তোমায় দিলাম কফির নিমন্ত্রণ পর্ব -০৩+৪

#তোমায়_দিলাম_কফির_নিমন্ত্রণ
By #Arifa_Afroze

#পর্ব_৩
.
.
.
.
–আরুশি।

–জী ভাইয়া।

রোগীর ফাইল টা বন্ধ করে এগিয়ে গেলাম আসাদ ভাইয়ের দিকে।

–হুম ভাইয়া বলেন।

–আরুশি আজকের মত লাস্ট অপারেশন টায় তুই দাঁড়া ।নীচে ইমার্জেন্সি রোগী আসছে,আমি দেখে আসি।

‘এই সেরেছে,’ মনে মনে বললাম।যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয় শুনেছিলাম আর আমার ক্ষেত্রে এর ব্যতিক্রম কবে হয়েছিল ভুলে গেছি।ব্যাড লাক এর দুষ্টচক্রে আবদ্ধ ‘আমি’ কে এবার আর বাঁচানো গেলোনা,বরং উল্টো সেখানে নতুন এক অধ্যায় যুক্ত করতে বলা হল।তাই মাস্ক এর পিছনে মুখটাকে বাংলার পাঁচ বানিয়ে সুবোধ বালিকার মত ওয়াশ নিয়ে এসে অপারেশন এ দাঁড়িয়ে গেলাম।কিন্তু যতই সুবোধ থাকার চেষ্টা করি,ঠিক ‘অ’সময়মত নিজ হৃৎপিন্ড অবাধ্য হয়ে অতিরিক্ত কম্পন শুরু করল বিপরীত পাশে মেইন সার্জন এর জায়গায় দাঁড়িয়ে থাকা হাসিমুখ আগন্তুক ওরফে রেশাদ ভাই এর জন্য।

●●●
ড.রেশাদ হাসান চৌধুরী,নামের পাশে ডিগ্রী লিখতে গেলে আমার গল্প শেষ হয়ে যাবে তবু তার ডিগ্রী শেষ হবে না।এই মেডিকেল কলেজের অনেক সুনামধন্য একজন ছাত্র তিনি।এমবিবিএস শেষ করে সেই যে শুরু হয়েছে তার ম্যারাথন দৌড় ডিগ্রীর পেছনে, সেখানে মোটামুটি তাকে সফল ই বলা চলে।শুধু ডিগ্রী নয়,সার্জন হিসেবেও বেশ সুখ্যাতি আছে তার তবে তার চেয়েও অধিক সুখ্যাতি স্বপ্নের পুরুষ হিসেবে নারীমহলে।আর তাই তার সম্পর্কে ফ্যানগার্ল হয়ে চুপি চুপি তথ্য সংগ্রহের দরকার পড়েনি আমার,উনি জয়েন করার পর থেকে ওয়ার্ড,ওটি, করিডোর,ডক্টরস ক্যান্টিন এমনকি চলতি পথে বাসেও তার সম্পর্কে গল্প করার মানুষের অভাব নেই।সুতরাং বলতে গেলে চলতি পথে একখানা ঝকঝকে রঙিন পাথর দেখে হাতে তোলার শখ হয়েছিল কিন্তু সেটা যে দামী হীরের টুকরো সেই ধারণা আমার ছিল না।

●●●
-মিস কফি, টায়ার্ড নাকি? কফি লাগবে?

রেশাদ ভাই বলে উঠলেন,অপারেশন এর ফাঁকে।

আমি নিশ্চিত ঐ মাস্ক এর আড়ালে তার তিরস্কার এর হাসি হাসছেন তিনি,যেটা চশমার আড়ালের দুই চোখে স্পষ্ট বিদ্যমান।একটা ইন্সট্রুমেন্ট দিতে দুই সেকেন্ড লেট হতেই ওনার এই জ্বালাময়ী বক্তব্য শুনতে হল আমাকে।আমি সত্যি টায়ার্ড,অপারেশন এর জন্য নয়,এই মানুষটার ক্রমগ্রত বিদ্রুপাত্মক ব্যবহারে।আমাকে সারাক্ষন টিজ করা প্রতিদিনকার রুটিন হয়ে গেছে রেশাদ ভাই এর।একদিনের ক্ষণিকের নির্বুদ্ধিতা আমাকে এমন পরিস্থিতিতে ফেলবে জানা ছিল না।খানিকটা জ্বালাময়ী কণ্ঠে তাই বলেই উঠলাম,

–এই কে আছিস এক কাপ কফি বানিয়ে রাখ।আমি আসছি।

পেছন থেকে ওটি বয় সামনে এসে জিজ্ঞেস করল,

–রেশাদ স্যার আপনার জন্য ও বানাবো?

