তোমার নেশায় পর্ব -১৫

# তোমার_নেশায় !
,
,
(১৫)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
.
ব্যেগ গুছিয়ে নিচ্ছি আমি। মোটামোটি আমার যা নেওয়ার নিয়ে নিয়েছি। তবুও মনে হয়, জিবনের সব থেকে বড় জিনিস এখানেই রেখে যাচ্ছি! ভালোবাসা…..!
হ্যা, চলে যাচ্ছি আমরা। এই শহর ছেড়ে অনেক দুর। এই শহরে যে আমার আর কোনো পিছুটান নেই। আর কিছু যে পাওয়ার নেই এখানে, সব তো কেড়ে নিয়েছে এই ইট পাথরে গড়া ব্যেস্ত শহর। আমাদের বিজনেস ম্যনেজার কে বুঝিয়ে দিয়ে চিরতরে এই শহর ত্যেগ করার সিডান্ত নিয়েছি আমি আর বাবা! বাবার অনেক কাকুতি মিনতির পর আমি রাজি হয়েছি এই ব্যেস্ত শহরকে ছেড়ে কোলাহোল মুক্ত এক শান্তির জায়গা চলে যেতে। আজকের পর সবাই জানবে এই “প্রত্যাশা কানন” পরিত্যাক্ত। বাবার রুমের দিকে গেলাম দেখি বাবা রেডি হয়ে বসে আছেন। সন্ধ্যার আকাশে ঘন কালো মেঘ নেমে এসেছে। রাতেই বেরিয়ে পড়ছি আমরা। কেউ জানবে না আমরা কোথায় যাচ্ছি। ঘর থেকে বের হওয়ার আগে দেওয়াল গুলাতে একবার হাত বুলিয়ে নিলাম।
:– আমি চলে যাচ্ছি মা! এই শহর যে আমাদের এখানে থাকতে দিলনা। আজ থেকে তুমি একা হয়ে যাবে। বিদায় মা!
বাবার ডাকে ঘোর ভাঙল। আসছি বলে বেরিয়ে পড়লাম। মেইন গেইটে বড় একটা তালা ঝুলিয়ে দিলেন বাবা! তারপর চোখ মুছতে মুছতে গাড়িতে উঠে বসলেন। আমি আরো একবার পিছু ফিরে বাসা টা কে দেখে নিলাম, জানি আর কখন ও ফেরা হবেনা এখানে।
গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি চালাতে শুরু করল ড্রাইবার। আমি গায়ে বড় একটা চাদর জড়িয়ে নিয়েছি খুব শীত করছে। আমার বাবা চা বাগান খুব ভালোবাসতেন তাই মাঝে সিলেট চলে যেতেন সেটা আমার জন্মের আগের কথা। তাই সুবিদার জন্য বাবা সেখানে একটা বাড়ি তৈরি করেন যাতে বেড়াতে গেলে থাকতে পারেন। এতোদিন আমাদের ফাকা বাড়িটা কেয়ারটেকার এর দায়িত্ব এ ছিল। কখন ও ভাবিনি নিজের জন্মস্থান ছেড়ে ওখানে গিয়ে থাকতে হবে। আমরা বাই রোড সিলেট যাচ্ছি নিজেদের কারে করে। সকালে উঠে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে থাকবে আমাদের তালাবন্ধ প্রত্যাশা কাননের দিকে। কিন্তু কেউ জানবে না আমাদের বাবা মেয়ে কোথায় আছি। জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আপন মনেই বলে উঠলাম,
:– বিদায় রুপাঞ্জন খান! বাকি জিবন নাহয় আপনাকে ঘৃন্না করেই কাটিয়ে দেব।
,
রাস্তার ধারের হেডলাইট গুলার দিকে তাকিয়ে চোখ গুলা ঝাপশা হয়ে এলো। বুকের ভিতরের দহন যে কিছুতেই কমবে না। এই বিচ্ছেদ ঝন্ত্রনা যে এতো সহজে ভোলা যাবেনা। তবুও আমি নিজেকে শান্তনা দিতে পারি, এটাই আমার শাস্তি ছিল কারন আমি আমার মায়ের খুনিকে ভালো বেসে ছিলাম। বাবার কাধে মাথা রেখে আমার জিবনের প্রথম আর শেষ প্রেম এই শহরে কবর দিয়ে নতুন শহরের দিকে এগিয়ে চললাম।
