তোর আসক্ত পর্ব -০৭

#তোর আসক্ত❤
#পর্ব – ৭
#writer_শিফা_আফরিন_মিম

🍁
আয়ান রুপসাকে নিয়ে শপিংমলে ঢুকে। রুপসা মনে মনে ঠিক করে কালকে তার বাড়িতে যাওয়ার জন্য সুন্দর একটা শাড়ি কিনবে।
আয়ান রুপসাকে একটা শপে নিয়ে যেতেই রুপসা শাড়ি দেখা শুরু করে। রুপসা কয়েকটা শাড়ি দেখে যাচ্ছে আর বার বার আয়ান কে জিগ্যেস করছে কোনটা বেশি সুন্দর। আয়ান বেচারা তো মহা বিরক্ত। তাও মুখে হাসির রেখা টেনে বলেই যাচ্ছে…. সুন্দর, সুন্দর — যার মানে সব গুলা শাড়িই সুন্দর। রুপসা বেচারি তো পড়লো মহা বিপদে। কোনটা নিবে ভেবেই পাচ্ছে না।

হটাৎ আয়ান খেয়াল করলো দোকানের ছেলেটা বার বার রুপসার দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। আয়ান তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখে ছেলেটা রুপসার শাড়ির ফাকে একটু পেট দেখা যাচ্ছে সেখানেই তাকিয়ে আছে।
এটা দেখা মাত্রই আয়ানের রাগ টা সীমা ছাড়িয়ে যায়। ইচ্ছে করছে ছেলেটাকে মেরে তার দোকানেই পুঁতে ফেলতে। কিন্তু তা পারছে না কোনো প্রকার ঝামেলা হোক তা সে চাইছে না।
আয়ান একহাতে রুপসার কোমড় জড়িয়ে ধরে। আচমকা কোমড়ে হাতের স্পর্শ পেয়ে রুপসা যেনো চমকে উঠে। অবাক হয়ে আয়ানের দিকে তাকাই কারন।

আয়ান রাগি চোখে রুপসার দিকে তাকিয়ে আছে। রুপসা কিছুই বুঝতে পারছে না হচ্ছে টা কী? আয়ান শাড়িটা একটু টেনে রুপসার পেট টা ঢেকে দেয়। তারপর অগ্নিদৃষ্টিতে ছেলেটার দিকে তাকায়। এমন ভাবে তাকিয়ে আছে যেনো চোখ দিয়েই গিলে খাবে।
রুপসাও বুঝতে পারে হয়তো তার কাপড় ঠিক ছিলো না। তারাতারি আয়ানের কাছ থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে সব ঠিক ঠাক কয়ে নেয়।
ছেলেটাও আয়ানের চোখ দেখে অনেক ভয় পেয়ে যায়। বেচারার আত্না যেনো শুকিয়ে গেছে।

রুপসা একটা শাড়ি কিনে বেরিয়ে পড়ে। আর কোনো কিছু কেনার সুযোগ না দিয়েই রুপসাকে একপ্রকার টেনে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় আয়ান। নিজেও ড্রাইভিং সীটে বসে পড়ে।
রুপসা বুঝতে পারছে আয়ান প্রচন্ড রেগে আছে। কিন্তু এতে রুপসারই বা দোষ কোথায়? সে তো ইচ্ছে করে কিছু করে নি তাইনা?

আয়ান গাড়ি স্টার্ট দেয়। সারা রাস্তায় একটা কথাও বলেনি রুপসার সাথে। রুপসাও বেশ ভয়ে ভয়ে আছে। বাড়িতে আসতেই আয়ানের মা অবাক হয়ে যায়….

আয়ানের মা – কিরে এতো তারাতারি ফিরে এলি? ঘুরতে গিয়ে এতো তারাতারি আসে কেউ?

আয়ান – এমনি মা ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসলাম। — বলেই হনহন করে নিজের রুমে চলে যায়।
রুপসা ও পেছন পেছন ছুটে। বেচারির ভয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা!

