তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ১২+১৩

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:১২
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
-কি হয়েছে তোর? আমি কি তোকে কিছু বলেছি? (ত্বকি)

ভাইয়ার নরম কন্ঠে আমার হৃদয়ের বেদনা আরো বাড়িয়ে তুলল।আমি দ্বিগুন বেগে,দুই হাত দিয়ে মুখে চেপে ধরে কাঁদতে লাগলাম।

ত্বকি কিছুক্ষণ নিরব থেকে মেঘার কান্না দেখতে লাগলো।মেয়েটা কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে।
একপর্যায়ে ত্বকি আর সহ্য করতে পারল না।রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-কী হয়েছে বলবি নাকি থাপ্পড় খাবি?(ত্বকি)

ভাইয়ার রাগ দেখে আমি দৌড়ে ওয়াশরুমে ঢুকে পড়লাম।ওয়াশরুমের দরজা বন্ধ করে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম।।
,,
মেঘার হঠাৎ করে ওয়াশরুমের ঢোকাতে ত্বকি ভয় গেল।আসলেই কি সে মেঘাকে কষ্ট দিয়ে ফেলেছে?হয়তো ভিন্ন কোনো কারনও থাকতে পারে।নানারকম চিন্তা মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে তার।
,,
ক্লান্ত শরীর নিয়ে ওয়াশরুমের দরজার দাড়াল সে।আতঙ্ক ভরা কন্ঠে দরজা ধাক্কাতে ধাক্কাতে বলে উঠলো,

-মেঘা, দরজা খুল।(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

-অপেন দ্যা ডোর, প্লিজ।(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

মেঘার নিরবতা ত্বকি মেনে নিতে পারল না।কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলো,

-দরজা খুলবি?নাকি ভেঙে ফেলব।(ত্বকি)

বলেই ত্বকি দরজা ধাক্কাতে লাগল।

ভাইয়া অনেক জোরে জোরে দরজা ধাক্কাতে লাগলো।মনে হলো দরজা ভেঙে যাবে।তাই একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে দরজা খুলে দিলাম।ভাইয়ার সামনে দাঁড়িয়ে মাথা নিচু করে কাঁদতে লাগলাম।
,,
ত্বকি মেঘার কাছে এসে চোখে পানি মুছে দিতে দিতে বলে উঠলো,

-কী হয়েছে তোমার?এভাবে কাঁদছ কেন?আমি কি তোমাকে কষ্ট দিয়েছি?(ত্বকি)

ভাইয়ার মুখে জীবনের প্রথম তুমি শব্দটা শুনে আমি অবাক হয়ে উঠলাম।মাথাটা কেমন যেন ঘুরতে লাগলো।

ত্বকি আবারো নরম শুরে বলল,

-বলো না?(ত্বকি)

আমার মনের মধ্যে শীতল হাওয়া বয়ে গেল।মন চাইলো তাকে সব বলে দেই।তাই নাক টেনে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া আমাকে না,, (মেঘা)

ত্বকি ভয় পেয়ে বলে বলে উঠলো,

-হুম, বলো। (ত্বকি)

-আজকে আমাকে হৃদ স্যার আজেবাজে কথা বলেছে।(মেঘা)

নাক টেনে টেনে ভাইয়াকে আজকে ঘটনা সব খুলে বললাম।
,,
আমার সম্পন্ন কথা শুনে ভাইয়ার চোখ মুখ লাল হয়ে উঠেলো।অতিরিক্ত রাগে তার সারা শরীর কাঁপতে লাগলো।দাঁতে দাঁত চেপে আমাকে বলতে লাগল,

-কালকে থেকে তোর কোচিং এ যাওয়া বন্ধ।আর যাবি না।সো, কান্না বাদ দে।(ত্বকি)

আমি কোন কথা না বলে চুপ করে রইলাম।

-চোখ মুছ।তোর চোখ থেকে যদি আর এক ফোঁটা পানি পড়ে, তাহলে তোর খবর আছে।(ত্বকি)

