তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ২৬+২৭

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৬
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
হঠাৎ করে ত্বকি মেঘার হাত ধরে নিয়ে যাওয়াতে মিমিমা সহ ঘরের উপস্থিত সবাই মিটমিট করে হেঁসে যাচ্ছে। শুধু মাএ মামিমার বোন সারার মুখে হাঁসির চিহ্ন নেই। সারা চিন্তায় পড়ে গিয়েছে। তার চিন্তার একমাত্র কারন মেঘা কি ত্বকির ওয়াইফ নাকি বোন। এত ছোট মেয়ে কিভাবে কারো বউ হতে পারে। হাজারো চিন্তে ঘুরপাক খাচ্ছে সারার মাথায়। অবশেষে সে চিন্তার অবসান ঘটাতে মুখ ফুঁটে মিমাকে চিন্তাত সুরে বলে উঠলো,

-মিমিমা। (সারা)

সারার ডাক শুনে মিমিমা হেঁসে দিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল,

-হ্যাঁ, কিছু বলবি। (মিমমা)

-হুম। একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল। (সারা)

-বল। কি হয়েছে? (মিমমা)

-ওই মেঘা আছে না, তোর চাচাতো বোন। (সারা)

-হুম, কি করেছে মেঘা। (মিমমা)

– একটু আগে একটা ছেলে এসে মেঘার হাত ধরে নিয়ে গেল। সে কি মেঘার ভাই? (সারা)

সারার কথার উওরে মিমমা বলল,

-হ্যাঁ ওই ছেলেটা মেঘার ভাই। (মিমমা)

মিমিমার কথা শুনে সারার ঠোঁটের কোণে হাঁসির রেখে দেখা দিল। চিন্তার আঁধারে ঢেকে থাকে কালো মুখটি খুশিতে জ্বলজ্বল করে উঠলো।

সারা মুখের দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকায়ে মিমমা বলে উঠলো,

-কিন্তু,, (মিমমা)

মিমিমার কথা বলা শেষ করতে না দিয়ে সারার বলল,
-কিন্তু কি? (সারা)

-কিন্তু এখন ওই লোকটা মেঘার স্বামী। কিছুদিন আগে বিয়ে হয়েছে ওদের। (মিমমা)

মিমিমার কথা শুনে সারার মনের সব আশা ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। নিমেষেই মুখটা আগের ন্যায় কালো হয়ে গেল। সারা বিচলিত কন্ঠে মিমমা কে বলল,

-মেঘা তো অনেক ছোট। এই বয়সে তোরা ওকে বিয়ে দিয়ে দিলি। (সারা)

-মেঘাকে বিয়ে দেওয়ার কোন ইচ্ছে ছিল না আমাদের। আমরা জানতাম না যে, ওর বিয়ে হয়ে গেছে। চাচি বিয়ের পরের দিন আমাদের খবরটা জানিয়েছেন।(মিমমা)

সারা মিমমার সম্পন্ন কথা শুনে মন খারাপ করে বলল,

-ওহ।(সারা)

,,
প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেল, আমি চুপ করে ত্বকি ভাইয়ার সামনে বসে আছি। কিছুক্ষণ আগে সে দরজা বন্ধ করে দিয়েছে যেন আমি ঘর থেকে বের হতে না পারি। আজকে বোধহয় আমাকে আর মিমিমা আপুর কাছে যেতে দেবেন না তিনি। দূর, কত ইচ্ছে ছিল আপুর বর কে দেখব। শাস্তি স্বরূপ রুম থেকে বের হতে দিবেন না স্পষ্ট বলে দিয়েছে ভাইয়া। ভালো লাগছে না। এভাবে চুপ করে মূর্তির ন্যায় বসে থাকতে খুবই বিরক্ত লাগছে আমার। ত্বকি ভাইয়া চেয়ারে বসে গম্ভীর মুখ করে মনোযোগ সহকারে ফোন স্কোল করছেন। দেখে মনে হয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করছেন। আমি তাকে আড় চোখে পর্যবেক্ষণ করছি। যত বার তার মুখের দিকে তাকিয়ে দেখি ঠিক তত বার যেন বুকের ভেতর অস্থিরতা শুরু হয়ে যায়। একটা মানুষ এতটা গম্ভীর হতে পারে কি করে, তাকে না দেখলে কখনো জানতে পারতাম না।

