তোমার নামের বৃষ্টি পর্ব ১৬+১৭

#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:১৬
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
আমি তিথি আপুর কোলে থেকে রুশাকে নিয়ে ভাইয়ার রুমে চলে এলাম। ঢুলতে ঢুলতে ভেতরে ঢুকে রুশাকে বিছানায় শুয়ে দিলাম। ভাইয়া আড় চোখে আমাকে দেখছেন। রুশাকে শুইয়ে দেওয়া পর হঠাৎ আমার সাথে বিপজ্জনক ঘটনা ঘটে গেল। রুশার নিচে আমার সম্পন্ন ওড়নায় পড়ে গেল। ভাইয়ার সামনে এমন খারাপ পরিস্থিতি পড়ব কখনো ভাবিনি। ভাইয়া আমার দিকে চোখ বড়ো বড়ো করে তাকালেন। আমি অস্তিত্বে পড়ে গেলাম। তাড়াতাড়ি করে রুশার নিচে থেকে ওড়না নিয়ে দৌড়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম।

প্রায় দশ মিনিট পরে মাথায় সুন্দর করে কাপড় দিয়ে বাতরুম থেকে বের হলাম। ভাইয়া ছোফায় বসে রয়েছেন। আমি ভাইয়ার দিকে তকাতে পারছি।প্রচুর লজ্জা লাগছে। দূর, কেন যে রুশাকে কোলে নিলাম। হঠাৎ ভাইয়া গম্ভীর গলায় বললো,

-তুই রুশার সাথে ঘুমো। আমি অন্য রুমে যাচ্ছি। আর হ্যাঁ, শোন একটু তাড়াতাড়ি বড়ো হ। স্টুপিড।(ত্বকি)

ভাইয়ার রাগ মাখা কথা শুনে আমার লজ্জা জানাল দিয়ে পালিয়ে গেল। কিন্তু কিছুই বুঝতে পারলাম না।

অন্যদিকে,

বিছানার উপর গুটিশুটি হয়ে বসে আছে তিথি। প্রচন্ড অস্থির লাগছে তার। সে ভাবতেই পারছে না, সাদ নামক মানুষটি এখন তার স্বামী। যার উপর শুধুমাত্র তার অধিকার। তিথির এতদিনের অপেক্ষার প্রহর শেষ হলো আজ। তার তো আজ খুশী হওয়ার কথা। কিন্তু না, তিথি খুশি হতে পারছে না। কষ্ট হচ্ছে তার, খুব অভিমান হচ্ছে সাদ নামক মানুটার উপর। চুপচাপ বিরক্ত নিয়ে বসে আছে সে। সাদ এখনো ঘরে প্রবেশ করে নি।

কিছুক্ষণ পর তিথিকে সালাম দিয়ে রুমে ঢুকলো সাদ। সাদের কন্ঠ শুনে তিথির বুকের মধ্যে ধক করে উঠলো। নরম শুরে সাদের সালামের উওর নিল সে। আর কোন কথায় বললো না।
কিছুটা সময় নিরব রইলো চারপাশ। নিরবতা কাটিয়ে আস্তে করে সাদ বলে উঠলো,

-ধন্যবাদ তোমাকে। (সাদ)

-নিশ্চুপ (তিথি)

-এতগুলো দিন তোমাকে কষ্ট দেওয়া জন্য, সরি।পারলে আমাকে মাফ করে দিও। (সাদ)

-নিশ্চুপ (তিথি)

তিথি বাক প্রতিবন্ধীর মতো চুপ করে রইল। সাদের কথার কোন জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করল না। সাদ আবার বলল,

-যাও ফ্রেশ হয়ে এসে, শুয়ে পড়ো। (সাদ) [লেখিকা:জাবিন মাছুরা]

সাদের কথা শুনে তিথি ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে এলো। সাদের দিকে না তাকিয়ে নরম শুরে বলে উঠলো,

-আপনি বিছানাতে শুয়ে পড়ুন। আমি ছোফায় থাকছি। (তিথি)

তিথির কথায় সাদ করুন শুরে বলে উঠলো,

-কেন? তুমি বিছানায় থাকবে না? (সাদ)[লেখিকা:জাবিন মাছুরা]

-না। (তিথি)

