প্রিয় মানুষটা তার বুক থেকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে যখন বলল সে অন্য কাউকে বিয়ে করতে চায়। তার মতো হ্যান্ডসাম ছেলের জন্য মেয়েরা লাইন দিয়ে আছে। তা শুনে কিছু সময়ের জন্য শকড হয়ে গেছিল আদিয়া।মনে হচ্ছিল কেউ তার বুকে হাতুরি পে’টা’চ্ছে। প্রিয় মানুষকে হারানোর ভয়ে গলাটা মনে হচ্ছিল শুকিয়ে আসছে।
।
।
।
।
পাচ বছর পর দেশে আসছে আনাফ।এত গুলা দিন পরে প্রিয় মানুষটাকে দেখবে ভেবে অনেক এক্সাইটেড ছিল আদিয়া। তাই তো সকাল থেকে বসে অপেক্ষা করছিল। তিন ঘন্টা পর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে আনাফ তার পদধুলি ফেলল আদিয়ার সামনে। এসে এক্সকিউজ দিল সে নাকি ঘুমিয়ে ছিল৷
তাও এতগুলা দিন পর প্রিয় মানুষটাকে সামনে দেখে এসব অপেক্ষাকে পরোয়া করল না।গিয়ে জরিয়ে ধরল আনাফকে। আনাফ এক ঝটকায় বুক থেকে সরিয়ে দিয়ে বলল আদিয়া এসব আমার ভালো লাগছে না এসব।এমন হুটহাট জরিয়ে ধরবে না।
তখন মুখ তুলে আদিয়া বলল তুমি তো আগে এসবের জন্য জোর করতে। আর এত গুলা দিন পর তোমায় দেখেছি তাই এক্সাইটেড হয়ে জরিয়ে ধরেছিলাম।
-হুম বুজছি। আর এভাবে ধরবে না কখনো।
-বিয়ের পরেও না।
তোমাকে বিয়ে করব আমি এটা এখনো বিশ্বাস কর। নিজের চেহারা দেখেছ আয়নায়। বুড়ির ছাপ পরে গেছে। যাও এখন গিয়ে কোনো টাকলা ভুরিওয়ালা বয়স্ক লোক দেখে বিয়ে করে নাও। আমার মতো হ্যান্ডসাম ছেলে তুমি ডিজার্ভ করো না।
সাত বছর রিলেশনের পর প্রিয় মানুষের মুখে এমন বানী শুনে কি বলা উচিত ভাষা হারিয়ে ফেলছে আদিয়া। যে মানুষটার জন্য এতগুলা বছর দুহাতে বিয়ের প্রোপোজাল রিজেক্ট করে অপেক্ষা করেছে সেই মানুষটাই আজ বলছে ওর চেহারায় বয়সের ছাপ পরে গেছে। এখন কি বলা উচিত বুজতে পারছেনা আদিয়া। তাও কাপা কাপা গলায় বলল
– আনাফ তুমি মজা করছ করছ তাইনা?
-মোটেই নয়। আমি কেন মজা করব তোমার সাথে। তোমার সাথে মজা করার টাইম আমার নেই। এত গুলা দিন পর দেশে আসলাম সবার সাথে দেখা করা হয়নি এখনো। তেমার যন্ত্রনায় বিরক্ত হয়ে দেখা করতে আসছি। নয়ত এত ফাও টাইম আমার নেই।
-আনাফ তুমি এগুলা কি বলছ।
-ন্যাকামো বাদ দাও।আমি যা বলেছি বাংলায়ই বলেছি। আশা করি তুমি বুজতে পারছ।
-আনাফ তুমি এভাবে বলছ কেন?
-দেখো আমি তোমাকে বিয়ে করব না। আমি অন্য কাউকে বিয়ে করতে চাই৷ মা অলরেডি আমার জন্য মেয়ে দেখা শুরু করেছে৷ তোমার বয়স অনেক বেশি হয়ে গেছে তাই তোমাকে বিয়ে করা সম্ভব না।
-আনাফ….
