তোমার মনের মধ্যিখানি পর্ব -৬৬+৬৭

#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬৬

“না, তুই আমায় বল আহনাফ। ও এটা কি করে করতে পারে। মানে কিভাবে? ভালোবাসলাম এতো দিন ধরে আমি আর ও কি না বলছে বাবার পছন্দে বিয়ে করবে। এসব আমি কিভাবে মেনে নেবো। বল, মেনে নেওয়া যায়!

আহনাফ চিপস মুখে দিয়ে মাথা নেড়ে না বলল। গত দু ঘন্টা ধরে সে এই কাজটাই করে যাচ্ছে মনোযোগ দিয়ে। একটাই কাজ, শান্ত যা বলছে তাতেই মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বলা। আসল কাহিনীটা এখন অবদি সে জানে না। তবে আন্দাজ করতে পারছে। কিছু কিছু শান্ত’র কথায় বুঝতে পারছে। শান্ত প্লেট টা ধপ করে রেখে বলল, “ওর বাবা আমায় বলে, তোমাকে আমার পছন্দ না! আজব, তার পছন্দে অপছন্দে আমি কি করবো, বিয়ে করব তার মেয়েকে‌। তার সাথে কি আমি সংসার করবো।”

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত বোধ হয় সত্যি এবার পাগল হয়ে যাবে। ঠান্ডা মাথায় একে কথাটা বোঝানো উচিত। আহনাফ বলে উঠল, “শোন শান্ত, সংসার তুই নিঝুমের সাথেই করবি কিন্তু এতো বছর গুলোতে সে যে নিঝুমের দেখাশোনা করল তার কি দায়িত্ব নেই!”

কথাটা বুঝতে সময় লাগলো না শান্ত’র। নিজের ভুলটা সহজেই বুঝতে পারল। ভুল বোঝার পর এবার চুপ হয়ে গেল। মাথা গরম হয়ে থাকার কারণে অনুচিত কথা বলে ফেলছে সে। এটা ঠিক হচ্ছে না। তাই বলে এতো সহজে নিঝুম কে ছেড়ে দেবে সেটাও হতে না। মুখ ঘুরিয়ে বসে পড়ল সে। আহনাফ স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলল। কিছুক্ষণের জন্য মাথা ঠান্ডা থাকবে তার। কিন্তু তা আর হলো কই। ফোনের উপর ফোন বেজে যাচ্ছে। শান্ত কে বলল, “অনেকক্ষণ ধরে ফোনটা বাজছে, এবার ধর!”

“ওর সাথে কথা বলার কোন ইচ্ছা নেই আমার, কথা বলতেই এখন রাগ লাগছে।”

আহনাফ ফোনের দিকে তাকাল। বাজতে বাজতে ফোনটা বন্ধ হয়ে গেল। আবারো শুরু হলো বাজা। আহনাফ উঠে দাঁড়াল। তার ইচ্ছা করছে এখান থেকে চলে যেতে, পারছে না। অমি আর মিনি কে দেখে মনে হচ্ছে সবচেয়ে সুখে আছে ওরা দুজন। কি সুন্দর সোফায় বসে ঘুমাচ্ছে ‌। কেউ নেই ওদের বিরক্ত করার জন্য, জীবনে কোন সমস্যা নেই এই খাচ্ছে আর ঘুমাচ্ছে। ঘরের কলিং বেল বাজছে। একদিকে কলিং বেল আরেকদিকে ফোন। আহনাফের এবার অসহ্য লাগছে। দরজা খুলতে খুলতে বলল, “ফোনটা ধর শান্ত!”

শান্ত জোর গলায় বলল, “ধরবো না ফোন, ওর সাথে কোন সম্পর্ক নেই আমার!”

দরজার কাছে দাঁড়ানো নিঝুম ফোনটা হাতে রেখে বলল, “কি বললেন আপনি, কোন সম্পর্ক নেই?”

“তুমি, তুমি এখানে কি করছো?

“দেখতে এলাম আপনাকে, কতোটা মন ভাঙল আমার।

“তোমার আজেবাজে কথা শোনার কোষ ইচ্ছে নেই। যাও বাসায় যাও।

আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, “আমি বাসায় চলে যাচ্ছি!

দুজনেই একসাথে বলে উঠল , “না, কোথায়ও যাবেন না।

আহনাফ আবারো দীর্ঘশ্বাস ফেলল। তার মাথা এবার নিশ্চিত খারাপ হয়ে যাবে। মুখোমুখি বসে আছে দুজন। নিঝুম বলে উঠল, “এতো গুলো কল করলাম, ধরলেন না কেন?

“এভাবেই, তুমি কেন এসেছো, চলে যাও।

“না যাবো না, কথা বলবো।

“কি কথা বলবে, তখনি তো বললে, বিয়ে করলে বাবার পছন্দে করবো। তো যাও,বিয়ে করো!

নিঝুম চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে আছে। আহনাফ ইশারা করে বলছে, পাত্তা না দিতে। নিঝুম ঠান্ডা গলায় বলল, “অশান্ত কথাটা বোঝার চেষ্টা করুন, আমি বাবা কে কথাটা এজন্য বলেছি যাতে তার রাগ কমে যায়।

“কমে গেছে রাগ!

“পুরোপুরি কমে নি কিছুটা।

“তো রাগ কমার পর কি করবে?

“আপনার কথা বলবো।

“বাহ, তুমি বললেই যেন তিনি মেনে যাবে।

“নেগেটিভ চিন্তাভাবনা এক সাইডে রাখুন।

“আমাকে তোমার বাবার পছন্দ হয় নি, একদম হয়নি। জানো সেটা!

“পছন্দ অপছন্দের একটা সময় সাপেক্ষ ব্যাপার আছে অশান্ত। সেদিন পছন্দ হয় নি কাল হয়ে যাবে। আপনাকেও তো আমার শুরুতে পছন্দ ছিল না, এখন তো বেশ পছন্দ। কি আহনাফ আপনি বলুন!

আহনাফ মাথা দুলাল। শান্ত কোন কথা বলল না। নিঝুম বলে উঠল, “আমি বলেছি বাবার পছন্দে বিয়ে করবো‌। তো আপনিও বাবার পছন্দের পাত্র হবার জন্য প্রস্তুত হন।

“তোমার বাবার কেমন ছেলে পছন্দ?

“এই ভদ্র, শান্ত, ঠান্ডা স্বভাবের মানুষ। একদম আমার বাবার মতো।

“হ্যাঁ , তোমার বাবাও ঠান্ডা গলায় আমাকে রিজেক্ট করে দিছে!

নিঝুম দীর্ঘশ্বাস ফেলল। শান্ত কে কোন ভাবেই বোঝানো যাবে বলে মনে হচ্ছে না। আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল, “আমি চলে যাচ্ছি! শান্ত এক ধমকে তাকে বসিয়ে দিলো। নিঝুম আহনাফের দিকে শীতল দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, “আহনাফ একটু বুঝিয়ে বলুন না শান্ত কে, জানেন আমার বাবার পছন্দ হলো আপনার মতো ছেলে। একটু আপনার মতো তৈরি করুন না এই অশান্ত কে। কিছুদিনের জন্য হলেই হবে।

শান্ত খিটখিটে মেজাজে বলল, “এর চেয়ে ভালো তুমি আহনাফ কেই নিয়ে যাও!

