তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব -০৫+৬

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৫)

তুহা মেধার কাছে এসে কিছুই না বলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। মেধা ওর দিকে তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করছে আসলে ব্যাপারটা কি! অনেকক্ষন হয়ে গেলো কিন্তু আর থাকা যাচ্ছে না। মেধা তুহার মাথায় একটা চাঁটি মেরে বললো…
– এই ভাবুক রানি সত্যি করে বল তো কি হয়েছে তোর। একটা কথা বলবি বললি তারপরেই ভাবনার জগতে চলে গেলি তা বলি কি কাকে নিয়ে ভাবছিস।

– আমার জমকে নিয়ে( করুন কন্ঠে)
– তোর জম মানে তো দাদাই। তুই দাদাই কে নিয়ে ভাবছিস সত্যি ( উৎফুল্ল হয়ে)

মেধার কথা শুনে তুহা দাঁতে দাঁত চেপে বললো…
– হুম তোর ওই শয়তান দাদাই আমাকে প্যাচে ফেলে দিয়েছে। আমি এবার শেষ।

মেধা কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না‌। এইটুকু সময়ের মধ্যে কি হয়েছে সেটাই বারবার ভাবাচ্ছে ওকে।
-আরে ভাবুক রানি বলবি তো সবটা ক্লিয়ার করে।

তুহা কাঁদো কাঁদো ফেস নিয়ে মেধাকে সবটা বললো। মেধা সবটা শুনে তুহার মাথায় একটা চাঁটি মারলো। তুহা মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে বললো…
– আ মারছিস কেন?
– তোকে মারবো না তো কি করবো। মানুষ এতটা বোকা কেমন করে হয় নিজে গায়ে পড়ে ঝামেলা নিয়ে আসলি এখন আবার আমার সাহায্য চাইছিস আমি পারবো না গেলাম।

মেধা রাগ দেখিয়ে গটগট করে চলে যায়। তুহা কিছুটা ভাবুক হয়ে নিজের মনেই বিরবির করে বললো…
– সত্যি আমি খুব বোকা। নাহলে কবেই তো মানুষটিকে খুঁজে পেতাম। আচ্ছা উনি কি জানেন ওই জমরাজ আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আর উনি তো সবসময়ই আমাকে হেল্প করেন এবারেও কি করবেন।

তুহার মনের কোনো অনেকগুলো প্রশ্ন‌ ভীড় করছে। তুহা হঠাৎ কেন জানি আর ভয় লাগছে না মনে হচ্ছে সবকিছুই ঠিক হবে কিন্তু তার কারনটা কি?

মাঝে কেটে যায় ২ দিন। আজকে সন্ধ্যায় তিশা আর অয়নের এনগেজমেন্ট পার্টি। এই দুদিন তুহা কিছুই করেনি সবার সাথে আড্ডা আর শপিং করে বেড়িয়েছে আর ফারাবিকেও এই বাড়িতে দেখেনি। তুহা এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে এমন সময় বিচ্ছু দুটো অর্থাৎ.. মিহা আর কুহু ওকে ঘুম থেকে তুলতে লাগলো। তুহা তো রেগে বোম।
-এই তাড়াতাড়ি কেন তুলেছিস আজকে তো ছুটির দিন একটু ঘুমায় না।
-নো দিভাই উঠ। সবকিছু সাজানোর দায়িত্ব তোর ছিলো তাই না।

মিহার কথাতে তুহা তাড়াতাড়ি উঠে বসে পড়লো। কথাটা মনে পড়তেই মাথাটা ভো ভো করে ঘুরছে। কিছুই সাজানো হয়নি এবার নিশ্চয় সবার কাছে‌ বকা খাবে আর ফারাবি তো ওকে অপমান করবে।

