তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -১৯

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ১৯
‘ শুনছো আহ্লাদি,

আহ্লাদি বলেই ডাকলাম।কারন এই তুমিটাকে আমার বড্ড আহ্লাদি মনে হয়। আদড়ে আদড়ে ভরিয়ে তুলতে ইচ্ছে করে।
এই তুমিটাতো পুরাটাই আমার তাই না?তাহলে আমার যেই নামে ডাকতে ভালোলাগে আমি সেই নামেই তোমাকে ডাকবো।
তুমি কি জানো?আমার হৃদয় গভীরে তোমার জন্যে ঠিক কতোটা ভালোবাসা আছে?জানো না।জানবে কিভাবে তুমি তো কখনো জানতে পারোনি তাই না?আমার চোখে চোখ রেখে তাকালে হয়তো বুজতে পারতে।কিন্তু তুমি তো আড়ালে থেকে আমাকে ভালোবেসেছো।তাই আমার ভালোবাসাটা তুমি দেখোনি।কিন্তু কি বলোতো?আমি তো মন প্রাণ উজার করে ভালোবেসেছি।ভালোবেসে প্রতিটা সময় তিলে তিলে মরেছি তোমার থেকে দূরে থাকার কারনে।
এইযে শুনছো,
দেখো না আমি কতোটা ভয়ানক অবস্থাতে আছি।একটিবার চোখ মেলে দেখো না।তোমার চোখ দুটি’র দৃষ্টি দিয়ে আমাকে একবার ছুঁয়ে দেও না।
আমি কাঙ্গালি, বড্ড কাঙ্গালি, তোমার ভালোবাসার কাঙ্গালি।আমার বুকের বাপাশের জমিটা তুমিহীনা মরুভূমির রূপ নিয়েছে।সেখানে তোমার ভালোবাসা নামক বৃষ্টি দিয়ে একবার, শুধু একবার ভিজিয়ে দেও না?
তুমি কি শুনতে পারছো না?আমি এক উন্মাদ প্রেমিক।তবুও তোমার অপেক্ষাতে শান্ত হয়ে আছি।তুমি উঠবে আদুড়ে গলায় আমায় ডাকবে।তখন আমার ঠোঁট ফুটে উঠবে প্রসস্থ এক অমায়িক হাসি।আমি ঠোঁট ছোঁয়াবো তোমার ওই কপালে।তুমি আবেশে যখন চোখজোড়া বুজে নিবে।আমি প্রাণভরে সে দৃষ্য দেখবো।
তাকায়ও না একবার আমার দিকে।সত্যি বলছি আর একটুও কষ্ট পেতে দিবো না তোমায়।আমার বক্ষপিঞ্জরায় তোমাকে বন্দি করে রাখবো।তুমি থাকবে আমার রাজত্ত্বে, শুধু এবং শুধুই আমার হয়ে।
আমি আহ্বান জানাচ্ছি ফিরে আসো আহ্লাদি।ফিরে আসো।

ইতি,

তোমার দোষী প্রেমিক।’

আহি’র হাতটি আকড়ে ধরে প্রচন্ড ব্যাকুলতা দিয়ে প্রতিটি বাক্য অনেক ভালোবাসা মাখিয়ে বলে চলেছিলো আদিয়াত।কিন্তু তার আহ্লাদি তো চোখজোড়া মেলে তাকায় না তার দিকে।আদিয়াত তৃষ্ণার্ত। বড্ড তৃষ্ণা তার, এই আহিয়ানা নামক মেয়েটাই তার এই তেষ্টা মেটাতে পারে।কিন্তু সে তো উঠছে না।কেন উঠছে না?আদিয়াতের দম বন্ধ হয়ে আসছে।কান্নাগুলো দলা পাকিয়ে কন্ঠনালিতে এসে ঠেকেছে।এতো কষ্ট কেন?নিজের গায়েও যদি ভয়ানক এক আঘাত লাগতো তাহলে এতো ব্যাথা হতো না।কিন্তু আহিয়ানার কষ্টযে ও মেনে নিতে পারছে না।ওর দুনিয়ার চারদিক সব অন্ধকার লাগছে।আদিয়াত আবারও ধীর কন্ঠে বললো,

” এই আহি উঠ না?দেখ আমি এসেছি তো।তোকে আমি ভালোবাসি।শুনছিস তোকে ভালোবাসি আমি।এটা শোনার জন্যেই তো তুই এতো কষ্ট সহ্য করেছিস তাই না?আমি তো বলে দিলাম আমি ভালোবাসি।কতোবার বলবো একবার,দুবার,তিনবার তুই যতোবার বলবি ততোবার বলবো ভালোবাসি।প্লিজ চোখ খোল।তোর এই মৌনতা আমার হৃদয়টা ছারখার করে দিচ্ছে।উঠ প্লিজ।”

কিন্তু আহিয়ানা উঠলো না।শুনলো না আদিয়াতের এই আকুল আবেদন।
ব্যর্থ এক প্রেমিক হয়ে আদিয়াত ঘোলা চোখে তাকিয়ে রইলো আহিয়ানার দিকে।

.