রুপসা ঘরে ঢুকে দেখে আয়ান বিছানায় শুয়ে আছে। ভয়ে ভয়ে রুপসা ওয়াশরুমে ঢুকে পড়ে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখে আয়ান ঠিক আগের মতোই বিছানায় শুয়ে চোখ বন্ধ করে আছে।
রুপসা ভাবে আয়ান হয়তো ঘুমিয়ে পড়েছে। কিন্তু না! রুপসাকে অবাক করিয়ে দিয়ে আয়ান এক লাফে শুয়া থেকে উঠে বসে। চোখ দু’টো লাল হয়ে আছে। রেগে কটমট করে রুপসার দিকে তাকায়।

আয়ান – বাহিরের লোকজন কে নিজের শরীর দেখানোর খুব ইচ্ছে তোমার তাইনা? (দাঁতে দাঁত চেঁপে)

আয়ানের কথায় রুপসা কিছুটা রেগে যায়। কেউ কি ইচ্ছে করে এমন কাজ করবে? রুপসাও তো করেনি। মিসটেক হয়ে গেছে মাত্র!

আয়ান – কী হলো কথা বলছো না যে? কি মনে করো নিজেকে? বিউটি কুইন? তাই নিজের শরীর দেখানোর জন্য শাড়ি পড়ে গিয়েছিলে?

রুপসা – আ… আমি তো জ জানতাম না।

আয়ান রুপসার দিকে এগিয়ে যায়। রুপসা ভয় পেয়ে চলে যেতে নিলেই আয়ান রুপসার কোমড় চেঁপে ধরে একটানে কাছে নিয়ে আসে। এতোটাই চেঁপে ধরেছে যে বেচারির মনে হচ্ছে কোমড়ের হাড় বুঝি ভেঙেই গেলো! রুপসা অসহায় ভাবে আয়ানের দিকে তাকায়।

আয়ান – ইচ্ছে করছে তোমার পেট এ সিগারেটের ছ্যাকা লাগিয়ে দিই। খুব শখ না? নিজের ফর্সা পেট ছেলেদের দেখানোর।

রুপসা – এসব কী বলছেন আপনি? আমি তো ইচ্ছে করে দেখাই নি। ভুলবশত শাড়িটা সরে গিয়েছিলো। আসলে বিয়ের আগে কোনো দিন শাড়ি পড়ি নি তাই এতো টা ভালো করে পড়তেও পারিনা। যেটুকু পেরেছিলাম সব তো ঠিকই ছিলো কিন্তু কখন যেনো পেট থেকে সরে গিয়েছে বুঝতে পারিনি। (করুন দৃষ্টিতে)

আয়ান – শাড়ি পড়তে পারো না ভালো কথা। মার কাছ থেকে শিখে নিতে পারলে না? আর যখন শাড়ি পড়ে ঠিক রাখতে পারো না শাড়ি তাহলে পড়তে গেলে কেনো?

রুপসা – ভ ভুল হয়ে গ গেছে। স সরি!

আয়ান এক ধাক্কায় রুপসাকে সরিয়ে দেয়। রুপসাও এক মূহুর্ত দেরি না করে সেখান থেকে নিচে চলে আসে।

হটাৎ দরজায় বেল বাজতেই রুপসা গিয়ে দরজা খুলে।
দরজা খুলতেই রুপসা একটা ছেলেকে দেখতে পায়। দেখতে তো মাশআল্লাহ অনেক কিউট! ব্লু কালার শার্ট, ব্ল্যাক জিন্স, হাতে দামী ঘড়ি, চোখে কালো সানগ্লাস, মুখে মুচকি হাসি! এক কথায় অসাধারন দেখতে!
হাতে তো লাগেজ ও দেখা যায়। আবার কিসের একটা প্যাকেট ও। কিন্তু উনি কে?

রুপসা কিছু বুঝে উঠার আগেই ছেলেটা ভেতরে আসে….

— মাই সুইট ভাবি! কী ঠিক বললাম তো?

ছেলেটার মুখে ভাবি ডাকটা শুনে রুপসা চমকে যায়! ভাবি? কিন্তু আয়ানের তো কোনো ভাই নেই। একজন ছিলো তিনি তো মারা গেছেন।

রুপসা তাকিয়ে দেখে পেছন থেকে আয়ানের বাবা ও দাড়িয়ে আছে। সবটাই জেনো রুপসার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে।

রুপসা – বাবা উনি?

আয়ানের বাবা – ও হলো তোমার ছোট ভাই। (মুচকি হেসে)

এতোখনে আয়ানের মা ও চলে আসে। আয়ানের মা আসতেই ছেলেটা আয়ানের মাকে জড়িয়ে ধরে।

আয়ানের মা – কেমন আছিস বাবা?