আমি শত করেও কান্না থামতে পারলাম না।
,,
ত্বকি মেঘার পরিস্থিতি বুঝতে পেরে কিছু বললো না।নিজের প্রতি বিরক্ত সে।আজকে যদি ত্বকি মেঘার সাথে যেত, তাহলে এত বড়ো বিপদে পড়তে হতো না মেঘাকে।বাচ্চা মেয়েটার মনে নিশ্চই আঘাত লেগেছে।এর প্রভাব মেঘার পড়া লেখাও পড়েত পারে।
ত্বকি মেঘার মন ভালো করতে, পকেট থেকে তার ফোন বের করে দিয়ে বলে উঠলো,

-ধর, গেম খেল।(মেঘা)

ভাইয়ার ফোন হাতে নিলাম না।সে যে তার ফোন আমাকে দিচ্ছে তা আমি মেনে নিতে পারছি না।

-আমি একটু বাইরে যাচ্ছি।কান্নাকাটি বাদ দিয়ে রেস্ট নে।আমি এলে পড়েতে বসবি।(ত্বকি)

কথাগুলো বলেই ভাইয়া রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,,
ভাইয়ার ফোনটা হাতে নিতেই মনটা খুশিতে ভরে উঠলো।জীবনে কইত না ইচ্ছে ছিল, ভাইয়ার ফোন চালাব।আহ্, কি মজা ভাইয়া আমাকে তার ফোন দিয়েছে।
ফোন হাতে নিয়ে ছোফায় বসে পড়লাম।হাতটা কাঁপছে।গেম খেলার জন্য ফোনটা পেলেও আমি গেম না খেললাম না।প্রথমেই গ্যালারিতে ঢুকলাম।কিন্তু গ্যালারি লক করা ছিল তাই কিছু দেখতে পারলাম না।মনটা খারাপ হয়ে গেল।
হঠাৎ রুমে তিথি আপু প্রবেশ করল।আমার পাশে বসে বলতে লাগল,

-হাই হাই, ভাইয়া ফোন তোর হাতে কেন?(তিথি)

-সে আমাকে দিয়েছে।(মেঘা)

-তাই? (তিথি)

-হুম।(মেঘা)

-ওই, ভাইয়া কোথায় গিয়েছে রে? (তিথি)

-আমি জানি না।আমাকে বলে নি।কেন কি হয়েছে আপু?(মেঘা)

-না কিছু হয় নি।যাওয়া আগে আমাকে তোর রুমে পাঠিয়ে দিয়েছে।(তিথি)

-ও।আচ্ছা আপু তোমারা আজকে থাকবে?(মেঘা)

আপু আমার কথা শুনে মন খারাপ করে বলে উঠলো,

-যানিনা রে।তোর স্বামী জানে।(তিথি)

-প্লিজ, আপু আজকে থেকে যাও।(মেঘা)

-আচ্ছা আমি ভাইয়াকে রিকুয়েস্ট করব থাকার জন্যে।মনে হয় থাকতে দেবে না।(তিথি)

ফোনে আর গেম খেলা হলো না।আপুর সাথে গল্প করতে করতে রাতে খাবারের সময় হয়ে গেলো।আম্মু ডাকে আমি আর আপু খাবার রুমে গিয়ে খেতে বসে পড়লাম।
,,
-মেঘা, ত্বকি কোথায়?(মেঘার মা)

-যানি না আম্মু।(মেঘা)

– ত্বকিকে কল দে তো। (মেঘার মা)

-আম্মু ভাইয়া ফোন রেখে গিয়েছে।(মেঘা)

-আচ্ছা।তোরা খাওয়া শুরু কর।(ত্বকির মা)

তিথি আপু খাওয়া শুরু করল কিন্তু আমি খেলাম না।

-মেঘা, খাচ্ছিস না কেন? (তিথি)

-আপু পরে খাব।ভাইয়া আসুক।(মেঘা)

আপু আমার কথা শুনে খাওয়া বাদ দিয়ে চোখ বড়ো বড়ো করে আমার দিকে তাকাল।আপুর তাকানোর ধরন দেখে আমি প্রচুর লজ্জা পেলাম।কিছু না বলে মাথা নিচু করে রইলাম।
হঠাৎ আপু আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো,

-মেঘা, তোর গাল লাল হয়ে উঠেছে কেন?আমি তো তোকে লজ্জা পাবার মতো কিছু বলি নি।(তিথি)

-নিশ্চুপ(মেঘা)

-তাহলে, লজ্জা পাচ্ছিস কেন?(তিথি)

