তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ২৪+২৫

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৪
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
সাদের সামনে চিঠিটা হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তিথি। মাটির দিকে স্থির দৃষ্টি রেখে কাঁপছে সে। সাদ তিথির দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাদের মনে প্রশ্ন জাগছে, যেই মেয়ে কখনো তার সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না, সেই মেয়েটা কিনা তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে কথা বলার জন্য।

নিলা সহ তিথির সিনিয়র মেয়েগুলো কিছু টা দূরে দাড়িয়ে রয়েছে। লুকিয়ে লুকিয়ে মনোযোগ সহকারে তিথি আর সাদের দিকে তাকিয়ে রয়েছে তারা। সাদা ড্রেস পড়ে থাকা মেয়েটি মিটমিট করে হেসে যাচ্ছে। সিনিয়র দলের সবাই সাদের রিয়েকশন দেখার জন্য ব্যাকুল প্রত্যাশায় রয়েছে। তাদের প্রত্যেকের ধারণা আজ তিথির খবর আছে। নিশ্চই সাদ তিথিকে থাপ্পড় মারবে। সবার মতো নিলাও আগ্রহ দৃষ্টি নিক্ষেপ করে রয়েছে তিথিদের উপর। কিন্তু নিলা তিথির মুখের দিকে একপল ও তাকায় নি বরং সে একবারের জন্যও সাদের মুখের দিক থেকে দৃষ্টি সরানোর প্রয়োজন বোধ করে নি। লোভনীয় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে সাদের দিকে।

সাদ বুকে হাত গুঁজে তার মিষ্টি বউটার দিকে পলকহীন নয়নে তাকিয়ে আছে। কিছুটা সময় তিথিকে মন ভরে দেখার পর সাদ নিজের বাইরের লুটকা অর্থ্যাৎ টিচারদের মতো গম্ভীর মুখটা স্বভাবিক করে নিল। বাসায় তিথির সামনে যেভাবে থাকে ঠিক তেমন মুখ করে ফেলল। যাতে তিথি কিছুটা হলেও স্বাভাবিক হয়।

সাদ মুখে হাসি রেখা টেনে দাড়িয়ে থাকলেও তিথি এখনো পূর্বের ন্যায় দাড়িয়ে আছে। রাগে দুঃখে প্রচুর কান্না পাচ্ছে তার। কান্না পাওয়ার মূল কারন,নিলা মেয়েটা কেন সাদের দিকে তাকিয়ে থাকবে। কেন সাদের রুপের বর্ননা করবে? কথাগুলো ভেবেই প্রচুর রাগ পাচ্ছে। সে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে চাইলেও পারছে না। অতিরিক্ত রেগে যাওয়ার ফলে তিথির হাত পা কাঁপছে। প্রমাণ সরুপ তার হাতে থাকা চিঠি নামক প্রেম পত্রটি হাতের মুঠোর চাপে গুটিয়ে গেছে। চতুরভুজ আকৃতির চিঠিটি গোল ডিম্বাকার আকৃতি ধারন করেছে। তিথি রাগে দাঁতে দাঁত চেপে নত দৃষ্টি করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

সাদ কিছুক্ষণ তিথিকে পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পারল মেয়েটা তাকে কিছু বলতে চাই। তাই সাদ আশেপাশে তাকিয়ে দেখল কেউ আছে কিনা। কাউকে দেখতে না পেল না। হঠাৎ তিথির হাত খপ করে ধরে হাটতে লাগল।

হঠাৎ সাদ তিথির হাত ধরাতে নিলা সহ সিনিয়র মেয়েগুলো থতমত খেয়ে গেল। একে অপরের দিকে অবাক চাউনিতে তাকিয়ে রইলা। নিলা বিষ্ময় নয়নে হা করে তাকিয়ে রইলা সাদদের দিকে।
,,
তিথিকে এনে ভার্সিটির পিছনটাতে নিয়ে এসেছে সাদ। ক্লাসের পিছনে হওয়ার জন্যে সচরাচর কেউ এই দিক টাতে আসে না। চারপাশ অনকটা জঙ্গলের মতো। ঘন ঘন গাছপালা দিয়ে ভরা। জায়গায়টা অন্ধকার আচ্ছন্ন হলেও সাদের কাছে খুবই প্রিয়। ভার্সিটিতে জয়েন্ট হওয়ার পর থেকে এদিকটিই তার আসা যাওয়া হয়। যখনি সে কোন বিষয় নিয়ে চিন্তিত থাকে তখননি এ জায়গাটা ছুটে চলে আসে। এখানে থাকা প্রতিটি গাছপালা তার সকল চিন্তা থেকে মুক্তি দেয়।

