তোমার পরিনীতা পর্ব ৩১+৩২

তোমার পরিনীতা -৩১

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

শ্রাবনের খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো সুমোকে নিয়ে যায় সাথে করে কিন্তু চারপাশের অবস্থাটা এখন এমন যে ওর মন চাইলেও ও সেটা করতে পারছে না।

“আমার লতার একটি মুকুল

ভুলিয়া তুলিয়া রেখো

তোমার অলক বন্ধনে

আমার স্মরণ শুভ সিন্দুরে

একটি বিন্দু এঁকো

তোমার ললাট চন্দনে ”

সুমন বড় কষ্টে ঘাড় নিচু করে কাজ করছে। আসলে মাথা তোলার সাহসই ও পাচ্ছে না, পাছে শ্রাবনদার কাছে ধরা খেয়ে যায় যদি।

“তোর গুছানো হলো সুমো… হলে এদিকে একটু আয়।”

সুমন, শ্রাবণের শেষ দুটো পাঞ্জাবি ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়ে চেইন টানলো।

“এই তো শেষ, তোমার আর কিছু নেয়ার থাকলে এক্ষুণি দাও।”

” আছে তো কিন্তু তুই তো দিচ্ছিস না অনুমতি… আমি কতো করে বলছি। ”

শ্রাবণের শেষ কথাটুকু যেন কেবল কথা নয়, আর্তি। সুমনের মনটা হাহাকার করে উঠলো, কিন্তু সুমনের যে হাত পা বাধা…. মামীর আদেশ উপেক্ষা করার মতো মন যে ওর আজও হয়নি। আর শ্রাবণের পারিপার্শ্বিক অবস্থাও তো প্রায় একই রকম।

দুজনেই ভরা বর্ষার জলে দুলতে থাকা দিক চিহ্ন নৌকার মতোই দিশাহীন। অনেক কিছুই ইচ্ছে হচ্ছে অথচ কিছুই করা যাচ্ছে না।

সুমনের চোখের পানি গুলো আবার উপচে আসতে চাইলো। শ্রাবন যতোবার এই কথাগুলো বলছে ওর চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে হচ্ছে। কেন মানুষ এতো রকম বাঁধনে বাঁধা? কেন চাইলেই সবকিছুকে উপেক্ষা করা যায় না?

“সুমো…… ”

শ্রাবণের স্বরে আবেগের ঢেউ খেলা করছে। সুমন স্পষ্ট সেখানে ওর হৃদয় ভাঙ্গার আওয়াজ পায়।

“এইতো শুনছি….. ” নিভু নিভু স্বরে উত্তর দেয় সুমন।

“তুই একটু জেদ ধরলেই হতো কিন্তু ”

সুমন এবার সত্যি হাসলো। জেদ! জেদ কি জীবনে কখনো ও সত্যি সত্যি করেছে? তবে আশকারা পেয়ে যেটুক হইচই ও করে তাও কেবলি এই মানুষটার সাথেই। দ্বিতীয় কারো সাথে জেদ ও এ জীবনে করেনি… আর না করতে চায়।

” কি হলো তুই হাসছিস কেন? আমাকে কি তোর সার্কাসের ভাঁড় মনে হচ্ছে? ” গোমড়ামুখে বলে উঠে শ্রাবন।

“মোটেও না, আমি হাসছি অন্য কারনে।”

” কি কারনে… আমি চলে যাচ্ছি সেই খাুশিতে, ইচ্ছেমতো উড়ে বেড়াতে পারবি সেই খুশিতে? যতোইচ্ছে ঘোর কিন্তু আমি আসতেই তোর পাখাদুটো কেটে আমার কাছে রেখে দিবো,তখন যতো ওড়াওড়ি সব এই খানে করতে হব… আজীবন।”

শ্রাবন আঙ্গুল দিয়ে নিজের বুকের দিকের দিকে নির্দেশ করতেই সুমনের বাঁধ ভাঙ্গলো, প্রায় উড়ে গিয়ে ঝাপিয়ে পড়লো শ্রাবণের দুই বাহুর বলয়ে। ওতো এক্ষুনি এখানে বন্দী হয়ে থাকতে চায়… আজীবনের জন্য, উড়াউড়ি করে ও যে ভীষন ক্লান্ত।

” কি হলো আমার আকাশ বালা কাঁদে কেন? ”

” তুমি প্রতিদিন আমায় কাঁদাও কেন? ”

সুমনের ঠোঁট দুটো অভিমানে ফুলে ওঠে। এ এক দারুন উপভোগ্য জিনিস শ্রাবনের কাছে। মনে হয় এই অভিমানী চোখ দুটো শুধুই ওর, এই অভিমানো ওর… এই ফুলে ওঠা ঠোঁট দুটো ওর। লাল জামরুল রঙের ঠোঁট দুটো দখলে নেবার জন্য এবার মরিয়া হয় শ্রাবন।

“আমাকে প্রতিদিন একবার করে ফোন দিবে বলো।”

