তোমার নেশায় পর্ব -১৩

#তোমার_নেশায়!
,
,
(১৩)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
,
,
,
,
ঘুম থেকে উঠেই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নিলাম। আজ আমি রুপাঞ্জনের জন্য সব ওর ফেবারিট খাবার রান্না করবো। কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে গান শুনতে শুনতে রান্না করছি। কি যে ভালো লাগছে ভালবাসার মানুষের রান্না করার মাঝেও এক ধরনের সুখ আছে। দুপুর পর্যন্ত রান্না শেষ হয়ে গেল। এবার আমি আমাদের বেডরুম টা কে গাঢ় পিংক কালারের গোলাপ দিয়ে সাজালাম। রুমের চারপাশে ক্যন্ডেল জালিয়ে দিলাম। খুবই সুন্দর লাগছে রুম টা কে! দরজার উপর একটা টব রেখেছি যেটাতে গোলাপের পাপড়ি আছে রুপাঞ্জন রুমের দরজা খুলতেই ওর উপর পুষ্প বৃষ্টি হবে, মনে মনে কল্পনা করছি তখন রুপাঞ্জন কেমন ফিল করবে। ওর আসার সময় হয়ে এসেছে এবার আমি শাওয়ার নিতে গেলাম। আজ একটা পিংক কালারের শাড়ি পরেছি। একটু সেজেছি! টেবিলের উপর কেক রেখেছি। সবাই তো বছর পুর্ন হলে সেলিব্রেট করে কিন্তু আমি আলাদা তাই ছয় মাস পুর্তি সেলিব্রেট করবো। আর আমার হাজবেন্ড টা কে প্রোপোজ করবো! আজ ও সত্যি অনেক অবাক হয়ে যাবে। আমি ভাবছি প্রথমে কিভাবে শুরু করবো, তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। আমার বুকের দুকপুকানি টা বেড়েই চলছে। আমি আস্তে আস্তে দরজা টা খুলে দিলাম। রুপাঞ্জন ভিতরে আসতেই আমি ওকে জড়িয়ে ধরলাম। ওর বুকে মুখ গুজে বলতে লাগলাম,

:– Happy six month anniversary! darling…..আমি বাকি সারাজিবন আপনার এই বুকে মাথা রেখে কাটাতে চাই। এই জিবন কে আপনার নাম করতে চাই! I love you so much!!আমার জিবনের প্রথম প্রেম প্রথম ভালো লাগা আপনাকে বানাতে চাই! এই হৃদয়ের সমস্ত ভালোবাসা আপনাকে উজাড় করে দিতে চাই। আপনি কি আমায় সেই সুযোগ দিবেন?
,
আমি এইটুকু বলে চুপ করে রইলাম ওনার উত্তরের আশায়! হয়ত এক্ষুনি উনি বলবেন, উনার সমস্ত ভালোবাসা শুধু আমার জন্য!
কিন্তু কিছু বুঝে উঠার আগেই কেউ আমায় দাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দিল। আমি এই ঘটনার জন্য প্রস্তত ছিলাম না। কি হয়েছে সেটা বুঝে উঠার জন্য আমার কিছু সময় লাগল। আমি মেঝেতে পড়ে অনেক ব্যেথা পেয়েছি মুখ টা উপরে তুলতেই রুপাঞ্জন ঘর কাপিয়ে হাসতে লাগল । আমি বুঝতে পারছিনা ওনার হাসির কারন, আমার কি কোথাও কোনো ভুল হয়েছে? নিজেই নিজেকে হাজার প্রশ্ন করছি। কিন্তু উত্তর মেলাতে পারছিনা। উনি আমাকে ফেলে দিয়েছেন তো কি হয়েছে এক্ষুনি কোলে তুলে নিবেন আবার আমি জানি। রুপাঞ্জন হাসি থামিয়ে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন,

:– তোমায় আমি ও খুব ভালোবাসি সুইটহার্ট!! ভালোবাসা! মাই ফুট!!!
,
আমি কি ঠিক শুনছি উনি এটা কি বলছেন। মনে হচ্ছে আমার কান টা কিছুক্ষনের জন্য বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। উনি আবার হাসতে শুরু করলেন তারপর ডাইনিং এর উপর রাখা কেক টা দেখে বললেন,

:– ওলে বাবা লে!! কেক আনা হয়েছে…… কেক খাবে তুমি??? ওয়েট!

