড়ি থেকে বেড় হইলি, তাও এই বৃষ্টিতে?কারনটা কি? আন্টি কিছু বলছে নাকি? ”
” বলার জন্যই তো এসছি,এখন এক কাজ কর,তোর টি-শার্ট আর ট্রাউজার দে,”
” ট্রাউজার তো নাই,লুঙ্গি ছাড়া সবকিছু ছাদে ভিজতেছে,বিকেলে আনার কথা মনে নাই ”
” মানে কি? লুঙ্গি পড়ে ঘুমাবো নাকি?মাথা খারাপ তোর? ঘুমালে আমার ট্রাউজার’ই ঠিক থাকে না।লুঙ্গি পড়লে তো লুঙ্গি সরে গিয়ে তো সূর্য মামা দেখা দিবে ”
” সেটারো ব্যাবস্থা আছে,পায়ের কাছে লুঙ্গিরে গিট্টু মেরে রাখলে আর তোর সুর্য মামা বেড় হওয়ার কোনো চান্স’ই থাকবে না ”
বিকল্প কিছু না পেয়ে লুঙ্গি পড়েই একটা বেডে চাপাচাপি করে সাকিবের সাথে শুয়ে পড়লাম।সব ঘটনা ওকে বললাম।বলার মাঝে ও এমন কিছু অদ্ভুত প্রশ্ন করলো যে মনে হচ্ছিল লাথি মেরে ফেলে দেই,যেমন ” ছাঁদে কি শুধুই চুমু না আরো গভীরে গেছিলি? ” তারপর ” দোকানের বারান্দায় কি শুধু দাড়িয়েই ছিলি? “।
ঘটনা বলা শেষে সাকিবকে বললাম ” খাওয়ার কিছু আছে ? পে’ট ঘুটুর মুটুর করতেছে ”
” মুড়ি খাবি? ”
” চা থাকলে মুড়ি খাওয়া যেতে পারে ? ”
” হ্যা চা হবে,,কালকে টি-ব্যাগ কিনছি,”
মুড়ি খাওয়া শেষে ফোনটা হাতে নিলাম,মিষ্টিকে ফোন করার জন্য।কিন্তু ফোনে চার্জ শেষ,বন্ধ হয়ে গেছে।সাকিব বললো কার্ড খেলবে।ঘুমও আসছিলো না,সারারাত কার্ড খেলেই পার করে দিলাম।সকাল সাতটায় একটু ঘুমঘুম পেলো।সাকিব কলেজে গেলো,আজ নাকি কলেজে এইচএসসি পরিক্ষার এডমিট দিবে।আমারটা ওকে আনতে বলে ঘুমিয়ে পড়লাম।
ঘুম ভাঙ্গলো সাকিবের ডাকাডাকিতে।সাকিব হাসতে হাসতে বললো ” ব্যা’টা তোর লুঙ্গি কই? ”
বিছানার চাদর টেনে বু’ক অব্দি ঢেকে রেখে বসে আছি।আমার এরুপ অবস্থায় সাকিব হাসছে,খুব হাসছে।তারপর হাসি থামিয়ে বললো
” তোর এডমিট দেয়নি,বলছে তোকে নিজে যেতে হবে, নইলে দিবে না ”
” ঠিকভাবে আমার কথাই বলছিস তো? ”
” হ্যা রে বলছি,তারপরও দেয়নি ”
” একটা প্যা’ন্ট দে তোর,আমার নাম বলছিস তবুও দেয়নি তাই না,দেখাচ্ছি মজা ”
কলেজে ঢুকে দেখলাম পুরো ক্যাম্পাস রং বেরঙ্গের পোশাকের মেয়ে দিয়ে ভর্তি।সাকিবকে বললাম
” কিরে ক্যাম্পাসে এতো মেয়ে কেন? ”
” ফাস্ট ইয়ারের কিসের যেন ফর্ম ফিলাপ হচ্ছে ”
” সেটা আগে বলবি না কলেজে এতো মেয়ে এসছে,”
” বলার কি আছে ”
” বললে তোর এই কুঁচকানো শার্ট পড়ে আসতাম নাকি লিচুর বাচ্চা। এডমিট দিচ্ছে কোথায়? ”
” প্রশাসনিক ভবনে ”
প্রশাসনিক ভাবনের সামনে ভিড়।একটু দূরে অন্য টেবিলটায় ফাস্ট ইয়ারের ফর্ম ফিলাপ হচ্ছে মনে হয়,তাই সেখানেও প্রচুর ভিড়।
সাকিবকে নিয়ে ভিড় ঠেলে সামনে গিয়ে দেখলাম রফিকুল ভাই কার্ড দিচ্ছে। ওনার কাছে গিয়ে বললাম
” কি ভাই কি অবস্থা ”
” এইতো ভালো রে,কেমন আছিস ”
” একটু আগে আমার কার্ডটা আমার বন্ধু চাইছিলো,আপনি নাকি না করে দিছেন? ”
” আসলে কে না কে এসে চাইলেও তো আর তাকে তো দিয়ে দেওয়া যায় না,ও যে তোর বন্ধু সেটা তো জানতাম না।কার্ড কি পাইছিস?”