আশ্বাস চায় সুমন। কপালটা তখনও শ্রাবনের বুকের সাথে ঠেকে আছে, শ্বাস তখনও কাঁপা কাঁপা।

” প্রতিদিন! দিনে দু’বার তিনবার দিবো দেখিস। এখন কি আর সেই আগের আমল আছে নাকি যে চিঠি আর তার করে বসে থাকবো। দেখা যাবে আমার ফোনের যন্ত্রনায় উল্টো তুই বিরক্ত হয়ে যাবি,” শ্রাবন নিজের রসিকতাতেই হেসে ফেলে।

শ্রাবণের কথাগুলো সুমনের জন্য টনিকের কাজ করলো। তাইতো এখন তো আর সেই এক মাস ধরে চিঠির অপেক্ষা করার সময় নেই। চাইলেই রাত দুপুরে ফোন করা যায় যখন তখন, তাও আবার ভিডিও কল…. কত মানুষ তো আবার লং ডিসটেন্স রিলেশনশীপও চালিয়ে যাচ্ছে এভাবে।

সুমনের মুখটা উজ্জ্বল হয়ে উঠতে দেখে শ্রাবণের মনটাও শান্ত হয়ে আসে। এই মুখটা বিষন্ন দেখলে ওর পাগল পাগল লাগে, মনে হয় এক চুটকিতে সব আলো এনে দেয় রাজকুমারীর পায়ে।

আসলে এখন সবচেয়ে ভালো হতো সুমোকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যেতে পারলে কিন্তু কপালের ফের তাই এতো সুন্দর একটা সুযোগ পাওয়া সত্বেও ও সেটা কাজে লাগাতে পারলনা। নিজের উপরই সব চেয়ে বেশি রাগ হচ্ছিলো শ্রাবণের।

“আচ্ছা তোর জন্য কি আনবো বলে ফেল ফটাফট। যাবার পর থেকে একটু একটু করে সেগুলো কিনে ফেলবো,” সুমনের চুলে নাকটা ডুবিয়ে দেয় শ্রাবন, অনেকগুলো দিন এই জিনিস খুব মিস করবে ও, তাই যতোটা পারে স্মৃতির পরতে জমিয়ে নিতে চাচ্ছে।

“জানিনা… কিচ্ছু চাই না, শুধু তুমি তাড়াতাড়ি চলে এসো,” সুমন চোখ দুটো লাল করে বলে, আবার চোখের জলের হাট বসেছে সেখানে।

” আসবো মাই সুইট লেডি, মার ডাক্তার দেখানো শেষ হলেই এ বাহানা ও বাহানা দিয়ে চলে আসবো। তোকে ছাড়া দূরে গিয়ে আমারো বেশিদিন থাকতে ইচ্ছে করবেনা… আমি এখনি বেশ বুঝতে পারছি। ”

এয়ারপোর্টে শ্রাবন আর নির্মলাকে যতক্ষণ কাচের দেয়ালের এপাশ থেকে দেখা গেলো সুমন, শান্তনুর সাথে দাড়িয়ে রইলো। এতো কষ্ট ওর আগে কখনো হয়নি। মনে হচ্ছে ও এতিম হয়ে গেলো, মাথার উপরের ছাদটা কেউ নিয়ে চলে গেলো। এতো অসহায় সুমনের মা মারা যাবার পর কখনো… কোনদিন বোধ হয়নি৷

…………………………………..

আদিত্য আজকাল একদমই ফুরসত পাচ্ছে না। ওর বাইরে যাওয়ার দিন যতো ঘনাচ্ছে ততই ব্যাস্ত হয়ে পড়ছে ও। কিন্তু এর মাঝে কি করে সুমনকে বিয়ের প্রস্তাবটা ও সমীরের সামনে পেশ করবে বুঝতে পারছেনা। মানে সমীর, মঞ্জু এদের আচরনে আদিত্য নিশ্চিত যে ওর প্রস্তাব এরা ফিরিয়ে দেবে না কিন্তু সুমন নিজে? সুমন কি ওকে পছন্দ করে? এই প্রশ্নটা আদিত্যকে দিন রাত দুশ্চিন্তার মধ্যে ফেলে দিচ্ছে। একবার মনে হয় কেন… কেন সুমন ওকে পছন্দ করবেনা? হেয় করার মতো, ফেলে দেয়ার মতো কিছুতো সে করেনি, উল্টো নিজের যোগ্যতা নিয়ে গর্ব হয় তার।

তাই এক একবার সিদ্ধান্ত নেয় যে আজই সুমনের সামনে কথাটা তুলবে ও। কিন্তু সুমনকে সামনে দেখলেই আবার খেই হারায়। মনে হয় যদি সুমন হুট করে ওকে না বলে বসে, তখন?

