তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -২০

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২০
‘ ভালোবাসা ‘ শব্দটা ছোট হলেও এর গভীরতা বিশাল।’ভালোবাসা’ নামক রোগে যে একবার আক্রান্ত হয়েছে। সে আর নিস্তার পায়নি কখনো।এই রোগে তাকে আষ্টেপৃষ্টে আকড়ে ধরে।
ভালোবাসলে আমাদের সেই ভালোবাসার বিনিময়ে ভালোবাসা পেতে ইচ্ছে করে।যদি আমরা সেটা না পাই তবে প্রিয় মানুষটির প্রতি আমাদের মনে জমা হয় তীব্র অভিমান।একসময় সেই অভিমানের চাদরে ঢেকে যায় ভালোবাসা।আহিয়ানার সাথে ঠিক তেমনটাই হচ্ছে।যাকে ও প্রচন্ড ভালোবাসে।তার কাছ থেকেও ভালোবাসা পাওয়ার আশা করেছিলো।কিন্তু সে পায়নি।এখন যখন সেই অনাকাক্ষিত জিনিসটি পাচ্ছে তাও সে খুশি হতে পারছে না। অভিমানের কারনে এখন প্রিয় মানুষটার মুখে ভালোবাসি শুনেও কোন ভালোলাগা কাজ করছে না আর।তবে কি আদিয়াতের জন্যে আহি’র মনে যে ভালোবাসার ফুল ফুটতে শুরু করেছিলো তা পূর্ণতা পাওয়ার আগেই ঝরে গেলো?কেন এমন হলো?আজ আদিয়াত তার দুয়ারে ভালোবাসা ভিক্ষা চাইছে।একসময় সেও এইভাবে চেয়েছিলো।আজ যেমন আহি তাকে ফিরিয়ে দিলো।সেদিন ঠিক একইভাবে আদিয়াত ফিরিয়ে দিয়েছিলো।এটাই বলে ‘ রিভেঞ্জ ওফ নেচার! ‘।আদিয়াত কষ্ট পাচ্ছে।সত্যি বলতে আহি’র মনে আজ কোন কিছুই প্রভাব ফেলছে না।কোন অনুভূতিই কাজ করছে না।মনে হচ্ছে আহি মরে গেছে। একদম মন থেকে সে মরে গেছে।নিজের এই অদ্ভুত সব চিন্তা ভাবনা দেখে নিজের উপরই তাচ্ছিল্যের হাসি দিলো আহি।মাথাটা ব্যাথা করছে। বেশি ভাবাভাবি করে লাভ নেই।নিজেকে কষ্ট দিয়ে আর লাভ নেই।কি হবে আর নিজেকে কষ্ট দিয়ে।তার কষ্টে কারও কিছু যায় আসে না।এখন সে মরতে পারলেই বাঁচে।এই নিকৃষ্ট দুনিয়ায় তার বাঁচতে ইচ্ছে করে না।প্রতিটা শ্বাস প্রশ্বাসের সাথে মনে হয় তার ভীতর বিষাক্ত আবর্জনা প্রবেশ করছে।যা তার বুকের ভীতরটা জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দেয় নির্বিকার ভাবে।আজ প্রায় ১০ পর আহি নিজের বাড়ি ফিরে এসেছে।এই ১০ দিনে আদিয়াত নানান ভাবে আহি’র সাথে কথা বলতে চেয়েছে।কতোবার যে ভালোবাসি বলেছে হিসেব ছাড়া।কিন্তু আহি মুখ ফুটে আদিয়াতের সাথে টু শব্দ পর্যন্ত করেনি।কেন যেন আদিয়াতের সাথে এখন আর কথা বলতেই আর ওর ইচ্ছে করে না।খাটে হেলান দিয়ে চোখ বুজে রইলো আহি।আপাততো সে নিজেকে সময় দিতে চায়।অনেক তো হলো তাই নাহ?এইবার সব কিছুর শেষ দেখে ছাড়বে আহি।মনে মনে কঠিন এক সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো সে।এরই মাজে দরজা ঠেলে প্রবেশ করলো নিহান।বোনকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে তড়িঘড়ি করে ওর কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,

-” কিরে আহি?কি হয়েছে?মাথা ব্যাথা করছে?আমি ডক্টরকে ফোন করবো?”