নিঝুম চট করে বলে উঠল, “চয়েন্স তো খারাপ না!

শান্ত চুপ হয়ে গেল। ঠোঁট কামড়ে ধরে আহনাফের দিকে তাকিয়ে বলল, “তুই আমার বাসা থেকে বের হ!

নিঝুম মিটিমিটিয়ে হাসছে। আহনাফ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,‌”কখন থেকেই বলছি চলে যাবো চলে যাবো। আটকে তো তুইই রাখলি!
বলেই হন হন করে বেরিয়ে গেল। নিঝুম হাসছে! শান্ত দাঁড়িয়ে বলল, “হেসো না, হাসার কিছু ঘটেনি।

“অশান্ত, এবার রাগটা ছাড়ুন তো। আর কতো রেগে থাকবেন।

“বলছো রাগবো না, তোমার বাবা আমায় পছন্দ করেনি কথাটা বুঝতে পারছো তুমি। আমার মাঝে অপছন্দের কি ছিল তুমিই বলো।

“আরে ভাই, কতোবার এক কথা বলবেন আপনি!

“বাহ, এখনি ভাই ডাকছো। কয়েকবছর পর নিশ্চিত তোমার বাচ্চাদের মামা বানিয়ে ফেলবে।

শান্ত’র কথা শুনে নিঝুম ফট করে হেসে ফেললো। শান্ত’র মাথা পুরোপুরি গেছে। শান্ত হতভম্ব হয়ে নিজের রুমে চলে গেল। সবাই মজা করছে তাকে নিয়ে। নিঝুম চেঁচিয়ে বলল, “আমি চলে যাচ্ছি, রাগ কমে গেলে ফোন করবেন।

টেবিলে থাকা ফোন হাতে নিয়েই বেরিয়ে গেল সে। মনে মনে হাসছে শান্ত’র কথা ভেবে। কতোটা প্রোসেসিভ উনি। অনেকখানি পথ আসার পর হঠাৎ মনে হলো পেছন থেকে কেউ দূরে আসছে। নিঝুম পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখল শান্ত দৌড়ে দৌড়ে এদিকেই আসছে। নিঝুমের সামনে এসে দাঁড়াল সে। হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,‌ “তুমি তোমার ফোনের জায়গায় আমার ফোন নিয়ে এসেছো!

নিঝুম অবাক হয়ে হাতের দিকে তাকাল। সত্যিই এই ভুলটা সে করেছে। মুখ ফিরে তাকাল সে শান্ত’র দিকে।‌ শান্ত খুব অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে আছে তার দিকে। নিঝুমের দৃষ্টিতে অবাক! শান্ত ফট করে এসে জড়িয়ে ধরল তাকে। এই ভরা রাস্তায়, এতো লোকজনের সামনে জড়িয়ে ধরবার আগে দুমিনিট ভাবল না সে। শান্ত ঘন ঘন শ্বাস ফেলতে ফেলতে বলল, “তুমি আমার ছাড়া আর কারো হতে পারো না চশমিস! তুমি শুধুই আমার।”

মনের কথাগুলো বলে দেওয়ায় এখন খানিকটা ভালো লাগছে শান্তর। নিঝুম বলে উঠল, “ছাড়ুন আমায়,‌লোকজন দেখছে! শান্ত তবুও জড়িয়ে ধরে রাখল, ছেড়ে দিলো না।

——

আশালতা স্বাভাবিক গলায় বলল, “ওই মেয়ের সাথে শান্ত’র বিয়েটা তুমি আটকাও!

কবীর ঠান্ডা গলায় বলল, “বিয়ে তুমি করছো না, শান্ত করছে! ওর যাকে ইচ্ছে তাকেই বিয়ে করবে।

“এই বিয়ে করে আমার ছেলেটা সুখী হবে না।

“যেই মেয়েকে ভালোবাসে তাকে বিয়ে করবে না, এই কথাটা তুমি বলছো।

“ভালোবেসে বিয়ে করলেই সুখ পাওয়া যায় না, তোমাকে বিয়ে করে সেটা বেশ বুঝতে পারছি আমি।

কবীর চৌধুরী বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন। আশালতা কঠিন গলায় বলল, “যে করেই হোক বিয়েটা ভাঙার ব্যবস্থা করো। নাহলে আমাকেই কিছু করতে হবে।

কথাটা বলেই আশালতা চায়ের কাপ রেখে হন হন করে হেঁটে চলে গেলেন। কবীর চৌধুরী নিঃশব্দে চায়ের কাপে চুমুক রাখলেন। রায়ান দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, “স্যার, যাকে আনতে বলেছিলেন সে এসে গেছে!

চায়ের কাপ শেষ না করেই উঠে দাঁড়ালেন তিনি। হেঁটে চলে গেলেন স্টাডি রুমে। রায়ান পিছনে পিছনে এসে দরজার সামনে দাঁড়াল। কবীর কঠিন গলায় বলল,‌ “ভেতরে যেন কেউ না আসে, আশালতা ও না!

বলেই রুমে ঢুকলেন। ইফা তাকে দেখেই দাঁড়িয়ে গেল। কবীর চৌধুরী হেসে বললেন, “বসো মা!

ইফা হাসার চেষ্টা করল। তাকে এখানে কেন ডাকা হয়েছে এই কথাটা এখনো বুঝতে পারছে না সে। কবীর চৌধুরী উদ্দেশ্য ছাড়া কোন কাজ করে না। তাকে আনার পেছনে উদ্দেশ্য কি? কবীর চৌধুরী শীতল গলায় বললেন, “কফি তো ঠান্ডা হয়ে গেল, আরেকটা আনতে বলি!

“না আংকেল, আমার আর খেতে ইচ্ছে করছে না।

“কেমন আছো বলো?

“আলহামদুলিল্লাহ ভালো! আপনি ভালো আছেন।

“আছি বেশ, পড়ালেখা কেমন চলছে?

“জি আংকেল ভালো, একটা কথা জিজ্ঞেস করবো?

“বলো!

“আমায় কেন ডেকেছেন, জরুরী কোন বিষয়? না আসলে আমার একটা ইম্পর্ট্যান্ট ক্লাস ছিল ঘন্টা খানেক পর তাই বলছিলাম!

“আমি তোমাকে আগেই ছেড়ে দেবো। তুমি ফিরে ক্লাস করতে পারবে। এতো দুশ্চিন্তা করার কিছু নেই।

ইফা হেসে পানিল গ্লাস তুলে নিল। কবীর চৌধুরী হেসে বললেন, “তা মা তুমি তো রোজ আসতে এই বাড়িতে, এখন আসো না কেন?

