তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৩২+৩৩

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩২

আকাশ ভেঙ্গে বৃষ্টি পড়ছে, বৃষ্টির পানিতে সজীব হয়ে উঠছে সবকিছু। ভার্সিটির কেউ কেউ ভিজছে বৃষ্টিতে , আবার কেউ কেউ ছাতা মাথায় রওনাও হয়েছে। আবার কেউ কেউ দাড়িয়ে অপেক্ষা করছে। তিথি হা হয়ে বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে বলল, “যা! এখন ফিরব কি করে? আমি তো ছাতাও আনি নি।

নিঝুম বলে উঠল, “চিন্তা করিস না আমি এনেছি, এক ছাতার নিচে দুজন হেঁটে চলে যাবো।

ইফা বলে উঠল, “তোরা চাইলে আমি তোদের লিফট দিতে পারি।

তিথি আর নিঝুম দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে বলল, “না! বৃষ্টির দিনে ছাতা মাথায় করে যাওয়াতে যেই মজা সেটা তোর গাড়িতে পাওয়া যাবে না।

তিথিও নিঝুমের কথায় সায় দিল। ইফা হেসে বলল, “তাহলে আমি গেলাম।
অতঃপর দৌড়ে হেঁটে গাড়ির অবদি পৌঁছাল সে।

নিঝুম পাশ ফিরে তাকাল। তানিশা শান্ত’র‌ হাত চেপে দৌড়ে বৃষ্টিতে নেমে পড়লো। শান্ত বলে উঠল, “আরে এটা কি করছিস?

“কি করছি আবার, বৃষ্টিতে ভিজছি।

“তাহলে আমাকে টানছিস কেন?

“তো একা একা ভিজবো নাকি, চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাক তুই!

শান্ত দুই হাত প্যান্টের প্যাকেটে রেখে দাঁড়িয়ে রইল। তানিশা লাফিয়ে বৃষ্টিতে ভিজছে। কোন মানে হয় এসবের! হঠাৎ তানিশা থেমে গেল। থতমত খেয়ে তাকিয়ে রইল শান্ত’র দিকে। শান্ত বলে উঠল , “কি হলো তোর আবার?

“শশশশশান্ত র*ক্ত!

“কি র*ক্ত!

“তোর গা বেয়ে র*ক্ত ঝড়ছে শান্ত।

“কি বলছিস আবোলতাবোল!

বলেই শান্ত তার শরীরে হাত রাখল। হাতের দিকে তাকিয়ে রইল তার হাত লাল হয়ে গেছে। আতঙ্কিত চোখে তাকিয়ে রইল তানিশার দিকে। বলে উঠল , “এটা কিই?

“তোর কি হয়েছে শান্ত!

আহনাফ , আহিম সবাই দৌড়ে এলো এই মুহুর্তে। আহনাফ অবাক কন্ঠে বলল, “শান্ত! তোর মাথা ফা”টল কি করে?

“আরে কি বলছিস এসব? আমার কিছুই হয় নি।

“তাহলে এসব কি?

“আমি নিজেও বুঝতে পারছি না কিছু।

আহিম ভ্রু কুঁচকে বলল, “এক মিনিট!

অতঃপর সামনে এসে শান্ত’র ঘাড়ে হাত রাখল। রক্তে*র মতো লাল লাল রঙ গুলো তার হাতে লাগল। আহিম হালকা কেশে বলল, “এগুলো র*ক্ত না, রঙ!

উপস্থিত সবাই অবাক। তানিশা এগিয়ে গিয়ে বলল, “দেখি দেখি!

দেখা গেল এগুলো সত্যি সত্যি রঙ। শান্ত চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝে নিস্তব্ধতা! হাসবে না চুপ থাকবে কিছুই বুঝতে পারছে না। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “এটা চশমিসের কাজ!

বলেই পিছন ঘুরল। তাকিয়ে দেখল চশমিসের রিক্সায় উঠছে। কিন্তু তার আগে তার মুখে বিজয়ের হাসি। হাত নাড়িয়ে বিদায় দিচ্ছে তাকে। আবারো মুখ ফুটে বলছে, “বাই বাই অশান্ত!

আফিন মুখ ফস্কে বলে ফেলল, “শেষে নিঝুম তোকে বোকা বানালো শান্ত!

শান্ত রক্ত*বর্ণ দৃষ্টিতে তার দিকে ফিরল। আফিন সাথে সাথে চুপ হয়ে গেল। হন হন করে হেঁটে চলে গেল শান্ত!

——

আদ্রিয়ান স্যার যেখানে থাকে তিথিকেও সেখানেই পাওয়া যায়। এটা অবশ্য নতুন কিছু না। যে মেয়ে পড়াশোনার কাছে অবদি যায় না, নিঝুম সেই মেয়েকে লাইব্রেরিতে খুঁজে পায়। কারণ সেখানে আদ্রিয়ান স্যার উপস্থিত! এই মেয়ে রীতিমতো স্যারের প্রেমে পাগল হয়ে গেছে। স্যার ছাড়া আর কিছুই মাথায় নেই তার। সবসময় তার গল্প!

কিন্তু আজ সেই মেয়েকেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। বোঝা মুশকিল, কি হলো আবার! স্যারের ক্লাস অথচ তিথি নেই সেই ক্লাসে এটা হতেই পারে না। নিঝুম আর ইফার কাছে অবাক হবার মতো এর চেয়ে বড় আর কিছুই নেই।

নীলাভ্র ক্যাম্পাসের কাছ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। হঠাৎ দেখল গাছের নিচে টাইসের উপর বসে কে যেন কাঁদছে। নীলাভ্র একবার তার দিকে উঁকি মারল। তিথিও উঁকি মারল। তিথিকে দেখতে পেয়ে নীলাভ্র চুপচাপ হেঁটে চলে গেল। খানিকবাদেই তার পাশে কেউ বসল। তিথির তাতে কিছু যায় আসে না। কে বসল তা দেখার জন্য তার কৌতুহল নেই। তার সমস্ত মন হাতে থাকা কার্ডের উপর। এটা আরিয়ান স্যারের বিয়ের কার্ড। স্যার বিয়ে করছে, তাও অন্য কাউকে! ভাবতেই সে কি কষ্ট তিথির।

হাতের কার্ড টা কেউ নিয়ে নিল। তিথি মুখ ফিরে তাকিয়ে দেখল আহিম। আহিম হেসে বলল, “তাহলে তুমি এই কারণে কাঁদছ? স্যারের বিয়ে তো ভালো খবর, কোথায় গিয়ে মিষ্টি খাইতে চাইবে তা না করে এই করছো।

“এএই আপনি এখানে কি করছেন?

‘কিছুই না। নীলাভ্র বলল, কাঁদতে কাঁদতে কেউ সাগর বানিয়ে ফেলছে তাই তাকে দেখতে এলাম আমি।

“দেখা শেষ তো চলে যান

“চলেই তো যেতাম। কিন্তু এটা বুঝলাম না, স্যারের বিয়ের কার্ড তুমি পেল অথচ আমরা পেলাম না তা কি করে?

তিথি দাঁতে দাঁত চেপে তাকিয়ে রইল। আহিম বলল, “আচ্ছা থাক না বলতে চাইলে না বলবে। আমি উঠে যাচ্ছি!

উঠে যেতেই তিথি আরো জোরে কাঁদতে লাগল। আহিম পড়ল মহাবিপদে। সে বসে পড়ে তাকে শান্ত করতে লাগল। কিন্তু তিথি থামবার মেয়ে নয়। কোন গতিপথ না পেয়ে ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে তিথির হাতে দিয়ে বলল, “থামো প্লিজ!

তিথি কান্না থামিয়ে,”আচ্ছা!

দীর্ঘশ্বাস ফেলল আহিম। কার্ড টা হাতে নিয়ে দেখল গোটা অক্ষরে পাত্রীর নাম লেখা। চমকে গেল সে! আরে এতো তিথির নাম।

“স্যারের বিয়ে তোমার সাথে।

“কে বলেছে আপনাকে?

“এই যে এখানে তোমার নাম লেখা দেখি!

তিথি নাক টানতে টানতে বলল, “ওই তো নামটাই এক কিন্তু মানুষ তো এক না। আমার ফুফাতো বোনের বান্ধবীর সাথে স্যারের বিয়ে। তার নামও তিথি! দেখলেন বিধাতার কি খেলা, নাম তো এক’ই ! পাত্রীটা আমি কি হলো কি হতো?

