তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায় পর্ব ২৫+২৬

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৫
.
.অন্ধকার আলো আবছাওয়া রুমের মধ্যে থেকে বিকট বিকট চিৎকার ভেসে আসছে। আর তার জন্য দম আটকে আসছে শরীরে বিন্দু বিন্দু ঘামে ফুটে ওঠে। এমন ভয়ঙ্কর শব্দের জন্য জান পাখি খাঁচা ছেড়ে পালানোর উপায় হয়েছে। রুমের বাইরে দাঁড়ানো গার্ড গুলো ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে আছে। ভিতরে আওয়াজ কানে আসতে তারা কেঁপে কেঁপে উঠছে।
.
. রুমের মধ্যে একটা বাল্ব জ্বলছে। যার জন্য একটা গা ছমছমে ভাব হয়ে আছে। রুমের মধ্যে আসতে আসতে পরিষ্কার হতে শুরু করেছে। মাঝের একটা ছোট্ট মত বক্স রাখা আছে। ঠিক বক্স নয় দেখতে ছোটো খাটো চৌবাচ্ছা টাইপ। ওর মধ্যে থেকে ধোঁয়া উঠছে। ভালো করে দেখলে বোঝা যাচ্ছে গরম পানি ফুটানো ওর মধ্যে। পাশের বড় টেবিলে পিছমোড়া করে দুজন বাধা অবস্থা পড়ে আছে। পিঠের ওপর পুরো কালশিটে দাগ বসে জায়গা জায়গা ফেটে গিয়ে রক্ত বেরোচ্ছে। তার ওপর লবণ ও চিলি পাউডার ছড়ানো হচ্ছে। সাঁঝ হাতে একটা গ্লাভস পরে দু জনের পিঠে ভালো করে মেল্ট করতে থাকে আর তার সাথে গগন বিদারি চিৎকার ভোরে যায় রুমের মধ্যে।
.
. সাঁঝ । চোখ মুখ দেখে এখন কোনো মানুষ বলে মনে হচ্ছে না। চোখে মুখে ফুটে আছে হিংস্র ক্রূরতা জান লেবা চাহনি। মনে হচ্ছে চোখ দিয়ে গিলে খাবে। চোখ পুরো লাল হয়ে গেছে মনে হচ্ছে এখুনি রক্ত গড়িয়ে পড়বে। কপালের রগ গুলো ফুটে আছে। এই রূপ দেখলে যে কেউ ভয় পেয়ে যাবে অন্তরাত্মা কেঁপে উঠবে। চোখে মুখে ফুটে আছে এখন হিংস্র জানোয়ার এর মত জান লেবা দৃষ্টি।
.
. পাশের রাখা ফুটোন্ত গরম জলে প্রথমে একজন কে ফেলে দেয়। সাথে চিৎকার ভেসে আসে। সাঁঝ যেনো এক পৈশাচিক আনন্দ পায় এই অবস্থায় দেখে। গরম পানিতে ফেলার পর দেখতে আরো বীভৎস হয়ে গেছে। দেখলেই ভয় পেয়ে যাবে। পরের জন কে একই ভাবে গরম পানিতে ফেলে দেয়। এইবার সাঁঝ ওদের দুজন কে টর্চার টেবিলে ফেলে দিয়ে সারা শরীরে ছুরি দিয়ে খেলতে থাকে। এবার যেনো সাঁঝ একটু শান্তি পেলো। ঘর কাঁপিয়ে হেসে যাচ্ছে সাঁঝ। আর তারপরে মুখটা করুন বানিয়ে ফেলে তার চোখের সামনে সকালের আগুনের মধ্যে আটকে পড়া বেলার দৃশ্য মাথায় চলে আসে।
.