-সময় মতো বিয়ের দাওয়াত তুমি পেয়ে যাবে।
এখন আমি ভীষন ব্যাস্ত। অনেক কাজ আছে। আমি আর তোমাকে সময় দিতে পারছি না। ভালো থেকো৷ আর যোগাযোগ করার ট্রাই করো না কেমন।
এই বলে আনাফ সেখান থেকে উঠে গেল। পেছনে একটা বার তাকিয়েও দেখল না। তাকালে হয়ত দেখতে পারত কান্নায় ভেঙে পরা মুখখানা।
প্রায় এক ঘন্টার মতো পার্কের বেঞ্চে বসে অঝোর ধারায় কান্না করছে আদিয়া।
-আপা আপনি কান্না করেন কেন? বাদাম খাবেন।
কান্না না থামিয়ে মাথা নাড়িয়েই না বোঝায় আদিয়া। ছেলেটা আবার বলে ওঠে
-আপা টাকা দেয়া লাগবে না। আপনি নেন।
এবার মাথা তুলে ছেলটার দিকে তাকায় আদিয়া।দশ-বারো বছরের একটা ছেলে। কাধে কয়েকটা বাদামের প্যাকেট ঝোলানো। তারপর আদিয়া বলে
-আমি বললাম তো খাবনা তাও তুই জোর করছিস কেন।
-আপা আপনার মনে হয় মন খারাপ। একা একা বসে আছেন তাই একটু কথা বলতে আসলাম।
-তোর সাথে কথা বললে মন ভালো হবে।
-পুরোটা না ভালো হলেও কষ্ট কিছুটা কমতে পারে। কারো সাথে মনের ভাব প্রকাশ করলে কষ্ট কিছুটা কমে আপা।
আদিয়া এবারে চুপ করে আছে। কিছু বলছে না।ছেলেটা আবার বলে
-আপা ভাইর সাথে বাজাইছেন তাই না।
আদিয়া মাথা নেরে না বোঝায়। এই ছেলেকে কি বলবে ও। তারপর ও ছেলেটা বকবক করে যাচ্ছে। বলছে
-আপা আমি এই পার্কে দুই বছর ধরে বাদাম বেচি। কত ভাইয়া আপুগো দেখি এখানে আসে। কথায় বোনাবুনি না হইলে ঝগরা করে। তারপর আবার যার যার মতো চইলা যায়। আপনার মতো এমন কান্না কা’টি করতে দেখি নাই কাউকে।আপনি মনে হয় ভালোবাসেন অনেক। আজ কালতো মানুষ আর মন থেকে ভালোবাসে না। তাগো চোখেও জল আসে না।
ছেলেটার কথা শুনে অবাক হয় আদিয়া। এই পিচ্চি ছেলে ভালোবাসার কি বুঝে এটাই ভেবে পাচ্ছেনা।
-অবাক হইয়েন না আপা। ছোট বেলাত্তেই এসব পার্ক, অলিতে, গলিতে বাদাম বেচে এসব দেখে দেখে বড় হইছি। আপনি মন খারাপ কইরেন না আপা। আপনার জীবনে অনেক ভালো কেউ আইবো দেইখেন। যে আপনার চোখ দিয়া জল ঝরাইছে সেই বেইমানের জন্য কাইন্দা কি করবেন। আপা নেন দুই প্যাকেট বাদাম রাখেন। টাকা লাগব না।
আদিয়া ছেলেটার মাথায় হাত রেখে বুলিয়ে দেয়। ব্যাগ থেকে একটা পাচশ টাকার নোট বের করে ছেলেটার হাতে দেয়। ছেলেটা নিতে না চাইলে জোর করে দেয়। বলে আজ আর তোর বাদাম বেচতে হবে না। বাসায় চলে যায়।
ছেলেটা খুশি হয়ে হাসি দিয়ে বলে আপা আপনিও কান্না কা’টি কইরেন না৷বাসায় চলে যান। এরপর ছেলেটা চলে যায়।
আদিয়াও উঠে বাসায় যাওয়ার জন্য। এখানে বসে এতক্ষণ কান্না করছিল।কত মানুষ আর চোখে তাকিয়েছে। এতক্ষণ হুস না থাকলেও এখন লজ্জা লাগছে। এর ধীরে ধীরে পা বাড়ায় বাসার উদ্দেশ্য। একটা রিকশা ডেকে উঠে পরে।
।
।
।
।
।
।
।
এদিকে আনাফের সব বন্ধু বান্ধব, আত্মীয়রা বাসায় এসেছে আনাফের সাথে দেখা করতে। আনাফের ফুপিও এসেছে। সাথে তার মেয়ে নিশিও এসেছে। মেয়েটা ভীষন সুন্দরী। তার উপর আটা ময়দা মেখে এসেছে। আসছে পর থেকে আনাফের দিকে ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়ে আছে। আনাফ ড্রইংরুমে বন্ধুদের সাথে গল্প করছে আর নিশি ড্যাব ড্যাব করে তাকিয়েই আছে। তখন নিশির মা আফিয়া বেগম নিশিকে একটা ধাক্কা দেয় আসতে। নিশে নড়ে উঠে বিরক্তি নিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। আফিয়া বেগম বলেন
-এখন এভাবে তাকিয়ে থাকিস না। বিয়ের পর দেখিস। তোর বিয়ে নিয়ে কথা বলতেই তো এতদূর আসলাম। অন্য কেউ বলার আগেই আমি তোর মামির সাথে কথা বলব। আগেও কথায় কথায় ইঙ্গিতে বুজিয়েছি আমি যে তোকে আানাফের সাথে বিয়ে দিতে চাই। আজকে পাকা কথা বলব।
নিশি খুশিতে মাকে জরিয়ে বলে ধন্যবাদ মা।
।
।
।
।
।
।
।
।
আদিয়া বাসায় আসার পর ওর মা অনেক বার জিজ্ঞেস করেছে এতক্ষণ কোথায় ছিল। কিন্তু ও কোনো জবাব না দিয়ে নিজের রুমে গিয়ে ঠাস করে দরজা আটকে দেয়। ওর মা অনেক ডাকলেও জবাব দেয়না৷ এরপর যখন জায়েদা বেগম চেচামেচি শুরু করে তখন শুধু ভেতর থেকে জবাব দেয় আম্মু শরীর খারাপ লাগছে আমি ঘুমাব চেচামেচি করো না। কি হয়েছে এটা জিজ্ঞেস করলেও আর কোনো জবাব দেয় না আদিয়া।একটা স্লিপিং পি’ল খেয়ে শুয়ে পরে বিছানায়।
এদিকে আফিয়া বেগম যান রাশিদা পারভীনের কাছে। যেহেতু আনাফের বাবা নেই তাই আনাফের মায়ের সাথেই কথা বলবেন তিনি।তিনি গিয়ে বেশি না পেচিয়ে সরাসরিই বলে দেন নিশি আর আনাফের বিয়ের কথা৷ রাশিদা পারভীনের ও নিশিকে আগে থেকেই পছন্দ। এমন মিষ্টি একটা মেয়েকে যে কেউই পছন্দ করবে৷ তাও তিনি আফিয়া বেগমকে বললেন যে আনাফের সাথে কথা বলে দেখতে চান।
#চলবে
#সূূচনা_পর্ব
#তোর_মায়ায়_আসক্ত
#নীহারিকা_নুর