তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ৭+৮+৯

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৭
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)

,,
আমি কাগজের দিকে না তাকিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম। ভাইয়া আমার কাছে এসে দাঁতে দাঁত চেপে বলে লাগলেন,

– ডিভোর্সের কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। এই ত্বকির হাত থেকে তোর মুক্তি নেই। দরকার পড়লে তোকে একশো বার বিয়ে করব। আন্ডারস্টান্ড?(ত্বকি)

ভাইয়ার কথাগুলো যেন আমার মাথার উপর দিয়ে গেল। তার লাস্ট কথাটা শুনে আমার মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে । হাত পা অবস হয়ে আসছে। মানুষ এক রাতের মধ্যেই এতোটা চেন্জ হয়ে যেতে পারে? যে লোক কাল রাতে বলল ডিভোর্স দিয়ে দিবে সেই কিনা এখন বলছে,দরকার পড়লে। একশো বার বিয়ে করবে।

আমার হাত পা থরথর করে কাঁপতে লাগলো। ভাইয়া আমাকে কাঁপতে দেখে দূরে সরে গেলেন। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

– এই মেয়ে এত কাঁপছিস কেন? আমি কি কাঁপার মতো কিছু করেছি?(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)
,,

ভাইয়া প্রতিটা কথায় আমাকে ভাবাচ্ছে। তার মাথা কি ঠিক আছে? পাগল হয়ে গেলেন না তো? ভয়ে আমি জানালার পর্দা ধরে ঠাই দাঁড়িয়ে আছি। ভাইয়া তার চেয়ারে বসে মোবাইল স্কোল করেছেন। হঠাৎ ভাইয়া বলে উঠলেন,

– দাড়িয়ে আছিস কেন? আমি কি তোকে বসতে নিষেদ্ধ করেছি? স্টুপিড,,(ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি চুপ করে যেয়ে ছোফায় গিয়ে বসে পড়লাম।
,,
চুপ করে বসে আছি। এখনো হাত পায়ের কাঁপুনি কমে নেই। ভাই আর কোন কথা বলে নি। আমি বসে ভাইয়া কথা চিন্তা করছি। হঠাৎ একটা মেয়ের কন্ঠ স্বর পেলাম। মেয়েটি ভিতরে না ঢুকে বলে উঠলো,

– মে আয় কামিন স্যার? (মেয়েটা)

ভাইয়া মেয়েটির দিকে না তাকিয়ে বললেন,

– হুম। (ত্বকি)

মেয়েটির ভাইয়ার উওর পেয়ে ভিতরে ঢুকে ভাইয়াকে সালাম দিল। আমি পিছনে বসে থাকায় তাই হয়তো আমাকে দেখতে পায় নি। দেখতে বেশ সুন্দর, লম্বা গোলগাল। মেয়েটির পরনে নার্সের ইউনিফর্ম। তারমানে সে এই হসপিটালের একজন নার্স।
নার্স আপুটা নরম সুরে ভাইয়াকে বলতে লাগল,

– স্যার, এটা ২৩ নম্বর কেবিনের পেসেন্টের রিপোর্ট। (নার্স)

ভাইয়া টেবিলের উপর থেকে রিপোর্ট টা নিয়ে দেখতে লাগলেন।
,,
নার্স আপুটা রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে আমাকে দেখতে পেয়ে হা করে তাকিয়ে রইলেন। আমি আপুটাকে আস্তে করে সালাম দিলাম। আপুটা আমার দিকে দৃষ্টি আবদ্ধ রেখে বিষ্ময়ের সাথে ভাইয়াকে বলে উঠলো,

– স্যার, কিছু মনে না করলে একটা প্রশ্ন করি? (নার্স)

– করুন। (ত্বকি)

অনুমতি পেয়ে আপুটা আর দেরি করলেন না।অস্থিরতার সাথে বলে উঠলো,

– স্যার এই মেয়েটা কে? আপনার ছোট বোন? (নার্স)

– না, আমার ওয়াইফ। (ত্বকি)

ভাইয়ার মুখ থেকে ওয়াইফ কথা শুনে আমি ধাক্কা খেলাম। সারা শরীর শিউরে উঠলো।অবাক হয়ে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।
নার্স আপুটা আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হেসে বললেন,

– কেমন আছেন ভাবি? (নার্স)

– ভালো। আপনি কেমন আছেন আপু?(মেঘা)

– আমিও ভালোই আছি। (নার্স)

আমাদের কথার মাঝে ভাইয়া গম্ভীর গলায় নার্স আপুকে বলে উঠলো,

– মিস সারা, আপনাকে একটা কাজ দিব? (ত্বকি)

– জী স্যার অবশ্যই। (নার্স)

– বারোটার দিকে আমার একটা সার্জারি আছে। তাই আমি এখনে থাকতে পারব না। আপনি কিছুক্ষণ আপনার ভাবির কাছে থাকতে পারবেন?