–“আমার জানের দিকে যে যে হাত বাড়াবে তাদের অবস্থা ও ঠিক এইরকম হবে এর থেকে ও কঠিন শাস্তি। যা কেউ কল্পনা ও করতে পারবে না এই সাঁঝ এর বেলার দিকে হাত বাড়িয়েছে ফল তো ভোগ করতে হবে। এখন আসতে আসতে মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করতে থাক। তোদের জন্য আজ আমার বেলা হসপিটাল এর বিছানায় পড়ে আছে। তাই তোদের কে আমি এই নরক যন্ত্রণা দিলাম একটি একটু করে দগ্ধ রক্ত শুন্য হয়ে মরতে থাক। দাঁতে দাঁত চেপে হুঙ্কার দিয়ে বলে বেরিয়ে সাঁঝ।

—————–

হসপিটাল রুমে একদম শান্ত সৃষ্ট পরিবেশ বিরাজ করছে। আলো আধারি হয়ে আছে। কানে কোনো মেশিনের আওয়াজ বেজে যাচ্ছে ঠিক ঘড়ির কাঁটার মত। বেলা চোখ মুখ কুঁচকে ফেলে মাথা টা ও বড্ড ভারী ভারী মনে হয়। আসতে আসতে পিট পিট করে চোখ খুলে তাকায় ।চারিদিকে তাকিয়ে নিজেকে হসপিটাল রুমের বেডে আবিস্কার করে চারিদিকে ওষুধ ওষুধ গন্ধ মাথার দুপাশে মেশিন এর আওয়াজ। হাত পা ব্যাথা নাড়াতে পারছেনা । চোখ ঘুরিয়ে দেখে দূরে কাঁচের দেয়ালের কাছে দাঁড়িয়ে সাঁঝ বাইরের দৃশ্য দেখছে। বেলা আসতে আসতে উঠে বসতে কিন্তু পারে না।
.
. এদিকে সাঁঝ হালকা আওয়াজ পেতে মাথা ঘুরিয়ে দেখে বেলা জেগে গেছে। উঠে বসার চেষ্টা করছে। সাঁঝ জলদি জলদি গিয়ে বেলার পাশে বসে পড়ে। খুব সাবধানে দু হাত বুকে টেনে নেয় বেলা কে। বেলা হাত উঠাতে চেয়ে ও পারে না যন্ত্রণায় ছিড়ে যাচ্ছে হাত দুটো। সাঁঝ এর বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে পড়ে আছে বেলা।
.
–“সাঁ…ঝ ।কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে বেলা। কান্না গুলো দলা পাকিয়ে গলার কাছে আটকে আছে।
.
–” হূসসসস । কোনো কথা নয় সোনা। দেখো আমি আছি তোমার সাথে। সব কিছু ঠিক আছে। সাঁঝ বেলা কে জড়িয়ে রেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে ওঠে।
.
. বেলা সাঁঝ এর বুকের মধ্যে মুখ গুঁজে ফুফিয়ে কান্না করতে থাকে। হাত দুটো উচু করতে পারছে না। পা ও নাড়াতে পারছে না। বেলা মুখ টা আরো একটু এগিয়ে নিয়ে সাঁঝ এর বুকে মুখ ঘষতে থাকে। বেলার চোখের পানিতে সাঁঝ এর শার্ট ভিজে যাচ্ছে। বেলা চেয়েও সাঁঝ কে জড়িয়ে ধরতে পারছে না। বেলা যে সাঁঝ কে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে রাখতে চায়। এই বুকের মাঝে যে সে নিজেকে খুবই নিরাপদ মনে করে।
.
–“সাঁঝ আমি জড়িয়ে ধরতে পারছি না তোমাকে। বেলা কান্না করতে করতে বলে ওঠে।
.
. এই সময়ে ও বেলার এমন কথা শুনে সাঁঝ মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বেলার বাচ্চা বাচ্চা ভাবের কথা শুনে। সাঁঝ বেলা কে আরো শক্ত করে নিজের বুকের মাঝে নিয়ে নেয়। মনে মনে বলে ওঠে পাগলি একটা।
.
. কিছুক্ষণ পর সাঁঝ বেলা কে ধরে আসতে আসতে শুয়ে দেয়। পাশে থাকা স্যুপ এর বোল টা তুলে নেয়। আসতে আসতে করে বেলা কে খাইয়ে দিতে থাকে সাঁঝ। তার মুখে এখন আর যন্ত্রণার ছাপ নেই ফুটে আছে এক টুকরো প্রশান্তির ছায়া।
.
