তোমার পরিনীতা পর্ব ১৭+১৮

তোমার পরিনীতা – ১৭

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

দিদি সুমনের কি শরীর খারাপ করেছে?

শরীর খারাপ, নাতো। কেন বলতো?

না মানে পড়া বুঝে নিতে আসছেনা একদমই। ওদের বাড়ির মেহমানগুলো কি একেবারের জন্যই থেকে যাবে নাকি? এসেছে তো এসেছে আর যাওয়ার নামই করছেনা।

আদিত্যর কথা শুনে মনোরমা মিটিমিটি হাসলেন। তার বেশ কদিন ধরেই মনে হচ্ছে যে আদিত্য, সুমনকে পছন্দ করে এবং সেটা নিতান্তই পছন্দের তালিকায় আর নেই বরং অসম্ভব ভালো লাগায় পরিনত হয়েছে।
বকিরা যখন পড়তে বসে, আদিত্য কেবলই উসখুস করতে থাকে আর দরজার দিকে তাকায়। কিসের প্রত্যাশায় যে সে বারে বারে দরজা দেখে সেটা এখন মনোরমার কাছে দিনের আলোর মতোই স্পষ্ট।

ওদের বাড়ির মেহমান অনেক আগেই চলে গেছে আদি, সুমন এমনি আর আসছে না।

তাই নাকি? আদিত্য প্রচন্ড অবাক হলো। তাহলে পড়তে আসছে না কেন?

শ্রাবনদা তো সুমনকে আবার পড়াচ্ছে আদিত্যমামা।

মানে… আদিত্য অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। আবার পড়াচ্ছে মানে? শ্রাবণ কেন সুমনকে পড়াবে, সো তো উকিল না কি যেন একটা।

সুমনকে এতোদিন ওই শ্রাবনই পড়াতো, মাঝখানে কোন সমস্যা হয়েছিলো মনে হয়, তাই বাদ দিয়েছিলো। এখন শুনলাম শ্রাবন নাকি আবার সুমনকে পড়তে যেতে বলেছে ওর কাছে।

“ওহ.. তাহলে তো ভালই।”

মনোরমা খেয়াল করলেন আদিত্যর চোখে মুখে কেমন একটা হতাশা দোল খেয়ে গেল। সুমনকে মনোরমা যে ভালোবাসেন না তা নয়, তবে নিজের এতো উপযুক্ত ভাইয়ের জন্য একদম অনাথ চালচুলোহীন একটা মেয়েকে কারই বা পছন্দ হয়। সাথে সুমনের মামার অবস্থাও তেমন সুবিধার নয়। রামনাথ চৌধুরীর কাছে পুরো বাড়িটাই বন্ধক রাখা… অনুজটাও কবে আমেরিকা থেকে টাকা পাঠাবে আর এরা বাড়িটা ছাড়াবে কে জানে? আসলে ওই রামনাথ চৌধুরীর মতলবটা যে মোটেও সুবিধার নয়, সেটা মনোরমা বেশ আন্দাজ করতে পারে। বুড়ো মনে মনে এই বাড়িটা দখল করতে চায়, দুই ছেলের জন্য দুই বাড়ি। সেক্ষেত্রে আদিত্য, সুমনকে বিয়ে করলে তো এক কানাকড়িও পাবেনা। এরকম হলে তো মনোরমা কারও কাছে মুখই দেখাতে পারবে না, আত্মীয়- স্বজন সব ছি ছি করবে।

সুমনের তো তাহলে এবাড়ি আসার আর কোন প্রয়োজনই নেই।

ইশশ বললেই হলো… ও হচ্ছে আমার প্রানের সই। আমার সাথে দেখা না করে ও থাকতে পারবে বুঝি? আজ দুপুরেই আসবে ক্যারাম খেলতে।

সেকি তোরা ক্যারামও খেলতে পারিস ? আমি তো মনে করলাম তোরা শুধু সাপ লুডু বিশেষজ্ঞ,” আদিত্যর মুডটা দ্রুত স্বাভাবিক হয়ে এলো।

ভাল হবে না কিন্তু আদিত্যমামা

আচ্ছা আচ্ছা এই আমি থামছি। আচ্ছা এক কাজ কর… অপরাধ যখন আমি করেই ফেলেছি তখন ভুল শুধরানোর একটা ব্যবস্থা করা যাক।কাল বিকেলে তোর বান্ধবীদের নিয়ে চল নদীর পারে ঘুরে আসি। নৌকা ভ্রমন, ফুচকা, মুড়িমাখা সব হবে। আর মনোদিদি তুমিও যাবে কাল আমাদের সাথে, কোন অজুহাত খাটবে না… এই বলে দিলাম।

সত্যি আদিত্য মামা ….

হ্যা রে

কি মজা… আমার খুব আনন্দ হচ্ছে।

আচ্ছা… যতো খুশি আনন্দ কর, তবে সুমন আসলে ওকেও বলিস আমাদের সাথে যেতে।

“চিন্তা করোনাতো… নদীতে ঘুরতে যাবার কথা শুনলে সুমো সবার আগে দৌড়াবে। ”

আদিত্য, চারুর কথা শুনে যারপরনাই খুশি হলো।

………………….