আপুর কথার আমার কাছে কোন উওর নেই।আপুর কথা মাঝে আম্মু বলে উঠলো,

-মেঘা,প্লেট দে আমি তোকে খাইয়ে দিচ্ছি। (মেঘার মা)

বলেই আম্মু আমার পাশের চেয়ারে বসে খাবার মাখতে শুরু করল।
,,
আম্মু যখন মুখের সামনে খাবার এগিয়ে দিল তখন আর আমি না খেয়ে থাকতে পারলাম না।ভাইয়াকে রেখেই খাওয়া শেষ করে ফেললাম।
,,
তিথি আপু আর আমি আমার রুমে একসাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করছি।একটু আগে ভাইয়া চলে এসেছে।সে অনুমতি দিয়েছে তাই আজকে তিথি আপু আমাদের বাসায় থাকবে।সে বাইরে থেকে এসে কিছু খায় নি।আম্মুকে বলেছে, বাইরে থেকে খেয়ে এসেছে।আমাকে বলেছে যাতে রেডি হয়ে থাকি।সকালে ফজরের আযানের পরেই ওই বাড়িতে নিয়ে যাবে।
,,
সকাল আইটার দিকে আমারা বাড়িতে চলে এসেছি।আমার আম্মুও সাথে এসেছে।মামি তো আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কেঁদেই দিয়েছিল।তিথি আপু বাসায় আসে নি,ভার্সিটিতে চলে গিয়েছে।
,,
ভাইয়ার রুমে এসে সুন্দর করে ঘর গোছায়ে পড়তে বসলাম।এত পর রুমটা দেখে আনন্দ লাগছে।টেবিলে বসে পড়তে লাগলাম।ভাইয়া ওয়াশরুমের গিয়েছে গোসল করতে।
,,
মনোযোগ দিয়ে পড়ছিলাম।ভাইয়া ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়াল।আমি আর পড়ায় মনোযোগ দিতে পড়লাম না।আড় চোখে তাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলাম।আর সেদিন রাতের ভাইয়ার করা পাগলামি গুলো মনে করতে লাগলাম।মনের ভিতর ভালো লাগার ভিন্ন এক অস্থিরতা কাজ করছে। হঠাৎ করে ভাইয়া আমার পাশে এসে বসলো।হাত থেকে বই নিয়ে প্রশ্ন করলেন,

-পৃথিবীর ব্যাসাধ কত?(ত্বকি)

ভাইয়া আচমকা প্রশ্ন করায় আমি ঘাবড়ে গেলাম।আমার চিন্তায় ব্যাঘাত ঘটলো।মনে করার চেষ্টা করেও, মনে করতে পারলাম না।
,,
প্রায় পাঁচ মিনিট হয়ে গিয়েছে মেঘা এখানো প্রশ্নের উত্তর দিতে পারি নি।ত্বকি নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে পারল না।পাশে থেকে স্কেল নিয়ে রাগী কন্ঠে বলে উঠলো,

-হাত পাত।(ত্বকি)

ভাইয়ার হাতে স্কেল দেখে আমি কাঁপতে শুরু করলাম।চোখ বন্ধ করে হাত পেতে দিলাম।

এদিকে,

তিথি ক্লাসে বসে বান্ধবীদের সাথে গল্প করছে।আজকে নাকি তাদের ডিপার্টমেন্টে নতুন শিক্ষক আসবে।সবাই আগ্রহ নিয়ে টিচারের অপেক্ষা করছে।তিথি ফাস্ট ইয়ারের স্টুডেন্ট তাই সে কোন টিচারকে চিনে না।
,,
ক্লাসে টিচার ঢুকতেই সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল।টিচাররের কন্ঠে স্বর পেয়ে তিথির ভিতরে ধক করে উঠলো।সেই চেনা পরিচিত কন্ঠে পেয়ে নত দৃষ্টি সরিয়ে সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকালো সে।
দীর্ঘ পাঁচ বছর পর নিজের প্রথম আবাকের মানুষটিকে দেখে অস্থির হয়ে উঠলো সে।লোকটার বয়স বেড়ে গিয়েছে।মাথার চুলগুলো হাল্কা সাদা বর্ন ধারন করেছে।
এরপরেও তিথির কাছে মানুষটিকে সেই আগের প্রেমে পড়ে যাওয়া যুবকের মতোই লাগছে।তিথি চোখে সেই ব্যথাময় অতীত ভেসে উঠলো।বুকের মাঝে ব্যথা অনুভব হতে লাগলো।
(চলবে)
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব :১৩
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
আমি চোখ বন্ধ করে ভাইয়ার দিকে হাত এগিয়ে। হাত পা থরথর করে কাঁপছে।
ভয় পাচ্ছি ঠিকি কিন্তু চোখ বন্ধ করতেই ভেসে উঠছে রাতের কথা।মনে পড়ছে তার মুখের ‘বউ’ ডাকটা।সবকিছু যেন ছবির মতো ভেসে উঠছে।ভাইয়া কোনদিনও আমাকে মারতে পারবে না।আত্মবিশ্বাস নিয়ে চোখ বুজে আছি।