সাদ তিথিকে নিয়ে একটা আধ ভাঙা ব্যান্চের উপর বসল। কিছুটা দূরত্ব রেখে বসল। তিথিও চুপ করে বসে রইল। এখনো রাগ কমেনি তিথির। অত্যধিক রাগ হচ্ছে নিলা নামের মেয়েটার উপর।

এদিকে, নিলা সহ তিথির সিনিয়র মেয়েগুলো তাদের পিছু নিয়ে ভার্সিটির পিছনের দিকটা চলে এলো। হঠাৎ করে সাদ তিথিকে এদিকটাকে কেন নিয়ে এলো তা দেখার জন্য তারা এখানে এসছি। সাদের মতো টিচার কিনা একটা মেয়ের হাত ধরেছে। ব্যপারটা যেন তাদের মাথার উপর দিয়ে গেছে।
,,
তিথি কিছুক্ষণ চুপ করে বসে রইলো। সাদ তার থেকে অনেকটা দূরত্ব বজায় রেখে বসে আছে। তিথি নিজেকে শান্ত রাখতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ল। সিনিয়র মেয়েটার কথা মনে পড়তে তার চোখ পড়ল তার হাতে থাকা কাগজটির উপর। দুমড়ে মুচড়ে গেছে কাগজ টা। তিথি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে আসেপাশে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। ভালো করে খেয়াল করতেই ভয় পেয়ে গেল সে। কারন সাদ মেয়ে গুলোকে দেখতে না পেলেও তিথি ঠিক দেখতে পেল। হঠাৎ সাদা জামা পরিহিত মেয়ে টির দিকে চোখ পড়তেই, তিথির মুখে ভয়ের স্পষ্ট ফুটে উঠল। অবশেষে সে সিদ্ধান্ত নিল চিঠিটি সাদকে দিবে।

সাদ তিথির অনুভূতি বুঝতে পারছে না। সে মনে মনে ভেবে চলছে আজকে কি এমন হয়েছে তিথির যে, মেয়েটার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না।

তিথি তার হাতে থাকা কাগজটা সাদের সামনে এগিয়ে ধরল। দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-এইটা নিন। এটা আপনার। (তিথি)

সাদ তিথির হাতে থাকা কাগজটির দিকে ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। এতক্ষণ সাদের দৃষ্টির অগোচরে ছিল চিঠিটি। সে মিটিমিটি হেসে তিথির হাত থেকে কাগজটি নিল।

আড়লে নিলাসহ লুকিয়ে থাকা মেয়ে গুলো অধির আগ্রহে তাকিয়ে রইল সাদের দিকে।

সাদ চিঠিটি খুলে পড়া শুরু করল। অর্ধেক লিখা পড়ে সাদ দাঁড়িয়ে পড়ল। তিথির মুখের দিকে অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখতে লাগলো। হঠাৎ করে সাদের চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়তে শুরু করল। তিথির দিকে মুখ করে হাঁটু ভেঙে মাটিতে বসে পড়ল সে। চিঠিটি বুকে জড়িয়ে বাচ্চাদের মতো কাঁদতে করল।

নিজের ভালোবাসার মানুষটির চোখে পানি দেখে তিথির বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো। সাদের ডুকরে কেঁদে উঠা সহ্য করতে পারছে না সে।