তুহা আরো‌ কিছু ভেবে উঠার আগেই ঘরের ভেতরে সকলে হুড়মুড় করে ঢুকে আসলো। সকলেই অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তুহার দিকে তুহা তো ভয়েই শেষ এখুনি কেঁদে ফেলবে এইরকম অবস্থা। এমন সময় হুট করেই মেধা গিয়ে তুহাকে জড়িয়ে ধরে‌ বলতে লাগলো…
– ভাবুক রানি আমি তো ভাবতেই পারিনি তুই এত সুন্দর করে সবকিছু সাজানোর দায়িত্ব দিবি তোর এত প্ল্যান কোথায় ছিলো একটু বলবি।

তুহা তো হতবাক। কি সব বলছে মেধা মাথা ঠিক আছে। তুহা কিছু বলে ওঠার আগেই কুহু আর মিহা ওকে টেনে টেনে নিচে নিয়ে এলো। তুহা তো হতবাক খুব সুন্দর করে সাজানো হচ্ছে। প্রায় কাজ শেষের পথে কিন্তু তুহা তো কিছুই করেনি কে করলে এইসব।

ভাবনার মাঝেই মেধার মা বললো…
-আমাদের তুহা রানির এত গুন আগে তো জানতাম না।

মেধার মায়ের কথায় সহমত প্রকাশ করে মেধার বাবা বললেন…
– হ্যা তিশার বিয়ের সময় সব দায়িত্ব ফারাবি আর তুহাকে দিয়ে দেবো।

তুহার মাথায় কিছুই আসছে না মাথা তো হ্যাং করে গেছে কিভাবে কি হলো কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না।

তিশাকে সুন্দর করে সাজানো হয়েছে,কোনো পার্লারের প্রয়োজন পরেনি তুহা নিজেই খুব সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে তিশাকে। মিহা তো তিশাকে দেখে তুহাকে রাগানোর জন্য বললো..
– এই দিভাই তিশামনিকে কি সাজিয়েছিস,পুরোই তো পেত্মী লাগছে ‌
– মিহা রাগাবি না ২ ঘন্টা ধরে সাজিয়েছি এখন যদি বলিস পেত্মী লাগছে তাহলে তোর কপালে দুঃখ আছে। তোকে এমন সাজাবো তোর হ্যান্ডসাম কেন কোনো ছেলেই তোর দিকে তাকাবে না।( দাঁতে দাঁত চেপে)
– এই না দিভাই আমি তো মজা করছিলাম তিশামনিকে খুব সুন্দর লাগছে। পুরোই কিউট সুইট।এবার আমাকে সাজিয়ে দে সুন্দর করে।
– বস। কিন্তু একটুও দুষ্টুমি করলে মা/ র খাবি আমার হাতে বলে দিলাম।

মিহা বাধ্য মেয়ের মতো বসে পড়লো।‌ফ্যামিলির সবথেকে ছোট এন্ড বিচ্ছু মেয়ে হলো মিহা।কুহু ওর থেকে কিছুদিনের বড়ো দুজন দুজনের বেষ্টফ্রেন্ড হলেও দুজন দুই স্বভাবের । কুহু খুব শান্ত আর মিহা তো শয়তানের গাছ। তবে মিহা সবথেকে শান্ত হয়ে যায় সাজার সময়। এটাই একদম ঠিক জায়গা যেখানে মিহাকে চুপ করে রাখা যায়। আর বাকি সময়ে তো দুষ্টুমী লেগেই থাকে। তবে মিহা সবার খুব আদরের।‌ তাই কেউ কিছুই বলেনা।

সবাইকে রেডি করে দিয়ে তুহা নিজেও রেডি হয়ে গেলো। তিশা একটা লেহেঙ্গা পড়েছে পিংক কালারের। মিহা গোল্ডেন কালারের। মেধা স্কাই ব্লু রঙের। কুহু সি গ্রিন কালারের আর তুহা অ্যাশ কালারের লেহেঙ্গা পড়েছে। পাঁচ জনকেই খুব সুন্দর লাগছে। মিহা তুহাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো…
-দিভাই তোর হাতে জাদু আছে দ্যাখ কি সুন্দর করে সবাইকে সাজিয়ে দিলি। সত্যি তোর কোনো তুলনা হয় না।
– এত তেল কেন মারছিস।
– আরে না তেল নয় সত্যি। তুই আমার বেষ্ট দিভাই।