“কিছুই হতো না, তোমার সাথে স্যারের বিয়েটা হতো।

“ইশ কি ভালোই না হতো!

“এতো বিয়ের শখ তোমার

“আপনি কি বুঝেন বিয়ের মানে

“মানে বুঝে কি হবে, আমার বিয়ে শাদির কোন ইচ্ছা নাই।

“আমার তো আছে, দিন কার্ড দিন।

হাত থেকে কার্ড টা ছুঁ মেরে নিয়ে চলে গেল হন হন করে। এক মেয়ের এই কতো রুপ রে বাবা!

—–

আহনাফ আর শান্ত দু’জনেই শান্ত’র ফ্ল্যাটের ছাদের উপর বসে আছে।‌ আজকের আকাশটা খুব পরিষ্কার। চাঁদ কে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে আজ। ছাদের এক কোনে আলো জ্বলছে , আহনাফের হাতে চিপসের প্যাকেট। এক প্যাকেট থেকে চিপস দুজনে খাচ্ছে। এই নিরব সময়ে চিপসের আওয়াজ অমি’র কাছে ভয়ের কারণ বলে মনে হচ্ছে। চিপসের এক একটা শব্দে লাফিয়ে উঠছে সে। মাঝে মাঝে আবার দেওয়ালের এদিক ওদিক শুকছে। তার গলার ঘন্টা টা বাজছে টুং টুং করে!

রাত অতোটাও গভীর না, এই তো ১০.১০ বাজল সবে। আহনাফ চিপস মুখে পুরে বলল, “এভাবে বসে থাকতে ভালো লাগছে না।

“তা আমি কি করবো?

“চল কিছু একটা খেলা যাক!

“ট্রুথ এন্ড ডেয়ার!

“আমাদের মাঝে ট্রুথের কি আছে, এমন কি আছে যা আমি জানি তুই জানিস না।

“তাহলে শুধুই ডেয়ার!

“তাহলে প্রথমে..

শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি দেবো!

“বল!

“কোন একটা মেয়েকে কল কর এখন!

“আহ এটা তেমন কি ব্যাপার!

“ওয়েট! কথা এখনো শেষ হয় নি। কথাটা শেষ করতে দে। কোন একটা মেয়েকে কল করতে হবে, শুধু কল করলেই হবে না তার সাথে বসে থেকে ১০ মিনিট কথা বলতে হবে।

“আচ্ছা এটা তেমন কি ব্যাপার!

“ওয়েট..

“আরো আছে!

“ইয়েস , আমি জানি তুই এখন দিয়া কিংবা ইফা ওদের কল করবি। কিন্তু সেটা হচ্ছে না।

“তাহলে!

“দেখি তোর ফোন দে।

“আমি নাম্বার চুজ করতে পারব না।

“না, তুই চোখ বন্ধ রাখবি। আমি তোর ফোনের কন্টাক্ট নাম্বার গুলো স্ক্রল করবো। চোখ বন্ধ রেখেই একটা নাম্বার ক্লিক করবি তুই।

“তুই কি আমাকে পাবলিকের মা*র খাওয়াতে চাস , না তাহলে বল আমি এভাবেই গিয়ে খেয়ে আসি।

“আজব , এভাবে বলছিস কতো আজাইরা মেয়ে আছে তোর লিস্টে।

“দে করছি!

শান্ত খুব এক্সাইটেড। সে নাম্বার গুলো স্ক্রল করল। আহনাফ চোখ বন্ধ করেই একটা নাম্বারে ক্লিক করল। কল হচ্ছে, আহনাফ চোখ মেলল। শান্ত মুখ টিপে হাসছে, আহনাফ ভ্রু কুঁচকে আছে। কল রিসিভ হলো, ওপাশ থেকে গলার আওয়াজ ভেসে এলো,

“হ্যালো!

আহনাফ হতচকিয়ে উঠল। তানিশার আওয়াজ এটা। দ্রুত শান্ত’র হাত থেকে ফোনটা নিল সে। তানিশা চুপ হয়ে আছে। তার পুরো শরীর কাঁপছে, আহনাফ এতো রাতে তাকে কেন কল করলো? কিছু কি হলো তার। ফোনের স্ক্রিনে আহনাফের নামটা ভেসে উঠতে দেখে কম অবাক হয় নি সে।

আহনাফ চোখ গরম করে তাকিয়ে আছে শান্ত”র দিকে। শান্ত ভাব নিয়ে ফোন দেখিয়ে ফিসফিসিয়ে বলল, “টাইম স্টার্ট নাও!

আহনাফ দম নিল। হালকা কেশে বলল, “হ্যালো!

“হুম আহনাফ! আমি তানিশা..

“আমি জানি।

“তুমি আমায় কল করেছ।

“হ্যাঁ

“কিছু কি হয়েছে?

শান্ত ফোনে কান দিয়ে কিছু শোনার চেষ্টা করল। আহনাফ তাকে সরিয়ে দিয়ে বলল, “কিছু জিজ্ঞেস করার ছিল আমার।

“হুম বল!

“সরি।

“ওহ, কিন্তু তুমি তো এটা বলেছ। আমি চিরকুট পেয়েছি।

“ওহ আমি তো জানতাম না তাই, আচ্ছা সরি এতো রাতে কল করে বিরক্ত করার জন্য।

“ইটস্ ওকে।

“শুভ রাত্রি।

“হুম!

আহনাফ ফোনটা কেটে দিল। তানিশা দীর্ঘশ্বাস ফেলল। হঠাৎ কেন জানি নিজেকে খুব একা লাগতে শুরু করল তার। দরজায় ওপাশে কেউ আছে। তানিশা বিছানায় সাথে সাথে ঘুমের ভান ধরল। তার বাবা দরজা খুলে মেয়েকে ঘুমন্ত দেখে চলে গেলেন।

“যা মাত্র ১ মিনিট, বাকি ৯ মিনিট কোথাও গেল।

“এটা তানিশা ছিল, অন্য কেউ হলো আধ ঘন্টা কথা বলতেও সমস্যা ছিল না।

“ওহ আচ্ছা!

“পানিশমেন্ট বল।

“সামনে এক মাস তোকে বাসে করে ভার্সিটি আসতে হবে।

“কি, শান্ত তুই জানিস আমি বাসে উঠতে পারি না। ওটা রিক্সা করে দে।

“নো নো নো বাস ফাইনাল। পানিশমেন্ট ইজ পানিশমেন্ট নো চিটিং!

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত’র মুখে বিজয়ের হাসি। সে এবার ছাদের এক কোনে এসে বসল। এই ছাদটায় এখন অবদি গ্লিল দেওয়া হয় নি। এর নতুন নয় তলা সবে হয়েছে, কাজ চলছে এখনো। তাই ছাদের দরজা সবসময় বন্ধ’ই থাকে। আজ শান্ত দাড়োয়ানের থেকে চাবি নিয়ে এখানে আসে। সে পা দুলিয়ে বসে পড়ল। আহনাফ বলল, “দে এবার তোর ফোন!

“আচ্ছা!

“কিন্তু তোকে কথা বলতে বলবো না।

“তাহলে!

“কোন মেয়েকে কল করে এখানে আসতে বলবি।

“ওহ আচ্ছা তারপর!

“তাকে দিয়ে প্রপোজ করাবি!

‘এসব তোর মাথায় কবে থেকে ঘুরতে শুরু করল।

“আমাকে ফাসিয়েছিস, মনে আছে।

শান্ত কিছুক্ষণ ভাবল। অতঃপর ফোনটা বের করে দিল আহনাফের হাতে। শান্ত চোখ বন্ধ করে। আহনাফ নাম্বার স্ক্রল করে এগিয়ে দিল। শান্ত ক্লিক করল। ফোন বাজছে, শান্ত ফোনটা হাতে নিয়ে বলল, “দেখি দেখি কে পড়ল!

আহনাফ মুখ টিপে হেসে বলল, “চশমিস!

“ওহ নো!

আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো এবার।

“ভাই আমি নাম্বার চেঞ্জ করি!

“অসম্ভব!

“ওকে আনা আরো অসম্ভব!

“তো পানিশমেন্ট..

শান্ত ঠোক গিলল। আহনাফের ঠোঁটের কোনে হাসি। কল রিসিভ হলো,

“অশান্ত কি হয়েছে?