. বেলা টুকুর টুকুর করে চেয়ে চেয়ে দেখতে থাকে সাঁঝ কে খেতে খেতে । বেলা দেখতে পায় সাঁঝ এর অগোছালো চুল বসা চোখ মুখ। চোখের তলায় কালির ছাপ মুখ হয়ে শুকনো। মুখে এক টুকরো হাসি থাকলেও তার সাথে যে রাগ ও মিশে আছে সেটা স্পষ্ট ধরতে পারছে বেলা। চুপ চাপ খেতে খেতে এক দৃষ্টিতে চেয়ে চেয়ে দেখে বেলা সাঁঝ এর দিকে । খাওয়া শেষ হতে মুখ মুছে দিয়ে সাঁঝ উঠে দাঁড়াতে নিলে বেলা অনেক কষ্টে হাতের আঙুল গুলো দিয়ে সাঁঝ এর shirt টেনে ধরে ।সাঁঝ কোনো কথা না বলে বসে পড়ে। এবার মুখে ফুটে আছে অসহায় আর রাগের ছাপ। সাঁঝ অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে রেখেছে। বেলা তার আঙুল নিয়ে সাঁঝ এর হাতের আঙুল এর মাঝে দিয়ে আলতো করে চাপ দেয়। সাঁঝ এবার সামনে ঘুরে। বেলার মুখের দিকে দেখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। সাঁঝ বেলার ওপর ঝুঁকে পড়ে দুপাশে হাত রেখে চোখ চোখ দিয়ে বলে ওঠে।
.
–“খুব কি দরকার ছিল হ্যাঁ? কি হতো কালকে যদি আমি ঠিক সময়ে না পৌঁছে যেতাম। ভাবলে আমার হাত পা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে বলেছিলাম তো আমি যেতে হবে না আর এম এর সাথে কোনো কন্ট্রাক্টড করতে হবে না কিন্তু তুমি আমার কথা শুনলে না। কি হতো তুমি একবার ভাবতে পারছ। আমার কথা তো একবারও ভাবলে না। আমি কি করতাম। বল চুপ কেনো উত্তর দাও। সাঁঝ অসহায় হয়ে বলে ওঠে তার গলায় ফুটে আছে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ।
.
.সাঁঝ বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয়। বেলা অনুভব করে তার গলায় তরল কিছু পড়ছে। বুঝতে পারে সাঁঝ কাঁদছে।
.
–“তুমি জানো কাল থেকে আমার অবস্থা কি হয়েছিলো। তোমার চিন্তায় আমি পাগল হয়ে যাচ্ছিলাম। দম আটকে আসছিল নিশ্বাস নিতে পারছিলাম না। মনে হচ্ছিলো এই বোধ হয় সব শেষ হয়ে গেলো। প্রথমে তোমার জ্ঞান ফিরছিল না। আর তারপরেই তুমি জ্ঞান ফিরে পাগলামি করেছিলে ভয় পাচ্ছিলে তোমাকে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পড়িয়ে রাখা হয়েছিল। সাঁঝ বেলার গলায় মুখ ডুবিয়ে রেখে বলে যায়।
.
. এদিকে বেলার অবস্থা ও খারাপ একে সাঁঝ গরম নিশ্বাস গলায় পড়ছে আর তার সাথে সাঁঝ কথা বলার সাথে সাথে তার ঠোঁট তার গলায় ছুয়ে যাচ্ছে। আর সাঁঝ এর বলা প্রতিটা কথা যেনো ছুরির মত বিধছে বেলার বুকে।
.
–“আমি বাড়ি যাব। আমি আর এখানে থাকবো না। বেলা বাচ্চাদের মত করে বলে ওঠে।
.
–” তুমি এই ভাবে আমাকে জড়িয়ে আছো আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরতে পারছিনা। বেলা এবার কাঁদো কাঁদো মুখে বলে উঠছে।
.
–“কি বললে আরো একবার বল। তুমি আমাকে তুমি করে বলেছ। সাঁঝ বেলার গলায় থেকে মুখ তুলে বেলার ঠোঁটে আলতো চুমু খেয়ে বলে ওঠে।
.
. এদিকে বেলার চোখ বড় বড় হয়ে গেছে সত্যি তো সে সাঁঝ কে তুমি করে ডেকে ফেলেছে। বেলার মুখে লজ্জা ফুটে উঠেছে।
.