“কিরে আদি… তুই আজকাল নিজের একদমই যত্ন করছিস না, কেমন যেন তালপাতার সেপাই হয়ে যাচ্ছিস।”

মনোরমার কথাগুলো আদিত্যর কানে খুশির সঞ্চার করে। সত্যি মনোরমাদির মতো আদর ওকে কেউ করেনা,বোঝেও না। এই যে এতোটা দিন এখানে পড়ে আছে… না দিভাই আর না জামাইবাবু কেউ একবার ওকে জিজ্ঞেস করেছে যে কবে বাড়ি ফিরে যাবি। অথচ ওর বাড়ি চলে যাওয়া উচিত ছিলো। কিন্তু যেতে যে মন চায়না। ফিরে গেলেই সেই বড় বৌদির কোঁচকানো কপাল আর অন্ধকার মুখ… আদিত্যর মনই টানে না।

” তাহলে কিভাবে যত্ন করবো বলোতো মনো দিদি। আজকাল আমার খাবার মুখে তুলতে মোটেই ইচ্ছা হয়না,” অকপট স্বীকারোক্তি আদিত্যর।

” কি আর করবি… যাকে দেখলে তোর রাজ্যের ক্ষিধে লাগে, ভালো মন্দ পোড়াধোরাও যার হাতে অমৃত মনে হয় তাকে ঘরে এনে তুলবি।”

আদিত্য হাসে, মনোদিদি যে ওর মন পড়ে ফেলেছে সে ও জানে কিন্তু তারপরও সামনে বলতে একটু অস্বস্তি হয় ওর।

” কি করে আনবো বলতো দিদি… যাকে আনতে চাই সে বড় অবুঝ, মন পড়তেই জানেনা।”

“আরে ও ছোট মানুষ.. আমার চারুর সমান। ও কি ছাই বুঝবে কারো মন পড়তে আর তুইও এক পড়ালেখা জানা পন্ডিত, কি করে যে কাউকে মন পড়াতে হয় সে বিদ্যাও শিখিসনি।”

“তাও ঠিক কথা.. আসলে দি… এ বিষয়ে আমার এলেম নেই, তুমি একটা বুদ্ধি দাওনা।”

“শোন আদি…. এখন আর কোন বুদ্ধি করতে হবে না। সোজা গিয়ে ওর মামীকে ডেকে বল যে তুই আমাদের সুয়োরানীকে বিয়ে করতে চাস। ব্যাস ওতেই কাজ হয়ে যাবে, আর তুই না পারলে আমায় সাথে নিয়ে চল আমিই বলে দিচ্ছি।”

কথাটা আদিত্যর ভীষন পছন্দ হলো। মনোদিদি কথাটা তুললে ওর দুশ্চিন্তার আর কোন কারনই রইলো না। আর সুমনের মন বোঝার জন্য চারু তো আছেই।

……………………………………..

মাত্র তিনদিন হলো শ্রাবন, নির্মলাকে সাথে নিয়ে বিদেশ গিয়েছে…. তাতেই সুমনের মনে হচ্ছে ও কতযুগ হলো শ্রাবণের মুখটা ছোঁয় না। কতকাল ওই বুকে ঘুমায় না… কেঁদে কেটে ওর চোখ দুটো ফুলে লাল হয়ে যাচ্ছে, খাওয়ায় অরুচি ধরেছে। কিন্তু মামীর ভয়ে এই কষ্টও ওকে এখন গিলে ফেলতে হচ্ছে।

শ্রাবনও বিছানায় শুয়ে সুমনকে বারবার কল করেই যাচ্ছে। প্রথমদিন দীর্ঘ সময় যাত্রার কারনে হোটেলে ঢুকেই ঘুমিয়ে পড়েছিলো ও। তারপর দিন মাকে সাথে নিয়ে ছুটেছে ডাক্তারের কাছে, তাও আগে থেকে অ্যাপয়েনমেন্ট নেয়া ছিলো বলে রক্ষে। তার পরের দুদিন শ্রাবনের কেটেছে প্রায় দৌড়ের উপরে, তাই সুমোর সাথে ওর কথা হয়েছে একদম অল্প। কিন্তু আজ তিনবার কল করেও সুমোকে না পেয়ে এখন ভীষন অস্থির লাগছে ওর।

সুমন উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইলো। আজ কি কুক্ষনে ও চারুদের বাড়ি এসেছিলো কে জানে। এখন সন্ধ্যা পেরিয়ে রাত মাসিমা তাও ওকে ছাড়ছে না। বারবার বলছে আদিত্য কি একটা যেন বলবে আর সুমন সেটা শুনতে মোটেও আগ্রহ বোধ করছে না। মনোরমা মাসি ডেকেছে শুনেই ও হুড়োহুড়ি করে চলে এসেছে, বিছানায় রাখা মোবাইলটার কথা ওর খেয়ালি হয়নি। আসলে মাসি জরুরি কাজ বলে ডেকেছিলো, তা না হলে মাঝপথ থেকে হলেও মোবাইলটা নিয়ে আসতো সুমন। কিন্তু এখন খুবই টেনশন হচ্ছে.… শ্রাবনদা ফোন দেয়নিতো, ফোন দিয়ে ওকে না পেলে টেনশন করবে নাতো? আজকাল সুমন ফোন রিসিভ করলেই ফোনের ও প্রান্ত থেকে নির্দ্বিধায় আমার বউ কেমন আছে জিজ্ঞেস করে শ্রাবন। সুমনের অনুপস্থিতিতে সেই ফোন মামীর হাতে পড়ে যায় যদি…. এতো সব চিন্তায় সুমনের সব কিছু জট পাকিয়ে যাচ্ছিলো।