হকচকিয়ে গেল ইফা। পানি আর খেতে পারল না। ভনিতা করে বলল,‌ “আসলে আংকেল ওই পড়াশোনার চাপ ছিল তাই..

“তা ঠিক! পড়াশোনার চাপ তো থাকবে। কিন্তু মা কফি শপে বসে আন্টির সাথে গল্প করলে তো হবে না,‌বাসায় আসতে হবে। আংকেলের খোঁজ খবর নিতে হবে তাই না!

ইফা নিশ্চুপ হয়ে গেল। তার হাত পা ক্রমশই ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। মুখটা কঠিন করে রেখেছে সে। নিশ্চিত এই লোকটা সব জানে। জেনেশুনেই তাকে ডেকে এনেছে। কবীর চৌধুরী এবার সিগারেট ধরাতে ধরাতে বলল, “মা ইফা! তোমাকে আমার বেশ পছন্দ। ছোট থেকেই পছন্দ। তাই তোমাকে কঠিন কিছুই বলতে পারছি না। কি বলো তো, আমি মানুষটা এতো ভালো না। নিজের ছেলেও আমাকে সহ্য করতে পারে না। তাই বলে পুরোপুরি খারাপ হয়ে যায় নি। কিছুটা ভালো আমার মাঝে এখনো আছে।
আমি কি বলছি তুমি বেশ বুঝতে পারছো। কারো সম্পর্কে খারাপ কিছু বললেই তাকে খারাপ বানানো যায় না। নিঝুমের সম্পর্কে আমি খোঁজখবর নিয়েছি। অনুরোধ করছি , এমনটা আর করো না। ভালোবাসলেই সব পাওয়া যায় না। পৃথিবীতে আমরা বসবাস করছি ঠিক’ই কিন্তু আমাদের ভাগ্যের চাকা অন্যেজনের সাথে। তিনিই সব ঠিক করেন। তোমার জন্য হয়তো তিনি শান্ত’র চেয়েও ভালো কাউকে ভেবে রেখেছেন। শান্ত নিঝুম কে ভালোবাসে, নিঝুম কে না পেলে তোমাকে বিয়ে করবে এটা তোমার ভুলভ্রান্তি! ও কাউকেই বিয়ে করবে না। নিঝুমের জায়গা তুমি কখনো নিতে পারবে না। শেষে ও কষ্ট পাবে তুমিও পাবে। দরকার কি বলো এভাবে তিনটি জীবন নষ্ট করার। তুমি তো লক্ষী মেয়ে। নাও পানি টা খেয়ে নাও, ভালো লাগবে।

ইফা কাঁদছে,‌ কোনভাবেই নিজের কান্না থামাতে পারছে না সে। কবীর চৌধুরীও তাকে থামতে বলছে না। সিগারেট এস্ট্রে তে ফেলে বললেন, “তোমার ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে,যাও চলে যাও!

ইফা কান্না থামালো। কম্পিত স্বরে বলল, “আংকেল আমি কি আন্টির সাথে একবার কথা বলবো। তাকে সত্যিটা বলে যাবো।

“না দরকার নেই, এখন এসব বলতে গেলে তিনি তোমার উপর রাগ করবে। এটার কি দরকার বলো। তুমি চলে যাও, বাকিটা আমি সামলে নেবো।

ইফা ব্যাগ হাতে দাঁড়িয়ে বলল, “সরি আংকেল! ইফা বেরিয়ে গেলো। কবীর চৌধুরী দীর্ঘশ্বাস ফেললেন। এলোমেলো পথে হেঁটে যাচ্ছেন তিনি। গন্তব্য এখনো খুঁজে পাচ্ছেন না। বোধহয় আরো হাঁটতে হবে, গন্তব্য মনে হচ্ছে ভালোই হতে চলেছে!

——-

তানিশা হম্ভিতম্ভি করে লাইব্রেরীতে ঢুকল। ভার্সিটি ছুটি হয়ে গেছে। এসময় লাইব্রেরীতে কারো থাকার কথা না। কিন্তু আহনাফ এখনো সেখানে। সে একটি বই খুঁজছে। কারো উপস্থিতি পেয়েও সে ওদিকে তাকালো না। তানিশা এসে একদম তার সামনে দাঁড়াল। আহনাফ বই হাতে নিয়ে তানিশার দিকে ফিরল। চোখে মুখে রাগ স্পষ্ট। সে খানিকটা অবাক হলো। তানিশার ঠোঁট কাঁপছে। কিছু কঠিন কথা বলার জন্য প্রস্তুত করছে নিজেকে। আহনাফ আজ একটা ভয়ংকর কাজ করেছে। কিছুদিন ধরে তুহা নামের এক মেয়ে আহনাফ কে পটানোর জন্য আকাশ পাতাল এক করে দিচ্ছে। এদিকে আহনাফ আজই সে তুহার সাথে দু মিনিট হেসে হেসে কথা বলেছে। কাজ এতেই সেড়ে গেছে। তুহা ঢোল পিটিয়ে বলছে ‌আহনাফ তার প্রেমে পড়ে গেছি। কোন ধরণের আদিখ্যেতা এসব তানিশা বুঝতে পারছে না। কঠিন কিছু কথা আজ আহনাফ কে না বললেই নয়।

“কিছু বলবে?
শীতল কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল আহনাফ! তানিশা হকচকিয়ে গেল। আহনাফ তার সবকিছু এলোমেলো করে দিচ্ছে। না এমনটা হলে তো হবে না। সে শব্দ করে শ্বাস ফেলে বলল, “আপনাকে আমি কয়েকবছর আগে যে চিরকুট গুলো পাঠিয়েছিলাম আপনার কি উচিত ছিল না চিরকুট গুলোর জবাব দেবার। তখন না হয় দিতে পারেন নি তো এখন কি? এখন সমস্যা কোথায় আহনাফ। আপনার চোখে সবাইকে পরে কই আমাকে তো পরে না। সবার ভালোবাসা আপনি দেখতে পারেন, আমারটা কেন দেখতে পারেন না। বুঝতে পারেন না কতদিন ধরে ভালোবেসে যাচ্ছি। কি সমস্যা টা কি আমার মাঝে,‌আমি‌ বোবা না কালা। যথেষ্ট সুন্দরী! আপনার থেকেও সুন্দর‌। আপনি কি মনে করেন, মেয়েরাই শুধু আপনাকেই প্রেমপত্র পাঠায়। আমায় কোন ছেলে দেয় না। কই আমি তো তাদের সাথে গা ঘেঁষে গল্প করি না। প্রথমে তিশা, এরপর নিঝুম এখন তুহা। মানে নিজেকে কি মনে করেন কি আপনি। কোথাকার রাজপুত্র আপনি। কোন রাজকন্যার আশায় আছেন আপনি। দুনিয়াতে সুন্দর ছেলে কি একমাত্র আপনিই আছেন। কি ভাবেন আপনাকে ছাড়া আমি কাউকে ভালোবাসতে পারবো না। সেই ক্ষমতা নেই আমার!

