তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ৪+৫+৬

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৪
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
কারো কোন আওয়াজ না পেয়ে, পিটপিট করে চোখ খুললাম।সামনে তাকিয়ে দেখলাম, তিথি আপু কোমরে হাত দিয়ে দিয়ে, আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ভয় পেয়ে বোকা বোকা হাসি দিয়ে বলে উঠলাম,

– আপু, ওভাবে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছো কেন? আমার কিন্তু ভয় হচ্ছে।(মেঘা)

– এই মেয়ে এখন পড়ে গেল কি হতো জানিস?তুই কি ঠিক মতো চলতে পারিস না? (তিথি)

– সরি আপু।(মেঘা)

– দৌড়ে দিলি কেন? শাড়ি পড়ে কি কেউ দৌড়
দেয়? (তিথি)

– আসলে আপু, মনে হলো মামি ডেকেছে।তাই তো দৌড় দিয়েছি। সরি, আর কোনদিনও শাড়ি পড়ে দৌড় দিব না। রাগ করে থেকো না প্লিজ। (মেঘা)

– ঠিক আছে। আর সরি বলতে হবে না।নানুরা চলে এসেছে তাই আম্মু তোকে ডেকেছে।আমার সাথে চল।(তিথি)

– হুম চলো। (মেঘা)

আপু আমাকে ধরে নানু মনির কাছে নিয়ে এলো।

,,
ছোফার উপর মাথা নিচু করে বসে আছি। নানু মনি আমার সামনের ছোফায় বসে আছে।তার পাশে একজন মহিলা বসে আছে।নানু মনি কোন কথা না বলে চুপ করে বসে আছেন। যার ফলে আমর প্রচুর ভয় লাগছে। ভিতরে ভিন্ন ধরনের অনুভূতি কাজ করছে।
হঠাৎ ত্বকি ভাইয়ার আম্মু বলে উঠলেন,

– মেঘা মা, এইযে তোর নানু মনি। মনে আছে তোর, ছোট বেলায় নানু মনির সাথে কত খেলতি? (ত্বকির মা)

আমি নরম সুরে উওর দিলাম,

– উম্মহু।মনে নেই।(মেঘা)

নানু মনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলে উঠলেন,

– আমার ত্বকির বউকে বেশ পছন্দ হয়েছে। আমার নানু ভাইয়ের পছন্দ আছে বলতে হবে।

নানু মনির কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। বলে কি, ত্বকি ভাইয়া নাকি আমাকে পছন্দ করে। এই কথা আমার একদমই বিশ্বাস হচ্ছে না।

– আমি কিন্তু মেঘাকে পুতুল বলে ডাকব। (নানু)

আমাদের কথায় মাঝে, নানুর পাশে থাকা মহিলা বলে উঠলেন,

– এই যে বৌমা, আমি সম্পর্কে তোমার মামি হয়।তা বৌমা তুমি কোন ক্লাসে পড়? (ত্বকির মামি)

– ক্লাস টেন এ।(মেঘা)

আমার কথা শুনে ত্বকি ভাইয়ার মামি তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে উঠলো,

– তোমাদের বিয়ে হলো কীভাবে? দেখে তো মনে হচ্ছে, তোমার বয়স এখানো আঠারো বছর হয়নি।(ত্বকির মামি)

মামির কথা শুনে আমি কিছু বুঝতে পারলাম না। তিথি আপু মামিকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো,

– চিন্তা করবেন না মামি। এইতো ছয় মাস পরে মেঘার বয়স আঠারো বছর হবে।(তিথি)

– তাই নাকি? তাও তো বাচ্চা মেয়ে। আমি ভেবেছিলাম ত্বকির সমবয়সী হবে। ত্বকি শেষে কিনা একটা বাচ্চা মেয়েকে বিয়ে করল। (ত্বকির মামি)

ত্বকি ভাইয়ার আম্মু বলে উঠলো,

– শোন ভাবি, আল্লাহ ত্বকির জনেই মেঘাকে লিখে রেখেছে। (ত্বকির মা)

– যাই বলো না কেন আফা, তোমার ছেলের বউ বয়স অনুযায়ী একটু বেশিই বুঝে।

মামির কথা শুনে আমার প্রচুর কান্না পেল। ঠোঁট কামড়ে ধরে কান্না আটকাতে চেষ্টা করলাম।

নানু মনি ধমক দিয়ে মামিকে বলে উঠলো।

– বৌমা, বিয়েটা কি তুমি করেছো? (নানু)

নানুর কথা শুনে মামি চুপ হয়ে গেল। হয়তো নানু মনি বুঝতে পেরেছেন যে আমি কষ্ট পেয়েছি। তাই আমার পাশে এসে বসে, কপালে চুমু খেয়ে বলে উঠলেন,

– পুতুল মনি, তোকে দেখে কিন্তু আমর হিংসা হচ্ছে।

নানু মনির কথা শুনে তিথি আপু বলে উঠলো,

– কেন গো নানু?

