তোমার নেশায় পর্ব -১০

# তোমার_নেশায় !
,
,
(১০)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
ফুফি কে বিদায় দেওয়ার সময় চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। এই কয়েদিনে ওনাকে ও মায়ের মত ভালোবেসে ফেলেছি, উনি ও আমার দিকে মায়াভরা দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে ছিলেন যেন অনেক কিছু বলতে চান। ফুফিকে রুপাঞ্জন নিজেই ড্রাইব করে বাবার বাসায় দিয়ে আসতে চলে গেল। বিকাল প্রায় শেষের দিকে প্যাকিং টা সেরে নেই। কাল সকালেই তো বেরোতে হবে তখন আর সময় পাবোনা। আমি নতুন শপিং করে আনা ড্রেস গুলাই নিলাম, মায়ের ছবি টা নিতেও ভুল হলোনা।আমি যেখানেই যাই মায়ের ছবি নিয়ে যাই। এতে মনে হয় মা আমার সাথেই আছেন সারাক্ষন। আমার রুপাঞ্জনের ও তো মা নেই! আহারে, বেচারা মা ছাড়া কত কষ্ট সেটা তো আমার থেকে ভালো কেউ জানেনা । এইসব ভাবছিলাম তখনই রুপাঞ্জন এসে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরল আমায়। কাধে মুখ রেখে বলল,
:– একা একা প্যাকিং করছো? আমার প্যাকিং কে করবে গো বউ??
,
:– আমি তো জানিনা আপনি কোন জামা গুলা নিবেন। এক কাজ করুন আপনার যা যা লাগবে আমাকে বের করে দিন, আমি গুছিয়ে দিচ্ছি।
,
রুপাঞ্জন আমাকে ছেড়ে দিয়ে ওর জামা বের করলো আলমারি থেকে!……….
,
আজ খুব ভোরেই ঘুম ভেঙগে গেল আমার। উঠে নামাজ পরে নিলাম আর একটু ফ্রেশ হওয়ার জন্য ছাদে গেলাম। নিচে এসে ঘড়ি তে দেখি ৭ টা বাজছে। নাস্তা টা বানিয়ে নিলাম, খুব আনন্দ হচ্ছে আমার। এতোদিনের ইচ্ছা পুরন হতে চলেছে। সত্যি রুপাঞ্জন এসে আমার লাইফ এতো সুন্দর করে দিবে আমি ভাবতেই পারিনি। নাস্তা বানিয়ে রুমে গিয়ে দেখি রুপাঞ্জন এখন ও ঘুমাচ্ছে। আমি ওর গায়ে দাক্কা দিয়ে উঠানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু ও উঠল না, বরং উল্টো দিকে মুখ করে শুয়ে রইল। এখন ওকে একদম বাচ্ছাদের মতো লাগছে কেমন গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে। আমি ওর কাছে গিয়ে ওর কপালে একটা চুমু দিলাম, ওমনি ও আমার হাত এক টান দিয়ে ওর গায়ের ফেলে দিল। আর হাত দুইটো খুব শক্ত করে ধরে রাখল যেন পালাতে না পারি,
:– এই কি হচ্ছে কি?? ছাড়ুন আমাকে বলছি।
,
:– এই তুমি সব সময় পালাতে চাও কেন আমার থেকে হুম??
,
:– কিছুনা, চলুন নাস্তা খাবেন অনেক লেইট হয়ে যাচ্ছে।
,
:– ওইটা আবার দাও না।
,
:– কোনটা??
,
:– তখন দিছো যে…….
,
:– মনে নেই আমার! past is past!!
,
:– okk past কে কি করে present বানাতে হয় আমার জানা আছে।
,
তখনই হঠাৎ কলিং বেল বেজে উঠল। রুপাঞ্জন মুখ অন্ধকার হয়ে গেল আর আমি সেটা দেখে হেসে ওর উপর থেকে উঠে গেলাম। ও মুখ বেজার করে একটা গেঞ্জি পরে নিল তারপর গিয়ে দরজা খুলল। সম্ভবত ড্রাইবার এসেছে। আমরা কখন বের হবো সেটা জিজ্ঞাস করতে। ড্রাইবারের সাথে কথা বলে আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
I will not spare you!!!
,
তারপর ফ্রেশ হয়ে আমরা একসাথে নাস্তা করে নিলাম। আমি রেডি হয়ে গেছি একটা কালো আর লাল সংমিশ্রনে র একটা শাড়ি পরেছি। রুপাঞ্জন একটা লাল শার্টের উপর কালো ব্লেজার পরেছে। খুব হেন্ডসাম দেখাচ্ছে ওকে। ও রেডি হয়ে গায়ে পারফিউম দিল তারপর আমার কানের কাছে এসে বলল,
:– আমার বউ এতো সেজেছে কেন? যদি কোনো সিঙ্গাপুর বাসি আমার বউকে রেখে দেয় তখন আমার কি হবে???
,
আমি হেসে বললাম,
:– একি টেনশান তো আমার ও!!!
