-ভাইয়া গো, আমি তোমার বাচ্চার মা হতে চলেছি। আর তুমি আমাকে ফেলে অন্য কাউকে বিয়ে করছ ! এমনটা হতে পারে না। তুমি আমাকে ঠকাতে পার না।(মেঘা)
কথাগুলো একদমে বলে, হাঁপাতে লাগলাম। আমার কথা শুনে উপস্থিত সবাই ইতিমধ্যে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে।বিয়ে বাড়ির সবাই চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। বিশেষ করে ত্বকি ভাইয়ার মুখটা একদম দেখার মতো। নিজের নামে এত বড়ো অপবাদ পেয়ে স্তব্ধ হয়ে রয়েছে। আমি একপল ভাইয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আবার কান্না করতে করতে বললাম,
– ত্বকি ভাইয়া, তুমি আমাকে ঠকাতে পারো না। তুমি কি ভুলে গিয়েছো আমাদের বিয়ের কথা?(মেঘা)
আমার কথা শুনে ত্বকি ভাইয়ার আম্মু অর্থাৎ আমার মামি আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলেন,
– সত্যি বলছিস মা, আমি কী সত্যিই দাদি হতে চলেছি?(ত্বকির মা)
– হ্যাঁ মামি।আমি সত্যি বলছি। কিন্তু তোমার ছেলে স্বীকার করেছে না কেন? কেন আমার সন্তানকে স্বীকার করছে না। ও মামি, আমার বাচ্চার কি হবে? আমি ওকে নিয়ে কোথায় যাব?
,
[আমি মাহিমা জেবিন মেঘা। সবেমাএ ক্লাস টেন এ পড়ি। এখনো আমার বয়স আঠারো বছর হয় নি। আর যাকে আমি স্বামী বলে দাবি করছি, তার নাম হলো আবিদ রাহমান ত্বকি। সম্পর্কে আমার মামাত ভাই। দেখতে মাশাআল্লাহ যেমন সুন্দর ঠিক তেমন তার বাজে ব্যবহার। ভাইয়া একজন ডক্টর। মানুষের সেবা করে তার মন ভরা না, তাই প্রতিদিন আমাকে পড়াতে যাই।তাকে দেখলে আমার অনেক ভয় লাগে।]
আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ভাইয়ার হবু স্ত্রী জাইমা আপু বলে উঠলো,
– আমি এই মেয়ের কথা বিশ্বাস করি না। আমার প্রমাণ চাই। (জাইমা)
আমি জাইমা আপুর কথা শুনে ব্যাগ থেকে রেজিস্ট্রার পেপের বের করে তার হাতে দিলাম। পেপের টা দেখার সাথে সাথে জাইমা আপু চিৎকার করে বলতে লাগল,
– এটা হতে পারে না।ত্বকি তুমি এমটা কেন করলে? মেঘার মতো একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করলে? এমনটা কেন করলে তুমি?(জাইমা)
ত্বকি ভাইয়া এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে।
– জাইমা চল,, (জাইমার বাবা)
– না বাবা। আমি যাব না। (জাইমা)
– কোন কথা না। চল, এরকম ছেলের সাথে আমি তোর বিয়ে দেব না। ত্বকি তুমি একদম ঠিক করলে না। দেখে নেব সবাইকে। (জাইমার বাবা)
রাগী কন্ঠে কথা কথাগুলো বলেই তিনি জাইমা আপুকে নিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলেন।
,
ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মাটির দিকে তাকিয়ে আছে। ফর্সা মুখটা একদম লাল টমেটোর মতো হয়ে আছে। দেখে বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুর রেগে গিয়েছে।