তুহাও হেসে দিলো মিহার কথাতে। মেধা গিয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। কুহু সেটা দেখে ন্যাকা স্বরে বলল…
-আমি তো কারোর কিছুই হয় না।‌আমি তো বন্যার পানিতে ভেসে এসেছি।

কুহুর কথাতে সবাই হেসে দিলো। তিশা আদর করে বললো..
-কুহু সোনা তুই আমার কাছে আয়।

কুহু খুশি হয়ে তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। তাই দেখে সকলেই তিশাকে জড়িয়ে ধরলো। বোনদের ভালোবাসাগুলো একদম অন্যরকম হয় এইভাবেই সারাজীবন ওদের সম্পর্ক ভালো থাকুক।

সময় হয়ে যাওয়াতে সকলেই ড্রইংরুমে আস্তে লাগলো। ওরা পাঁচ বোন একসাথেই আসছে,সকলের দৃষ্টি ওদের দিকে কাকে ছেড়ে কাকে দেখবে সেটাই বুঝতে পারছে না সবগুলোই এক একটা কিউটের ডিব্বা। মেধার মা সব মেয়েগুলোর কপালে একটা চুমু দিয়ে বললেন…
-আমার মেয়েগুলোর উপর কারোর নজর না লাগে।

তুহা শয়তানি করে বললো…
-মামনি তোমার মেয়ের উপরে তো আমাদের জিজুর নজর পরেই গেছে আর নজর কাটিয়ে লাভ নেয়।

মেধার মা তুহার কানটা ধরে বললো…
-বড্ড পেকে গেছিস তোর মাকে বলছি দাঁড়া।
-না মা কে কিছু বলবে না আমি তো মজা করছি।

তুহার কান্ড দেখে কেউ একজন দূর থেকে দাঁড়িয়ে হাসছে। তার তাহুপাখিকে কি সুন্দর লাগছে। মনে হচ্ছে একে বারে কলিজার ভেতরে ঢুকিয়ে রাখতে।

– বড়ো মনি।

ডাকটা শুনে সকলেই দরজার দিকে তাকালো। কথা দাঁড়িয়ে আছে। অনেকদিন পরে সবাই কথাকে দেখে খুব খুশি হয়ে গেলো।‌কথা ওর স্বামীর সাথে দেশের বাইরে থাকে তাই সবার সাথে দেখা খুব কমই হয়।

তুহা তো খুব খুশি। ইচ্ছা করছে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু তুহা চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো। কথা তুহাকে খুব ভালোবাসে। কথার প্রান ছিলো তুহা। কিন্তু বিয়ের পর আর ওদের যোগাযোগই হয়নি ঠিক মতো বলে দূরত্ব বেড়ে যায়। তুহার মনের একরাশ অভিমান জমে আছে কথার বিরুদ্ধে। কিছূতেই কথার সাথে কথা বলবে না মনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করলো তুহা।

কথা সবার সাথে কথাবার্তা বলে তুহার সামনে এসে দাঁড়ালো।তুহা নিজেকে সামলে রাখার চেষ্টা করছে কিন্তু পারছেনা।

– পাখি আমার সাথে কথা বলবি না।।

ব্যাস আর পারলো না কথাকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে দিলো। কথা সহ সকলের চোখেই পানি।

– পাগলি কাঁদছিস কেন দ্যাখ আমি তোর কাছেই আছি। আর কাঁদিস না পাগলি মেয়ে।
– তুমি এত দিন কেন আমার সাথে যোগাযোগ করোনি বলো না।
– পরে সব বলবো এখন তো একটু চুপ কর। এখন তো তিশার এনগেজমেন্ট পরে রাতে তোকে সবকিছু বলবো।
– আচ্ছা।

সবার চোখ এড়িয়ে গেলেও তুহার চোখ এড়িয়ে গেলো না কথার হাসির আড়ালে থাকা ফ্যাকাশে মুখটা। কিন্তু কেন? কথা কি তাহলে ভালো নেয় কোনো কারনে!
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_৬)