আহি চোখ খুলে তাকায়।ভাইকে এতোটা অস্থির হতে দেখে মুচকি হাসলো।নিহাকে উদ্দেশ্য করে বললো, -” রিলেক্স ভাই।আ’ম ওকে।জাস্ট একটু চোখ বুজে ছিলাম।”

-” উফ! আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছিলি।”

নিহান খাবারের প্লেটটা হাতে নিলো।আহি দ্রুত বললো,-” আমি খাবো না। ভালো লাগছে না ভাইয়া।”

নিহান হালকা হেসে বলে,-” সবজি খিচুরি রান্না করেছি তাও খাবি না?”

আহিয়ানার মুখে হাসি ফুটে উঠলো।এই খাবারটা তার অনেক পছন্দের।এই খাবারটা সে কখনোই না করতে পারে না।তাই আর দ্বিমত করলো না।নিহান প্লেটের থেকে ডাকনা সরাতেই।ভ্রু-কুচকে তাকায় আহি বললো, -” এটা এমন পাতলা কেন?”

-” তুই অসুস্থ্য তাই একটু পাতলা করে রান্না করা হয়েছে। যাতে তোর খেতে কষ্ট না হয়।”

আহি ছোট করে ‘ওহ!’ বলে হা করলো।নিহান চামচ দিয়ে এক চামচ খিচুরি আহিয়ানার মুখে দিলো।আহিয়ানা খিচুরিটুকু খেয়ে অবাক চোখে ওর নিহানের দিকে তাকালো।আহিকে এইভাবে অবাক হতে দেখে একটুও বিচলিত হলো না নিহান।আহি অবাক কন্ঠেই বললো,-” এটা তুমি কোথায় পেলে?এটা তো.. এটা তো….”

-” সেহরা আন্টির রান্না।” অকোপটে বলে ফেললো নিহান।

গোল গোল চোখে তাকিয়ে রইলো আহি।এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছে না।নিহান আরেক চামচ খিচুরি আহি’র মুখে পুরে দিয়ে বলে, -” সেহরা আন্টি এসেছে তোর সাথে দেখা করার জন্যে।আমি অনুমতি দেইনি।তুই না বলা পর্যন্ত দেখা করতে দিবো না।”

আহি বিষ্ময় এখনো কাটিয়ে উঠতে পারছে না।বলে,-” কিন্তু হঠাৎ মামির আমার জন্যে এতো মায়া হলো কবে থেকে?”

নিহান আহিকে খিচুরি খাওয়াতে খাওয়াতে ঠোঁট উলটে ফেললো।বললো, -” আই ডোন্ট নো।বাট সিয়া তোর সাথে দেখা করার জন্যে অনেও জেদ ধরতেছে।ওকে আদিয়াত কোনরকম সামলিয়ে রেখেছে।”