– জী স্যার। থাকতে পারব। আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। (নার্স)

– ওকে। (ত্বকি)

বলেই ভাইয়া আমার দিকে একপল তাকিয়ে এপ্রোন হাতে নিয়ে বেরিয়ে গেলেন।
,,

ভাইয়ার বেরিয়ে যাওয়ার পর নার্স আপুটা আমার পাশে এসে বসলেন। মিষ্টি করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

– ভাবি আপনার নাম কি? (নার্স)

– মেঘা। (মেঘা)

– খুব সুন্দর নাম। (নার্স)

আপুটা আমার আরও একটু কাছে এসে ঘেষে বসলেন। মিটমিট করে হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

– ভাবি, আপনাদের কি লাভ মেরেন্জ? (নার্স)

আপুটার কথা শুনে আমি অনেক লজ্জা পেলাম। আমাকে যে কোনদিন এরকম কোন কথা শুনতে হবে কখনো ভাবিনি।
লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললাম,

– না আপু। (মেঘা )

– আমারই বোঝা উচিত ছিল ত্বকি স্যারের মতো মানুষ কিভাবে লাভ মেরেন্জ করে। আচ্ছা ভাবি, স্যার তো অনেক রাগী। আপনার উপর ও কি রাগ করে? (নার্স)

আপুটার কথা শুনে আমি কি উওর দিব ভেবে পেলাম না। ভাইয়া তো কোনদিনও আমার সাথে ভালো ভাবে কথা বলে নি। তাও আপুকে বললাম,

– না, একটু রাগ করে না। (মেঘা)

আপুটা আমার গাল টেনে দিয়ে বলে উঠলো,

– ভাবি আপনি তো অনেক কিউটি পিচ্চি তাই হয়তো স্যার রাগ করে না। (নার্স)

আপুর কথা শুনে আমি তার থেকে একটু পিছিয়ে বসলাম। তার গালে হাত দেওয়া আমার একদম ভালো লাগে নি।
,,
অনেটা সময় আপুটার সাথে কথা বললাম। আপুটা একটু অন্যরকম হলেও অনেক ভালো। খুব তাড়াতাড়ি মিশতে পারে।
,,
ভাইয়ার ওটি শেষ করে চলে আসার পর আপুটা চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাড়ালেন।
আমার কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। তারপরে এক আশ্চর্য ঘটনা ঘটিয়ে বসলেন। আমার গালে চুমু খেয়ে বসলেন। আবারও গালে হাত দিয়ে বলতে লাগলেন,

– ভাবি, আপনি অনেক কিউট। আপনাকে আমার অনেক ভালো লেগেছে।প্লিজ ভাবি, স্যারকে নিয়ে আমাদের বাড়িতে যাবেন। আপনি গেলে আমি অনেক খুশি হবো।(নার্স)

আমি তো স্তব্ধ হয়ে দাড়িয়ে আছি। ভাইয়া বিরক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছি। তার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আমার থেকে আপুটার কাজে সে বেশি বিরক্ত। মনে হচ্ছে গালটা আমার ছিল না ভাইয়া ছিল।
,,
হসপিটাল থেকে বেরিয়ে গাড়িতে উঠেছি। ভাইয়া গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছেন। আমি ওড়না দিয়ে মুখ মুছতে লাগছি। ভাইয়া আমার কান্ড দেখে রাগী গলায় বলে উঠলো,

– এই মেয়ে কি করছিস? মুখে থেকে হাত সরা।(ত্বকি)

ভাইয়া কথা শুনে আমি আর মুখে হাত দিলাম না। মন খারাপ করে বসে রইলাম।
,,
বাড়িতে এসেছি বিকেল বেলা। দুপুরে রেস্টুরেন্ট খাবার খেতে হয়েছে। তারপর ভাইয়া আমাকে কোচিংনের সব ক্লাসে করিয়ে বাড়িতে নিয়ে এসেছে। তারপরে অনেকক্ষণ নানু মনির সাথে গল্প করেছি।
আমি প্রচুর ক্লান্ত।আজকের সব ঘটনাগুলো আমার মাথার উপর দিয়ে গিয়েছে। ভাইয়া অদ্ভুত ব্যবহার আমাকে ভাবাচ্ছে। তার এত পরিবর্তন আমি মানতে পারছি না।
,,

কিছুক্ষণ শাওয়ার নিয়েছি। একটু আগে তিথি আপু এসে বলে গেল আজকেও নাকি আমাকে শাড়ি পড়তে হবে। কারন আজকে নাকি ভাইয়ার চাচাতো বোন আমাকে দেখতে আসবে।
,,
আমি ভাইয়ার রুমে খাটের উপর বসে আছি একদম নতুন বউ এর মতো। ভাইয়ার চাচাতো বোন মিশু আপু আমার সামনে বসে আছে, পাশে তিথি আপু। আপুর কোলে ছোট্ট তিন বছরের একটা বাচ্চা। বাচ্চাটা আমাকে দেখার পর থেকে এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

