তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ১০+১১

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :১০
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
ভাইয়া আমার দিকে ঢুলতে ঢুলতে এগিয়ে আসতে লাগলেন।বাচ্চাদের মতো ঠোঁট-ওল্টে যা বলে উঠলেন,

-বউ, তুই আমাকে একটুও ভালোবাসিস না।(ত্বকি)

ভাইয়ার মুখে বউ শব্দটা শুনে আমার সারা শরীর শিউরে উঠলো।হাত পা অবস হয়ে আসতে লাগলো।আমি যেন আমার কানকে বিশ্বাস করাতে পারছি না।ভাইয়ার মাথা কি ঠিক আছে।
,,
ভাইয়া আমার দিকে আস্তে আস্তে এগিয়ে আসতে লাগলেন।আমি স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছি।মাথা কাজ কাজ করা একদম বন্ধ করে দিয়েছে।ভাইয়া তার ভেজা শরীর নিয়ে আমার কাছে এসে পড়ল।হঠাৎ করে আমার হাত ধরে নরম কন্ঠে বলে উঠলো,

-বউ, তুই কি আমাকে কখনো আমাকে বুঝবি না? (ত্বকি)

ভাইয়ার ছোঁয়া পেয়ে আমার সারা শরীরের লোমগুলি খাড়া হয়ে উঠেলো।কারন ভাইয়ার হাত অতিরিক্ত গমর।আমার বুঝতে বাকি রইল না যে ভাইয়া জ্বর এসেছে।ভাইয়া আবার ঠোঁট-ওল্টে বলে উঠলেন,

-বউ, তুই আমাকে একটুও বুঝিস না।আমাকে শুরু কষ্ট দিস।আমাকে কষ্ট দিতে কি তোর ভালো লাগে?(ত্বকি)

ভাইয়া কি বলছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।আমি কি সত্যিই তাকে কষ্ট দেই।
ভাইয়া কোন কথাই আমার মাথায় ঢুকছে না।তার অবস্থা দেখে আমার কান্না পাচ্ছে।বৃষ্টিতে ভেজার জন্য ভাইয়ার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে রয়েছে।তার ঠোঁট দুটো শুকিয়ে গিয়েছে।আমি মাথা নিচু করে ঠাই দাঁড়িয়ে রইলাম।ভালো করে খেয়াল করতে মনে হলো, ভাইয়া ভেজা কাপড়ে থাকলে তো তার জ্বর কমবে না।
তাই আমি সিদ্ধান্ত নিলাম ভাইয়া কাপড় চেন্জ করতে বলব।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে ভাইয়কে বললাম,

-ভাইয়া, প্লিজ জামা-কাপড় চেন্জ করুন।(মেঘা)

ভাইয়া আমার কথা শুনে বিরক্ত হয়ে উঠলো।চোখ দুটো ছোট করে আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-চেন্জ করতে পারব না।(ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি কান্না মাখা কন্ঠে বলে উঠলাম,

-প্লিজ ভাইয়া।আমি তো আপনার কাছে কোনদিন কিছু চাই নি।(মেঘা)

ভাইয়া আমার কথা শুনে আমার থেকে দূরে সরে দাঁড়াল।গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-ওকে করব।কিন্তু একটা শর্ত আছে।(ত্বকি)

ভাইয়ার শর্তের কথা না শুনে আমি রাজি হয়ে গেলাম। আস্তে করে বলে উঠলাম,

-আপনার সব শর্তে আমি রাজি আছি।(মেঘা)

-সত্যি বলছিস তো?(ত্বকি)

-হুম।(মেঘা)

ভাইয়াকে কিছু বলতে না দিয়ে আমি ভাইয়ার জন্য এক সেট কাপড় বের করে দিলাম।মাঝে মাঝে ভাইয়া আমাদের বাসায় থাকতেন তাই আগে থেকেই তার কাপড় ছিল।