— ভালো মা। আর এখন তো আরও ভালো থাকবো তোমাদের কাছে পেয়ে।

আয়ানের মা ছেলেটার কপালে চুমু দেয়।

আয়ানের মা – রুপসা ও আয়ানের ছোট ভাই আমান।

রুপসা – কিন্তু মা আপনি যে বললেন উনারা দুই ভাই। অনিক ভাইয়া আর উনি? (অবাক হয়ে)

আয়ানের মা – ঐযে বলেছিলাম না সারপ্রাইজ!
আমান বলেছিলো ও যে আসছে কাউকে যেনো না জানাই তাই তোমাকে বলি নি।

রুপসা – ওহহ আচ্ছা।

আমান – মা ভাইয়া কোথায়?

আয়ানের মা – তোর ভাইয়া রুমেই আছে। যা গিয়ে দেখ।

আমান একদৌড়ে উপরে চলে যায় গিয়ে দেখে আয়ান ল্যাপটপে গভীর মনযোগ সহকারে কিছু একটা করছে। আমান ধীরে ধীরে আয়ানের কাছে গিয়ে পেছন ধরে চোখ ধরে।

আয়ান ভাবে এবারও রুপসা তার সাথে দুষ্টুমি করছে। আয়ান প্রচন্ড রেগে যায়। আয়ান কোনো রকমে ল্যাপটপ টা পাশে রেখে উঠে দাড়ায়।

আয়ান – ইউ স্টুপিড গার্ল… কত বার বলবো এরকম ফাজলামো করবে না? তোমার সাহস হয় কী করে বার বার আমাকে টাচ করার। বেয়াদব কোথাকার। সোজা কথা বুঝতে পারো না তাইনা? বার বার যে বলছি আমার ধারে কাছেও আসবে না কথা কানে যায় না? (প্রচন্ড রেগে)

আয়ান আরও কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার চোখ টা ছেড়ে দেয়। আয়ান রেগে পেছন ফিরে তাকিয়ে দেখে আমান!

আয়ান যেনো কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তার আদরের ছোট ভাইটাকে চোখের সামনে দেখছে!
অবশ্য তার আদরের বললে ভুল হবে আমান কে অনিক ও অনেক ভালোবাসতো। লেখাপড়ার জন্য আমান দেশের বাহিরে চলে গিয়েছিলো। অনিকের মৃত্যুর কথা শুনে অবশ্য একবার এসেছিলো পরে আবার চলে যায়।

আয়ান – আ আমান! — বলেই আমানকে জড়িয়ে ধরে। আমানও জড়িয়ে ধরে।

আমান – কেমন আছো ভাইয়া?

আয়ান – ভালো। তুই কবে আসলি? তুই জানাস নি কেনো আমাকে আসবি যে? তোর নিশ্চয় আসতে অনেক সমস্যা হয়েছে রাস্তায়? একা একা আসতে গেলি কেনো বল তো? (এক দমে কথা গুলো বলে)

আমান – আরেহ ভাইয়া এতো ব্যাস্ত হইও না তো। আমাকে তো বাবা আনতে গিয়েছিলো বুঝলে। তাছাড়া বাবা গাড়ি নিয়ে গিয়েছিলো ড্রাইভার আংকেল ও ছিলো তাই কোনো প্রবলেম হয়নি।

আয়ান – যাক। এটা নিশ্চয় তোর সারপ্রাইজ প্লান?

আমান – একদম! কেমন লাগলো ভাইয়া?

আয়ান – ফাজিল কোথাকার। তুই বলবি তো নাকি। যদি পথে কোনো সমস্যা হতো তখন?

আমান – আচ্ছা বাদ দাও। ভাইয়া একটা কথা বলো তো তুমি ভাবির সাথে কি এইরকম বিহেভ করো?

আয়ান কি বলবে বুঝতে পারছে না। তখন আমান কে রুপসা ভেবে তো অনেক কথাই বলে দিলো। এবার কী বলবে?

আমান – কী হলো ভাইয়া বলো। চুপ করে আছো যে?

আয়ান – না এমনিই।

আমান – কারন টা কী জানতে পারিনা?