আদিয়াতের নাম শুনে চমকে তাকায় আহি।কথাটা যেন ওর বিশ্বাস হচ্ছে না।আদিয়াত এ বাড়িতে এসেছে আর তা নিহান এতো স্বাভাবিকভাবে বলছে তাও ওর কাছে।ব্যাপারটা অদ্ভূত না। ভীষন অদ্ভূত।আহি কিছু বললো না।খাবার শেষে নিহান আহি মুখ মুছিয়ে দিলো।তারপর আহির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে, -” শোন আহি।সবসময় চোখে আমরা যা দেখি তা সত্যি হয় না।এর পিছনে নিশ্চয়ই কোন কারন থাকে।কারন ছাড়া কাউকে কোনভাবে জাজ করা ভালো না।এর পিছনের কারনটা আমাদের জানতে হয়।আমি জানি আদিয়াতের কারনে তোর জীবনে যা যা হয়েছে তা নিত্যন্তই ভীষন খারাপ সময় ছিলো তোর জীবনের।তবে বোন আমার একটা কথা শোন।একবার,অন্তত একবার আদিয়াতের কথা শোন।ওকে একবার নিজেকে এক্সপ্লেনেশন দিতে দে।তারপর নাহয় তুই যেই ডিসিশান নিবি সেটাই আমরা মেনে নিবো।”

নিহান আর দাড়ালো না চলে গেলো রুম থেকে।সত্যিই কি আদিয়াতকে একবার নিজেকে নিয়ে সাফাই গাওয়ার একটা সুযোগ দিবে আহি।তবে যদি সে আদিয়াতকে সুযোগ দেও-ও। তাহলে ওর জীবনের গত পাঁচ বছরের কষ্ট আদিয়াত মুছে দিতে পারবে?কখনোই পারবে না।ওর হৃদয়টাযে পাঁচটা বছর ধরে ক্ষত বিক্ষত হয়ে ছিন্নভিন্ন হয়েছে। সেটা কি আদিয়াত ঠিক করে দিতে পারবে?কখনো না।আর ভাবলো না।আস্তে করে বিছানায় শরীর এলিয়ে দিলো আহি।এখন ওর ঘুমানোটা বড্ড দরকার। ঘুমটাই একমাত্র ওর জন্যে ক্ষনিকের শান্তি।

মাত্রই চোখটা লেগে আসছিলো।এর মাজে ধুপধাপ শব্দে চট করে চোখজোড়া মেলে তাকায় আহি।ও উঠে বসার আগেই দরজা ঠেলে প্রবেশ করে সিয়া।চটাং চটাং পা ফেলে মুখ ফুলিয়ে আহির পাশে ধপাস করে বসে পড়লো।তার কিছুক্ষন পরেই রুমে আসে নিহান।নিহান দেখে ভেংচি কাটে সিয়া।তারপর আহির দিকে তাকিয়ে হঠাৎই আহিকে জড়িয়ে ধরে হুঁহুঁ করে কেঁদে দেয়।আহি নিজেও দুহাতে সিয়াকে জড়িয়ে ধরে।আহি সিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,- ” কি হয়েছে সিয়া?কাঁদছিস কেন?”

সিয়া আহিকে আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।ফুঁফিয়ে কেঁদে উঠে বলে,-” আই মিস্ড ইউ আপু।অনেক অনেক অনেকগুলো।তোমাকে আমি অনেক খুজেছি।তুমি কেন চলে গিয়েছিলে আপু?আমি অনেক কান্না করেছি তোমার জন্যে।”
-” পরিস্থির স্বিকার হয়ে আমাকে যেতে হয়েছে সিয়া।”

আহির কথায় নাকটেনে কেঁদে সিয়া বলে,-” আমার আম্মুর কারনে চলে গিয়েছিলে তাই নাহ আপু?আমি জানি।তাই তো আমি আম্মুর সাথে কথা বলি না।আর বলবোও না তিনি খুব খারাপ একটা কাজ করেছেন।আমি তাকে ক্ষমা করবো না।”

আহি আঁতকে উঠে বলে,-” আল্লাহ! না বোন।মায়েদের সাথে রাগ করতে নেই।আল্লাহ্ নারাজ হয়।তুই উনাকে কষ্ট দিস না।”

সিয়া আহিকে ছেড়ে দিয়ে বলে,-” উনি তো তোমার সাথে অন্যায় করেছে তাই না?”