ভাইয়া হাতে কাপড় দিলাম।সে কাপড় নিয়ে ঢুলতে ঢুলতে বাতরুমে ঢুকে পড়লেন।বোধহয় তার হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে।
,,
ভাইয়া বাতরুমে যাওয়া পরে আমি বিছানা গুছিয়ে ছোফায় গিয়ে বসলাম।হঠাৎ ভাইয়ার ফোন বেজে উঠলো।সে এখনো চেন্জ করে বের হয় নি।তাই বাধ্য হয়েও কল রিসিভ করলাম।
ফোন রিসিভ করতেই আম্মুর কন্ঠ পেলাম।আম্মু অস্থির হয়ে বলতে লাগলেন,

-বাবা, তুই কোথায়?ফোন ধরছিস না কেন?(ত্বকির মা)

আমি আম্মুর কথার জবাবে বলে উঠলাম,

-আম্মু, ভাইয়া আমাদের বাসায়।(মেঘা)

মেঘার কথা শুনে ত্বকির মার ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো।তিনি নিশ্চিত হলেন।মনে মনে অনেক খুশি হলো।হেসে দিয়ে মেঘাকে বলে উঠলো,

-ত্বকি তোর কাছে গিয়েছে?(ত্বকির মা)

-হুম, আম্মু।(মেঘা)

-কখন গিয়েছে?(ত্বকির মা)

-এই মাএ।(মেঘা)

ত্বকি মা অনুরোধ করে মেঘাকে বলে উঠলেন,

-মেঘা, শোন ত্বকি মনে হয় কিছু খায় নি।ওকে কিছু খাইয়ে দিস।আর রাতে তোর কাছে রেখে দিবি।বের হতে দিবি না।ঠিক আছে।(ত্বকির মা)

আম্মুর কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম সে অনেক চিন্তিত। তাই ভাইয়ার জ্বরের কথা আম্মুকে জানালাম না।

-ঠিক আছে আম্মু।তুমি চিন্তা করো না।আমি ভাইয়ার খেয়াল রাখব।(মেঘা)

-আমার সোনা মা।আচ্ছা মা রাখি, তুই ত্বকিকে খেতে দে।(ত্বকির মা)

-হুম, বাই ভালো থেকো।(মেঘা)

আম্মুর সাথে কথা বলা শেষ করে রান্না ঘরে চলে এলাম।বিকেলে আম্মুর অনেক মাথা ব্যাথা করছে তাই আর তাকে বললাম না যে ভাইয়া এসেছে।

ভাইয়ার কথা ভাইয়ার জন্য খাবার গরম করলাম। তারপর সুন্দর করে সার্ভ করে রুমে নিয়ে এলাম।
,,
ভাইয়া বাতরুম থেকে বেরিয়ে বিছানায় চোখ বুজে এলোমেলো হয়ে শুয়ে আছে।চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ। ভালো করে লক্ষ্য করতেই আমি অবাক হয়ে গেলাম। এত পরিপাটি ভাইয়া সে কিনা শার্ট উলটো করে পড়েছে।
,,
আমি খাবার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।ভাইয়াকে এক দৃষ্টিতে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।তাকে দেখে অনেক খারাপ লাগছে।কেন সে বৃষ্টিতে ভিজতে গেল।না ভিজলে কি হতো না।জ্বর আসলে তো তারই কষ্ট হবে।
,,
কিছুক্ষণ পর হাতে থাকা খাবার নিয়ে ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম।টেবিলে খাবারের প্লেট রেখে আস্তে করে ভাইয়াকে ডাক দিলাম,

-ভাইয়া,,(মেঘা)