“নির্ঘাত সুমোবেবি কি করছে তাই ভাবছিস,” মৌমিতা, শ্রাবণের পাশে বসতে বসতে জিজ্ঞেস করলো।

পার্টি হলটায় তখনও পুরোনো বন্ধুদের নিয়ে ছোটখাট একটা জটলা চলছে, কারো কারো সাথে পরিবারের লোকও এসেছে। মৌমিতাও অমিয়র সাথে এসেছে অনেকক্ষণ …. ওদের একসাথে দেখেই শ্রাবণ ইচ্ছে করে একপাশে সরে এসেছে, জানে মৌমিতা ওকে দেখলেই সুমোর কথা জিজ্ঞেস করতে আসবে।

“আসছে আমার সবজান্তা ম্যাডাম,” শ্রাবণ মুচকি হাসলো।

‘হাসিস না, যতো দ্রুত পারিস তোর পরানের খবরটা মেয়েটাকে জানা।”

“আচ্ছা মৌমি আমার তোকে একটা প্রশ্ন করার আছে।”

“কী…. ঝটপট বল”

“তোর কি দেখে মনে হলো যে আমি সুমোকে ভালোবাসি আই মিন তোর মতে অন্যরকম ভালেবাসা?”

“তুই কি বলতে চাইছিস, তুই বাসিস না? ”

“উত্তরটা পরে দিচ্ছি তুই আগে বল তোর এরকমটা মনে হলো কেন? ”

“শ্রাবণ তুই একটা গাধা… না না তুই হলি একটা অন্ধ গাধা… কানা ধোপার গাধা। ”

“আরে তুই চেৎতেছিস কেন, আমি তো না বলি নাই। আমি শুধু জানতে চাচ্ছি… উফফ, তুই ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করতেছিস না দোস্ত।”

“হুমমম… তার মানে তুই স্বীকার করতেছিস।”

“মৌমি আমার এখনো আসলে কনফিউশান হচ্ছে সুমো আর আমি… ”

“তোকে এবার আমি মেরে ফেলবো শয়তান… তোর কি সব মেয়েকেই একটু করে মনে ধরে? ”

“আরে ধূর তুই আমার কথা বুঝতেছিস না, আমার কথাটা আগে শোন ভালো করে। আমি স্বীকার করছি আমি সুমোকে ভালোবাসি.. খুব ভালোবাসি আর এটা আমার জন্য খুব স্বাভাবিক, তুইতো জানিস খুব ছোটবেলা থেকেই ও আমার কাছে থেকে বড় হয়েছে। কিন্তু তুই বলার পর থেকে ওকে দেখলে আমার ভিতরে আলাদা একটা পাগলামী মাথা চাড়া দিচ্ছে… কিন্তু এতে আমার ভীষন খারাপ লাগছে। মনে হচ্ছে আমি সুমোকে ঠকাচ্ছি।”

“কেন? ” মৌমিতা অবাক হয়ে জানতে চাইলো।

“সুমো আমাকে নিজের দাদার মতো দেখে,” শ্রাবণ বিষন্ন সুরে বললো।

“সেতো তুই ও ওকে নিজের ছোট বোনের মতো দেখিস,” মৌমি মুখ টিপে হাসলো। শ্রাবণের দুরবস্থা দেখে ওর ভীষন মজা লাগছে, বেচারা।
তবে মৌমি নিশ্চিত যে সুমনও, শ্রাবণকে একইভাবে ভালোবাসে… কারন সুমনের চোখে হঠাৎ হঠাৎ ঈর্ষার আগুন জ্বলতে দেখেছে মৌমি, তবে ভুল জায়গায়।

সুমন মনে করে মৌমিতা, শ্রাবণের প্রতি ইন্টারেস্টেড। লাবণ্যর ব্যাপারটা সুমন জানেনা। সুমনের অসুখের সময় মৌমি ব্যাপারটা ঠিক ঠিক আঁচ করতে পেরেছে। ও শ্রাবণের সাথে আড্ডা দিতে থাকলে সুমনের চেহারায় একটা আলাদা বিষন্নতা ফুটে উঠতো, মৌমিতার উপস্থিতি যে সুমনের পছন্দ নয় স্পষ্ট বোঝা যেত। তবে মেয়েটা নিজেকে ভাল সামলে নিতে জানে। আসলে ঈর্ষা জিনিসটা খারাপ হলেও সৃষ্টির এক অনবদ্য অংশ… অনুভূতিটা নিসন্দেহে ভালোবাসার লক্ষনগুলোর মধ্যে অন্যতম জায়গা দখল করে আছে শতাব্দীর পর শতাব্দী।

“মৌমি তুই আবার আমাকে নিয়ে মজা করছিস।”