“সুমন দেখ এতো অস্থির হোস না, মঞ্জুকে আমি ফোন করে বলে দিয়েছি যে তোর দেরী হবে আর এখন থেকে মঞ্জুকে তোর ভয় পাওয়ার দিন শেষ, ” মনোরমা সান্ত্বনা দিতে লাগলেন সুমনকে।

সুমন নিজেও জোর করে হাসার চেষ্টা করলো। ও নিজেও তো জানে যে শ্রাবনদা ফিরে এসে সবাইকে ওদের বিয়ের কথা বলে দিলেই মঞ্জু মামী আর উপরে রাগারাগি করতে পারবে না। কিন্তু সেই দিনটা যে কবে আসবে সেটা নিয়েই তো ওর যতো দুশ্চিন্তা।

এদিকে আদিত্য কি এমন বলবে, কি নিয়ে এতো জল্পনা কল্পনা চলছে চারুদের বাসায় সেটাই ওর মাথায় আসছেনা। মন খারাপ আর দুশ্চিন্তায় সুমনের কান্না আসতে লাগলো।

শ্রাবণের মনে হলো এবার ও ঠিক সমীর মামাকে ফোন দিয়ে ফেলবে সুমোর খোঁজ নিতে। সুমোর ফোন বেজে বেজে এখন বন্ধ। এর কোন মানে হয়.. আকাশ পাতাল দুশ্চিন্তায় ওর মাথা ঘুরছে, বুক কাঁপছে… সুমোর কোন বিপদ হলো নাতো?

.

.

.

“হ্যালো… ”

“তুই.. “শ্রাবণের কথা রাগে মুখের ভিতরেই আটকে গেলো।

“সরি একটা জরুরি কাজে আটকে গিয়েছিলাম। ”

“জরুরি.. কতো জরুরি আর ফোন তোকে দেয়া হয়েছিলো আমার ফোন গুলো রিসিভ করার জন্য, না কি ওটা বিছানার চিপায় ফেলে রেখে দুনিয়া চষে বেড়ানোর জন্য?”

সুমন উত্তর দিলো না। সত্যি ফোনটা এজন্যই কেনা।

“সুমো আমার প্রশ্নের উত্তর দে। ”

“শ্রাবনদা.. আমি ”

“একদম চুপ ”

“কেন? ” সুমন ঘাবড়ে গেলো।

“আর একবার আমাকে শ্রাবনদা বললে তোকে আমি… আমি কাঁচা চাবিয়ে খেয়ে ফেলবো, মাইন্ড ইট। ”

“আচ্ছা বলবোনা, এখন আগে আমার কথাতো শোন।’

“কি শুনবো হ্যাঁ… কি শুনবো। তুই মহারানী হয়ে গেছিস আর আমি তোর গোলাম। তাই তোর খোঁজ নিতে আমি গন্ডায় গন্ডায় তোকে ফোন করবো আর তুই জাস্ট চিল করে বেড়াবি। ফাজিল মেয়ে কোথাকার,” রাগে গমগম করে উঠে শ্রাবন।

“তুমি না জেনেই কিন্তু আমাকে বকাবকি দিচ্ছো। আসলে আজ আদিত্যবাবু তার বাড়ি চলে গেলেন তাই আমার সাথে একটু দেখা করতে চেয়েছিলেন। সে কারনে মনোরমা মাসি আমাকে….. ”

কিন্তু আদিত্য চলে গেছে শুনে শ্রাবণের বাকি কথা শোনার ধৈর্য আর হলোনা। চলে গিয়েছে! এতো বড় আপদটা ওর লাইফ থেকে চলে গিয়েছে… শ্রাবণের রাগ মুহুর্তের মধ্যে পানি হয়ে গেলো।

” আদিত্য চলে গিয়েছে মানে… কোথায় চলে গিয়েছে?”

“ওনাদের বাড়ি।”

“ওহ.…. তা ভালো, কিন্তু সেই খুশিতে কি পন্ডিত মশাই, তার ছাত্রীকে নিয়ে আবার ডিলাক্সে গিয়ে ঢুকলেন নাকি?”

“শ্রাবনদা!”

