তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -৫০ ও শেষ

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৫০ [অন্তিম_পর্ব]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

পার্লার থেকে ছয়জন মেয়ে এসছে।সকাল থেকে মিষ্টিকে সাজিয়ে দিচ্ছে।প্রথমে হাতে মেহেন্দি,তারপর লাল টকটকে লেহেঙ্গা। মিষ্টি কারণটা ঠিক বুঝতে না পেরে পার্লার থেকে আসা মেয়েদের বলেছিলো কেন তারা এভাবে বউদের মতো তাকে সাজিয়ে দিচ্ছে।উত্তরে তারা বললো

” আমাদের সাজাতে বলা হয়েছে ম্যাম ”

” যাকে সাজাতে বলা হয়েছে সে আমি না।আমি মেয়ের বান্ধবী ”

” আপনাকেই সাজানোর কথা বলা হয়েছে ম্যাম ”

মিষ্টি হতভম্ব হয়ে ঘর থেকে বের হয়ে গেলো বিষন্নর মা’কে বিষয়টা বলতে।দরজার কাছে আসতেই দেখলো তিনিও এইদিক আসছেন।মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো

” আন্টি,এদের নীলুর কাছে নিয়ে যাও তো।এরা নীলুর বদলে আমাকো সাজানোর কথা বলছে ”

” আমিই বলেছি তোকে সাজাতে ”

মিষ্টি হতভম্ব হয়ে বললো ” আমাকে? কেনো? ”

” ওমা,নিজের বিয়েতে সাঁজবি না? ”

মিষ্টি চোখ বড়বড় করে বললো ” কিহ? আমার বিয়ে মানে?”

” হু তোর বিয়ে ”

” আন্টি কি বলছো তুমি? হুট করে বিয়ে করা যায় নাকি? ”

” হ্যা যায়।আমারো বিয়ে হয়েছে হুট করেই।কেমন করে হলো বলি শোন,আমি গেছিলাম স্কুলে, তোর আঙ্কেল তখন কলেজে পড়ে,তো ছুটির সময় যখন বাড়িতে আসছিলাম…….”

মিষ্টির কানে এইসব কিছুই যাচ্ছে না।কেমন একটা ঘোর তৈরী হয়েছে মনের মধ্যে। সত্যিই কি আজ তার বিয়ে?।

*

বিষন্নকে ডাকাডাকি করেও লাভ হচ্ছে না।দুপুর হয়ে গেছে কিন্তু ওর ওঠার কোনো নামগন্ধ নেই।বিষন্নর বন্ধুরা একঘন্টা যাবৎ দরজার বাহিরে ডাকাডাকি করছে,কিন্তু ভেতর থেকে বিষন্নর কোনো সাড়াশব্দ নেই।মাঝেমধ্যে শুধু ঘুমঘুম স্বরে ওর সাথে কিছু কথাবার্তা হলো,সেগুলা এইরকম….

” কে? ”

” দোস্ত আমরা, দরজা খোল ”

” আরেকবার দরজা ধাক্কা দিলে লা’থি মেরে পা’ছা লাল করে দিবো ”

বিষন্নর এতো সম্মানিত গা’লি শুনেও দরজা ধাক্কা বন্ধ হলো না।এরই মধ্যে দরজার বাহিরে ছোটখাটো একটা কনসার্ট ও শুরু হয়ে গেছে।সেখানকার ভোকালিস্ট ইকবাল।নিঃসন্দেহে বলা যাবে যে তার গলার চেয়ে একটা গরুর ডাক শুনতে শ্রুতিমধুর লাগে।সে বিকট চিৎকারে কিছুক্ষণ পরপর দরজা ধাক্কা দিচ্ছে।

দীর্ঘক্ষন প্রচেষ্টা সফল হয়েছে।বিষন্ন চোখ কচলাতে কচলাতে দরজা খুললো।না তাকিয়েই বললো

” ভেতরে আয় তোরা ”

