তোমার মাদকতায় আচ্ছন্ন পর্ব -১১+১২

#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

( পর্ব_১১)

তুহা অতীতে ডুব মারলো…

তুহা সকালে সকলের সাথে ঘুরতে না গিয়ে নিজের ঘরেই ছিলো। ভালো লাগছিলো না তাই বারান্দায় এসে দাঁড়িয়েছিল। হঠাৎ কারোর কথাবার্তা শুনে থমকে গেলো তুহা,, ফারাবি আর মনিকাকে বারান্দার দিকে আসতে দেখে রুমের ভেতরে ঢুকে যায়, কিন্তু অনেক চেষ্টা করেও এড়িয়ে যেতে পারলো না। চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকলো পর্দার আড়ালে।

ফারাবি আর মনিকার মাঝে কোনো কিছু একটা নিয়ে তর্কাতর্কি হচ্ছে । মনিকা ফারাবিকে বললো…
-প্লিজ ফারাবি আমাকে একটু বোঝার চেষ্টা কর।আমি তোকে সত্যি খুব ভালোবাসি। আমি তোকে ছাড়া বাঁচবো না।
-তুইও আমার দিকটা একটু বোঝার চেষ্টা কর।
-দ্যাখ আমি কি দিক দিয়ে খারাপ।
– আমি বলছি না তুই খারাপ। তুই আমার থেকে আরো বেটার কাউকে পাবি।
– আমার চাই না আমার তোকেই চাই। আর তুই আমার চোখের দিকে তাকিয়ে সত্যি করে বলতো তুই আমাকে ভালোবাসিস না।

কিছুক্ষন চুপচাপ। তারপরে ফারাবির কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো…
-হ্যা আমিও তোকে ভালোবাসি কিন্তু…

আর কিছু বলার আগেই দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ পেয়ে ফারাবি আর মনিকা নিজের আলাপ আলোচনা থেকে বের হয়ে গেলো। তুহার মাথাটা বনবন করে ঘুরছে কেন জানো মেনে নিতে পারছে না ফারাবি অন্য কাউকে ভালোবাসে।

মিহার ডাকে তুহা অতীত থেকে বের হয়ে আসলো।

-এই দিভাই তোর কি হয়েছে বল তো।
-কিছুই হয়নি সর ভালো লাগছে না ঘুমাতে দে।

এভাবেই কেটে যায় একটা সপ্তাহ। সকলেই নিজেদের কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছে। নিজেদের জীবন নিয়ে সকলেই ব্যস্ত। সামনেই তুহা আর মেধার সেকেন্ড ইয়ারের ফাইনাল পরীক্ষা। তাই ওদের পড়াশোনার চাপটা বেড়েই গেছে।

দেখতে দেখতে ওদের পরীক্ষার দিন আগিয়ে আসলো। কলেজের পরীক্ষা অন্য একটা কলেজে পড়েছে। ফারাবি জানিয়েছে ওহ ওদেরকে নিয়ে যাবে কিন্তু তুহা রাজি হয়নি। নিজেই চলে যেতে পারবে বলে জানিয়েছে। তাই মেধাও রাজি হয়নি।

তুহা আর মেধা খুব টেনশান করছে হঠাৎ করেই কেউ একজন তুহার সামনে পানির বোতল ধরলো। তুহা সামনে তাকিয়ে দেখলো ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।

-দাদাই তুমি।
-হুম খবরদার একদম টেনশান করবি না। শান্ত মাথায় পরীক্ষা দিবি।
-হুম।
-আর তুহা তুই এত টেনশান করিস কেন?

তুহা কিছুই না বলে চুপচাপ বসে আছে।

-ওই শুনতে পাচ্ছিস না। কি বলছি চুপচাপ টেনশান না করে পরীক্ষা দিবি রেজাল্ট যদি খারাপ হয়তো তাহলে ..
-চিন্তা নেয় বাবাকে বলে বিয়ে করে নেবো।

আচমকা এইরকম কথাতে মেধা আর ফারাবি দুজনেই চমকে উঠলো।

-এই তুহা কি বলছিস এসব।
-হুম মেধা ঠিক বলছি। আমি আমার চিন্তা ভালো করেই করে নেবো। ওনাকে আমার চিন্তা করতে বারন করে দে।

ফারাবি তুহার এইরকম ব্যবহারে অবাক। ফারাবি আর কিছু না বলে মেধাকে বললো..
-ভালো‌করে পরীক্ষা দিস আমি গেলাম।

ফারাবি চলে যেতেই মেধা তুহাকে ধরলো।
-কি হয়েছে এইরকম ব্যবহার করছিস কেন।
-কিছুই হয়নি ভালো করে পরীক্ষাটা দিতে দে আমাকে।
-ওকে।

ফারাবি তুহার যাবার দিকে তাকিয়ে থাকলো, হুট করেই তুহার এইরকম ব্যবহারের কিছুই বুঝতে পারলো না।

– কেন এইরকম করে কষ্ট দিচ্ছো তাহুপাখি। আমি যে শে/ষ হয়ে যাবো। আমি যে #তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন, তুমি ছাড়া আমি যে অচল হয়ে যাবো প্লিজ তাহুপাখি আর যায় করো আমার থেকে কখনোই দূরে যাবার চেষ্টা করো না।

তুহা আর মেধা ভালো ভাবেই পরীক্ষা দিয়ে বের হয়ে আসলো। ওরা আসতেই খুশি ওদের কাছে আসে খুশি আর ওদের ডিপার্মেন্ট আলাদা হওয়াতে একসাথে পরীক্ষা পরেনি।

– কিরে তুহা আর মেধা কেমন পরীক্ষা হলো।
– দিয়েছি ভালোই দেখা যাক কি হয়।
– হুম।

ওরা কথাবলার এক পর্যায়ে খুশি বললো..
– তোরা বাড়ি ফিরবি কিভাবে?
– দেখি। তুই (মেধা)
– আমার সাথে তো দাদাভাই এসেছে।
– ওহ।
– হুম চল তোদের সাথে আলাপ করিয়ে দিই।

তুহাকে আর মেধাকে খুশি একটা ছেলের সামনে দাঁড় করালো। ছেলেটাকে দেখে তো তুহা অবাক।

-আপনি!
– তুহা না তুমি।
– হুম।

খুশি আর মেধা তো অবাক। খুশি অবাক হয়ে বললো..
– তোরা একে অপরকে চিনিস।
– হুম। ফেসবুকে আলাপ হয়েছিলো,অনেকদিনের ফ্রেন্ড। (আশিক)
– এতকিছু হয়ে গেলো আর আমি কিছুই জানি না।(খুশি)
– আরে খুশি আমি কিভাবে জানবো তুই ওনার বোন।
– সেটাই তো।
– হুম সেটা ঠিক দাদাভাই ওটা আমাদের ফ্রেন্ড মেধা।
– হাই।
– হ্যালো।

মেধার ফোনে একটা কল আসলো। মেধা কলটা রিসিভ করে তুহাকে নিয়ে ওখান থেকে চলে যায় ওদেরকে বিদায় জানিয়ে।

-কি হলো এইভাবে নিয়ে আসলি কেন?
-অনেকটা লেট হয়ে গেছে ভাবতে পারছিস আঙ্কেল তো আমাদের বারোটা বাজিয়ে দেবে।
-হুম।
-ওই টেনশান করিস না ওইদিকে দ্যাখ।

মেধার কথা শুনে তুহা তাকিয়ে দেখলো ফারাবি দাঁড়িয়ে আছে।

-উনি।
-হুম আমাদের জন্য এখনো আছে। চল
-আমি যাবো না।
-তুহা এখন ঝামেলা করিস না। আঙ্কেল কিন্তু।
-হুম।

তুহা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজী হয়ে যায়। দেখতে দেখতে সবগুলো পরীক্ষা শেষ হয়ে যায়। প্রতিটা পরীক্ষাতেই ফারাবি ওদের নিতে এসেছিলো। তুহার মনের মাঝের চাপা অভিমানটা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। তুহার ওহ ভালো লাগতো।

তুহা আর মিহা কাছে পার্কেই একটু ঘুরতে বের হয়েছিলো। মিহা তো এক বাচ্চা আর যদি কোনো বাচ্চাকে পাইতো তাহলে বাচ্চামো শুরু হয়ে গেলো। মিহা বাচ্চাদের সাথে খেলছে আর তুহা ওদের কান্ড দেখছে হঠাৎ করেই কেউ একজন ওর কাঁধে হাত রাখলো।

তুহা তাকিয়ে দেখলো মনিকা দাঁড়িয়ে আছে।
-আরে আপনি।
-হুম এই ঘুরতে এসেছিলাম ভালোই হলো তোমার সাথে দেখা হয়ে গেলো।
-তাই।
-হুম,একটু‌ কথা বলতে পারি
-অবশ্যই।

মনিকা তুহার সাথে কথা বলতে লাগলো।
-তোমার কথা অনেক শুনেছি আন্টি (ফারাবির মা),কুহু,কথা এন্ড ফারাবির মুখে। ফারাবি তো তুমি বলতে পাগল।

তুহা তো অবাকের শীর্ষে পৌঁছে গেছে। ফারাবি ওর জন্য পাগল মানেটা কি।

-আমি ওর কথা শুনে বুঝতাম ওহ ঠিক কতটা ভালোবাসে তোমাকে।

তুহা তো একের পর এক শক খাচ্ছে। ফারাবি ওকে‌ ভালোবাসে কি শুনছে এসব।

-আসলে‌ কি বলতো ওর তো কোনো বোন ছিলো না তোমাকেই বোনের মতো ভালোবাসতো। আর তুমি তো‌ সবার থেকে কিউট সুইট একটা মেয়ে তোমাকে আমারই কি ভালো‌লাগে আর ফারাবি দাদা হয়ে‌ তোমাকে ভালোবাসবে না এটা কিভাবে হয়।

তুহার মুখটা ফ্যাকাশে হয়ে গেলো। তবুও মুখের কোনো মেকি হাসি ফুটিয়ে তুলে মনিকার সাথে কথা বলতে লাগলো।

– জানো আমি আর ফারাবি দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি। আর কালকেই বাপি ওদের বাড়িতে গিয়ে আমাদের বিয়ের কথা বলবে।‌আমি খুব হ্যাপি জানো।

তুহা এতক্ষন ধরে সবকিছু সহ্য করলেও আর পারলো না। মনিকার উদ্দেশ্য বললো..
– অভিনন্দন নতুন জীবনের জন্য। আর আমি এখন আসি সন্ধ্যা হয়ে যাচ্ছে বাড়ি ফিরতে হবে।
– ওকে বাই বাই।

তুহা মনিকাকে বিদায় জানিয়ে চলে যায়। তুহার রাগে গা জ্বলছে। ফারাবির সাথে মনিকার বিয়ে এটা কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না।

বলে না যখন বিপদ আসে সবদিক থেকেই আসে। ঠিক তেমনি তুহা আর ফারাবির জীবনেও। সকলেই একসাথে উঠে পড়ে‌ লেগেছে ওদের জীবনটা এলোমেলো করার জন্য।

রাত্রিবেলা…

তুহা ঘরেই ছিলো কিন্তু ঘুম আসছে না মনটা ভীষন ছটফট করছে। পানি খাবার জন্য উঠতে দেখলো‌ ঘরে পানি নেয় তাই পানি খাবার জন্য রান্নাঘরে যাবার সময় মা বাবার মধ্যে কথা কাটাকাটি শুনতে পাই।

– এসব কি বলছো তুমি এটা কি ঠিক হবে।
– আমি তুহার বাবা আমি যে সিদ্ধান্তটা নেবো সেটাই ওর জন্য ঠিক হবে।
– পাগলামি করো না ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করে দ্যাখো।
– আমি সব ভেবেই করছি।‌আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছি তুহা…

একটা কথা শুনে তুহা আকাশ থেকে পড়লো…
#তোমার_মাদকতায়_আচ্ছন্ন
#তানজিলা_খাতুন_তানু

(পর্ব_১২)

তুহার এলোমেলো লাগছে। একটার পর একটা ঝড় চলেই আসছে। কিভাবে সবকিছুর সামাল দেবে তুহা। নিজেকে সামলে রাখাটা যে বড্ড কষ্টকর হয়ে যাচ্ছে ওর পক্ষে। আদোও কি পারবে সবকিছু মেনে নিতে।সবার ইচ্ছার মান রাখতে,, কিছুই বোধগম্য হচ্ছে না তুহার। সবটা কে ভাগ্যের উপরে ছেড়ে দিলো।

২ দিন পর…

তুহা বাড়িতেই আছে, পরীক্ষায় রেজাল্ট না আসা পর্যন্ত বাড়িতেই থাকতে হবে। তুহা ভেবেছিলো আনন্দ করে কাটাবে কিন্তু ভাগ্য যে ওকে আনন্দে থাকতে দেবে না বলে ঠিক করেছে। তুহা বসে ফোন টিপছে তখন ওর মা আসলো ওর কাছে।

-তুহা মা।
-বলো মা।
-এই শাড়িটা পরে রেডি হয়ে থাক।

তুহার মুখে তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটে উঠলেও মিহা অবাক হয়ে বললো..
-কেন মা।
-আজকে তোর দিভাইকে দেখতে লোক আসবে।
-কি?
-হুম তুহাকে ভালো করে সাজিয়ে দিস।

তুহার মা ঘর থেকে চলে‌ গেলেন। তুহা অনুভূতিহীন। মিহা তুহাকে খোঁচা দিয়ে বললো…
-কি হলো বিষয়টা আজকে তোকে দেখতে আসবে এটা তুই জানতিস।

তুহা তাচ্ছিল্যের হাসি ফুটিয়ে তুলে বললো…
– শুধু দেখতে আসতে নয় আজকেই কাবিন হবে।

মিহা তো আকাশ থেকে পড়ছে।
-কি বলছিস এসব তুই দিভাই।
-হুম সব সত্যি কথা
-তুই কিছু বলবি না তুই রাজি হয়ে গেলি।
-আমার আর রাজি হওয়া। যেখানে আমাকে জানানোই হয়নি আজকে আমার কাবিন সেখানে রাজি হবার প্রশ্ন আসছে কোথা থেকে।
-কি বলছিস এসব।
-সব সত্যি বোন। আমার জীবনটা কেমন যেন এলোমেলো হয়ে গেলো।
– দিভাই কার সাথে তোর বিয়ে তুই জানিস।
– হুম।
– কে?
– মেহতাব দা।

মিহা চমকালো। মেহতাবের সাথে তুহার বিয়ে সবটাই ওর মাথার উপর দিয়ে চলে যাচ্ছে। কিছুক্ষন পর মেহতাবের বাড়ির লোক চলে আসলো। তুহাকেও আনা হয়েছে কিন্তু তুহার মাঝে কোনো অনুভূতি নেয়। তুহার বাবা মেহতাবের বাবাকে বললো…
– তাহলে ভাই শুভ কাজটা সেরেই ফেলি।

তখনি একটা কন্ঠস্বর শুনতে পাওয়া গেলো…
– কি শুভ কাজ সেরে ফেলতে চাইছেন শশুড় মশাই। শুভ কাজ তো আগেই সেরে ফেলা আছে।

কথাটা শুনে সকলেই দরজার দিকে তাকালো। তুহা সহ সকলেই চমকে উঠলো ফারাবিকে দেখে। তুহার বাবার রাগে মুখটা লাল বর্ন ধারন করলো,রাগে গজগজ করতে করতে বললো..
-তুমি কোন সাহসে এখানে এসেছে। এখুনি বেরিয়ে যাও এই বাড়ি থেকে।

ফারাবি তুহার বাবার কথাতে হালকা করে মুচকি হেসে বলল…
– আমি আপনার বাড়িতে থাকতে আসিনি। আর আমার থাকার ইচ্ছাও নেয় আমার বাবার ও আমার যথেষ্ট সামর্থ্য আছে নিজের বাড়িতে থাকার।
– তুমি কিন্তু আমাকে অপমান করছো।
– অপমান আরে আপনি তো আমার গুরুজন আর কেউ গুরুজন কে কি অপমান করতে‌ পারে‌ বলুন তো।
– ফাজলামি করছো আমার সাথে। (রেগে)
– আমি ফাজলামি করছি না আপনি করছেন।‌আমার আর তুহার জীবনটা নিয়ে কেন খেলছেন আপনি। কেন আমাকে আর তুহাকে আলাদা করার জন্য এতটা উঠে পড়ে‌ লেগেছেন বলুন।

উপস্থিত সকলেই অবাক। বিশেষ করে‌ তুহা। তুহা তো‌ কিছুই বুঝতে পারছে না। তুহার বাবা শান্ত কন্ঠে‌ তুহাকে বললো…
– তুহা নিজের ঘরে যাও।
– তুহা কোথাও‌ যাবে না। তুহার ওহ সব সত্যি জানা প্রয়োজন।
– আমি বলছি তো তুহা ঘরে যাও( জোরে ধমক দিয়ে)

তুহা ওর বাবার ধমক শুনে কেঁপে উঠলো। ওখান থেকে চলে যেতে যাবে তার আগেই ফারাবি ওকে‌ টেনে নিয়ে ওর পাশে দাঁড় করিয়ে দিয়ে কোমড়ে হাত রেখে জড়িয়ে রাখলো। তুহা তো শকের পর শক খাচ্ছে। আর তুহার বাবা রাগে ফোঁস ফোঁস করছেন।

– ফারাবি তুহাকে ছেড়ে দাও। তোমার কোনো‌ অধিকার নেয় ওকে এইভাবে ধরে‌ রাখার।

ফারাবি এইবার দ্বিগুন পরিমানে ক্ষেপে গেলো। তুহাকে নিজের সাথে আরো একটা শক্ত করে চেপে ধরে চিৎকার করে‌ বললো…

– অধিকার দেখাচ্ছেন আমাকে। আমাকে অধিকার দেখাচ্ছেন। এখানে উপস্থিত মানুষের মধ্যে সবথেকে ভালো করে‌ আপনি জানেন তুহার প্রতি আমার অধিকারটা ঠিক কি।
– তোমার কোনো অধিকার নেয় আমার মেয়ের প্রতি। সব অধিকার আমার আর আমি যেটা ভালো‌ বুঝবো সেটাই করবো।
– দেখুন আমি চাইলেও অস্বীকার করতে‌ পারবেন না তাই চেঁচিয়ে কোনো লাভ সবথেকে বড়ো সত্যি তো এটাই যে, এখানে তুহার প্রতি কারোর যদি অধিকার থেকে থাকে সেটা একমাত্র আমি। তুহার প্রতি সবথেকে বেশি অধিকার আমার।

তুহার তো রীতিমত মাথা ঘুরছে। বাবা আর ফারাবি রীতিমত যুদ্ধ লাগিয়ে দিয়েছে। আর তার মধ্যে এদের দুজনের মধ্যে কার সবথেকে বেশি অধিকার তুহার উপরে‌ সেটা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। তুহার মাথায় কিছূই ঢুকছে না।‌বাবার তো অধিকার থাকবেই কিন্তু ফারাবির অধিকার মানে!

তুহার বাবা আরো উত্তেজিত হয়ে পড়ছেন। রাগে জেদে চেঁচিয়ে বললেন…
– তহুরা তোমার ভাইয়ের ছেলেকে বলো আমার বাড়ি থেকে বেড়িয়ে যেতে।
– মনিকে কিছুই বলতে হবে না আমি বেড়িয়ে যাবো ঠিকই কিন্তু একা নয় আমার স্ত্রীকে নিয়েই যাবো।
– খবরদার ফারাবি এইরকমই কিছুই করবে না তুমি।
– অনেক সহ্য করেছি। আর নয়। দিনের পর দিন সবকিছু মেনে নিয়েছি তাই বলে আমি এটা কিছুতেই মেনে নেবো না আপনি আমার বিবাহিত স্ত্রী কে অন্য কারোর সাথে বিয়ে‌ দেবেন।

তুহা একবার ওর বাবার দিকে আর একবার ফারাবির দিকে তাকাচ্ছে। ওর অবস্থা দফারফা। কে কার স্ত্রী সবকিছু তো‌ মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। ফারাবির কথাটা শুনে মেহতাবের বাবা বললেন…

– মিরাজ ভাই এসব কি বলছে ফারাবি। তুহা বিবাহিত স্ত্রী মানে কিছুই তো‌ বুঝতে পারছি না।
– ভাই ওর কথা বাদ দাও। ওহ ভুল বলছে‌ সবকিছু যাতে এই বিয়েটা না হয়।
– মামা আপনি আর কত মিথ্যে বলবেন। একটা সত্যকে আড়াল করতে গিয়ে আপনি যে মিথ্যার পর মিথ্যা বলে যাচ্ছেন। আচ্ছা সবকিছু থেকে আপনি কি অস্বীকার করতে পারবেন তুহা ফারাবির বিয়ে হয়নি।
– মেহতাব ( চিৎকার করে উঠলেন তুহার বাবা)
– মামা চিৎকার করে কোনো লাভ নেয় সত্যি তো এটাই। কেন ওদের দুজনকে আলাদা করতে‌ চাইছেন।কেন ওদের পবিত্র সম্পর্কটাকে শেষ করতে চাইছেন বলুন।
– বোন তোর ছেলেকে চুপ করে থাকতে বল। তোর তো‌ কোনো কিছুই অজানা নয়।
– দাদা আমি সবটাই জানি কিন্তু তার জন্য তুহা আর ফারাবির দোষটা কোথায়। ওদের তো কোনো দোষ নেয় তাই বলি কি ওদেরকে তুমি মেনে নাও।

– আহ্.. আহ্ আহ্

তুহার বাবা বুকে হাত দিয়ে হেলে পড়লেন। তুহা চিৎকার করে উঠলো বাবা বলে। সকলেই ব্যস্ত হয়ে পড়লো ওনাকে নিয়ে। ফারাবি আর মেহতাব ওনাকে ধরাধরি করে ওনাকে নিয়ে গাড়িতে তুলে হসপিটালের উদ্দেশ্যে রওনা দিলেন।

তুহা মিহা ওহ ওদের মা কান্নাকাটি করছে। প্রায় সকলেই হসপিটালে চলে এসেছে। সকলেই ওদের আশ্বস্ত করছে। এমন সময়ে ডক্টর এসে জানায় …
– মিরাজ সাহেবের একটা ছোটখাটো হার্ট এ্যাটাক করেছে। ওনাকে কোনোভাবেই চিন্তিত বা উত্তেজিত করা যাবে না নাহলে যেকোন বড়ো কিছু হয়ে যেতে পারে। আর তুহা বলে কাউকে উনি বারবার খুঁজছেন।

তুহা কে সবাই বললো ভেতরে যাবার জন্য। তুহা ধীর পায়ে ওর বাবার কেবিনে গেলো। তুহা তো ওর বাবাকে ওই অবস্থাতে দেখে কেঁদে দিলো।

– মা এইখানে আয়( ধীরকন্ঠে)

তুহা ওর বাবার কাছে বসতেই ওর বাবা ঢুকরে কেঁদে উঠলো। তুহা ব্যস্ত হয়ে পড়লো, ওর বাবা কে কাঁদতে দেখে।
-বাবা কেঁদো না। আমি তো তোমার কাছেই আছি বলো।
-মারে আমার একটা শেষ আবদার রাখবি।
-বাবা এইভাবে বলো কেন, শেষ আবদার তুমি যা বলবে তাই হবে।

তুহার হাতটাকে আগলে তুহার বাবা একটা আবদার করলেন। বাবার আবদার শুনে তুহা চমকে উঠলো….

#চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here