– কারন, আমার ত্বকি তো এখন আর আমার দিকে তাকাবে না।এত সুন্দরী বউ থাকলে কি আমার কথা মনে পড়বে। (নানু)

– হুম ঠিক বলেছো। তোমার জন্য আমার কষ্ট লাগছে। (তিথি)

নানুর কথা শুনে আমার অনেক লজ্জা পেলাম। অনেক মজার মানুষ। খুব তাড়াতাড়ি আমার সাথে মিশে গেলেন।
,,
রাতের খাবার খাওয়া পর অনেক ক্ষণ গল্প করলাম। আজকে সারাদিনে একবারও ত্বকি ভাইয়ার সাথে দেখে হয় নি। নানুর সাথে একবার দেখা করতে এসেছিল সে কিন্তু আমর সাথে দেখা হয় নি।
,,
আমি আর তিথি আপু মিলে সিদ্ধান্ত নিলাম আজকে আমারা নানুর কাছে থাকব।
কিন্তু হঠাৎ করেই কোথায় থেকে যেন ত্বকি ভাইয়া এসে আমার হাত টেনে ধরে তার রুমে নিয়ে আসলে। আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না। তাকে দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক রেগে আছেন।
রুমে এনে রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,

– ফাজিল, সারাদিন কোথায় ছিলি,, । (ত্বকি)
(চলবে)
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৫
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,

রুমে এনে রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,

– ফাজিল,সারাদিন কোথায় ছিলি? (ত্বকি)

– নিশ্চুপ, (মেঘা)

– এই কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)

– আসলে ভাইয়া, নানু মনিরা এসেছে তো,, (মেঘা)

– চুপ, নানু মনিরা এসেছে তাই বলে একবারও রুমে এলি না? যা বই বের কর। পড়তে বস।(ত্বকি)

ভাইয়া কন্ঠে শুনে বুঝতে পারলাম, খুব রেগে আছে। তাই কোন কথা না বলে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো বই বের করে পড়তে বসলাম।

ভাইয়া আমাকে কয়েকটা অংক করার জন্য দাগ দিয়ে দিল। আর গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

– তিনটা অংক দিয়েছি। যদি পনেরো মিনিটের মধ্যে শেষ না করতে পারিস, তাহলে তোর খবর আছে।(ত্বকি)

বলেই ভাইয়া ফোন স্কোল করতে লাগলেন। আমার অংক গুলো দেখেই ভয় লাগতে শুরু করল। কারন একটা অংক পারি না।

খাতায় অংক তুলে বার বার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু একটা অংকও মিলছে না।
,,

কোথায় দিয়ে যে সময় শেষ হয়ে গেল বুঝতে পারলাম না। ঠিক পনেরো মিনিট পর ভাইয়া ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

– শেষ করেছিস? (ত্বকি)

আমি ভয়ে কোন উত্তর দিলাম না। মাথা নিচু করে খাতার দিকে তাকিয়ে রইলাম।
হঠাৎ করে ভাইয়া আমার হাত থেকে খাতা নিয়ে দেখতে শুরু করলেন। আমি মনে মনে দোয়া পড়তে লাগলাম।
,,
ভাইয়া কিছুক্ষণ পর খাতা থেকে চোখ তুলে রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকালেন।শান্ত কন্ঠে বলে উঠলেন,

– মেঘা,,, (ত্বকি)

তার গম্ভীর কন্ঠ শুনে আমার হাত পা কাঁপছে শুরু করল। ভয়ে আমি নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।

– লুক এক মি।(ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি ছিট্টে উঠলাম।অসহায় চাউনিতে তার দিকে তাকালাম।

– তুই কি আমার মান-সম্মান রাখবি না? (ত্বকি)

– নিশ্চুপ (মেঘা)

– তোর পরীক্ষার আর এক মাস বাকি নেই, আর এখন তোর অংক ভুল হয়। পরীক্ষার খাতায় কি লিখবি? (ত্বকি)

– নিশ্চুপ(মেঘা)

– বার বার তোকে বলি মাথা থেকে আজেবাজে চিন্তা বাদ দিয়ে পড়ালেখায় মনোযোগ দে।(ত্বকি)

আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ শুনে যাচ্ছি। প্রচন্ড অস্থির লাগছে। হঠাৎ করে ভাইয়া আমার মাথা থেকে শাড়ির আঁচল ফেলে দিল। চিৎকার করে বলে উঠলো,

-এত সাজে গুঁজে থেকে প্রমাণ করতে চাস যে তুই আমার ওয়াইফ?(ত্বকি)

তার কথা শুনে এক পলক তার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আবারো বলে উঠলো,

– তোর কি কোন যোগ্যতা আছে ডক্টর আবিদ রহমান ত্বকির বউ হওয়ার? (ত্বকি)

আমি আর সহ্য করতে পারলাম না।বুকের মাঝে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব হতে লাগল ।প্রচুর কান্না পাচ্ছে।

– শোন, আমার বউ হওয়ার স্বপ্ন বাদ দিয়ে পড়াশোনা কর। আমি এই বিয়েটা রাখতে চায় না।তাই সিদ্ধান্ত নিয়েছে ছয় মাসের মধ্যে তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিব।(ত্বকি)

কথাগুলো বলেই ভাইয়া টেবিলে থাকা ফুলদানি ফেলে দিয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলেন।
,,
আমি ভাঙা ফুলদানির দিকে তাকিয়ে কাঁদতে লাগলাম। আমার সাথে কেন এমন হচ্ছে? আমি তো তাকে বিয়ে করতে চায় নি। তাহলে কেন সে এমন করছে? সেদিন সে চাইলে পারত তো বিয়ে ভেঙে দিতে। এখন বিয়ে করে কেন ডিভোর্স দিতে চাইছেন?
,,
রাত তিনটে বাজে আমি কান্না থামাতে চেষ্টা করছি কিন্তু পারছি না। রাতে সে আর রুমে আসেনি।সে কোথায় গিয়েছে তাও যানি না।
,,
সকাল বেলা জানালা ভেদ করে মিষ্টি আলো মুখে পড়তেই আমার ঘুম ভেঙে গেল। পিটপিট করে চোখ খুলতেই চারপাশে কাউকে দেখতে পেলাম না। হয়তো রাতে ভাইয়া আর ফিরেনি।
মাথায় প্রচুর ব্যথা করছে।আস্তে আস্তে উঠে বাথরুমে গেলাম।
ফ্রেশ হয়ে রুমে বাইরে আসতে ভাইয়ার ফোনের আওয়াজ পেলাম।মনে হয় ভাইয়া ভুলে ফোন রেখে গিয়েছে।
ফোন বার বার বেজে চলেছে। প্রথমে ধরতে না চাইলেও অবশেষে ব্যাধ্য হয়ে ফোন রিসিভ করতেই আমি অবাক,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৬
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
ফোন রিসিভ করার সাথে সাথেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। কারন যে ব্যক্তি এত বার বার কল করেছিল সে আমার কন্ঠ পেয়ে ফোনটা কেটে দিল। কে ফোন দিয়েছিল? কেটেই বা দিল কেন?

ফোনটার দিকে তাকাতেই আমার বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। আল্লাহ, আমি কি করলাম।ভাইয়াকে না বলে তার ফোন ধরলাম। সে যদি দেখে আমি তার ফোন ধরেছি তাহলে নিশ্চয়ই আমাকে বকা দেবে।তাই তাড়াতাড়ি ফোন আগের জায়গায় রেখে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।
,,
মামি আর আম্মু রান্না ঘরে রান্না করে । মামা ছোফায় বসে পেপার পড়ে। নানু আর ভাইয়ার মামি কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা করছেন। তিথি আপু টিভিতে কার্টুন দেখে। সবাইকে দেখতে পেলেও একজনকে দেখতে পেলাম না। তারমানে ভাইয়া কি রাতে ফিরেনি? কোথায় গিয়েছে সে?
,,
সিরিতে দাঁড়িয়ে ভাইয়ার কথা ভাবতে লাগলাম।হঠাৎ মামির কন্ঠে পেয়ে আমি ঘাবড়ে গেলাম। মামি আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলেন,

– বৌমা, কয়টা বাজে শুনি? এখন তোমার ঘুম থেকে উঠার সময় হলো?(ত্বকির মামি)

মামির কথা শুনে আমি ঘড়ির দিকে তাকালাম। দেখলাম আটটার বেশি বাজে। সত্যি অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে। আমার কখনো এত দেরি হয় না কিন্তু কালকে রাতে জেগে থাকার জন্যে সকালে উঠতে পারিনি।