-ওকে। তোমার যদি আমার সাথে থাকতে প্রবলেম হয় তাহলে, তুমি বিছানায় থাকো। আমি বরং ছোফাতে,,, (সাদ)

সাদকে কথাগুলো শেষ করতে না দিয়ে, তিথি কর্কশ গলায় বলে উঠলো,

-আমার উপর বউ এর অধিকার দেখাতে আসবেন না প্লিজ। আজকে আম্মুর কথা রাখতে আপনার সাথে এক রুমে থাকতে বাধ্য হচ্ছি। আমি কিন্তু শুধু মাএ রুশার জন্য আপনাকে বিয়ে করেছি। তাই দয়া করে আমার সিদ্ধান্তটা আমাকে নিতে দিন। (তিথি)

তিথির প্রতিটা কথা যেন কাটার মতো বিঁধলো সাদের বুকে। খুব কষ্টে হচ্ছে তার। সাদ নিজেকে সামলে নরম গলায় বললো,

-ঠিক আছে। তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমার ইচ্ছের বিরুদ্ধে কিছুই করবো না। তোমার সব কথা রাখতে চেষ্টা করব। (সাদ)

কথাগুলো বলেই বিছানায় কাত হয়ে শুয়ে পড়ল সাদ। মনে মনে বলতে লাগলো,

-খুব তাড়াতাড়ি তোমার রাগ ভাগিয়ে ফেলব বউ। তোমাকে কোন অভিযোগ রাখতে দিব না। শুধু একটু সময় প্রয়োজন। আমি যে অনেক ভালোবাসি তোমাকে তিথি। আর কোনদিন তোমাকে কষ্ট দিব না। (সাদ)

সাদকে শুয়ে পড়তে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ছোফয় চুপ করে শুয়ে পড়ল তিথি। সে ভেবে রেখেছে খুব কষ্ট দিবে সাদকে। সাদের কাছে থেকেও কাছে আসবে না।
,,
পরের দিন সকালে সাদ তিথিকে নিয়ে তাদের বাড়িতে চলে এলো। তিথি রুশাকে নিয়ে তাদের বাড়িতে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু রুশা সাদকে ছাড়া থাকতে পারে না তাই তিথি থাকতে পারি নি। সাদের সাথে সাদের ফ্লাটে চলে এসেছে।
___________________

সময় চলমান। সবকিছু থামিয়ে রাখা গেলেও সময়কে থামিয়ে রাখা যায় না। মাঝখানে কেটে গিয়েছে অনেক দিন।
আমার এসএসসি পরীক্ষা শেষর দিকে। আর মাএ একটা পরীক্ষা বাকি আছে। এ কয়টা দিন, রাত দিন দিয়ে পড়তে হয়েছে আমাকে। ত্বকি ভাইয়া আমাকে একটু ফাকি দিতে দেয় নি। হসপিটালের কাজ ফেলে সারাদিন আমাকে সময় দিয়েছেন। আমাকে সময় দিয়েছে বললে ভুল হবে সে তো আমার পড়াকে সময় দিয়েছে। সব সময় চোখে চোখে রেখেছেন। প্রতিদিন আমাকে পরীক্ষা হল পর্যন্ত নিয়ে গিয়েছেন। যতক্ষণ পরীক্ষা শেষ না হয়েছে ততক্ষণ পর্যন্ত গাড়িতে অপেক্ষা করেছেন। এই কয়দিনে তার কেয়ার দেখে আমি মুগ্ধ। কিন্তু রাগ আগের মতোই আছে। সারাক্ষণ রেগে থাকেন। অনুভূতিহীন মানুষ একটা।
,,
গাড়িতে বসে আছি, পরীক্ষা দিতে যাচ্ছি। আজকেই শেষ পরীক্ষা। ভাইয়া মনোযোগ দিয়ে গাড়ি ড্রাইভিং করছেন। আমি বই হাতে নিয়ে পড়ছি। আজকে খুব ইচ্ছে করছে ফুচকা খাব। এতোদিন ভাইয়াকে ফুচকা খাওয়ার কথা বলার সাহস পায় নি। কিন্তু আজকে আমি খাবই। ফুচকা কথা ভেবেই মনটা খুশি হয়ে গেল। ইশ, কতদিন পরে খাব। ফুচকা খাওয়ার পর ভাইয়াকে বলব আইসক্রিম কিনে দিতে। চিন্তা করতে করতে পরীক্ষার হলের সামনে চলে এলাম। ভাইয়া আমাকে এগিয়ে দিলেন চলে গেলেন।