আমার কন্ঠ পেয়ে ভাইয়া নড়েচড়ে উঠলো।কিন্তু চোখ খুলল না।অনেক জ্বর হওয়ার কারনে সে চোখ খুলতে পারছে না।আমি তার জ্বর পরিমাণ করতে, তার কপালের দিকে হাত এগিয়ে দিলাম।আমার হাত অতিরিক্ত হাড়ে কেঁপে চলছে।
কপালে হাত দিতেই, ভাইয়া আমার হাত খপ করে ধরে ফেললেন।আমি ভয়ে পেয়ে গেলাম।ভাইয়া আমার হাত ধরে আস্তে করে উঠে বসলেন।আমার দিকে গম্ভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে উঠলেন,

-আমার কপালে হাত দিয়েছিস কেন?আমাকে বিরক্ত করতে তোর ভালো লাগে?(ত্বকি)

ভাইয়া এই জ্বরের মধ্যেও আমাকে বকা দিতে ভুলেন নি।আমি তার দিকে না তাকিয়ে তুতলে তুতলে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া, আপনি রাতের খাবার খেয়েছেন?(মেঘা)

ভাইয়ার আমার কথায় অসহায় কন্ঠে বলে উঠলো,

-না।সারাদিনে কিছু খাই নি।(ত্বকি)

ভাইয়ার কথায় নিজের অজান্তেই খারাপ লাগতে শুরু করল।আমি ভাইয়ার সামনে খাবারের প্লেট এগিয়ে বলে উঠলাম,

-খেয়ে নিন।(মেঘা)

ভাইয়া প্লেটের দিকে একপল তাকিয়ে গাল ফুলিয়ে বলে উঠলো,

-না। আমি খাব না।(ত্বকি)

ভাইয়ার করার শুনে চুপ করে রইলাম।প্রায় পাঁচ মিনিট পরে ভাইয়া বাচ্চাদের মতো বলে উঠলেন,

-বউ, আমাকে খাইয়ে দে।আমি তোর হাতে খাব।(ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার কথা শুনে আমার চোখ আপনাআপনি বড়ো হয়ে গেল।আবার তার মুখ থেকে বউ ডাকটা শুনে আমি শিউরে উঠলাম।লোকটা কি বউ বউ করে আমাকে মারার ধান্দায় আছে।
ভাইয়া আমাকে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়ায়ে থাকতে দেখে আবার বলে উঠলেন,

-খাইয়ে না দিলে আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলব না।(ত্বকি)

ভাইয়া পাগলামো আমি মেনে নিতে পারছি না।যে মানুষটা সারাদিন আমার সাথে রাগ করে থাকে।ধমক দেওয়া ছাড়া একটা কথাও বলে না।তাই এত পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছি না।
,,
আমি বাধ্য হয়ে খাবারের প্লেট হাতে নিলাম।হাত দিয়ে খাবার মাখতে লাগলাম।নিজেকে কেমন যেন পাগল পাগল লাগছে।খাবার তুলে ভাইয়ার মুখের সামনে ধরতেই ভাইয়া বাচ্চাদের মতো খেতে লাগলেন।
আমি তো অবাকের শেষের পর্যায়ে।ভাইয়াকে যে কোনদিন আমি খাইয়ে দিব তা কখনো কল্পনাও করি নি।
ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে রয়েছেন।খাওয়া শেষ করেই ভাইয়া চোখ বন্ধ করে বিছানায় শুয়ে পড়লেন।

আমি প্লেট রান্না ঘরে যাওয়া জন্য পা বাড়াতে হাতে টান অনুভব করলাম।ভাইয়া বাচ্চাদের মতো টেনে টেনে বলতে লাগলেন,

-বউ,আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস?আমাকে আ,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :১১
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
আমি প্লেট রাখতে রান্না ঘরে যাওয়ার জন্যে পা বাড়াতেই, হাতে টান অনুভব করলাম।ভাইয়া বাচ্চাদের মতো টেনে টেনে বলতে লাগলেন,