মামা শান্ত কন্ঠে ভাইয়াকে বলে উঠলো,
– ত্বকি, ভুল যেহেতু করেছ তাই তোমাকে শাস্তিও পেতে হবে। (ত্বকির বাবা)
– হুম। (ত্বকি)
– এই মূহুর্তেই তুমি মেঘাকে বিয়ে করবে। আজ থেকে মেঘা আমাদের বাড়িতে থাকবে। (ত্বকির বাবা)
বিয়ের কথা শুনে আমার ভেতরটা ধক করে উঠলো।আমি এই রাগী লোকটাকে বিয়ে করলে পাগল হয়ে যাব।আমার মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালাম। বুঝতে চাইলাম যে আমি ভাইয়াকে বিয়ে করব না।
কিন্তু আমাকে কেউ বুঝল না।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়া নামক প্রানী আমার স্বামীতে রুপান্তরিত হলো। সবাই অনেক খুশি ।বিশেষ করে মামি তো আমার হাত ধরে রেখেছে।
মামিকে আস্তে করে বলে উঠলাম,
– মামি গো, আমার না প্রচুর ভয় লাগছে। (মেঘা)
– আরে পাগলী ভয়ের কিছু নেই।তুই নিশ্চিতে থাক। (ত্বকির মা)
– কীভাবে? আজকে ভাইয়া নিশ্চই আমাকে শেষ করে ফেলবে। (মেঘা)
– আমি থাকতে তোর কিছু হবে না। আমার ছেলে ওতোটাও খারাপ না। (ত্বকি মা)
মামি কথা শেষ করেই ভাইয়া বোন তিথি আপুর সাথে আমাকে ভাইয়ার রুমে পাঠিয়ে দিল।আপু খুবই খুশির সাথে বলে উঠলো,
– জানিস মেঘা, আমি তোকে ভাইয়ার বউ হিসেবে চাইতাম। কিন্তু কাউকে কিছু বলতে পারতাম না কারন তুই ভাইয়ার চেয়ে অনেক ছোট। আজকে না আমি অনেক খুশি।(তিথি)
– সত্যি?(মেঘা)
– হ্যাঁ রে বোন। আজকে থেকে তুই আমার ভাবি।আচ্ছা আজকে যে তুই প্রেগনেন্ট এর কথা কেন বললি? তুই কি প্রেগনেন্ট?(তিথি)
আপুর কথা শুনে আমি খিলখিল করে হেসে দিয়ে বললাম,
-হুম। (মেঘা)
– তুই থাক।ভাইয়া আসার সময় হয়ে গিয়েছে। আমাকে দেখলে আবার বকা দিবে। আমি চলে যাই।তোর থেকে অনেক কিছু জানার আছে।সকালে জেনে নিব। (তিথি)
বলেই আপু চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়াতেই আমি খপ করে আপুর হাত ধরে বলতে লাগলাম,
– আপু যেও না। আমি তোমার সাথে থাকব। প্লিজ, তোমার সাথে নিয়ে চল। (মেঘা)
– কেন রে? (তিথি)
– দেখ আপু, আমার আনইজি ফিল হচ্ছে। আগে যখন তোমাদের বাসায় তখন তো তোমার সাথে থাকতাম। তাহলে এখন কিভাবে ভাইয়ার সাথে থাকব? আমি ভাইয়ার সাথে থাকব না।(মেঘা)
– মেঘা মনি, তুই তো এখন ভাইয়ার বউ। এখন থেকে তোর ভাইয়ার সাথে থাকতে হবে। বুঝেছিস?(তিথি)
বলেই আপু আর দেরি করলা না। আমাকে একা ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,
এক ঘন্টা ধরে বিছানায় বসে আছি। এখনো ভাইয়ার আসার নাম নেই। ভয়ে আমার হাত পা অবস হয়ে আসছে।
কিছুক্ষণ পর ভাইয়ার রাগ মাখা গম্ভীর কন্ঠে শুনে আমি বুঝতে পারলাম ভাইয়া চলে এসেছে,