“বারে মজা করলাম কোথায়? দেখ যতোই তুই বলিস না কেন নিজের আপন বোন আর পাতানো বোনের সাথে সম্পর্ক কখনো এক নয়, তুই অযথা এটা নিয়ে দুশ্চিন্তা করে ব্যাপারটা আরও কমপ্লিকেটেড করিস না। ভালোবাসিস এটা মেনে নিয়ে রাস্তায় নেমে পড়। মেয়েটা কিন্তু অনাথ আর অসহায়।.. তারমানে তোর ফ্যামিলির স্ট্যাটাসের সাথে কোনভাবেই যায় না। ওকে পেতে হলে তোকে ঘরে আর বাইরে অনেকের সাথেই যুদ্ধ করতে হবে, নিজেকে সেভাবে আগে তৈরী কর।”

মৌমিতা উঠে চলে যাওয়ার পরও কথাটা শ্রাবণের মাথায় অনেকটা সময় ধরে ঘুরতে থাকলো। মৌমির কথাটা খুব সত্যি, সুমোকে পেতে হলে সবচেয়ে বড় বাঁধা হলো সুমোর অবস্থান। অনাথ, গরীব একটা মেয়েকে দু’টুকরো রুটি দেওয়া আর সারাজীবনের জন্য নিজের পরিবারে সামিল করা এক না।

কিন্তু শ্রাবণের কাছে সুমনের কোন বিকল্প নেই। এতোদিন শ্রাবনের মনে সুমনের দিক থেকে কোন নিরাপত্তাহীনতা ছিলনা। সুমনের মনের রাজ্যে শ্রাবণ একাই সিংহাসনের অধীরাজ, সেটা কেউ মানুক বা না মানুক। অবচেতনভাবেই সময়ের সাথে সাথে সুমনের উপর শ্রাবণের অধিকার উত্তরোত্তর কেবল বেড়েই চলেছে, অবিচ্ছেদ্য ভাবে ভালোবাসাটাও। কিন্তু সেই ভালোবাসাই আজ বাড়তে বাড়তে যে কোথায় এসে ঠেকেছে, সেই সীমানাটা না প্রেমিক যুগল অনুধাবন করতে পেরেছে আর না তাদের গুরুজনেরা।

……………………….

সুমন আয়নায় নিজের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মরে যেতে লাগলো। প্রীতি, মামীর কাছে চেয়ে একজোড়া বড় ঝুমকা এনে দিয়েছে ওকে বেড়াতে যাবে বলে। সেটা পরে একেতো সুমনের কানদুটো লাল হচ্ছে কিন্তু তার চাইতেও বেশি লাল হচ্ছে ওর গাল। শ্রাবনদার ঘরে যেয়ে কটা টাকা আনতে হবে, কিন্তু এখন ওই ঘরে এভাবে সেজেগুজে যেতে সুমনের বড্ড লজ্জা লাগছে। একেতো এতো ঝোলানো কানের দুল ও আগে কখনই পরেনি, সাথে আবার গাঢ় নীল শাড়ি আর ম্যাচিং করে চুড়ি, হালকা একটু লিপস্টিকও দিয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে জড়সর একটা কাঠের পুতুলের মতো হয়ে দাড়িয়ে রইলো সুমন, শ্রাবনের ঘরের দরজার কাছে গিয়ে।

শ্রাবণ কোর্ট থেকে ফেরা মাত্রই সোফায় গা টা একটু এলিয়ে দিয়েছিল, হঠাৎ অনেকগুলো চুড়ির ধাক্কাধাক্কির শব্দ শুনতেই সোজা সামনে তাকালো,” কি ব্যাপার ওখানে দাড়ানো কেন? ”

সুমনের মনে হলো ওর পা দুটো সুপার গ্লু দিয়ে মেঝের সাথে আটকে গেছে।

“সুমো….”

“আসছি ”

পায়ের পাতার দিকে তাকিয়ে কোন রকমে ঘরের একপাশ থেকে আরেকপাশে পৌছাল সুমন। ভিতরে ভিতরে ততক্ষনে টেনশনে ঘেমে একাকার হয়ে গেছে ও।

শ্রাবণের মনে হলো ও শ্বাস নিতে ভুলে গেছে, চোখের পাতা জায়গায় আটকে গেছে। ওর সামনে দিয়ে যে হেটে বেড়াচ্ছে সেটা কি সত্যি সত্যি সুমো! নীল সমুদ্রও কি এতোটা প্রানবন্ত হয়ে কাছে ডাকে?