শান্ত চুপ! আহনাফ ঠোঁট কামড়ে আছে। নিঝুম আবার বলল, “এই অশান্ত কি হয়েছে? কথা বলবেন না ফোন রেখে দেবো।

“এই চশমিশ সর্বনাশ হয়ে গেছে।

“মানে!

“আআআআমার‌ হাত পু*ড়ে গেছে।

“কককি কি বলছেন এসব। আমাকে কল কেন করেছেন, ডাক্তার কে করুন।

“করেছি ধরছে না আর এদিকে..

শান্ত*র গলার স্বর কাঁপছে ভয়ে আর চশমিশ ভাবছে হয়তো অনেকখানি পু*ড়ে গেছে। চশমিস উত্তেজিত হয়ে গেল। বলে উঠল, “আপনি ঘরে কেন বসে আছেন। ফার্মেসী তে যান।

“আমার হাত খুব জ্বলছে, কিছু বুঝতে পারছি না আমি। বরফে হাত চুবিয়ে রেখেছি।

“ভালো করেছেন। আমি আসছি, আপনি পানি দিতে থাকুন!

বলেই ওপাশ থেকে ফোনটা রেখে দিল। শান্ত অবাক চোখে তাকাল আহনাফের দিকে। আহনাফ নিজেও অবাক। শান্ত উঠে দাঁড়িয়ে এক লাফ দিয়ে বলল, “ওহ আসছে!

“কিভাবে সম্ভব!

“ইয়ো ইয়ো আমি জিতে যাবো এখন!

“ওয়েট, দ্বিতীয় ধাপ এখনো বাকি!

“জিতে যাবো দেখে নিও!

বলেই বাঁকা হাসল শান্ত। এদিকে নিঝুম তড়িঘড়ি করে বের হতে নিয়ে আবারো ঘরে এলো। ঔষধ নিয়ে দরজা অবদি গেল। আবারো গেল হিনার ঘরে। হিনা কে ধরে এনে বলল, দরজা বন্ধ কর, আমি বাইরে যাচ্ছি। আম্মু জিজ্ঞেস করলে বলবি, আমার এক বন্ধুর এক্সিডেন্ট হয়েছে!

“কিন্তু কার?

“এসে বলছি!

বলেই নিঝুম দৌড়। ভাগ্যক্রমে কোনভাবে সিএনজি পেয়ে গেল সে। প্রথমেই কল করলো আহনাফ কে। আহনাফ শান্ত’র দিকে ফোন ঘুড়িয়ে বলল, “আমায় ফোন করছে,দেখ এখন না বলে আমাকেই আসতে।

—–

“হ্যালো!

“আহনাফ!

“হ্যাঁ বলো।

“শান্ত হাত পু*ড়িয়ে ফেলেছ।

“কি কিভাবে?

“জানি না, আমায় ফোন করেছিল। আমি যাচ্ছি আপনিও আসুন তো প্লিজ। কে জানে কতোটুকু পুড়ি*য়ে বসে আছে!

“আচ্ছা আচ্ছা আমি আসছি।

ফোন কেটে দিল। দুজনেই হাসতে লাগলো। আহনাফ বলে উঠল, “মেয়েটাকে খুব হয়রান করছি।

“দোষ তোর।

“ফোন করে কি আমি আসতে বলেছি?

“ডেয়ার কার ছিল?

“মিথ্যে বললে হয়রান কে করছে?

“তুই কেন বললি কোন মেয়ে এখানে আনতে হবে, এখন আমি ওকে গিয়ে বলি। চশমিশ তুমি কি এখন আমাকে প্রপোজ করতে আমার বাসায় আসবে, ও তো নাচতে নাচতে চলে আসবে তাই না

“না বলবি তা কেন? তোকে জ্বালানোর জন্য আসতে

“তাহলে তো উড়ে উড়ে চলে আসতো।

আহনাফ জোরে জোরে হাসতে লাগলো।

—-

নিঝুম তাড়াহুড়ো করে সিএনজি থেকে নামল। রিক্সা দিয়ে আসতে গেলে যেখানে ৬০ টাকা লাগতো সেখানে সিএনজি তার থেকে ১৫০ টাকা নিল। এতো রাতে তর্ক না করেই নিঝুম টাকাটা দিয়ে দিল। এর মাঝে আসতে গিয়েও দাড়োয়ান একগাদা প্রশ্ন করল। নিঝুম এক কথায় শুধু বলল, “আমি অশান্ত’র বন্ধু!

“অশান্ত , মানে শান্ত স্যারের..

“হ্যাঁ হ্যাঁ!

“আচ্ছা যান ম্যাডাম।

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে তাকিয়ে রইল। কেউ তাকে ম্যাডাম বলেও সম্বোধন করল। ভাবনা বাদ দিয়ে দৌড়ে এসে লিফটে চড়ল। অশান্ত’র ফ্ল্যাটের সামনে গিয়ে কলিং বেল বাজিয়েই যাচ্ছে কিন্তু কেউই খুলছে না। রাগে নিঝুমের মাথা এখন ফেটে যাচ্ছে। সে আবারো কল করলো অশান্ত’র‌ ফোনে!

“হ্যালো!

নিঝুম ঝারি মেরে , “এই কোথায় আপনি? দরজা খুলছেন না কেন?

“তুমি আমায় ঝারি মারছো।

“দরজা খুলুন। বাইরে কেন দাড় করিয়ে রেখেছেন আমায়।

“আমি ছাদে!

“পো*ড়া হাত নিয়ে ছাদে কি করছেন?

“বাতাস খেতে এলাম।

*কি?

“আচ্ছা চশমিশ। আসলে..

“কি আসলে!

“আসলে আমার হাত পুড়ে যায় নি।

“তাহলে আপনি আমায় মিথ্যে বলেছেন।

“মানে তুমি কি একটু ছাদে আসবে।

নিঝুম দ্রুত শ্বাস নিচ্ছে। রাগে তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। চেঁচিয়ে বলল,”অশান্ত!

শান্ত কানের কাছ থেকে ফোনটা সরিয়ে বলল, “গেলো আমার কান!

নিঝুম দ্রুত আবার লিফটে উঠল। সেটা ছাদ অবদি এসে ঠেকল না। তার নিচতলায় এসে থামল। নিঝুম শুকনো ঠোক গিলল। এখানে তো সবটা অন্ধকার। ফোনের আলো জ্বালালো সে। কেন এলো সে এখানে মরতে। কি দরকার ছিল আসার। আচ্ছা ওটা অশান্ত তো, নাকি কোন ভূত। অশান্ত’র বেশ ধরে তাকে ডাকছে মা*রার জন্য। হায় হায় এখন কি করবে। চলে যাবে..

ভাবতে ভাবতে লিফট ছেড়ে নামল। হঠাৎ করেই কিসব আওয়াজ এলো কানে। লিফটে না উঠে দৌড়ে সিঁড়ির কাছে গেল। ছুটে এলো ছাদে। আহনাফ অন্ধকারে দাঁড়ানো, নিঝুমের তাকে চোখ পড়ল না। সে সামনে এগিয়ে গেল। ডাকতে লাগল, অশান্ত! অশান্ত আপনি আছেন!

“আমি এখানে চশমিশ!

নিঝুম এগিয়ে গেল। ছাদের একবারে শেষ মাথায় দাঁড়ানো অশান্ত। ভূতের ভয় সরে গেল , রাগ চাপল মাথায়। ধুমধাম করে হেঁটে গিয়ে বলল, “আপনি আমায় মিথ্যে কেন বললেন, জানেন আমি কতো কষ্ট করে দৌড়াদৌড়ি করে এসেছি। সিএনজির লোকটা আমার থেকে ১৫০ টাকা ভাড়া নিল যেখানে রিক্সা দিয়ে আসলে মাত্র ৬০ টাকা লাগতো।

“সরি

“কিসের সরি, কি সরি।
বলেই এগিয়ে গেল। আঙুলে তুলে কথা বলতে নিল। তখনই শান্ত তার হাত ধরে তাকে ঘুড়িয়ে নিল। হাতটা ছেড়ে দিয়ে পুরনায় ধরল। নিঝুম ছাদের একদম শেষ মাথায়। সে খামচে ধরে আছে অশান্ত কে। শান্ত হাসল। নিঝুম বলল, “আপনি কে?