রেশাদ ভাই এর উত্তরের আগেই আমি বলে উঠলাম,

–আপনার স্যার কফি খান না।তাইনা ভাইয়া?

মুখে সেই বিখ্যাত জ্বালাময়ী হাসি,একটাই দুঃখ সেটা তিনি দেখতে পেলেন না।তবে উত্তর একটা দিলেন ঠিক ই,

–হুম,আমি এসব কফি টফি খাইনা।কে জানে কফির নেশায় মাতাল হয়ে আবার কাকে প্রপোজ করে বসি!!

চারদিকে একটা ৪০ ডেসিবেল এর নিচে হাসির রোল পরে গেল।আর এই হাসি আজকেই নতুন নয়,এই লোকটা যেদিন থেকে আমার জীবনে এসেছে সেদিন থেকেই আমার কুয়োর ব্যাঙ ‘আমি’ কে ক্রমাগত আবিষ্কার করছি মানুষের হাসির পাত্র হিসেবে।

●●●
২৭ ফেব্রুয়ারি…(বাকি অংশ)

–রেশাদ,এ আমাদের সবচেয়ে সিনসিয়ার ট্রেইনি ড.আরুশি আরমিন।

সাধের গয়না ছিনতাই হয়ে গেলে আপনার মুখশ্রী যেমন দেখাবে আমার অবস্থা ঠিক তেমন ছিল তখন।আমার ঠোঁটে সাজানো সাধের গর্বের হাসিটা ছিনতাই করে নিল,এই আগন্তুক।

–আরে আপনি!!!! মিস কফি?

সাথে একটা বিদ্রুপাত্মক হাসি।

“আল্লাহ হাসপাতালের সিমেন্টঢালা মেঝেটা দুভাগ করে দাও আমি ঢুকে যাই।” আমার মনের মধ্যে এটা ছাড়া আর কিছুই কাজ করছিল না তখন। আশেপাশে ঠিক সেদিনের মত সবার নজর আমার দিকে,প্রশ্নার্ত দৃষ্টি।

এই একটা কথাই যথেষ্ট ছিল।এরপর যথারীতি ওনার ফ্যান দের মাধ্যমে ক্যাফের সেইদিনের সেই নির্বুদ্ধিতার কথা পাঁচ কান হতে সময় লাগেনি আর তখন থেকেই আমাকে দেখলে চারপাশে একটা হালকা পাতলা হাসির রোল বয়ে যায় সেটা বেশ বুঝতে পারি আমি।শুধু এটুকু তে সীমাবদ্ধ থাকলেও ভালো ছিল,কিন্তু তখনও আমার জানতে বাকি অজান্তেই নিজের সীমানা অতিক্রম করে ফেলেছি আমি এক কফির নেমন্তন্নে।

(( চলবে… ))

●●●

[পরিশিষ্ট:::

এই মাস্ক এর একটা বিশাল ক্ষমতা আছে।অন্তরালে ঠোঁটের হাসিটা অন্তরালেই রেখে দেয়।রাগ অভিমান,তিরস্কার নাকি মুগ্ধতার হাসি সেটা সবটুকুই আড়াল করে দেয় তিন লেয়ারের এই নীল মাস্ক।]

.
.
.
.
.
#তোমায়_দিলাম_কফির_নিমন্ত্রণ
By #Arifa_Afroze

#পর্ব_৪
.
.
.
.
–তারমানে সেদিনের গল্পটা আসলে গল্প না,সত্যি ছিল?

ডক্টরস রুমের কাবার্ড টা খুলছিলাম টি ব্যাগ এর খোঁজে,সান্ধ্যকালীন ডিউটির ক্লান্তি দূর করবো বলে।প্রীতির এই কথায় একবার ওর দিকে তাকিয়ে পুনরায় টি ব্যাগ খোঁজায় মন দিলাম আর চমকে উঠে বললাম,

–কফিইইই!!!!!

হাতে একখানা ব্রাজিলিয়ান হেজেলনাট কফির কৌটা দেখে আমার চোখে মুখে চিকিৎসায় নোবেল জয়ীর হাসি ফুটে উঠল।সাথে সাথেই বসে গেলাম কফি বানাতে।ঐদিকে প্রীতির প্রশ্নার্ত চোখে চোখ পড়তেই কিছু বলব এমন সময় রেশাদ ভাই এর আগমন।

–মিস কফি,আজকে দুই নম্বর বেড এর সেলাই কাটার কথা ছিল,কাটেন নাই কেন??