– কিরে তোর তো দেখি, সাহস অনেক বেড়ে গিয়েছে?(ত্বকি)
– নিশ্চুপ (মেঘা)
-প্রেগনেন্ট এর মানে কি জানিস? (ত্বকি)
– নিশ্চুপ(মেঘা)
– এই মেয়ে, কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)
ভাইয়া ধমক দিয়ে বলে উঠলো।
– মনে আছে, আজকে সকালে যখন তকে প্রশ্ন করে ছিলাম ‘প্রজনন কি’, তখন তুই বলতে পারিস নি।বলেছিলাম কালকে তোকে শাস্তি দিব।
কিন্তু কালকে না, এখন তোকে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেব,(ত্বকি)
বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার তো ভয়ে বমি,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
বলেই ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল। আমার তো ভয়ে বমি পাচ্ছে।
শত চেষ্টা করেও কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। চোখ বন্ধ করে কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,
– ভাইয়া আ, আমি আম্মুর কাছে যাব। আমাকে আম্মুর কাছে দিয়ে আসেন। (মেঘা)
ত্বকি মেঘাকে কাঁদতে দেখে হতভম্ব হয়ে গেল। বিরক্ত ভর্তি কন্ঠে বলে উঠলো,
– স্টপ,, কান্না বন্ধ কর।(ত্বকি)
ভাইয়ার ধমক শুনে আমি আর জোরে কেঁদে ফেললাম। কান্না দেখে ভাইয়া আরো জোরে ধমক দিয়ে বলে উঠলো,
– এই মেয়ে, কান্না বন্ধ করবি? নাকি কানের নিচে একটা দিব? (ত্বকি)
ভয়ে আমি মুখ চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।
– আমার দিকে তাকা। লুক এট মি। (ত্বকি)
আমি ভাইয়ার দিকে তাকালাম না। চোখ বন্ধ করে কাঁদতে লাগলাম।
– কান্নাকাটি বাদ দিয়ে, যা মুখ ধুয়ে আয়।(ত্বকি)
ভাইয়ার পারমিশন পেয়ে আর এঅ মূহুর্ত্যও দেরি করলাম না। দৌড়ে গিয়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম।
পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে ফেলাম। ভাইয়ার সামনে যেতে ইচ্ছে করছে না। ইচ্ছে করছে ভাইয়ার সামনে না গিয়ে বাথরুমে শুয়ে থাকি। কিন্তু না তা একেবারেই সম্ভব না। কারন ভাইয়ার বাথরুমটা অনেক ভুতুরে। মুখে পানি দেওয়ার সময়ে মনে হচ্ছিল, কেউ পিছনে দাড়িয়ে আছে। তাই আর বাথরুমে দেরি করলাম না।
,,
রুমে এসে দেখলাম, ভাইয়া ছোফার উপর বসে লেপটপ কোলে নিয়ে কাজ করছে। মনের ভয়কে সাইডে রেখে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া আমি আম্মু কাছে যাব। আমি তো আম্মুকে ছাড়া ঘুমতে পারি না।(মেঘা)
মনে হয় ভাইয়া আমার কথা শুনে বিরক্ত বোধ করলেন। গম্ভীর চাউনিতে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
– কোথাও যাবি না তুই। যা বিছানায় যেয়ে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো শুয়ে পড়।(ত্বকি)
