তোর শহরে মেঘের আনাগোনা পর্ব -১০

#তোর_শহরে_মেঘের_আনাগোনা (১০)
#Rawnaf_Anan_Tahiyat

‘ কি কি বলতে চাইছো কি তুমি? আমার আমার আবার কি সিক্রেট আছে যেটা তোমার সামনে ফাঁস হয়ে গেছে?’

‘ শুধু জানতে চাও নাকি দেখতেও চাও? ও ওপস্ মুখে বললে তো তুমি বিশ্বাস করবে না। মাত্র কয়েক সেকেন্ড অপেক্ষা করো সোনা, তোমাকে আমি হাতে নাতে সব প্রমান দিচ্ছি কেমন?’

সিমরানের ভয়ার্ত মুখ দেখে একটু বাঁকা হাসি হাসলো সাকিব, মুখটা চুপসানো বেলুনের মতো করে রেখেছে ও। উঠে রুমের বাইরে এসে দাড়ালো,অন্তর আর মিলন ওর অপেক্ষাতেই ছিল বোধ হয়। সাকিব বাইরে আসার সাথে সাথেই ওর কাছে এসে ইশারায় কিছু জিজ্ঞেস করল, ওদের প্রশ্নে সাকিব মুচকি হেসে মৌন সম্মতি দিয়ে আবার ফিরে রুমে চলে এলো।

_____________________________

‘আমায়রা আপু, এই আমায়রা আপু? সেই কখন থেকে তোমাকে ডাকছি বলোতো,সাত সকালে রুমে কি করছো তুমি?’

এইসব বলতে বলতেই আমায়রার রুমের দরজা ধাক্কা দিয়ে খুললো রাত, খুলতেই যা দেখলো তাতে স্তব্ধ হয়ে গেল কয়েক মুহুর্তের জন্য এরপর গলা ফাটিয়ে চিৎকার দিলো একটা। রাতের চিৎকার বাসার আর সবাই শুনতে না পেলেও আমায়রার রুমে যে ছিল সে শুনতে পেয়ে তড়াৎ গতিতে ওর কাছে এসে ওর মুখে হাত চাপা দিয়ে রুমের ভিতর নিয়ে গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিলো।রাত দু হাতে প্রাণপণ চেষ্টা করেও মুখ থেকে হাত টা সরাতে পারলো না, নাক মুখের উপর বলিষ্ঠ হাতের চাপ পড়ছে ভালো করে নিঃশ্বাস টাও নিতে পারছে না এখন। কিছুক্ষণ হাতের মধ্যে ছটফট করে আর নিঃশ্বাস নিতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেললো রাত,ঢলে পড়ল সেই ব্যক্তির উপরেই।

রাতের বডি টা এক ধাক্কায় বেডে ফেলে দিয়ে একটা বড় করে নিঃশ্বাস নিলো মিল্লাত। এই মেয়েটার জন্য আরেক টু হলেই ধরা পড়ে যেতো বাসার সবার কাছে,বড় বাঁচা বেঁচে গেল এই যাত্রায়।বেডের এক কোণে বসে শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে ভাবতে লাগলো আমায়রার ডেথ বডি টা ঠিক কিভাবে এই বাসা থেকে বের করা যায়?এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সামনে ফ্লোরে পড়ে থাকা নিথর দেহ টার দিকে তাকিয়ে রইল মিল্লাত।মুর্খ একটা মেয়ে কে নিয়ে প্লান করেছিল ধুর, সবকিছু জলে গেল। সকাল পাঁচটার দিকে আমায়রার কাছে এসেছিলো ওকে দিয়ে একটা কাজ করাতে কিন্তু নাহ, মেয়েটা কিছুতেই রাজি হলো না। উল্টো ওকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়ার হু’ম’কি দেয়, এতো কষ্ট করে ওর সাথে যেই কাজের জন্য রিলেশনশিপ এ জড়িয়েছিল যদি সে কাজটাই না হয় তাহলে একে বাঁচিয়ে রেখে লাভ কি? রাগের মাথায় গলায় ওড়না পেঁচিয়ে ধরেছিল মিনিট কয়েক,ব্যাস কাজ শেষ। কিছুক্ষণ হাত পা ছোড়াছুড়ি করলো, ছটফট করলো বাঁচার জন্য এরপরে ই একেবারে চুপ হয়ে গেল। শেষ তো করে দিয়েছে একে কিন্তু এখন তো পড়েছে উটকো ঝামেলায়, বাসা থেকে বের করবে কিভাবে একে?তার উপর আবার এই আরেক টা বিপদ ঘাড়ে এসে চেপেছে, ইচ্ছে করছে এইটা কেও চিরতরে শেষ করে দেয় যাতে ওর রাস্তায় আর কোনো বাধা না থাকে।