অন্যদিকে,

সময় পার হয়ে গিয়েছে ঠিকি কিন্তু এখনো তিথি আর সাদের সম্পর্কে আগের মতোই আছে। তিথির সাথে রুশার সম্পর্কটা আরো গভীর হয়ে গিয়েছে। এক মূহুর্তও তিথি রুশাকে চোখের আড়াল হতে দেয় না। সবসময় রুশাকে নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে। কিন্তু সাদের সাথে প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না। সবসময় সাদের কাছে থেকে দূরে দূরে থাকে। রাতের বেলা তিথি আর রুশা এক রুমে থাকে আর সাদ আলাদা রুমে থাকে।
,,
পরীক্ষা শেষ করে, হল থেকে বাইরে বের হলাম। এখন নিজকে স্বাধীন লাগছে। এ কয়দিন পড়তে পড়তে আমি তো পাগল হয়ে গিয়েছিলাম।[লেখিকা:জাবিন মাছুরা]

কিছুটা দূরে চোখ যেতেই দেখলাম ভাইয়া গাড়িতে বসে আছেন। আমিও চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো গাড়িতে গিয়ে বসলাম।

ভাইয়া কোন কথা না বলে চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছেন। মুখে তার গম্ভীর ভাব। হঠাৎ গম্ভীর মুখে বলে উঠলেন,

-পরীক্ষা কেমন হয়েছে? (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি আস্তে করে বলে উঠলাম,

-ভালো। (মেঘা)

আর কোন কথা বললেন না তিনি। কিছুক্ষণ পরে আমি বুক ভরা সাহস নিয়ে ভাইয়াকে বলে উঠলাম,

-ভাইয়া।(মেঘা)

-হুম, বল। (ত্বকি)

-ভাইয়া, আমি ফুচকা খাব। প্লিজ, এনে দিন। (মেঘা)

ভাইয়া আমার কথা শুনে ধমকের সাথে বলে উঠলো,

-এসব বাইরের জিনিস খাওয়ার কথা একদম বলবি না। আমি এই রাস্তার আজেবাজে খাবার এনে দিতে পারব না। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে খুব কান্না পেল খুব। তাও কিছু বললাম না। খুব অভিমান হলো তার উপর।
মনে মনে বললাম, আপনি আমাকে একটুও ভালোবাসে না। আপনার কাছে আমার পছন্দের মূল্য নেই। আপনি খুব পচা।
,,
ভাইয়া আমাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে চলে গিয়েছেন। মনে হলো হসপিটালে গিয়েছেন। আমি বাসায় গিয়ে আম্মুর সাথে দেখা করে রুমে এসে ফ্রেশ না হয়েই শুয়ে পড়লাম। খুব কান্না পাচ্ছে।

ইচ্ছে মতো কিছুক্ষণ কান্না করে মন হালকা করলাম। হঠাৎ বাইরে বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। আমি রুম থেকে বেরিয়ে দৌড়ে ছাদে চলে এলাম। মন ভরে বৃষ্টি বিলাস করতে লাগলাম।

বৃষ্টির মধ্যেই হসপিটাল থেকে বাসায় চলে এলো ত্বকি। রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিলো সে। রুমে কোথাও মেঘাকে দেখতে পেল না। তাই সারা বাড়ি মেঘাকে খুঁজতে লাগল। কোথাও না পেয়ে রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো। ত্বকির খুব রাগ হচ্ছে মেঘার উপর। মেয়েটা নিশ্চই বৃষ্টিতে ভিজছে।

