তোমার প্রেমের ছোঁয়ায় পর্ব -২১

#তোমার_প্রেমের_ছোঁয়ায়💜
#সাদিয়া_জাহান_উম্মি💜
#পার্টঃ২১(ধামাকা পর্ব)
——” আমি আপনাকে কখনই বিয়ে করবো না!” কথাটা চেঁচিয়ে বললো আহি।

এতে আদিয়াতের কোন ভাবান্তর হলো না।সে এখনো শান্তভাবে তাকিয়ে আছে আহি’র দিকে।এটা যে আহি বলবে সে জানতো।নির্বিকারে সে আহি’র দিকে এগিয়ে গেলো।তা দেখে আহি ভরকে গিয়ে দু কদম পিছিয়ে গেলো।আদিয়াত বাকা হেসে বলে,

——” আজও তুই আমায় ভয় পাস আহিয়ানা!”

আহি শুকনো ঢোক গিললো। নিজের ভয় টাকে লুকিয়ে ফেললো।আদিয়াতের সামনে ভয় পেলে চলবে না।নিজেকে যথা সাধ্য স্বাভাবিক রেখে আহি বললো,

——” আমি মোটেও আপনাকে ভয় পাই না।”

——” তুই বললেই হলো?আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি।”

আদিয়াতের কথাটা শুনে আহি অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে রইলো।আদিয়াত আহি’র দিকে এগিয়ে গিয়ে পিছন থেকে আহি’র দু-বাহু চেপে ধরে সামনে ঘুরালো।আহি নিজেকে ছাড়ানোর জন্যে ছটফট করছে।আদিয়াত শক্ত কন্ঠে বলে,

——” দেখ আহিয়ানা আমাকে রাগাস না।চুপচাপ কবুল বলে দিবি।আর সাইন করে দিবি। এখন ভালো মেয়ের মতো রেডি হয়ে নেহ।সময় নেই।”

আহি এক ঝটকায় আদিয়াত থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে নিলো।বলে,

——” কেন করছেন এসব।আর কতো কষ্ট দিতে চাইছেন আপনি আমাকে?আর কতো আমাকে তিলে তিলে শেষ করবেন।এর থেকে ভালো আমাকেই মেরে ফেলুন নাহ একেবারে।আমি মরলেই সব শান্তি।”

আদিয়াত দ্রুত গিয়ে আহি’র মুখ চেপে ধরলো।আহি ব্যাথায় চোখ বুজে ফেললো।এতোক্ষন বহু কষ্টে আটকে রাখা জলটুকু আর ধরে রাখতে পারলো না।তা গাল গড়িয়ে পরলো।আদিয়াত রাগি কন্ঠে বলে,

——” কাঁদছিস কেন?হ্যা?একদম কাঁদবি না।মরার খুব শখ তাই না।ওকে ফাইন তুই তো আমায় বিয়ে করবি না তাই না?বল বিয়ে করবি না?”

আহি কান্নামাখা চোখে আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে শক্ত কন্ঠে বললো,

——” শুনেন নি?একবার বললাম না। বিয়ে করবো না! ”

আদিয়াত আহিকে ছেড়ে দিলো।দুহাতে মাথার চুল খামছে ধরে কতোক্ষন জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিলো।ভয়ানক গম্ভীর গলায় বললো,

——” ওকে ফাইন।বিয়ে করতে হবে না তোকে।বাট আমি নিজেকেই শেষ করে দিবো।বিকজ আই ডোন্ট ওয়ান্ট টু লিভ উদাউট ইউ।”

কথাটা কর্ণপাত হতেই চমকে যায় আহি।কিন্তু ততোক্ষনে টেবিলে রাখা ফ্লাওয়ার ব্যাসটা আদিয়াত ভেঙে ফেলেছে।আহি চিৎকার করে আদিয়াতকে ধরতে যাওয়ার আগেই আদিয়াত হেঁচকা টান মারে নিজের হাতের শিরার উপর।ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হচ্ছে।আবারও একই কাজ করতে গেলে।আহিয়ানা দৌড়ে গিয়ে আদিয়াতকে ঝাপ্টে ধরে।এক ঝটকায় আদিয়াতের হাতের থেকে ভাঙা কাচটা ফেলে দেয়।আদিয়াত আহিকে সরাতে চাইছে।কিন্তু আহি ছাড়ছেই।শক্ত করে আদিয়াতকে জড়িয়ে ধরে জোড়ে জোড়ে কান্না করছে।আদিয়াত এইবার বলে,

——” কেন এসেছিস আমাকে বাঁচাতে।তুই না আমাকে বিয়ে করবি না।তুই না বলেছিস তুই আমাকে ভালোবাসিস না।তাহলে আমি বাঁচি বা ম……….”