সাদ চিঠিটি বুকে চেপে ধরে বলে উঠলো,

-তিথি, আমিও তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমি জানতাম তুমি ঠিক একদিন না একদিন আমাকে ক্ষমা করে দিবে। ধন্যবাদ বউ আমাকে এত তাড়াতাড়ি মাফ করার জন্য। যান বউ , তুমি এই কয়েক দিন আমাকে তোমার দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে শেষ করে ফেলেছে। আমার কাছে থেকে ও আমার সাথে কথা বলো নি। নিজের ভালোবাসার মানুষটির নিরবতা যে কতটা কষ্টের তা তুমি আমাকে হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দিয়েছ। (সাদ)

সাদ কিছুটা থেমে আবার বলতে লাগলো,

-আজ আমার অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো। আমি আর পারছি না রে বউ তোর থেকে দূরে থাকতে। তোর অবহেলায় আমার বুকে আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুনের জ্বালা আমি সহ্য করতে পারি না। খুব কষ্ট হয় আমার, খুবই। জানিস বউ,তোর কিশোরী বয়সের পাগলামি গুলো আমার রাতের ঘুম হারাম করে দেয়। চোখ বুজলে তোর সেই দুষ্টু মাখা হাসি আমার স্মৃতিতে ভেসে ওঠে। তোকে সেই পাঁচ বছর আগে থেকে সৃষ্টি কর্তার কাছে চেয়েছি। তোকে না পাওয়াতে খুব অভিমান হতো সৃষ্টি কর্তার। আজ বুঝি , সৃষ্টি কর্তা যা করেন ভালোর জন্যই করেন। বউ রে, আর আমাকে তোর দহনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করিস না। খুব জ্বালা করে এই বুকের ভেতর। আমাকে আর কষ্ট দিস না। তোর ভালোবাসা চাই আমার। #তোর_নামের_বৃষ্টিতে একটু ভিজতে দিবে আমায়? (সাদ)

সাদের কথাগুলো তিথির হৃদয়ে ধারালো তীরের ন্যায় বিঁধছে। ছেলেরা সহজে কাঁদে না। ছেলেরা নাকি অনেক কঠোর হৃদয়ে অধীকারী হয়। কথাটা যেন তিথির কানে বার বার বেজে চলেছে।
আজ তিথির মনে কেমন যেন সুখানুভূতি হচ্ছে। তিথি নিজেকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখী ব্যাক্তি মনে হচ্ছে ।

সাদা কিছুক্ষণ কেঁদে, আবার চিঠিটি পড়তে শুরূ করল। চিঠিটি যেন সাদকে পাগল করে তুলছে। পুরো চিঠি জূরে ভালোবাসি কথাটা বার বার উল্লেখ করা আছে। চিঠিটি অনেক টা প্রাণহীন। যে কেউ পড়ে বলবে অনুভূতি হীন চিঠি। যেখানে উল্লেখ করা হয়েছে সাদের রুপের কথা। সাদের চুল , চোখ, নাক ,ঠোট ইত্যাদির কথা। চিঠিটি পুরোটা পড়া শেষ করল সাদ। শেষের লাইনটা পড়ে সাদের বুকের ভেতর বেদম প্রহর শুরু হয়ে গেল। খুশির জলে ছলছল করা, বিজয়ের হাসি মাখা মুখটা নিমিষেই অমাবস্যার রাতের মতো আঁধারে ঢেকে গেল। চোখে মুখে অসহায়ত্ব ফুটে উঠলো।

সাদ উঠে দাঁড়িয়ে পড়ল। নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে সে আবার চিঠিটি পড়ল। না সে ভুল দেখে নি। চিঠিটির নিচে স্পষ্ট অক্ষরে লেখা আছে, ‘ইতি তোমার নিলা’। সাদ আরো ভালো ভাবে লক্ষ্য করে বুঝতে পারল চিঠিটির হ্যান্ড রাইটিং তিথির না। এখন সে পরিষ্কার তিথি তাকে মাফ করে নি। ভেবেই সাদের ভেতরটা পুড়ে যেতে লাগল। সাদ চিঠিটি তিথির হাতে দিয়ে কাঁপা কাঁপা গলায় অস্পষ্ট সুরে বলল,

-সরি, আমাকে এতটা কষ্ট না দিলেও পারতে। পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। ( সাদ)