সুমন, শ্রাবণের দিকে না তাকিয়েও বেশ বুঝতে পারছিলো যে শ্রাবন একভাবে ওকে দেখছে। লজ্জায় আরক্ত হয়ে সুমনের পিঠটা সেই দৃষ্টির উত্তাপে ভীষন ভাবে পুড়ছিল কিন্তু টাকা নিয়ে যাওয়ার সময় একটা কথা তো বলতে হবে। অনেকটা সাহস একসাথে করে তাই টাকার নোটটা সামনে ধরলো সুমন।

“পাঁচশ টাকা নিলাম ”

“হমম,” শ্রাবণের চোখদুটো তখনও সুমনের কপালের ছোট্ট টিপটার উপর আটকে আছে। কালো টিপটার চারপাশটা হঠাৎ কি ভীষন আদরের মনে হলো শ্রাবণের, কপালটা ছুঁতে চাওয়ার ইচ্ছাটা দুর্দমনীয় হয়ে উঠছে।

“সামনের সপ্তাহের কলেজের টিফিনের টাকাটা এখন নিলাম, তখন আর চাইবো না,” সুমন অস্বস্তির সাথে বললো।

“হমম ”

শ্রাবণ তখন সুমনের পা থেকে মাথা অব্দি সাজের চুলচেরা পর্যবেক্ষনে ব্যাস্ত।

“শ্রাবনদা তুমি তো ভাল করে আমার কোন কথা শুনছই না, কেবল আন্দাজে হমম হমম করছো।”
সুমন অধৈর্য হয়ে বললো।

সুমনের কথায় কাজ হলো, সাজগোজ দেখা থেকে বিরতি নিয়ে শ্রাবণ এবার সুমনের চোখ মুখ দেখতে লাগলো।

“শ্রাবনদা ”

“হ্যা কি বলছিলি?”

“টাকাটা নিলাম’

“সে তো বললি একবার ”

“সেটাই বলছিলাম।”

“হমম ”

“আমি একটু বেড়াতে যাবো ”

“তাই ভালতো ”

“আসতে সন্ধ্যা হবে শ্রাবনদা ”

“আচ্ছা যা। ”

সুমন অনুমতি পাওয়া মাত্রই তাড়াতাড়ি আলমারিটা আটকে দিয়ে ঘর থেকে বের হতে যাচ্ছিল কিন্তু শ্রাবণের ডাকে আবার ফিরে আসতে বাধ্য হলো। সুমনের মনে কু ডাকলো।
ওর যাওয়া কি আটকে গেল? শ্রাবনদা অনুমতি না দিলে সুমন কিছুতেই চারুদের সাথে বেড়াতে যেতে পারবেনা, কেবল মামা – মামীর অনুমতিই ওর জন্য যথেষ্ট নয়,ও জানে।

শ্রাবণ যদিও বা আর একটু সময় দেখার জন্যই সুমনকে পিছু ডেকেছিলো কিন্তু সুমনের জিজ্ঞাসু দৃষ্টি ওকে মনে করিয়ে দিল যে সুমনকে ওর কিছু একটা প্রশ্ন করা দরকার।

“তোরা কোথায় যাচ্ছিস রে সুমো?”

এইবার সুমনের হাত পা কাঁপতে লাগলো। আজ সকালের পড়াগুলো ওর ভালো করে পড়া হয়নি এখনও, তার উপর চারুদের সাথে ঘুরতে যাচ্ছে শুনলে শ্রাবনদা রেগে না যায়।

“কি রে বলছিস না কেন? কোনও বান্ধবীর জন্মদিন বুঝি? ” শ্রাবণ গা ঝাড়া দিয়ে উঠে দাড়াল। সামনের নীল পাখিটা ওকে বড্ড যন্ত্রনা দিচ্ছে।

“চারুদের সাথে নদীতে ঘুরতে যাবো শ্রাবনদা… আদিত্যবাবু আর মনোরমা মাসিও আমাদের সাথে যাচ্ছেন,” মিনমিন করে বললো সুমন।

এইটুকুই যথেষ্ট ছিল.…. শ্রাবণের ফুরাফুরে মেজাজটাকে নষ্ট করার জন্য।

আদিত্যবাবু আর মনোরমা মাসিও যাচ্ছেন…. সুমনের কথাটা শ্রাবণের কানে বিষফোঁড়ার মতো যন্ত্রনা দিতে লাগলো।

“বাহ… ভালো! তাইতো বলি সুমো ম্যাডাম যাচ্ছে কোথায় যে এতো সাজগোজ? শাড়ি, চুড়ি,কানের দুল সব একদম ম্যাচিং। ”

সুমনের চোখ দিয়ে পানি চলে আসলো। ও একদমই পরতে চায়নি, কিন্তু মনোরমা মাসি জোর করেই এই শাড়িটা ওকে পরতে দিল। তবে চুড়িগুলো ওর নিজের।

“আ..মি, ” সুমন শাড়ি পরার কারন ব্যাখা করতে যাচ্ছিল কিন্তু তার আগেই শ্রাবণ ট্রাফিক পুলিশের মতো ওকে থামতে বাধ্য করলো।

” এখান থেকে যা সুমন.. আমি কাপড় পাল্টাবো,” শ্রাবণ হটাত গম্ভীর হয়ে গেল।

“আজকেই শুধু যাই আর কোনদিন যাব না,” সুমন করুন সুরে জানতে চাইলো।

“সেটা তোমার নিজের ব্যাপার, যথেষ্ট বড় হয়ে গিয়েছ বোঝাই যাচ্ছে… আমার মতামত দেয়া এখানে মূল্যহীন।”