– না ভাইয়া, আমি আপনার রুমে থাকব না। আমি আম্মুর কাছে থাকব, (মেঘা)
– আসলেই তোকে বিয়ে করা আমার একদম ঠিক হয়নি। আমার আগেই বোঝা উচিত ছিল তুই একটা বাচ্চা। তোর চেয়ে জাইমাকে বিয়ে করলেই বোধহয় ভালো হতো। (ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমার বুকের ভেতর মোচর দিয়ে উঠলো। কোন কথা না বলে চুপচাপ বিছানায় গিয়ে পড়েলাম। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল। কারো উপকার করতে যেয়ে যে নিজের পায়ে কুড়াল মারলাম তা ভালো করেই বুঝতে পারছি। কান্না করতে ঘুমিয়ে পড়লাম।
,,
সকাল বেলা তিথি আপুর ডাকে আমার ঘুম ভেঙে গেল।
– মেঘা,, তাড়াতাড়ি উঠে পড়। (তিথি)
আপুর ডাকে উঠে বসলাম। কিছুটা সময় আপুর দিকে তাকিয়ে রইলাম। আশেপাশে পর্যবেক্ষণ করে দেখলাম ভাইয়া রুমে নেই। তাই আস্তে করে উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
– কিরে ভাবি মনি? তুই তো দেখি এক রাতে আরো বেশি সুন্দর হয়ে গিয়েছি, রহস্য কি?(তিথি)
আপুর মুখে ‘ভাবি মনি’ ডাকটা আমার কাছে সুবিধাজনক লাগল না। ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলাম,
– তারমানে আমি আগে সুন্দর ছিলাম না। (মেঘা)
– আরে না রে পাগলী, আজকে তোকে একদম নতুন বউ এর মতো লাগছে। তা রাতে কি হয়েছে রে? (ত্বকি)
– মানে?(মেঘা)
– ভাইয়া কি তোকে,, (তিথি)
আপু কথা শেষ করার আগে ভাইয়া রুমে ঢুকে পড়ল। সাথে সাথে আপু চুপ হয়ে গেল। কয়েক সেকেন্ড পর বলে উঠলো,
– চল, সবাই তোকে খেতে ডাকছে।(তিথি)
বলেই আপু আমার হাত ধরে খাবার রুমে নিয়ে এলে।
,,,
সবাই একসাথে বসে গল্প করছিল। কিন্তু আমাকে দেখে সবাই চুপ হয়ে গেল। একপল আম্মুর দিকে তাকালাম। আম্মুকে দেখে মন খারপ করে, চেয়ারে বসলাম।
– কিরে মা, ঘুম কেমন হলো? (মেঘার আম্মু)
আমি আম্মুর কথার কোন উত্তর দিলাম না। থম মেরে বসে রইলাম। হয়তো আম্মু বুঝতে পা
পেরেছে যে আমি রেগে আছি। তাই আমার দিকে তাকিয়ে মামাকে বললেন,
– ভাইজান দেখ, আমার মেঘা কত বড়ো হয়ে গিয়েছে।
আম্মুর কথায় মামা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,
– হ্যাঁ সত্যিই। মামনিটা বড়ো হয়ে গিয়েছে। কালকে আমাদের কত বড়ো বিপদ থেকে বাঁচাল। অন্য কেউ হলে পারত না।
মামার মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমি গর্বিত বোধ করছি। মনটা নিমেষে ভালো হয়ে গেল।
,,
একটু পর ভাইয়া এসে চেয়ার টেনে টেবিলে বসলেন। মন হয় শাওয়ার নিয়েছেন। তার ছোট ছোট চুল দিয়ে পানি পড়ছে।
,,
হঠাৎ করে ভাইয়া আম্মুকে বলে উঠলো,
– ফুপি, (ত্বকি)
– জী বাবা বল। (মেঘার মা)
– তোমাদের ফ্ল্যাটের চাবি দেও। আমি মেঘার বউ গুলো নিয়ে আসব। (ত্বকি)
– ঠিক আছে। (মেঘার মা)