“কে মানে?

“আমাকে মা*রতে চাইছেন কেন? আমি আপনার কি ক্ষতি করেছি। অশান্তর বেশ ধরে আমাকে মার*ছেন।‌ঘুষ দিয়েছে উনি আপনাকে।

“আবোলতাবোল কি বকছো এসব।

“আপনি কে , অ্যাআ্যাআআ ছেড়ে দিন আমায়, আমি কিছু করি নি।

“এই চশমিশ! ছেড়ে দেবো তোমায

“এই না না এখান থেকে পড়লে আমি ম*রে যাবো

“তোমার শরীর খুঁজে পাওয়া যাবে না

“অশান্ত আপনি খুব খারাপ।

“হ্যাঁ জানি জানি। এখন শোন, আমি যা বলছি তাই বলো তাহলে তোমায়..

“আমাকে ছেড়ে দিবেন।

“হ্যাঁ তবে নিচে না।

“কিন্তু কি বলবো আমি

“আমি যা বলবো তা রিপিট করবে।

“মানে!

“বলো!

“কি

“আমি…

“আ..মি

“শান্ত কে

“অশান্ত কে!

“ভালোবাসি!

“কি

“বলো বলছি

মাথা নাড়িয়ে , ( না না )

“ওকে ঠিক আছে।
বলেই হাত ছেড়ে দিত নিল। নিঝুম শক্ত করে হাত ধরে দ্রুত বলল,
“আমি অশান্ত কে ভালোবাসি!

“জোরে বলো?

“আমি অশান্ত কে ভালোবাসি।

শান্ত হেসে নিঝুম কে সরিয়ে আনল। জোড় গলায় বলল, “আহনাফ বলেছে!

নিঝুম অবাক কন্ঠে বলল, “আহনাফ মানে!

আহনাফ অন্ধকার ছেড়ে বেরিয়ে এলো। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “সরি নিঝুম!

নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। অশান্ত মাথা চুলকাতে চুলকাতে বলল, “সরি চশমিশ! এটা একটা ডেয়ার ছিল।

“কিহহহহ!#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩ [ প্রথমাংশ ]

সাদার মধ্যে কালো চেক চেক করা একটি গেঞ্জি আর ট্রাউজার পড়ে আছে নিঝুম। গলায় ঝুলছে একটা উড়না। তাকে দেখে বোঝা যাচ্ছে বেচারি ঘুমানোর পুরো বন্দোবস্ত করেছিল যা আহনাফ আর শান্ত’র জন্য পুরো ঘেঁটে গেছে। নিঝুম শান্ত মুখে বসে বসে আইসক্রিম খাচ্ছে। এই নিয়ে ৩ নাম্বার আইসক্রিম খাচ্ছে সে। শান্ত বলে উঠে , “এবার আমাদের উঠা উচিত!

“কেন কেন?

“কেন মানে , তুমি কি আরেকটা আইসক্রিম খাবে নাকি।

নিঝুম মাথা নাড়ল। শান্ত দাঁতে দাঁত চেপে তাকাল আহনাফের দিকে। সব দোষ তার, না সে এমন ডেয়ার দিত আর না এতো কিছু হতো। আহনাফ হেসে বলল, “নিঝুম!

“হুমম!

“এটা তোমার ৩ নাম্বার আইসক্রিম।

“তো।

“কিছু না , এরপর আর কয়টা খাবা।

নিঝুম হাতের আঙুলে দিয়ে বুঝিয়ে দিল, “এই তো তিনটা আরো।

শান্ত বলে উঠল, “আরো তিনটা।”

“হুম কেন? কি সমস্যা? এতো রাতে আমাকে ভয় দেখিয়ে বাইরে নিয়ে আসার সময় এতো কিছু মনে ছিল না।

“মনেই ছিল। জানতাম তুমি এতো সহজে ছাড়বে না।

নিঝুম দাঁত বের করে হেসে অমি’র দিকে তাকাল। অমি গুটিগুটি মেরে শান্ত’র কোলে বসে আছে। সে মিয়াও বলে ডাক দিতেই নিঝুম আইসক্রিম’র চামচ টা তার একটু কাছে নিয়ে বলল, “খাবে তুমি।

“ও এসব খায় না ‌

“তাহলে আপনি খাবেন।

“না, আমি খাই না।

“তাই তো, ভালো জিনিস কি আর ভালো মানুষের পেটে সহ্য হয়।

শান্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। ওয়েটার এসে দুটো কোল্ড ড্রিংক দিয়ে গেল শান্ত আর আহনাফ। অমি উঠে শান্ত’র কোল্ড ড্রিংক ধরার জন্য লাফালাফি করতে লাগলো।

ম্যানেজার সাহেব এসে দাঁড়ালেন। আহনাফ জিজ্ঞেস করলেন, “জ্বি!

“স্যার আর কিছু?

নিঝুম মাথা নেড়ে নেড়ে বলল , “হ্যাঁ হ্যাঁ আরো তিনটা আইসক্রিম!

আহনাফ ঠিক কি বলবে বুঝতে পারল না। ম্যানেজার সাহেব আমতা আমতা করতে করতে বলল, “আসলে স্যার, অনেক রাত হয়ে গেছে আর আমাদের সব কিছু এখন বন্ধ করতে হবে তো..

নিঝুম মুখ তুলে তাকাল। তিনজনকেই চোখ বুলিয়ে দেখতে লাগল। আহনাফ হেসে বলে উঠল, “আচ্ছা নিঝুম, আইসক্রিম গুলো প্যাক করে নিলে কেমন হয়!

“খুব ভালো খুব ভালো!

“আচ্ছা আপনি আরো ৩ টা আইসক্রিম প্যাক করে দিন আর বিল টা নিয়ে আসুন।

“জ্বি স্যার!

—-

মাঝ রাস্তায় হাঁটছে তিনজন। শান্ত এপাশে, তার কোলে অমি। সে এতো অন্ধকারে ভয় পেয়ে মিয়াও মিয়াও করে ডেকেই যাচ্ছে। মাঝখানে নিঝুম আইসক্রিম খেতে খেতে হাঁটছে আর তার পাশে আহনাফ!

“নিঝুম! এতো আইসক্রিম খেয়ো না তোমার গলা বসে যাবে।

শান্ত চোখ ঘুরিয়ে বলল, “ভালোই হবে , কথা বলতে পারবে না। বকবকানিও শুনতে হবে না।

নিঝুম চোখ ঘুরিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলল, “আপনি জানেন, এখানে কি কষ্ট করে এসেছি আমি।

“হ্যাঁ হ্যাঁ জানি জানি। ৬০ টাকার ভাড়া ১৫০ টাকা দিয়ে এসেছো। আর তা উসুলও করেছ।

“করবো না আবার, টাকা কে কি টাকা মনে হয় না আপনার। যদি না আপনারা আমার সাথে এমন চালাকি করতেন তাহলে না হয় অন্য বিষয় ছিল।

আহনাফ হাসল।‌ নিঝুম তার মুখের দিকে তাকাল। শান্ত ভাবে নিঝুমের দিকে ফিরে বলল, “আমি তো ভাবতেই পারি নি তুমি আসবে। তুমি এসে আমাকে হারিয়ে দিলে নিঝুম।

নিঝুম হাসল। শান্ত হেসে বলল, “আমি কখনো হারতে শিখি নি, বুঝলি।

“আপনি তো জিতলেন আমার কারণে, তাহলে আমাকে ট্রিট দিন।

“ট্রিট! এতো আইসক্রিমের পর আবারো।

“তো! আপনি জানেন আমি এখানে ১৫০ টাকা ভাড়া দিয়ে এসেছি।

“চশমিশ থামো, তোমার এই ১৫০ টাকা ভাড়া শুনতে শুনতে আমার কান গেল।

“তো যাবে না, দ্বিগুনের চেয়ে বেশি ভাড়া দিলাম জানেন আপনি।

শান্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলল। আহনাফ হাসল। নিঝুম এখনো বক বক করছে। সে উপরে আকাশের দিকে তাকাল। রাতের আকাশের মতো এই রাতটাকেও আজ চমৎকার লাগছে। মাঝ রাস্তায় গভীর রাতে হেঁটে যাচ্ছে তারা তিনজন। কেউ জানে না তাদের ব্যাপারে, কারো কোন আগ্রহ নেই। যদি থাকে সেটা শুধু এই চাঁদের! কি সুন্দর ভাবে আলো ছড়িয়ে দিচ্ছে তাদের মাঝে। কি স্নিগ্ধমুখর পরিবেশ!

