তোমার নেশায় পর্ব -১৭

# তোমার_নেশায় !
,
,
(১৭)
,
,
কঠিন হৃদয়ের মেয়ে তৃষ্ণা!
.
.
.
রুপাঞ্জন বাবার কথা মতো ওই বাসা ত্যেগ করে। ভেবেছিলো ব্যেপার টা এখানেই চুকে যাবে। কিন্তু অতিত যে এতো সহজে মানুষের পিছু ছাড়েনা। রুপাঞ্জন কোনো কাজে মন বসাতে পারছেনা, সারাক্ষন রুপশার ভাবনায় ভিবোর হয়ে আছে। অফিস যাওয়া ছেড়ে দিয়েছে, মেয়েদের সাথে দেখা করা বন্ধ করে এখন শুধু ঘরের এক কোনে বসে থাকে। আশ্রাফ খান ছেলের এই অবস্থা দেখে খুবই চিন্তা পড়ে যান। রুপাঞ্জন যদি এইভাবে ডিপ্রেশনে চলে যায় তাহলে তার বিজনেস গোল্লায় যাবে। গত পাচ বছর ধরে রুপাঞ্জনের কারনেই বিজনেস টা একটা ভালো পজিশনে দাড়িয়েছে এখন কি কোথাকার কোন মেয়ের জন্য এইভাবে আমার বিজনেস বরবাদ হয়ে যাবে? না, ওই আহসান চৌধুরী আগে আমার বোনের লাইফ নষ্ট করেছে আর এখন ওর মেয়ের কারনে আমার ছেলে……….
আমি যদি আগে জানতাম এইভাবে প্রতিশোধ নিতে গিয়ে হিতে বিপরিত হবে তাহলে কখনই এই মেয়ের সাথে রুপাঞ্জনের বিয়ে হতে দিতাম না। এখন এইভাবে হাত গুটিয়ে বসে থাকলে হবেনা, আহসান চৌঃ আর তার মেয়ের একটা ব্যবস্থা আমাকে করতেই হবে, প্রয়োজনে আরো দুইটো খুন করতে ও আমি পিছপা হবো না। তার আগে রুপাঞ্জন কে একটা ভালো সাইক্রাইটিস কে দেখাতে হবে। যেভাবে হোক ওকে নরমাল লাইফে ফিরিয়ে আনতে হবে। এইবলে উনি ওনার ম্যনেজার কে ফোন দিলেন।
,
:– ইয়েস স্যার! বলুন।
,
:– ম্যনেজার শহরের বেস্ট সাইক্রাইটিস এর এপয়েনমেন্ট নাও! ইমিডিয়েটলি।
,
:– ওকে স্যার, হয়ে যাবে।
,
:– আর ওই ফ্ল্যট টার ব্যেপারে কি খবর?
,
:– স্যার একজন ডিলার আড়াই কোটিতে ফ্ল্যেট টা নিতে রাজি আছে। যদি বলেন…….
,
:– আমি আর কি বলবো, ওই ফ্ল্যেট একটা আপদ। যত তাড়াতাড়ি পারো বিদায় করো।
,
:– ওকে স্যার! হয়ে যাবে।
,
:– হুম বাই!