কথাগুলো বলতে বলতে তানিশার চোখে অশ্রু জমে গেল। আহনাফ এখনো শক থেকে পুরোপুরি ভাবে বের হয়ে আসতে পারে নি। সে বুঝতেই পারছে না এই শান্ত মেয়েটা হঠাৎ এভাবে ক্ষেপে গেলো কি করে। সে শুকনো ঢোক গিলল। কিছু কি বলবে নাকি শুধু শুনে যাবে। এই প্রথম সিদ্ধান্ত নেবার সময় এতোটা হাইপার হচ্ছে সে। আহা একি! এই মেয়ে কি করছে। এই তো দেখি সত্যি সত্যি কেঁদে ফেলছে‌। আহনাফ কি বলবে, তার কি বলা উচিত। বলবে যে কেঁদো না। কিন্তু সে একশ ভাগ নিশ্চিত, একথা বললেই খুব বড়ো সড়ো একটা ধমক খাবে। কোনভাবেই সে ধমক খাবার ইচ্ছে নেই তার। তানিশা দ্রুত কান্না থামিয়ে চোখ মুছে ফেলল। ধরা গলায় বলল,‌ “হ্যাঁ সম্ভব না আমার পক্ষে, সেই ক্ষমতা নেই আমার। আপনাকে ছাড়া আর কাউকে ভালোবাসতে পারি না আমি। কখনো ভাবিনি , পারবো না কাউকে। বুঝতে পারছেন আপনি,‌কথা বলছেন না কেন। চুপ হয়ে আছেন কেন? বোবা হয়ে গেছেন!

আহনাফ এখনো হতবুদ্ধির‌ মতো দাঁড়ানো। তানিশা তার চোখ থেকে চোখ সরিয়ে ফেলছে না। বরং সে আরো কাছে এসে দাঁড়াল। গলার কলার ধরে কাছে টেনে হুট করেই চুমু খেয়ে বসল আহনাফের ঠোঁটে। এই অঘটন কি করে করল, কেন করল কিছুই জানে না সে। আহনাফ এতোটা হতভম্ব হয়ে‌ পড়ল যে তার হাত থেকে বইটা পরে গেল। তানিশা ছেড়ে দিল আহনাফ কে। তার এই অকাজের জন্য খুব লজ্জা লাগছে তার। এই কাজটা বোধহয় একদম ঠিক হয় নি। আর চোঁখের দিকে তাকাল না তার। পা বাড়াল ফেরার পথে। লজ্জায় তার এখন মরে যেতে ইচ্ছে করছে। আহনাফ মাথা ঝাড়া দিল, দ্রুত নিজেকে সামলে নিয়ে ডাক দিল তানিশা কে। তানিশা থমকে গেল। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ফেলল। নিচ থেকে বইটা হাতে নিল সে। তানিশার বুক ধক ধক করে কাঁপছে। আহনাফ এখন কি বলবে তাকে। নিশ্চিত বলবে, “তুমি খুব বাজে মেয়ে, নির্লজ্জ মেয়ে! এভাবে একটা ছেলেকে না বলে কি করে চুমু খেতে পারো।” আরো বলবে হয়তো কিছু কঠিন কঠিন কথা। সেসব কথা শোনার জন্য নিজেকে প্রস্তুত করল সে। পেছনে মুখ ফিরে তাকাল। আহনাফ এগিয়ে তার দিকেই আসছে। তানিশা মাথা নিচু করে ফেলল। চোখ তুলে কথা বলবার সাহস নেই তার। আহনাফ সামনে দাঁড়িয়ে শীতল কণ্ঠে বলল, “তুমি কখনো কাউকে চুমু খাও নি, তাই না!

তানিশা চমকে উঠলো। সে তাকিয়ে আছে আহনাফের শীতল দৃষ্টির দিকে। তানিশাকে অবাক করে দিয়ে তার গাল হাত রেখে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিল আহনাফ। তানিশার হতবাক, হতবুদ্ধি’র মতো তাকিয়ে রইল। আহনাফ বলে উঠল, “চুমু এভাবে খেতে হয়!

বলেই পাশ বেয়ে চলে গেল সে। তানিশা থমকে দাঁড়িয়ে আছে। পা বাড়ানোর শক্তি সে হারিয়ে ফেলেছে। হাত দিয়ে তার ঠোঁট দুটো ছুঁইয়ে দিল সে। যা হলো তা কি সত্যি ছিল নাকি স্বপ্ন। সত্যিই কি তবে আহনাফ তাকে…
তানিশা দ্রুত পিছন ফিরে ছুটতে ছুটতে ডাক দিল, “আহনাফ!”

নীলাভ্র একটা সুখবর পেলো , তা হচ্ছে নিঝুমের বাবা শান্ত আর নিঝুমের সম্পর্কটা মেনে নিয়েছে। কিছুদিন পরেই তাদের বাগদান।খবরটা দেবার পর নিঝুম খুশিতে নাচতে লাগল। নীলাভ্র দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তার নাচ দেখছে। কিছুটা কষ্ট হয়তো লাগছে কিন্তু নিঝুমের দু চোখের আনন্দ তার কষ্ট কমিয়ে দিল। বাগদানের খবরে আরো একজন সবচেয়ে খুশি, সে হলো তাহমিনা বেগম! ছেলেকে তো তার মাশাআল্লাহ বেশ পছন্দ। এছাড়া তাদের সম্পদও ভালো আছে। মেয়ে সুখে থাকবে। কিন্তু একটা ব্যাপারে তার মন খুচ খুচ করছে। ছেলে নাকি অনাথ! এর অর্থ তার মেয়ে শশুড় শাশুড়ির আদর পাবে না।‌যদিও‌ এখন সবাই মনে করে শাশুড়ি থাকা ঝামেলার, কিন্তু একসময় এই শাশুড়িকেই বেশ দরকার পরে। দরকারের সময় তার মেয়ের কাছে শাশুড়ি নামের মানুষটা থাকবে না। থাকবে না তার দোয়া। কিন্তু ছেলেটার নানা নাকি এখনো বেঁচে আছে। কি জানি নাম বলল, হ্যাঁ জায়ান আহমেদ! এই লোক নাকি বিদেশে থাকে! এতো কিছুর মধ্যেও তিনি তার মেয়ের সুখ দেখতে পারছেন!