—-

নিঝুম দরজার সামনে দাঁড়ানো। কলিং বেল বাজাতে ভয় করছে তার। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখে ১২ টার বেশি বাজে। তার খবর নিশ্চিত এতোক্ষণে সবাই জেনে গেছে। এখন আবার নতুন কোন মিথ্যে বলতে হয় কে জানে। হিনা কে ফোন করল সে। সাথে সাথে দরজা খুলে দিল হিনা। নিঝুম চুপিচুপি বলল, “মা কোথায়?

“ঘুমাচ্ছে!

“বাবা!

হিনা ঘাড় ঘুরাল যার অর্থ সেও ঘুমাচ্ছে। নিঝুম ফিসফিস করে বলল, “আমি বের হয়েছিলাম বলেছিস।

“না, কেউ জিজ্ঞেস করে নি। বাবা তো ১০ টায় ঘুমিয়ে পড়ে আর মা’র মাথাব্যাথা ছিল বলে ঔষধ খেয়ে ঘুম দিয়েছে

“আচ্ছা!

“তোর বন্ধুর খবর কি, কেমন আছে ?

“ভালোই আছে। নে আইসক্রিম খা।

“তুই অসুস্থ মানুষ কে দেখতে গিয়ে আইসক্রিম পেলি কোথায়?

“নিয়ে এলাম তোর জন্য, খেয়ে নে। আমি গেলাম ঘুমাতে। গুড নাইট!

বলেই হামি ছাড়তে ছাড়তে নিঝুম তার ঘরের দিকে আগাল। কিন্তু হিনার কাছে পুরো ঘটনাটা গোলমেলে লাগতে শুরু করল।

—-

আহনাফ বাসে উঠেছে। পৃথিবীর অসহ্যকর কাজের মধ্যে এটাই হচ্ছে তার কাছে প্রথম। কোন ভাবেই এই সমস্যার সম্মুখীন হতে চায় না সে। মানুষের ঠেলাঠেলি অসহ্য লাগে। এর মাঝে একের পর এক লোকজন উঠতেই থাকে। জায়গা হচ্ছে না তবুও মানুষ উঠতেই থাকে। আহনাফের দম বন্ধ হয়ে আসছে। সে কোনমতে সিট ধরে দাঁড়িয়ে আছে। বাস থামল। কিছু লোকজন কমল, ভাগ্য ভালো এই বাস স্ট্যান্ড থেকে কেউ উঠতে আসে নি। আহনাফ জায়গা পেয়ে গেল। সেখানেই বসে স্বস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো সে।

বাস ছুটতে শুরু করল। আবারো থামল! আহনাফের এখন বিরক্ত লাগছে। বাসে শুধু একজন উঠে বসল। আহনাফ সেদিকে ফিরেও তাকাল না। বাইরে তাকিয়ে রইল। পাশের সিটটা খালিই ছিল। সেখানে বসে পড়ল কেউ। হঠাৎ কেমন এক অনুভুতি হতে লাগলো দুজনের। মুখ ফিরিয়ে তাকাল দুজন। নিঝুম হা হয়ে আছে আহনাফ কে দেখে।

“আপনি!

“তুমি!

“আপনি বাসে করে কেন? গাড়ি কি হয়েছে আপনার?

আহনাফ নিঝুমের দিকে তাকিয়ে হাসল। নিঝুম ব্যাগ থেকে রুমাল টা বের করে দিয়ে বলল, “নিন, ঘেমে তো দেখছি একাকার।

আহনাফ হাত বাড়িয়ে রুমাল টা নিল!
“আমি আরো আগে উঠেছি তাই, এতোক্ষণ যা ভিড় ছিল এখন একটু কমেছে।

“বাসে করে আসলে ওরকম একটু আধটু তো হবেই। এই একদিন কষ্ট করুন , রোজ রোজ তো আর আসবেন না।

“না একমাস আসতে হবে।

“কেন?

“ডেয়ার পারি নি বলে আমার পানিশমেন্ট, তুমি তো এসে শান্ত কে জিতিয়ে দিলে!

নিঝুম হাসল। ব্যাগ থেকে পানির বোতল বের করে এগিয়ে দিয়ে বলল, “আমাকে ওভাবে ভয় না দেখালেই হতো। নাহলে যখন আপনাকে ফোন করলাম তখন বলে দিতেন নাহলেই তো হতো।

আহনাফ পানি খেয়ে বোতলের ছিপি আটকিয়ে বলল,
“তবে আর যাই বলো, এতোক্ষণ মনে হচ্ছিল আর এক মিনিট ও সম্ভব না আমার পক্ষে। কিন্তু এখন মনে হচ্ছে আগামী এক মাস ভালোই কাটবে তোমার সঙ্গ পেলে।

“হ্যাঁ এটা তো সত্যি! আমি যেখানে থাকি আর যার সাথেই থাকি তার মন ভালো করে দিই।

আহনাফ কিঞ্চিত হাসল। দু’জন গল্প করে পুরো রাস্তা পার করল। এমনকি ভার্সিটি অবদি একসাথেই এলো। ভার্সিটিতে ঢুকতেই নিঝুম শান্ত কে দেখতে পেয়ে ডাক দিল, “এই অশান্ত!

—–

তিথি ইফা’র ঘাড়ে মাথা রেখে দুলে যাচ্ছে আর বলছে, “আমার আদনান স্যার ( ভুল বশত সেদিন আদ্রিয়ান লিখে ফেলি। সেজন্য আমি দুঃখিত )

“তুই থামবি!

এর মাঝেই আদনান স্যার ক্লাসের উদ্দেশ্যে পা বাড়ালেন। তিথি অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল, “ইফা দেখছিস!

“কি দেখবো?

“বিয়ের পর স্যার আরো হ্যান্ডসাম হয়ে গেছে।

ইফা শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “স্যারের বউও নিশ্চিত সুন্দরী হয়ে গেছে।

“ইফা তুই না, যা কথা নেই তোর সাথে।

“আরে আরে রাগ করিস না বাবা।

“তোরা কেউ আমার আপন না। নিঝুম!

বলেই নিঝুম কে জড়িয়ে ধরল। নিঝুম সবেই পা রেখে আগামাথা কিছু না বুঝেই তিথি কে জড়িয়ে ধরল। তিথি বলে যাচ্ছে, “জানিস জানিস ইফা একটুও ভালো না।

“ও আর কবে ভালো ছিল। একদম ঠিক বলেছিস।

ইফা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইল। পুরো তার সামনেই তিথি আর নিঝুম তার বদনাম করে যাচ্ছে। একজন করছে তো আরেকজন তাল দিচ্ছে। ইফাও
দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে শুনে যাচ্ছে সবটা!

—–

আহনাফ আজ একটু আগেই এলো বাসস্ট্যান্ডে। বাসে উঠতেই সিট না পেয়ে দাড়িয়ে রইল। অতঃপর সিট পাওয়া মাত্র বসে গেল। তার পাশের সিটেও একজন যাত্রী ছিল কিন্তু আহনাফ নিশ্চিত ছিল সামনের স্ট্যান্ডে’ই নেমে যাবে সে। সত্যি সত্যি তাই হলো, সে নেমে গেল। আহনাফ বার বার খালি সিটে তাকাচ্ছে, আরেকবার তাকাচ্ছে গেটের দিকে। নিঝুম এখনো উঠলো না, কোথায় সে?

কয়েকটা যাত্রী উঠে পড়ল এর মাঝে, একটা মেয়ে এগিয়ে এসে সেই সিটে বসতে গেল। আহনাফ সাথে সাথে তার ব্যাগটা সিটে রেখে বলল, “এখানে আমার পার্টনার আছে, ও বসবে!

“কিন্তু বাস তো ছেড়ে দিয়েছে।

“হ্যাঁ কিন্তু আমি এই দুই সিটের ভাড়া দিয়েছি।

মেয়েটা সামান্য অপমান বোধ করল। বিরক্ত চোখে তাকাল আহনাফের দিকে। এর মধ্যেই নিঝুম কে উঠতে দেখা গেল। আহনাফ হেসে বলল, “চলে এসেছে আমার পার্টনার!