–” ক..ই না…তো । তুতলিয়ে বলে অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।
.
–” এই যে একদম আর কথা ঘুরাবে না। তুমিতেই থাকবে। যদি আবারো আপনি হয় না তাহলে না খুব মারব ।সাঁঝ বেলার মুখ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নিয়ে নাকে কামড় দিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আর তোমার হাত পা ঠিক হয়ে যাবে চিন্তা করতে হবে না। এখন একটু ব্যাথা আছে তাই একদম নাড়াচাড়া করবে না। আর আমি তো আছি তোমাকে জড়িয়ে রাখার জন্য। চোখ টিপে বলে ওঠে সাঁঝ।
.
. বেলা কোনো কথা না লজ্জা পেয়ে চোখ নিচে নামিয়ে নেয়। মুখ লাল হয়ে আছে। কোনা চোখে তাকিয়ে দেখে সাঁঝ তার দিকেই তাকিয়ে আছে মুখে ফুটে আছে দুষ্টামি ভরা হাসি।
.
–” তোমার মুখে হাসি টা দেখার জন্য তো এতো চেষ্টা। আমি চাইনি তুমি আবারো ওই দৃশ্য মনে করো। তোমাকে আমি সব সময়ে এই ভাবে আমার ভালোবাসা দিয়ে আগলে রাখব। তোমাকে কোনো বিপদের ছায়া ও লাগাতে দেবো না। সাঁঝ মনে মনে বলে ওঠে।
.
–” বেলা…..।
.
. বাইরে চিৎকার আসতে সাঁঝ সোজা হয়ে বসে। বেলা ধরে হেলান দিয়ে বসিয়ে দেয়। সাথে সাথে সব গুলো ঢুকে পড়ে। সবার হাতে কিছু না কিছু আছে বেলার জন্য। সারা এসে খুব সাবধানে বেলা কে জড়িয়ে বেলার গালে চুমু দিয়ে হাতে থাকা হলুদ গোলাপ এর বুকে টা ধরিয়ে দেয়।
বাকি গুলোর একই অবস্থা সব গুলোর হাতে ফুল রেড রোজ, অকির্ড, টিউলিপ, আর নিশান ওম বেদ বেলার সামনে এসে বড় একটা চকলেট বক্স এগিয়ে দেয়।
.
. বেলার আনন্দ দেখার মত এতক্ষণে তার কষ্ট সব ভুলে গেছে তার সামনে দাঁড়ানো পাগল গুলো কে দেখে। সব কজন মিলে একসাথে গ্রুপ হাগ করে। আর বেলা ও মেতে উঠেছে সবার সাথে। এদিকে বেলার পাশে দাঁড়িয়ে সাঁঝ শুধু বেলা কে দেখে যাচ্ছে । বেলার মুখে ফুটে আছে অনাবিল হাসি। শুধু দাগ হিসাবে মাথা আর হাত পা এর ব্যান্ডেজ গুলোই ফুটে আছে। ওদের কে ওদের মত ছেড়ে সাঁঝ বেরিয়ে যায়।
.
. কিছুক্ষণ পর ডক্টর এর সাথে কথা ডিসচার্জ করিয়ে নেয়। রুমে এসে সবার সামনে থেকে বেলা কে কোলে তুলে নেয়। যেহেতু বেলা হাঁটতে পারবে তাই। সাঁঝ বেলা কে হুইল চেয়ার বসাতে চাইনি এতে বেলার ঘা এর আরো বেশি করে আঘাত করা হবে। বেলা কোনো কথা না সাঁঝ বুকের সাথে মিশে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তার হাত দুটো তার কোলে রাখা আছে। বেলা চেয়ে ও সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে ধরতে পারছে না।
.
–“চিন্তা করো না। এরপরেই জড়িয়ে থেকো সবসময় আমি তো তোমার নাকি। আমি তোমার আছি তাই যখন ইচ্ছা জড়িয়ে রেখো কেমন। সাঁঝ বাঁকা হেসে বলে ওঠে।
.