_______________________________

দেখতে দেখতে ই এক সপ্তাহ পার হল। সাকিবের বাসায় এখন কান্নার রোল সবসময়, নাসিমা সবসময় কেঁদেই চলেছেন ছেলে মেয়ের জন্য। আসমা রহমান চুপচাপ মুর্তিটির মতো হয়ে গেছেন, কারো সাথে কোন কথা বলেন না তিনি। সবসময় রাতের হাসি মাখা ছবিটা কোলে নিয়ে বসে থাকেন,আর হঠাৎ করেই কেঁদে উঠেন তা ও সাময়িক সময়ের জন্য। উনার ধারনা রাত উনার উপর রাগ করে বাসা ছেড়ে চলে গেছে, উনি মেয়েকে ভালোবাসতে পারেন নি তাই মেয়েটা উনার উপর অভিমান করেছে খুব। সাকিবের বিয়ে থেকে ফেরার পর দিনই রাত উধাও হয়ে গেছে, কোথাও তার কোনো খোঁজ নেই। না একটা ফোন করেছে কাউকে আর না কারো সাথে কোন যোগাযোগ, একেবারে নিরুদ্দেশ হয়ে গেল মেয়েটা।

নাসিমা রহমান সবসময় কাঁদেন, সাকিব সেই যে গেল আর বাসায় ফিরল না। এদিকে আমায়রা টা গলায় ফাঁ’স লা’গি’য়ে আ’ত্ম’হ’ত্যা করলো বিয়ের পর দিনই।সে নাকি কাকে খুব ভালোবাসতো কিন্তু সাকিব নাকি সেটা মেনে নেবে না সেজন্যই সে পৃথিবী ছেড়ে চলে গেল, তাকে ছাড়া নাকি সে বাঁচবে না। মেয়ে ম’রে গেছে তাতে নাসিমা রহমানের এতো বেশি দুঃখ নেই কারণ এই মেয়ের জন্য উনার অনেক মানসম্মানের ক্ষতি হয়েছে আগে। উনার একটাই কষ্ট, ছেলে টা ঐ বাজে মেয়েটার জন্য বাসা ছেড়ে চলে গেছে, কলিজার টুকরা বলতে গেলে।

সকালে ঘুম থেকে উঠেই কান্না শুরু করেছিলেন তিনি, হঠাৎ করেই সে সময় একটা কথা মাথায় এলো উনার।রাত ও বাসা থেকে বেরিয়ে গেছে আর সাকিব ও বাসায় ফিরেনি এখনো, এমন ও তো হতে পারে যে সাকিব রাত কে নিয়ে বাসা থেকে পালিয়ে গেছে। যেহেতু রাত সাকিব কে ভালোবাসে সেহেতু এটা হতেই পারে, ছেলেটার মাথা খেয়েছে হয়তো এই মেয়ে টা আর সেকারণেই ওরা পালাতে পেরেছে। কিছুক্ষণ এটা নিয়ে গভীর ভাবে চিন্তা ভাবনা করার পর পুরোপুরি নিশ্চিত হলেন নাসিমা রহমান, তিনি যা ভাবছেন তাই ঠিক। অতএব এখন সাকিবের জন্য কান্নাকাটি করে কিছু লাভ নেই, ছেলে টা যেখানে আছে ভালোই আছে নিশ্চয়ই।রাত সাকিবের সম্পূর্ণ খেয়াল রাখবে, এমনিতে মেয়ে টা যেমন হয় হোক কিন্তু সাকিবের ভালো মন্দের দিকে ওর নজর খুব। চোখ মুছে ফুরফুরে মেজাজে রুম থেকে বেরিয়ে নিচে নেমে এলেন তাড়াতাড়ি,আসমা কে স্বাভাবিক করা দরকার।

‘ আসমা ?’