“সুমো… তুই আবার আমায় শ্রাবনদা বলে ডাকছিস! এবার কিন্তু আমার সত্যি অপমান হচ্ছে।”

“ওহ সরি সরি… কিন্তু তুমি আজকে খুব খারাপ খারাপ কথা বলছো। আমি কেন এতো রাতে ওনার সাথে কোথাও যাবো আর আগে যখন গিয়েছিলাম তখনতো আমি কারো বউ ছিলাম না, আর এখন এই কথাটা সবার আগে মনে রাখি।”

“হমম… ”

শ্রাবণের শক্ত চোয়াল নরম হয়ে আসলো, চোখের তারায় তৃপ্তির আভাস, সেই সঙ্গে একফালি হাসি ঠোঁটের কোনে ঢেউ তুললো।

” যাক মনে থাকলে তো ভালোই।”

“আমার মনে আছে… আমি সবসময়ই এটা মনে রাখি।”

“আচ্ছা… এখন এসব কথা থাক, এখন আমায় তোকে একটু দেখতে দে। তিনদিন হলো বউটাকে ভালো করে দেখারই সুযোগ পাচ্ছি না… আদর করা দূরে থাক।”

“এখন না, এখন আমায় অনেক কাজ করতে হবে,” সুমন তাড়াতাড়ি ফোন রাখতে চাইলো।

“আমাকে ফেলে তোর কাছে কাজটা বড় হলো?”

“তোমার কাছেও তো আমার চেয়ে নিজের দায়িত্ব, কর্তব্য বড় বলো… আর হওয়াও উচিত। কেবল মুখে আমার পরিবার বললেই তো হবে না, সময়ে তাদের পাশে দাড়ানোও তো জরুরি। ”

সুমনের কথার প্যাঁচে ধরা খেয়ে শ্রাবন আর কি বলবে… হমম বলে মেনে নিলো।

“এখন তাহলে যাবো?”

“না.. প্লিজ, আর একটু, কবে থেকে তোকে ভালো করে দেখি না।”

“আমার অনেক কাজ রয়েছে, মামী এক্ষুনি চিল্লাবে ”

” তোর মামী একটা… ”

” তোমারো গুরুজন হয় কিন্তু… ”

“হুশশ… তুই একটা নিষ্ঠুর মেয়ে আর কোনদিন তোকে আমি ফোন দিবো না যা।”

শ্রাবন রাগে মুখ ফোলালো।

কিন্তু সুমনের চোখদুটো টলমল করে উঠে। শ্রাবনদা না জেনে ওকে কতো বকাবকি করছে… কিন্তু শ্রাবনদা কি জানে ও আজ কতো বড় ঝামেলায় জড়িয়ে পড়েছে। আদিত্য ওকে আজ চারুদের বাসায় ডেকে নিয়ে এক কথায় বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে। সুমন আদিত্যর কথাটা শুনে কোন উত্তর না দিয়েই বাসায় চলে এসেছে…. এর পরিনতি কি হবে সেটা ভাবতেই এখন ওর জ্বর আসছে।

চলবে. ….
তোমার পরিনীতা – ৩২

( শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় রচিত পরিনীতার ছায়া অবলম্বনে)

লেখিকা- ফায়জা করিম

( ১৮+ কনটেন্ট বিদ্যমান, কোন অবস্থায় গল্প কপি না করার অনুরোধ রইলো)

“কিরে এমন উসখুস করছিস কেন? ”

নির্মলার প্রশ্নের শ্রাবণ জুতসই কোন উত্তর দিতে পারলনা। কি বলবে? সুমনকে দেখার জন্য ওর মন দিওয়ানা হয়েছে…. অসম্ভব।

“কি হলো কেনো উত্তর নেই কেনো ?”

“কিছু না মা… আসলে দেশ থেকে তো অনেকদিন হলো এসেছি কেমন যেনো লাগছে। ”

“সত্যি বলছিসরে ছোট… আমারো মনটা কেমন যেন পুড়ছে বাড়ির জন্য, দাদুটাকে কতদিন দেখিনা। ”

নির্মলার কথাগুলো শ্রাবণের মনমরা বাগানে আলোর ঝঙ্কার তুললো। তবে কি মা এবার বাড়ি যেতে রাজি! দেড়মাস প্রায় হতে চললো ওরা এখানে এসেছে… সুমোর জন্য ওর মনের হাহাকার এখন চরম আকার ধারন করেছে।

“আমরা কি তাহলে সামনের সপ্তাহে দেশে যাবার টিকিট বুক করবো? ”

“এক সপ্তাহ! আরো দুদিন আগে করা গেলে ভালো হতোনা?”

“আমি এক্ষুনি দেখছি মা… তাহলে বরং আর দেরী না করে কাল পরশুর ফ্লাইটেই চলো বাড়ি চলে যাই। ”

“হ্যাঁ, তাই কর। তোর বাবার সাথে রাগ দেখিয়ে এলাম কিন্তু একমাসের বেশি আর টিকতে পারছিনা।”

শ্রাবন মাথা নিচু করে হাসলো। মা ওর প্রতিবারই রাগ করে বেড়াতে বের হয় আর কিছুদিন যেতেই তার পিছুটানও শুরু হয়।

দুদিন পরের ফ্লাইটে টিকিট বুক হতেই ঘর থেকে সামনের বারান্দায় এসে দাড়ালো শ্রাবণ। এই হোটেলটা নয়তলা। ওদের সুইটটা আটতলার একদম বাম কর্ণারে। এখান থেকে দাড়িয়ে সামনের সুউচ্চ বিল্ডিংগুলোর হলুদ লাল আলো শ্রাবণের মনে নানা রঙের জন্ম দিলো।