–শফিক স্যার মানা করেছেন,আরো দুই দিন পর কাটতে বলেছেন।

খুব দ্রুত উত্তরটা দিয়ে দিলাম যাতে আর কোনো প্রশ্ন না করেন।উনিও আর কিছু না বলে রোগীর ফাইল দেখায় মনযোগ দিলেন।সারাদিন আজ এই মানুষটার দেখা মেলেনি,মনের মধ্যে যে তাকে দেখার এতটা আগ্রহ ছিল বুঝতে পারিনি,কেমন অদ্ভুত ভালোলাগায় বোকার মত ওনার দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে হচ্ছে।কিন্তু ভেতর ভেতর প্রচন্ড রাগ হচ্ছে এই অনুভূতির সঠিক সংজ্ঞা না পাওয়ায়।

–ভাইয়া কফি খাবেন?আরুশি আমাদের দুজনের জন্য কফি বানাচ্ছিল।

প্রীতির কথাটা শুনে ধ্বক করে উঠল বুকটা,আবার বুঝি কফি নিয়ে কিছু শুনতে হবে।

–আমি কফি খাইনা প্রীতি।পারলে এক কাপ চা করে দাও।

বলতে বলতে চশমার ফাঁকে চোৱাচোখে যে আমায় একবার দেখে নিলো সেটা বুঝতে আমার দেরি হলোনা।সাথে সাথে অন্যদিকে ঘুরে কফি বানানোয় মন দিলাম,নিশ্চই সেই বিদ্রুপের হাসি তার মুখে এখন মনে মনে ভাবলাম।

●●●
যতই চেষ্টা করি দূরে থাকার আমার সেই ব্যাড লাক এর বৃত্তের ব্যাসার্ধ ঠিক ই কেন্দ্রবিন্দুতে আমায় টেনে আনে, রেশাদ ভাই এর কাছে।আমাদের ওয়ার্ড টায় বর্তমানে ডক্টর সংখ্যা কম বলে কাজের প্রেসার টা একটু বেশী,অন্য সময়ের তুলনায় রোগীর সংখ্যাও বেশি আর একটু সিনিয়র বলে আমার ক্ষেত্রে সেটা টু দি পাওয়ার ইনফিনিটি ও হয়ে যায় মাঝে মাঝে। সুপিরিয়র হিসেবে রেশাদ ভাইয়ের কাছে প্রতিনিয়ত রিপোর্ট ও করতে হয় আমাকে।রাউন্ডে,মিটিং এ,ওটি তে কিংবা আড্ডায় যেখানেই হোক আমাকে অপমানের চেষ্টায় কখনো কমতি দেখিনা তার।রাউন্ড এ জুনিয়র দের সামনে পড়াশুনার কথা তুলে আমায় অপদস্ত করা,কিংবা ওটি তে ছোটখাট ভুলের জন্য বকা দেয়া কিংবা সেই মিস কফি বলে কাটা ঘায়ে নুনের ছিটা দেয়া কোনোটাই তিনি বাদ রাখেন না।আর এই সব কিছুর মাঝখানে আমার সেই খচখচ করা অনুভূতির নতুন সংজ্ঞা পেলাম একদিন উদাহরণ সহ।

●●●
বরাবর ই আত্মনির্ভরশীল বলে কারও সাহায্য নেয়াটা খানিকটা লজ্জার ই মনে হয় আমার কাছে।তাই রোটেশন এ যখন আমার প্রেজেন্টেশন এর দিন এলো ক্লিনিক্যাল মিটিং এ,লজ্জায় আমার সমস্যাগুলো কাওকে বলতে পারিনি।একা একা কবিতা আবৃত্তি কিংবা কোনো অনুষ্ঠানের নেপথ্যে কথা বলা আমার কাছে দুধ ভাত,ঠিক সেই আমি ই স্টেজ ভয়ে ভীত।তবুও বেশ কয়েকবার প্রেজেন্টেশন দিয়েছি ইন্টার্ন থাকাকালীন কিন্তু সেটাও দু বছর আগের কথা।আর এবার তো আমাদের ইউনিট কে রিপ্রেজেন্ট করতে হবে।আমাকে বলির পাঁঠা বানানোর সিদ্ধান্ত গৃহীত হবার পর থেকেই জোম্বির মত আচরন শুরু করলাম।