– কি হলো বৌমা কি ভাবছ? এত দেরি করে উঠলে সংসারের কাজ কে করবে শুনি? (ত্বকির মামি)

মামির কথা শুনে আমি কোন উত্তর দিলাম না। এক দৃষ্টিতে নিচের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
নানু মনি মামিকে বলে উঠলেন,

– বৌমা, মেঘা মনি তো ছোট মানুষ। বড়ো হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।(ত্বকির নানু)

নানু মনির বলার সাথে সাথে মামি বলে উঠলেন,

– মা, আমারও এই বয়সে সংসার করে এসেছি। কোনদিন কি এত বেলা করে ঘুম থেকে উঠেছি?(ত্বকির মামি)

মামির কথা শুনে তিথি আপু টিভি থেকে চোখ সরিয়ে আমার দিকে তাকাল। আপুর চোখে থাকা চশমাটা একবার নাড়া দিয়ে বলে উঠলো,

– মামি, আপনি কালকে না বললেন, মেঘা ছোট মানুষ, ত্বকি এত পিচ্চি মেয়েকে বিয়ে করেছে কেন?(তিথি)

তিথি আপুর কথা শুনে মামি কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেললেন। চুপ করে রুম থেকে চলে গেলেন।
,,
আমি চেয়ার বসে মামির বলা কথাগুলো ভেবে চলেছি। আসলেই আমি কোন কাজ করি না। বউ হিসেবে কোন দায়িত্ব পালন করি না। মামির বলা কথাগুলো শুনতে খারাপ লাগলেও প্রত্যেকটা কথাই সত্য। তাই মনে মনে সিদ্ধান্ত নিলাম কালকে ঘুম থেকে উঠেই রান্না ঘরে চলে আসব।

– পুতুল মনি কি হয়েছে তোর? তোর কি মন খারাপ? (নানু)

নানুর কথা শুনে আমি হালকা হেসে বলে উঠলাম,

– না গো নানু। (মেঘা)

– দেখ, তোর মামির কথায় কিছু মনে করিস না। (নানু)

আমি কিছু বললাম না।তিথি আপু বলে আমাকে উঠলো,

– মেঘা ভাবি, তুই মাইর খাবি। (তিথি)

– কেন আপু? আমি কি কোন ভুল করেছি? (মেঘা)

– ভুল তো অবশ্যই করেছিস। (তিথি)

আপুর কথা শুনে নানু মনি বলে উঠলো,

– কি করেছে আমার পুতুল?(নানু)

আমি অতি আগ্রহ নিয়ে আপুর কথা শুনার জন্য প্রস্তুত হলাম। আপু ঠোঁট-ওল্টে আমার দিকে তাকিয়ে ন্যাকা কন্ঠে বলে উঠলো,

– এ্য, আমি ভেবেছিলাম যে ফুপি হতে চলেছি। আর আজকে মায়ের কাছে শুনলাম, আমার ভাতিজার মা নাকি কোনদিন প্রেগনেন্ট হয় নি। সবাই আমাকে ধোঁকা দিয়েছে।(তিথি)

আপুর কথা আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারলাম না। নানুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম সে মিটমিট করে হাসছে। আমি বোকার মতো আপুকে প্রশ্ন করলাম,

– মানে?(মেঘা)

আপু আমার মাথায় হালকা করে বারি দিয়ে বলে উঠলো,

– গাধী, আসলেই তুই একটা পিচ্চি।(তিথি)

আসলেই আমি বুঝতে পারলাম না। মামি খাবার বেড়ে দিয়ে তিথি আপুকে ধমক দিয়ে বলে উঠলেন,

– তিথি, সবার সামনে সবকিছু বলতে হয় না বুঝেছিস।(ত্বকি মা)

– সরি আম্মু ।(তিথি)
,,
মামা অফিসে চলে গেলেন। তিথি আপু খাওয়া শেষ করে তার রুমে চলে গিয়েছে।নানুও খাওয়া শেষ।
আমি রাতের কথা চিন্তা করে কিছু খেতে পারছি না। গলা দিয়ে খাবার নামছে না। শুধু হাত দিয়ে খাবার নেড়ে যাচ্ছি।
রান্না শেষ করে মামি এসে আমার পাশে বসলেন। আমার হাতের নিচে থেকে প্লেট নিয়ে খাবার মাখতে লাগলে,

– মেঘা আম্মু, তোমার কি মন খারাপ? (ত্বকির মা)

আমি ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলাম,

– না তো মামি।(মেঘা)