মেয়েটা নাক ফুলিয়ে তাকাল নিঝুমের দিকে। সে আসতেই আহনাফ ব্যাগ সরিয়ে দিয়ে তাকে বসতে দিল। মেয়েটা বির বির করতে করতে পিছনে গিয়ে বসল। নিঝুম হাঁপিয়ে গেছে অনেকটা। আহনাফ বলে উঠল, “আরেকটু দেরি হলে কি হতো জানো?

“কি হতো?

“ওই মেয়ে ঝগড়া করে এখানে বসে পড়ত।

নিঝুম পিছনে তাকাল, মেয়েটা দেখে বলল, “যাহ ঝগড়া কেন করতো?

“আমি ওকে এখানে বসতে দেই নি বলে।

“কেন?

“আমি তোমার জন্য সিট ধরে রেখেছিলাম।

নিঝুম হাসতে শুরু করল। হাসতে হাসতে বলল, “আহনাফ এটা কি ক্লাসের বেঞ্চের জায়গা যে আপনি ধরে রাখবেন।

আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিয়ে বাইরে তাকাল। ব্যাপারটা আসলেই অনেক লজ্জাজনক। সত্যিই তো, কেন করলো সে এটা। বসতো ওই মেয়েটা। এভাবে সিট ধরে রাখা বাচ্চামি ছাড়া আর কিছুই না। সে কি বাচ্চা! নিঝুম এখনো হাসছে তবে মুখ টিপে। বেশ বুঝতে পারল আহনাফ লজ্জা পেয়েছে। বেচারা কে আর লজ্জা দিয়ে লাভ কি! #তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৩৩ [ বর্ধিতাংশ ]

রাত তখন অতোটা গভীর নয়, তবে লোডশেডিং’র কারণে চারদিকে অন্ধকার। তিথি ভয়ে ভয়ে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। ফোনের আলোতে সামনে হাঁটা তো যাচ্ছে কিন্তু তার ভয় কমছে না। হঠাৎ হঠাৎই মনে হচ্ছে কেউ তার পিছন পিছন আসছে।‌ ভয়ে ছুটে যেতেই হঠাৎ কারো সাথে ধাক্কা লেগে গেল। তিথি সাথে সাথে দাঁড়িয়ে তার কাছে ক্ষমা চাইতে লাগল। বয়স্ক এক মহিলা, ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছেন তিথি’র দিকে। যদিও ফোনের স্ক্রিনেই দুজন দেখছে দুজন কে। তিথি নিজ থেকেই বলছে, “সরি সরি সরি আন্টি। আমি সত্যি দেখতে পাই নি। হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ আমার কাছে আসছে। তাই ভয়ে সামনে ছুটে যেতেই আপনার সাথে ধাক্কা। মাফ করবেন আন্টি ‌। আপনি ঠিক আছেন তো, কোথাও লাগে নি আপনার!

রাহেলা বেগম এতোক্ষণ তাকিয়ে ছিলেন তিথি’র দিকে। হঠাৎ করেই হেসে বলে উঠেন, “অনেক হয়েছে এবার থামো। ধাক্কা এতোটা জোরেও লাগে নি। তার আগে তুমি বলো, তোমার পেছনে কে ছিল।

“জানি না, তবে খুব ভয় করছে আমার।

“তাহলে তুমি চাইলে আমার বাড়িতে এসে বসো। এই অন্ধকারে তো বাড়িতে যাওয়া আর সম্ভব না। কারেন্ট এলে না হয় যেও।

“কিন্তু আন্টি!

“আসো, এটা আমার বাসা।

বলেই সামনের বাড়িটার দিকে তিনি পা বাড়ালেন। তিথির কাছে মনে হলো এই অন্ধকারে হাঁটার চেয়ে তার বাড়িতে বসে থাকা বেশ ভালো। তাই সেও পা বাড়াল। সবটা অন্ধকার হলেও এই বাড়িতে আলো জ্বলছে। মনে হয় আইপিএস আছে। তিথি এতোক্ষণে ভদ্রমহিলার মুখখানি দেখলেন। মুখটা অনেক সহজ সরল , চোখে চিকন ফ্রেমের এক চশমা। তার ঠোঁটে মিষ্টি হাসি, যে কারো মন ভালো করে দিতে পারে। তিথি কে সোফায় বসতে অনুরোধ করলেন তিনি। স্টাফ ছুটে এলেন, তিনি তাকে ঠান্ডা শরবত আনতে পাঠালেন। তিথি এতোক্ষণে বুঝল সে কোন বাড়িতে আসে। এই বাড়ি থেকে তার বাড়িতে যেতে বোধহয় আর ২৫ মিনিটের পথ। বাড়িটা বেশ সুন্দর, এর আগেও কয়েকবার বাইরে থেকেই দেখেছে এই বাড়িতে। সাদা রঙের চমৎকার বাড়ি! বেশ কয়েকবার ইচ্ছেও হয়েছিল এই বাড়িতে আসার, কিন্তু আজ যে সেটা পূরণ হবে এটা স্বপ্নেও ভাবেনি।

“আপনাদের বাড়িটা অনেক সুন্দর!

“অন্ধকারে এই কথা বলছো, আলোতে আরো সুন্দর লাগবে।

“না না, আমি এর আগেও কয়েকবার দেখেছি। এখন বুঝতে পারলাম এটা কোন বাড়ি।

“তুমি কি এই এলাকায় থাকো।

“না, তবে এখান থেকে যেতে ২৫ বা ৩০ মিনিটের মতো লাগবে।

“ওহ আচ্ছা!

স্টাফ এর মাঝেই শরবত নিয়ে এলো। রাহেলা বেগম বললেন, “নাও, শরবত খাও।

তিথি হেসে শরবতের গ্লাস হাতে নিল। সাথে সাথে কারেন্ট চলে এলো। ভদ্রমহিলা কে এখন আরো স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খুব রূপবতী তিনি, আর তার চোখের দৃষ্টি বেশ শান্ত! তিথির যেন হঠাৎ করেই খুব পছন্দ হলো তাকে। দোতলা বাড়ির দ্বিতীয় তলা থেকে ডাকতে ডাকতে একটা ছেলে নেমে আসছে, “মা! মা!

রাহেলা বেগম শান্ত গলায় জবাব দিলেন,”আমি এখানে!

“ওয়াইফাই আসছে না তো।

“দুটো মিনিট সবুর কর, কারেন্ট তো মাত্র এলো। ধৈর্য্য বলে কিছু কি নেই তোর।

“না নেই!

বলতে বলতে বসার ঘরে চলে এলো। তিথি গ্লাসটা নামিয়ে রেখে পিছন ফিরল। সে এখন খানিকটা বিস্মিত! আহিম অবাক কণ্ঠে বলল, “তুমি! তুমি আমার বাড়িতে কি করছো?

“এটা আপনার বাড়ি!

রাহেলা বেগম বিরক্ত গলায় বলল, “এটা কেমন কথা, ও আমাদের বাড়ির অতিথি। ঠিক মতো কথা বল।‌ তা তোমার নাম জানি কি মা?

“তিথি!

“তোমার কি চিনো একজন আরেকজনকে?

আহিম মুখ ভেংচি কেটে রাহেলা বেগমের পাশে বসতে বসতে বলল, “চিনি না আবার, আমার সাথে পড়ে এক ভার্সিটিতে!

“তোমার কি বন্ধু!

“না, ভাইয়া তো আমার সিনিয়র। কিন্তু আপনি যে এখানে থাকেন এটা তো আমার জানা ছিল না।

আহিম কথার জবাবে মাথা রেখে ফোনের মাঝে ঢুকে গেল। রাহেলা বেগম মাথা নাড়িয়ে বললেন, “ওহ আচ্ছা!

তিথি উঠে দাঁড়াল। হেসে বলল, “আচ্ছা আন্টি, আমি এখন তাহলে আসছি।

“হুম তোমাকে আটকিয়ে রাখবো না। বেশ রাত হয়েছে। আহিম যা ওকে এগিয়ে দিয়ে আয়।

“কেন আমি কেন যাবো।

“কারণ ও একা যেতে ভয় পায়।

আহিম তিথির দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকালো। তিথিও বলে বসল, “না থাক আন্টি, আমি একাই চলে যাবো।

“না এখন অনেক রাত। আহিম!