তিথি আপু আমার দিকে ইশারা করে মিশু আপুকে বলে উঠলো,

– আপু দেখ, আমাদের ভাবি। কেমন হয়েছে বল।(তিথি)

-আমার তো অনেক পছন্দ হয়েছে। ভাবিটা একটু ছোট কিন্তু অনেক সুন্দর। একদম পরীর মতো। (মিশু)

মিশু আপু আর তিথি আপুর সাথে অনেকক্ষণ কথা বললাম। কিন্তু চিন্তা হচ্ছে ভাইয়ার জন্য। সে এখানো আসেনি। যদি এসে দেখে আমি পড়া বাদ দিয়ে গল্প করছি তাহলে নিশ্চুই আমার খবর আছে।

,,

আমার চিন্তা মধ্যে মিশু আপুর ছেলে রাফিন হঠাৎ করে আমার কোলে এসে বসে পড়ল। গলা জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

– মামমি তুমি আমাল সাথে কুথা বুলো না কেনু? (রাফিন)

আমি রাফিকে কি বলব বুঝতে পারছি না। রাফিন অনেক কিউট। কিন্তু ওকে কোলে তোলা অনেক কষ্টের।ওর ওজন একটু বেশি হওয়াতে আমার অনেক কষ্ট হচ্ছে।

– মামমি আমালে একটি গপ্পো শুনাও। (রাফিন)

রাফিনের কথা শুনে মিশু আপু বলে উঠলো,

– রাফিন সবসময়ই গল্প গল্প করো কেন? তোমার মামি এখন শোনাবে না। বুঝেছ? (মিশু)

মিশু আপুর ধমক খেয়ে রাফিন কান্না শুরু করে দিল। আমি ওর কান্না থামাতে বলে উঠলাম,

– শুনাব তো। বলো তুমি কিসের গল্প শুনতে চাও?

আমার কথা শুনে রাফিন কান্না থামিয়ে খিলখিল করে হেসে দিয়ে বলে উঠলো,

– গরুর গপ্পো শুনব। (রাফিন)

– শুরু কর মেঘা। আমিও একটু শুনি। (তিথি)

আমি তো পড়লাম মহা বিপদে। কখনো কোনদিন কাউকে গল্প শুনাতে হয় নি। গল্পও আমার কাছে একদম ভালো লাগে না।
তাও বাধ্য হয়ে গল্প মনে করার চেষ্টা করলাম। কিন্তু কোন গরুর গল্প মনে পড়ছে না।

– মামমি বলো না। না বললে আমি কিন্তু কান্না করে দিব। (রাফিন)

অবশেষে রাফিনের দিকে তাকিয়ে বলতে শুরু করলাম,

– এক দেশে ছিল একটা গরু। গরুর ছিল একটা হাত থুক্কু চার পা একটা লেজ,,

তারপরে একটু থেমে রাফিনের দিকে তাকালাম। রাফিন আগ্রহ নিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

– তারপরে কি মামমি? (রাফিন)

– একদিন না গরুটার অনেক পেটে ব্যাথা শুরু হয়। সবাই মনে করে গরুটার বাবু হবে। তাই সবাই হসপিটাল থেকে ডক্টর ডেকে নিয়ে আসে। ডক্টর এসে গরুটাকে নাপা খেতে দেয়। কিন্তু তারপরেও তার পেটে,,,, (মেঘা)

গল্পটা শেষ করার আগে একজনের চেনা পরিচিত কন্ঠে পেয়ে চুপ হয়ে গেলাম।

-স্টপ, (ত্বকি)
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৮
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)

– স্টপ, (ত্বকি)

ভাইয়া ধমক শুনে চুপ হয়ে গেলাম। তিথি আপুর দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আপু মুখের উপর বালিশ চেপে হাসছে। রাফিন ভাইয়াকে দেখে এক দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গিয়েছে।
,,
তিথি আপুর হাসি দেখে আমার বিরক্ত লাগছে। আমি কি কোন হাসির গল্প বলেছি? আপু তো হাসি থামাতেই পারছে না। ভাইয়া আপুকে হাসতে দেখে গম্ভীর গলায় বলে উঠলো,

-তিথি, ঘর থেকে বের হ।(ত্বকি)

তিথি আপু হাসতে হাসতে বলে উঠলো,

– যাচ্ছি। (ত্বকি)

আপু রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার আগে ভাইয়া বলে উঠলো,

-শোন, মেঘার জন্য খাবার পাঠিয়ে দিবি।ও এখন পড়তে বসবে, ওকে আর বের হতে দিব না। (ত্বকি)

-ঠিক আছে।(তিথি)

আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেল। আমি চুপ চাপ গিয়ে টেবিলে বসে বই বের করতে লাগলাম। ভাইয়া আমার সামনে চেয়ার টেনে বসলেন। রসায়ন বই হাতে নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলেন,

-এতক্ষণ কি করছিলি? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-তোকে না আমি পড়তে বসতে বলেছিলাম। পড়তে বসিস নি কেন?