অন্যদিকে,

ভার্সিটি থেকে একা একা বাসায় এসেছে তিথি। এসেই সাদের রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ হাঁটুতে মুখ গুঁজে, ফ্লোরে বসে আছে সে। তার চোখ দিয়ে ঝরঝরে জল পড়ছে। তবে দুঃখে নয় বরং খুশীর জল। এতো খুশি সে কখনো হয় নি। খুশিতে প্রায় পাগল পাগল হয়ে গেছে। আজ যদি নিলা চিঠিটা সাদকে না দিত তাহলে সে কখনো জানতেই পারত না সাদ তাকে কতটা ভালোবাসে। নিজের উপর প্রচন্ড ঘৃণা হচ্ছে তার। সাদের বলা প্রতিটি কথা তার বুকে যন্ত্রণা সৃষ্টি করছে। সে সহ্য করতে পারছে না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তার। খুব কষ্ট হচ্ছে, এতটা কষ্ট হচ্ছে যে নিজেকে শ্বাসকষ্টের রোগী মনে করছে। তিথির আর রুমের মধ্যে থাকতে পারল না। দৌঁড়ে চলে গেল সাদের মায়ের রুমে। মুখ দিয়ে কোন কথা না বলে, ছূটে গিয়ে জড়িয়ে ধরল তাকে। সাদের মাকে শক্ত করে চেপে ধরে কাঁদতে লাগল সে। এবার আর আস্তে বা মুখ বুজে নয়। জড়ে জড়ে চিৎকার করে কাঁদতে লাগল।

হঠাৎ তিথির এমন কান্ডে সাদের মা ভয় পেয়ে উঠলেন। সেও তিথিকে দু হাত দিয়ে আগলে ধরলেন। তিথির মাথায় হাত বুলিতে লাগলে। ভাঙা গলায় তিথিকে জিজ্ঞেসা করলেন,

-কি হয়েছে তোমার মা, কাঁদছ কেন? সাদ কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছে? (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথা শুনে তিথি ও স্পষ্ট সুরে কাঁদতে কাঁদতে বলল,

-মা, আপনার ছেলে আমাকে কোন কষ্ট দেয় নি। কিন্তু আমি তাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি। (তিথি)

তিথির কথা শুনে সাদের মায়ের মুখে এক চিলতে হাঁসি ফুটে উঠেছে। সে মনে মনে বলল, দেরিতে হলেও মেয়েটা সাদকে বুঝতে পেরেছে।

-ও মা, আমি না অনেক পাপ করে ফেলেছি। (তিথি)

তিথির কথাই সাদের মা চুপ করে রইলেন।তিথি পাগলের মতো আবার ও বলতে লাগল,

-জানেন মা,আল্লাহ আমাকে কোনদিনও ক্ষমা করবেন না। (তিথি)

সাদের মা তিথিকে সামনে নিয়ে বললেন,

-আরে বাবা, তুমি আবার কি পাপা করেছে? হুম? (সাদের মা)

-আমি যে আমার স্বামীকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। মা, আপনি তো বড়ো আপনি একটু বলুন না, আল্লাহ কি আমাকে কখনো ক্ষমা করবে না? আমাকে কি আমার পাপের শাস্তি দেবে? (তিথি)

সাদের মা তিথির চোখের পানি মুছে দিলাম। কাঁদতে কাঁদতে মেয়েটার মুখের অবস্থা প্রচুর খারাপ হয়ে গিয়েছে ।ফর্সা মুখটা চোখের জলে গোলাপি রং ধারন করেছে। চোখ মুখ ফুলে একদম বেলুনের ন্যায় ধারন করেছে। সাদের মা কি বলে তিথিকে শান্তনা দেবে তা ভেবে পাচ্ছে না।

-পাগলী কাঁদে না। চিন্তা কর না আল্লাহ তোমাকে কোন শাস্তি দেবে না। তুমি তো ইচ্ছে করে কিছু কর নি। (সাদের মা)

-সত্যি? (তিথি)

-হুম সত্যি। আর একদম কান্না করবে না। ঠিক আছে? আমার ছেলে যদি তোমাকে এভাবে কাঁদতে দেখে, তাহলে তো সে পাগল হয়ে যাবে। তাই কান্না বন্ধ কর। এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আমি আজ নিজের হাতে আমার ছেলের বউকে সাজিয়ে দিতে চাই। (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথা শুনে তিথির কান্না বন্ধ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইল।