শ্রাবণের কথায় সুমনের বেড়াতে যাওয়ার শখ সম্পূর্ণ উবে গেল। শ্রাবন যে ভীষন রকমের রাগ হয়েছে সুমনের সেটা বুঝতে বিন্দুমাত্র বেগ পেতে হচ্ছেনা। শ্রাবনদা ওকে শুধু তুমি না, সাথে সুমন বলেও ডাকছে…. শ্রাবনদা রাগ হয়ে গেলে এটা হলো ঝড়ের প্রথম ঝাপটা, সুনামি আসা এখনও বাকি।

চলবে……
তোমার পরিনীতা – ১৮

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

“আবার কি হলো… তোমার ছোটছেলে এরকম ষাঁড়ের মতো চেঁচাচ্ছে কেন মা? ” শান্তনু রুটি মুখে দিতে দিতে জিজ্ঞেস করলো।

শান্তনুর প্রশ্নে নির্মলা স্বল্প সময়ের জন্য ভ্রু কোঁচকালেন, তারপর আবার যা করছিলেন তাতে মনযোগ দিলেন।

মায়ের কাছ থেকে কোন রকম উত্তর না পেয়ে শান্তনু নিজের খাওয়ায় মনযোগ দিলো। ওকে আজ আবার কাজ সেরে একবার শ্বশুরবাড়ি মুখো ছুটতে হবে। বউ নাকি তার কাল থেকে গাল ফুলিয়ে বসে আছে না খেয়ে। শান্তনু নিজে নিজেই মাথা নাড়ছিল আর খাচ্ছিল। বৌটা ওর কিচ্ছু বুঝতে চায়না , যখন তখন বাচ্চা হবে এমন সময় অভিমান করে খাওয়া বাদ দেয় কেউ…. শেষে বাচ্চার কিছু হলে?

সুমন সিড়ি ভেঙ্গে উপরে উঠতে গিয়ে মাঝ সিড়িতে একটু থামলো। মাত্র গরম ভাত আলুর ভর্তা দিয়ে খেয়ে ওর কেমন দম লেগে আসছে। অনেকদিন পর আজ শুকনো মরিচ পুড়িয়ে আলু ভর্তা করা হয়েছিলো, সুমন লোভ সামলাতে পারেনি। বেশি খেয়ে এখন কেমন পেট মোড়াচ্ছে। একহাতে আমভর্তার বাটি, অন্যহাতে বইখাতা নিয়ে বাকি পথটা আসতে বেশ কষ্ট হতে লাগলো সুমনের।

সুমন, শ্রাবনের ঘরের কাছাকাছি যেতেই গুরুগম্ভীর সুরে বাজ পড়ার শব্দ হলো ওর আশেপাশেই। খোলা বারান্দা দিয়ে মুখ বাড়িয়ে বাইরের আকাশটাকে ভালো করে পরীক্ষা করলো সুমন,নাহ আকাশ তো ঝকঝকে পরিষ্কার, তাহলে?

পরক্ষনেই সুমন দেখতে পেল বাড়ির পুরানো কাজের লোকে বলাইদা প্রায় দৌড়ে বের হয়ে যাচ্ছে শ্রাবনদার ঘর থেকে। বলাইদার হাতে পরিচিত অপরিচিত অনেক রঙের প্যাকেট।

“কি ব্যাপার… এগুলো কোথায় নিয়ে যাচ্ছ বলাইদা?! ”

“সুমন দিদিমনি… ছোটদাদা বাবু এগুলো দিয়ে বললেন তোর বাচ্চাদের জন্য নিয়ে যা বলাই।”

“তাই বুঝি, খুব ভাল কথা। আচ্ছা, এখান থেকে একটা চকলেট আমি নেব?.. আমার খুব পছন্দ এই চকলেট গুলো,” মনে মনে কারো পিন্ডি চটকালো সুমন। ওর চকলেটগুলো সব মানুষকে দিয়ে দিচ্ছে… হুহ।

“একটা কেন দুইটা নাও দিদিমনি, এখানে অনেকগুলো চকলেট আছে। ”

“না বলাইদা আমার একটা হলেই হবে।”

শ্রাবণের ঘরের দরজায় এসে আবার থমকে দাড়াতে হলো সুমনকে। একমুঠো বেলি ফুল বড্ড অবহলায় মেঝেতে ছিটিয়ে পড়ে আছে। দিনের প্রথম ঝাপটাটা আজ এগুলোর উপর দিয়েই গিয়েছে বুঝতে পেরে নিচে ঝুঁকে পড়ে
ফুলগুলো কোচড়ে বাঁধল সুমন। খুবভোরে ঘুম থেকে উঠে ঘরের সামনের বেলিগাছটা থেকে ফুলগুলো তুলেছিল সুমন, তারপর চুপিসারে শ্রাবণের পড়ার টেবিলের কোনায় রেখে গিয়েছিলো। বেলিফুল খুব পছন্দ শ্রাবণের, সুমন মনে মনে আশা করেছিল ফুলগুলো দেখে হয়তো কালকের অপরাধের জন্য মাফ পেয়ে যাবে ও। কিন্তু ফুলগুলোর অবস্থা বলে দিচ্ছে এবার খুব সহজে শ্রাবণদার কাছ থেকে মাফ পাবেনা সুমন।

ঘরে ঢুকবে কি ঢুকবেনা ভাবার আগেই শ্রাবণের চোখজোড়া সুমনের উপর পড়লো। সুমন স্পষ্ট দেখতে পেল শ্রাবনের চোয়াল আগের চেয়ে আরো শক্ত হয়ে এটে বসলো।

“আমি কি থাকব না চলে যাব?”

