#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৮
ভয়াবহ নিস্তব্ধতা চারদিকে।পরিবেশটা বেশ শান্ত লাগলেও এর পরে ঠিক কি কি হতে চলেছে তা সবার ভাবনারও বাহিরে।আদিয়াত সবটা শোনার পর একটা টু শব্দও করেনি।শান্ত হয়ে বসে আছে ও.টির দরজার সামনে।সবাই ভেবেছে যে আদিয়াত অনেক পাগলামি করবে।কিন্তু তেমনটা কিছুই হয়নি।সব শোনার পর শুধু একপলক নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে এখন যেখানে বসে আছে সেখানেই বসে পড়লো।ওর এতো শান্ত রূপটাই কেউ মানতে পারছে না।কেউ ভয়ে এগিয়েও আসছে না।কিছুক্ষন পর ও.টির দরজা খুলে সোহেবকে বের হতে দেখেই হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়ায় আদিয়াত।অস্থির কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
” আহিয়ানা..আমার আহিয়ানার কি অবস্থা?”
সোহেব আদিয়াতের কাধে হাত রাখলো।বন্ধুকে শান্তনা সরূপ বললো,
” দেখ আমি তোকে কোন মিথ্যে বলতে পারবো না।আহি’র অবস্থা অনেকটা ক্রিটিকাল।ওর অনেক ব্লিডিং হয়েছে।এখন আমাদের রক্তের প্রয়োজন।
তিন ব্যাগ রক্ত লাগবে।আমি এক ব্যাগ জোগাড় করেছি এখন আরো দু ব্যাগ লাগবে।”
আদিয়াত কাপা স্বরে বলে,
” আহিয়ানার রক্তের গ্রুপ তো AB+। এটা অনেক রেয়ার। সহজে পাওয়া যায় না।”
” হুম! তাই তো বলছি।”
এরই মাঝে হঠাৎ সিয়া এগিয়ে এসে বলে,
” আমার ব্লাড গ্রুপ AB+।আমি রক্ত দেবো।”
সোহেব বলে,
” কিন্তু সিয়া বোন! তোর মাত্র ১৮ বছর হয়েছে তুই কিভাবে?”
সিয়া শান্ত কন্ঠে বলে,
” ১৮ বছর হলেই তো রক্ত দেওয়া যায় তাই না?তাহলে আমি দিতে প্রোবলেম কি? চল আমি দেবো।”
নিহান সিয়ার দিকে কৃতজ্ঞতা দৃষ্টি নিক্ষেপ করে।সিয়া সেদিকে এক-পলক তাকিয়ে চোখ সরিয়ে নেয়।আদিয়াত বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে কপালে চুমু খেয়ে সোহেবের সাথে সিয়াকে ও.টিতে যেতে বলে।
আদিয়াত আবারও বসে পড়ে।ওর আর ভালো লাগছে না।কখন ওর আহিয়ানা জেগে উঠবে।আর কখন আদিয়াত তার মনের সব কথা তার আহিয়ানাকে বলবে।আদিয়াত আর তার প্রাণপ্রিয়াকে কষ্ট পেতে দিবে না।কিছুতেই না।এইবার আহিয়ানা শুধু সুখের খোঁজ পাবে।দুঃখকে আদিয়াত ওর ধারে কাছেও যেতে দিবে না।আদিয়াত ঢাল হয়ে দাঁড়াবে আহিয়ানার সামনে।
মনে মনে এক ভয়ানক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আদিয়াত।এর পরিনাম কি হবে জানা নেই ওর।কিন্তু একবার সিদ্ধান্ত যেহেতু নিয়ে নিয়েছেই তখন আর পিছপা হবে না ও।জোড় করে হলেও নিজেরটা আদায় করে নেবে।এতোদিন তো অন্যের কথা শুনেছে আদিয়াত যার ফলাফল সরূপ আজ তার আহিয়ানা এতোটা কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু আর না,এইবার আদিয়াতের মন যা বলবে তাই করবে সে।
হঠাৎ কাধে কারো হাতের স্পর্শ পাওয়ায় মাথা উঠিয়ে দেখে সেহরা জাহান করূন চোখে তাকিয়ে আছে।আদিয়াত চোখ সরিয়ে নিলো। কিছু বললো না।সেহরা জাহান কান্নাকন্ঠে বলে,
” নিজের মার কাছ থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছিস?”