আয়ান – দেখ আমি কোনো মেয়ের প্রতি আসক্ত হতে চাইনা। মা বাবাকে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।

আমান – ভাইয়া তুমি কি অনিক ভাইয়ার কথা ভুলতে পারোনি?

আয়ান – এটা তো ভুলার মতো না।

আমান – দেখো ভাইয়া এতোটুকু বুঝার ক্ষমতা নিশ্চয়ই তোমার আছে। ভাবি ঐ মেয়েটার মতো নিচু মানসিকতার নাও হতে পারে। মাও আমাকে বলেছে তুমি নাকি ভাবিকে মেনে নিতে পারছো না। কিন্তু কেনো ভাইয়া? ভাবি কী করেছিলো? সবাই তো এক না তাইনা? তাহলে তাকে বিশ্বাস করতে ক্ষতিটা কী বলবে প্লিজ?

আয়ান – আমান তুই সবে এসেছিস এখন যা ফ্রেশ হয়ে রেস্ট নে।

আমান ভালো করেই বুঝতে পারে আয়ান তার কথাটা এড়িয়ে যাচ্ছে। তাই আমান আর কথা না বাড়িয়ে সেখান থেকে চলে আসে।

আয়ান খাটে বসে পড়ে। কিছুতেই পারছে না রুপসাকে মেনে নিতে। কিন্তু এটা তো সত্যিই রুপসার কোনো দোষ নেই। সে তো ঐ মেয়েটার মতো খারাপ না। কিন্তু মানুষের মন বদলাতে আর কতক্ষনই বা লাগে?

রাতে…

সবাই একসাথে বসে ডিনার করছে। শুধু আয়ানের মা আর রুপসা বসেনি। আয়ানের মা বার বার রুপসাকে জোর করলেও সে খেতে বসেনি। তার একটাই কথা সব সময় সবার খাওয়া শেষ হলে সে তার শাশুড়ি মার সাথে বসে খাবে। আয়ানের মাও রুপসার এই ভালোবাসা নামক জেদের কাছে হার মানে।

আয়ানের বাবা – আয়ান কাল তো তুমি আর রুপসা রুপসাদের বাড়িতে যাবে। তো সব গুছিয়ে নিও কেমন?

আমান – বাহহহ আমার যেতে মানা আছে বুঝি?

রুপসা – এ মা তা কেনো হবে তুমিও আমাদের সাথে যাবে ভাই। কোনো মানা নেই।

আমান – এইতো পারমিশন পেয়ে গেলাম তাহলে।

আয়ানের মা – দেখিস ঐ খানে আবার কোনো গন্ডগোল বাধিয়ে বসিস না যেনো তুই তো আবার ঝামেলা বাড়ানোর জন্য ওস্তাদ! (আমান কে উদ্দেশ্য করে)

আমান – ওহো মা! আমি কি এখনো ছোট আছি বলো? এখন তো গন্ডগোল বাঁধানোর প্রশ্নই আসে না।

আয়ানের মা – হ্যা তাই যেনো হই।

সবার খাওয়া শেষ হলে যার যার রুমে চলে যায়। রুপসা আর আয়ানের মাও খেয়ে রুমে চলে আসে। রুপসা রুমে এসে দেখে আয়ান ফোন টিপছে।

রুপসা – বলছিলাম যে আপনার কী কী গুছিয়ে রাখতে হবে বলুন আমি রেখে দিচ্ছি।

আয়ান বিরক্তি নিয়ে রুপসার দিকে তাকায়। এই মেয়ে এমন ভাব দেখাচ্ছে যেনো ফরজ এর নামাজের পরই বেরিয়ে যাবে।

আয়ান – আমরা কাল কখন যাবো? আই মিন কয়টার সময় বের হবো?

রুপসা – এই ধরুন দুপুরের দিকে।

আয়ান – তাহলে সকাল থেকে বসে বসে কী করবে তুমি? আমার মাথার চুল ছিড়বে?

রুপসা আয়ানের কথায় বেকুব হয়ে যায়। কিছুই বুঝতে পারছে না আয়ানের এমন কথা বলার কারন টা কী?

রুপসা – আ আপনার ম মাথার চুল ক কেনো ছিড়বো?

আয়ান – তাহলে এখন গুছানোর কথা বলছো কেনো? সকালে পারবে না গুছাতে?

রুপসা – হ্যা (মাথা নাড়িয়ে)

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here