ইশশ…. সুমোটাকে নিয়ে আসলে ওর এই দিনগুলো এরকম পানসে কাটতো না। বরং আনন্দে ভরপুর হয়ে থাকতো.. কিন্তু ওর অপারগতার কারনে সুমো এতো সুন্দর সুযোগটা হারালো। মনে মনে ঠিক করলো এরপর সুযোগ পেলেই ও সুমোকে নিয়ে এখানে বেড়াতে আসবে, এই দেড়মাসের কষ্টটা একদম কড়ায় গন্ডায় পুষিয়ে দেবে সুমোকে।

শ্রাবণের আসার খবর পেয়ে সুমন যতোটা খুশি হলো, অভিমান আর ভয় হলো তার চেয়ে কয়েশগুন বেশি। গত একটা মাস শ্রাবন ওর কাছে কালে ভদ্রে ফোন করেছে। আবার সুমন নিজে শ্রাবনকে ফোন করার ভরসা পায়নি। বাইরে যেয়ে হয়তো সে কাজে ব্যাস্ত, সাথে আবার শাশুড়ি আছে। আর এখন যেই আসার সময় হয়েছে অমনি তিনদফা ফোন দিয়েছে। রাগে সুমনের গা জ্বলছিলো।

“সুমো তোর কলেজে কাল না গেলে হবে না? ”

“কেন? ”

“কিছু না…. অনেকদিন দেখিনা, এয়ারপোর্টে আসতি।”

সুমনের গলা দিয়ে শব্দ বের হলোনা। শ্রাবণ ওর বাসার অবস্থা জানেনা বলে এই আবদার হচ্ছে কিন্তু বাড়িতে পা দেবার সাথে সাথেই সে লঙ্কা কান্ড বাঁধাবে তাতে কোন সন্দেহ নেই ওর।

“সুমো? ”

“বলো ”

“তুই এরকম থম মেরে আছিস কেন? আমি আসবো সেটা শুনে মনে হচ্ছে মোটে খুশি হোসনি? ”

“আমার খুশি অখুশিতে কার কি?”

“কার কি মানে? ”

“ঠিকই তো কার কি? ”

“বড্ডো চ্যাটাং চ্যাটাং কথা বের হচ্ছে… দেশে এসেনি, একদম টুঁটি চেপে ধরবো তোর। আবার বলে কার কি?”

সুমনের অভিমান এবার রূপ পাল্টালো… টুঁটি চেপে ধরবে, এই একটাই তো পারে কিছু হলে। ঝুটি টেনে ধরা আর টুঁটি চেপে ধরা। কাল বাড়ি এসে যদি ওদের বিয়ের কথা সবার সামনে না বলে তাহলে শ্রাবণের সাথে জন্মের মতো কাট্টি নিবে ও।

শ্রাবণ একটু রাগ দেখালেও আসলে ভিতরে ভিতরে পুড়ছিলো… কতটা দিন সুমোকে দেখে না সামনা সামনি আর সুমোটা ভিডিও কলেও আসতে চায়না। শ্রাবনের যে কি অস্থির লাগছে ওকে দেখার জন্য মেয়েটা যদি একটু বুঝতো।

সুমোর যে ওর উপর অভিমান হয়েছে সেটা শ্রাবণ জানে কিন্তু শ্রাবণের আসলে কিছু করার ছিলো না। মাকে নিয়ে ওকে অনেকবার দৌড়াতে হয়েছে পরীক্ষার জন্য, সাথে ঝামেলা পাকিয়েছে ওর বন্ধু প্রতাপ। প্রতাপ এখানে একটা রেস্তোরাঁ চালাচ্ছে। শ্রাবণ আসার খবর পেতেই সে তার পরিবার নিয়ে শ্রাবণদের হোটেলে হাজির। এক রকম জোর করেই শ্রাবন আর নির্মলাকে ওরা বেড়াতে নিয়ে গিয়েছিলো ওদের সাথে ভ্যাকেশনে। সেখানে গিয়ে এতো ঘোরাঘুরি করতে হয়েছে শ্রাবণের যে শরীরের অর্ধেক শক্তি ওর ওতেই শেষ হয়ে যেতো। সাথে সুমো যদি ওর এই বাড়তি ঘোরাঘুরির খবর পায় তবে পিঁপড়া থেকে ভীমরুল হতে এক সেকেন্ডও সময় নিবে না। মূলতো এই ভয়টা থেকেই ও মাঝখানে কিছুদিন একটু কম ফোন দিতো সুমোকে, নয়তো মাঝরাতে। ওদিকে প্রতাপের ছোট মেয়েটা দু একদিন যেতেই শ্রাবণের খুব ভক্ত হয়ে গিয়েছিলো, সারাদিন আঠার মতো ওর পিছনে লেগে থাকতো। সব মিলিয়ে গত মাসটা একদম হযবরল হয়ে গিয়েছিলো শ্রাবণের জীবন, কোনকিছুই তার স্বাভাবিক পথে এগুচ্ছিলো না।