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-কথা বলছিস না কেন? (ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি ছিট্টে উঠলাম। কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম। ভাইয়া কিছুটা সময় চোখ বন্ধ করে রইলেন। তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে সে প্রচুর রেগে আছেন। হঠাৎ করে ভাইয়া নরম কন্ঠে বলে উঠলো,

-মেঘা, (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-তুই কি কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি )

ভাইয়ার কথাটা আমার বুকে গিয়ে বিঁধল। নিচে থেকে চোখ তুলে ভাইয়ার দিকে তাকালাম।

ভাইয়া আমার দিকে না তাকিয়ে বলতে লাগল,

-দেখ মঘা, তোর পরীক্ষার আর বেশি দিন নেই। এখন যদি পড়া লেখা না করিস তাহলে তো তোরই ক্ষতি হবে।(মেঘা)

আমি কাঁপতে কাঁপতে বলে উঠলাম,

-আসলে ভাইয়া মিশু আপুরা,,(মেঘা)

আমার কথা শেষ করতে না দিয়ে ভাইয়া বলে উঠলেন,

-চুপ, একটা কথাও বলবি না।(ত্বকি)

আমি আর কোন কথা বললাম না। ভাইয়া কয়টা অংক দাগ দিয়ে দিলেন। আমি অংক করতে শুরু করলাম।
,,
ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে ফোন স্কোল করছেন। অনেক কষ্ট করে অংক গুলো শেষ করে ভাইয়াকে আস্তে করে বলে উঠলাম,

-হয়েছে।(মেঘা)

ভাইয়া আমার আওয়াজ পেয়ে ফোন থেকে চোখ তুলে আমার দিকে তাকালেন।আমার হাত থেকে খাতা নিয়ে দেখতে লাগলেন।
,,
ভাইয়া অংক দেখা শেষ হওয়ার আগেই তিথি আপু আমার জন্য খাবার নিয়ে চলে এলো। আস্তে করে টেবিলের উপর খাবার রেখে কোন কথা না বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

খাবারের ঘ্রাণ পেয়ে আমর অস্থির লাগতে শুরু করল। কারন নাক বলে দিল প্লেটের ভিতরে আমার সবচেয়ে অপছন্দের খাবার বিরিয়ানি রাখা আছে। বিরিয়ানির গন্ধে আমার প্রচুর বমি বমি পাচ্ছে। আমি দাত চেপে বসে আছি।
,,
ভাইয়া খাতা দেখতে দেখতে বলে উঠলো,

-যা হাত ধুয়ে আয়। (ত্বকি)

আমি ভাইয়া কথা শুনে আর দেরি হাত ধুয়ে এলাম।কিন্তু প্লেটে হাত দিলাম না।

হঠাৎ করে ভাইয়া বলে উঠলো,

-কিরে খাচ্ছিস না কেন? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-আমাকে দেখে আবার লজ্জা পাচ্ছিস না তো?(ত্বকি)

-ভাইয়া, আমি খাব না। (মেঘা)

আমার কথা শুনে ভাইয়া অংক দেখা বাদ দিয়ে গম্ভীর মুখ করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-খাবি না। কেন? (ত্বকি)

-ভাইয়া বিরিয়ানি আমার কাছে ভালো লাগে না। আমি খাব না প্লিজ। (মেঘা)

আমার মুখ থেকে খাব না শুনে ভাইয়া রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-কোন কথা না। খাওয়া শুরু কর। (ত্বকি)

ভাইয়া দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া, আমি শুধু লবণ আর পানি দিয়ে ভাত খাব। আপনি তো জানেন আমি বিরিয়ানি খেতে পারি না।

ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো,

-কি বললি? আবার বল। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-তুই খাবি না?

আমি সাহস নিয়ে উওর দিলাম,

-নাআ(মেঘা)

-বাহ, সাহস তো দেখি অনেক বেড়ে গিয়েছে।

আমি ভাইয়ার কথা শুনে কাঁপতে শুরু করলাম। ভাইয়া খাতা রেখে দিয়ে উঠে দাড়াল। আমার দিকে এগিয়ে আসতে আসতে বলে উঠলো,

-তোর ওজন কত? (ত্বকি)

আমি ভয়ে ভয়ে বলে উঠলাম,

-৩২ কেজি। (মেঘা)

-আল্লাহ, কত ওজন। এবার বল তোর হাইট কত?(ত্বকি)

-৫ ফুট তিন। (মেঘা)

ভাইয়া আমার আরো কাছে বলে উঠলো,

-ছিঃ, তোর বলতে লজ্জা লাগছে না। তোর চেয়ে রাফিনের ওজন বেশি। রাফিনের কাছ থেকে তোর খাওয়া শেখা উচিত। (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-চুপচাপ খাওয়া শুরু করবি নাকি আমি অন্য ব্যাবস্থা নিব? (ত্বকি)