আহি সিয়ার গালে হাত রেখে আদুরে গলায় বললো,

-” মা যতোই ভুল করুক।মা মায়ই।সন্তানের মঙ্গলের জন্যেই তারা এসব করে।তুই কেন তাকে কষ্ট দিচ্ছিস।আর এমন করবি না।আজ থেকে কথা বলবি মামির সাথে।”
-” আচ্ছা এখন বলো তোমার শরীর কেমন? কেমন লাগছে?”
আহি হালকা হেসে বলে,-” ফিলিং বেটার।চিন্তা করিস না।”

সিয়া মুখ ফুলিয়ে একবার তাকালো নিহানের দিকে।যে আপাততো সিয়াকেই দেখছে।সিয়া নিহানের চাহনী উপেক্ষা করে বলে,-” জানো আমি তোমার সাথে দেখা করার জন্যে কতোটা ছটফট করেছি।কিন্তু তোমার বজ্জাত ভাই আমাকে আসতেই দিতে চাইনি।আমি অনেক জোড়জবরদস্তি করে এসেছি।”

নিহান হা করে তাকিয়ে আছে।কি সাহস এই মেয়ের।ওর সামনে দাড়িয়ে ওরই বোনের সামনে ওর নামে নালিশ কর হচ্ছে।নিহান হালকা ধমকের স্বরে ব্ললে,
-” এই মেয়ে এই।আমার সামনে দাঁড়িয়ে আবার আমার বোনের কাছেই আমার নামে বিচার দিচ্ছো কতো বড় সাহস তোমার।”

সিয়া উঠে দাড়িয়ে দু কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,

-” আমি কি আপনাকে ভয় পাই না-কি?”

-“তুলে এক আছাড় দিবো যখন তখন ঠিকই ভয় পাবে।”

সিয়া এইবার আহিকে উদ্দেশ্য করে বললো,

” দেখেছো আপু! দেখেছো কতো খারাপ।এই বজ্জাত হনুমানটা।”

নিহান কিছু বলতে নিবে।আহি হেসে ওকে থামিয়ে দেয়।

-” আহ! ভাই থাম না।তুইও কি বাচ্চা হয়ে গিয়েছিস?”

নিহা৷ রিরক্ত নিয়ে বলে,

-” তাহলে এই মেয়ে কিসব উলটাপালটা বলছে?”

-” বাচ্চা মেয়ে।বলে ফেলেছে।”

আহির কথায় সিয়া আরো ক্ষেপে গিয়ে বলে,

-” এই আহি আপু তুমি বাচ্চা কাকে বলছো হ্যা?জানো আমি এখন ১৮+। আর তুমি আমাকে এখনো বাচ্চা বলছো?”

আহি অবাক হওয়ার ভাণ ধরে বললো,

” আরে বাবা! সত্যি তো আমাদর সিয়া বড় হয়ে গিয়েছে।তাহলে তো তাকে বিয়ে দেওয়া লাগবে তাই না?”

সিয়া মজার ছলেই বলে ফেললো,

-” এহহ! আমার থেকে তো তুমি বড়।আগে তুমি বিয়ে কর।তারপর আমি করবো।”

‘ বিয়ে ‘ শব্দটা শুনেই আহির মনটা বিষাদে ছেয়ে গেলো।আবার বিয়ে করবে সে?কেন করবে?সে আর বিয়ে করতে চায় না।একবার তো বিয়ে হয়েছে।তার স্বামি মৃত।সে বিধবা।আর এই বিয়ে নামক ঝামেলায় সে জড়াতে চায় না।বাকি জীবনটা একলা কাটাতে চায় সে।আহি মন খারাপ ভাব দেখেই সিয়া বুজলো। তার মজার ছলে বলা কথাটা আহিকে কষ্ট দিয়েছে।মুহূর্তে সিয়া দু হাতে কানে ধরে কাদো গলায় বললো,

-” আ’ম সরি আপু।আমি তোমাকে হার্ট করতে চাই নি।”

