তোমায় চেয়েছি পুরোটাই পর্ব -৪৯ ও শেষ

#তোমায়_চেয়েছি_পুরোটাই
#পার্টঃ৪৯ [শেষ ভাগের প্রথম ভাগ]
#জয়ন্ত_কুমার_জয়

সমুদ্র এখনো ভ্রু কুচকে তাকিয়ে আছে নীলুর দিকে।সমুদ্র’র তাকিয়ে থাকা দেখে নীলু বললো ” সরি,আর কথা বলবো না,তুমি শুরু করো “।সমুদ্র আবারো বলতে শুরু করলো

” আমার অফিসে অবৈধ কিছু ব্যবসা ছিল!যেগুলোর জন্য আইনমাপিক কোনো অনুমোদন ছিলো না।সেইসবের হিসেব গত মাস থেকে আমার হাতে ছিলো।পুলিশকে বিষয়টা জানাতেই তারা পুরো অফিস ঘেরাও করে,সবগুলো অবৈধ ব্যাবসা গুলিতে ছিল মেরে বন্ধ করে দেয়,অফিসের সি.ই.ও ছেলে জুনায়েদ এখন তাদের আন্ডারে ”

জুনায়েদের নাম শুনে নীলু চমকে তাকালো। আতঙ্কের স্বরে বললো ” কি নাম বললে? জুনায়েদ? ”

সমুদ্র ইতস্তত করে বললো ” হ্যা,তুমি চিনো নাকি? ”

” চিনি না মানে,ও তো আমাদের ভার্সিটিতে রাজনীতি করতো।বে’য়াদব একটা ছেলে,কত মেয়ের জীবন শেষ করে দিয়েছে।আর..”

” আর কি? ”

” ওই ছেলে আমাকেও দেখতে এসেছিলো,বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে ”

সমুদ্র হতভম্ব হয়ে বললো ” কিহ? ”

” হু,এমনকি মিষ্টির সাথেও ঝামেলা করতে চেয়েছিলো ”

” বিষন্ন আমায় বলেছিলো সব,কিন্তু এইটা তো বলেনি”

” আচ্ছা বাদ দাও এইসব কথা।শেষমেশ তো তোমায় পেয়েছি, এই যথেষ্ট।এখন চলো বাসর করবো ”

” বাসর করবো মানে?”

নীলু অন্যদিকে তাকিয়ে মুখ বাকিয়ে বললো ” এহহহ,ন্যাকা এসছেন রে,মনে হয় বাসর কি সেটা উনি বুঝেন’ই না ”

সমুদ্র হেসে হেসে বললো ” জানিনা তো,বাসর রাতে কি হয়? ”

নীলু সমুদ্রের কাছাকাছি এসে বললো ” বাসর রাতে ওইসব হয় ”

সমুদ্র নীলুকে আরো কাছে টেনে নিয়ে বললো ” ওইসব আবার কি হু ? ”

নীলু লজ্জায় উঠে যেতেই সমুদ্র নীলুর হাত ধরে ফেললো। নীলুর খুব কাছে এসে দাঁড়ালো।নীলু লজ্জায় চোখ বন্ধ করে আছে।সমুদ্র নীলুর কপালে চু’মু এঁকে দিবো।নীলুর শরীরে যেন শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আজ তাদের মধ্যে আর থাকবে বিন্দুমাত্র দুরত্ব।দুজনে মিলেমিশে একাকার হয়ে যাবে।তাঁদের ভালোবাসা দেখে হয়তো খাটের সাথে সাজানো ফুলগুলিও নিজেদের চোখ বন্ধ করে রাখবে।

*

সমুদ্রকে কোথায় পেলো,তারপর কি কি হলো এইসব বলতে বলতে বিষন্ন বিছানা থেকে উঠে বসলো। মিষ্টি বিছানায় বাবু হয়ে বসে গালে হাত রেখে গভীর মনোযোগে বিষন্নর কথা শুনছে।কথা শেষ হতে মিষ্টি বললো

” আমি কত্ত ভয় পেয়েছিলাম জানিস? ভয়ে তো আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছিলো,নীলুকে দেখে শুধু কান্না পাচ্ছিলো ”

বিষন্ন প্রসঙ্গ পাল্টে বললো ” নীলুপু ঘুমিয়ে পড়েছে,তাই না? ”

মিষ্টি বুঝতে পারছে বিষন্ন এইবার দুষ্ট দুষ্ট কথা বলবে।প্রথমে নীলুর বাসর ঘরের কথা বলে তারপর অন্য কিছু বলবে।মিষ্টি বললো

” হু, ঘুমাবে না তো কি করবে?এতো রাতে জেগে থাকবে নাকি? ”

বিষন্ন বিস্মিত হয়ে বললো ” আরেহ না,ঘুমাবে কেনো,বাসর রাতে এতো তারাতাড়ি ঘুমিয়ে পড়ে নাকি ”

” কেন ঘুমায় না?তা রাত জেগে কি করে শুনি? ”

বিষন্ন দুষ্ট হাসি হেসে বললো ” সেটা তো তুমিই ভালো জানো,”

” ওই চুপ কর,কিসব বলিস তুই হ্যা? লজ্জা করে না এইসব বলতে?”