“কেন, আদিত্য বাবুর সাথে অ্যাপয়েনমেন্ট করা আছে বুঝি? নাকি নিজের চেহারাটা ও বাড়িতে না দেখালে শান্তি হয় না।”

”না তো…. ” সুমন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো। ও কখন বললো যে ও চারুদের বাড়ি যাবে?

“তাহলে পড়ার সময় বারবার চলে যাব কিনা জিজ্ঞেস করছিস কেন? মনটা ও বাড়িতে যাবার জন্য বড় উচটান হয়ে থাকে না?” বুকের ভিতরের বিষটুকু বাইরে বের হবার জন্য পথ খুঁজছিল, সুমনকে সামনে পেয়ে তাই আর অপেক্ষা করলোনা শ্রাবণ… তিক্ত কথাগুলো ছুড়ে দিয়ে নিজের বুকের জ্বালা মিটালো।

সুমন উত্তর না দিয়ে গাল ফুলালো। শ্রাবণদার যতো আবোল তাবোল কথা। আদিত্যবাবুর সাথে ওর আবার কিসের অ্যাপয়নমেন্ট ? সুমন তো এখন পড়েও না ওনার কাছে।

“মুখ ফুলাবিনা একদম… ভারি সুন্দরী ভাবিস নিজেকে না? দূর থেকে আস্ত একটা কঙ্কালের মতো লাগে তোকে দেখতে। তার উপর উনি আবার শাড়ি প্যাচিয়েছিলেন। এখনি এতো বড়ো হওনি যে তোমাকে শাড়ি পরে বেড়াতে যেতে হবে। সারাদিন শুধু নদীর পাড়ের হাওয়া খেয়ে বেড়ানো। এরকম হাওয়া খেয়ে, নেচে গেয়ে বেড়ালেই যদি মানুষ ক্যারিয়ার বানাতে পারতো তাহলে নদীর পাড়ের সব মাঝি আর জেলেরা সব চেয়ে সাকসেসফুল লাইফ লিড করতো।”

এরপর শ্রাবন খাতাটা টেনে নিয়ে দেখতে লাগল কোথায় কোথায় ভুল করেছে সুমন। যেখানে একটু আধটু ভুল চোখে পড়লো সেখানটাকেই এমন বিচ্ছিড়ি ভাবে গোল দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হচ্ছিলো যে সুমনের নিজের খাতাটা দেখে প্রথম প্রথম খুব মায়াই লাগছিল। গোল তো নয় যেন যতীন ঘোষের দোকানের পূজোর মিষ্টি, এক একটা ইয়া বড় বড় সাইজ।

কিন্তু কিছু সময় পরে সুমনের খুব ইচ্ছে হচ্ছিল খাতাটা ছিড়ে কুচিকুচি করে। কিন্তু ওরকম কিছু করলে সেই শাস্তির যা ফলাফল হবে, তা হবে ওর ধারনার বাইরে। তাই নিঃশব্দে একটার পর একটা বক্রোক্তি হজম করতে লাগলো সুমন দাঁতে দাঁত চেপে। এর শোধতো সুমন তুলবে এক দিন না একদিন…

শ্রাবণের এক একবার বড্ড ইচ্ছে হচ্ছিল, কাল কোন চুলোয় মহারানী ঘুরে বেড়ালেন সেটা একটু শুনতে। কিন্তু যতোবার গত দিনের সুমোর শাড়ি পড়া চেহারাটা মনে পড়ছিল ততবার নতুন করে জ্বালা ধরছিল ওর… তাই জিজ্ঞেস করি করি করেও কিছুই শোনা হলোনা শ্রাবণের।

……………………………..

সন্ধ্যার পরে নিজের ঘরের পিছনের টানা বারান্দায় পায়চারি করছিল শ্রাবণ, এমন সময় হঠাৎ করেই সামনের বাড়ির রুমা বৌদির সাথে দেখা হলো ওর।

“ভালো আছো ঠাকুরপো? ”

রুমা সাজগোছ করতে বেশ পছন্দ করে। সব সময়ই তার গলায় সোনার মোটা একটা চেইন থাকে, ব্যবাসায়ী স্বামী তার সোনা কিনতে কখনো না করে না। কিন্তু শ্রাবণকে একা বারান্দায় পায়চারি করতে দেখে রুমা তাড়াতাড়ি আলমারি খুলে আরো একটা নতুন সোনার চেইন পরে এসেছিল। সেটাই সে বেশ কায়দা করে আঙ্গুলের মাথায় ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে শ্রাবণের সাথে কথা বলার সময় প্যাচাচ্ছিল।

শ্রাবণ হেসে সায় দিল, ” অনি ভালো আছে তো বৌদি?”