সুমো নাক টানতেই শ্রাবণের রাগ পানি হয়ে গেলো, নিজেকে অপরাধী মনে হতে লাগলো। এরকম পরিস্থিতিতে সুমোর জায়গায় শ্রাবণ নিজে কি করতো? অপরাধবোধ মাথাচাড়া দিয়ে উঠলো।

“আচ্ছা যা কিছুই করবো না, কিন্তু আমার কাল তোকে বাসায় চাই।”

“আমি কাল বাসায় থাকতে পারবোনা,জরুরি ক্লাস আছে। ”

“আরে একদিন ক্লাস না করলে কিচ্ছু হবেনা, পড়াবে তো তোদের সেই আলাভোলা রমেশ মিত্তির।”

সুমনের এবার খুব রাগ হলো,” আবার তুমি বাজে কথা বলছো স্যারকে নিয়ে। ”

“বাজে কথা… কিসের বাজে কথা? আমি তো তাকে আলাভোলা বলছি, ঠগ, জোচ্চোর, বাটপার আর লম্পট তো বলি নাই। ”

” তুমি প্লিজ এসব বাজে বাজে কথা বন্ধ করো, না হলে আমি কিন্তু ফোন রেখে রান্নাঘরে চলে যাবো। ”

“আচ্ছা কিন্তু তাহলে তুই কাল এয়ারপোর্টে আমাকে নিতে আসছিস মনে থাকবে? আমি দাদাকে বলে দিবো তোকে সাথে করে নিয়ে আসতে। ”

সুমন সাথে সাথে প্রমাদ গুনলো। শান্তনুদাকে এ বিষয়ে বললে শ্রাবন যদি সবটা জানতে পারে। এতো বড়ো দুর্ঘটনার খবর বিদেশে বসে পেলে শ্রাবণ সুস্থ থাকবে তো?

” না শান্তনুদাকে কিছু বলোনা… আমার সত্যি কাল আসা হবেনা। তুমি বাড়ি আসো, আমি সময় করে তোমার সাথে দেখা করবো ”

সুমনের আচরনে শ্রাবণের এতো ভয়নক রাগ হচ্ছিলো যে কোন উত্তর না দিয়েই হাতের ফোনটা প্রায় ছুড়ে মারলো ও বালিশের উপর,” নিকুচি করি তোর দেখা করার, কোন দরকার নেই.. একেবারেই আসার কোন দরকার নেই। এই দেড়মাস যখন থাকতে পেরেছি তখন আরও দশ বছরও পারবো।”

রাগে গরগর করতে করতে ঘরের এ মাথা ও মাথা টহল দিতে লাগলো শ্রাবণ।

ফোনের লাইনটা কেটে যেতেই ওড়নার কোন চোখের উপর চেপে ধরলো সুমন। বুকের ভিতরে কি সব ভাঙ্গা চোরার শব্দ… ভয়নক এক তৃষ্ণা অথচ ও কাঁদতে চাচ্ছিলো না, আনন্দ করতে চাচ্ছিলো। প্রিয় মুখটা ছুঁতে পারার আনন্দ কিন্তু কথায় আছে জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে তিন বিধাতা নিয়ে। ওর ভাগ্যে বোধহয় শ্রাবণের কোলে মাথা রেখে মরার কপাল নেই, নাহলে ওর সাথেই বা এমন হবে কেন?

একেতো সকাল থেকে আজ কিছুই খায়নি ও… সাথে শ্রাবণের সাথে অযথা তর্ক বির্তক। মাথা ভীষন ভাবে ঘুরতে লাগলো সুমনের, সাথে গাটা গুলিয়ে বমির অনুভূতিও হতে লাগলো।

শ্রাবণ এয়ারপোর্টে নামার পরও বিশ্বাস করে বসে ছিলো যে সুমন যতোই মুখে না না বলুক না কেন শেষ পর্যন্ত ওকে না দেখে সে থাকতে পারবেনা। কিন্তু লাগেজ নিয়ে ডিপারচার লেখা গেটের কাছে আসার পরও যখন শুধু শান্তনু আর রামনাথের মুখটাই নজরে আসলো ওর তখন মনটা এবার সত্যিই ভাঙ্গলো। সুমো তাহলে সত্যি সত্যি আসেনি! বেজায় রাগ করতে যেয়েও কেনো যেনো শুধু একদলা অভিমান এসে ভীড় জমাল শ্রাবণের মনের জানালায়, সুমনকে দেখার ইচ্ছেটা তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হতে লাগলো সময়ের সাথে সাথে পাল্লা দিয়ে।

…………..……..