প্রেজেন্টেশন সাজাতে গিয়েও বেশ বিপদে পড়লাম,কিছু ইন্টারন্যাশনাল জার্নাল এর রেফারেন্স লাগবে,খুঁজে পাচ্ছিলাম না।সবাই অনেক করে বললো রেশাদ ভাই এর সাহায্য নিতে,উনি এসবে বেশ পটু।তবু আমার সেই অভিমান যার কোনো কারণ নেই,তাই ওনার কাছে গেলাম না।সেই মুহূর্তে আমার সমস্যা সমাধান হল আমার কলেজের বন্ধু তিয়াসের সহযোগিতায়।ওর বড় ভাই এবার থিসিস এর জন্য কিছু জার্নাল জোগাড় করেছিলেন যেগুলা আমার বেশ কাজে লেগে গেলো।এবার শুধু অপেক্ষার পালা দি ডে এর জন্য।

●●●

৩০ মার্চ সকাল ৭:৩০…দি ডে…

কনফারেন্স রুমে একে একে সবাই আসতে শুরু করেছে।আমি কাঁপা কাঁপা হাতে ল্যাপটপে কাজ করছিলাম।বারবার হাত মুচ্ছিলাম টিস্যু তে, আমার টেনশন এ প্রচুর হাত ঘামে তাই।

ঠিক ৮:১৫ মিনিটে প্রোগ্রাম শুরু হল।সামনে সার্জারী র ডিপার্টমেন্টাল হেড,হসপিটাল ডিরেক্টর,আমাদের ইউনিট এর সব স্যার রা,আমার সিনিয়র,কলিগ আর জুনিয়র সবার দিকে শুধু আমার চোখ দুটো ঘুরছিল।প্রজেক্টর এর আলোয় সব অন্ধকার হয়ে এলো আমার চোখের সামনে।হাত ভিজে উঠছে ঘামে।পাশেই সঞ্চালক ড.প্রতীক আমাকে ইশারা করছেন প্রেজেন্টেশন শুরু করার জন্য আর আমি তখন প্যানিক এট্যাক এ স্থবির।

চারপাশের গুঞ্জন আগে থেকেই চলছিল হঠাৎ করে তার মাঝে কেও আমার পাশে এসে দাঁড়ালো।প্রিয় কন্ঠ শুনেই কিনা একটু সম্বিৎ ফিরে পেলাম,পাশে তাকাতেই দেখি রেশাদ ভাই ,চোখাচোখি হল সেই অন্ধকারেও।চূড়ান্ত পর্যায়ে ধাক্কা খেলে আর কোনো অনুভূতি থাকেনা,আমার ক্ষেত্রেও ব্যতিক্রম নয়।সামনে বসা প্রায় পঞ্চাশ জন মানুষের থেকে এই একটি মানুষের কাছে আবার অপমানিত হব সেই ভাবনাই যেন শুধু আমার মনে খেলছিল।লজ্জায় অপমানে স্টেজ থেকে নামবো ঠিক সেই সময় উনি কি বলছে শুনতে পেলাম।

–আরুশি,ঠিক আছো তুমি?

আমার হাত থেকে মাইক টা নিতে নিতে বলল রেশাদ ভাই।আমি শুধু চোখের পানিটুকু আড়াল করার জন্য একটু মুখ ফিরিয়ে উপর নিচ করলাম মাথা।

–ব্রিদ ইন ব্রিদ আউট।এই চকোলেট টা মুখে দাও।

আমার হাতের মধ্যে একটা কিটক্যাট ধরিয়ে দিয়ে এবার মাইক হাতে বলা শুরু করলেন তিনি,

–আমরা প্রতিবার ই আমাদের প্রেজেন্টেশন একটু ভিন্ন করার চেষ্টা করি।এবারও ব্যতিক্রম নয়।প্রেজেন্টেশন এর শুরুটা তাই সিনিয়র হিসেবে আমি শুরু করব,আমার ইন্ট্রোডাক্টরী স্পীচ এর পর ড. আরুশি মূল প্রেজেন্টেশন এ যাবেন।আমার জন্যই একটু দেরি হলো,ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি শুরুতেই।