আদিয়াত শীতল গলায় বলে,
” মা যেহেতু সন্তানের কথা ভাবে না।সেখানে আর কি বা করার থাকে।তবুও আমি তোমার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিতে পারবো না।কারন তুমি মা। আর মা’কে চাইলেও ফেলে দেওয়া যায় না।চিন্তা করো না।আমি তোমাকে ফেলে যাবো না।তোমার দায় দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করবো।”
সেহরা জাহান ঠুকড়ে কেঁদে উঠলেন,
” আমার প্রতি শুধু তোর দায়িত্বই আছে।ভালোবাসা নেই?”
” তোমার কি আমার প্রতি আদৌ কোনদিন ভালোবাসা ছিলো মা?”
ছেলের এমন প্রশ্নে কলিজাটা মোচড় দিয়ে উঠে সেহরা জাহান।শব্দ করে কেঁদে দেন।আদিয়াতের নিজের মায়ের এমন কান্না সহ্য হচ্ছে না।তাই দ্রুত বলেন,
” বাবা! তুমি আর মা বাড়ি চলে যাও।তোমাদের এখানে থাকা লাগবে না।বাড়িতে গিয়ে বিশ্রাম নেও।আমি জিহাদের সাথে সিয়াকে পাঠিয়ে দিবো। চিন্তা করো না।”
হাসান আহমেদ ছেলের মনের অবস্থা বুজতে পেরেছেন।তাই দ্বিমত না করে সেহরা জাহানকে নিয়ে চলে গেলেন।
এদিকে প্রায় অনেক্ষন পর বের হয়ে আসে সিয়া।দুপুর থেকে না খাওয়া সে।কলেজ থেকে ফিরে এই খবর শুনে এখানে ছুটে এসে পড়েছিলো।খাওয়াদাওয়া আর করা হয়ে উঠেনি ওর।
এখন আবার রক্ত দেওয়ায় শরীরটা দূর্বল লাগছে প্রচুর।ঝাপসা ঝাপ্সা চোখে আদিয়াতকে দেখে বলে,
” ভাই চিন্তা করিস না।আমি আহি আপুকে রক্ত দিয়েছে………….”
হঠাৎ মাথা ঘুরে উঠায় আর কিছু বলতে পারলো না।পরে যেতে নিতেই একজোড়া হাত ওকে আকড়ে ধরে।আদিয়াতও এগিয়ে আসছিলো।কিন্তু তার আগেই নিহান সিয়াকে ধরে ফেলে।
আদিয়াত বললো,
” থাংক্স নিহান।”
নিহান শুকনো হাসলো।বললো,
” তোমার বোন আমার আহির জন্যে যা করেছে তার বিনিময়ে এটা তো সামান্য।”
এদিকে সিয়া পুরোপুরি জ্ঞান হারায় নি।শুধু দূর্বলতার কারনে ঠিকভাবে দাড়াতে পারছে না।আদিয়াত চিন্তিত কন্ঠে বলে,
” সিয়া! এই সিয়া তাকা আমার দিকে।সিয়া!”
নিহান আদিয়াতকে শান্ত হতে বললো।
” চিন্তা করো না আদিয়াত।ব্লাড দেওয়ায় এতোটা দূর্বল লাগছে।”
তারপর আবার সিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
” এতো দূর্বল হলে কিভাবে?এখানে আসার আগে খাওয়াদাওয়া করে আসোনি।”
সিয়া ভাঙ্গা গলায় বলে,
” কলেজ থেকে আসার পর ফ্রেস হতেই এশা আপু কল করে এসব জানানোর পর আর লাঞ্চ করার সময় পায়নি।সেভাবেই এসে পড়েছি।”
নিহান তীক্ষ্ম চোখে তাকিয়ে আবারও জিজ্ঞেস করে,
” সকালে কি খেয়েছো?”