,
উনি উঠে কেক টা নিলেন তারপর কেক টা হাতে নিয়ে আমার মুখে মেরে দিলেন। হাত দিয়ে আমার পুরো মুখে লাগিয়ে দিলেন।
,
:– খাও! আজ যে আমাদের বিয়ের ছয়মাস পুর্ন হয়েছে! হুররে!!!!
আমি এখন ও কিছুই বুঝতে পারছিনা উনি কি পাগল হয়ে গেছেন। আমি উঠে দাড়িয়ে জিজ্ঞাস করলাম,

:– আপনি এমন মজা করছেন কেন আমার সাথে??
,
:– মজা??? মজা তো এতোদিন করেছিলাম বেইবি!!
,
:– এতোদিন কিসের মজা বুঝিনি, প্লিস এমন করে কথা বলবেন না আমার ভালো লাগছেনা।
,
:– এই ইউ!!! তুমি ভাবলে কি করে আমি রুপাঞ্জন খান, তোমার মতো একটা মেয়েকে রেপ করে গিল্টি ফিল করবো?? আরে তোমার মতো মেয়েরা আমার সাথে শোয়ার জন্য পাগল হয়ে থাকে। কয়েকটা টাকা ফেললে তোমার মতো ১ ডজন মেয়ে কিনে আমার বেডরুম টা সাজিয়ে রাখতে পারি। সত্যি তুমি খুবই বোকা! আর আমি নিজেও জানতাম না আমি শাহরুখ খানের মত এতো নিখুত ভালোবাসার অভিনয় করতে পারবো। বাহ!! আমেজিং এই জন্যই তো সারারাত জেগে শাহরুখ খানের মুভি দেখতাম যাতে তোমায় ইম্প্রেস করতে পারি আর ইউ ফুল! সেই অভিনয় কে আমার ভালোবাসা ভেবে আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছো। Hats off me!! রুপাঞ্জন খান তোমার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসবে তুমি ভাবলে কি করে?? কি যৌগ্যতা আছে তোমার আমার ভালোবাসা পাওয়ার! তোমার থেকে আরো হাইক্লাস মেয়ে আমার ভালোবাসা পেতে লাইন ধরে থাকে আর সেখানে তুমি, থু!!!! আমার ফুফির ভালবাসা তোমার মতো হাজার মেয়েও ভুলাতে পারবেনা। আর আমি ও ফুফিকে ছুয়ে কসম খেয়েছিলাম যে তার রিভেঞ্জ আমি নেব! Today I am success!! তোমাকে ও বুঝিয়ে দিয়েছি ভালোবাসা না পেলে কেমন লাগে! এখন তুমি ও সারাজিবন ভালোবাসার জন্য তরপে তরপে মরবে আর তোমার বাবা সেটা দেখে আরো কষ্ট পাবে, তখনই আমার রিভেঞ্জ পুর্ন হবে। জানো তোমার কেয়ার নেওয়া, ঘুরতে যাওয়া, তোমাকে রোমান্টিক কথা বলা কতো বরিং লাগত! মাঝে মাঝে ইচ্ছা হতো তোমায় ঘুমের মধ্যেই গলা টিপে মেরে ফেলি। কিন্তু তাতে তুমি বেশি ঝন্ত্রনা পাবেনা বরং ঝন্ত্রনা থেকে মুক্তি পেয়ে যেতে কিন্তু আমি তো তোমায় এতো সহজে মুক্তি পেতে দেবোনা। তাই প্লেনিং করে তোমায় ভালোবাসার সাগরে ফেলেছি যেটাতে তুমি সারাজিবন কষ্টে হাবুডুবু খাবে কিন্তু মরবেনা। আর যেদিন তুমি তোমার বাবার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলে সেদিন আমি সব শুনছিলাম যে তোমার বাবা আমার চক্রান্ত বুঝতে পেয়ে তোমায় উস্কাচ্ছে। এখন ভাবছো কি করে জানলাম? আমি তোমার বডি তে একটা ট্র‍্যেকার লাগিয়েছিলাম যার মাধ্যেমে তুমি কোথায় যাচ্ছো কি করছো,সব জানতে পারতাম। তোমার বাবা তোমার মতো বোকা না তাই তোমায় সাবধান করছিলেন তাই আমি ও ছট করে প্ল্যেন বানিয়ে নিলাম। আমারই ভাড়া করা গুন্ডা দিয়ে নিজের এক্সিডেন্ট করালাম যাতে তুমি বুঝতে পারো আমি তোমায় কতটা ভালোবাসি আর তুমি ও বোকার মত তাই ভাবলে।আমি ও অনেক আগেই জানতাম তুমি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছো কিন্তু আমি অপেক্ষা করছিলাম সঠিক সময়ের! ৬ মাস শেষ হলে আমি তোমায় ডিবোর্স দিতে পারবো তাই আমি সব কিছু ৬ মাসের মধ্যেই প্ল্যেন করে নিলাম। সব কিছুই আমার প্ল্যেন মতো হচ্ছিল , তোমায় যখন যা বলেছি, যা বুঝিয়েছি, তুমি ও বোকার মতো তাই বিশাস করেছো। আর সেটা আমার কাজ সহজ করে দিল। আমি তো জানতাম ও না তুমি নিজেই নিজের বরবাদি সেলিব্রেট করার জন্য এতো প্ল্যানিং করে রেখেছো। মিস রুপশা চৌধুরী আজ থেকে তোমার আমার পথ আলাদা! ডিবোর্স পেপারে সাইন করো আর আমার বাসা থেকে চিরতরে বিদায় হও!!! নাও সাইন করো……
,
এই বলে আমার মুখের উপর ডিবোর্স পেপার গুলা ছুড়ে মারলেন। আমি এতোক্ষনে যেন পাথর হয়ে গেছি। এতো বড় ধোকা পেলাম ওনাকে বিলিভ করে ওনাকে ভালবেসে। না, না উনি যাই বলুক আমি মানিনা! আমি ওনাকে ছেড়ে কোথাও যাবোনা। আমি….
আমি ওনার পা ধরে বসে পড়লাম কাঁদতে কাঁদতে অনুরোধ করতে লাগলাম,