-বউ আমাকে ছেড়ে কোথায় যাচ্ছিস।আমাকে আ,,

কথাগুলো স্পষ্ট শুনতে না পেয়ে পিছন ফিরে তাকালাম।সে কথা শেষ না করেই ঘুমের ঘোরে তলিয়ে গিয়েছে।ভাইয়ার ঘুমন্ত মুখের দিকে এক পলক তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম।তার হাতের বন্ধন থেকে আস্তে করে আমার হাতটা ছাড়ালাম।আমি আর দেরি না করলাম না খাবারের প্লেট রান্না ঘরে রেখে আম্মুর রুমে চলে এলাম।আম্মু লাইট বন্ধ করে ঘুমিয়ে পড়েছে।আমি বিছানার এক পাশে গিয়ে চুপটি করে শুয়ে পড়লাম।
,,
বৃষ্টি থেমে গিয়েছে।চারপাশে নিস্তদ্ধ পরিবেশ।আমার চোখে ঘুম নেই।ভাইয়ার কথা চিন্তা হচ্ছে।লোকটার প্রতিটি কথায় আমার শরীর কম্পনিত করে তোলে।নিজেকে কেমন হারিয়ে ফেলি।
জোর করে চোখ বন্ধ করে রেখেছি।কিন্তু ঘুম আসছেই না।নিজের প্রতি প্রচুর বিরক্ত হচ্ছি।মনে হচ্ছে আমি বড়ো কোন অপরাধ করে ফেলেছি।আমার উচিত ছিল ভাইয়ার খেয়াল রাখা।আমি তা না করে আম্মুর কাছে ঘুমতে চলে এলাম।আমি একদম ঠিক করি নি।
,,
ভাইয়ার চিন্তায় সারা রাত চোখের পাতা এক করতে পারি নি।ফজরের আযান কানে যেতেই আর শুয়ে থাকতে পারলাম না।বিছানা থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নামাজ পড়ে নিলাম।
,,
নামাজ শেষে ভাইয়াকে দেখতে রুমে এলাম।সে এলোমেলো হয়ে শুয়ে।মুখে তার গম্ভীর ভাব।খুব অভিমান হচ্ছে তার উপর।তার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে টেবিল থেকে বই খাতা নিয়ে আম্মুর রুমে চলে এলাম।
,,
সকাল বেলা মোবাইল ফোনের বিরক্তিকর আওয়াজ কানে যেতেই ত্বকির ঘুম ভেঙে গেল।আস্তে করে শুয়া থেকে উঠে বসল।মাথাটা প্রচন্ড ভারী ভারী লাগছে তার।চারপাশে ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করতে মনে হলো সে নিজের ঘরে নেই।মিনিট পাঁচেক পর ত্বকির রাতের কথা মনে পড়ে গেল।সে হসপিটাল শেষ করে মেঘার কাছে এসেছিল।কিন্তু মেঘা তো ঘরে নেই।কোথায় গেল মেয়েটা?
ত্বকি মেঘার কথা ভাবতে ভাবতে বিছানা থেকে উঠে ওয়াশরুমে গেল।ওয়াশরুমের আয়নাতে নিজের পরিস্থিতি দেখে অবাক হয়ে উঠলো সে।উল্টো করে শার্ট পড়া দেখে নিজের প্রতি রাগ হচ্ছে তার।শার্ট ঠিক করে পড়ে ফ্রেশ হয়ে মেঘাকে খোঁজার উদ্দেশ্য বের হলো।
,,
সকালের নাস্তা করে একা একা কোচিং এ চলে এসেছি।ভাইয়াকে ডাকি নি।ক্লাসে শত চেষ্টা করূও মনোযোগ দিতে পারছি না।কারন নিজেকে কেমন যেন অসহায় লাগছে।ভাইয়ার উপর অভিমান করে একা একা আসা একদমই ঠিক হয় নি।
,,
সারা বাড়িতে মেঘাকে খুঁজে পেল না ত্বকি।বিরক্ত নিয়ে রান্না চলে এলো।মেঘার মা রান্না করছে।কিন্তু আশেপাশে কোথাও মেঘা নেই।মেঘাকে কোথাও দেখতে না পেয়ে বলে উঠলো,