আহিম উঠে দাঁড়াল। কিছু না বলেই বেরিয়ে গেল এর অর্থ আমি যাচ্ছি। তিথি রাহেলা বেগমকে বিদায় দিয়ে হাঁটা ধরল। সত্যি বলতে তিথি মেয়েটাকে রাহেলা বেগমের অসম্ভব ভালো লেগেছে। তিনি কিছু একটা ভাবছেন।

“এতো রাতে কে তোমার পিছু নিচ্ছিল, ভূত!

“মামদো ভূত!

“ধরে নিয়ে গেল না কেন?

“কেন কেন ধরে নিয়ে গেলে কি আপনি বেশ খুশি হতেন।

“না তবে ভালো হতো, রোজ রোজ আর আদনান স্যার কে দেখে তোমার কষ্ট লাগতো না।

“এই যে মিস্টার, ঠিক করে কথা বলুন।

“সত্যিই তো বলছি, তা স্যারের কিন্তু বিয়ে হয়ে গেছে।

“জানি আমি , মনে করিয়ে দেবার মতো কিছু না এটা।

আহিম মুচকি হাসল। তিথি নাক মুখ ফুলিয়ে আহিমের মুখের দিকে ফিরল। বির বির করে তাকে গাল মন্দ করছে। কতো বজ্জাত লোক , তাকে কি নিয়ে হাসছে।

গলি পেরিয়ে এলো দুজনেই। রাস্তাটা ভীষণ ফাঁকা, এর কারণ গভীর রাত নয়। এর কারণ নামাজের সময় হয়ে গেছে। বেশিরভাগ লোকজন’ই এখন নামাজে, তাই রাস্তাটা একটু বেশিই ফাঁকা। শুক্রবারে রাস্তা ঘাট জমে রাত জমলে। সেইসময় চলে আসছে।

হঠাৎ একটা কুকুর দেখেই দাঁড়িয়ে গেল তিথি। সে এক পা পিছিয়ে গেল। আহিমও এক পা পিছালো। তিথি হেসে বলল, “আপনি ভয় পান নাকি কুকুর কে!

“কি বলছো যা তা, ভয় কেন পাবো।

“তাই!

আহিম চোখ বাঁকিয়ে তাকাল। হঠাৎ করেই কুকুর টা ডাকতে শুরু করল। তিথি আহিমের পিছনে এসে দাঁড়াল। আহিম চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে, কি করবে কিছুই বুঝতে পারছে না।‌ তার গলা শুকিয়ে আসছে ক্রশম। কুকুর দেখলেই হঠাৎ এক অজানা আতঙ্ক কাজ করে তার মধ্যে।‌ যখন ছোট ছিল তখন আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে দেখেছিল একটা কুকুর কিভাবে একটা ছেলেকে কাম*ড়াচ্ছে। ভয়টা সেখান থেকেই।

কুকুর আরো আরো জোরে ডাকছে। তিথি এবার ভয়ে পেছন থেকে আহিমের শার্ট আঁকড়ে ধরে বলল, “ভাইয়া তাড়িয়ে দিন এটাকে।

“আআআমি! আমি কিভাবে তাড়াবো।

“আমি কি জানি? খুব ভয় করছে আমার।

আহিম জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে।‌ ঘেমে একাকার হয়ে গেছে, এদিকে কুকুরটা হঠাৎ করেই এগিয়ে আসছে। খুব অস্বস্তি লাগছে, কি করবে এখন। কুকুরের মালিক এর মাঝেই ছুটে এলো। এসেই কুকুরটাকে ধরে বললেন, “টমি! টমি শান্ত হও।

আহিম আর তিথি দুজনেই যেন হাফ ছেড়ে বাঁচল। আহিম মালিক কে চিনত। সে আংকেল বলে ডেকে উঠল। মালিক তার দিকে ফিরে বললেন, “আরে আহিম নাকি!

“হ্যাঁ আংকেল, এটা কি আপনার কুকুর।

“আর বলো না। শখ করে এনেছিলাম, এখন দেখছে ঘরেই টিকতে চাইছে না।

“ওহ আচ্ছা।

পেছন থেকে তিথি বেরিয়ে এলো। তিনি তিথির দিকে ফিরে বললেন, “বন্ধু হয় তোমার!

আহিম তিথির মাথায় হাত রেখে বললেন, “হ্যাঁ এই তো ছোট বোনের মতো।

এর মাঝেই কুকুর আবারো ডাকা শুরু করল। আংকেল কোনমতে তাকে টেনেটুনে আবারো ঘরে নিয়ে গেলেন। দু’জনে হাঁফ ছেড়ে বাঁচল। তিথি মুখ ঘুরিয়ে চট করে বলে উঠল , “আমি আপনার ছোট বোনের মতো, এই আপনার বোন আছে।

“হ্যাঁ আছে একটা ছোট কেন?

“তাহলে তাকে গিয়ে বোন ডাকুন, আমায় কেন ডাকছেন। আজব।

বলেই হন হন করে সামনে এগিয়ে গেল। আহিম বুঝতেই পারল না ভুলটা কি বলল সে। রাগের বসে একটু জলদি জলদি হাঁটতে লাগল সে। এই গলি পেরিয়ে ওই গলিতে যেতেই চিৎকার করে ধপাস করে পড়ে গেল। আহিম ছুটে এলো তিথির কাছে। সামনে তাকিয়ে দেখল গাড়ির লাইটের আলো পড়ছে। আরেকটু জন্য এক্সি*ডেন্ট থেকে বেঁচে গেল তিথি। গাড়ির ড্রাইভার আর মিঃ ইকবাল হোসেন বের হয়ে এলেন। তিথির কাছে এগিয়ে আসতে আসতে, “তুমি ঠিক আছে তো মা!

তিথি ফিরে তাকাল। এক গাল হেসে বলল, “হ্যাঁ হ্যাঁ ঠিক আছি।

আহিম হাত এগিয়ে দিয়ে বলল, “উঠে আসো। দেখলে তো অন্যের সাথে শুধু শুধু ঝগড়া করলে কি হয়?

তিথি উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“এই আপনি চুপ থাকুন তো, একটু বেশিই কথা বলেন সবসময়!

মিঃ ইকবাল হোসেন ভ্রূ কুঁচকে নিলেন তাদের কথাবার্তা শুনে। কাছে এগিয়ে এসে দেখলেন তাদের। আহিমকে দেখে খানিকটা চমকে গেলেন তিনি।‌ তিথি আহিমের হাত ধরে উঠে দাঁড়াল। মিঃ ইকবাল হোসেন আহিমের দিকে আঙুল তুলে বললেন, “তুমি!

আহিম পেছন ফিরল। ইকবাল হোসেন কে দেখতে পেয়ে খানিকটা বিস্মিত হলো। অতঃপর বলে উঠল, “আমি.. আসলে!

কথার মাঝে তিথি ফোড়ন কেটে বলে উঠল, “উনি আমার বড় ভাই আর আমি উনার ছোট বোন!

আহিম আর ইকবাল হোসেন দুজনেই তিথি’র দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন। তিথি হেসে আহিমের দিকে ফিরে বলল, “তাই না ভাইয়া।

“এসব কি বলছো?

“আহ যা সত্যি তাই তো বলছি। আংকেল আমরা কিন্তু সত্যি সত্যি ভাই-বোন। আমাদের ডিএনএ ও এক!

আহিম হতবাক হয়ে তাকিয়ে আছেন ইকবাল হোসেনের দিকে। ভদ্রলোক হালকা হেসে বলল, “ওহ আচ্ছা! তাই নাকি!

আহিম মাথা নেড়ে না না করছে। তিথি তার মাথায় চট করে বারি মেরে বলল, “না না কি করছেন। চলেন দেরি হয়ে যাচ্ছে। আংকেল আসি!

বলেই আহিমের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেলেন। ইকবাল হোসেন রুমাল দিয়ে তার মাথার ঘাম মুছলেন। আবারো বসলেন গাড়িতে।

আহিম হাত ছাড়িয়ে বলে উঠল, “কি করছো কি তুমি?

“যা বাবা কি করলাম? যা সত্যি তাই তো বলছি!

“এতো সত্যি কথা বলতে কে বলেছে তোমায়। কার সামনে কি বলেছো জানো?

“না জানার শখ নেই!

“না থাকলেও শুনো, আমার বাবা তিনি!

“কিহহহহ?