:– আমি জানিনা আপনি এগুলা কি বলছেন, শুধু এইটুকু জানি আমি আপনাকে ভালোবাসি। আমি পারবোনা আপনাকে ছাড়া থাকতে প্লিস আমার সাথে এমন করবেন না।
,
;– এতো ইন্সাল্ট করার পর তোমার শিক্ষা হয়নি! গেট আউট ফ্রম মাই হাউজ।
এই বলে সজোরে লাথি মারলেন আমায়! আমি কিছুটা দুরে গিয়ে ছিটকে পড়লাম। আমি আবার উঠে ওনাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম,

:– প্লিস এমন করবেন না! আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি।।আপনি এমন করলে কি ফুফি সুস্থ হয়ে যাবে??
এই কথা বলা শেষ হতেই উনি খুব জোরে চড় মারলেন আমায়, আমি আবার মেজের উপর উপড় হয়ে পড়লাম। ঠোটের কোনে হাত দিয়ে দেখলাম রক্ত পড়ছে। আমার যা হয়ে হোক আমি ওনাকে ছাড়া এক মুহুরত ও থাকতে পারবোনা। আমি আবার গিয়ে ওনার পা ধরতেই উনি আমার চুল ধরে টেনে তুললেন, চুল ধরে দাক্কা মেরে ঘর থেকে বের করে দিলেন। আমি বার বার চিৎকার দিয়ে বলছি, আমি মরে যাবো আপনাকে ছাড়া, প্লিস আমায় বের করে দিবেননা।
,
রুপাঞ্জন একটু হেসে বলল,

:– আর আমি যদি বলি তোমার মায়ের মার্ডার আমার বাবা করিয়েছিল তাহলেও তুমি একি কথা বলবে????
,
,
উনি কি বললেন এটা! আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল। আমার মা কে….. ওরা! না…….আমার….
আর কিছু ভাবতে পারলাম না দপাশ করে মাটিতে বসে পড়লাম। আমি আজ বাক্যরুদ্ধ!!!
রুপাঞ্জন আমায় দেখে হাসতে হাসতে বলল,

:– তোর স্থান এই মাটিতেই!! আমার চোখের সামনে আর কখন ও পড়বিনা।
,
উনি ঠাসস করে দরজা বন্ধ করে দিলেন! আমি চোখের সামনে সব অন্ধকার দেখছি। আর কিছু মনে নেই!!!!
,
,
রুপশা এইভাবেই জ্ঞান হারিয়ে রাস্তায় পড়ে রইল। লোকজন ওকে দেখে হাসাহাসি করতে লাগল কারন ও শাড়ি ছেড়া আর সারামুখে কেক মাখানো চুল এলোমেলো। অসহায়ের মতো রাস্তায় পড়ে রইল!
ভালোবাসার বিনিময় এই পরিনতি পেল রুপশা????
,
,
জানতে হলে সাথেই থাকুন। কেমন হলো জানাবেন।
,
#ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here