কথাগুলো বলেই সাদ বা হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে এলোমেলো পায়ে হাঁটতে শুরু করল।

তিথি ঠাস করে মাটিতে বসে পড়ল। চিঠিটি চোখ বুলিয়ে দেখে নিল। তার আর বুঝতে বাকি রইল না যে কেন সাদা তাকে রেখেই চলে গেল। তিথির চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়তে লাগল।

মেয়েগুলো সাদের পিছু পিছু যেতে লাগল। তারা সবটা দেখতে পেলেও শুনতে পাইনি। কি ঘটেছে কিছুই তারা বুঝে উঠতে পারে নি। নিলা নামের মেয়েটা ভয়ে চুপসে আছে। আজ নিশ্চিত তার কপালে কষ্ট আছে। কষ্ট তো থাকাটাই স্বাভাবিক কারন সে যে, চিঠির শেষে নিজের নাম লিখে রেখেছে।

এদিকে,

আপুর রুমে চুপ করে বসে আছি। একটু আগে ঘটে যাওয়া ঘটনা ভেবেই শরীর শিউরে উঠছে। আল্লাহ আমাকে বাঁচিয়েছে , আজ যদি দাদি না থাকত তাহলে নিশ্চয়ই ভাইয়ার বকা খেতে হতো। ছিঃ শাড়িটা ও ঠিকঠাক মতো সামলাতে পারি না। তখন শাড়িটা পিন খুলে গিয়েছিল বলে আমি নিজেও মাটিতে পড়ে গিয়েছিলাম। অনেক ব্যাথা পেয়েছি। দাদি আমাকে তুলে রুমে এনে আবার শাড়িটা পড়িয়ে দিয়েছেন। এখন চুপ করে বসে আছি। ভাইয়ার সাথে একবারের জন্যও দেখা হয় নি। তার কথা খুব মনে পড়ছে। আমার পাশে মিমমা আপুর বোন সারা আপু বসে আছেন। মুখে তার হাসি লেগেই আছে। কেন হাসছে তা আমার অজানা। মিমামা আপুকে সাজিয়ে দিচ্ছে মেয়েরা। রুমে অনেক মানুষ। ছেলে মানুষ নেই সবাই মেয়ে।

,,
রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে মেঘার উপর সামনে এলো ত্বকি। রাগে তার হাত পা কাঁপছে। মেয়েটা কি পেয়েছে, একবার ও দেখা করার প্রয়োজন বোধ করলো না। তারচেয়ে বেশি ত্বকির রাগ হচ্ছে মেঘার পরনে থাকা শাড়ির উপর। একটু আগে মেঘাকে একপলক দেখেছিল সে। কিন্তু কিছু বলার আগেই মেঘা চোখের আড়াল হয়ে গেছে। আজ মেঘাকে এই অপরাধের শাস্তি পেতে হবে।

ত্বকি কোন দিকে না তাকিয়ে রুমের মধ্যে ঢুকে পড়ল। কারো সাথে কোন কথা না বলে হূট মেঘার হাত ধরে মেঘাকে রুম থেকে নিয়ে বেরিয়ে গেল।

ভাইয়া মুখের দিকে তাকিয়ে দেখতেই বুকের ভেতর ধক করে উঠল। সে যে আমার উপর অনেক রেগে আছে তা আর বুঝতে বাকি রইল না।
,,
মেঘাকে রুমে এনে ঠাস করে দরজা বন্ধ করে দিল ত্বকি। মেঘার দিকে গম্ভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,

-স্টুপিড , কোথায় ছিলি এতোক্ষণ। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-অনেক সাহস হয়ে গেছে না তোর। বেশি পেকে গেছিস তুই। আজকে তোর সব সাহস একেবারে ঘুচিয়ে দেব। আন্ডারস্ট্যান্ড? (ত্বকি)

ভাইয়া কথা শুনে আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় লাগছে প্রচুর। তার শান্ত কন্ঠ আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিল। বুঝতে বাকি রইল না যে, ঝড় আসার পূর্বে পরিবেশ শান্ত থাকে। এখন নিশ্চয়ই আমার উপর ঝড় আসতে চলেছে।

মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে ত্বকির রাগ দ্বিগুণ হয়ে গেল। দাঁত দাঁত চেপে মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,

-এই মেয়ে, শাড়ি খুল। কুইক,,(ত্বকি)
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:২৫
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
-অনেক সাহস হয়ে গেছে না তোর। বেশি পেকে গেছিস তুই। আজকে তোর সব সাহস একেবারে ঘুচিয়ে দেব। আন্ডারস্ট্যান্ড? (ত্বকি)

ভাইয়া কথা শুনে আমি চুপ করে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম। ভয় লাগছে প্রচুর। তার শান্ত কন্ঠ আমার ভয় আরো বাড়িয়ে দিল। বুঝতে বাকি রইল না যে, ঝড় আসার পূর্বে পরিবেশ শান্ত থাকে। এখন নিশ্চয়ই আমার উপর ঝড় আসতে চলেছে।

মেঘাকে চুপ থাকতে দেখে ত্বকির রাগ দ্বিগুণ হয়ে গেল। দাঁত দাঁত চেপে মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,

-এই মেয়ে, শাড়ি খুল। কুইক,,(ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার কথা শুনে আমর বুকের ভেতর ধ্বক করে উঠলো। প্রচুর কান্না পাচ্ছে, কেন সে আমার সাথে এভাবে কথা বলে।

-স্টুপিড গ্যাল, এখুনি শাড়ি খুলে ফেলবি। (ত্বকি)

ত্বকির কথা সুনে মেঘার চোখ জলে ছলছল করে উঠেছে। মনে হচ্ছে যেকোন সময় চোখের কোণে লুকিয়ে থাকা জলসাগর থেকে টুপ করে গাল বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ল।

-শাড়ি পড়েছিস কেন? বিয়াদপ। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি চোখ বন্ধ করে চুপ করে রইলাম। তার দিকে তাকিয়ে দেখার মতো সাহস আমার মধ্যে হচ্ছে না। ভয়ে হাঁত পা কাঁপছে।

-এই মেয়ে চুপ করে থাকিস কেন? ওহ, থাকিবই তো। তুই তো আবার শাড়ি পড়ে নিজেকে বিশ্ব সুন্দরী প্রমাণ করতে চাস। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

কথাগুলো বলে ত্বকি নিজের মাথার চুল মুঠো করে টেনে রাগ কমাতে চেষ্টা করছে। হাজারো চেষ্টা করেও রাগ কমাতে পারছে না। যত বার মেঘার দিকে তাকায় ঠিক তত বার তার রাগ দ্বিগুন হয়ে যায়। মেঘা কেন এত পাতলা শাড়ি পড়ে ঘুরে বেড়াবে? নিজেকে কন্ট্রোল করতে বার বার ব্যার্থ হচ্ছে সে। ত্বকির প্রতি টি নিশ্বাস ই প্রমাণ করে দিচ্ছে যে, সে কতটা রেগে আছে।

ত্বকি ভাইয়ার কথাগুলো শুনে আমার খুব খারাপ লাগতে শুরু করল। নিজের অজান্তেই চোখ দিয়ে পানি পড়তে লাগলো। চোখ দুটো বন্ধ করে চেপে ধরেও পানি আটকে পারলাম না।

রাগান্বিত অবস্থা হঠাৎ মেঘার দিকে তাকাতে ত্বকির রাগ জানালা দিয়ে পালিয়ে গেল। মেঘার চোখে পানি দেখে সে আপনাআপনি নরম হয়ে যায়। বাইরে থেকে নিজেকে শক্ত রেখে মেঘার একদম কাছে চলে আসল। কন্ঠের মধ্যে কঠোরতা রেখে মেঘার কানের কাছে গিয়ে ফিসফিস করে বলে উঠে,

-পাঁচ মিনিট মধ্যে শাড়ি চেন্জ করে ভালো একটা ড্রেস পরবি। এক মিনিট ও বেশি সময় ব্যয় হলে তোর খবর আছে। আমি যাচ্ছি তোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে। এসে যেন এই শাড়ি পরিহিত অবস্থায় তোকে না দেখি। আন্ডারস্টান্ড? (ত্বকি)