-ফুপি, (ত্বকি)

মেঘার মা ত্বকির কন্ঠে পেয়ে পিছন ফিরে ত্বকির দিকে তাকিয়ে এক গাল হেসে দিয়ে বলে উঠলেন,

-উঠে গিয়েছিস বাবা, তুই যে রাতে এখানে ছিলি আমি জানতাম না।কোচিং এ যাওয়ার আগে মেঘা বলল, যে তুই রাতে এখানে এসেছিস।(মেঘার মা)

-তারমানে মেঘা বাসায় নেই।কোচিং এ চলে গিয়েছে?(ত্বকি)

-হ্যাঁ রে।(মেঘার মা)

মেঘা যে তাকে না বলে, একা একা চলে গিয়েছে বিষয়টা ভেবেই রেগে গেল সে।কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রেখে রাগ কন্টল করার চেষ্টা করল।
,,
কোচিং শেষ করে মাএ বাইরে বের হলাম।আজকে হ্রদ স্যারের তাকানের ধরন একদম ভালো লাগে নি।
বাইরে দাঁড়িয়ে আছি গাড়ির অপেক্ষা করছি।বুক ভরা আশা নিয়ে বের হয়েছিলাম,ভেবেছিলাম ভাইয়া আমাকে নিতে আসবে।কিন্তু না সে আসে নি।তার উপর অভিমানটি আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেল।
,,
গাড়ি না পেয়ে হাঁটতে শুরু করলাম।হঠাৎ হ্রদ স্যারের আওয়াজ পেয়ে ঠাই দাঁড়িয়ে পড়লাম।ভিতরে এক ধরনের ভয় হানা দিল।স্যার আমার কাছে এসে বলে উঠলো,

-মেঘা,আমি তোমাকে ভালবাসি।তোমাকে বিয়ে করতে চাই।তুমি রাজি তো?(ত্বকি)

স্যারের কথা শুনে আমার অস্থিরতা শুরু হয়ে গেল।হাটতে শক্তি পাচ্ছি না।নিজেকে শক্ত করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলে উঠলাম,

-স্যার, আমি বিবাহিত।তাই এই ধরনের আজেবাজে কথা আমাকে বলবেন না।(মেঘা)

-মিথ্যা বলছো কেন?(হ্রদ)

-সত্যি বলছি।(মেঘা)

-তা শুনি তোমার স্বামীর নাম কি?(হ্রদ)

আমি চোখ বন্ধ করে বলে উঠলাম,

-ত্বকি ভাইয়া।(মেঘা)

হ্রদ স্যার আমার কথা শুনে কাছে চলে এসে চিৎকার করে বলে উঠলেন,

-মানি না কোন বিয়ে।তুমি শুধু আমার।দরকার পড়লে তোমার স্বামীকে সরিয়ে ফেলব।দেখে নিও তুমি আমারই থাকবে।(হ্রদ)

আমি কান্না করে দিলাম।স্যারের কোন কথা না শুনে, এক দৌড়ে রিক্সায় এসে বসলাম।

,,
বাড়িতে ঢুকেই আম্মুর সাথে কথা না বলে রুমে চলে এলাম।ওয়াশরুমে গিয়ে শাওয়ার ছেড়ে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম।
,,
ত্বকি ওপারেশন থিয়েটার থেকে বেরিয়ে পরিস্কার হয়ে মেঘার মাকে কল করল।কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না।ত্বকির টেনশন যেনো আরো বেড়ে গেল।মেঘার জন্য খুব চিন্তা হচ্ছে তার।মেঘাকে কোচিং থেকে আনতে যাওয়ার জন্য, যেতে চাইলেও ইমারজেন্সি সার্জারি থাকাতে যাওয়া হয়ে উঠে নি।
,,
দুপুরে কিছু চিন্তায় কিছু খেতে পারি নি।ভাইয়া এখানো আসে নি।ভিতর থেকে শুধু কান্না পাচ্ছে।আজ হয়তো বাবা বেঁচে থাকলে এমন দিন দেখতে হতো না।ত্বকি ভাইয়াকেও বিয়ে করতে হতো না।
,,