#চলবে….#তোমার_মনের_মধ্যিখানি 🌼
#মিমি_মুসকান ( লেখনিতে )
#পর্ব_৬৭

শুক্রবার হচ্ছে শুভদিন! এই শুভদিনে একটা শুভ কাজ হচ্ছে। শান্ত আর নিঝুমের বাগদান। ঘর ভর্তি মানুষ , অথচ এতো মানুষের সাথে আশা করা হয় নি। মঈনুল হক একদিকে‌ যেমন খুব ব্যস্ত অন্যদিকে তেমন খুশি। মেয়েটিকে সোফায় চুপচাপ বসে থাকতে দেখে বেশ ভালো লাগছে তার। নিঝুমের পরনে আসমানী রঙের একটা শাড়ি। শাড়িটা খুব যত্ন করে বাবা এনেছে তার জন্য। মা খুব যত্ন করে পড়িয়ে দিয়েছে। তার পাশে তিথি! ইফা কে আসতে বলা হয়েছিল, কে জানে আসবে কি না। নিঝুম আজ ভেবে নিয়েছে ইফার কাছে সে ক্ষমা চাইবে। তার ভুল থাকুক আর না থাকুক তবুও চাইবে। কিন্তু একটা মানুষের মন ভাঙা তো অন্যায় কাজ। অনিচ্ছায় হোক না কেন? শান্ত কে নিয়ে সে যে স্বপ্নের বাসা বুনেছিল নিঝুম তা নষ্ট করে দিয়েছে এতে তার ক্ষমা চাওয়াই উচিত!
গাড়ির আওয়াজ আসছে। হয়তো তারা চলে এসেছে। দলবেঁধে ঢুকছে একেক জন। মঈনুল হক বেশ ব্যস্ত হয়ে পড়লেন। নিঝুম এদিক ওদিক তাকিয়ে ইফা কে খুঁজছে।‌তার মন বলছে ইফা আজ আসবে। অবশেষে তাকে দেখতে পেলো। কালো রঙের একটা শাড়িতে অপূর্ব লাগছে তাকে দেখতে। ইফা হেসে এসে বসে পড়ল নিঝুমের পাশে। চুল টা ঠিক করে সহজ স্বাভাবিকভাবে বলল, “তোকে অনেক সুন্দর লাগছে!”

“তোকেও লাগছে!”

বলেই হেসে দিল নিঝুম। তিথি ছুটে এলো সেলফি তোলার জন্য। হিনা কে দিয়ে একের পর এক ছবি তুলছে। বেচারা শান্ত কে কেউই পাত্তা দিচ্ছে না। উৎসবের এক আমেজ এসে পড়েছে! শান্ত কে এবার একেক জন এসে দেখছে। সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি নিঝুমের এতো আত্নীয় স্বজন! মামা, মামী, মামাতো বোন,‌চাচাতো বোন, খালাতো ভাই! এই চাচা, তার নানাজান আর কতো কি? এতোজন কে চিনে রাখা কতোটা মুশকিল সে ভেবেই পাচ্ছে না। আহিম তার পাশে বসে দাঁত কেলিয়ে হাসছে।‌ শান্ত’র‌ হাল ক্রমশ’ই খারাপ হয়ে যাচ্ছে। সে চাচ্ছে এখান থেকে উঠে একটু দম নিতে। সেই সুযোগ টা করে দিলো তার শ্যালিক হিনা! আরো কয়েকটা শ্যালিকা আছে,‌ কিন্তু এতোজনের নাম মনে রাখা তার পক্ষে অসম্ভব!

শান্ত বলে উঠল, “হিনা একটু পানি দাও তো!”

আহনাফ চট করে পানির গ্লাস সামনে ধরল। ঘুরে এসে নিঝুম ওপাশে দাঁড়াল। পুরো পরিবার দেখা যাচ্ছে এখান থেকে। শান্ত বলে উঠল, “এরা আমাদের বাগদানে এসেছে!

“না, এরা এসেছে পরিবারের সাথে দেখা করতে,‌দেখছেন না কিভাবে গল্প গুজব করছে।

“তোমার এতো আত্মীয় স্বজন কেন চশমিশ?

আহনাফ মাথায় বাড়ি মেরে বলল, “তুই একা আছিস বলে ও কি একা থাকবে। দেখছিস না কি মজা!

“তোর মজা লাগছে।

“তা তো লাগছেই।

নিঝুম হেসে বলল, “আমাদের বংশের প্রথম মেয়ের বিয়ে, এই একটু আধটু ধাক্কা তো খেতেই হবে।

“বিয়েতে এরা সবাই আসবে!

“এদের সাথে আরো কাছে। আমার ফুফা, ফুপু , তাদের ছেলে মেয়ে, আমার খালুজান আসবে বুঝলেন তিনি চমৎকার মানুষ! আপনার খুব ভালো লাগবে। তার একটা ছেলে আছে, তার কি সুন্দর তিনবছরের একটা মেয়ে! অদ্ভুত সুন্দর করে কথা বলে।

শান্ত ক্লান্ত ভঙিতে বলল, “প্লিজ চুপ করো। আমি এ পর্যন্ত একা থেকে এসেছি। এতো লোকজন দেখে আমার মাথা চক্কর দিচ্ছে।

“চিন্তা করবেন না, প্রথম দিন এমনই লাগবে। শেষে ঠিক হয়ে যাবে!

এর মাঝে এক মেয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠল, “আহ্ কি একি কান্ড! বর বউ একসাথে দাঁড়িয়ে কি করছো?

শান্ত হকচকিয়ে গেল! আশ্চর্য, বর বউ কেন বলছে। নিঝুম জোরে বলে উঠল, “আপাতত পাত্র আর পাত্রী! বর বউ কেন বলছিস গাধা মেয়ে!

হেসে উঠল সবাই। দু একজন মুরব্বি আবার মুখ ভেংচি কাটলেন। এমন মুরব্বি পরিবারে দু একজন থাকতে হয়। রিয়া আর দিয়া এসে দাঁড়াল। বলে উঠল, “ছবি তুলতে হবে সুন্দর করে দাঁড়াও!”

“আমি তো সুন্দর করেই দাঁড়িয়ে আছি!

নীলাভ্র হাতে ক্যামেরা নিয়ে শান্ত আর নিঝুমের কাছে থেকে ছবি তুলতে লাগল। আশ্চর্য! নিঝুম মেয়েটিকে আজ এতো সুন্দর কেন লাগছে!

তানিশা কে সবাই খুঁজছে! একমাত্র এই মেয়েটাই কাজের কাজ করছে। তাহমিনা বেগম কে কাজে সাহায্য করছে। তাহমিনা বেগমের আবার মনে হতে লাগল তার এক ছেলে না হয়ে আরো দু ছেলে হলে তিনি হয়তো বেশি খুশি হতেন! তানিশা মেয়েটিকে তার অপূর্ব লাগছে! সবুজ রঙের শাড়ি টা কি চমৎকার ভাবেই না পড়েছে। মিষ্টি একটা মেয়ে!

গাড়ি আবারো এসে থামল। কলিং বেল বেজে উঠলো! এই সময় আবার কে এলো। দরজা খোলার আগ অবদি যে উৎসব মুখর পরিবেশ ছিল তা নিরব হয়ে গেল। কবীর চৌধুরী আর আশালতা চৌধুরী দুজনেই হাজির। এদের সাথে আছে রায়ান আংকেলও! এদের কেউ চিনে না, কেউ পরিচিত নয়। যারা পরিচিত তাদের মুখটা বিমূঢ় হয়ে আছে। একমাত্র মঈনুল হক উঠে দাঁড়ালেন। হাসিমুখে তাদের ভেতরে আনলেন। সবার‌ সাথে পরিচিত করাতে লাগলেন, “এরা হচ্ছে পাত্রের মা আর বাবা!”