অয়নের বাড়ি থেকে লোকজন আস্তে শুরু করেছে। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে আপ্যায়ন করতে। তুহার মামার বাড়ির সকলেই চলে এসেছেন, সবই উপস্থিত থাকলেও তুহার বাবা আসেনি। যদিও বিষয়টা নিয়ে মেধার বাবা একটু রাগারাগি করলেও পরে চুপ করে যান তিনি ভালো করেই জানেন তুহার বাবা বড্ড বেশি জেদি যেটা নিজে ভাববেন সেটাই ঠিক মনে করবেন। তাই আর কিছু বলেন নি।

সবাই যে যার মতো ব্যস্ত। মেধা তুহাকে খোঁচা দিয়ে বললো..
-ভাবুক রানি দ্যাখ জিজুর ফ্রেন্ডগুলো কি কিউট কিউট। আর দ্যাখ ওই ছেলেটা।

তুহা বিরক্ত হয়ে সামনে তাকিয়ে আর বিরক্ত হতে পারলো না। সামনে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের চার্মিং বয় ফারাবি। ব্ল্যাক পাঞ্জাবিতে একেবারে কিউট সুইট লাগছে‌। তুহা তো হা করে তাকিয়ে আছে। আর অন্যদিকে মেধা বকবক করেই যাচ্ছে কিন্তু তার কিছুই তুহার কানে পৌঁছাচ্ছে বলে মনে হয় না। মেধার ধাক্কাতে তুহার ধ্যান ফিরলো।
– এই ওটা মেহতাব দা না।
– কোথায়।

তুহা সামনে তাকিয়ে দেখলো হ্যা সত্যি মেহতাব। কিন্তু এখানে কেন? মেহতাব তুহাকে দেখতে পেয়েই একটা কিউট স্মাইল দিয়ে তুহার কাছে এগিয়ে এসে বলল…
– কেমন আছিস
– ভালো কিন্তু তুমি এখানে।
– আমি অয়নের ফ্রেন্ড। তাই এখানে উপস্থিত আছি কেন খুশি হসনি আমাকে দেখে
– আরে না সেরকম কিছুই না।

তুহা আর মেহতাব কথা বলছে। এর মাঝেই মেহতাব বললো..
– তুহা রানি তোকে আজকে খুব সুন্দর লাগছে।
– থ্যাঙ্ক ইউ আর তোমাকেই খুব সুন্দর লাগছে।
– থ্যাঙ্কু তুহা রানি (তুহার নাকটা ধরে)

তুহা মেহতাবের এমন কাজে হেসে দিলো কিন্তু কেউ একজন দূর থেকে এসব দেখে রাগে ফেটে পড়লো। রাগে গজগজ করতে করতে বিরবির করে বললো…
-আমার জিনিসে হাত দেবার সাহস আমি কাউকে দিইনি। ওই ছেলের আগে তাহুপাখি শাস্তি পাবে তৈরি হও তাহু পাখি শাস্তির জন্য।

ওইদিকে ফারাবি খুব ব্যস্ত,, দম ফেলার সময় পাচ্ছে, সকলকে আপ্যায়ন করতে করতে ওর অবস্থা দফারফা। ভীড় একটু হালকা হতেই ফারাবি আর কাব্য চেয়ার টেনে বসে পড়লো। কাব্য মুখ কুঁচকে বললো…
– দাদাই আমার মনে হয় এই আপ্যায়ন করার থেকে বিজনেস সামলানো অনেক সহজ।
– অতিথি আপ্যায়ন করাও একটা আর্ট জানিস। মানুষের চরিত্র প্রকাশ পাই তার ব্যবহারে,সুন্দর ব্যবহার একটা মানুষের সৌন্দর্য কে কয়েকগুন বাড়িয়ে দেয়। মানুষ তোকে শ্রদ্ধা করবে,সম্মান করবে সবকিছুই তোর ব্যবহার দেখে। আর অতিথি কে কিছু খেতে দিতে নাই পারিস দুটো ভালো কথা বলিস দেখবি তোর প্রতি তাদের সম্মান কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আর আজকে তো আমাদের বোনের এনগেজমেন্ট। আর আজকে যদি আমরা অতিথিদছর আপ্যায়ন না করি ঠিক করে তাহলে বদনাম হবে আমাদের তিশাকে কথা শুনতে হতে পারে পরে। লোকজন একবারই আসবে কিন্তু কথাটা চিরকাল থাকবে। তাই ব্যবহার সবসময় ঠিক রাখা উচিত।

