তোমারই আমি আছি পর্ব ৩

#তোমারই_আছি_আমি
পর্ব-০৩
#SaraMehjabin
আকাশভাইয়া আমাকে অন্ধকার ঘরটায় আটকিয়ে রেখে চলে গেল। আমি কান্নায় ভেঙে পড়লাম। আর এত কষ্ট সহ্য করতে আর পারছি না আমি। সবার সামনে কেন এমন অভিনয় করলে আকাশভাইয়া? তোমার অভিনয় দেখে আমি ভেবেছিলাম তুমি আজো আমার যন্ত্রণা সহ‍্য করতে পারো না; আমাকে কষ্ট দিলে তোমার রাগ হয়। আগে যেমন আমার ফুলের টোকা লাগলেও তুমি তাকে শেষ করে দিতে চাইতে। তুমি শাস্তি দিতে চাইলে আমি সব কষ্ট মাথায় তুলে রাখব আকাশভাইয়া। তোমার খুশির জন্য বিনা দোষে শাস্তি পেতে রাজি আছি হাজার বার। কিন্তু বারবার মিথ্যে অভিনয় করে আমার মনটাকে ভেঙে দাও কেন? কি দোষ করেছি তোমার কাছে?
অনেকটা সময় পেরিয়ে গেল। একা একা অন্ধকারের মধ্যে বসে আছি। আকাশভাইয়া এখনো আসে নি। ভাইয়া কি জানে না একলা অন্ধকারে আমি কত ভয় পাই। তাও এতক্ষণ আটকিয়ে রেখেছে। আসছে না। অবশ্য এখন আমার জন্য তার কিছুই আসে যায় না। অথচ একসময় আমিই ছিলাম তার সবকিছু।
আমি অন্ধকারে বসে থাকতে থাকতে আপনারা বরং আমার অতীত থেকে ঘুরে আসুন।
আকাশভাইয়া আমার আপন মামাতো ভাই হলেও ওদের সাথে আমাদের কোন সম্পর্ক ছিল না। আমার নানারবাড়ির পরিবার অনেক ধনী আর আমার বাবা ছিলেন খুবই সাধারণ মধ‍্যবিত্ত পরিবারের। তাই মা আর বাবার বিয়েটা মায়ের ফ‍্যামিলির কেউই প্রথমে মেনে নেয় নি। সময়ের সাথে নানা-নানু মেনে নিলেন। কিন্তু বড়মামা অর্থাৎ আকশভাইয়ার বাবা আম্মুকে খুব ভালবাসতেন। আম্মু তার মতের বিরুদ্ধে গিয়ে একটা সাধারণ ছেলেকে বিয়ে করেছে এটা তিনি কিছুতেই মেনে নিলেন না। বড়মামা সুযোগ পেলেই আব্বুকে অপমান করতেন আর আব্বুর অপমানের কারনে আম্মু বড়মামার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন। নানুর বাসায় গেলেও আমি আর ভাইয়া,,আকাশভাইয়া আর মাইশার সাথে কথা বলতাম না। কিন্তু ওদেরকে আমরা আবার ওরা আমাদেরকে দেখলেই মুখ ভেংগাতাম। একদিন আম্মু আমাকে নিয়ে নানুর বাসায় গেছে। তখন অনেক ছোট আমি। পাঁচ-ছয় বছরের। আম্মু দোতলায় নানুর ঘরে কথা বলছে। আমি নিচতলায় খেলছি। হঠাৎ দেখলাম একটা লাল রঙের সাইকেল। সাইকেল আমার খুব ভালো লাগত। কিন্তু আমাদের বাসায় কোন সাইকেল ছিল না। তাই উঠার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সিটটা এত উঁচু যে কিছুতেই বসতে পারছিলাম না। উঠতে গিয়ে চাকার মধ্যে পা আটকে গেল আমার। ভয়ে-ব‍্যথায় চিৎকার করে কান্না শুরু করলাম। আমার চিৎকারে আকাশভাইয়া এসে দেখে আমি তার সাইকেলের মধ্যে পা আটকে ভ‍্যা ভ‍্যা করছি। আকাশভাইয়া তাড়াতাড়ি আমাকে কোলে বসিয়ে আমার পা সাইকেলের চাকা থেকে বের করল। এমনভাবে বের করল যাতে একটুও ব‍্যথা না পাই। তাও ভয়ে তাকে জড়িয়ে ধরলাম। আমার পা কেটে রক্ত পড়ছিল। আমাকে কোলে তুলে আকাশভাইয়া তার রুমে নিয়ে বিছানায় বসাল। তারপর আমার পায়ে ওষুধ লাগিয়ে দিল। আমি তখনো কাঁদছি।
“উফ,,এত্ত নরম কেন তুই? মনে হচ্ছে মানুষ না একটা পুতুলকে ওষুধ লাগিয়ে দিচ্ছি। এখন থেকে পুতুল-ই ডাকব তোকে; ঠিক আছে পুতুল?”
বলেই আকাশভাইয়া আমার গালটা ধরে টিপে দিল। হাসি দিয়ে আবারও বলল, পুতুল একটা।
এভাবেই আমার সঙ্গে আকাশভাইয়ার বন্ধুত্বের শুরু। আকাশভাইয়া তার পুতুলকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতে পারত না; সবসময় আগলে রাখত আমাকে। আমার কোনো চাওয়াকে অপূর্ণ থাকতে দিত না আকাশভাইয়া।তার জীবনে সবকিছু জুড়ে আমিই ছিলাম; শুধুই আমি।
আমাদের দুজনের বাবা-মা ব‍্যাপারটা পছন্দ করতেন না। আমি ছোট বিধায় আমাকে আব্বু-আম্মু কিছু বলত না। আকাশভাইয়াকে তার বাবা-মা অনেক শাসন করতেন। কিন্তু আকাশভাইয়া ছোট থেকেই প্রচুর জেদি টাইপের তিনি কারো কথা শুনত না। আমার ভালবাসাময় সময়গুলো একদিন একটা ঝড়ে ওলটপালট হয়ে গেল।
এইসব ভাবতে ভাবতে কখন ঘুমিয়ে পড়েছি খেয়াল নেই। ঘুম ভাঙতেই অনুভব করলাম কেউ আস্তে আস্তে আমার শরীরের দড়ির বাধন খুলছে। তারমানে আকাশভাইয়া আমাকে ছেড়ে দিচ্ছে!
ব্রাউন কালার গেন্জি পড়াএকটা ছেলে মাথা নিচু করে আমার পায়ের বাধন খুলছে। ছেলেটা আকাশভাইয়া নয় বুঝতেই পারছি। কিন্তু কে সে? তাছাড়া আকাশভাইয়া দরজা লক করে গিয়েছিল সে ঢুকল কিভাবে?
চলবে
(স‍্যরি। ফোনে নেট ছিল না তাই গল্প পোস্ট দিতে এত দেরি করলাম।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here