সিয়ার গলার স্বর শুনতেই চমকে নিজেকে আবার আগের ন্যায় করে নিলো আহি।সিয়াকে ধরে নিজের পাশে বসিয়ে বললো,

-” আরে পাগল মেয়ে।কিছু হয়নি।আমি ঠিক আছি।জাস্ট একটু মাথা ব্যাথা করছে।”

সিয়া চট জলদি উঠে দাড়ালো।বলে,

-” আমাকে আগে বলবা না তোমার মাথা ব্যাথা।তাহলে এখন তুমি সুয়ে থাকো মেডিসিন নিয়ে।আমি আবার কাল আসবো।টা টা।”

আহি হাসি মুখেই বলে,

-” আচ্ছা টা টা।কাল আসবেই কিন্তু সিয়া।”

-” আচ্ছা!”

সিয়া চলে গেলো।নিহান যেতে নিলেই আহি ডাকে তাকে।

-” ভাই শুনে যা।”

আহির ডাকে নিহান আহির কাছে এসে বসে।
আহি গম্ভীর গলায় বলে,

-” ভাই তোর কাছ থেকে আজ আমি কিছু চাইবো।আশা করি আমাকে ফিরিয়ে দিবি না।”

নিহান দ্রুত বললো,

-” তুই একবার বল শুধু।আমি তোর সব আবদার পূরন করবো।”

-” ভাই আমি দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাই।আমাকে অস্ট্রেলিয়া যাওয়ার ব্যবস্থা করে দে।”

নিহান বিষ্ময় নিয়ে তাকালো আহির দিকে।কাঁপা গলায় বলে,

-” তুই ঠিক আছিস তো?কিসব আবোল তাবোল বলছিস?”

-” আমি ঠিক আছি।এখন তুই বল আমাকে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিবি কি-না?নাহলে আমি একাই সব করতে পারবো।তুই জানিস সেটা আমি ভালোই পারবো।”

নিহান বললো,

-” নাহ! নাহ! থাক তোর কিছু করা লাগবে না।আমি সব ব্যবস্থা করবো।তুই একটু সুস্থ্য হো।আমি সব ব্যবস্থা করে দিবো।”

-” আচ্ছা যা।আমি একটু ঘুমাবো।মাথা ব্যাথা করছে।”

নিহান মাথা ঝাকালো।আহিকে সব মেডিসিন খাইয়ে দিয়ে চলে গেলো।
আহি বিছানায় সুয়ে আছে।ওর চোখের কোণ বেয়ে জলের ধারা বইয়ে।এই এক অসয্য যন্ত্রনা ওকে চারপাশ থেকে ঘিরে ধরেছে।এই শহর,এই দেশ সব কিছুতে ওর দম বন্ধ হয়ে আসছে।আপাততো শান্তি চায়।সব কিছু ছেড়েছুড়ে বহু দূরে একাকি শুধু নিজেকে নিয়ে থাকতে চায়।
কিন্তু আদৌ কি তা সম্ভব?এই পাঁচ বছরে আদিয়াত থেকে দূরে তো থেকেছে ঠিকই।কিন্তু আদিয়াতের শূন্যতা ওকে কুড়ে কুড়ে খেয়েছে।
তবে মানিয়ে নিয়েছিলো।এখন আবার হঠাৎ করে এসে ওর সবটা এলোমেলো করে দিলো সে।এখন তার কাছের মানুষ গুলো থেকেও দূরে চলে যেতে হবে।কথাগুলো ভাবতেই ঠুকড়ে কেঁদে উঠে আহি।কাঁদতে কাঁদতে একসময় ঘুমিয়ে পরে।
.

ঘরে এসে ক্রমাগত পাইচারি করছে নিহান।কিছুতেই সে নিজেকে স্থির রাখতে পারছে না। অবশেষে সব দ্বিধা দন্দ ভূলে আদিয়াতকে ফোন লাগালো নিহান।কারন আদিয়াত রা চলে গিয়েছে অনেক আগেই।কিছুক্ষণ রিং হওয়ার পরেই রিসিভ করে আদিয়াত।

-” হ্যালো!”