. বেলা কোনো কথা না বলে সাঁঝ এর বুকের ওপর কামড় বসিয়ে দেয়। আর এদিকে সাঁঝ মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। চারদিকে তাদের কে দেখতে থাকে সবাই। সবাই এর চোখ এখন তাদের দিকে। আর মেয়ে গুলো তো হা করে গিলে যাচ্ছে। এদিকে তাদের কোনো খেয়াল নেই এদিকে তারা তাদের মত আছে দুজনের মধ্যে ডুবে আছে।
.
.#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৬
…বেলা কে বাড়ি আনা হয়েছে। সারাদিন সে বসে বসে কাটিয়ে দিচ্ছে। পায়ে হাঁটতে পারছে না। অনেক খানি পুড়ে যাওয়ার ফলে । পায়ে আর হাতে এখনও ব্যান্ডেজ করা আছে। তার যাবতীয় কাজ সাঁঝ করে দেয়। এক প্রকার ধরতে গেলে এখন দুই বছরের বাচ্চা সমান কোনো কাজ নিজে হাতে করতে হচ্ছে না। সব কিছুই সাঁঝ করে দেয়। তাকে খাওয়ানো থেকে গোসল পর্যন্ত। বাচ্চাদের মত তাকে কোলে নিয়ে সারা বাড়ি ঘুরে বেড়ায়। যাতে সে মন খারাপ না করে। অফিসে বা কোনো মিটিং কোনো কাজে যায় না বাড়িতে আছে বেলার কাছে। আর যতো কাজ ওদিকে সব আকাশ আর সারিফ হ্যান্ডেল করছে। বেলা তো মাঝে মাঝে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে সাঁঝ এর অতিরিক্ত কেয়ার দেখে। সব কিছু টাইম টু টাইম। একটু ও নড়চড় হবে না। আর ওদিকে ও রয়েছে তার সাঙ্গ পাঙ্গরা। তাঁরাও রয়েছে সব সময়ে তাকে নিয়ে মেতে থাকে। সব কষ্ট ভুলিয়ে দেয়।
.
. বেলা নিচে ড্রইং রুমে বসে বসে টিভি দেখছে। সাঁঝ তাকে কোলে তুলে এনে বসিয়ে দিয়েছে। কি আর করার সে চুপচাপ বসে বসে টিভি এর দিকে চোখ দিয়ে আছে। কিন্তু মনটা পড়ে আছে কিচেনে দিকে। সাঁঝ কিচেনে আছে। সেই আজকে খাবারের দায়িত্ব নিয়েছে। বেলা ও বলেছিলো ওখানে নিয়ে যেতে তাকে। কিন্তু না তাকে নিয়ে যায় নি। যখন থেকে শুনেছে তার আগুনে ফোবিয়া আছে তারপর থেকেই কিচেন এর নাম ও মুখে আনতে বারণ করেছে। আর তাছাড়া এই অবস্থায় গরমে ওকে ওখানে নেবে না। বেলা বলেছিল সে তাকে কোম্পানী দেবে। তার প্রতি উত্তরে বলে ওঠে।
.
–“তোমাকে কোম্পানী দিতে হবে না। দেখো আমি খুব কষ্টে নিজেকে সামলে রেখেছি এর তার ওপরে যদি তুমি আমার চোখের সামনে থাকো তখন আমি আর রান্না করাতে মন দিতে পারবো না। তখন তোমার মাঝে ডুব দেয়া যায় কি ভাবে সেদিকে মন দেবো।
.
. সাঁঝ এর এই কথার জন্য বেলা ও আর কোনও কথা বলেনি জানে এই লোক হাই লেভেল এর অসভ্য। তাই এখানে বসে থাকা ভালো। এই সব ভাবছে আর টিভি দিকে মনোযোগ দেয়ার চেষ্টা করছে।
.