,,,,,,,
রুপাঞ্জন ফুফির হাত ধরে বসে আছে। ওর চোখের কোনে জল চিকচিক করছে।
,
:– ফুফি আম সরি। আমি তোমাকে দেওয়া কথা পুরন করেছি। ওকে ভালোবাসায় অনেক কষ্ট দিছি এতো কষ্ট দিছি যে ও মরার আগ পর্যন্ত আমাকে ভুলবেনা। কিন্তু ফুফি আমি জানিনা কিভাবে ওকে কষ্ট দিতে দিতেই ভালোবেসে ফেলেছি। ও এখন আমার নেশা হয়ে গেছে ফুফি, ওকে আমার খুব প্রয়োজন। আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ওকে ছাড়া। বিলিভ করো ভালোবাসা কতোটা সুন্দর আর ঝন্ত্রনাদায়ক সেটা ও আমার জিবনে না এলে বুঝতাম না। তুমি জানো আমি কিছুতেই শান্তি পাচ্ছিনা, ওর নেশা আমার ভিতর টা পুড়িয়ে চারখার করে দিচ্ছে। আমি ভেবেছিলাম ওকে বাসা থেকে তাড়িয়ে দিলে আমি অনেক খুশি হতে পারবো কিন্তু না ফুফি, আমি একটুও খুশি হতে পারিনি। আমি ওকে ছাড়া ভালো নেই ফুফি! তুমি আমাকে ক্ষমা করো আমি তোমার অনুমুতি ছাড়া ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। কিন্তু তুমি চিন্তা করোনা তুমি বলা ছাড়া আমি কোনদিন ওকে ফিরিয়ে আনব না। আমি তোমাকে সত্যি অনেক ভালোবাসি ফুফি। তোমার জন্য সব পারবো। তুমি প্লিস সুস্থ হয়ে যাও প্লিস!!
রুপাঞ্জন কাঁদছে ওর কান্নার যে শেষ নেই। সবাইকে যে নিজ নিজ কর্মফল পেতে হয়। এটাই যে দুনিয়ার নিয়ম। কাউকে কাদিয়ে কেউ কখন ও সুখি হতে পারেনা।
আশ্রাফ সাহেব এসে দেখেন ওনার ছেলে কাঁদছে। উনি ছেলের কাধে হাত রেখে বললেন,
:– যা হওয়ার হয়ে গেছে, এখন তৈরী হয়ে নাও। আমরা সাইক্রাইটিস এর কাছে যাবো।
,
:– ড্যেড তুমি কি ভাবছো? আমি কি পাগল হয়ে গেছি।
,
:– নো মাই সান! তুমি পাগল হবে কেন? তুমি কয়েদিন ধরে মানসিক সমস্যায় ভুগছো সেটার ট্রিটমেন্ট করাতেই আমরা সাইক্রাইটিস দেখাবো।
,
রুপাঞ্জন চোখ মুছে নিজের রুমের দিকে চলে গেল। আশ্রাফ সাহেব ও ড্রইং রুমে বসে ছেলের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। অন্যদিকে রুপাঞ্জন ফুফির রুম থেকে যাওয়ার পর ফুফির চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। জোরে কান্না করতে গিয়ে ও উনি থেমে গেলেন। ওনার যে অনেক কিছু বলার আছে রুপাঞ্জন কে। কিন্তু অনেক চেষ্টা করে ও উনি বলতে পারলেন না।
,
অন্যদিকে রুপশা ওর বাবার সাথে চা বাগান ঘুরে দেখছে। আহসান চৌঃ চান ওনার মেয়েটার মন টা একটু ভালো হোক। তাই হাটুর ব্যেথা থাকা সত্তেও মেয়ের কাছে সেটা গোপন করে নিয়ে এসেছেন চা বাগান ঘুরতে।
বাগান দেখতে ভালোই লাগছে। দুপাশে চা বাগান আর মাঝখান দিয়ে হেটে যাচ্ছি আমি। ইচ্ছা করছে এই বাগানেই একটা ছোট্ট কুড়েঘর বানিয়ে থাকি। পিছন ফিরে বাবাকে বলতে যাব কুড়েঘরের কথা তখনই মাথা টা হঠাৎ ভারি হয়ে এলো চোখের সামনে সব অন্ধকার হয়ে গেল। তারপর আর কিছু মনে নেই।
রুপশা জ্ঞান হারানোর পর ওর বাবা আর কেয়ারটেকার ধরাধরি করে ওকে বাসায় নিয়ে আসে। তারপর ডাক্তার কে কল দিয়ে বাসায় আসতে বলেন আহসান চৌঃ। ডাক্তার এসে রুপশাকে চেকাপ করেন আর একটা ইঞ্জেকশান দেন। কিছুক্ষন পর ধীরে ধীরে রুপশা চোখ খুলল। রুপশার বাবা ব্যস্ত হয়ে জিজ্ঞাস করলেন,
:– ডাক্তার ওর কি হয়েছে? কাল থেকে ওর শরিল খারাপ। হাস্পাতালে নিতে হবেনা তো??