নিঝুম ছুটে এসে দাঁড়াল আহনাফের পাশে। অস্থির হয়ে বলল, “ইনি অশান্ত’র বাবা! তাই না।

“হ্যাঁ, পাশে ওর মা, সৎমা!”

“উনারা এখানে কি করছে।

“জানি না। তবে আমি নিশ্চিত তারা জানতেন আজ তোমার আর শান্ত’র‌ বাগদান। নিজের ছেলের খবর রাখেন কবীর চৌধুরী!

“আহনাফ আমার ভয় করছে!

“কেন?

“অশান্ত বাবা কে বলেছে সে অনাথ! অথচ দেখুন এখানে তার মা আর বাবা এসে হাজির।

আহনাফ হেসে বলল, “চিন্তিত হয়ো না, আমার ধারণা তোমার বাবা সবটা জানেন। তুমি বরং শান্ত’র কাছে এগিয়ে দাঁড়াও!

নিঝুম শান্ত’র কাছে এসে দাঁড়াল। সে হতভম্ব তাদের দেখে। তাহমিনা বেগম যেন আকাশ থেকে পড়লেন। অনাথ ছেলের মা, বাবা কিভাবে এলো। তানিশাকে ফিসফিসিয়ে জিজ্ঞেস করলেন, তানিশা শান্ত ভঙ্গিতে বলল, “এটা শান্ত’র সৎমা। শান্ত ওদের সাথে থাকে না।

“ওদের কোন ছেলেমেয়ে নেই।

“নাহ, শান্ত একমাত্র সন্তান!

তাহমিনা বেগম এতে যেন একটু খুশিই হলেন তবুও তার মনে এক ধরণের দ্বিধা আছে। দ্বিধা টা সহজে কাটাতে পারছেন না। তানিশা এসে দাঁড়াল আহনাফের পাশে। আহিম, আফিন,‌ রিয়া আর দিয়া ছুটে এলো। তিথি এসে বলল, “এরা শান্ত ভাইয়ার মা বাবা নাকি!

“হুঁ!

“তাহলে আপনারা গিয়ে কথা বলছেন না কেন?

আফিন বলল, “কারণ আমরা ভালো ছেলেমেয়ে না।

আহিম বলে উঠল, “একমাত্র ইফা ভালো মেয়ে। কি সুন্দর করে দাঁড়িয়ে কথা বলছে।

রিয়া বলে উঠল, “আমি ঝড়ের আভাস পাচ্ছি। শান্ত কে দেখ একবার।

দিয়া বলে উঠল, “আমি ভাবছি নিঝুমের বাবা কি করবে? এই সম্বন্ধে তিনি আগেই না করেছেন। জানতেন ছেলে অনাথ এখন দেখছে মা বাবা হাজির।

তিথি বলে উঠল, “আন্টি তো আমাকে কয়েকবার জিজ্ঞেসও করল। আমি কিছুই বলি নি।

তানিশা বলে উঠল, “চিন্তার কোন কারণ নেই, মঈনুল আংকেল কে দেখে মনে হচ্ছে না তিনি অবাক হয়েছেন। ভাবটা এমন বিষয়টা তিনি আগে থেকেই জানতেন!

সবাই সেদিকে তাকাল। তানিশার কথাটা সত্যি! আহনাফ অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকাল তানিশার দিকে। শাড়ি পরাতে তাকে অসম্ভব সুন্দর লাগছে! ফোন বেজে উঠল আহনাফের‌। নানাজানের ফোন! সে একদিকে চলে গেল!

“হ্যালো নানাজান!

“আহনাফ! বিশেষ অতিথি এসে গেছেন।

“অ্যাপায়ণ করা হচ্ছে। পাত্রীর বাবা নিজ হাতে অ্যাপায়ণ করছে!

“আবহাওয়া কেমন?

“ঝড় হবার পূর্বাভাস!

“দেখি শান্ত কে একটু দাও!

“দিচ্ছি!

আহনাফ এগিয়ে গিয়ে ফোনটা শান্ত কে দিল। নিঝুম আহনাফের কাছে দাঁড়িয়ে বলল,‌”আমার খুব ভয় লাগছে আহনাফ, অশান্ত খুব রেগে আছেন।

“চিন্তা করো না, নানাজান বুঝিয়ে বললে সব ঠিক!

“সত্যি!

“একশ ভাগ সত্যি!

সত্যি সত্যি সব ঠিক হলো।‌ শান্ত কিছুই বলল না। নানাজানের কথা কাজে দিয়েছে। তাহমিনা বেগম নিঝুম কে এনে দাঁড় করালেন আশালতার সামনে। তিনি ভ্রু কুঁচকে মেয়েটিকে দেখছেন। শান্ত’র তুলনায় মেয়েটা খাটো! তবে গায়ের রঙ ঠিক আছে। এতো দেখি আবার চশমাও পরে। চশমা পরা মেয়েরা চোখে কম দেখে। কি জানি, ছেলে মেয়ে হলে তাদের কি হাল হবে!

আশালতার মনো বিচার কখনো এমন ছিল না। দীর্ঘকাল সে বিদেশে থেকে পড়াশোনা করেছেন। তার মনোভাব অন্যরকম থাকা উচিত। কিন্তু কিছুদিন দেশে থেকে উপন্যাস কিছু পড়ে তার মতিগতি পাল্টে গেছে। নিজেকে সেই উপন্যাসের একজন চরিত্র হিসেবে কল্পনা করছে সে। তার চরিত্র হচ্ছে তিনি একজন শাশুড়ি, কড়া শাশুড়ি! তবে মেয়েটার হাসি সুন্দর! দাঁত গুলোও ঠিক আছে!
বাগদানের কাজ শেষ হলো জাকজমকভাবে! কবীর চৌধুরী সবাইকে চমকে দিয়ে পাত্র আর পাত্রীর জন্য হীরা বসানো আংটি এনেছেন! শান্ত নিঝুমের অনামিকা আঙ্গুলে সেই আংটি পড়িয়ে দিল নিতান্ত অনিচ্ছায়! নিঝুম কবীর চৌধুরীর কাছ থেকে শেষে দোয়া চাইতে গেলেন। কবীর চৌধুরী তখন তার মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,‌”তোমাকে আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে মা। কিছু দরকারি কথা ছিল তোমার সাথে, এখন না। সময় হলে আমি নিজেই বলবো।” নিঝুম মাথা দুলাল!

—–

তানিশা আহনাফের গাড়িতে। তাকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে আবার যেতে হবে শান্ত’র‌ কাছে। শান্ত কবীর আংকেলের সাথে গেছে। ঝামেলা বোধহয় আজ একটা হবেই।‌ তানিশা অনেকক্ষণ পর বলে উঠল,‌ “খুব বড় একটা ঝামেলা লাগবে,‌‌আমাদের‌ শান্ত’র‌ সাথে যাওয়া উচিত ছিল।

“কিছু কিছু সময় অনুচিত কাজ করা উচিত!

তানিশা লজ্জা মাখা মুখে বলল , “হুম করা উচিত!