আমি অবাক দৃষ্টিতে রেশাদ ভাই এর কথা শুনছিলাম।যদিও কথাগুলো মিথ্যে আমি জানি,তবুও বাকি সবার মতোই ওনার কথাগুলো খুব সত্যি মনে হল।ধীরে ধীরে শক্তি ফিরে পেতে থাকলাম।দশ মিনিটের ইন্ট্রোডাকশন শেষে মাইক টা আমার হাতে তুলে দেয়ার সময় ও চোখের ইশারায় বুঝিয়ে দিলেন উনি আছেন।আমার প্রেজেন্টেশন শুরু হওয়ার পরেও উনি স্টেজ থেকে নামলেন না,একটু দূরে গিয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন।ঐটুকুই যথেষ্ট ছিল,ওনার সেই দাঁড়িয়ে থাকাটুকু আমার মধ্যে যে সাহস যোগালো সেইটুকুতেই সেবার পুরো হাসপাতালের সামনে অপমানিত হওয়া থেকে বেঁচে গিয়েছিলাম।

ভরসা খুব কঠিন একটা বিষয়।আমি আছি, থাকবো কথাগুলোর চেয়েও কারো একটা কাজ ই যথেষ্ট ভরসার কথা বলার জন্য।সেদিন সেই ভরসা পেয়েছিলাম আমি রেশাদ ভাই এর উপস্থিতিতে,তাই আর একবার শুধু হাসি নয়,ঠিক হাসির ভুল মানুষটার প্রেমে পড়েছিলাম হয়ত।

●●●
প্রচন্ড অপরাধবোধ আর লজ্জা নিয়ে সেদিন দুপুরবেলা গেলাম রেশাদ ভাই এর রুমে,

–রেশাদ ভাই,আসবো?

–মিস কফি,একটু ব্যস্ত আমি।এখনই বের হতে হচ্ছে।পরে কথা বলব তোমার সাথে।

–ভাইয়া..

–আমার অপারেশন এই রোগীগুলোর ফলো আপ দিয়ে দিও একটু।আই সি ইউ থেকে আসা রোগিটার ও।

–কিন্তু ভাইয়া সেগুলো তো অমিত ভাইয়া দেয় সবসময়।

–কেন?তোমার দেখতে কোনো সমস্যা??

–না না ভাইয়া।সেটা মোটেও বলিনি।আমি শুধু বলছিলাম আমি…

–এই ক্রিটিক্যাল রোগিগুলো তোমার আন্ডার এ থাকলে আমাকে এক্সট্রা চিন্তা করতে হবে না।আমি দুদিন থাকবোনা।বলতে পারো সেলফিস হয়েই নিজের শান্তির জন্য তোমায় দায়িত্ব টা দিলাম।

কথাটা বলেই মোবাইল টা হাতে নিয়ে দরজা দিয়ে যেতে যেতে সেই মাতাল করা হাসিটা উপহার দিয়ে গেল আমায় আর একবার।এই প্রথমবার মনে হল শুধু আমার জন্যই ছিল হাসিটা।

আমি বের হয়ে যাবো ঠিক সেই মুহূর্তে ওয়ার্ড বয় ঢুকে বলল,

–ম্যাডাম কফি।

–তোমার স্যার বের হয়ে গেছেন।নিয়ে যাও।

–স্যার নেই সেটা তো জানি ম্যাডাম।কিন্তু স্যার ই রেখে যেতে বলেছেন এই কফি ।

আমার অবাক করা দৃষ্টির সাথে যে একখানা আনন্দের হাসি ছিল তা কফির সাদা কাপের প্রতিবিম্বে ফুটে উঠল।আর মনে মনে বললাম,ধন্যবাদ আগন্তুক।

(( চলবে….)

●●●

(পরিশিষ্ট::

–রেশাদ ভাই,এই মাসের আমাদের ইউনিট এর সবার টাকা আর কি কি কিনতে হবে তার লিস্ট এইযে।

প্রতি মাসেই ইউনিট এর খাওয়া দাওয়ার জন্য সবাই মিলে যে চাঁদা দেয় সেই হিসেব নিয়েই ড.রেশাদ এর সামনে বসে ড.অমিত।একবার লিস্ট এ চোখ বুলিয়ে রেশাদ বলে উঠল,

–শুধু চা?? কফি ও কিনিস।

–ভাই এবার মানুষ কম টাকাও কম।নেক্সট মান্থ এ কিনবনি।আর কফি তো তেমন কেউ খায়না।

–ঠিক আছে,প্রবলেম নাই।

পরদিন সকালে একটা ব্রাজিলিয়ান হেজেলনাট কফির কৌটা এনে অমিতের হাতে দিয়ে রেশাদ বলল,

–বাসায় ছিল,আমার বড় বোন এনেছিল।আমি তো খাইনা।ইউনিট এ দিয়ে দিস।)

.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here