ভাইয়া শেষ কথাটা আমার বেশি সুবিধাজনক লাগল না। তাই বাধ্য হয়ে খাওয়া শুরু করলাম।
,,
অনেক কষ্ট করে পুরোটা বিরিয়ানি শেষ করলাম। এখন প্রচুর বমি পাচ্ছে সাথে অনেক অস্থির লাগছে।
অনেক জানতে ইচ্ছে করল যে ভাইয়া খেয়েছে কি না। তাই ভয়ের সাথে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া, আপনি খেয়েছেন। (মেঘা)

আমার কথা শুনে ভাইয়া বিরক্ত নিয়ে বলে উঠলো,

-তোর না জানলেও হবে। (ত্বকি)

ভাইয়ার এমন উওর আমি আশা করিনি।মনটা অনেক খারাপ হয়ে গেল। অস্থিরতা যেন আরও বেড়ে গেল।আর কোন কথা বললাম না, পড়েতে শুরু করলাম।
,,
প্রায় রাত একটা বাজতে চলে। এখনো পড়ছি। ভাইয়া ছোফায় বসে লেপটপে কাজ করছেন। তার চোখে ঘুম নেই। কিন্তু আমি আর জেগে থাকতে
পারছি না। প্রচুর ঘুম পাচ্ছে।

ত্বকি মেঘার ঘুম মাখা মুখ দেখে বলে উঠলো,

-আর পড়তে হবে না। যা ঘুমিয়ে পড়। (ত্বকি)

ভাইয়া অনুমতি পেয়ে উঠে দাঁড়ালাম।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,

-আপনি কোথায় ঘুমোবেন?এই রুমে? (মেঘা)

আমার কথা শুনে ভাইয়া বিরক্তির সাথে বলে উঠলো,

-তোর কি মনে হয় আমি তোর সাথে ঘুমোব?কোনদিন ও না। তোর সাথে ঘুমিনোর চেয়ে রাস্তায় যেয়ে ঘুমোন অনেক বেটার।(ত্বকি)

কথাগুলো একদমে বলেই ভাইয়া ছোফা থেকে উঠে বেলকনিতে চলে গেলেন। আমি আর কান্না কাটকে রাখতে পারলাম না। বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়ে মুখ বুজে কাঁদতে লাগলাম। মানুষটা এমন কেন? আমার সাথে কি একটু ভালো করে কথা বলতে পারে না। তার এত ওয়েট কেন? আমি কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়েলাম।
,,
ফজরের আযানের আওয়াজ পেয়েই আমার ঘুম ভেঙে গেল। আস্তে আস্তে বিছানায় থেকে নেমে বাথরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলাম।
ভাইয়াকে রুমে দেখতে পেলাম না। তাই বেলকনিতে গিয়ে দেখলাম। কিন্তু বেলকনিতেও পেলাম না।ভাইয়ার কথা ভাবতে প্রচুর অভিমান হলো তার উপর। আমার সাথে কেন এমন করে সে। তার কথা চিন্তা করা বাদ দিয়ে, বই বের করে পড়তে বসলাম।
,,
সকাল সাতটা বাজতেই পড়া বন্ধ করে দিলাম।এখনো ভাইয়া রুমে আসে নি। আয়নার সামনে গিয়ে ওড়না ভালোভাবে বেধে রুম থেকে বেরিয়ে এলাম।

,,

রান্না ঘরে এসে দেখলাম ভাইয়ার আম্মু রান্না করছেন। আমি তার পাশে গিয়ে দাঁড়াতেই সে বলে উঠলো,

-মেঘা মা, তুই এখানে কেন?(ত্বকির মা)

আম্মুর কথা শুনে আমি বলে উঠলাম,

-আজকে থেকে আমি রান্না করব। (মেঘা)

আম্মু আমার কথা শুনে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-মাইর চিনিস?(ত্বকির মা)

আমি নিচে দিকে তাকিয়ে রইলাম।

-যা ঘরে যা। তোর কয়েক দিন পড়ে পরীক্ষা মনে আছে? ত্বকি যদি জানে তুই রান্না ঘরে এসেছিস। তাহলে কি করব জানিস? (ত্বকি)

মামির বকা শুনে আমি আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারলাম না। কাঁদতে কাঁদতে রান্না ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। রুমে এসে বাথরুমে ঢুকে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম। সবাই আমার সাথে কেন এমন করে? কেন যে ভাইয়ার উপকার করতে গেলাম।