সবাই হৈচৈ করে ঘরে ঢুকলো।বিষন্ন সবাইকে ঘরে ঢুকিয়ে দরজা লক করে পাশের টেবিলে অনেক খোজাখুজি করার পর একটা তালা পেলো,সেই তালা দরজায় আটকে দিলো। দরজায় তালা দেওয়া দেখে সাকিব,নাঈম,ইকবাল,সুদীপ্ত,রিফাত,মারুফ সবাই চোখ বড়বড় করে তাকালো বিষন্নর দিকে।বিষন্ন নিজের প্যান্ট থেকে বেল্ট খুলে হাতে পেচাচ্ছে,এই দৃশ্য দেখে সবাই ইকবালের দিকে হাত দেখিয়ে বললো ” দোস্ত, আমরা কিছু করিনি বিশ্বাস কর,এতোক্ষণ এই ব্যাটায় গরুর মতো চিল্লাইছে ”

ইকবাল চোখ সরু করে তাকালো সবার দিকে।বললো ” গরুর মতো চিল্লাইছি মানে কি?ভুলে যাস না আমার একটা গানের পেইজ আছে…”

পুরো কথা শেষ না হতেই সুদীপ্ত বললো ” সেই পেইজে তো তেরোটা লাইক।তার থেকে পাঁচটা লাইক আমাদের হাতে পায়ে ধরে দিয়ে দিয়ে নিছিস ”

” তাতে কি,এখন তেরোটা,ভবিষ্যতে তেরো মিলিয়ন হবে ”

এইটুকু কথা শেষ হতেই পুরোঘরে আবারো তোলপাড় শুরু হলো।এইবারের কনসার্টের বিষয়টা ভিন্ন,আগেরটায় শুধু ইকবাল চিল্লাচ্ছিলো, এইবারেরটায় সবাই চিল্লাচ্ছে।ভেতর থেকে কিছু শব্দ ভেসে বেড়াচ্ছে। সেগুলো হলো ” ভাই আমার পা’ছায় ফোঁড়া উঠছে “,” দোস্ত কাল নীলার সাথে ডেট আছে,দা’গ হয়ে থাকলে ওর সামনে লজ্জায় পড়ে যাবো “,” দোস্ত থাম,প্যান্ট নষ্ট হয়ে যাবে,”।

ধস্তাধস্তির শব্দে বিষন্নর বাবা,মা দু’জনই ছেলের দরজার সামনে এসে দরজায় কড়া নাড়ছেন। বাবাকে ভয় পায় জন্য বিষন্ন নিজের রাগ সামলে দরজা খুলে দিলো। বিষন্নর বাবা বললো

” কি ব্যাপার? এতো হৈচৈ চিল্লাচিল্লি কিসের? ”

” কো..কই না তো বাবা,কিসের চিল্লাচিল্লি, কোনো চিল্লাচিল্লি হচ্ছে না তো ”

বিষন্নর বাবা ভ্রু কুচকে বললেন ” তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও ”

” কিসের জন্য? ”

” বিয়ের জন্য ”

” নীলুপুর বিয়ে কাল রাতে হয়ে গেলো না? আজ তাহলে কার বিয়ে? ”

” তোমার বিয়ে ”

বিষন্ন মুখ হা করে বললো ” আমার বিয়ে? ”

” হ্যা,তোমার বন্ধুদের বলো শেরওয়ানি পড়িয়ে রেডি করে দিতে ”

বলেই তিনি চলে গেলেন।বিষন্ন দরজা ধরেই দাড়িয়ে থাকলো।ঘুম থেকে উঠেই বিয়ের কথা!অবাক হওয়ারই কথা।বিষন্ন পেছন ফিরে তাকালো বন্ধুদের দিকে।সবাই রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বিষন্নর দিকে।বিষন্ন দাঁত বেড় করে হেসে বললো ” দোস্ত,আজ আমার বিয়ে “।কেউ কিছু বললো না,সবার চোখেমুখে বিরক্তি,রাগ স্পষ্ট।বিষন্ন বিছানায় সবার পাশে বসে বললো