কিন্তু ভাইয়া আমাকে ভূল প্রমাণ করে দিল।আমার ডান হাতে স্কেল দিয়ে জোরে করে বারি মারলেন। আমি দাঁত চেপে ব্যথা সহ্য করতে লাগলাম।
,,
মেঘাকে বারি দিয়ে ত্বকি চেয়ার থেকে উঠে বসল।রাগে তার সারা শরীর কাঁপছে।মাথার চুল টেনে রাগ কন্ট্রোল করার চেষ্টা করল।রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে ত্বকি রুম থেকে বেরিয়ে গেল।
,,
ভাইয়া বেরিয়ে যাওয়ার পরে আমি হাতের দিকে লক্ষ্য করলাম।আমার হাত লাল হয়ে গিয়েছে।পুরো হাতটা জ্বলা করছে।হাতটার দিকে তাকিয়ে নিরবে চোখের পানি ফেলতে লাগলাম।
——–

তিথি নিজের কৌশরের আবেকের মানুষটার দিকে কিছুক্ষণ পলকহীন নয়নে তাকিয়ে রইল।আবেক বললে ভুল হবে।লোকটার প্রতি তার আবেক ছিল না, ছিল প্রথম ভালোবাসা।
স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে চারপাশ।ফ্যানের হাওয়া গায়ে লাগছে না তার।ঠান্ডা পরিবেশ থাকা সত্ত্বেও তিথি ঘেমে একাকার হয়ে গিয়েছে।তার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গিয়েছে।মূহুর্তেই মাথা ঘুরে উঠলো তিথির।ক্লাসের সবার সামনে গা এলিয়ে পড়ে গেল সে।
,,
ক্লাসের সবার দৃষ্টি তিথির উপর গিয়ে পড়ল।তিথির প্রিয় মানুষ সাদের ক্ষেত্রের ব্যতিক্রম ঘটল না।তিথি পিছনে বসার জন্য এতক্ষণ চোখের পরে নি সাদের।ধীর পায়ে এগিয়ে গেল সে তিথির কাছে।
তিথির মায়াভরা মুখ দেখে চিনতে দেরি হলো না সাদের।পাঁচ বছর আগে মেয়েটি যেমন ছিল এখন তেমন নেই।চোখে মুখে যৌবনের সৌন্দর্য খেলা করছে।হাসিমাখা মুখটিতে আজ গম্ভীরতা ফুটে উঠেছে।
সাদ চিন্তিত হয়ে গেল।কি করবে সে বুঝতে পারল না।পিপাসিত নয়নে দেখতে লাগলো তিথি।বেহায়া চোখ দুটোর তৃষ্ণা যেন মিটতে চাইছে না।সাদ এক ধ্যানে তাকিয়ে রইল তিথির সৌন্দর্য ভরা মুখের উপর।
,,
তিথির বান্ধবী তিথির মুখে পানি ছিটে দিতে লাগল।চোখে মুখে পানির ছিটে পেয়ে পিটপিট করে নয়ন মেলা চাইল তিথি।সামনে তাকিয়ে সাদকে দেখে তার অস্থিরতা আরো বেড়ে গেল।নিজেকে শক্ত রেখে চোখ দুটো বন্ধ করে তার বান্ধবী উপমা বলে উঠলো,

-আমাকে বাসায় নিয়ে চল উপমা।আমি আর এখানে থাকতে পারছি নি।(তিথি)
,,
তিথির অবস্থা দেখে সাদ আড়াল হয়ে পড়ল।উপমা তিথিকে বাড়িতে নিয়ে এলো।