অনিরুদ্ধ , রুমাবৌদি আর অরুনদার একমাত্র ছেলে, সে এবার ক্লাস ওয়ানে পড়ে। শ্রাবণ আদর করে ওকে অনি বলে ডাকে।

শ্রাবণ, অনিরুদ্ধর কথা জিজ্ঞেস করায় কতটা খুশি হলেন রুমা বৌদি ঠিক বোঝা গেলনা তবে তার ভাবভঙ্গি দেখে শ্রাবণের মনে হলো রুমাবৌদি ওর সাথে আরও কিছু বলতে আগ্রহী।

” অনু ভাল আছে। ও তোমার দাদার সাথে পিসির বাড়ি বেড়াতে গিয়েছে… ফিরতে রাত হবে, ” রুমার চোখের ভাষায় কি যেন একটা বলার তাড়না আছে, শ্রাবণ সযত্নে সেটা এড়িয়ে গেল। শ্রাবন ভীষন রকম অবাক হবার ভান করলো।

“সেকি তবে আপনি যাননি কেন?”

“আমি! আমি কি করে যাই বলো, আমার কতো কাজ পড়ে আছে।”

“তাও ঠিক… এতো কাজ বৌদি আপনাকে একা একা করতে হয়, আমার তো মাঝে মাঝে মনে হয় অরুনদা কে বলি আপনার জন্য আরেকটা সাহায্যের লোক আনতে।”

“নাগো ঠাকুরপো কাজের লোকের আজকাল বড় ডিমান্ড। এতো দাম হাকায় যে তা দিয়ে মানুষ অনায়াসে দুটো বউ পালতে পারবে।”

রুমাবৌদির কথায় শ্রাবণের ভীষন হাসি পেল। ওনার মতো দুটো বউ পালতে গেলে অরুনদা নির্ঘাত আত্মঘাতী হবে।

“না, না বৌদি কাজের লোক আনলে কোন কাজ হবেনা। কাজের লোকের হাতের কাজ একদমই পরিস্কার হয়না। আমি বরং বলি কি দাদাকে আরেকটা বিয়ে দিয়ে দিন, তাহলে সাপও মরলো আবার লাঠিও ভাঙ্গলো না।”

” কি সব আবোল তাবোল বলছো তুমি ঠাকুরপো… তোমার কি মাথা খারাপ হলো? ” রুমা বিস্মিত হয়ে জানতে চাইলো।

“আপনি আমার কথা বুঝতে পারেননি বৌদি। অরুনদা আরেকটা বৌ আনলে সেতো আপনার মতোই নিজের সংসার ভেবে এই সংসারটাকে আগলে রাখবে। তখন আপনার বেনিফিট হলো আপনার উপর এতো কাজের চাপও থাকলনা আর আপনার অবসরও মিললো। ”

কিন্তু শ্রাবনের কথায় এবার বোধহয় প্রচ্ছন্ন কৌতুকের আভাস পেল রুমা। তাই মুখ ঝামটা দিয়ে বলে উঠলো,”হয়েছে হয়েছে থামো ঠাকুরপো … তোমাদের মতো অত বড় বড় পাশ দেইনি বলে আমাকে কথা শোনাচ্ছ তো, কিন্তু ওদিকে তোমার গুনধর সুমো যে বড় বড় পাশ দিয়ে তোমার আলমারি একেবারে ধুয়ে মুছে সাফ করে দিচ্ছে সে খবর রাখো তো? এক টাকা নয়, দুই টাকা নয় পুরো পাঁচশ টাকার নোট সে মানুষকে বিলি করে বেড়ায় নদীর ঘাটে উড়ানোর জন্য.. বলি ঔ মেয়ে কত বড় বুকের পাটা নিয়ে জন্মেছে বাপরে বাপ! এক্কেবারে ডাকাত।”

“ও টাকাটা আমার কাছে সুমো বলেই নিয়েছে বৌদি,” শ্রাবণ মৃদু হাসলো, ওর টাকার চিন্তায় আজকাল রুমাবৌদির তাহলে ঘুম হচ্ছে না।

“তাতো নিশ্চই, কিন্তু ওর মতো মানুষের কি এতো ফুটানি মানায় তুমিই বলো? তারপরও যদি সুমন নিজে সেখানে যেত… তাহলে না হয় একটা কথা ছিল। কিন্তু সে তো পরের টাকায় পোদ্দারি করে নিজেকে মহারানী ভাবে। তোমাকে বলে রাখছি ঠাকুরপো একটু রাশ টেনে ধরো সুমনের, আদর করো বলে একদম মাথায় তুলো না… শেষকালে শ্বশুরবাড়ি যেয়ে মোটে তাল সামলাতে পারবেনা।”