,,
কোচিং এ যাওয়ার আগে কোথায় থেকে যেন ভাইয়া চলে এলো।তাও আবার একদম পরিপাটি হয়ে।
এসেই আমাকে গাড়িতে উঠতে বললে। আমি রেডি হয়ে গাড়িতে এসে বসলাম।
ভাইয়ার সাথে আমার আর কথা হয় নি। সারারাত কোথায় ছিলো তাও যানিনা। জিজ্ঞেসাও করি নি।
আজকে করে সকালের আম্মুর রাগ নাস্তা খায় নি। আম্মু বুঝতে পেরেছে যে আমি রাগ করেছি তাই আর কিছু বলে নি। প্রচুর রাগ হচ্ছে ভাইয়ার উপর।
,,
কোচিং এর সামনে এসে ভাইয়া গাড়ি থামালেন। আজকে আমি তার বলার আগেই গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। ভাইয়াকে না বলেই হাঁটতে শুরু করলাম। কিন্তু হঠাৎ করেই কোচিং এর ইংলিশ টিচার হ্রদ স্যার আমার সামনে এসে দাড়ালেন। হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

-মেঘা, কেমন আছো? এতদিন কোথায় ছিলে?পিছনের লোকটা তোমার কি হয়? (হ্রদ)

স্যারের এতোগুলো প্রশ্ন শুনে আমি বিরক্ত হয়ে উঠলাম। ভাইয়ার দিকে ইশারা করে বলে আমি বলে উঠলাম,

-আমার কাজিন হয়। (মেঘা)

এখন অনেকটা শান্তি লাগছে।কারন আমার মুখ থেকে কাজিন শব্দটা ভাইয়া আশা করে নি। তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কষ্ট পেয়েছে। রাগে তার ফর্সা মুখটা লাল হয়ে গিয়েছে।আজকে নিশ্চই আমার খবর আছে,,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :৯
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
আজকে নিশ্চই আমার খবর আছে।ভাইয়া মুখটা দেখার মতো। আমি বেশিক্ষণ দাঁড়িয়ে না থেকে ক্লাসে চলে এলাম।আসার সময় পিছনে এক পলক তাকিয়ে দেখলাম হ্রদ স্যার ভাইয়া সাথে কথা বলতে চাচ্ছেন।
,,
প্রায় সাড়ে তিন ঘণ্টা পর ক্লাস শেষ হলো। ক্লাস থেকে বের হয়ে বাইরে দাঁড়ালাম। ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসেনি। কিন্তু একটু দূরে ভাইয়ার গাড়ি রাখা আছে, তাই বুঝতে পারলাম ভাইয়া আমাকে নিতে এসেছে।
,,
চুপচাপ গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ইচ্ছে হয়েছিল রিক্সায় যাব। পরে ভেবে দেখলাম ভাইয়াকে আজকে অনেক রাগীয়েছি।এখন যদি আবার তাকে রাগায় তাহলে নিশ্চিত আমাকে মেরে ফেলে দিবে।
,,
গাড়িতে বসে জানালা দিয়ে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছি। ভাইয়ার দিকে একপল তাকিয়ে দেখলাম, তার মুখ প্রচন্ড লাল হয়ে আছে। গম্ভীর মুখ করে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছে। চোখে মুখে রাগ বিদ্যমান। তার দিকে তাকিয়ে আমি ভয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলাম।
,,
কিছুক্ষণ পর লক্ষ করলাম গাড়িতে ভাইয়াদের বাড়িতে যাবার রাস্তায় চলছে না। মনে মধ্যে একরাশ ভয় হানা দিল।ভাইয়া আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে।ভয়ে আমার অস্থির লাগতে শুরু করল। তাও কিছু বললাম না চুপ করে বসে রইলাম।
,,
গাড়িটা যখন আমার সেই চেনা পরিচিত রাস্তার চলতে লাগল তখন ভয় এক নিমিষেই হারিয়ে গেল। বুঝতে পারলাম ভাইয়া আমাকে আমার বাসার নিয়ে যাচ্ছে।
,,
আমাদের বাড়ির সামনে এসেই ভাইয়া গাড়ি থামালেন।এত দিন পর নিজের বাড়ি দেখে মনটা খুশিতে ভরে উঠলো। ভাইয়া গাড়ি থেকে নেমে বলে উঠলো,

-স্টুপিড, গাড়ি থেকে নাম। (ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি তাড়াতাড়ি গাড়ি থেকে নামলাম।
,,
বাড়ির ভিতরে না ঢুকে, ভাইয়া আম্মুকে ডাক দিল।সাথে সাথে আম্মু গেটের সামনে চলে এসে বলে উঠলো,

-ভিতরে আয় ত্বকি। (মেঘার মা)

আম্মু কথা শুনে ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

– না ফুপি, আমি আর ভিতরে না গেলাম।আমি একটু কাজ আছে।(ত্বকি)

-আচ্ছা।(মেঘার আম্মু)

ভাইয়ার ভিতরে এলেন না। গাড়িতে উঠার আগে আমাকে আস্তে করে বলে গেলেন।

-আজকে থেকে তুই এই বাড়িতে থাকবি।আমি তোকে বিরক্ত করতে আর আসব না। পড়াশোনা ঠিক মতো করবি।(ত্বকি)