” ওমা লজ্জা করবে কেন? আচ্ছা যাও বাদ দিলাম। নীলুপুর বিয়ে তো হয়ে গেলো,আমাদের কবে হবে ? ”

” আমি কি জানি ” বলেই মিষ্টি বিছানা থেকে নেমে বাহিরে চলে গেলো।

*

বিষন্নর মা হন্তদন্ত হয়ে ঘরে ডুকে তার স্বামীকে বললেন

” শুনছো,একট কাজ করলে কেমন হয়? ”

বিষন্নর বাবা ওয়াইনের বোতল থেকে কিছুটা তরল গ্লাসে ঢেলে বললেন ” কি কাজ? ”

বিষন্নর মা রেগেমেগে বললেন ” তুমি আবারো এইসব খাচ্ছো? শরীরের কি অবস্থা হয়েছে দেখেছো একবার?”

বিষন্নর বাবা খানিকটা দুঃখিত ভঙ্গিতে বললেন ” না মানে সবসময় তো খাই না,যখন মন ভালো থাকে তখন একটুআধটু খাই,”

” আচ্ছা খাও,আজ সত্যিই খুব আনন্দের দিন,আজকে আর বকবো না।আচ্ছা শোনো যেটা বলার জন্য আসলাম ”

” হু বলো,”

” নীলু চলে গেলে তো বাড়িটা একদম ফাঁকা ফাঁকা হয়ে যাবে,ফাঁকা বাড়িতে আমার দম বন্ধ লাগে”

” তো কি করতে বলছো? সতীন এনে দিবো? তাহলে সারাদিন ঝগড়া করে সময় কাটাতে পারবে ”

বিষন্নর মা ভ্রু কুচকে রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো ” বুড়া বয়সে যত্তসব ঢং ”

” হাহাহা,আচ্ছা বলো ফাঁকা বাড়ি পূরণ করতে কি করতে চাচ্ছো? ”

এই কথা শুনে বিষন্নর মা বিছানায় জমিয়ে বসলেন।চোখ বড় বড় করে বললেন

” বিষন্নকে বিয়ে দিয়ে দিলে কেমন হয়? ওদের তো বয়স কম হলো না।এখন বিয়ে না দিলে নাতি-নাতনি আসতে আসতে তো আমরা আরো বুড়ো-বুড়ি হয়ে যাবো,তখন ওদের সাথে খেলবে কে?।নাকি নিজের মতো বুড়ো বয়সে এসে ছেলেকে বিয়ে দিবে? ”

বিষন্নর বাবা ওয়াইনের গ্লাসে চু’মুক দিয়ে বললো ” আমি বুরো বয়সে বিয়ে করছি? ”

” বাইশ বছরে বিয়ে করছো,বুড়াই তো ”

” বাহ্,বেশ ভালো বলছো তো।সত্যিই তো,বাইশ বছরেই তো মানুষ বিড়ো হয়ে যায়, কি বুদ্ধি তোমার, অসাধারণ। তাহলে কালকেই ওদের বিয়েটা করিয়ে দিই,কি বলো? ”

” কালকেই? ”

” হু কালকেই।বিয়ের বিষয়ে বেশি দেরি করতে নেই।বিষন্নর ও তো বাইশ চলতেছে।আমি চাইনা আমার বউমাও ওকে বুড়ো বয়সে বিয়ে করেছে বলে খোঁ’টা দিক ”

” আমি তোমায় খোঁ’টা কখন দিলাম গো? ইট্টু মজা করছি,বোকাটা বুঝেও না ”

” আচ্ছা, তাহলে ওদের বলে দেখো,”

” ওদের বলার কি আছে,কাউকে বলবো না ”

” না বলে বিয়ে দিবে? ”

” হু।ওদের যত্তসব ঢং।কখনো তোমার ছেলে রেগে থাকে তো কখনো মিষ্টি রেগে থাকে,”

বিষন্নর বাবা হেঁসে বললো ” তুমিও তো রাগতে,মনে আছে? সারাক্ষণ কেমন ঝগড়া করতে? ”

” এইসব খেয়ে প্রেম জেগে উঠেছে না? ”

” আমি প্রেমিক পুরুষ ছিলাম,প্রেমিক বাবা হয়েছি আর প্রেমিক দাদু হয়ে নাতি-নাতনিকে প্রেম শিখাবো, বুঝছো? ”

” হু বুঝছি।জানো আমার না খুব মজা লাগছে, হঠাৎ করে দুইটার বিয়ে দিয়ে দিলে ওদের মুখটা দেখতে কেমন হবে সেটা ভাবতেই তো আমার হাসি পাচ্ছে ”

শেষপর্বের বাকীঅংশ রাত ৮ টায় দেব। তার আগেও দিতে পারি প্লিজ চেক করবেন ❤️

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here