অতিরিক্ত রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো ত্বকি। ভালো করে তাকিয়ে দেখল সত্যিই মেঘা ভিজছে। তাও বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে।
ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে রইল। সাদা ড্রেসটাতে মেয়েটাকে যেন একদম সাদা পরির মতো লাগছে। ড্রেসটা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ত্বকি যেন ঘোরের মধ্যে চলে,,,
#তোর_নামের_বৃষ্টি
#পর্ব:১৭
জাবিন মাছুরা (লেখিকা)
,,
অতিরিক্ত রাগ নিয়ে সাদে চলে এলো ত্বকি। ভালো করে তাকিয়ে দেখল সত্যিই মেঘা ভিজছে। তাও বাচ্চাদের মতো লাফিয়ে লাফিয়ে।
ত্বকি পলকহীন দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে রইলো। সাদা ড্রেসটাতে মেয়েটাকে যেন একদম সাদা পরির মতো লাগছে। ড্রেসটা একদম গায়ের সাথে লেপ্টে আছে। ত্বকি যেন ঘোরের মধ্যে চলে যেতে লাগল। গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো মেঘার দিকে।

হঠাৎ বজ্রপাতের আওয়াজে ত্বকির ঘোর অনেকটা কেটে গেল। সে নিজের প্রতি বিরক্ত নিয়ে, পরপর দুটো নিশ্বাস ফেললো। মেঘার দিকে তাকিয়ে দেখল, মেয়েটা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রয়েছে। ত্বকি ধীর পায়ে মেঘার কাছে এগিয়ে গেল। গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-মেঘা ,(ত্বকি)

ত্বকির আওয়াজ এখনো মেঘার কানে যায় নি। সে তার মতো চোখ বন্ধ করে বৃষ্টি বিলাস করছে। ত্বকি অনেকটা বিরক্ত হয়ে পড়ল। তার পরেও চুপ থেকে মেঘাকে পর্যবেক্ষণ করতে লাগল।

আবারও ত্বকির দৃষ্টি আটকে গেল মেঘার উপর। সে দ্বিতীয় বার মেঘা নামক ঘোরে ডুবে যাচ্ছে। ত্বকি বুকে হাত দিয়ে, মুগ্ধ দৃষ্টিতে মেঘার দিকে তাকিয়ে বির বির করে করে বলে উঠলো,

– তুই তো আমাকে নির্ঘাত পাগল করে ফেলবি। আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাব। আসলেই তুই একটা পিচ্চি। নিজের একটু খেয়াল রাখতে পারিস না। (ত্বকি)

সময় যেন থেমে গেছে ত্বকির কাছে। হঠাৎ করে ত্বকির চোখ গিয়ে পড়ল পাশের ছাদে। পাশের বাসার ছাদের উপর কয়েকটা ছেলে হা করে মেঘার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। রাগ যেন তার মাথায় চেপে বসল। ত্বকি আর কোন কথা না বলে, পিছন থেকে শক্ত করে মেঘার হাত ধরে টান দিল।

হাতে টান অনুভব করতেই আমি চোখ খুলে পিছন দিকে ঘুরলাম। সাথে সাথে ভয়ে আমার বুকের ভিতরে ধক করে উঠলো। ভাইয়া আমার দিকে প্রচন্ড রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। তার চোখ দিয়ে আগুন ঝরছে। আমি কোন কথা বলার আগেই ভাইয়া আমার হাত ধরে টেনে তার সাথে করে নিয়ে যেতে লাগলেন।

রুমের মধ্যে এনে হাত ছেড়ে দিলেন। ঠান্ডায় আমার পুরো শরীর শীতল হয়ে আসছে। একপল ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে দেখলাম, আমার দিকে এগিয়ে আসছেন তিনি। তাকে দেখে ভয়ে হাত পা কাঁপতে শুরু করল। সে আমার দিকে ফুসতে ফুসতে এগিয়ে আসতে লাগছেন।

একপর্যায়ে ত্বকি মেঘার একদম কাছে এলো। মূহুর্তেই অদ্ভুত কান্ড করে বসলো সে। এক টান দিয়ে মেঘার গায়ে লেগে থাকা ভেজা ওড়নাটা মেঝেতে ফেলে দিল। চিৎকার করে, কর্কশ গলায় জোরে জোরে বলতে লাগলো,

-বিয়াদপ মেয়ে, ওড়না যখন ঠিক মতো পড়তেই পারিস না তাহলে গায়ে রাখিস কেন? (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার এমন কান্ডে আমার প্রচন্ড কান্না পেল। কম্পমান ঠোঁট- দুটো দাত দিয়ে চেপে ধরে কান্না আটকে রাখতে চেষ্টা করলাম।