-তাড়াতাড়ি যাও। আমি চাইছি আজকে পর থেকে আমার ছেলেটা তোমার জন্য কষ্ট পাক। আমি তোমাদের সুখে দেখতে চাই। দোয়া করি তোমারা সুখে সংসার কর। (সাদের মা)

কথাগুলো বলে কিছুটা থেমে সাদের মা তিথির কপালে চুম্বন করে বললেন,

-রুশাকে আর একা রেখ না। রুশার জন্য তাড়াতাড়ি একটা বোনের ব্যবস্থা কর। বল তো মেয়েটা আর কতদিন একা থাকবে। (সাদের মা)

সাদের মায়ের কথার মানেটা বুঝতে বাকি রইল না তিথির। লজ্জায় তার গাল দুটো লাল হয়ে উঠেলো।

এদিকে,
রুমের বাইরে চাচি এসেছেন আমাকে নিতে। মিমিমা আপুর বিদায়ের সময় হয়ে গেছে তাই আমাকে যেতে বলেছে চাচি। ত্বকি ভাইয়া চাচির কথা শুনে আমাকে বললেন,

-এই স্কার্ফ পর। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা উওরে আমি ভয়ে বলে উঠলাম,

-ওড়না পড়লে আবার স্কার্ফ পড়ব কেন? (মেঘা)

-চুপ। কোন কথা না। তুই স্কাপ ও পড়বি সাথে ওড়না ও পড়বি। এটা তোর শাস্তি। (ত্বকি)

তার কথার অবাধ্য না হয়ে গলায় ওড়না ঝুলিয়ে মাথায় আলাদা স্কাপ পড়ে নিলাম। সময় নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাই দেরি না করে ভাইয়ার পিছু পিছু যেতে লাগলাম।
,,
একপল মিমিমা আপুর বরকে দেখেছি। ত্বকি ভাইয়া আমাকে তার কাছেই রেখেছেন। বিয়ে বাড়ির এতগুলো মানুষের মধ্যে আমাকে একবারের জন্যও চোখের আড়াল হতে দিচ্ছেন না।

ত্বকি ভাইয়ার পাশে বসে আছি। মেহমানরা এসে তার সাথে কথা বলছে। আমি তার দিকে মুগ্ধ তাকিয়ে রয়েছি। এই প্রথম মনে হচ্ছে, মানুষ এতো সুন্দর হয় কি করে?

আমার ভাবনার মাঝে ভাইয়া সামনের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। হঠাৎ কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমি অবাক হয়ে ওঠে দাড়িয়ে পড়লাম। মেয়েটা যে জাইমা আপু তা চিনতে দেরি হলো না আমার।

জাইমা ত্বকিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,

-আই নিড ইউ ত্বকি। প্লিজ ত্বকি, মেঘাকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। তুমি চিন্তা কর না, তোমার আর মেঘার বাচ্চা আমাদের কাছে থাকবে। তুমি তো জানো মেঘা এখানও অনেক ছোট,,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৭
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
আমার ভাবনার মাঝে খেয়াল করলাম, ভাইয়া সামনের দিকে বিরক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়লেন। হঠাৎ কোথায় থেকে একটা মেয়ে এসে তাকে জড়িয়ে ধরলেন। আমিও অবাক হয়ে ওঠে দাঁড়িয়ে পড়লাম। মেয়েটা যে জাইমা আপু তা চিনতে দেরি হলো না আমার।

জাইমা ত্বকিকে জড়িয়ে ধরে বলতে লাগল,

-আই নিড ইউ ত্বকি। প্লিজ ত্বকি, মেঘাকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। তুমি চিন্তা কর না, তোমার আর মেঘার বাচ্চা আমাদের কাছে থাকবে। তুমি তো জানো মেঘা এখানও অনেক ছোট ও কিভাবে বেবি সামলাবে? তুমি একটু বোঝার চেষ্টা কর ত্বকি। (জাইমা)

জাইমার এহেন কান্ডে ত্বকি প্রচুর বিরক্ত হয়ে উঠেল। নিজের থেকে জাইমাকে ছাড়িয়ে দূরে সরে গিয়ে দাঁড়াল। আড় চোখে একপলক মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখল।

পুরো বিয়ে বাড়ির সবাই বিষয়টা নিয়ে আলোচনা শুরু করে দিয়েছে। মিমমার বোন সারা যেন অবাকের শেষের পর্যায়ে। সারার মানতে কষ্ট হচ্ছে যে, মেঘার মতো পিচ্চি মেয়ে নাকি পেগনেট। সারা মিমমার কানের কাছে মুখ এনে ফিসফিস করে অবিশ্বাস্য গলায় বলে উঠলো,