বই এর কথা শুনে পেটের মধ্যে মোচড় দিয়ে উঠলো। তারমানে আজকে থেকেই আমাকে পড়তে হবে। আমি গভীর চিন্তায় পড়ে গেলাম।
,,
মামির কথায় আমার চিন্তার ব্যাধাত ঘটলো। মামি ভাইয়াকে বলেতে লাগলেন,
– ত্বকি,, (ত্বকির মা)
– হুম। (ত্বকি)
– তুই যে রেডি হয়েছিস, কোথাও যাবি? (ত্বকির মা)
– হসপিটালে যাব। একটু আর্জেন্ট কাজ আছে।(ত্বকি)
– আচ্ছা শোন, তাড়াতাড়ি চলে আসবি। তোর নানুমনিরা আসছে মেঘাকে দেখতে। (ত্বকির মা)
– আচ্ছা। (ত্বকি)
খাওয়া শেষ করে ভাইয়া চলে গেল।তারপরে মামি আমাকে খাইয়ে দিলেন।
,,
যোহরের আযান দিয়েছে, মিনিট পাঁচেক আগে। একটু আগে শাওয়ার নিয়েছি। চুলগুলো থেকে পানি পড়ছে। ভাইয়া এখান হসপিটাল থেকে আসেনি।
একটু পরেই হয়তো নানুমনিরা চলে। তাই আম্মু আমাকে শাড়ি পড়তে বলেছে। লাল রংয়ের একটা শাড়ি হাতে নিয়ে বসে আছি। কীভাবে পড়ব ভাবছি। তিথি আপু আমাকে বিপাকে ফেলে কোথায় যেন চলে গিয়েছে।
আমি চুপ করে বসে ভাইয়ার রুমটা পর্যবেক্ষণ করছি। এত পরিপাটি মানুষ কিভাবে হয়, তাই ভাবছি।
,,
হঠাৎ হনহন করে ভাইয়া রুমে প্রবেশ করল।তাকে দেখে আমি ছিঁটটে উঠলাম।
ভাইয়া ক্লান্ত চাউনিতে আমার দিকে তাকিয়ে চোখ দুটো বড়ো বড়ো করে ফেললেন।তার তাকানোর ধরন দেখে আমি লজ্জায় শেষ। অস্থিরতা শুরু হয় গেল। ভয়ে কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,
– ভাইয়া আআপনি বেরিয়ে যান। আমি শাড়ি পড়ব,
আমার কথা শুনে ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
– আমার রুম, আমি কেন বের হব?প্রয়োজন হলে,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৩
জাবিন মাছুরা(লেখিকা)
,,
আমার কথা শুনে ভাইয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে উঠলো,
– যাব না। আমার ঘর আমি কেন যাব? প্রয়োজন হলে তুই যাবি।(ত্বকি)
ভাইয়ার কথা শুনে আমি কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,
– প্লিজ ভাইয়া, আপনি একটু বাইরে যান।(মেঘা)
– না, আমি যেতে পারব না। দেখ, আমি প্রচুর ক্লান্ত তাই এখন ঘুমোব। আমাকে ডিস্টাব করবি না। তোর যেখানে ইচ্ছে সেখানে থাক। (ত্বকি)
কথাগুলো বলেই ভাইয়া বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লেন। আমি শাড়ি হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া চোখ বন্ধ করে রয়েছে।মানুষ যে কতটা গম্ভীর হতে পারে তাকে না দেখলে কখনো জানতে পারতাম না।
কিছুক্ষণ পর আপু রুমে এসে বলে উঠলো,
– কিরে মেঘা, তুই এখনো শাড়ি পড়িস নি?(তিথি)
আপুর কথা শুনে আমি অবাকের সাথে বলে উঠলাম,
– আমি একা কীভাবে পড়ব?(মেঘা)
– সরি, ভুলে গিয়েছিলাম যে তুই একটা পিচ্চি। আচ্ছা আমি পড়িয়ে দিচ্ছি। (তিথি)