কাব্য মুগ্ধ হয়ে শুনলো ফারাবির কথা। সত্যি ফারাবি একজন আর্দশ মানুষ। সবদিক থেকে উপযুক্ত মানুষ।
-দাদাই সত্যি তোর তুলনা হয় না এইজন্যই তুই সকলের চোখের মনি। তোর শিক্ষা অসাধারণ। আমি গর্বিত তোর মতো ভাই পেয়ে।
-আমি ও গর্বিত তোদের মতো পরিবার পেয়ে।

পুরো কথপকথন সবটাই শুনেছে ফারাবির বাবা। আনন্দে তার চোখ দিয়ে জল পড়তে লাগলো। তার সন্তান সঠিক শিক্ষায় শিক্ষিত হতে পেরেছে এর থেকে খুশির আর কি হতে পারে।

সকলের অনুমতি নিয়েই এনগেজমেন্টের অনুষ্ঠানে করা হলো। তিশা আর অয়ন তাদের নতুন জীবনের এক ধাপ এগিয়ে গেলো। সকলেই খুব আনন্দিত সবকিছু নিয়ে।

বিয়ের ডেট খুব তাড়াতাড়িই ঠিক হয়ে যায়। শুভ কাজ বেশিদিন ফেলে রাখতে কেউ চাইছে না। মাসের ১৫ তারিখে বিয়ের দিন ঠিক হয় এবং যায়। সকলের মাথায় চিন্তা +আনন্দ ধরা দেয়। অনুষ্ঠান শেষে নিজেদের লোকগুলো আর কেউ বাড়ি ফিরে যায়নি। তুহা কথার সাথে কথা বলার জন্য ছটফট করছে। আর ধৈর্য ধরে থাকতে পারলো না। কথাকে টেনে নিয়ে গিয়ে ঘরের দরজা বন্ধ করে দেয়। তুহার এমন কাজে সকলে অবাক হলেও কিছু বললো না।

কথা তুহার গালে হাত দিয়ে বললো…
– এইরকম করে টেনে আনলি কেন?
– সত্যি করে বলো তো কি হয়েছে তোমার,তোমাকে কিরকম একটা বি/ভ/ৎ/স লাগছে, এলোমেলো লাগছে কি হয়েছে বলো।

তুহার কথাতে কথা আমতা আমতা করে বলল…
-আরে কি হবে দ্যাখ আমি একদম ঠিক আছি।
– জিজুর সাথে তোমার সবকিছু ঠিক আছে তো।

কথা চুপ করে গিয়ে কিছুক্ষন পরে বললো…
-জানিস তুহা রানি আমাদের জীবনে কখনো এমন পরিস্থিতি আসে না সঠিক সিদ্ধান্ত কোনটা সেটা নিতেই ভুলে যায়।
-কি হয়েছে আমাকে সবটা বলো
– পারবো না মাফ কর আমাকে। তবে এটা মনে রাখ তোর দিদিভাই ভালো নেয়।

কথা আর কিছু না বলে চলে যায়। তুহা বিছানায় বসে পড়ে। সবকিছুই এলোমেলো লাগছে। মনটা বড্ড অস্থির অস্থির লাগছে। কথার কষ্টটা কি সেটা যে ওকে জানতেই হবে।

কয়েকদিন পর..

বিয়ের জোগাড় করতে সবাই ব্যস্ত হয়ে পড়েছে।হাতে কয়েকটা দিন আছে মাত্র, সমস্ত কিছুর আয়োজন করতে হবে। তুহা আর ফারাবির হাতে সমস্ত আয়োজন তুলে দিয়েছে।

তুহা কলেজে গিয়ে আড্ডা মারছে। হঠাৎ করেই পিওন এসে বললো..
-তোমাকে যেতে বলেছে ফারাবি স্যার।

পিওন চলে‌ যাবার পর তুহাও ফারাবির কেবিনে যায়। তুহাকে দেখে ফারাবি বললো…
– এই যে ম্যাডাম আপনি তো আমার ফোন,মেসেজ কিছুই দেখেন না।তা আপনার মনে‌ আছে তো আঙ্কেল আপনার হাতে অর্ধেক দায়িত্ব দিয়েছে তা সবকিছু কি করবেন না খালি আড্ডা মারবেন।

ফারাবির ঠান্ডা কথায় বলা অপমান শুনে তুহা চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো।
– কি হলো।
– কিছু না বলুন কিভাবে আয়োজন করবেন বলুন।
– কেন তুই তো এনগেজমেন্টে এত সুন্দর আয়োজন করেছিলি এইবারেও প্ল্যান কর‌ সবকিছু।

ফারাবির‌ কথাতে তুহা ঢোক গিললো। কিছুই তো ওহ করেনি এখন কি করবে। এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচতে বললো…
-যেহেতু আঙ্কেল আমাদের দুজনকে দায়িত্ব দিয়েছে তাই আমরা দুজনেই সবকিছু করবো।
-ওকে। তাহলে দয়া করে নম্বরটা সেভ করে নাও কল করে বলবো সবকিছু।
-ওকে।

তুহা ফারাবির নম্বর নিয়ে দাদাই বলে সেভ করলো। তুহা ওখান থেকে চলে যেতে যাবে তখনি ফারাবি বললো..
– ওই ফোনটা দে একবার।
– কেন?
– দিতে বলেছি তো।

ফারাবি একপ্রকার ফোনটা কেড়ে নিয়ে ফোনটাতে কিছু একটা দেখে কপাল কুঁচকে বললো…
-আমি তোমার দাদাই হয়।
-তবে নয় তো কি।
– ওকে।

ফারাবি কিছু একটা করে ফোনটা ফেরত দিয়ে দিলো। তারপরে বললো..
-বোন ফোনটা রিসিভ করবেন দয়া করে। এবার আসতে পারেন।

তুহা নাক ফুলিয়ে চলে যায়।‌ফারাবি হেসে দিলো তুহার কান্ড দেখে।

রাতে …

তুহা পড়ার টেবিলে বসে বসে ঝুঁকছে। ফোনের রিং হবার শব্দে সোজা হয়ে বসলো। ফোনটা হাতে নিয়ে দেখলো ফারাবি লেখা আছে। তুহা ভ্রু কুঁচকে তাকালো।দাদাই থেকে ফারাবি কে করলো। তুহার ভাবনার মাঝেই কলটা কেটে গেলো। পুনরায় কলের রিং হতেই তুহা কানে ফোনটা ধরলো।
-কিরে এত দেরি হলো কেন?
-পড়ছিলাম।
-ওহ পড়া শেষ।
-কি পড়ছি কে জানে।
-কেন
-কিছুই মাথায় ঢুকছে না।
-আমি পড়াবো তোকে এবার …

কথাটা পুরো করার আগেই ফারাবি চুপ করে গেলো। তুহাও একটা মেকি হাসি দিলো। তুহার বাবা কখনোই এটা হতে দেবেন না।‌ সেটা ওদের দুইজনের জানা। ফারাবি ওদের কলেজ টিচার সেটা তুহার বাবার অজানা তাই হয়তো কলেজে আছে তাহলে কবেই অন্য কলেজে ওর জায়গা হতো। কোনো এক কারনে তুহাকে ফারাবির থেকে সবসময় আলাদা করে রাখেন তুহার বাবা। সবটাই কেমন প্যাচালে, রহস্যজনক সবকিছুই।

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here