“বুঝতে পারছো এখন বাসায় গেলে আমার কি হাল হবে।

তিথি মুখ বন্ধ করে মাথা নাড়িয়ে বলল, না!

“থাক আর দরকার নেই, চলো এখন!

“আচ্ছা সরি!

“রাখো তোমার সরি!

বলেই হন হন করে হেঁটে চলল আহিম, তার পিছন পিছন ছুটে যাচ্ছে তিথি!

এতো টুকু গল্প সবাইকে শোনানো মাত্র হাসতে হাসতে সবার পেট ব্যাথা হয়ে গেল। নিঝুম হাসতে হাসতে ভুল বশত শান্ত’র গায়ে থাপ্পড় মেরে বসল। যদিও এটা কেউই খেয়াল করল না তবুও শান্ত অবাক চোখে তার দিকে তাকিয়ে রইল। নিঝুম একটু একটু দূরত্ব করে সরে দাঁড়াল। তিথি মাথা চুলকাচ্ছে। কি বলবে বুঝে না উঠতে পেরে জিজ্ঞেস করল, “আংকেল আপনাকে কিছু বলেছে!

আহিম চোখ ঘুরিয়ে তাকাল। বলে উঠল, “নাহ কি আর বলবে। শুধু বাড়িতে এসে জিজ্ঞেস করল, “আমি তো আর বিয়ে টিয়ে করি নি। তাহলে তুই এক ডিএনএ’র বোন কোথায় পেলি।

আহনাফ হাসতে হাসতে মাথায় হাত রাখল। ইফা তিথির ঘাড়ে হাত রেখে বলল, “তুই পুরো ঝেড়ে দিলি ইয়ার!

“থাম তুই, আমি কি জানতাম নাকি এতো কিছু। ছিঃ ছিঃ ছিঃ লজ্জার আমার মাথা কা*টা যাচ্ছে।

“তাহলে কে*টে ফেলো, বসে আছো কেন?

তিথি চোখ গরম করে তাকাল আহিমের দিকে। আহিম সেদিকে তেমন একটা পাত্তা দিল না।

—-

শান্ত’র বাড়ি থেকে সার্ভেন্ট’রা তাদের কাজ সেড়ে বেরিয়ে গেছে। শান্ত এসময়টা আজ বাড়িতেই ছিল। সে দরজা বন্ধ করে ঘরে ফিরল। অমি কে খাবার দেওয়া দরকার। অমি কে ডেকে যাচ্ছে সে, কিন্তু তার কোন খোঁজ নেই। শান্ত খাবারটা নিচে রাখল, আবারো তাকে ডাকল। হঠাৎ যেন সবকিছুই নিশ্চুপ হয়ে গেল। শান্ত চুপ হয়ে থেকে বোঝার চেষ্টা করল, আর বুঝতেও পারল। অমি তার বাসাতেই নেই। মুহুর্তেই শান্ত অস্থির হয়ে উঠল। সার্ভেন্টরা চলে যাবার অনেকক্ষণ পরে গিয়েই দরজা বন্ধ করেছিল সে, অমি ততোক্ষণে বাইরে চলে যাই নি তো। শান্ত ছুটল, ছুটে বাইরে এলো। বাইরে পুরো করিডোর খুঁজে বেরাল, কিন্তু অমি কে পেলো না। শান্ত এবার উত্তেজিত হয়ে গেল। লিফটের বদলে সিড়ি বেয়েই নিচে নামতে নিল। হঠাৎ তার মনে হলো কেউ তার নাম ধরে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। শান্ত খুব মনোযোগ দিয়ে শোনার চেষ্টা করল। তার নামটা কেউ বিকৃত করে ডাকছে। অশান্ত অশান্ত বলে চেঁচিয়ে যাচ্ছে। আর এই কাজটা মিস চশমিশের ছাড়া আর কারোই হতে পারে না।

নিঝুম লাফিয়ে যাচ্ছে, অমিও তাকে দেখাদেখি লাফাচ্ছে। বোধহয় সে খুব মজা পাচ্ছে। নিঝুম সামনে তাকিয়ে দেখল অশান্ত নেমে আসছে। তার মুখে কোন প্রকার কৌতুহল নেই। নির্বিকার শান্ত না কুল মুখে হেঁটে আসছে সে। নিঝুম তাকে দৌড়ে এসে অশান্ত’র পিছনে এসে দাঁড়াল। ভয়ে কুঁকড়িয়ে বলল, “অশান্ত দেখুন এই বিড়াল কেমন করছে?

“ওর নাম অমি!

“আরে যেটা ইচ্ছে সেটা হোক। আপনি আগে দেখুন ওকে। আমার সাথে কেমন করছে।

শান্ত অমির মুখের দিকে তাকাল। অমি তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। শান্ত বলে উঠল, “অমি একটা একদম ঠিক না, তুমি আমায় না বলে এখানে কেন চলে এলো।

পেছন থেকে চশমিস বলে উঠল , “হ্যাঁ হ্যাঁ কেন এলে, আর এসে আমাকে জ্বালাচ্ছো কেন?

“অমি খুব ভালো ও কাউকে জ্বালায় না।

নিঝুম অমি’র দিকে আঙ্গুল তুলে বলল, “ও খুব পঁচা!

“তুমি আঙুল তোলা বন্ধ করো, নিজেকে কি সাধু মনে করো নাকি?

“আপনি আমার চেয়ে ভালো আরেকটা নিঝুম এনে দেখাতে পারবেন

“থামো! তোমাকেই নিয়ে অশান্তির শেষ নেই আবার আরেকটা। পাগল নাকি আমি!

“অশান্তি মূল তো আপনি অশান্ত।

“তাই! রেখে গেলাম তোমাকে অমি’র কাছে। অমি তোমাকে আমি আর আমার কাছে নিয়ে যাবো না। তুমি যখন সেচ্ছায় এসেই পড়লে তখন থাকো চশমিসের সাথে। আমার ঘরে তোমার আর জায়গা নেই।

বলেই পেছন ফিরল। নিঝুম যেন অষ্টম আশ্চর্য দেখছে। অশান্ত মুখ ভেংচি কেটে তাকে হালকা ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। সে সত্যি চলে যাচ্ছে। নিঝুম মুখ ফুটে বলল, “অশান্ত আপনি সত্যি চলে যাচ্ছেন!

“তা নয় তো কি? তুমি কি ভাবলে!

“অশান্ত দেখুন, ওকে এখান থেকে নিয়ে যান। আমি এক্ষুনি চলে যাবো।

“তো যাও!

“ওকে পথ ছাড়তে বলুন।

অশান্ত বাঁকা হাসল। নিঝুম রেগে হাঁটা ধরল। অমিও তার পিছন পিছন যেতে লাগল। লাফালাফি আবার শুরু, যেখানে নিঝুম যাচ্ছে, অমিও যাচ্ছে সেখানে। শান্ত দাঁড়িয়ে হাসছে, বেশ মজা পাচ্ছে সে। নিঝুম দৌড়াতে দৌড়াতে এসে ঠেকল শান্ত’র কাছে। শান্ত’র পিছনে গিয়ে আড়াল হলো।‌কাজ হলো না এতে, অমিও তার পিছন পিছন সেখানে গেল। নিঝুম এবার শান্ত’র চারদিকে ঘুরতে লাগল। পরিস্থিতি এখন হাতের বাইরে। শান্ত বুঝে উঠার আগেই নিঝুম সিঁড়ির এখানে পা পিছলে পড়ে যেতে নিল। শান্ত সাথে সাথে নিঝুমের কোমড় আঁকড়ে ধরল। নিঝুম চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে অশান্ত দিকে। অশান্ত মিস চশমিশের অনেকটাই কাছে। চশমার আড়ালে তার চোখ গুলো দেখছে সে। অপলক দৃষ্টিতে সেই চোখের দিকে তাকিয়ে রইল শান্ত। এমন সুন্দর চোখ কম’ই দেখলো সে। কই আগে তো এই চোখ, এই দৃষ্টি খেয়াল করি সে। হঠাৎ আজ এতোটা প্রভাব ফেলল তার উপর! কিন্তু কেন?

“মিয়াও! বলে ডেকে উঠল অমি। শান্ত দৃষ্টি ফিরিয়ে তাকাল তার দিকে। অমি ঘাড় বাঁকিয়ে বাকিয়ে দেখছে তাদের।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here