,
# রুপাঞ্জন !
এখন সারাদিন অফিসে আর সারারাত নাইট ক্লাবে ব্যস্ত থাকে। ওর জিবন হচ্ছে টাকা আর মেয়ে! তাও কেন জানিনা আমি এখন মেয়েদের মধ্যে আগ্রহ পাইনা। না না এই মেয়েদের অনেকবার দেখেছি তো তাই হয়ত এমন লাগছে। ম্যেনেজার কে কল দিলাম,
:– হ্যালো স্যার! বলুন।
,
:– ম্যনেজার! তোমার জানা মতে যত সুন্দরি মেয়েকে চিনো সবাইকে সিরিয়ালি আমার বাসায় পাঠিয়ে দাও। আর হ্যা, এই মেয়েগুলার মধ্যে কোনো কমতি যেন না থাকে। স্মার্ট,সুন্দরি, স্টাইলিশ সব দিক দিয়ে পারফেক্ট মেয়েকে আমার চাই! আর শুনো আজকে যদি মন মতো মেয়ে না পাই তোমার নিস্তার নেই। Do you get that!
,
:– ওকে স্যার! কোনো চিন্তা করবেননা আমি এক্ষুনি পাঠিয়ে দিচ্ছি।
,
ফোন রেখে একটা মুচকি হাসি দিলাম। আমি রুপাঞ্জন খান আমার জন্য মেয়েরা পাগল, সব থেকে সুন্দরি মেয়েটা আজ শুধু আমার হবে। বিছানা থেকে উঠে বিয়ারের বোতল হাতে নিলাম, গ্লাসে ডেলে কয়েকটা বরফ দিয়ে চোখ বন্ধ করে খেতে লাগলাম। তখনই কলিং বেল বেজে উঠল। আমি উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম একটা মেয়ে এসেছে। দুর! এই মেয়ের নাক সুন্দর না! যাও!
একে একে অনেক মেয়ে দেখলাম শেষের টা কে খুব মনে ধরেছে। ওয়াওও!! দারুন চোখ মেয়েটার! কিন্তু এই চোখ এতো চেনা লাগে কেন আমার। সে যাইহোক এতোদিন পর একটা মনের মত মেয়ে পেয়েছি। আমি মেয়েটা কে নিয়ে রুমে ডুকলাম। মেয়েটাকে জড়িয়ে ধরে হারিয়ে গেলাম অন্য জগৎে। কিছুক্ষন পর মেয়েটা উঠে ফ্রেশ হতে গেল।
ওয়াশরুমে গিয়ে মেয়েটা চিন্তা করলো
:–ইশশ! আমি তো আর কোনো ড্রেস নিয়ে আসিনি। এখন আমি কি করবো। ওই আলমারি তে মিঃ খানের কোনো ড্রেস পাই কিনা দেখি।
আলমারি খুলে মেয়েটা অবাক হয়ে গেল। সব মেয়েদের শাড়ি, থ্রিপিচ গয়না ইত্যাদি।
,
:– ওয়াও!! এতোগুলা মেয়েদের পোশাক। মিঃ খানের বাসায় তো কোনো মেয়ে মানুষ নেই। সেই যাইহোক, এই শাড়ি টা খুব সুন্দর। কালো আর লাল এর মিশ্রনে! (এটা সেই শাড়ি যেটা রুপশা সিঙ্গাপুর যাওয়ার দিন পরেছিল)
মেয়েটা রুপশার শাড়ি টা নিয়ে পড়ে নিল। সাথে একটা জুয়েলারি সেট ও পরল।রুপাঞ্জন বিছানায় হেলান দিয়ে বিয়ার খাচ্ছিল। আজ অনেক বেশি খেয়ে নিয়েছে।
মেয়েটা রুপাঞ্জনের সামনে এসে বলল,
:– স্যার, আমার পেইমেন্ট!!