সন্ধ্যা হয়ে গিয়েছে।ভাইয়া এখনো পর্যন্ত একবারও আমার খোঁজ নেন নি।ভালো লাগছে না।মন খারাপ তাই রুম থেকে বেরিয়ে সারা বাড়ি ঘুরতে লাগলাম।চাচির রুমের সামনে যেতেই চাচির কথা মনে পড়ে গেল।প্রায় তিনমাস হলো চাচিকে দেখি না।চাচি প্রেগনেন্ট তাই বাবার তার বাড়িতে গিয়েছ।চাচু বিদেশে থাকে।আর আমার বুড়ো দাদিটাও কিছুদিন হলো গ্রামের বাড়িতে গিয়েছেন।সবার কথা মনে করে কাঁদতে লাগলাম।
,,
আমার মন খারাপ বুঝতে পেরে আম্মু আমার সাথে কোন কথা বলে নি।নামাজ পড়ে রুমে এসে বই খুলে পড়েতে বসলাম।
হঠাৎ কোথায় থেকে যেন তিথি আপু এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলো,

-ভাবি, কেমন আছিস?তোকে না অনেক মিস করছি রে।(তিথি)

-ভালো আপু।তুমি কেমন আছো?(মেঘা)

-ভালো।তোর বলে মন খারাপ।তাই চলে এলাম।অবশ্য ভাইয়াই আমাদের নিয়ে এসেছে।(তিথি)

তারমানে আপুর সাথে ভাইয়াও এসেছে।

-কিরে তোর চোখ মুখ শুকিয়ে গিয়েছে কেন?(তিথি)

-এমনেই।পরীক্ষার চাপ তো তাই।(মেঘা)

আপুর সাথে প্রায় এক ঘন্টা কথা বললাম।ভিতরটা অনেক হাল্কা হলো।

আমাদের কথা বলার মাঝখানে ভাইয়া রুমে চলে এলো।ভাইয়াকে দেখে মনটা আবার খারপ হয়ে।আজকে যদি সে আমার সাথে থাকতো তাহলে এত বড়ো বিপদে পড়তে হতো না আমাকে।

ভাইয়াকে দেখে আপু রুম থেকে বেরিয়ে গেল।আমিও বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়ার জন্য পা পড়লাম।দরজার সামনে আসতেই ত্বকি ভাইয়া গম্ভীর কন্ঠে শুনে দাড়িয়ে পড়লাম।

-মেঘা, (ত্বকি)

-নিশ্চুপ(মেঘা)

ভাইয়ার আমার পাশে এসে বলে উঠলো,

-কোথায় পালিয়ে যাচ্ছিস?(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-আজকে, আমাকে না বলে কোচিং গিয়েছেস কেন?(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

আমার নিরবতা ভাইয়ার একদম পছন্দ হলো না।তাই সে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-স্টুপিড, কথা বলছিস না কেন?(ত্বকি)

ভাইয়ার ধমক শুনে আমি ডুকরে কেঁদে উঠলাম।
,,
মেঘাকে কাঁদতে দেখে ত্বকির বুকের ভেতরে ব্যথা অনুভব করতে লাগল।সে মেঘার চোখের পানি সহ্য করতে পারল না।মেঘার কাছে গিয়ে নরম শুরে বলে উঠলো,

-কি হয়েছে তোর।কাঁদছিস কেন?আমি কি,,
(চলবে)

[আপনাদের অপেক্ষা করানোর জন্যে দুঃখিত।রাতে পারলে বোনাস পার্ট দেওয়ার চেষ্টা করব।]
(চলবে)

[কালকে আমার গনিত পরীক্ষা।তাই আজকে চেয়েও বড়ো করে লিখতে পারলাম না।দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here