“আমি তোমার কথা বলছি না, লজ্জা পাবার কোন দরকার নেই।

“আমি লজ্জা পাচ্ছি না।

“পাচ্ছো! লজ্জায় তোমার মুখ লাল হয়ে যাচ্ছে।

“তো কি হয়েছে? লজ্জা পেয়ে কোন অন্যায় তো করে নি।

“আমি তো সেটা বলি নি। যাই হোক, তুমি ভেবো না আমি তোমার প্রেমে পড়েছি।

“না পড়লে চুমু কেন খেতে গেলে।

“তুমি চুমু দিতে জানো না , তাই শিখিয়ে দিলাম।

“শিখে গেছি, এখন তোমাকে এখন চুমু খেয়ে দেখাবো।

আহনাফ মুখ ঘুরিয়ে নিল। তানিশা হেসে উঠলো। তার খুব মজা লাগছে। হঠাৎ আহনাফ বলে উঠল,‌ “ঝগড়া করলেই তুমি , তুমি থেকে আপনিতে চলে যাও!

“এটাকে বলে ভদ্রতা, শিখে নাও।

“আগে একটা কথা বলতে না এখন কথার পিঠে জবাব দিচ্ছ।

“সেই সুযোগ তুমি করে দিয়েছো।

“বিরাট বড় ভুল করেছি

“বেশ তো! কিছু সময় ভুল কাজ করা উচিত!

আহনাফ আবারো চুপ হয়ে গেল। তানিশা একটু এগিয়ে এসে আহনাফের ঘাড়ে মাথা রাখল। আহনাফ বেশ একটু হকচকিয়ে গেল। একবার ভাবল বলেই ফেলবে, “একি করছো, উঠে বসো!” কিন্তু বলতে পারল না। কোথায় যেন আটকে গেল। কেন গেলো? সে কি এই মেয়েটির প্রেমে পড়ে যাচ্ছে।‌
——–
আশালতা ভাব ভঙ্গি বেশ অস্বাভাবিক। ছেলে বাড়ি এসেছে,‌তিনি পায়েস রান্না করছেন। কিন্তু তার ছেলে যে গম্ভীর মুখে বসার ঘরে বসে আছে এতে তার কোন মনোযোগ নেই। তিনি পায়েস রাধা শেষ করে এলেন। আশ্চর্য! শান্ত এতোক্ষণ চুপচাপ বসে রইল। চুপচাপ থাকার’ই কথা।‌ তার সামনে কেউ নেই,‌ কাকে কি বলবে সে! এই বাড়িটা তার কাছে অভিশাপের মতো।‌‌ কিন্তু এই অভিশপ্ত বাড়িতেই তার দারুণ ছেলেবেলা কেটেছে। ইচ্ছে করছিল একবার একটু ঘুরে দেখতে। দেখলো না। বাড়ির প্রতিটা জিনিস এখনো আগের মতোই আছে। কিছু বদলায় নি। সোফা গুলোও পুরনো শুধু যত্নের কারণে টিকে আছে। এতো যত্ন কে করে?

আশালতা সামনে এসে বসল। পায়ের বাটি রেখে বলল,‌”শান্ত খাও!

“খেতে ইচ্ছে করছে না।

“তবুও একটু খাও, আমি অনেক কষ্ট করে রেঁধে এনেছি।

শান্ত অবাক হয়ে আশালতার দিকে তাকাল। এই ভদ্রমহিলার কি পাগল হয়ে গেল নাকি। এমন করে কথা কেন বলছে। মনে হচ্ছে শান্ত তাদের প্রতি কতো স্বাভাবিক! এসব কি ভান। আশালতা হাস্য উজ্জ্বল মুখে বলল,‌ “তুমি তোমার ঘরে যাবে তো। আমি এখনো ঘরটা আগের মতোই রেখেছি। প্রতিদিন গোছগাছ করে রাখি।

“না, আমি নিজের বাসায় ফিরবো।

“আজকের রাতটা থেকে যাও, অনেক রাত হয়েছে!

শান্ত জবাব দিল না। তার খুব করে মনে হচ্ছে এই মহিলা পাগল হয়ে গেছে। তাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া উচিত! তাকে কঠিন কিছু বলে লাভ নেই। তিনি হয়তো হো হো করে হেসে উঠবেন। কবীর চৌধুরীর জন্য অপেক্ষা করছে সে। তিনি এলেই তাকে কিছু কঠিন কথা বলতে হবে ‌। জিজ্ঞেস করতে হবে, তার জীবনে কেন তারা এতো অধিকার দেখাচ্ছে। এই অধিকার সে তো দেই নি!
কবীর চৌধুরী বসার ঘরে ঢুকলেন। তার পিছু পিছু এলো রায়ান। এই লোকটার কাজ’ই বোধহয় কবীর চৌধুরীর‌ পিছন পিছন আসা। কবীর চৌধুরী হেসে বললেন, “ছেলে কে আদর করে পায়েস খাওয়ানো হচ্ছে!

“খাচ্ছে কোথায়? ও তো নিয়ে বসে আছে!

“আমি খাবো না এসব!

কবীর চৌধুরী বসে পড়লেন শান্ত’র সামনে। তাল মিলিয়ে বললেন, “তাই তো! একটু আগেই তো এতো কিছু খেয়ে এলো। এখন এসব কি করে খাবে।

আশালতার মুখে অন্ধকার নেমে এলো। সে খুব শখ করে রান্না করেছিল ছেলের জন্য। শান্ত নিজেকে তৈরি করছে। কবীর চৌধুরী বললেন,‌ “বলো কি বলবে?

“আপনারা ওই বাড়িতে কেন গেলেন!

আশালতা বলে উঠল, “একি কথা! আমরা তোমার মা বাবা, ওখানে না গেলে কি করে হয়?

“ভুলে যাবেন না, সেই অধিকার আমি আপনাদের দেই নি।

আশালতা কঠিন গলায় বলে উঠল, “তুমি না দিলেই সম্পর্ক পাল্টে যাবে না শান্ত!

“যাবে, যেই সম্পর্ক আমি অস্বীকার করি তা মানবো কেন? এতো অধিকার কেন ফলাতে চাইছেন আপনারা!

কবীর চৌধুরী কিছু বললেন না। আশালতা অবাক দৃষ্টিতে ছেলের দিকে তাকিয়ে রইলেন। তিনি এবার শীতল গলায় বললেন, “আমি তোমাকে আরেক বাটি পায়েস এনে দেবো, এটা ঠান্ডা হয়ে গেছে।

শান্ত তৎক্ষণাৎ না বলে উঠল। কবীর চৌধুরী বললেন, “শান্ত মাথা ঠান্ডা করো।

“মাথা ঠান্ডাই আছে। আপনারা এরপর ওই বাড়িতে আর কখনো যাবেন না।

“কেন যাবো না? আশালতা জিজ্ঞেস করে উঠল। শান্ত ঢোক গিলল। সে চেয়েও পারছে না এদের সাথে কঠিন গলায় কথা বলতে। আরো কঠিন কিছু কথা বলা উচিত। রায়ান আংকেল দাঁড়িয়ে সবটা দেখছেন। কবীর চৌধুরী বললেন, “আজ না হোক, একদিন মঈনুল সাহেব ঠিক জানতে পারতেন আমরা তোমার মা বাবা। তুমি মিথ্যে বললেই সব ঠিক হতো না তাই না!