মামি আমার মুখে খাবার পুরে দিয়ে বলে উঠলেন,

– আমি কি তোর মামি হই? তুই কি কোনদিন ও আমাকে আম্মু বলবি না। (ত্বকির মা)

মামির কথা শুনে আমি বাচ্চাদের মতো বলে উঠলাম,

– সরি মামি থুক্কু আম্মু।এখন থেকে তোমাকে আম্মু বলে ডাকব।(মেঘা)

আমাদের কথার মাঝখানে আমার আম্মু এসে বলে উঠলো,

– মেঘা, তুই তো তোর মাকে ভুলে গিয়েছিস। একবারও আমার সাথে দেখা করিস না। তুই কি এখনো আমার উপর অভিমান করে আছিস? (মেঘার মা)

আমি আম্মু কথা শুনে ছোট করে উওর দিলাম,

– না। (মেঘা)

আমি আর আম্মু দিকে তাকালাম না। মামি খাইয়ে দিতে লাগলো চুপচাপ খেতে লাগলাম।

খাওয়ার মাঝে হঠাৎ ভাইয়া এসে হাজির। পরনে তার সাদা শার্ট ব্লাক প্যান্ট। দেখেই বোঝা যাচ্ছে ভাইয়া কোথাও যাবে, মনে হচ্ছে হসপিটালে যাবে। কিন্তু আমি বুঝলাম না যে কখন সে রুমে গিয়ে রেডি হলেন। সারারাত কোথায় ছিলেন।
,,
ত্বকি ভাইয়া চুপচাপ গম্ভীর মুখ করে চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। মামি তাকে খাবার বেড়ে দিয়ে গেলেন।
ভাইয়া খাবারের দিকে তাকিয়ে চুপচাপ খাচ্ছে।মুখে তার রাগী ভাব। আমি একপল তার দিকে তাকাতেই রাতের কথা মনে পড়ে গেল। ভিতরে অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল।

হঠাৎ ভাইয়া খাওয়ার মাঝে বলে উঠলো,

– মেঘা, রেডি হ।(ত্বকি)

কথাটা শুনেই বুকের ভিতর ধক করে উঠলো। ভাইয়া কি আজকেই আমাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবে। তাই কি রেডি হতে বলছেন।

মামি আমাকে বললেন,

– যা মেঘা রেডি হয়ে আয়। (ত্বকির মা)

মামির কথা মতো রুমে চলে এসে রেডি হয়ে নিলাম। প্রচুর ভয় হচ্ছে। মাথাটা একদম কাজ করা বাদ দিয়ে দিয়েছে।

,,

গাড়িতে উঠেছি পাঁচ মিনিট হলো।ভয়ে আমার হাত পা কাঁপছে। ভাইয়া এক মনে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। মুখে কোন কথা নেই।

,,
হসপিটালের সামনে গাড়ি থামাতেই আমার ভয়টা একটু হলেও কমে গেল। ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে গম্ভীর গলায় আমাকে বলে উঠলো,

– নামবি? নাকি অন্য কিছু করব। (ত্বকি)

ভাইয়া কথা শুনে আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম।
ভাইয়ার পিছু পিছু হাটতে শুরু করলাম।
,,

হসপিটালের ভিতরে ঢুকতেই সবাই আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকিয়ে রইল।
,,
ভাইয়া আমাকে তার চেম্বারে নিয়ে এলো। আমি রুমটার এক কোণে দাঁড়িয়ে আছি। অতিরিক্ত হাড়ে আমার হাত পা কাঁপছে।
,,
ভাইয়া টেবিলের ড্রয়ার কি যেন একটা পেপার বের করে আমার হাতে দিল। ভয়টা যেন আরো দ্বিগুন বেড়ে গেল।প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে। পেপারটা দিকে না তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম,

– ভাইয়া এটা কি ডিভোর্স পেপার?(মেঘা)

কিছুক্ষণ ভাইয়া কোন আওয়াজ না পেয়ে আস্তে করে চোখ খুলল। দেখলাম ভাইয়া আমার দিকে কেমন করে যেন তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ ভাইয়া আশ্চর্য কান্ড করে বসল। আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগল ।রাগী কন্ঠে বলতে লাগল,

– কি ভেবেছিস তোকে ডিভোর্স দিয়ে দিব?স্টুপিড, কাগজের দিকে তাকা। (ত্বকি)

আমি কাগজর দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

– ডিভোর্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এই ত্বকির হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। দরকার পড়লে তোকে একশ বার বিয়ে,, (ত্বকি)
(চলবে)

[।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here