.হটাৎ করে পাশে ঝুপ করে এসে বসে পড়ে সাঁঝ। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে কিছু চুল কপালে পড়ে আছে যেগুলো ওই ঘামে এর সাথে লেপ্টে আছে। গাল দুটো আর নাক পুরো লাল লাল হয়ে আছে পুরো স্ট্রবেরী। বেলা মাঝে মাঝে বোঝে না। এই লোক এত সুন্দর কি করে হয়। আর মেয়েদের থেকেও বেশি বেশি রূপ যেনো গলে গলে পড়ছে। বেলা এক দৃষ্টিতে সাঁঝ এর দিকে তাকিয়ে আছে । বুকের কাছে টা পুরো দৃশ্য মান হয়ে আছে। বুকের পেশী গুলো আর কলার বন পুরো স্পষ্ট হয়ে আছে। আগুনের সামনে থাকার জন্য পুরোই ঘেমে গেছে। শার্ট টা ও ভিজে চুপ চুপে হয়ে আছে। শার্ট এর কিছু বোতাম খোলা নিচের দিকে থেকে মনে দুটো কি তিনটে লাগানো। না হলে পুরো হওয়া হওয়া করছে। এর জন্য শরীরের প্রতিটা ভাঁজ বোঝা যাচ্ছে। সিক্স প্যাক অ্যাবস গুলো যেনো চকচক করছে ঘামে ভিজে গিয়ে। বেলা সেদিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। শরীরের মধ্যে হাল্কা শিহরন বয়ে যায়।
.
. সাঁঝ বেলার পাশে বসে বেলার কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়। বেলার দৃষ্টি তার চোখে পড়েছে। সে এসে পাশে বসতেই বেলা তার দিকে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল। তাই সে বেলার দিকে সরে গিয়ে বেলার কাঁধে মুখ গুঁজে দেয়। বেলা সাঁঝ এর এমন কাণ্ডে হকচকিয়ে যায়। সাঁঝ এর স্পর্শে শরীরে ঠান্ডা স্রোত বয়ে যায়।চোখ মুখ চেপে বন্ধ করে নেয় বেলা। হাত দুটো সাঁঝ এর হাতে চেপে খামছি দিয়ে রেখেছে। সে নড়তে ও পারছে না। সাঁঝ দু হাত বেলার কোমরের দু দিকে দিয়ে নিজের কাছে টেনে নিয়েছে। আরো গভীর ভাবে বেলার কাঁধে মুখ ডুবিয়ে দেয়। বেলার শার্ট কাঁধের থেকে সরিয়ে দিয়ে মেতে ওঠে। আসতে আসতে ভিজে যাচ্ছে বেলার কাঁধ সাঁঝ এর চুমু খাওয়ার অত্যাচার এর জন্য। বেলা না পারছে বাধা দিতে আর না পারছে নড়তে। সে এখন না পারে হাঁটতে ঠিক করে আর না পারে হাত দিয়ে কিছু করতে। পুড়ে যাওয়ার জন্য হাত পায়ে অবস্থা খারাপ। তাই এখন অসহায় হয়ে বসে আছে। সাঁঝ এর এই লাভ টর্চার গুলো মেনে নিচ্ছে। যদিও এতে তার এমনিতেও বাঁধা দেয়ার কোনো ইচ্ছা নেই। কিন্তু সাঁঝ এর স্পর্শে তার দম আটকে আশার জোগাড় হয়েছে নিজের অনুভূতি গুলো দমিয়ে রাখতে পারছে না।
.
.
–“বেলা ।বেলা ।
.
. বাইরে থেকে সব পাজি গুলো আসছে। বেলা বুঝতে পেরে সাঁঝ কে দূরে সরানোর চেষ্টা করছে কিন্তু পারছে না। সাঁঝ আরো বেশি করে আকড়ে ধরে তাকে। ছাড়াতে গেলে আরো বেশি করে মুখ ডুবিয়ে দিচ্ছে।
.
–” আরে কি করছো ছাড়ো আমাকে । ওরা সবাই আসছে। বেলা নিজেকে ছাড়াতে ছাড়াতে বলে ওঠে।
.
–” উম। আই ডোন্ট কেয়ার। সাঁঝ বেলার গলায় মুখ রেখে বলে ওঠে।
.
–“আরে ধুর বাবা ছাড়তো। সুযোগ পেলেই চম্বুক এর মত চিপকে যায় শুধু। বেলা বিরক্তি নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” বেলা । সব ঢুকতে ঢুকতে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ বেলার গলায় কয়েকটা কামড় বসিয়ে ছেড়ে দেয়। নিজেকে সংযত করে নেয়। বেলা কে ঠিক ঠাক করে বসিয়ে রেখে উঠে চলে যায়। সাঁঝ জানে এই অবস্থায় তাঁকে কেউ এই ভাবে কেউ দেখুক সেটা বেলা চায় না। আর সাঁঝ নিজেও পছন্দ করে না শরীর প্রদর্শনীতে।
.