-মিমমা, মেঘা কি সত্যি পেগনেট? (সারা)

সারার কথা শুনে মিমমা ভ্রু কুঁচকে সারা দিকে তাকাল। তার রাগী দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

-দেখ, আমি জানি না। মেঘা প্রেগনেন্ট এই কথাটা আমার মানতে পারছি না। এমনেতেই ওই মেয়ে কিছুই বুঝে না। আর তাছাড়া আমি মেঘার মধ্যে প্রেগনেন্ট হওয়ার কোন লক্ষণ দেখতে পায় নি। (মিমমা)
,,
জাইমার বাবা কখনো ভাবতে পারিনি যে বন্ধুর ছেলের বিয়েতে এসে ত্বকিকে দেখতে পাবে। সে যদি আগে জানত যে ত্বকি এখানে থাকবে তাহলে কোনদিনও জাইমাকে নিয়ে আসত না। জাইমার বাবা পরিস্থিতি ঠিক করতে ত্বকির সামনে এসে দাঁড়িল। ত্বকির হাত ধরে বলল,

-দেখ বাবা, আমার মনে হয় এখানে সিনক্রেট করার কোন মানেই হয় না। তুমি একটু জাইমার সাথে আলাদা কথা বল। আমার মনে হয় তোমাদের আলাদা কথা বলা প্রয়োজন। (জাইমার বাবা)

ত্বকি কিছু বলার আগেই মিমমার বাবা তার সামনে এসে দাঁড়িয়ে আস্তে করে বলল,

-জামাই বাবা, আমাদের মানসম্মান বাঁচাও। ওই মেয়েটা মিমমার শ্বশুরবাড়ির লোক। যদি ওরা আমার মেয়েটার বিয়ে ভেঙে দেয়। দয়া করে বাবা, তুমি মেয়েটার সাথে আলাদা কথা বল। (মিমমার বাবা)

মিমমার বাবার কথা শুনে ত্বকি বলল,

-ঠিক আছে আঙ্কেল। আমি জাইমার সাথে কথা বলছি। আপনি চিন্তা করবেন না। (ত্বকি)

ত্বকি রাজি হওয়ার সাথে সাথে মিমমার বাবা জাইমা আর ত্বকিকে একটা রুমের মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এলেন।

আমি ভাইয়াদের পিছু পিছু রুমের মধ্যে প্রবেশ করলাম। কেন জানিনা, বুকের মধ্যে কেমন যেন হচ্ছে। প্রচুর ভয় হচ্ছে ত্বকি ভাইকে নিয়ে,যদি জাইমা আপু ভাইয়াকে আমার কাছে থেকে নিয়ে যায়। আমি তো ভাইয়াকে ছাড়া থাকতে পারব না। মাথা কাজ করছে না। কি করব বুঝতে পারছি না। কম্পনিত হাঁত পা নিয়ে রুমের এক কোণে চুপটি করে দাঁড়িয়ে রইলাম। এমন ভাবে দাঁড়িয়ে রইলাম, কেউ ভালো করে খেয়াল না করলে বুঝতে পারবে না যে ঘরে কোন জন-মানবের উপস্থিতি আছে।

মেঘার প্রানহীন জীবের মতো দাঁড়িয়ে থাকাটা জাইমার চোখের আড়াল হলো না। জাইমা ত্বকির সামনে এসে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

-ত্বকি, আমি চাই না এখানে তুমি আমি ছাড়া অন্য কেউ থাকুক। আমি তোমার সাথে আলাদা একটু কথা বলতে চাইছি। (জাইমা)

জাইমার কথা শুনে ত্বকি ঠান্ডা গলায় মেঘাকে বলল,

-মেঘা রুম থেকে বের হ। এখানে থাকাটা তোর একদম ঠিক হবে না। (ত্বকি)

ভাইয়া কথা শুনে নিমিষেই মনটা খারাপ হয়ে। মনে মনে ভাবলাম, আমি কেন রুম থেকে বের হব? আমার তো এই রুমে থাকার অধিকার আছে। তাদের কথাও আমাকে শুনতে হবে। আমি আজকে যাব না। এখানেই থাকব। তাই ভাইয়ার মুখের উপর বলে উঠলাম,

-আমি যাব না। (মেঘা)