সাকিবকে বললাম আমার কার্ড নিয়ে আসতে।ক্লাসমেটরাও এ দেখে বললো বন্ধু আমাদেরটা একটু এনে দাও অনেক্ষন থেকে দারায় আছি।” রফিকুল ভাইরে গিয়ে বলো আমার ফ্রেন্ড তোমরা,তাহলে দিয়ে দিবে ” বলে ওখান থেকে সিঁড়িতে নামতেই সামনে দুইটা মেয়ে এসে দাড়ালো।খুব দ্রুত বললো
” ভাইয়া কেমন আছেন? ”
” ভালো আছি,আপনি কে….”
আপনি কেমন আছেন কথাটা পুরোটা না বলতেই মেয়েটা বললো
” আমিও ভালো আছি।আমার নাম মেঘ।আর এ আমার বান্ধবী রিচি ”
” আমার বিষন্ন ”
” কেন ভাইয়া? বিষন্ন কেন? মন খারাপ? ”
” না মানে আমার নামটাই বিষন্ন ”
” ওহহহ সরি সরি সরি,প্লিজ কিছু মনে করবেন না,আসলে বুঝতে পারিনি ”
” সমস্যা নাই,প্রথমে নাম শুনলে সবাই এটাই ভাবে যে আমি নাম না বলে মন খারাপের কথা বলছি ”
” আমরা ফাস্ট ইয়ারে,আপনি মনে হয় সেকেন্ড, ইয়ারে তাই না? ”
” হ্যা, ”
” একটু আগে দেখলাম আপনি লাইন ভেঙে সবার আগে গিয়ে এডমিট কার্ড নিয়ে দিলেন আপনার ফ্রেন্ডদের,তো আসলে ভাইয়া একটা হেল্প লাগবে আমার,”
” কিরকম হেল্প ”
” সেই একঘন্টা থেকে দারায় আছি ফর্ম নিয়ে।আমার রোল ৩৪৫,আর কেবল ৪৫ নম্বর রোলেরটা নিচ্ছে। আমার আজ তাড়াতাড়ি হোস্টেলে যেতে হবে, আপনি যদি ফর্মটা একটু তাড়াতাড়ি জমা দেওয়ার ব্যাবস্থা করে দিতেন ”
” যে নিচ্ছে তাকে গিয়ে আমার নাম বলেন তাহলেই হবে ”
” ভাইয়া আপনি এখানে একটু দারাবেন প্লিজ? আমি ওনাকে আপনার দিকে দেখতে বলবো আপনি শুধু ইশারায় বলে দিবেন,”
” আচ্ছা সমস্যা নাই, গিয়ে বলেন ”
ভবন থেকে ক্যাম্পাসে আসতেই দেখা হলো নাঈম,রিফাত,সুদীপ্ত,মারুফ,মেহেদীর সাথে।একটু পর আসলো সাকিব।ওদের সাথে জমিয়ে আড্ডা দেওয়ার এক পর্যায়ে পিঠে কারোর টোকা অনুভব করলাম।পেছন ফিরে দেখলাম ফাস্ট ইয়ারের ওই মেয়েটা। মেয়েটা বললো
” ধন্যবাদ বলার জন্য আসলাম ”
” আচ্ছা ঠিক আছে সমস্যা নাই,”
মেয়েটা একটু সামনে যেতেই রিফাত বললো ” মেয়েটা কে রে ”
মেহেদী বললো ” ঠোঁ’টটা দেখছোস?হেব্বি গোলাপি রে মামা, ”
মারুফ বললো ” ভাবী নাকি? ”
” আরে ভাই আস্তে বল শুনতে পেলে লজ্জাজনক ব্যাপার হয়ে যাবে ”
” আগে বল কে, ভাবী নাকি?”
” আরেহ না,ফর্ম ফিলাপের জন্য নাকি অনেক্ক্ষণ দারায় ছিলো,তাই আগে জমা দেওয়ায় দিছি এই পর্যন্ত”
রিফাত বললো ” মেয়েটার সাথে একটু কথা বলায় দিস বন্ধু প্লিজ,”
চলবে?