” দুটো সিঙ্গারা।”
” বাহ! বাহ! দেখেছো আদিয়াত।এইজন্যেই তোমার বোনের এতোটা খারাপ লাগছে।”
আদিয়াত বোনের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
” কেন এমন করিস?তুই জানিস না আমি তোকে কতো ভালোবাসি?কেন নিজের খেয়াল রাখিস না।আর কে কতো কষ্ট দিবি আমাকে।”
সিয়া কান্না করে দিয়ে ভাইকে জড়িয়ে ধরে,
” তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া।আমি ঠিক আছি।এখন তুই আহি আপুর সাথে থাক।আমার কিচ্ছু হবে না।”
আদিয়াতকে ছেড়ে সিয়া দাড়াতে নিলেই টাল সামলাতে না পেরে আবারও পড়ে যেতে নেয়।কিন্তু নিহানকে আকড়ে ধরে নিজেকে সামলে নেয় ও।
নিহান কিছুই বললো না।সিয়াকে ধরে নিয়ে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়।জিগাদকে বললো আশেপাশের কোন হোটেল থেকে হালকা কোন খাবার পেলে নিয়ে আসতে।
আদিয়াতের চিন্তার শেষ নেই।একদিকে আহিয়ানার কোন খবর নেই, আবার আরেকদিকে এখন বোনটাও রক্ত দিয়ে দূর্বল হয়ে পড়েছে।
এশা এগিয় এসে বলে,
” চিন্তা করিস না।সিয়া কিছু খেলেই ঠিক হয়ে যাবে।”
রোজাও আশ্বাস দিলো,
” আরে তুই কেন এতো চিন্তা করছিস?সিয়া ঠিক আছে।আর রইলো আহির কথা।আহি অনেক ব্রেব গার্ল।দেখিস! ঠিক সুস্থ্য হয়ে তোর কাছে ফিরে আসবে।”
আদিয়াত চোখ বুজে সিটে হেলান দিয়ে বসলো।সেতো এটাই চায় তার পরিবারের প্রতিটা মানুষ যেন সুস্থ্য থাকে।ভালো থাকে।মনে মনে আল্লাহ্ তায়ালার কাছে দোয়া চেয়ে নিলো আদিয়াত।
এদিকে সিয়া চোখ বুজে আছে।প্রচন্ড খারাপ লাগায় চোখ পর্যন্ত খুলতে পারছে না মেয়েটা।নিহান একদৃষ্টিতে সিয়ার মুখটার দিকে তাকিয়ে আছে।কি আছে এই মুখটায়?কেন এতো মায়া কাজ করে?এই পিচ্চি মেয়েটা হঠাৎ করে তার জীবনে আগমন ঘটিয়ে এখন তার রাতের ঘুম হারাম করে দিয়েছে।সেদিনের পর অনেক খুজেছে ও কিন্তু পায়নি দেখা।বলে না মন থেকে কোন কিছু চাইলে আল্লাহ্ তাকে ফিরিয়ে দেয় না।তেমনটাই সিয়াকে একপলক দেখা পাওয়ার জন্যে নিহান অনেক ছটফট করেছে।অনেক দোয়া চেয়েছে অবশেষে সে দেখা পেয়েছে।
ভাবনা কাটে জিহাদের ডাকে।জিহাদ একটা ড্রায় কেক,আপেল আর একটা ডিম সিদ্ধ এনেছে।এতো রাতে এগুলোই পেয়েছে।অবশ্য আপেলটা রোজার কাছ থেকে নিয়েছে।কারন সবাই জানে রোজা কতোটা খাবার পাগলি।ওর ব্যাগে কিছু না কিছু খাবার থাকেই।নিহান আস্তে করে সিয়াকে ডাকে,
” এইযে শুনছো পিচ্ছি।উঠো এইগুলো খেয়ে নেও।তাহলে ভালো লাগবে।”
সিয়া প্রায় ঘুমিয়ে গিয়েছিলো।ঘুমের মাঝে ব্যাঘাত ঘটায় কপাল কুচকে ফেলে সিয়া।সেদিকে মুগ্ধ চোখে তাকিয়ে আছে নিহান।কাউকে বিরক্ত নিয়ে কপাল কুচকালেও বুজি এতো সুন্দর লাগে?
কি জানি জানা নেই নিহানের।কিন্তু ওর সিয়াকে ভালোলাগছে এইভাবে দেখতে।
সিয়া আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়।সিয়া চোখ খুলতেই নিহান ওকে খাবারগুলো খাইয়ে দেয়।
আদিয়াত মাথা চেপে ধরে বসে আছে।ওরও মাথাটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে।এতো এতো দুশ্চিন্তা ও সহ্য করতে পারছে না।এই ও.টির লাল বাতি কখন নিভবে?কখন সোহেব ওকে জানান দিবে যে ওর আহিয়ানা ঠিক আছে।একদম সুস্থ্য আছে।
#চলবে___________