তিথি মানা করা সত্ত্বেও উপমা তিথির মাকে বলে দিল যে তিথি মাথা ঘুরে পড়ে গিয়েছিল।তিথির মা শুনে ইচ্ছে মতো বকা দিল তিথিকে।বকা দেওয়া শেষ করে কান্না করে দিলেন।কান্না করতে করতে মেঘাকে ডাকতে লাগলেন।

ভাইয়া চলে গিয়েছে এখনো ফিরে নি।আমি কাঁদাছিলাম আর পড়ছিলাম।হঠাৎ আম্মুর কন্ঠে পেয়ে আমি বই বন্ধ করে আম্মুর কাছে চলে এলাম।
ছোফার উপর তিথি আপুকে দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম।আজকে এত তাড়াতাড়ি আপু চলে এসেছে কেন।আপুর দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখলাম তার মুখটা কেমন যেন শুকিয়ে গিয়েছে।সারা মুখে ক্লান্ততা স্পষ্ট ফুটে উঠেছে।আমি আপুর পাশে গিয়ে বসলাম।পাশে থাকা মেয়েটির দিকে তাকালাম।মনে হয় আপুর সাথে পড়ে।মেয়েটার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমার দিকে গম্ভীর মুখ করে তাকিয়ে আছে।মেয়েটার সাথে কোন কথা বললাম না।
,,
আজকে সাদ ক্লাস না নিয়েই বাসায় চলে এসেছে।দীর্ঘ পাঁচ বছর পর তিথিকে দেখে কোন কাজে সে মনোযোগ দিতে পারছে।অতীত তার পিছু পড়ে রয়েছে।

ভার্সিটি থেকে এসে সাদ একটা রুমে বদ্ধ করে রেখেছে।ফ্লোরে হাটু ভেঙে বসে আছে সে। চোখ দুটো তার বন্ধ।ঘনঘন নিশ্বাস নিচ্ছে সে।তাকে দেখেই বোঝা যাচ্ছে খুব কষ্ট হচ্ছে তার।অতীতের স্মৃতি গুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছে।

পাঁচ বছর আগে তিথির গৃহ শিক্ষক ছিল সাদ।তখন তিথি সবে মাএ ক্লাসে নাইনে পড়ত।অন্তত চঞ্চল স্বভাবের মেয়ে ছিল তিথি।পড়াশোনাতে বেশ ভালোই ছিল।কিন্তু আবেগ মেয়েটাকে নষ্ট করে ফেলে।জীবনের প্রথম সে সাদের প্রেমে পড়েছিল। ইশারা ইঙ্গিতে সে সাদকে বোঝাতে চাইতো যে, সে সাদকে ভালোবাসে।সাদ ব্যপারটা বুঝতে পেরেও না বোঝার ভান করে থাকত।
সবকিছু ঠিকঠাক মতো চলছিল।সাদ সবসময় তিথিকে দূরে ঠেলে রাখত।কিন্তু তিথি নিজের আবেগের বশে হঠাৎ একদিন সাদকে প্রোপস করে বসে।
মনে মনে সাদ তিথিকে একটু হলেও পছন্দ করত।কিন্তু সাদ সবসময় ক্যারিয়ার নিয়ে সচেতনত ছিল।তখন সাদ অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ত। তার লক্ষ্য ছিল ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষকতা করা। সেদিন সাদ তিথির প্রোপস পেয়ে, নিজেকে কন্ট্রোল করে রাখতে পারে নি।বিচার দিয়েছিল তিথির বাবার কাছে।শুধু বিচার নয়, সাদ সেদিন তিথিকে অপমান করে, বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিল।
সেদিন ত্বকি তিথিকে ইচ্ছে মতো মেরেছিল।যার ফলে তিথি ত্বকির সাথে কথা বলা বন্ধ করে দে।ভাইয়া বোনের সম্পর্কে ফাঁটল ধরে।প্রায় এক বছর সে সাদের মায়াতে পড়ে থাকে।খাওয়া দাওয়া বন্ধ করে দেয়।তিথির এ অবস্থা দেখে ত্বকির মা স্টোক করে।মাকে কষ্ট থাকতে দেখে,একটা সময় সে নিজে থেকেই সাদকে ভুলে থাকলেও রাতের অন্ধকারে সাদ নামক যন্ত্রণা তাকে আক্রমণ করে।সে ইচ্ছে মতো কাঁদে সাদ নামক ব্যক্তিটার জন্য।আজও তিথি সাদ নামক রোগে আক্রান্ত।
,,
সাদ চোখ বন্ধ করে তিথির সেই পাগলমি চিন্তা করছে।মেয়েটা সে খুব কষ্ট দিয়ে ফেলেছে।হয়তো আজ সে তিথির অপরাধী।সেদিন যদি সে তিথিকে ভালো ভাবে বোঝালেও পারত।তিথির কথা ভেবেই ত্বকি বুকে তীব্র ব্যথা অনুভব হচ্ছে।সাদ তখন বুঝতে না পারলেও তিথির থেকে দূরে গেলে তার মূল্য বুঝতে পারে।সেও যে একটা সময় তিনি নামক রোগে আক্রান্ত হয়ে পড়ে।
,,
তিথির চিন্তায় মত্ত ছিল সাদ।হঠাৎ ঘরির দিকে তাকাতে সে দেখে বিকেল হয়ে গিয়েছে।সাদ আর দেরি না করে উঠে পড়ে।তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে বেরিয়ে পড়ে।
,,
বিকেল হয়ে গিয়েছে, আমি এখনো বই পড়ছি।ভাইয়া রাগ করে আর রুমে আসে নি।তিথি আপু আর তার ফ্রেন্ড উপমা আপু গাড়ি নিয়ে ঘুরতে গিয়েছে।যাতে তিথি আপুর মন শরীর মন মানসিকতা ভালো থাকে।