,
রুপাঞ্জন মেয়েটার কথা শুনে ওর দিকে চোখ তুলে তাকালো। একে তো মেয়েটা রুপশার শাড়ি পড়েছে এরমধ্যে রুপাঞ্জন নেশা করেছে তাই মেয়েটাকে রুপশা ভেবে রুপাঞ্জন চিৎকার করে উঠল।
,
:– তুই এখানে কেন এসেছিস??? আমার পিছু ছাড়ছিস না কেন??? আমি তোকে বললাম না তোর উপর শুধু রিভেঞ্জ নিয়েছি তাও তুই কেন আমার সামনে আসিস, বেরিয়ে যা বলছি!! আউট!
,
এই বলে রুপাঞ্জন হাতের গ্লাস টা মেয়েটার দিকে ছুড়ে মারল। মেয়েটার কপাল কেটে রক্ত বেরোতে লাগল। মেয়েটা রুপাঞ্জনের এমন ব্যবহার দেখে ভয়ে পেয়ে গেল। সে দৌড়ে বাসা থেকে বেরিয়ে গেল। সিড়ি দিয়ে নামতে নামতে মেয়েটা মনে মনে বলছে, এই লোকটা নিশ্চই কোনো সাইকো!!
রুপাঞ্জনের রাগ তবুও কমছেনা। সে তার চোখের সামনে যা পাচ্ছে তাই ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে। নিজের রুমের আয়না তে ও রুপশার প্রতিবিম্ব ভেসে উঠছে তাই রুপাঞ্জন হাতের ঘুসি দিয়ে আয়না ও ভেঙে দিল। হাতে কাচ লেগে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে কিন্তু রুপাঞ্জনের সেদিকে খেয়াল নেই। হঠাৎ রুপাঞ্জন নেশার ঘোরে কিচেন থেকে হাসির শব্দ পেল। সে দৌড়ে সেখানে গিয়ে দেখল, রুপশা ফোনে কার সাথে যেন হেসে হেসে কথা বলছে। রুপাঞ্জন কে দেখে আরো হাসছে। রুপাঞ্জন রাগে কিচেনে সব প্লেট, গ্লাস ছুড়ে ফেলে দিল। চিৎকার দিয়ে বলতে লাগল,
:– তুই কেন যাচ্ছিস না আমার জিবন থেকে!” তোকে আমি ঘৃন্না করি। তাও কেন বারবার তুই আমার সামনে আসছিস??
,
রুপাঞ্জন একে একে রুপশার গুছিয়ে রাখা কিচেনের সব ভেঙে দিতে লাগল। কারন এই কিচেনের আনাচে কানাচে সে রুপশার শরিলের গন্ধ পাচ্ছে। এই কিচেনের প্রত্যেক জায়গায় রুপশার ছোয়া আছে! রুপাঞ্জন সব ভেঙে ক্লান্ত হয়ে মাটিতে দপাশ করে শুয়ে পড়ল। ওর মনে হলো রুপশা ওর মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্চে। ওর ইচ্ছা করছে নিজের মাথার সব কটা চুল ছিড়ে ফেলতে।
রুপাঞ্জন এইভাবে পাগলামি করতে করতে কিচেনে জ্ঞান হারিয়ে পড়ে রইল।
,
,
,
এইভাবেই কি শেষ হয়ে যায় একটা সুখের সাজানো সংসার?? কেমন হলো জানাবেন! আর সামনে কিছু রহস্যর উদঘাটন হবে রুপাঞ্জন আর রুপশার জিবনে। জানতে হলে আমার সাথেই থাকুন!
# ধন্যবাদ !!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here