কথাগুলো বলেই ত্বকি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

প্রায় মিনিট দুই এক ধরে চোখ বন্ধ করে আছি। তার সামনে চোখ খুলার সাহস হচ্ছে না। কিছুক্ষণ পর তার উপস্থিতি টের না পেয়ে ভয়ের সাথে পিটপিটিয়ে চোখ খুললাম। হ্যাঁ আমার ধারণাটা সঠিক। ঘরের কোথাও ভাইয়ার উপস্থিত নেই। তারমানে সে রুম থেকে বেরিয়ে গেছে। ভেবেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ত্যাগ করলাম। হাতের পিঠ দিয়ে চোখের পানি মুছে উঠে দাঁড়িলাম। ব্যাগ থেকে একটা সাদা রংয়ের গোল ফ্রোগ বের করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম।
,,
শাড়িটা চেন্জ করে রুমে এসে বিছানার উপর চুপটি করে বসলাম। ভাইয়া এখনো রুমে আসেন নি। বুঝি লোকটা এমন কেন? সবসময়ই সে গিরগিটির মতো রং বদলে ফেলে। যখনি তাকে রাগহীন ভালো মানুষ ভাবি ঠিক তার কিছু মূহুর্তে পরেই সে উল্টো রুপ ধারন করে। কেন যে এমন আজ পর্যন্ত বুঝতে পারলাম না। মানুষটা শুধু আমার সাথেই ওমন ব্যবহার করে। গম্ভীর মুখে কথা বলে। বাজে ব্যবহার করে। বাইরে সবার সাথে কত সুন্দর হেঁসে হেঁসে কথা বলে আর আমার সামনে এলেই এমন একটা ভাব ধরে যে সে কোনদিনও হেঁসে পর্যন্ত দেখে নি। দূর এমন কেন সে? আমার সামনে হাঁসলে কি হবে। আমি কি তার হাঁসি চুরি করে নিয়ে যাব। পচা লোক একটা আমাকে শুধু শুধু কষ্ট দেয়।

মেঘা বসে বসে ত্বকির কথা ভেবে চলছে। ঠিক তখনই ত্বকি কোথায় থেকে যেন প্লেট ভর্তি খাবার নিয়ে রুমে ঢুকে পড়ল। আসেপাসে তাকিয়ে টেবিল খুঁজেতে লাগল। কোথাও টেবিল দেখতে না পেয়ে বিছানার উপর প্লেটটা রাখল। নিজে দাঁড়িয়ে থেকে মেঘাকে উদ্দেশ্য করে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

-দুপুরে কিছু খেয়েছিস? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

মেঘাকে চুপ করে থাকতে দেখে ত্বকির চোখ মুখ শক্ত হয়ে এলো। হাতের মুঠো শক্ত করে দাঁতে দাঁত চেপে চেপে বলল,

-জানি তো কিছু খাস নি? তাই তো? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

মেঘাকে এখনো নিশ্চুপ থাকতে দেখে ত্বকি বিরক্ত হয়ে উঠলো। পরাপর দুটো নিশ্বাস ফেলে, বিরক্ত মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

-দেখ মেঘা, তোর এই সময়ে অসময়ের নিরবতা আমাকে বিরক্ত করে তোলে। প্রচুর রাগ হয় তোর উপর। (ত্বকি)

ভাইয়ার যা বললেন তা শুনে আমি নত দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে বিরক্ত মাখা কন্ঠে আবারও বলল,

-খেয়েছিস কিছু? এখন অত্যন্ত চুপ করে থাকিস না। (ত্বকি)

আমি এখন আর চুপ করে থাকতে পারলাম না। কাঁপা কাঁপা গলায় ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বললাম,

-না। এখনো কিছু খাই নি। (মেঘা)

মেঘার উওর পেয়ে ত্বকি রাগলা না। বরং শান্ত গলায় বলল,

-তুই আমাকে দেখে এত ভয় পাস কেন? আমি কি তোকে মারি? আমার সাথে কি কখনো ভালো ভাবে কথা বলতে পারিস না? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-হয়েছে তোকে আর কোন কথা বলতে হবে না। এখন তোর শাস্তি শুরু হবে। সো রেডি হয়ে নে। (ত্বকি)