” সরি দোস্ত, আসলে ঘুমটা ঠিক মতো হয়নি তো,তাই মাথা আউলায় গেছিলো ”

নাঈমের চোখে জল দেখে বিষন্ন বললো ” কিরে ভাই,এতটুকুতে কেউ কান্না করে নাকি? ”

নাঈম চোখের জল মুছে উঠে দাড়ালো।পেছন ফিরে প্যান্ট হাটু অব্দি নামিয়ে দেখালো সবাইকে।সাকিব বললো ” আরেহ ব্যাটা তোর তো পা’ছার ফো’ড়াডা আউলায় গেছে “।

*

মিষ্টি বাসর ঘরে বসে থাকতে থাকতে বিরক্তির স্বরে বিড়বিড় করে বললো ” এই পিচ্চি গাধা এতো দেরি কেন করতেছে,কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবো,ধূর “।কথা শেষ হতে না হতেই বিষন্ন ঘরে ঢুকলো।মিষ্টি জালের ঘোমটার ফাঁক দিয়ে বিষন্নকে দেখলো।দেখেই চোখ সরিয়ে নিলো।তাকাতেই লজ্জা করছে খুব।বিষন্ন দরজা লাগাতেই মিষ্টি ঘোমটা বিছানার কোনে ঢিল ছুঁড়ে বড়সড় একটা নিশ্বাস ফেললো।মিষ্টির এরুপ কর্মকন্ডে বিষন্ন কাছে এসে ভ্রু কুঁচকে বললো

” এইটা কি হইলো? ”

বিষন্নরকথার ধরণটা এমন যে মনে হচ্ছে বিশাল বড় অঘটন ঘটে গেছে।মিষ্টি আশপাশে তাকিয়ে আমতা আমতা করে বললো

” কি? ”

” তুমি জানেনা কি করছো? ”

” আমি আবার কি করলাম?”

” ঘোমটাটা ওভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিলে কেন? ”

মিষ্টি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।মুখ ভোতা করে বললো ” তো কি হইছে? হাতে ধরে রাখতে বিরক্ত লাগছিলো তাই নামিয়ে রাখছি ”

” তুমি জানোনা? স্বামী এসে ঘোমটাটা সরিয়ে বউয়ের কপালে চু’মু খায় ”

” জানবো কেমনে,প্রথম বিয়ে করলাম,এক্সপেরিয়েন্স নাই তো ”

” চুপ,আবার মুখে মুখে তর্ক ”

বিষন্নর ধমক শুনে মিষ্টি চোখ মুখ কুঁচকে থম মেরে বসে রইলো।বিষন্ন বললো

” এখন থেকে আমি তোমার জামাই,”

” জুনিয়র জামাই ”

বিষন্ন আমতাআমতা করে বললো ” তাতে কি হইছে,জামাই তো,এখন আবার ঘোমটা দাও,আমি ঘোমটা সরিয়ে কপালে চু’মু খাবো ”

মিষ্টি আবারো দুইহাত ঘোমটা দিলো।বিষন্ন মিষ্টির পাশে এসে বসলো।ঘোমটা সরিয়ে মিষ্টির দিকে কিছুক্ষণ চেয়ে রইলো,অাদুরে স্বরে বললো

” ইশশ,কি সুন্দর লাগছে তোমায়,মনে হচ্ছে একটা পুতুল বসে আছে। এই দাড়াও দাড়াও, সত্যিই পুতুল কিনা দেখতে দাও তো ”

এইকথা বলে বিষন্ন মিষ্টির গালে একটা কাম’ড় দিলো।মিষ্টি ব্যাথায় উহু করে উঠলো।আকষ্মিক বিষন্ন কাম’ড় দিয়ে বসবে এটা মিষ্টি কল্পনাও করতে পারেনি।এইবার যেন লজ্জায় একদম জমে গেলো সে।মিষ্টির লজ্জা পাওয়া দেখে বিষন্ন বলল

” ওমা,তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো নাকি?”