,
দুজনে হেসে উঠলাম। তারপর বাসা টার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে নিয়ে দরজা লক করে লিফটে উঠে পড়লাম। ড্রাইবার আমাদের লাগেজ নিয়ে আগেই নিচে চলে গেছে। আমি আর রুপাঞ্জন গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করল।আমার আজ কেন জানিনা খুব পাগলামি করতে ইচ্ছা করছে তাই ব্যেগ থেকে মোবাইল বের করে জিব বের করে সেল্ফি তুলতে লাগলাম। রুপাঞ্জন আমাকে দেখে হাসতে হাসতে জিজ্ঞাস করল,
:– রিয়েলি রুপশা! আজ ফাস্ট টাইম তোমায় সেল্ফি নিতে দেখছি।
,
আমি কিছু না বলে এবার ওনার সাথে কয়েকটা সেল্ফি তুলতে শুরু করলাম। ততক্ষনে আমরা এয়ারপোর্ট চলে এসেছি। গাড়ি থেকে নেমে একপাশে দাড়ালাম। রুপাঞ্জন লাগেজ গুলা নামিয়ে ড্রাইবার কে বিদায় দিয়ে একটা ট্রলি নিল। তাতে লাগেজ গুলা রেখে আমরা ভিতরে গেলাম। ওখানকার একটা দোকান থেকে কিছু চিপ্স,জুস, চকলেট নিলাম। কিছুক্ষন পর প্লেনে উঠার জন্য আনাউন্স করা হলো। আমি প্ল্যেন জার্নি করলে শুধু ঘুম পায়। এবার ও তার ব্যতিক্রম হলো না, আমি সিটে বসতেই রুপাঞ্জনের কাধে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছুক্ষন পর উঠে একটা চিপ্স খেলাম। তারপর আবার ঘুমিয়ে পড়লাম রুপাঞ্জন চুপচাপ একটা ম্যেগাজিন পড়ছে। একটুপর রুপাঞ্জন আমায় হাল্কা দাক্কা দিয়ে উঠিয়ে বলল,
:– বউ!! Welcome to Singapore!!
,
আমি প্রায় লাফিয়ে উঠলাম। কিন্তু দেখি এখন ও প্ল্যেন ল্যেন্ড করেনি বাট জানালা দিয়ে কিছুটা দৃশ্য দেখা যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর আমার সিঙ্গাপুর নেমে পড়লাম। বাপরে এখানে আসলেই বেশ শীত পড়ছে। ব্যেগ থেকে একটা ব্লেজার বের করে পরে নিলাম। তারপর রুপাঞ্জন একটা ক্যাব বুক করল। আর আমরা হোটেলে এসে ডুকলাম। রুমেই ডুকতেই রুপাঞ্জন লম্বা হয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ল আর আমার উদ্দেশ্য বলল,
:– বউ খুব টাইয়ার্ড লাগছে। আমি ঘুমাচ্ছি তুমি ও একটু ঘুমিয়ে নাও।
,
:– আমার টাইয়ার্ড লাগছেনা কারন আমি তো সারাটা পথ ঘুমিয়েই কাটিয়েছি । তুমি ঘুমাও!
,
রুপাঞ্জন একটু পর ঘুমিয়ে পড়ল। আমি রুম টার চারদিকে হেটে হেটে দেখছি। বেশ বড় রুম তো আর সাথে এট্যাচড বাথরুম টাও বিশাল। একটা বড় বারান্দা ও আছে। এখান থেকে রাতের চাদ খুব ভালোই দেখা যাবে। দুজন মানুষ বসার মতো টেবিল চেয়ার আছে । আমি কিছুক্ষন বারান্দায় বসে কাটালাম। এখান থেকেই দ্রুত ও ব্যস্ততম শহর টা দেখা যাচ্ছে সন্ধ্যার আকাশ, অন্ধকার হয়ে এসেছে অনেক টা! তারপর ও জায়গা গুলা কত ঝকজকে দেখাচ্ছে। আজকে আমার হাব্বি টা খুব টাইয়ার্ড আজকে রেস্ট করুক তারপর কাল সকাল থেকে ঘুরাঘুরি শুরু হবে।
দশদিনে এখানকার একটা কোনা ও বাদ দিবোনা আমি। আচ্ছা ১০ দিনে পুরো সিঙ্গাপুর ঘুরে শেষ করতে পারবো তো!! আমার ভাবনার বিচ্ছেদ ঘটিয়ে তখনই ডোরবেল বেজে উঠল। রুপাঞ্জন যেহেতু ঘুমাচ্ছে তাই আমাকেই দরজা খুলতে হলো। একটা মাঝ বয়সি লোক দাড়িয়ে আছে ড্রেস দেখে মনে হচ্ছে রুম সার্ভিস। আমাকে দেখেই বলল,
:–Good evening Mam! Your Dinner….
,
:– ok, keep it over there!
,
:– Mam if anything needed pls call us…See you!
,
:– ok Thank u…. Gd night!
,
ডিনার টা সার্ব করে টেবিলে সাজালাম। এবার রুপাঞ্জন কে উঠাতে হবে নয়ত পরে ঠান্ডা হয়ে যাবে খাবার টা!
আমি ওকে উঠাতে গিয়ে দেখি ও নিজে উঠে বসে আছে। আমাকে দেখেই বলল,
:- Good evening sweetheart!!
,
:– good evening! ফ্রেশ হয়ে নাও ডিনার করবে।
,
:– হুম।
,
রুপাঞ্জন ফ্রেস হয়ে এলে আমরা ডিনার করে নিলাম। ডিনার শেষে আমি ওকে বললাম,
:- চলো এবার ঘুমিয়ে পড়ি!
,
:– ঘুমাবো মানে??
,
;– তাহলে কি করবে?
,
:– কেন জানোনা? হানিমুনে মানুষ কি ঘুমাতে আসে?
,
তারপর………….
,
,
,
তারপর আর কি দেখছেন?? অন্যর হানিমুনের কথা জানতে নেই, পাপ হয়!!! হি হি হি।
,
,
,
,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here