তোমায় ছোঁয়ার ইচ্ছে পর্ব -০২

#তোমায়_ছোঁয়ার_ইচ্ছে
#পর্ব_২
#সুমাইয়া মনি

‘ইসানাকে চাকরী দেওয়ার পিছনে নিশ্চয় তোর হাত রয়েছে?’ রাগ মিশ্রিত কণ্ঠে বলল রাদ।
মুরাদ ধীরে কণ্ঠে শুধালো,
‘আই এক্সপ্লেইনেড! আমি আন্টিকে শুধু ইসানার কথা বলেছিলাম। কিন্তু সে যে তাকে তোর পি.এ হিসাবেই নিয়োগ দিবে জানতাম না।’
‘মামনিকে কেন বলেছিস তার কথা?’
‘আমি বলিনি ইচ্ছে করে। তোর কেবিনে প্রবেশ করার পূর্বেই আন্টি আমাকে কল দেয়। তখন আমি পি.এ-এর বিষয়টি বলি। ইসানা তখন আমার সঙ্গেই ছিল। কথার মাধ্যমে তাকে রিজেক্ট করার কথা বলাতে ইসানার ডিটেইলস জানতে চায় আন্টি। তারপর সে নিজ থেকেই ইসানার সঙ্গে ফোনে কথা বলে। এখন সে তোর পি.এ।’
‘উফ!’ কপালে হাত রেখে বিরক্ত প্রকাশ করে রাদ।
‘খারাপ কোথায়? ক’দিন দেখ তার কাজকর্ম। ভালো না লাগলে আউট!’
রাদ তবুও বিরক্ত বোধ করছে। মুরাদ আরো কিছু বলতে উদ্যত হতেই দরজায় নক পড়ে। ইসানা ‘মে আই কামিং’ বলে ভেতরে আসার পারমিশন নেয়। রাদ বিরক্তিকর কণ্ঠে ভেতরে আসার সম্মতি জানায়। ইসানা ভেতরে এসে কফির মগ রেখে একটি ফাইল এগিয়ে দিয়ে মৃদুস্বরে বলল,
‘আহনা আপু দিয়েছে এটি।’
রাদ কফির মগ হাতে নিয়ে ফাইল চেক করে। এক চুমুক দেওয়ার পর আড়চোখে ইসানার দিকে তাকায়। তারপর দু’জনকে বেরিয়ে যেতে বলে। তারা প্রস্থান করে। রাদ কফির মগ হাতে নিয়ে আরামদায়ক চুমুকে খাচ্ছে। তার মনে ধরেছে ইসানার বানানো কফি। যেটা কেউ কখনো আগে তাকে বানিয়ে খাওয়াতে পারেনি।
_
ইসানা তার কেবিনে এসে বসার পর সোহানার ফোন আসে।
রিসিভ করে সে।
‘বল সোহানা।’
‘চাকরীটা কি হয়েছে?’
‘হ্যাঁ! রেহানা ম্যামের জন্য সম্ভব হলো এটা।’
‘আমি জানি তো ওনি খুব ভালো মানুষ।’
‘তোর সাথে কি তার আগে থেকে পরিচয়?’
‘আরে না না।’
‘এমনি বললাম।’
‘ওহ!’ দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে বলল।
‘মনে হচ্ছে রাদ বেশি জ্বালাতন করছে?’
‘তেমন নয়। বেশ অহংকারী।’
‘বড়ো লোকের ছেলে বলে কথা।’
‘তাই…’ বাকি অংক বলার পূর্বে ল্যান্ড লাইনের টেলিফোন বেজে উঠে। ফোন রেখে টেলিফোন রিসিভ করে জানতে পারে রাদ তাকে ডাকছে। দ্রুত এগিয়ে যায় ওর কেবিনে।
ভেতরে প্রবেশ করতেই রাদ ভারী কণ্ঠে বলল,
‘মিস.ইসানা এটা ফোনে কথা বলার জায়গা নয়, কর্মস্থান। দ্বিতীয় বার এমন ভুল যেন না হয়।’
‘স্যরি স্যার।’ মৃদুস্বরে মাথা নত রেখে বলল ইসানা। সে বুঝতে পারে সিসিটিভির মাধ্যমে তাকে ফোনে কথা বলতে দেখেছে রাদ। রাদ চেয়ারে হেলান দিয়ে ডেস্কের ওপর সবুজ রঙের ফাইল রেখে রাশভারী কণ্ঠে বলল,
‘কাল নতুন কাপড়ের স্যাম্পল টেস্ট করাতে ল্যাবে দেওয়া হয়েছে। ল্যাবের ডকুমেন্টস গুলো কালেক্ট করুন। এবং স্টাফদের কাছ থেকে আগের ডকুমেন্টস গুলো নিয়ে আসুন। আর হ্যাঁ, কাপড় ডিজাইনের ডকুমেন্টস গুলো আনতে ভুলবেন না।’
‘জি স্যার!’ হ্যাঁ সম্মতি জানিয়ে ইসানা বেরিয়ে যায় তার কাজে।
রাদ ইসানাকে অধিক পরিমাণ কাজ করাতে চায়। যার দরুণ সে ক্লান্ত ও ধৈর্যহারা হয়ে নিজ থেকে কাজ ছেড়ে দিবে। দেখা যাক তার এই পরিকল্পনা কতটুকু সফলতা অর্জন করে।
প্রথমে ল্যাবে, তারপর সব স্টাফদের কাছ থেকে ডকুমেন্টস কালেক্ট করতে করতে হয়রান হয়ে যায় ইসানা। তবুও সে দমে থাকে না। কাজ চালিয়ে যায়। পুরো অফিসটি পাঁচতলা। রাদের কেবিন পাঁচ তলায়। নিচ থেকে ওপরে, ওপর থেকে নিচে আসতে আসতে ইসানার নাজেহাল অবস্থা। এই পুরো বিষয়টি মুরাদও বেশ ভালোভাবে লক্ষ্য করেছে। শেষে সে নিজেই রাদের কেবিনে আসে।