সুমন ইচ্ছে করেই আজ ক্লাসের পরেও কলেজের গ্যালারীতে বসে আছে । এইখানে বসে ক্লাস করতে ওর দারুন লাগে কিন্তু আজ কোন ক্লাস ছাড়াই ও এখানে বসা… শ্রাবণের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে ও প্রতিমূহুর্তে।

শ্রাবণ বুঝতে পারছিলনা এটা কিভাবে সম্ভব! এতো বড় একটা ঘটনা ঘটে গিয়েছে আর এই মেয়ে ওকে সেটা বলারও প্রয়োজন বোধ করেনি? কাপড় চোপড় না পাল্টেই প্রীতিদের বাড়িতে ছুটছিলো সে কিন্তু ওর চেহারা দেখেই শান্তনু ব্যাপারটা আঁচ করতে পারলো।

“শ্রাবণ শোন…. এখনি ও বাড়ি যাস না।”

“এখনি যাবো সুমোর এতো বড় সাহস… আর আর ওই.. ”

” দেখ এখানে সুমনের দোষটা কোথায়? সব ওর মামার পরিবারের দোষ বলে আমি মনে করি… তারা যদি মেনে না নিতো এই ব্যাপারটা তাহলে তো আর এতো ঝামেলা হতো না।”

” কিন্তু বদ্দা ও আমাকে একটা শব্দও জানায়নি, কেন? আমি কি ওর বিপদ শুনে আসতাম না?”

” আসতি বলেই জানায়নি বেচারি…. জানে যে মায়ের চিকিৎসার জন্যই আসলে বাইরে গিয়েছিস তুই, এই অবস্থায় জানালে তুই সবকাজ ফেলে রেখেই হয়তো চলে আসতি।”

” হমম। ”

এটাও সত্যি…. কিন্তু শ্রাবন বুঝতে পারছেনা এটা হলো কেন, কিভাবে। সুমোর কাছ থেকে এটা এখন ওকে জানতেই হবে।

ফোনের পর ফোন আসছে। সুমন তাকিয়ে দেখে কলটা ধরবে কি ধরবে না বুঝতে পারছিলনা। শ্রাবন এতক্ষণে নিশ্চই বাড়ি চলে এসেছে আর ওকে এতোবার ফোন করার কি কারন হতে পারে সেটাও সুমনের অজানা নয়।

কাঁপা হাতে ফোনটা ধরতেই মেঘ ডাকার শব্দ শুনতে পেলো সুমন ফোনের ওপাশ থেকে।

“তুই নিজেকে কি ভাবিস, রানী ক্লিউপেট্রা? ”

সুমন নিরুত্তর।

“আমি কিছু জানতে চাইছি সুমো। ”

“বলো…”

সুমন আস্তে করে উত্তর দিলো। আজ হয়তো ও মার খাবে শ্রাবণের হাতে… মোটামুটি নিশ্চিত সুমন এ ব্যাপারে।

“কি বলো? তোর কি আক্কেল জ্ঞান সব লোপ পেয়েছে? তুই আমার কাছে কি করে এতো বড়ো ঘটনাটা লুকালি? আমি হতবাক হয়ে যাচ্ছি তোর আচরন দেখে। ”

“আ… আমি কি বলবো বুঝতে পারিনি। ”

“আমি কি বলবো বুঝতে পারিনি।”

“বুঝতে পারিনি মানে! তুই কি ছোট বাচ্চা যে বুঝতে পারিসনি। আর এটা তো পীথাগোরাসের উপপাদ্য নয় যে তার প্রমান তোর মাথায় ঢোকেনি। এটা খুবই সহজ বাংলা ভাষার বলার মতো কোন দুঃসংবাদ। আমার মাথায় আসছে না তুই কি করে এটা আমার কাছ থেকে লুকালি আর কেন? ”

সুমন চুপ করে রইলো, জানেই আজ অনেক বকা খাবে।কিন্তু শ্রাবন কেবল মাত্রই বাইরে থেকে আসলো এক্ষুনি তার সবটা জানার প্রয়োজন নেই।

“কি হলো সুমো? ”

” বলো শুনছিতো।”

” তুই কই? ”

” আমি কলেজে।”

” তোর ছুটি হবে কখন? ”

“দেরী হবে। ”

“সেটা কতো দেরী?”

“আ… আমি বলতে পারছিনা।”

শ্রাবণের ধৈর্যের বাঁধ আবার ভাঙ্গতে লাগলো।একেতো বহুদিন ও সুমোকে ছোঁয়না… মানসিক আর শারিরীক দুটো চাহিদাই এখন তুঙ্গে আর সুমো ক্রমাগত ওকে এরিয়ে যাচ্ছে অথচ বাতাসের ভেলায় চড়ে যে সুর লহরী শ্রাবণের কানে ভেসে আসছে তাতেই প্রচন্ড উত্তেজিত হয়ে উঠছে সে কামনায়, রিপুকে সংযত করা অসম্ভব ঠেকছে। সুমনের কন্ঠ এখন ওর কানে মদিরার চাইতেও বেশি আবেদনময়ী, নিক্বনের চাইতেও বেশি ঝঙ্কারময়।

” তুই কলেজেই থাক আমি আসছি। ”

” তোমার আসা লাগবেনা, ক্লাস শেষ হলে আমিই চলে আসবো।”

” আমি গাড়িতে।”

” কিন্তু”

” কোন কিন্তু নেই… এক্ষুনি কলেজের গেটে আসবি তুই। আমার চোখের সামনে পনের মিনিটের মধ্যে তোকে চাই আমি, ব্যাস।”

চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here