“যা হবার হতো! আপনাদের এখানে নাক গলানোর কোন দরকার ছিল না।

আশালতা বললেন, “ঠিক করে বাবার সাথে কথা বলো শান্ত! বাবার সাথে কেউ এভাবে কথা বলে না।

শান্ত দাঁড়িয়ে গেল। বলে উঠল, “আপনারা আমার মা বাবা না, শুধু শুধু অধিকার খাটাতে আসবেন না।

“তাহলে আমরা কারা?
মৃদুস্বরে জিজ্ঞেস করল আশালতা! শান্ত কঠিন গলায় বলল, “আপনারা আমার মায়ের খু’নি! নিজেদের নোংরা সম্পর্ক বয়ে নিতে আপনারা আমার মায়ের খু’ন করেছেন!

অশ্রুতে চোখ ভরে উঠল আশালতার। কবীর শীতল গলায় বলে উঠল, “তুমি বের হয়ে যাও শান্ত!

“চলেই যাচ্ছি। আর কখনো আসবো না এই বাড়িতে। আর আপনারা নিজেদের আমার জীবনের সাথে জড়াতে যাবেন না।

আশালতা দাঁড়িয়ে গেল। চোখ মুখ শক্ত করে বলল, “তোমার জীবন আমাদের সাথেই জড়িয়ে আছে। আপা শেষবারেও বলেছিল,‌ তোমাকে আগলে রাখতে।

“যিনি নেই তার সম্পর্কে মিথ্যে বলতে আপনাদের বাঁধে না। কতোটা নিচু মনের পরিচয় দিচ্ছেন আপনারা। নিজেই ছা’দ থেকে ফেলে দিয়েছিলেন। একবারো কষ্ট হয় নি না আপনার। মা তো অসুস্থ ছিল, আর কতোদিন’ই বা বাঁচতো। তবুও তাকে মে’রে ফেললেন। হাত কেঁপে উঠলো না একবারো। আর এখন এসেছেন…

আশালতা চেঁচিয়ে উঠে বলল, “শান্ত চুপ! একদম চুপ করো! আপা কে আমি কিছু করেনি।

শান্ত মুখ ঘুরিয়ে নিল। আশালতার কথা বিশ্বাস করল না সে। আশালতা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে শান্ত’র দিকে। এই কি সেই শান্ত! এই ছোট শান্ত কে আগলে রাখতে চেয়েছিল সে। কবীর এসে ঝাপটে ধরল আশালতা কে। আশার অবাক কণ্ঠে বলল, “ও আমার কথা বিশ্বাস করছে না, তুমি দেখছো শান্ত আমার কথা বিশ্বাস করছে না। এতোটা ঘৃণা করে সে আমাদের। বলো! এতো দিনে কি ওর ঘৃণা কমে যায় নি!

কবীর বলে উঠল, “চুপ করো , থামো তুমি!

আশালতা কবীরের বাঁধন থেকে বেরিয়ে গেল। চোখ দুটো মুছে শান্ত’র গায়ে হাত বুলাতে বুলাতে বলল, “বাবা শান্ত! শোন বাবা, তুমি যা ভাবছো সব ভুল।‌ হ্যাঁ আমি মানছি একটা সম্পর্ক ছিল কিন্তু বিশ্বাস করো আমি তার সুযোগ কখনো নেই নি। তোমার মাকে, আমার আপাকে আমি অনেক ভালোবাসতাম অনেক!

শান্ত দূরে সরে গিয়ে বলল, “ছাড়ুন আমায়!

“শান্ত, বিশ্বাস করো।

“কি বিশ্বাস করবো। আমার মা কেন মা’রা গেল। বলুন! আপনাদের জন্য তো! আপনারা দায়ী তাকে মারার জন্য। দায়ী নন আপনারা। খুব স্বার্থপর আপনারা, খুব!

“দায়ী তো আমরাই, সেই দায়ের বোঝা আমি এখনো নিজের মাথায় নিয়ে আছি। আপা কে বার বার বলেছিলাম এমনটা না করতে, তিনি শুনেন নি আমার কথা। একটিবার আমার কথা যদি শুনতো। যদি ছাদ থেকে..

আশালতা আর কথা বলতে পারল না। নিস্তব্ধ হয়ে গেল। শান্ত’র চোখে স্পষ্ট ঘৃণা দেখতে পাচ্ছিল সে। সে দূরে চলে গেল। হাসতে লাগলো। হাসতে হাসতে বলল, “আপা ম’রে গিয়ে বেঁচে গেছে, জানো তো। তোমার মা ঠিক কাজ করেছে। ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে আমাকে। আগু’নে ফেলে দিয়ে গেছে। এই আগুন আমায় জ্বা’লিয়ে যাচ্ছে, কষ্ট দিচ্ছে! পুরো ছাই করছে না। শুধু তোমার মা’র‌ কারণে আমার আজ এই দশা! নিজের বাবা আমাকে বিশ্বাস করে না শান্ত। বাবা আজ অবদি একটু হাসি মুখে আমার সাথে কথা বলে না ‌। তিনি এখনো ভাবেন আপার মৃত্যু’র জন্য আমি দায়ী। সত্যিই কি তাই! যদি সেটাই হয় তাহলে এতো গুলো বছর গুলোতে আমি যে কষ্ট পাচ্ছি তার দায় কার? বলো কার? আমি কি পারতাম না একটা সুন্দর জীবন পেতে। পারতাম না হাসি খুশি থাকতে। দিনের পর দিন আমার রাতটুকু কেটেছে অবহেলায়। তোমার অবহেলা, আমার বাবার অবহেলা। তোমাদের ঘৃণা! আমি ক্লান্ত শান্ত! তুমি কি জানো শান্ত, আমার আর কোন সন্তান নেই, আমি কখনো মা হয় নি। কারণ আমার একটাই সন্তান, সেটা শুধু তুমি! আর কখনো সন্তানের আশা আমি করি নি। কেন করি নি? কার জন্য আমার এতো আত্মত্যাগ! তুমি বলছো আমি স্বার্থপর! তাহলে কেন স্বার্থপরের মতো আরেকবার সবকিছু শুরু করতে পারি নি। এগুলো চোখে পড়ে না তোমাদের কারো। শুধু আপার কষ্ট টাই দেখলে তোমরা। আমি কি তাহলে শান্ত!

কথাগুলো বলতে বলতে হাঁফিয়ে গেলো আশালতা। কবীর চৌধুরী এসে আবারো আঁকড়ে ধরল তাকে। শান্ত বেরিয়ে যেতে নিল। আশালতা আবারো বলে উঠল, “শান্ত, পায়েস টুকু খেয়ে যাও বাবা!

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here