-” হ্যালো আদি!”

-” হ্যা নিহান বলো।”

-” তোমাকে একটা জরুরি কথা বলবো।”

নিহান অস্থির কন্ঠে শুনে ঘাবড়ে যায় আদিয়াত।দ্রুত বলে,

-” নিহান?আহিয়ানা ঠিক আছে?ওর কিছু হয়নি তো?ও কোথায়? কি করছে?”

-” আরে আদি রিলেক্স আহি ঠিক আছে।ও ঘুমোচ্ছে।কিন্তু ব্যাপারটা আহিকে নিয়েই।”

আদিয়াত চিন্তিত স্বরে বললো,

-” কি কথা নিহান? ”

-” আহি এই দেশ ছেড়ে চলে যেতে চাইছে। আই মিন অষ্ট্রেলিয়া চলে যাবে বলছে।”

কথা যেন বজ্রপাতের ন্যায় শোনা গেলো আদিয়াতের কানে। নিজের কানকে ঠিক বিশ্বাস করাতে পারছে না আদিয়াত।একবার ও দূরে চলে গিয়েছিলো।আজ আবার আহিয়ানা?এটা কি আহিয়ানা ওর থেকে প্রতিশোধ নিচ্ছে?

নিহান আবার বলে,

-” কথাটা তোমাকে জানানো জরুরি মনে করলাম।তাই বললাম।আহিয়ানার মাথা ঠিক নেই।তুমি প্লিজ ওকে একটু সামলাও।আমিও চেষ্টা করবো ওকে বুজানোর।কিন্তু ওর কাজে বাধা দেওয়ার মতো কাজ আমি পারবো না।তাই তোমাকে বললাম সব। এখন দেখ তুমি কিছু করতে পারো কি-না।

আদিয়াত একটা ছোট্ট দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বলে,

-” থাক্স নিহান।আমাকে এতো গুরুত্বপূর্ণ একটা কথা জানানোর জন্যে।তোমার এই অবদান আমি কখনো ভূলবো না।”

নিহান শান্ত স্বরে বলে,

-” আমার বোনের সুখের জন্যে আমি সব পারবো।।রাখছি।ভালো থেকো।”

-” আচ্ছা! আল্লাহ্ হাফেজ।”

ফোন রাখতেই আদিয়াত ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।দুহাতে মাথা চেপে ধরলো।না এখন আর ওকে বসে থাকলে চলবে না।যে কাজটা করার জন্যে আহিয়ানার সুস্থ্য হওয়া অব্দি অপেক্ষা করেছিলো।সেটা ওকে কালই করতে হবে।আহিকে নিজের করে পাওয়ার জন্যে আদিয়াত সব করতে পারবে সব।তবুও সে আহিকে ছাড়া আর এক মুহূর্তও থাকতে পারবে না।
অনেক হয়েছে পাঁচ বছর সেও কষ্ট পেয়েছে।আহি তার থেকে তিনগুন বেশি কষ্ট করেছে।
মানছে তার ভূলের কারনে সবটা হয়েছে।কিন্তু আবারও একই ভুল আদিয়াত আর আহিকে করতে দিবে না।অনেক তো হলো?এইবার নাহয় অবশান ঘটবে মান অভিমানের।আচ্ছা সত্যিই কি মান অভিমান ঠিক হয়ে যাবে?না-কি আদিয়াত যা করতে চলেছে এর কারনে ওদের মাজে আরো দূরুত্ব সৃষ্টি হবে?জানা নেই আদিয়াতের।আর সে জানতেও চায় না।যা সে ভেবে নিয়েছে।সেটা সে করবেই যেকোন মূল্যে।অটল সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলো আদিয়াত।

#চলবে_______

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here