হঠাৎ ভাইয়া রুমে প্রবেশ করে।তাকে দেখে আমার মনটা খারপ হয়ে যায়।নিজে থেকেই চোখ হাতের উপর চলে আসে।হাতটা একদম ফেঁটে গিয়েছে।এখনো প্রচুর ব্যথা।ভাইয়া গম্ভীর মুখ নিয়ে আমার পাশে এসে বসল।কিছুক্ষণ নিরব থেকে আচমকা আমার ডান হাত টান দিয়ে তার হাতের মাঝে নেয়।আমি তো ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলি।ভাইয়া আমার হাত স্লাইড করতে করতে বলে উঠে,

-সরি।(ত্বকি)
,,
তিথি গাড়ি থেকে নেমে অরিনকে নিয়ে নদীর পাড়ে বসে আছে।চারপাশে ঠান্ডা বাতাস বয়ে যাচ্ছে।যা ফলে তার অবাধ্য চুল গুলো বাতাসের সাথে খেলা করছে।আহ্, কি মিষ্টি বাতাস একদম প্রেমে পড়ে যাবার মতো।প্রকৃতির মধু ময় সৌন্দর্য দেখে তিথি মুগ্ধ।তার মন চাইছে মাতাল হাওয়াতে দোলে দোলে নীল আকাশটাতে ছুঁয়ে আসতে।তিথি মন ভরে পলকহীন দৃষ্টিতে প্রকৃতির সৌন্দর্য উপভোগ করছে।উপমা অনেকেটা দূরে গিয়ে কারো সাথে কথা বলছে।
হঠাৎ তিথির কোলে একটি চার বছরের বাচ্চা মেয়ে এসে বসল।মেয়েটা দেখতে যেমন মিষ্টি ঠিক তেমনি মেয়েটির পাকা পাকা কথা।মুহূর্তে মেয়েটা তিথির সাথে মিশে গেল।বাচ্চাটার সাথে কথা বলে তিথির মনটা অনেক হাল্কা হয়ে গেল।হঠাৎ মেয়েটি ‘বাবা’ বলে ডেকে উঠলো।
তিথি মেয়েটির কন্ঠ অনুসরণ করে পিছনে তাকাল।নিজের প্রিয় মানুষটিকে দেখে তিথি থমকে গেল।বুকের ভেতরে বেদম প্রহর শুরু হয়ে গেল।
(চলবে)

[বিদ্যুৎ ছিল না তাই পোস্ট করতে দেরি হয়ে গিয়েছে।]
[এখন থেকে প্রতিদিন গল্প দিব। অনিয়ম হওয়ার জন্য দুঃখিত।]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here