শাস্তির কথা শুনেই আমার গলা শুকিয়ে এলো। ভয় দৃষ্টি নিক্ষেপ করে তার দিকে তাকালাম।

মেঘার লুকোচুরি তাকানো দেখে ত্বকির খুব হাসি পেল। বহুত কষ্ট করে হাঁসি চেপে রেখে গম্ভীর গলায় বলল,

-এই যে প্লেট দেখছিস, এই প্লেটের সম্পন্ন খাবার তোকে একা খেতে হবে। একটু বাদ রাখলে চলবে না। (ত্বকি)

ত্বকির কথা শুনে বোধহয় মেঘার মুখে বুলি ফুটে উঠলো। আতঙ্ক ভর্তি কন্ঠে ত্বকিকে বলল,

-না, আমি এত খাবার খাব না। প্লিজ আপনি আমাকে এমন শাস্তি দেবেন না। (মেঘা)

-চুপ। কোন কথা না। খাওয়া শুরু কর। (ত্বকি)

একপল খাবারের দিকে তাকিয়ে আমার বমি চলে এলো। ইশ, কি খাবার। একে তো পুরো প্লেট ভর্তি দ্বিতীয়ত আমার অপছন্দের খারাব। এগুলো আমি খেতে পারব না তাই ভাইয়া দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললাম,

-আপনি তো জানেন আমি এসব পোলাও, রোস্ট খেতে পারি না। আমার খেতে কষ্ট হয় তো। আমি,, (ত্বকি)

মেঘাকে কথা বলা শেষ করতে না দিয়েই ত্বকি ধমক বলল,

-কোন কথা নয়। চুপচাপ খেয়ে ফেল। নাহলে অন্য উপায় বের করতে বাধ্য হব। (ত্বকি)

ত্বকির কথাই ভয় পেয়ে গেল মেঘা। তাই কোন কথা না বলে ভদ্র মেয়ের মতো খাওয়া শুরু করল।
,,
খুব কষ্টে অর্ধেক খাবার পানি দিয়ে জোর করে গিলে খেলাম। এখন আর পারছি না। প্রচুর বমি আসছে। না খেতে ওয়াক করে উঠতে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

-হয়েছে আর খেতে হবে না। পুরোটা খেতে পারিস নি তাই তোর শাস্তি এখনো বাকি আছে। আপাতত আর বর্তমানে আর শাস্তি দিতে চাইছি না। সো রিলেস্ক। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে এখন অনেকটা শান্তি লাগছে। কিন্তু মনে মনে খুব ভয় হচ্ছে। খাওয়া শেষ তাই ভয়মাখা কন্ঠে ভাইয়াকে বললাম,

-ভাইয়া, একটু মিমিমা আপুর কাছে যাই। (মেঘা)

মেঘার মুখে ভাইয়া ডাকটা শুনে ত্বকি মোবাইল থেকে চোখ তুলে রাগী দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকাল। গম্ভীর কন্ঠে বলল,

-না কোথাও যাওয়া হবে না তোর। এখন চুপচাপ আমার সামনে এই রুমে বসে থাকবি। (ত্বকি)

ভাইয়ার রাগ মাখা কথা শুনে আমি অস্পষ্ট শুরে বললাম,

-কেন?(মেঘা)

মেঘার কথার জবাবে ত্বকি উঠে দরজা আটকে দিল। মেঘার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,

-কারন তুই শাড়ি পড়ে ছেলেদের সামনে গিয়েছিস। তাই এখন তোকে শাস্তি পেতে হবে,,

(চলবে)

[কালকে দুটো পর্ব দেওয়ার চেষ্টা করব। লিখার মতো অবস্থাতে ছিলাম না। দুঃখিত ]
(চলবে)

[আজকে কিন্তু বড়ো করে দিয়েছি। কেমন হয়েছে জানাবেন। অনিয়মিত হওয়ার জন্যে দুঃখিত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here