মেঘার কথাই ত্বকি শুনে ত্বকির রেগে গেল। চোখ বন্ধ করে পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে ধমকের শুরে বলে উঠলো,

-আই সেইড গেট আউট, স্টুপিড গ্যাল। (ত্বকি)

ভাইয়া ধমকে আমি ছিট্টে উঠলাম। চোখের কোণে লুকিয়ে থাকা অবাধ্য জল গাল গড়িয়ে পড়ল। বুকের ভেতর বেদম প্রহর শুরু হতে লাগল। আর এক মূহুর্তেও থাকলাম না। চোখের পানি মুছে রুম থেকে বেরিয়ে দরজার পাশে পেতে দাঁড়িয়ে পড়লাম। নির্লজ্জের মতো রুমের বাইরে ওত পেতে দাঁড়িয়ে মুখ বুজে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।
,,
ত্বকি মেঘাকে বকা দেওয়াতে জাইমার চোখে মুখে আনন্দ ফুটে উঠলো। খুশি মনে ত্বকির পাশে গিয়ে দাঁড়াল। ত্বকির মুখের দিকে অসহায় মুখ করে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-আই লাভ ইউ ত্বকি। আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বিশ্বাস কর, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারব না। তুমি আমার শুধু আমার। (জাইমা)

ত্বকি বিরক্ত সহকারে জাইমার কথা শুনতে লাগল। বুকে হাত গুঁজে চুপ করে দাঁড়িয়ে রইল।

জাইমা ত্বকির নিরবতা দেখে, ত্বকির আর কাছে এগিয়ে গেল। নরম কোমলীয় কন্ঠে ত্বকিকে বলল,

-ত্বকি আমার দিকে তাকাও। প্লিজ বোঝার চেষ্টা কর, মেঘা এখানেও অনেক ছোট। সামনে মেয়েটার উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ পরে আছে। মেঘা যদি তোমার সংসার নিয়ে পড়ে থাকে তাহলে কোনদিনও পড়াশোনায় মনোযোগ দিতে পারবে না। মেয়েটার সম্পন্ন ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাবে। (জাইমা)

-নিশ্চুপ (ত্বকি)

-আমি মনে করে তুমি অনেক বুদ্ধিমান মানুষ। নিশ্চই মেঘার খারাপ চাইবে না। তাই মেঘার জন্যে হলেও তুমি সম্পর্কটা ভেঙে দেও। আর চিন্তা কর না, আমি তোমার সন্তানের খেলায় রাখব। ঠিক নিজের পেটের সন্তানের মতো। কখনোই মেঘার সন্তান বলে দূরে ঠেলে দিব না। তুমি শুধু মেঘাকে ডিভোর্স দিয়ে দেও। আমারা আবার নতুন করে সবটা স্টার্ট করব। (জাইমা)

কথাগুলো বলেই জাইমা কান্নায় ভেঙে পড়ল। ত্বকির পা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল।

জাইমার পাগলামি দেখে ত্বকি বিষয়টাকে সামলে নিতে বিরক্ত কন্ঠে বলল,

-জাইমা, আমার পা ছাড়। ঠিক আছে, আমি মেঘাকে ডিভোর্স দিয়ে দিব। (ত্বকি)

ত্বকির কথা শুনে জাইমা পা ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে হেঁসে দিয়ে বলল,

-সত্যি? (জাইমা)

-হুম। আমি তোমার কথা বুঝতে পেরেছি। মেঘা এখনও অনেক ছোটো। (ত্বকি)
,,
দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে তাদের সব কথা শুনে আমি আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারলাম না। দৌঁড়ে দাদির রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিলাম। মাটিতে হাটু ভেঙে বসে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম।

অন্যদিকে,

রাত হয়ে গেছে, তিথি শাড়ি পড়ে একদম লাল টুকটুকে নতুন বউয়ের ন্যায় সেঁজে গুঁজে বসে আছে সাদের রুমে। একটু আগে সাদের মা তিথিকে সাঁজিয়ে দিয়ে গেছেন। তিথির বুকের ভেতর ধকধক করছে। দীর্ঘ সাতটি বছর পর, আজ সে তার ভালোবাসার মানুষটিকে নিজের করে পাবে। সব কিছু নতুন করে শুরু করবে তারা। একদম নতুন করে, যেখানে থাকবে না কোন বিষাক্ত ময় অতীত।