সোফায় বসে রাতের পছন্দের রুমাল সেলাই করছিলেন আসমা, তখনই বুবুর ডাক।সেলাই বন্ধ করে উঠতে যাবেন নাসিমা নিজেই এসে আসমার পাশে বসলেন।এক হাত আসমার কাঁধে রাখলেন এরপর বললেন,,,

‘ রাত কে নিয়ে চিন্তা করছিস বুঝি?আর চিন্তা করিস না তো, রাত একদম ঠিক আছে।’

‘ কি বলছো তুমি বুবু? তুমি কি কি করে জানলে ওর সম্পর্কে?’

‘ বলছি,বলছি সবকিছু ধীরে ধীরে বলছি তোকে। তুই শোন খালি,আর কোনো প্রশ্ন করবি না।’

_____________________________________

আজ পুরো এক সপ্তাহ হলো সূর্যের আলো চোখে পড়েনি সিমরানের। খিদেয় কাতর অবস্থা, কখনো খেতে দিয়েছে তো কখনো দেয়নি। কখনো নিজ থেকেই খেতে ইচ্ছে করেনি যন্ত্রণায়,আধ ঘুম জড়ানো চোখে পাশে তাকাল সিমরান। পাশে তাকাতেই শিউরে উঠলো,কি অবস্থা করেছে মিল্লাত ভাই আর রায়হানের।পরশু দিন এদের দুজনকেই ধরে নিয়ে এসেছে সাকিব, জানোয়ারের মতো মা’র’ধ’র করেছে নিয়ে এসে। এখন পর্যন্ত মনে হয় না এক ফোঁটা পানি ও খেতে দিয়েছে দুজন কে। একটু বিদ্রুপের হাসি ফুটে উঠল সিমরানের ঠোঁটের কোণে। মিল্লাত ভাই নাকি বাঘা পালোয়ান, সাকিবের জীবন পৃথিবীর আলো বাতাস থেকে চিরতরে দূর করে দেবে নাকি হাহ্? শুধু মুখেই বড় বড় কথা উনার, কাজে কর্মে পাকা ঢেড়স একটা।সে কি করবে সাকিব কে, সাকিব নিজেই ওর অবস্থা বেহাল দশায় ফেলেছে।

পাশের রুমে রাতের মাথায় ব্যান্ডেজ পরিবর্তন করে দিচ্ছিল সাকিব, এমন সময় পানি পানি করে চিৎকার করতে শুরু করলো মিল্লাত। বিরক্ত হয়ে রাত কে চুপটি করে বসে থাকতে বলে পানির একটা বোতল নিয়ে এই রুমে এলো।

‘ কি হয়েছে টা কি? একটু শান্তিতে প্রেম ও করতে দিবি না কি আমাকে?’

‘ পানি দে আমাকে? মা’রা’র ইচ্ছে তো মে’রে ফেল আমাকে, এইভাবে না খাইয়ে পানির কষ্ট দিচ্ছিস কেন?’

‘ হুশশ্ চুপ। আমি কি তোদের মতো পশু নাকি যে কারোর প্রাণ নেবো,যেই কারণে তোরা আমাকে শেষ করতে চেয়েছিলি আগে সে কারণ টা বল তাহলেই আমি তোদের কে ছেড়ে দেবো।’

‘ লোভ দেখাচ্ছিস আমায়?’

সাকিব পানির বোতল টা খুলে একটু একটু করে পানি ফেলতে ফেলতে হাসলো। অনেক কষ্টে নিজের রাগটা কে সামাল দিতে হচ্ছে, তার উপর এই ছেলে টা ওকে রাগিয়েই চলেছে। ইচ্ছে করছে ওকে……….

চলবে…………..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here