কথাগুলো বলেই ভাইয়া গাড়িতে উঠে পড়লেন। আমি আম্মুর সাথে কথা না বলে দৌড়ে আমার রুমে চলে এলাম।
,,
এতদিন পরে নিজের রুমটা দেখে খুশি হওয়ার কথা কিন্তু আমি খুশি হতে পারছি না। ভাইয়া বলা প্রতিটি কথা আমার কানে বেজে চলছে। আমি কি খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তাকে। সামন্য কাজিন বলাতে তার এত রাগ।
,,
দুপুরে খাওয়া শেষে রুমে আসার জন্যে পা বাড়াতে ফোন বেজে উঠলো।
মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। ভাবলাম ভাইয়া ফোন দিয়েছে। কিন্তু না, ভাইয়া ফোন করে নি। মামি ফোন করেছে।প্রথমে ফোন রিসিভ না করলেও পরে ঠিকি করলাম।
মামিকে সামল দিয়ে বলে উঠলাম,

-কেমন আছো?(মেঘা)

মামি আমার কন্ঠো পেয়ে কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলো,

-আম্মু,তুই কি সকালে আমার কথায় রাগ করেছিস? (ত্বকির না)

আম্মু কথা শুনে আমি কি বলব ভেবে পেলাম না চুপ করে রইলাম।

-সকালের জন্য সরি। তোর মাকে মাফ করে দে প্লিজ। আমার তোকে ওভাবে বলা একদম ঠিক হয়নি। (ত্বকি আম্মু)

-সরি বলতে হবে না।তুমি এই বাড়িতে চলে এসো(মেঘা)

আম্মু আমার কথায় হাল্কা হেসে দিয়ে বলে উঠলো,

-কীভাবে আসব রে পাগলী। ত্বকি তো যেতে দিবে না। (ত্বকির আম্মু)

আম্মুর কথা শুনে আমার কান্না চলে এলো। কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,

-আম্মু, ভাইয়া আমাকে এই বাড়িতে নিয়ে এলো কেন? আমি তো তোমাদের সাথে থাকতে চেয়েছিলাম। (মেঘা)

-দূর আম্মু, কান্না করবি না। দেখ, তুই যদি এ বাড়িতে থাকিস তাহলে তোর পড়া হবে না। তাই পরীক্ষা পর্যন্ত একটু কষ্ট কর। (ত্বকির মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-তোকে অনেক মিস করবে রে আম্মু। (ত্বকির মা)

-আমিও তোমাকে অনেক মিস করব। (মেঘা)

-আজকে তুই নেই বলে তোর নানুমনি মিশুরা সবাই চলে যাচ্ছে। পুরো বাড়িটা ফাঁকা হয়ে যাবে।

-হুম। তুমি কিন্তু আমাকে দেখতে আসবে। (মেঘা)

-হ্যাঁ আসব তো।(ত্বকির মা)

আম্মু সাথে কথা বলা শেষ করে রুমে এসে বই বের করে পড়তে বসলাম।
,,
পড়েতে পড়তে কখন যে রাত হয়ে গেল একদম ঠিক পেলাম না । আম্মু আমার জন্য প্লেটে করে খাবার নিয়ে রুমে এসে বলে উঠলো,

-মেঘা, তুই কি আমার উপর রেগে আছিস? (মেঘার মা)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

আমি কোন কথা বললাম না। হঠাৎ আম্মু কান্না করে দিয়ে বলে উঠলো,

-আমি তোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে সেদিন তোকে ত্বকির সাথে বিয়ে দিয়ে দিয়েছি।আমাকে মাফ করে দে। (মেঘার মা)

আম্মুর কান্না দেখে আমিও কান্না আটকে রাখতে পারলাম না। আম্মু জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলাম।

-মেঘা, কান্না করে না।(মেঘার আম্মু)

আমি আরো জড়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম আম্মুকে। কান্না করতে করতে বলতে লাগলাম,

-সরি আম্মু। তোমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্যে।(মেঘা)

-তুই কেন সরি বলছিস? (মেঘার মা)

-আমি যে তোমার সাথে এতোদিন কথা বলি নি। (মেঘা)

-আমি তো জানতাম আমি মেয়ে আমার সাথে রাগ করে বেশিদিন থাকতে পারবে না। (মেঘার মা)

-হুম। (মেঘা)

-এখন তাড়াতাড়ি হা কর। কতদিন ধরে তোকে খাইয়ে দেই না। (মেঘার আম্মু)

আম্মু কথা মতো হা করে খেতে লাগলাম। আম্মু আমাকে যত্ন করে খাইয়ে দিতে লাগল। আমি খাওয়ার সাথে পড়তে লাগলাম।
অনেটা খাবার শেষ করার পর আমি আর খেতে পারলাম না। মুখ কুঁচকে আম্মুকে বলে উঠলাম ,

-আম্মু, আমি আর খাব না। (মেঘা)

আম্মু আমার হাতে পানির গ্লাস দিয়ে বলে উঠলো,

-এত কম খেলে তোকে তো খুঁজেই পাওয়া যাবে না। (মেঘার আম্মু)