কথাটা শেষ করতে পারলো না।তার আগেই আহি চেঁচিয়ে কান্না করে বললো,

——” ভালোবাসি।খুব বেশি ভালোবাসি।অনেক ভালোবাসি।প্লিজ এইসব করবেন না।প্লিজ।আপনার একফোটা কষ্টও আমার সহ্য হয় না।”

আদিয়াতের চোখেও পানি চলে এসেছে।আজ কতোদিন পর ঠিক কতোদিন?পাঁচবছর, ৩ মাস,১৭ দিন,৮ ঘন্টা পর শুনলো এই কথাটা।আদিয়াত ধরা গলায় বলে,

——” আমাকে তো বিয়ে করবি না।তাহলে? আমি তোকে না পেলে বেঁচে থেকে কি করবো? ছাড় আমাকে।”

আহি আদিয়াতকে ছেড়ে দিলো।এখনো ওর চোখ থেকে টপটপ করে পানি ঝরছে।আহি বললো,

——” আমি আপনাকে বিয়ে করবো।”

আদিয়াত নিজের চোখ জোড়া বন্ধ করে নিলো।কেন যেন ওর মনটা প্রশান্তিতে ভরে গেলো।আহি আর ওর বিয়ে হবে।ওর বউ আহি হবে।ভাবতেই মনটা ভরে যাচ্ছে।
আদিয়াত দ্রুত আহিকে দুহাতে জড়িয়ে ধরলো।পরপর দু-তিনটে চুমু খেলো আহির চুলে।তারপর আহিকে ছেড়ে দিয়ে ওর গালে হাত রেখে বলে,

——” তুই চিন্তা করিস না আহিয়ানা।আমি সব ঠিক করে দিবো।একবার বিয়েটা হোক। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে।”

আহি কিছুই বললো না।শুধু একপলক আদিয়াতের দিকে তাকিয়ে ওর হাত ধরে আদিয়াতকে বিছানায় বসালো।তারপর ড্র‍য়ার থেকে ফার্স্ট এইড বক্স বের করে।আদিয়াতের হাতে সযত্নে ব্যান্ডেজ করে দিলো।ইসস, কতোখানি কেটেছে।আহি’র আবারও অস্রুরা ভির জমালো।সে আর যাই চাক।আদিয়াত কষ্ট পায় এমন কিছু সে সহ্য করতে পারে না।আর আদিয়াত মরে যাবে।কথাটা চিন্তা করলেই তো ওর অন্তর আত্মা কেঁপে উঠে।এইগুলো ভাবলেই তো ওর নিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়ে উঠে।
আহি ঝাপসা চোখে আদিয়াতের ব্যান্ডেজ করে দিলো।পুরোটা সময় আদিয়াত আহি’র দিকে তাকিয়ে ছিলো।
মেয়েটা বলে সে না-কি ওকে ভালোবাসে না।তাহলে ওর ব্যাথায় এই মেয়ে কেঁদে কেটে বুক ভাসালো কেন?কেন ওর চোখে আদিয়াতের জন্যে এতোটা বেদনা দেখছে সে?ভালোবাসে বলেই তো তাই না? আদিয়াত নিশব্দে হাসলো।ব্যান্ডেজ শেষে আদিয়াত উঠে দাড়িয়ে বললো,

——” পার্লারের মেয়েরা বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে।আমি ওদের ভীতরে পাঠাচ্ছি।সুন্দর করে আমার মনমতো বউ সেঁজে আসবি।আমি অপেক্ষায় থাকবো।”

আদিয়াতের কপালে চুমু খেয়ে চলে গেলো। কিছুক্ষণ পর পার্লারের মেয়েরা এসে আহি’কে রেডি করাতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।

কিছুক্ষণ আগের ঘটনা—–
সেদিনের ঘটনার তিনদিন পর আহি ভার্সিটি গিয়েছিলো। সারাদিন আদ্র,তিয়া,আয়রা, ফাহিমের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি ফিরেই এসে দেখে আদিয়াত সোফায় বসে আছে।সেই সাথে সেহরা জাহান,হাসান আহমেদ আর সিয়াও ছিলো।হঠাৎ এভাবে তারা এখানে আসায় অবাক হয় আহি।পরক্ষনে যখন শুনলো আদিয়াত আজ আহিয়ানাকে বিয়ে করবে।তখনি মাথা গরম হয়ে যায় আহি’র।আদিয়াত এদিকে তো সাথে করে কাজি আর হুজুর নিয়েই এসেছে।সাথে ইয়া বড় ল্যাগেজে আছে বউ সাজার সবকিছু।
কিন্তু আহি সাফ জানিয়ে দেয় সে বিয়ে করবে না।
নিহান ও কিছু বলছে না।কারন সে চায়না ওর কথায় আহি কিছু করুক।তাই যখন আহি নিজের রুমে চলে যাচ্ছিলো।নিহান আদিয়াতকেও ওর পিছে পিছে যেতে বলে।আহি রুমে ডুকে দরজা আটকাবে তার আগেই আদিয়াত ডুকে পরে।নিহান বুদ্ধিটা কাজে দিয়েছে।ভেবে মুচঁকি হাসলো আদিয়াত।এদিকে নিহান মাথা নিচু করে বসেছিলো।সে চাইছিলো না এইভাবে জোড়জবরদস্তি বিয়েটা হোক।কিন্তু কিছু করার নেই।বোনের ভালোর জন্যেই আজ ওকে এইসব করতে হবে।সে জানে আহিকে আদিয়াত ছাড়া কেউ এতোটা ভালোবাসতে পারবে না।আদিয়াত ঠিক সামলে নিবে আহিকে।এর পরের যা হলো তা তো জানেনই।”
বর্তমানে————-