মিষ্টি দুইহাতে মুখ ঢেকে বললো ” বাসর রাতে লজ্জা করবে না তো কি করবে ”

” ভয় করবে ”

মিষ্টি ভ্রু কুচকে বললো ” মানে?”

” কেন মনে নাই? কম অবহেলা করছো নাকি? এতোদিন যত অবহেলা করছো সেইসব গুলো আমি সুদে আসলে উশুল করে নিবো, হুহ ”

” এহহ,বিয়েটা তো হয়েই গেছে।এইবার দেখ আমি কি করি,এখন মা’রতেও আর বাঁধা নাই।সিনিয়র বউ কি জিনিস টের পাবি হুহ ”

” মানে কি,জামাইয়ের গায়ে হাত তুলবা নাকি? ”

” সবসময় তুলবো না,মাঝেমধ্যে, এই ধর একটুআধটু।আচ্ছা শোন না ”

বিষন্ন অন্যদিকে মুখ করে বললো ” বলো ”

” আজ না আমাদের বাসর রাত,”

” তো? ”

” তো কি,আদর করবি না? ”

” এহহ!আমার বয়েই গেছে আদর করতে,কি বলছো একটু আগে মনে আছে?”

মিষ্টি মাথা চুলকে বললো ” ওইটা তো মজা করে বলছি।আচ্ছা,আজকের রাতটা কি করে স্পেশাল করা যায় বলতো ”

” চলো সারারাত জেগে থাকবো।আর নাতি-নাতনীদের বলবো বাসর রাতে তোমাকে ঘুমাইতে দেইনি ”

” ওরে আমার গাধা জামাই,একটু আগে বিয়ে হলো,এরমধ্যেই নাতি-নাতনী? ”

” আচ্ছা দাড়াও আমি আসছি,”

” কই যাবি? ”

” চা নিয়ে আসছি।চা খেয়ে সারারাত গল্প করবো।নিশু নামের একটা মেয়ের গল্প শোনাবো ”

” আচ্ছা ”

বিষন্ন ছুটে গেলো চা আনতে।মিষ্টি দরজা লাগিয়ে শাড়ি চেঞ্জ করে বিষন্নর একটা টি-শার্ট পড়ে ওয়াসরুমে গেলো।ভারী মেক-আপ অসহ্য লাগছে।ফ্রেশ হয়ে রুমে এসে দেখলো বিষন্ন উপুড় হয়ে ঘুমাচ্ছে।বেডের পাশের ছোট টেবিলে দুইকাপ চা,চা থেকে ধোঁয়া উড়ছে।মিষ্টি আয়নার সামনে বসলো।আয়নায় ঘুমন্ত বিষন্নকে দেখা যাচ্ছে। মিষ্টি চুল আচড়াচ্ছে আর বিষন্নকে দেখছে।

মিষ্টি চুল বেঁধে বিষন্নর পাশে বসলো।বেশ কিছুক্ষন বিষন্নর দিকে তাকিয়ে থেকে বিষন্নর কপালে একটা চু’মু দিয়ে তার পাশেই শুয়ে পড়লো।সাথেসাথেই বলিষ্ঠ এক হাত মিষ্টিকে চেপে ধরলো।মিষ্টি শুধু হাসলো কিছু বললো না।বলিষ্ঠ সেই হাত মিষ্টির পে’টে হাত বুলাচ্ছে।বিষন্ন নেশা ভরা স্বরে মিষ্টিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো

” আমি তোমার দ্বিধায় বাঁচি
তোমায় দ্বিধায় পুড়ে যাই
এমন দ্বিধার পৃথিবীতে
তোমায় চেয়েছি পুরোটাই, পুরোটাই ”

____________________________সমাপ্ত_______________________________

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here