-এই মেয়ে, বৃষ্টিতে ভিজেছিস কেন? (ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

ত্বকি ভাইয়া ঘর কাঁপানো ধমক দিয়ে আবারও বলে উঠলো,

-ওহ বুঝেছি, ছেলেদের শরীর দেখেতে তোর ভালো লাগে। তাই তো ছাদে গিয়েছিলি নিজের রুপ দেখাতে। (ত্বকি)

ভাইয়ার এমন উল্টো পাল্টে কথা আমি আর সহ্য করতে পারলাম না। শত চেষ্টা করেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। অবাধ্য চোখ দুটো থেকে টুপটুপ করে গড়িয়ে পড়তে লাগল।

মেঘার চোখের পানি দেখে ত্বকির রাগ কিছুটা হলেও কমে গেল। নিজেকে শান্ত রাখতে চেষ্টা করল সে। নরম গলায় মেঘাকে বললো,

-যা ড্রেস চেন্জ করে আয়। কুইক। (ত্বকি)

ভাইয়ার অনুমতি পেয়ে এক মূহুর্ত দেরি না করে, কাপড় নিয়ে বাতরুমে ঢুকে পড়লাম। ঝরনা ছেড়ে দিয়ে, হাটু ভেঙে ফ্লোরে বসলাম। অনেক কাঁদতে মন চাইছে। মনের কথা শুনে ইচ্ছে মতো কাঁদতে লাগলাম। ত্বকি ভাইয়া এমন কেন? আমার সাথে কি একটু ভালো ভাবে কথা বলতে পারেন না? কেন সারাক্ষণ রাগ করে থাকেন আমার উপর? আমি কি খারপ মেয়ে? আমাকে কি একটুও ভালোবাসা যায় না? বৃষ্টিতে ভিজে কি আমি খুব অন্যায় করে ফেলেছি?

অনেকক্ষণ মেঘাকে বাতরুমে থেকে বের হতে না দেখে, ত্বকি ভিতরে ভয় হতে শুরু করল। তাই ত্বকি বাতরুমের সামনে গিয়ে জোরে করে বলে উঠলো,

-মেঘা, পাঁচ মিনিটের মধ্যে বের হবি নাহলে তোর খবর আছে। (ত্বকি)

ত্বকি ভাইয়ার আওয়াজ পেয়ে আমি ফ্লোর থেকে উঠে দাঁড়ালাম। আমাকে তাড়াতাড়ি রুমে যেতে হবে। প্রচুর শীত লাগছে। আয়নায় সামনে গিয়ে নিজের দিকে তাকালাম।
সাথে সাথে আমার কান্না আপনাআপনি বন্ধ হয়ে গেল। নিজের দিকে তাকিয়ে নিজেই লজ্জা পেয়ে গেলাম। গায়ের জামাটা শরীরের সাথে একেবারে লেগে গিয়েছে। ছিঃ, দেখতে প্রচুর বাজে লাগছে। ভাইয়ার রাগের কারন এখন অনেকটা বুঝতে পারলাম। তার রাগ করাটাই স্বাভাবিক। এখন তো ভাইয়ার সামনে মুখ দেখাতেই প্রচুর লজ্জা লাগছে।

কিছুটা সময় পর মাথায় ওড়না দিয়ে বাতরুম থেকে বের হলাম। লজ্জায় মরে যেতে ইচ্ছে করছে।
বৃষ্টিতে ভেজার কারনে প্রচুর শীত লাগছে। তাই কাঁপতে কাঁপতে বিছানায় গিয়ে বসলাম। ত্বকি ভাইয়া আমাকে দেখে গরম চাউনিতে আমার দিকে তাকালেন। এক বার ভাইয়া দিকে তাকিয়ে, ভয়ে আমি মাথা নিচু করে রইলাম।

মেঘাকে কাঁপতে দেখে, ত্বকি আলমারি থেকে কম্বল বের করে,, নিজের হাতে মেঘার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিল। তারপর কোন কথা বলেই রুম থেকে বেরিয়ে গেল।

ত্বকি ভাইয়ার এমন কাজে আমি অবাক না হয়ে পাড়লাম না। গায়ে কম্বল জড়ানোর পরেও আমি কাঁপতে লাগলাম।