এদিকে,

এক ঘণ্টা হলো বাসায় এসে পড়ছি। মিমমা আপুর বিদায়ের পর এক মূহুর্ত্য দেরি করি নি আমারা। সবার কাছে থেকে বিদায় নিয়ে বাসায় আসার জন্য রওনা দিয়েছি। দীর্ঘ দুই ঘন্টা জার্নি করার পর এখান শরীরটা একটু ভালো লাগছে না। ভাইয়া সাথে কোন কথা হয় নি আমার। গাড়ির মধ্যে সে নিজের মতো ড্রাইভিং করেছে আর আমি আঁচল মুখ ঢেকে কান্না করতে করতে এসেছি। জানি না সে আমার চোখের পানি দেখেছে কিনা। প্রচুর অভিমান হচ্ছে তার উপর। তাই বাসায় এসেই আম্মুর সাথে দেখা করে তিথি আপুর রুমে চলে এসেছি। ডিসাইড করেছি এখন থেকে আপুর রুমে থাকব। দরকার ছাড়া ভাইয়ার রুমে আর যাব না।
,,
রুমে এসে শাওয়ার নিয়ে বাতরুম থেকে বেরিয়েছে ত্বকি। রুমে এসে মেঘার কথা ভেবেই হেঁসে উঠলো সে। চোখ বন্ধ করে মেঘার কথা ভেবে আস্তে করে বলে উঠলো,

-তোর কষ্ট দেখে খুব ভালো লাগছে রে মেঘা। (ত্বকি)
,,
একটু আগে আম্মু খেতে ডেকেছিলেন কিন্তু আমি খেতে যায়নি। আম্মু মানা করে দিয়েছি। ভালো লাগছে না। ভাইয়ার উপর রাগ হচ্ছে প্রচুর। প্রচুর কান্না পাচ্ছে আমি। নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে অসহায় প্রানী মনে হচ্ছে। বুকের বা পাসটাই চিনচিন করে ব্যথা করছে। নিশ্বাস ছাড়তে অনেক কষ্ট হচ্ছে। আমি পারছি না সহ্য করছে। ভাইয়া কেন আমার সাথে এত খারাপ ব্যবহার করে। কেন আমাকে কষ্ট দেয়? আজকে জাইমার আপুর সামনে এভাবে বকা না দিলেও পারতেন। তিনি আমাকে ডিভোর্স দিতে চেয়েছেন। শুধু মাএ আমি ছোট বলে।
বিছানায় শুয়ে আছি। কিছু ভালো লাগছে না। কাণের মাঝে শুধু তার বলা ‘ডিভোর্স’ শব্দটা বার বার বেজে চলছে। বুকের মধ্যে বালিডশ চেপে ধরে কাঁদছি। ইচ্ছে মতো কাঁদছি।
,,
মেঘার কথা ভেবে ত্বকির হঠাৎখারাপ লাগছে। মেয়েটা যে এতোটা অভিমান করবে তা ত্বকির জানা ছিল না। তার পিচ্চি বউটার যে এতো রাগ ত্বকি আগে কখনো জানত না।

ত্বকি আর মেঘাহীনা থাকতে পারছে না। তাই সে তিথির রুমের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ল।

,,
মেঘার অনুমতি ব্যতীত ত্বকি রুমে মধ্যে প্রবেশ করল। চুপি চুপি বিছানার পাশে যেতে লক্ষ্য করল মেঘা উপুড় হয়ে শুয়ে ফুঁসতে ফুঁসতে কান্না করছে।মেঘাকে কাঁদতে দেখে ত্বকির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। মেয়েটি যে সবকিছু বুঝেও অবুঝের ন্যায় থাকে বিষয়টা বুঝতে বাকি রইলো না তার।

ত্বকি আর দেরি করল না। মেঘার পাশে ঠাস করে গা এলিয়ে দিল। মেঘার মাথায় হাত দিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠলো,

-সরি বউ। কাঁদছিস কেন? আমি কি তোকে কষ্ট দিয়েছি? (ত্বকি)

ভাইয়ার হঠাৎ এমন কথাই আমার কান্না দ্বিগুণ হয়ে গেল। আর জড়ে করে কেঁদে উঠলাম।

-দেখ, বউ কাঁদিস না। আমি যে তোর কান্না সহ্য করতে পারি না। সরি তো,,, (ত্বকি)

(চলবে)

[রিচেক দেওয়ার সময় পাই নি। দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত।]
(চলবে)

[রিচেক দেয় নি। ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবে। আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্য দুঃখিত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here