আহিয়ানার অপারেশন সাকসেস হয়েছে কিন্তু বাহাত্তর ঘন্টার মাঝে জ্ঞান না আসলে আর ডাক্তারদের কিছু করার নেই তাও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে।
আদিয়াত সবটা শুনে অস্থির হয়ে উঠে।সবাই তাকে অনেক বুজিয়ে শুনিয়ে শান্ত করে কিন্তু তার একটাই কথা সে আহিয়ানার কাছে যাবে। যাবে মানে যাবে ব্যস।
আদিয়াতের এতো পাগলামির কারনে সোহেব অনুমতি দেয়।
রোজার এই হাস্পাতালে থাকতে পারে না।বেচারি বমি করে টরে শেষ।তাই ওকে জিহাদ নিয়ে চলে গেছে।জিহাদকে আদিয়াত বারন করে দিয়েছে আর আসা লাগবে না।
এশা থেকে গেছে ওকেও যেতে বলেছিলো কিন্তু এশা যাবে না বলে দেয়।
সিয়াকেও বলেছিলো জিহাদের সাথে চলে যেতে।কিন্তু সোহেব বারন করে একটাদিন থাকুক হাস্পাতালে স্যালাইন দেওয়া লাগবে ওকে।শরীর প্রচন্ড দূর্বল ওর।
সিয়াকে আহিয়ানার পাশের কেভিনেই সিফ্ট করা হয়েছে।নিহান কেভিনে প্রবেশ করে দেখে সিয়া সুয়ে আছে আর ওকে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।
নিহান ধীর পায়ে এগিয়ে গেলো সিয়ার দিকে।পাশের টুলটায় বসে পড়লো।আলতো স্বরে ডাকলো,

” সিয়া? সিয়া?”

শরীর দূর্বল থাকায় চোখ মেলে তাকাতে পারছে না সিয়া।তাও এতো সুন্দর করে ডাক দিয়েছে নিহান।তা উপেক্ষা করে ওর পক্ষে সম্ভব হলো না।কষ্ট হলেও টেনেটুনে চোখ মেলে তাকায় সিয়া।নিহান অল্প হেসে বলে,

” এই ফ্রুট্সগুলো খেয়ে নেও ভালো লাগবে।”

সিয়া ঠোঁট উলটে হালকা মাথা নাড়িয়ে জানালো সে খাবে না।নিহান চোখ ছোট ছোট করে বলে,

“এরকম বাচ্চাদের মতো করে কোন লাভ নেই।খেতেই হবে। নাহলে আমি আদিয়াতকে ডাকবো।”

সিয়া আর কি বলবে।আদিয়াতকে এখন ও আর টেন্সনে ফেলতে চায় না।তাই গাল ফুলিয়ে চুপচাপ সব খেয়ে নিলো।সিয়ার খাওয়ানো শেষে নিহান বলে,

” গুড গার্ল।এইবার চোখ বন্ধ করে ঘুমাও।আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি।”

সিয়া কোনপ্রকার ভণিতা না করে চোখ বুজলো।আর নিহান তার মায়াপরিকে দেখছে এবং তার চুলে বিলি কেটে দিচ্ছে।
.
কেটে গেলো তিনদিন।তিনদিনের মাথায়ই আহি’র জ্ঞান ফিরে আসে।তবে সে বড্ড চুপচাপ হয়ে গেছে আগের থেকে।সবাই কতোকিছু জিজ্ঞেস করে তাকে।কিন্তু সে কিছুই বলে না।একদৃষ্টিতে শুধু সিলিংয়ের দিকে তাকিয়ে থাকে।আদিয়াত ওর সাথে কতোশতো কথা বলে। কিন্তু আহি ফিরেও তাকায় না।
আদিয়াত মনের কষ্ট মনেই রাখে।তাও চেষ্টা ছাড়ছে না সে।
আদিয়াত স্যুপ নিয়ে এসেছে আহিয়ানাকে খাওয়ানোর জন্যে।আদিয়াত আহিনার পাশে বসে আস্তে করে বললো,