আমি আম্মুর কথায় কোন গুরুত্ব দিলাম না।

-আমি কিন্তু ত্বকির কাছে বিচার দিব যে তুই ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করিস না। (মেঘার মা)

আম্মুর কথা শুনে ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। সে একবারও ফোন করে নি। লোকটাকে কি আমি অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি।
,,
আম্মু আমাকে খাইয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল।ভাইয়া কথা অনেক মনে পড়ছে।হাজার চেষ্টা করেও পড়ার মধ্যে মনোযোগ দিতে পারলাম না। কিছুক্ষণ পড়ে আম্মু রুমে গিয়ে চুপ করে শুয়ে পড়লাম।
,,
সকাল বেলা আম্মুর ডাকে ঘুম ভেঙে গেল। আম্মু আমাকে বলছে,

-মেঘা, উঠ কোচিং এ যাবি না? (মেঘার মা)

আম্মু ডাকে আমি তাড়াতাড়ি করে উঠে ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। হাল্কা নাস্তা করে রেডি হয়ে নিলাম। ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে। কিন্তু ভাইয়া আসে নি। তাই কিছুক্ষণ ভাইয়ার জন্য অপেক্ষা করে বেরিয়ে পড়লাম কোচিং এর উদ্দেশ্যে।
,,
আজকে কোচিং এ প্রথম ক্লাস হ্রদ স্যার পেলেন। স্যার পড়াচ্ছিলেন আর আমার দিকে বার বার তাকিয়ে দেখছিলেন।স্যারের তাকানোর ধরন আমার একদম পছন্দ হয় নি। কোন পড়াই বুঝতে পারি নি।বিরক্ত নিয়ে ক্লাস শেষ করলাম।
,,

ক্লাস শেষে কোচিং থেকে বেরিয়ে গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে পড়লাম। মনে মনে আশা করেছিলাম, ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে। কিন্তু না, ভাইয়া এখানো আমাকে নিতে আসলেন না। বাধ্য হয়ে একা একাই বাসায় চলে এলাম।

,,
চারপাশে হাল্কা অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে। মনে হয় সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে। কোচিং থেকে এসে আমি ঘুমিয়েছিলাম।অনেক দেরি হয়ে গেল। বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম।তারপরে আম্মুর কিছুটা সময় আম্মুর সাথে গল্প করে রুমে এসে পড়তে বসলাম।
,,
হঠাৎ বাতাসে জানালার পর্দা উড়েতে লাগল। আমি চেয়ার থেকে উঠে জানালা বন্ধ করে দিলাম।

নিশ্চিত আজকে প্রচুর বৃষ্টি হবে। বৃষ্টি পড়বে ভাবতেই ভাইয়ার কথা মনে পড়ে গেল। ভাইয়া কি বাসায় নাকি হসপিটালে?

দৌড়ে আম্মু রুমে গিয়ে ফোন নিয়ে এলাম। আমার মনটা কেমন যেন কু ডাকছে। ভাইয়াকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে।
ফোনে কল লিস্টে ভাইয়ার নাম্বার বের করলাম। ফোন দিতে গিয়ে আর দিলাম না। ভাইয়ার উপর প্রচন্ড অভিমান হলো। সে তো আমার খোঁজ নেয় নি তাহলে আমি কেন নিব।
,,
ত্বকি বৃষ্টি মধ্যে হাঁটছে। সারা শরীর তার ভিজে একাকার হয়ে গিয়েছে। তারপরে সে হেঁটেই চলছে। চোখ মুখ তার শুকিয়ে গিয়েছে।
,,
চেয়ারে বসে ফোন হাতে নিয়ে ভাইয়ার কথা ভাবছিলাম।হঠাৎ দরজায় চাপানোর শব্দ পেয়ে আমি ছিট্টে উঠলাম। দরজার দিয়ে তাকাতেই আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। কারন আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছেন ত্বকি ভাইয়া। তাকে দেখেই আমার বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো।ভাইয়ার সারা শরীর ভিজে গিয়েছে। পরেনের সাদা শার্টা গায়ের সাথে লেগে গিয়েছে। চোখ দুটো তার লাল হয়ে রয়েছে।

ভাইয়া আমার দিকে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসতে লাগলেন। বাচ্চাদের মতো ঠোঁট-ওল্টে যা বলে উঠলেন,

-বউ, তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না। (ত্বকি)

ভাইয়ার মুখে,,
(চলবে)

[পরীক্ষা ঝামেলায় আছি। আজকেও গুছিয়ে লিখতে পারি নি।পরীক্ষা শেষ হলে বোনাস পার্ট দিব হুম , তাই মন খারাপ করিয়েন না।]
(চলবে)

[পরীক্ষার চাপে আছি তাই দেরি হয়ে গিয়েছে । ভুলগুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]
(চলবে)

[রিচেক দেই নি। ভূল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here