,
:– আরে কি বলছেন আহসান সাহেব? মিষ্টি নিয়ে আসুন, আপনি খুব শিঘ্রিই নানা ভাই হতে চলেছেন। রুপশা ২ মাস থেকে প্র্যেগনেন্ট। এই অবস্থায় এইগুলা নরমাল।
,
ডাক্তারের কথা শুনে আহসান সাহেবের মুখ অন্ধকার হয়ে এলো। কি হবে এবার ওনার মেয়ের। আর ওর সন্তান ও তো কত হতভাগা যে বাবা থাকা সত্তেও কোনদিন বাবার আদর পাবেনা।
এদিকে রুপশার মাথায় যেন আকাশ ভেঙে পড়ল। সে এটা শোনার জন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলনা। জোরে চিৎকার দিয়ে আবার জ্ঞান হারালো।
যখন জ্ঞান ফিরল দেখতে পেলাম বাবা আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আমি তাড়াতাড়ি উঠে বসলাম।
বাবা একটু চুপ থেকে বললেন,
:– কি আর করবি মা? এইটাই ছিল তোর ভাগ্য!
,
:– না বাবা এটা কিছুতেই হতে পারেনা!!! ওই খুনির বংশধর কে আমি আমার মধ্যে বড় হতে দিব তুমি ভাবলে কি করে?
,
:– দেখ মা! ওর বাবা পাপ করেছে, এতে ওই নিষ্পাপ শিশুর কি দোষ।
,
:– বাবা ওর দোষ একটাই ওর বাবা খুনি। ওর বাবা প্রতারক! আমি একজন প্রতারকের ছেলেকে কিছুতেই মেনে নিতে পারবোনা।কিছুতেই না!!
,
;– জিদ করিসনা রুপশা মা। একটু ভেবে দেখ একটা প্রান কে হত্যা করা কত বড় পাপ।
,
:– বাবা তুমি কেন ভুলে যাচ্ছা ওই আশ্রাফ খান আমার মা কে খুন করেছে। সেটা পাপ না??
,
:– আমি জানি সেটা পাপ। কিন্তু ওরা হচ্ছে সমাজের মানুষ রুপি হিংস্র পশু। তুই যদি এই শিশুকে হত্যা করিস তাহলে ওই পশুদের আর তোর মধ্যে পার্থক্য কোথায়??? আর তুই কেন ভুলে যাচ্ছিস ও তোর ও সন্তান!
,
এই কথা বলে বাবা চলে গেলেন। আমি আজ কাঁদতে চেয়ে ও পারছিনা। আমার সন্তান হয়ত সত্যি পৃথীবির সবচেয়ে অভাগা যে ওর নিজের মা ঈ ওকে হত্যা করতে চাইছে।
কিন্ত আমি যে নিরুপায়। কি করে ভুলে যাবো ওর বাবা আমার জিবনের সব শেষ করে দিয়েছি। ওর দাদার কারনেই আজ আমি আমার মায়ের আদর থেকে বঞ্চিত। ও কার পরিচয় বড় হবে। ও যখন ওর বাবার কথা জিজ্ঞাস করবে তখন আমি কি বলবো, ওর জন্ম হওয়া টা ওর বাবার কাছে একটা রিভেঞ্জ ছিল মাত্র।না, ওর কোনো অধিকার নেই এই পৃথীবির আলো দেখার। ওর পাপি বাবার পাপি সন্তানের কালকেই শেষ দিন হবে।
বাবাকে গিয়ে জানিয়ে দিলাম কালকে আমি হস্পিটাল এ যাব এভোরশান করাতে। বাবা কিছু না বলে কান্না করতে করতে রুমে চলে গেলেন। আমি পারবোনা ওই প্রতারক এর কোনো স্মৃতি আমি নিজের মাঝে ধারন করতে পারবোনা। আমি ওই লোকটা কে শুধু ঘৃন্না করি, শুধুই ঘৃন্না!
,
,
,
,

,
# ধন্যবাদ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here