রুমাবৌদির কথার পুরোটা শ্রাবণের কান ঢুকলো ঠিকই কিন্তু সবচেয়ে আকর্ষনীয় যেটা মনে হলো তা হলো সুমন কাল নদীতে ঘুরতে যায়নি। তারমানে সুমো কাল ওর রাগ করা দেখে আদিত্যর সাথে ঘুরতে যায়নি! মুখটা সাথে সাথে উজ্জ্বল হয়ে গেল শ্রাবণের। উহ! কাল থেকে তাহলে খামোখাই অশান্তিতে ভুগছিল ও।
কিন্তু বৌদি অনেক ভুলভাল তথ্যও দেয় মাঝেমাঝে, শ্রাবন তাই আর সময় নষ্ট না করে হু হা বলে দ্রুত ওখান থেকে কেটে পড়লো।

সুমনের মোবাইলে কল করতেই ওপাশ থেকে জানান দিল যে মোবাইলটা বর্তমানে সংযোগ দেওয়া সম্ভব না। ওদিকে সময় পার হয়ে যাচ্ছে হাজিরা দেয়ার… কিন্তু সুমনের কোন হদিশও পাওয়া যাচ্ছে না। শেষমেষ রাজুকে পাঠালো শ্রাবন, সুমনের খবর নিয়ে আসতে।

” শ্রাবণদা… ”
রাজুর সাথে সুমনের বদলে প্রীতি এসে দাড়াল।

“কি ব্যাপাররে প্রীতি… সুমো কোথায়? ”

“সুমনদি খুব ব্যাস্ত, বাবার কোমড়ের ব্যাথাটা আবার বেড়েছে… সুমনদি সেই বিকেল থেকে বাবাকে স্যাক দিচ্ছে।”

“ইশশ.. সমীর মামার ব্যাথারা আবার বেড়েছে না? তাহলে তো আজ আর আসতে পারবেনা সুমো। ”

“না শ্রাবনদা,” প্রীতি মন খারাপ করে জানাল। “সুমনদি বলতে বললো আজ আলমারির কোন টাকা খরচ হয়নি।”

“হমম… ঠিকআছে, আচ্ছা প্রীতি তোরা সেদিন নদীতে কোথায় কোথায় ঘুরলিরে? অনেকদূর গিয়েছিলি বুঝি?”

নদীতে ঘুরতে যাবার কথা শুনে প্রীতির চেহারাটা খুশি খুশি হয়ে গেল, “হ্যা… শ্রাবনদা। নদীর ওপারে গিয়ে আমরা অনেক মজা করেছি জানো। চটপটি, ফুচকা, ঝালমুড়ি মাখা সব খেয়েছি। চারুদিতো ফুচকা দুই প্লেট খেল। কিন্তু সুমনদির কপাল খারাপ, পেটব্যাথায় যেতেই পারলনা, মাঝখান থেকে তোমার টাকাগুলো খরচ হয়ে গেল।”

“হমম… আদিত্যবাবু সঙ্গে ছিলো তোদের?”
শ্রাবণের এখন আর টাকার দুঃখ নেই। সুমো যে আদিত্যর সাথে যায়নি এই ওর জন্য ঢের খুশির সংবাদ।

“হ্যা… উনি, মনোরমা মাসি, মা আমরা সব্বাই খুব মজা করেছি গো শ্রাবণদা।”

“মঞ্জুমামীও গিয়েছিল! ”

“হ্যাঁ, কেবল সুমনদি যায়নি, বাকি সবাই গিয়েছিল। আমরা যখন বাড়ি ফিরলাম ততক্ষণে তো বাবাও অফিস থেকে চলে এসেছিল,” কথাগুলো বলার সময় প্রীতির চোখদুটো আনন্দে জ্বল জ্বল করছিল।

“আচ্ছা তুই এখন যা। সুমোকে বলিস কাল আমি ওর পড়া মুখস্থ ধরবো না। তবে সুযোগ পেলে একবার যেন ও পড়তে আসে।”

“আচ্ছা আমি সুমনদিকে বলে দিবোখন … এখন
যাই শ্রাবণদা।”

“হমম,” শ্রাবণ বললো।

যাক প্রীতির কথা শুনে এটুকু নিশ্চিত হওয়া গেল যে সুমো কাল চারুদের সাথে সত্যিই বেড়াতে যায়নি। মনে মনে রুমাবৌদিকেও একটা ধন্যবাদ দিল শ্রাবণ। বৌদি বললো বলেই না প্রীতিকে জিজ্ঞেস করলো শ্রাবণ। কাল বিকেল থেকে বড্ড যন্ত্রনা হচ্ছিল ওর, সুমোর ওরকম সাজগোজের বহর দেখে। এতোক্ষনে অশান্ত মনটা ধীরে ধীরে শান্ত হয়ে আসছে শ্রাবনের।

“নাহ… অযথাই বড্ড বেশি বকাবকি করলাম মেয়েটাকে, একদম উচিত হয়নি। ”

চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here