কিছুক্ষণ পরে ভাইয়া রুমে এসে ঠাস্ করে দরজা বন্ধ করে দিলেন। আস্তে করে বিছানার এক পাশে বসে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলেন,

-এই নে, তোর সেই বিখ্যাত ফুচকা। খেয়ে আমাকে উদ্ধার কর। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নত দৃষ্টি সরিয়ে তার দিকে তাকালাম। সে প্লেটে ফুচকা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। আমি তো বিশ্বাস করতে পারছি না যে, ভাইয়া আমার জন্য ফুচকা এনেছেন। নিমিষেই মনটা খুশিতে নেচে উঠলো। নিজের অজান্তেই ঠোঁটের কোনে হাঁসি ফুটে উঠলো।

দেরি না করে ভাইয়ার হাত থেকে প্লেটটা নিয়ে খেতে শুরু করলাম।

ত্বকি এক দৃষ্টিতে মেঘার খাওয়া দেখতে লাগলো। মেঘার বাচ্চামো দেখে ত্বকির রাগ চলে গেল। পানির গ্লাস হাতে নিয়ে মেঘার পাশে বসল সে।

পাঁচ মিনিটে সম্পন্ন ফুচকা শেষ করলাম। প্রচুর ঝাল হয়েছে। খাওয়া শেষ করেই ভাইয়ার হাত থেকে পানির গ্লাস নিলাম। পুরো পানি শেষ করে গ্লাসটা পাশে রেখে মিষ্টি গলায় ভাইয়াকে বললাম,

-ভাইয়া, আপনি না অনেক ভালো। (মেঘা)

ত্বকি মেঘার কথা শুনে মনে মনে হাঁসতে লাগলো। কিন্তু তা বাইরে প্রকাশ করল না। মুখে গম্ভীর ভাব ফুটিয়ে রাখল।
,,
ফুচকা খাওয়ার পর, এখন অনেক গরম লাগছে। তাই বিছানা থেকে নেমে ওড়না ঠিক করে দাঁড়ালাম। ঠিক তখনই ভাইয়া ছোফা থেকে উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসতে লাগলেন।

আমার একদম কাছে এসে হঠাৎ ভাইয়া আমার ওড়না আঁচল ধরে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলেন,

-কান খোলে শোনে রাখ, আর কখনো আমাকে না বলে ছাদে যেয়ে বৃষ্টিতে ভিজবি না। আন্ডারস্টান্ড?(ত্বকি)

-নিশ্চুপ (মেঘা)

ভাইয়া আমার ওড়নার আঁচল ধরাতে আমার ভিতরে অস্থির লাগতে শুরু করল। চুপ করে চোখ বন্ধ করে রইলাম। হঠাৎ করে ভাইয়া রেগে গেলেন কেন, বুঝতে পারলাম না।

ত্বকি মেঘার অস্থিরতা উপলব্ধি করতে পেরে ওড়না ছেড়ে দিল। মেঘার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিস ফিস করে বলে উঠলো,

– আমার জিনিস, অন্য কাউকে দেখানো অধিকার তোর নেই। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথার আগা গোড়া কিছুই বুঝতে পারছি না। তার এমন অদ্ভূত কর্মে আমার হৃদয় স্পন্দন বন্ধ হয়ে আসার উপক্রম।

ত্বকি মেঘার থেকে একটু দূরে সরে গিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে উঠলো,

-লুক এট মি। (ত্বকি)

ভাইয়ার কথা শুনে আমি নিচের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে অপরাধীর মতোন তার দিকে তাকালাম। সে আমার দিকে শক্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলতে লাগলো,

-নিজের জিনিসের অধিকার নেয় না বলে মনে করিস না, সবকিছু তোর। (ত্বকি)

ভাইয়া কি বলছে সত্যি আমি বুঝতে পারিছি না। সে আবারও বলে উঠলো,

-আশা করি আমার,,
(চলবে)

[ব্যাস্ততার জন্য গুছিয়ে লিখতে পারি নি। ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কালকে বড়ো করে দেওয়ার চেষ্টা করব ]
(চলবে)

[বেড়াতে এসেছি। তাই গল্প লেখার মতো অবস্থাতে নেই। দেরি হওয়ায় জন্য দুঃখিত]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here