সোফায় মাথা নিচু করে বসে আছে আহি।ওর পাশে বসে আছে সিয়া।সিয়া তো বেজায় খুশি।অবশেষে ওর মনের আশা পূর্ণ হয়েছে।আহি এখন ওর ভাবি।
হ্যা আদিয়াত আর আহি’র বিয়েটা হয়ে গিয়েছে।সব নিয়ম রিতি মনে সুষ্টভাবে বিয়ে সম্পন্ন হয়েছে।
লাল টকটকে বেনারসি,মাথায় গোল্ডেন কালার উড়না দেওয়া,হালকা মেক-আপ,হাতে পায়ে আলতা আর সাথে মেহেদিও আছে, পা থেকে মাথা অব্দি গহনা দিয়ে ভরপুর।আহিকে যেন অপসারী লাগছে।আদিয়াতও চোখই সরাতে পারছে না।পুরোটা সময় সে শুধু আহিয়ানাকে দেখে গিয়েছে। এই দিনটার জন্যে সে কতো অপেক্ষা করেছে।আহিকে নিজের সহধর্মিণী রূপে দেখার ইচ্ছে আজ পূরন হলো ওর।আজ থেকে আহি মিস আহিয়ানা তাবাস্সুম যীনাত থেকে মিসেস আহিয়ানা তাবাস্সু্ম যীনাত আদিয়াত আহমেদ। ইসস, কতো বড় একটা নাম। এটা ভালো না।মিসেস আদিয়াত আহমেদ।কথাগুলো ভাবতেই মুচঁকি হেসে আবারও নিজের প্রেয়সীকে দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো।
এইবার বিদায়ের পালা।আহি সবাইকে ধরে অনেক কান্না করছে।দাদিকে ধরে কতো কিছু বললো। দাদিও কান্না করছে।অবশ্য আহি’র জন্যে কাঁদছে শুধু দুজন।দাদি আর নিহান।নিহান কাঁদতে চাইছিলো না।কিন্তু নিজের একমাত্র কলিজার টুকরো বোনকে বিদায় দিয়ে দিতে হবে ভেবে কান্নাগুলো আটকে রাখতে পারলো না।বোনকে বুকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।আহির মাথায় চুমু খেয়ে বলে,

——” নিজেকে আর কষ্ট দিস না বোন।যা হয়েছে মেনে নেহ।আদিয়াত তোর স্বামি।নিজের ভালোবাসাকে আর একবার সুযোগ দে।নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তায়ালা তোর জন্যে ভালো কিছু রেখেছে।আর নিজেকে গুমড়ে গুমড়ে মারিস না।তোর এই ভাইটা তোর এই কষ্ট সহ্য করতে পারবে না।আদিয়াতকে একবার সুযোগ দিস বোন। অন্তত এই ভাইটার কথা মনে করে একবার সুযোগ দিস।”

নিহান আদিয়াতের হাতে আহির হাত তুলে দিলো।একহাতে চোখের জল মুছে বললো,

——” আমার বোনটাকে দেখে রেখো আদিয়াত।আর ওকে কষ্ট পেতে দিও না।ওকে ভালোবেসে আগলে রাখবো।”

আদিয়াত নিজের হাতেত মাজে আহির হাতটা শক্ত করে চেঁপে ধরে আহির দিকে তাকিয়ে থেকেই বলে,

——” ইনশাআল্লাহ যতোদিন বেঁচে আছি।এই হাত ছাড়বো না।আর ওকে আর কষ্ট পেতেও হবে না।সব বিপদ থেকে ওকে আমি আগলে রাখবো।এইটা ওয়াদা আমার তোমার কাছে।”

আদিয়াত আহিকে জড়িয়ে ধরলো।আহি তখনো কান্না করছে।নিহানের চোখে আবারও জল ভরে উঠলো।সিয়া আলতো করে নিহানের হাত স্পর্শ করলো।এই আলতো স্পর্শেও যেন নিহানের ভিতর শুদ্ধু কেঁপে উঠলো।হৃদস্পন্দন দ্রুত গতিতে ছুটতে লাগলো।নির্ঘাত সে মারা টারা যাবে।করছে টা কি এই মেয়ে?
সিয়া মিষ্টি করে হেসে বলে,

——” একদম চিন্তা করবেন না।আমি আছি তো আমি দেখে রাখবো আহি আপুকে।আগে তো ছোট ছিলাম।এখন অনেক বড় হয়েছি।এখন আপুকে আমি আগলে রাখবো।এখন আপনি আর কান্না করিয়েন না।কান্না করলে আপনাকে পঁচা লাগে।”

নিহানের কি হলো কি জানে?সিয়ার কথা শুনে সত্যি সত্যি তার কান্না থেমে গেলো অদ্ভুত।

#চলবে_________

ভুলত্রুটি ক্ষমা করবেন।কেমন হয়েছে অবশ্যই জানাবেন

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here