.
–“বেলা মেরি জান । চিৎকার করে বলে এসে জড়িয়ে ধরে শান্তা।
.
. পিছে পিছে বাকিরা ও আসছে। সারা ওম বেদ নিশান রুহি জাকিয়া সারিফ আলিয়া আছে। সবাই মিলে বাইরে থেকে চর্কি দিয়ে আসছে।
.
–” মেরি জান এটা তোর জন্য। শান্তা বেলা কে জড়িয়ে গালে একটা চুমু দিয়ে হাতের সামনে ছোলে ভাটরে এনে রাখে।
.
. এদিকে বেলার চোখ চকচক করে উঠছে। হাত দুটো কষ্ট করে উঠিয়ে ধরতে নিলেই রাম বকা পড়ে একটা।
.
–“ওটা একদম ধরবে না তুমি। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে সাঁঝ এক চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে।
.
. সাথে সাথে বেলার মুখ টা কালো হয়ে যায়। আর সাথে বাকিরা ও অবাক হয়ে যায়। বেলা তো পারেনা উঠে পালায় এই ছোলে ভাটরে।
.
–” এই সব বাইরের খাবার খেতে হবে না। একে শরীর খারাপ তার ওপরে আবার বাইরের খাবার একদম নয়। সাঁঝ বেলার পাশে বসে বলে ওঠে।
.
. বেলা একবার সাঁঝ এর দিকে অগ্নি চোখে তাকায়। এই জন্য তাকে খেতে দিতে চায় না। বাইরের খাবার বলে। বেলা রেগে গিয়ে হাত উঠিয়ে শান্তার হাত থেকে খাবার টা নিয়ে খেতে থাকে। সাঁঝ এর দিকে চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। এদিকে হঠাৎ করে বেলার এমন করাতে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আর সাঁঝ তো হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে বেলার দিকে। সাঁঝ হাত বাড়িয়ে নিয়ে নিতে গেলে বেলা দূরে সরিয়ে নেয়।এদিকে প্রিয় খাবার আর তারপরও ঝাল ঝাল খাবার এর জন্য চোখ ছলছল করছে তারপরও বেলা খেয়ে যাচ্ছে। চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে। আর বাকিরা সব দেখছে আর মিট মিট করে হাসছে ।কারণ তারা জানে বেলা এমনই ঝাল ঝাল খাবার খাবে আর তার পর চোখ মুখ লাল করে চোখ দিয়ে পানি ফেলবে। আর তারপরেই পাগলামি শুরু হবে।
.
. এদিকে সাঁঝ বেলার এই অবস্থা দেখে আর সহ্য করতে না পেরে রাগী চোখে এক টান মেরে বেলার থেকে খাবার এর প্লেট টা কেড়ে নেয়। বেলা এদিকে হু হা করে যাচ্ছে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে।
.
–“আরো খাও। এখন হু হা করছ কেনো? হ্যাঁ? তখন তো বারণ করেছিলাম নাকি। সাঁঝ চিৎকার করে বলে ওঠে।
.
–” উফ আমার ঝাল লেগেছেরে। তুই চুপ কর এখন। ঝাল। ঝাল। আমি আইসক্রিম খাব। আর এই হূলোবেড়ালটা এদিকে বকে যাচ্ছে আমাকে। বেলা হু হা করতে করতে হাত পা নাড়া দিতে থাকে।
.
. আর এদিকে সবাই হাসতে শুরু করেছে। বেলার পাগলামি দেখে। আর সাঁঝ তো বেলার কথা শুনে পাগল হব হব ভাব। বেলা আর না পেরে সাঁঝ কে এক হাত দিয়ে টেনে কামড় দিতে শুরু করে। কাঁধে মুখ গুঁজে কামড় দিয়ে নিজের ঝাল মেটাতে আছে। বেলার এই দৃশ্য দেখে বাকি গুলো মুখ লুকিয়ে হাসতে হাসতে থাকে। সাঁঝ বাকি গুলোর দিকে তাকিয়ে ইশারা করতে সব গুলো পিছনে মুড়ে যায়।
.
. সাