#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ৬
#writer_শিফা_আফরিন_মিম
🍁
রুপসা আয়ানের কথায় ভয় পেয়ে যায় কারন আয়ান যে ক্ষেপে আছে তা বুঝার বাকি নেই তার।
আয়ান – সোজা বেলকনিতে গিয়ে ঘুমাউ।
রুপসা – আ আমার ভয় ক করে ঐখানে (কেঁদে দেবে অবস্থা)
আয়ান – গুড তাহলে চলে যাও। ডিভোর্স দিয়ে দাও আমায়। তখন না হয় তুমি তোমার নিজের বাড়িতে নিজের রুমে আরাম করে ঘুমিও।
আয়ানের মুখে ডিভোর্স দেয়ার কথাটা শুনে রুপসার চোখ বেয়ে পানি পড়তে থাকে। ভেতরটায় কেমন যেনো ব্যাথা অনুভব করছে।
রুপসা – ঠিক আছে আমি বেলকনিতে গিয়ে ঘুমাচ্ছি। আপনি শুয়ে পরুন। আর কিছু লাগলে আমায় ডাকবেন।
আয়ান রুপসার কথার কোনো জবাব না দিয়ে পাশ ফিরে শুয়ে পরে। রুপসা হাতে বালিশ আর চাদর টা নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়।
সকালে…
আয়ানের আগেই রুপসার ঘুম ভাঙে। উঠে দেখে বেলকনির দরজা খুলাই আছে। আগের দিন তো আয়ান দরজা টা ভেতর থেকে আটকে দিয়েছিলো তাহলে আজ আটকালো না কেনো?
ভাবতেই রুপসার মুখে মুচকি হাসি ফুটে উঠে।
রুপসা রুমে এসে দেখে আয়ান উপুড় হয়ে শুয়ে আছে। পিঠে কামড়ের দাগ টা স্পষ্ট! রুপসার এখন আরও খারাপ লাগছে। রাগও হচ্ছে বটে। ইচ্ছে করছে নিজের মাথার চুল নিজেই ছিড়ে ফেলতে। কত বড় ব্যাথাটাই না দিলো তার কিউট বর টাকে।
রুপসা ফ্রেশ হয়ে নিচে চলে আসে। এসে কাউকে দেখতে পায় না। তার মানে মা এখনো উঠেনি। আর সালমা খালা (আয়ানদের বাসার কাজের মহিলা) ও উঠেনি। কি হলো? এতোখন ঘুমাচ্ছে সবাই?
রুপসা ভাবতে ভাবতেই ড্রয়িং রুমে থাকা ঘড়িটার দিকে নজর দেয়। দেখে সকাল সারে ছয়টা বাজে!
রুপসা – যাহহহ বাবা! এতো সকালে তো মনে হই এই বাড়ির মুরগী টাও উঠে না! ধুররর মুরগী আসলো কোথা থেকে?
আচ্ছা একটা কাজ করলে কেমন হই? সবাই যেহেতু ঘুমে তাই আমিই ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ফেলি আজ। মা তো সব সময়ই করে আজ আমিই করে ফেলি। — ভাবতে ভাবতেই রুপসা কিচেনে চলে যায়। একাই সবার ব্রেকফাস্ট বানাতে শুরু করে। কিছুক্ষণ পরই তার শাশুড়ি মা আসে। রুপসাকে কিচেনে রান্না করতে দেখে চমকে উঠে…
আয়ানের মা – একি রুপসা… তুই কিচেনে কি করছিস এতো সকালে?
রুপসা – ইয়ে মানে মা.. সবার ব্রেকফাস্ট টা…
আয়ানের মা – আরে বোকা মেয়ে এর জন্য তো আমিই আছি। আসলে আজ ফজরের নামাজ পড়ার পর অনেক ঘুম পাচ্ছিলো তাই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। উঠতেও অনেকটা দেরি হয়ে গেলো।
রুপসা – না মা সমস্যা নেই। আপনি ঘুমান গিয়ে। আমি সব করে নিতে পারবো চিন্তা করবেন না।
আয়ানের মা – তাই বললে কি হয়? আচ্ছা কাল তো এতো তারাতারি উঠিস নি তাহলে আজ কিভাবে উঠলি? আয়ান ডেকে দিয়েছে বুঝি?
রুপসা – না না মা। উনি তো এখনো ঘুমাচ্ছেন। আমিই উঠে এসেছি৷
আয়ানের মা – আচ্ছা আমি সামলে নিবো। তুই যা আয়ান কে ডেকে আয়। আর জানিস তো আজ আমাদের বাসায় একজন আসছে। তোকে আগেই বলে দিতে চাইছিলাম তার কথা। কিন্তু সে বললো তোকে জেনো কিছু না জানাই এমনকি আয়ানকে ও যেনো কিছু না জানাই। কারন তোদের নাকি সারপ্রাইজ দিবে!
রুপসা – উনি কে মা?
আয়ানের মা – ও মা বলে দিলে তো সারপ্রাইজ টাই হবে না। (রুপসার থুতনি ঝাঁকিয়ে)
রুপসা – আচ্ছা ঠিক আছে। আমি তাহলে যাই উনাকে নিয়ে আসি।
আয়ানের মা – হুম যা।
রুপসা চলে আসে। ধীরে ধীরে রুমে ঢুকে এই বুঝি বাঘের মুখে পড়লো!
আয়ানের মাথার পাশে বসে মাথায় হাত রাখে রুপসা। আয়ান ঘুমে তাই কিছুই বুঝতে পারছে না।
রুপসা যত্নসহকারে আয়ানের চুলে হাত বুলিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পরই আয়ান নড়েচড়ে উঠায় রুপসা দ্রুত দাড়িয়ে পড়ে। আয়ান চোখ খুলে রুপসা কে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিরক্তি নিয়ে বলে…
আয়ান – কি হয়েছে দাড়িয়ে আছো কেনো এখানে?
রুপসা – ক কিছু না তো। আসলে মা ডাকছিলো উঠে ফ্রেশ হয়ে নিবেন তাই।
আয়ান – সেটা তোমাকে বলতে হবে না। আমিই ঠিক টাইমে উঠতে পারি। ইডিয়ট কোথাকার!
আয়ান রেগে ওয়াশ রুমে ঢুকে পড়ে। রুপসা ও নিচে নেমে আসে।
আয়ান কিছুক্ষন পর ফ্রেশ হয়ে নিচে আসে।
আয়ানের মা – আয়ান তুই কি কোথাও বেরুবি?
আয়ান – হ্যা মা। অফিস যাবো।
আয়ানের বাবা – এ আবার কেমন কথা তুই কেনো যাবি এখন। তোর না ছুটি।
আয়ান – তাতে কী? তাছাড়া বাসায় বসে থেকেই বা কী করবো? বোর লাগছে আমার।
আয়ানের বাবা – বোর লাগলে রুপসা কে নিয়ে কোথাও ঘুরতে যা। ভালো লাগবে।
আয়ানের মা – হ্যা আয়ান তোর বাবা কিন্তু একদম ঠিক বলেছে।
আয়ান – মা বাবা অলওয়েজ ঠিকি বলে সেটা আমিও জানি কিন্তু আমি ঘুরতে যেতে পারবো না। নেভার!
আয়ানের বাবা – দেখো আয়ান বড় রা কিছু বললে শুনতে হই সে শিক্ষা আমরা তোমাকে দিয়েছি নিশ্চয়?
আয়ান – কিন্তু বাবা…
আয়ানের বাবা – আর কোনো কিন্তু নয়। তুমি রুপসা কে নিয়ে ঘুরতে যাবে ব্যাস। বিকেলে যেও। আর কাল রুপসাদের বাড়ি যেতে হবে তোমার আর রুপসার যদি কোনো কেনাকাটা থাকে করে নিও কেমন।
আয়ান তার বাবার মুখের উপর না করতে পারে না তাই চুপ করে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দেয়। আয়ান আড়চোখে রুপসার দিকে তাকিয়ে দেখে রুপসার ঠোঁটের কোণে মিষ্টি হাসি যা পাগল করার মতো হলেও এই মূহুর্তে আয়ানের রাগের কারন!
ব্রেকফাস্ট করে আয়ান নিজের রুমে চলে যায়। কিছুক্ষণ পর রুপসাও আসে। আয়ান রুপসার দিকে তাকিয়ে দেখে আবারও রুপসার মুখে হাসি। আয়ান বুঝতে পারছে এই সব হয়তো রুপসার প্লান করা!
আয়ান রেগে রুপসার কাছে আসে। রুপসা ভয়ে দৌড়ে পালাতে নিলেই আয়ান রুপসার হাতটা খপ করে ধরে দেয়ালের সাথে আটকে ধরে।
রুপসা ভয়ে ঢোক গিয়ে আয়ানের দিকে অসহায় ভাবে তাকায়।
আয়ান – এই সব কিছুই তোর প্লান করা ছিলো তাইনা? কী ভেবেছিলি আমি কিছুই বুঝতে পারবো না? মা বাবার মাথায় ঘুরতে যাওয়ার আইডিয়া ঢুকিয়ে দিবি আর আমিও তোকে নিয়ে ঢেং ঢেং করে চলে যাবো তাই তো?
রুপসা আয়ানের কথার কিছুই বুঝতে পারছে না। সে কখন তার শশুর শাশুড়ি কে ঘুরতে যাওয়ার প্লান বললো? তার কি লজ্জা শরম বলতে কিছু নেই নাকি? আজিব!
আয়ান – কী হলো কথা বলছিস না কেনো? তুই কি ভেবেই নিয়েছিস আমার পিছু ছাড়বি না?
রুপসা – আ আমি তো ব বাবা মাকে কিছু ব বলি নি।
আয়ান – চুপ… একদম চুপ। অসভ্য মেয়ে। মিথ্যা বলা শিখে গেছিস তাইনা। কত সহজে মিথ্যা বলে দিচ্ছিস। তুই না বললে মা বাবা আমাকে ঘুরতে যাওয়ার কথা কেনো বললো? হোয়াই?
রুপসা – আ আমি জানিনা।
আয়ান – জানিস না? তুই ইচ্ছে করেই এই সব করছিস৷ বার বার আমার কাছে আসার চেষ্টা করছিস। বাট ইউ নউ না… তোর মতো মেয়েকে কোনো দিনও কাছে টেনে নিবো না আমি। কখনো না। অনেক সুন্দরী মেয়েরা আমার পিছন পড়ে থাকে জানিস। তাদের সাথেই আমি অলটাইম আড্ডা দিই চুমুও দি…….
আর কিছু বলার আগেই রুপসা আয়ানের মুখটা চেঁপে ধরে। রুপসার চোখ দু’টো ভিজে যাচ্ছে যা আয়ান স্পষ্ট বুঝতে পারছে।
রুপসা – আপনি কী হ্যা…? নিজের বউ এর সামনে কেউ এই সব বলে?
আয়ান এক ঝটকায় নিজের মুখ থেকে রুপসার হাত টা সরিয়ে ফেলে।
আয়ান – বউ মাই ফুট। কিসের বউ রে কিসের বউ? আমি কি তোকে বউ বলে মেনেছি নাকি মানতে পারবো? আর হ্যা কেউ না বলুক আমি ঠিকই তোর সামনে এই সব বলবো। যত দিন থাকবি সহ্য করতেই হবে। যদি না পারিস তোর জন্যই ভালো চলে যা।
রুপসার চোখ বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে…
রুপসা – যাবো না আমি। ছেড়ে যাওয়ার জন্য তো আসিনি।
আয়ান – হুহ তোদের মতো মেয়েদের খুব ভালো করেই চিনি।
বাই দ্য ওয়ে… মা বাবা যখন বলছিলো তুইও তখন রাজি হয়ে ছিলি কেনো? না করতে পারলি না। বলতে পারলি না তোর সমস্যা আছে তুই যেতে পারবি না আমার সাথে।
রুপসা – নিজেও তো না করতে পারতেন।
আয়ান – আমি না করলে শুনবে না তাছাড়া আমি বাবা মার মুখের উপর না করতেও পারিনা।
রুপসা – তাহলে যা হবার তাই হবে।
আয়ান – মানে?
রুপসা – মানে আবার কী? আমরা বিকেলে যাবোই যাবো।
আয়ান – তোর সাহস আছে বটে!
রুপসা – থাকবেই তো। এখন ছাড়ুন আমায় কাজ আছে অনেক।
আয়ান রেগে রুপসাকে ছেড়ে দেয়।
বিকেলে….
আয়ান রুমে এসে দেখে রুপসা ড্রেসিং টেবিলের সামনে এসে গান গুনগুন করে গান গাইছপ আর চোখে কাজল দিচ্ছে।
আয়ান রুপসার দিকে কিছুক্ষণ ভ্রু কুঁচকে তাকায়। তার মাথায় কিছুতেই ঢুকছে না এতো সেজে মেয়েটা যাচ্ছে কোথায়? বাপের বাড়ি নয় তো? তাহলে তো আলহামদুলিল্লাহ!
রুপসা – আপনি এসেছেন? রেডি হয়ে নিন তারাতারি।
আয়ান – হোয়াট?
রুপসা – সব সময় এতো হোয়াট হোয়াট করেন কেনো বলুন তো? আমরা ঘুরতে যাবো তাই বলছি তারা তারি রেডি হয়ে নিন। এর মধ্যেই ভুলে গেলেন নাকি?
আয়ান – তার মানে তুমি ঠিক করে রেখেছো তুমি যাবেই।
রুপসা – জ্বী। (দাঁত কেলিয়ে)
আয়ান রেগে ওয়াশরুমে চলে যায়। এখন যেতে হবেই আর কোনো উপায় দেখছে না সে। কারন তার বাবা মাকে না করার মতো সাহস থাকলেও কোনো দিনও পারবে না তাদের মুখের উপর না করতে।
আয়ান রেডি হয়ে এসে দেখে রুপসা আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে। রুপসা আর কালো কালার জামদানি শাড়ি পড়েছে, চুল গুলো এলোমেলো ভাবে খোঁপা করা, ঠোঁটে ঘাঢ় লাল রং এর লিপস্টিক, চোখে কাজল, গলায় আর কানে হালকা জুয়েলারি রুপসাকে দেখতে তো মাশআল্লাহ!
আয়ান ও কালো শার্ট পড়েছে হাতা ফোল্ড করা, কালো জিন্স কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার দুজনের ড্রেসের রং মিলে গেলো কি করে?
আয়ান তো রুপসার ড্রেস টা প্রথমে ভালো করে খেয়াল করে নি সে কি রং এর ড্রেস পড়েছে তাও তো খেয়াল করেনি। আয়ান নিজ থেকেই আনমনে কালো রং এর ড্রেস পড়ে এসেছে।
রুপসা – আরেহ বাহ! আমরা দু’জন দেখি একি রং এর ড্রেস পড়লাম! কী মিল আমাদের তাইনা? (মুচকি হেসে)
এই মূহুর্তে আয়ানের ইচ্ছে করছে এক্ষুনি গিয়ে চেঞ্জ করে আসতে। কিন্তু সেটা কেমন দেখায় না। তাই দাঁতে দাঁত চেঁপে রুপসার বলা কথা গুলো হজম করছে।
রুপসা – কী হলো চলুন। যাবো না আমরা?
আয়ান কিছু না বলে হনহন করে বেরিয়ে পড়ে রুপসা ও আয়ানের পেছন পেছন ছুটে।
আয়ান গাড়িতে গিয়ে বসে পাশের সীটে রুপসা। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে কিছুদূর যেতেই রুপসা ঝুঁকে পড়ে যেতে নেয়।
আয়ান – ইউ ননসেন্স! সীটবেল্ট টা বাঁধো নি কেনো? আর এভাবে ঝুঁকে গেলে কেনো হটাৎ করে?
রুপসা – কী জানি!
আয়ান – হোয়াটএভার সীটবেল্ট টা বাধোঁ কুইক।
রুপসা – আসলে আমি তো বাঁধতে পারি না। (খাটি মিথ্যা কথা)
আয়ান – হোয়াট? তুমি সীটবেল্ট টাও বাঁধতে পারো না? তুমি কি এখন বাচ্চা শিশু যে বাঁধা শিখাতে হবে।
উত্তরে রুপসা কিছুই বলে না শুধু অসহায় মুখ করে আয়ানের দিকে তাকায়।
আয়ান না পেরে রুপসার কাছে গিয়ে সীটবেল্ট টা লাগিয়ে দেয়। আয়ান রুপসার দিকে তাকাতেই রুপসার মুখের হাসিটা দেখতে পায়।
রুপসা – আচ্ছা আমরা কোথায় যাচ্ছি? না মানে এভাবে গাড়িতে করে কী ঘুরা হই? তার চেয়ে বরং রিকশা দিয়েই ঘুরতে পারতাম। অনেক ভালো লাগতো। অনেক মজা ও পে……
বলতে বলতেই আয়ানের দিকে তাকিয়ে দেখে আয়ান রাগি চোখে রুপসার দিকে তাকিয়েছে যা দেখার সাথে সাথেই রুপসার মুখটা ভয়ে চুপসে যায়।
আয়ান – যেভাবে নিয়ে যাচ্ছি চুপচাপ চলো। নয়তো এখানেই ফেলে রেখে যাবো… যত্তসব..
রুপসা আয়ানের ধমক শুনে চুপ করে যায়।
আয়ান একটা শপিংমলের সামনে এনে গাড়ি পার্ক করে। রুপসা কে বের হতে বলে।
রুপসা কিছুই বুঝতে পারছে না তাদের তো ঘুরতে যাওয়ার কথা ছিলো ঘুরাঘুরি হয়ে গেলে শপিং এখন তো দেখছি কিছুই হবেনা। ধুররর…. এই অসভ্য লোকটার জন্য আনন্দটাই মাটি হয়ে গেলো। ভেবেছিলো ফুচকা আইসক্রিম কতো কিছু খাবে সব শেষ!
রুপসা মনে মনে আয়ানকে হাজার টা বকা দিলেও মুখে কিছুই বলেনি কারন একটু আগে যা বললো যদি সত্যিই তাকে এখানে ফেলে রেখে যায় তখন কী হবে… ভাভাগো ভাভা!!
চলবে…