বলেই আপু আমার ওড়নায় হাত দিতেই, আমি বিষ্ময়ের সাথে বলে উঠলাম,
– অসম্ভব, আমি এই ঘরে পড়ব না।(মেঘা)
– কেন রে?(তিথি)
– এই ঘরে তো ভাইয়া শুয়ে আছে। (মেঘা)
– সমস্যা নেই। ভাইয়া ঘুমিয়ে পড়েছে। তাছাড়া তুই তো ছোট মানুষ। (তিথি)
আপুর কথা শুনে আমার মাথা ঘুরে উঠলো। বলে কি আমি নাকি ‘ছোট মানুষ’।কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,
– তুমি কি পাগল হয়ে গিয়েছ? এমন কথা বললে আমি কিন্তু কান্না করে দিব।
মেঘার কথা শুনে তিথি হতবম্ব হয়ে গেল। সামান্য একটা ব্যাপারে মেয়েটা কেঁদে দিতে চলছে। মেঘার কান্না মাখা মুখ দেখে সে বলে উঠলো,
– আরে বাবা, কাঁদতে হবে না। আমার রুমে চল।(তিথি)
আপুর বলতে দেরি, তার আগেই আমি ভাইয়ার রুম থেকে বেরিয়ে গেলাম। এক দৌড়ে আপুর রুমে চলে এলাম।
আপু আমার পিছু পিছু চলে এসে বলে উঠলো,
– যা বাথরুমে যেয়ে ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে আয়। (তিথি)
– কেন?একটু আগেই তো গোসল করলাম।(মেঘা)
– আরে গাধী,তোকে সাঁজাব তাই।(তিথি)
– না ধুলে হবে না। (মেঘা)
– না হবে না। যা,, (তিথি)
– যাচ্ছি।(মেঘা)
আপুর কথা মতো ফ্রেশ ওয়াশ দিয়ে মুখ ধুয়ে এলাম।
,,
আপু আমাকে তার সামনে বসিয়ে ব্যাগ থেকে আটা-ময়দার বের করল। যা দেখেই আমার অস্থির লাগতে শুরু করল। ছোট একটা চোক চেপে আপুকে বলে উঠলাম,
– আপু এগুলো না দিলে হয় না। শুধু শাড়ি পড়ি?(মেঘা)
– না হয় না। চুপ,, (তিথি)
– আচ্ছা বকা দেও কেন? অল্প করে দিও। (মেঘা)
– ঠিক আছে অল্প করেই দিব। (তিথি)
আপু আমার কথা মতো মুখে হালকা মেকআপ, ঠোঁটে হালকা লাল রংয়ের লিপস্টিক, চোখের নিচে কাজল আরো কি কি যে দিয়ে দিল। মুখের সাজ কমপ্লিট করার পরে, সুন্দর করে শাড়ি পড়িয়ে দিল।
– ওয়াও ভাবি, তোকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। আমি তো শেষ,, (তিথি)
আপুর মুখে নিজের প্রশংসা শুনে আমি হালকা হেসে দিয়ে বলে উঠলাম,
– মিথ্যে কথা বলো কেন? (মেঘা)
-মিথ্যে বলছি না। তুই একবার গিয়ে আয়নায় দেখ।
আপুর কথা মতো আয়নার সামনে গিয়ে দাড়ালাম। নিজেকে দেখে অবাক হয়ে গেলাম। আমাকে একদম চেনা যাচ্ছে না। অনেকটা বড়ো বড়ো লাগছে।
,,
শাড়ি পড়ে আপুর রুমে বসে রয়েছি।ভাইয়ার রুমে আর যায়নি ।আপু আমাকে একা রেখে গোসল করতে গিয়েছে।
হঠাৎ করে মামির আওয়াজ পেলাম। হয়তো আমাকে ডাকছে। তাই মামির কাছে যাওয়ার জন্যে আপুর রুম থেকে বেরিয়ে পড়লাম।
শাড়ি পরে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।ভুল করে শাড়ির সাথে পা বেজে উঠলো। সাথে সাথে চোখ-দুটো বন্ধ করে ফেলালাম।
কিন্তু পড়ে যাওয়ার আগেই কারো শক্ত হাতে স্পর্শ পেয়ে শিউরে উঠলাম।
(চলবে)
[