‘কী শুরু করেছিস?’
‘হোয়াট?’ না বোঝার ভান ধরে বলল রাদ।
‘সে পরিশ্রমী মেয়ে। তোর এসবে কিছুতেই দমবে না।’
‘তার সম্পর্কে ভালো অভিজ্ঞতা আছে দেখছি তোর।’ এক ভ্রু উঁচু করে বলল রাদ।
‘তাচ্ছিল্য করা বন্ধ কর।’
‘আমি ভাবতে পারছি না ওনি আমার বাড়িতে থাকবে।’
‘সার্ভেন্ট যেহেতু অসুবিধা কোথায়?’
‘সার্ভেন্টদের আলাদা কোয়ার্টার রয়েছে।’
‘ওনি তোর পার্সোনাল সার্ভেন্ট। তোর খেয়াল রাখার জন্য আন্টি তাকে নিয়োজিত করেছে।’
‘ছোট্ট বেবি আমি তাই?’ মেকি রাগ দেখিয়ে বলল রাদ।
‘একদম।’ পরিহাস করে বলল মুরাদ।
‘হপ!’ ধমক দিল রাদ।
বাকি আলোচনা করার আগেই ইসানা এক গাদা ফাইল নিয়ে প্রবেশ করে। ডেস্কের ওপর রেখে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,
‘আপনি এগুলো দেখতে থাকুন স্যার। বাকি গুলো আনছি এক্ষুণি।’ বলে তড়িঘড়ি করে বেরিয়ে যায় কেবিন থেকে।
রাদ, মুরাদ ফাইলের ওপর নজর ভুলায়। মুরাদ তো ফিক করে হেসেই দেয়। রাদ ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘হাসছিস যে?’
‘তোর কাজ এসে গেছে। নে চেক কর। চাপ নিস না, ইসানা আরো আনছে। আল দ্যা বেস্ট। ক্যারি অন, ক্যারি অন।’
‘ম্যানেজার কে শুনি?’
‘একদম অজুহাত দিবি না। আমি তাকে বলিনি এগুলো কালেক্ট করতে। তুই বলেছিস, ঠেলা সামলা।’ বলে রাদ কিছু বলার উদ্যত হওয়ার আগেই প্রস্থান করলেন। রাদের বিরক্ত মাখা আদলে রাগ ফুটে ওঠে। উপায় নেই ভেবে একটি একটি করে ফাইল ঘাঁটতে আরম্ভ করে।
লাঞ্চের পরপরই ইসানার কাজ পুনরায় শুরু হয়। আর দুই সেক্টর আছে। এদের ফাইল কালেক্ট করতে করতে রাত হয়ে যেতে পারে। তাই দ্রুত পায়ে কাজ করতে থাকে। রাদ অর্ধেক ফাইল কেবল দেখেছে। এখনো অনেকগুলো টেবিলের ওপর গড়াগড়ি খাচ্ছে। ফাইল দেখার সময় মনিটরে ইসানাকেও দেখে নিতে ভুল হয় না তার। সকাল থেকেই দৌঁড়ঝাপের ওপর রেখেছে তাকে। শুধু লিফটে ওঠলেই মাথা ঠেকিয়ে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে রয়। ইসানার অসহায় ক্লান্ত মুখমণ্ডল রাদের হৃদয় স্পর্শ করতে পারেনি। এক বিন্দু মায়া হয়নি তার। সে শুধু নজর রেখেছে কখন ইসানা ফাঁকি দিবে। সেই অজুহাতে তাকে আউট করবে। কিন্তু ইসানা প্রচুর পরিশ্রম করে। পুরো ফাইল গুলো সন্ধ্যার পরপরই রাদের ডেস্কে পৌঁছে দিতে সক্ষম হয়। ফিরে এসে নিজের কেবিনে টেবিলের ওপর মাথা রেখে শুয়ে পড়ে। ক্লান্তিতে আঁখিযুগল বুঁজে আসে ঠিক সেই মুহূর্তে ল্যান্ড লাইনে কল আসে। পীক করে রাদ তাকে কফি নিয়ে যেতে বলে। আর হলো না একটু রেস্ট নেওয়া। দ্রুত অফিস ক্যান্টিনে এসে কফি বানিয়ে রাদের জন্য নিয়ে আসে কেবিনে। রাদ কফি খেতে খেতে ফাইল দেখছিল। ইসানা বের হয়ে যাওয়ার সময় পুনরায় ফিরে এসে মৃদুস্বরে বলে,
‘স্যার আমি বাড়িতে যেতে চাই?’
রাদ না তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল,
‘হোয়াই?’
‘আমার কিছু জিনিসপত্র রয়েছে সোহানার বাড়িতে সেগুলো আনতে হবে।’
‘ওকে! বাট দ্রুত চলে আসবেন।’
‘জি!’ বলে কেবিন ত্যাগ করে ইসানা। রাদ ফাইন বন্ধ করে কলম আঙুলের মাঝে নিয়ে থুতনিতে ঠেকায়। কফির মগের ওপর নজর পড়তেই চোখ ছোট ছোট হয়ে আসে তার। সে নীরবে কিছু একটা ভাবছে। হয়তো তার ভাবনার কেন্দ্রবিন্দু জুড়ে ইসানা রয়েছে।
.
.
.
.
#চলবে?

কার্টেসী ছাড়া কপি করা সম্পূর্ণ নিষেধ। পর্ব ছোট দেওয়ার জন্য দুঃখিত!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here