” আহিয়ানা! খাওয়ার সময় হয়েছে।”

আহিয়ানা নিশ্চুপ। আদিয়াত একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে।আহিয়ানাকে আস্তে করে ধরে উঠিয়ে বসিয়ে দিলো হেলান দিয়ে।তাও আহি কিছু বললো না।আদিয়াত আহিয়ানাকে খাইয়ে দিতে থাকলো।খাওয়া শেষ পর্যায়ে।এরই মাঝে বাহির থেকে শব্দ আসতে লাগলো।
মুহুর্তেই কেভিনের দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো।আদ্র,তিয়া,আয়রা,ফাহিম।নিহানকে আদ্র ফোন করে যে আহিয়ানা ভার্সিটি কেন আসছে না।নিহান ওদের সত্যিটাই বলে দেয়।আহি’র এসব হয়েছে শুনেই তারা ছুটে আসে ওকে দেখতে।

আদ্র এসেই অপারপাশে গিয়ে আহি’র হাত ধরে বলে,

” তুই ঠিক আছিস তো আহি?এখন কেমন লাগছে তোর?কোথাও কষ্ট হচ্ছে?”

আহি আদ্র’র হাতে হাত রাখলো।দৃষ্যটা দেখতেই আদিয়াতের বুকের ভীতর তীব্র এক যন্ত্রনা হলো।
আহি বললো,

” হাইপার হওয়ার কিছু নেই আমি ঠিক আছি।”

তিয়া কান্নাজড়িত গলায় বললো,

” দেখতেই তো পারছি কতোটা ঠিক ভালো আছিস। কেন করলি আহি?আজ আমাদের কথা শুনলে এসব হতো?”

আহি তাচ্ছিল্য হাসলো,

” জানিসই তো আমি খারাপ,বেপরোয়া তাহলে কেন আমার কাছে আসিস?কেন বন্ধুত্ব করলি?”

আয়রা কান্না চোখে তাকিয়েই রাগী গলায় বলল,

” টেনে দিবো এক চর। তুই কেমন আমরা ভালো করে জানি।”

ফাহিম আয়রাকে দিলো ধাক্কা বলে,

“সর এহেন্তে।”

তারপর আবার আহিয়ানার দিকে তাকিয়ে বলে,

” বউ ও বউ।তুমি ঠিক আছো?আমারে বিধবা বানানের প্লান করছিলা বউ।এটা ঠিক না।”

আয়রা ধরাম করে একটা কিল দিলো ফাহিমকে।

” তোর ফাইযলামি এখানেও যাবে না।দেখছিস মেয়েটা অসুস্থ।আর স্বামি মরলে মেয়েরা বিধবা হয়।তুই কি মেয়ে?যে তুই বিধবা হবি?”

“আস্তাগফিরুল্লাহ!! মাইয়া অশ্লীল।চল ফুট।আমার বউটারে আমি একটু দেইখা লই।”

ফাহিমের দুষ্টুমিতে আহি না হেসে পারলো না।ছেলেটা মুহূর্তেই সবার মন ভালো করতে পারে।আহিকে হাসতে দেখে ফাহিম আবারও বলে,

” এইতো বউ হেসে ফেলেছে।আহা! এইরকমই হাসি খুশি থাকবি সবসময়।”

আহি ওদের সাথে টুকটাক কথা বলছে।কেভিনে যে আদিয়াত নামের কেউ আছে সেদিকে ওর খেয়ালই নেই।তবে আদিয়াতের আছে।সে তীক্ষ্ম দৃষ্টিরে সবটা দেখছে।ফাহিমের বউ বলে আহিকে সম্বোধন করাতে ওর এতো খারাপ লাগছে না।কারন আদিয়াত ওর চোখ দেখেই বুজেছে যে ফাহিম সব দুষ্টুমি করে বলছে।সে আহিকে ভালোবাসে না।তবে আদ্র’র আহির হাত আকড়ে ধরা ওর খারাপ লাগছে।কারন সে আদ্র’র চোখে স্পষ্ট আহিয়ানার জন্যে ভালোবাসা দেখছে।কিন্তু যা হয়ে যাক আহিকে আদিয়াত কাউরও হতে দেবে না।
আর তার ব্যবস্থা আদিয়াত করেও ফেলেছে।
শুধু সময়ের অপেক্ষা।

#চলবে_________

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে জানাবেন অবশ্যই।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here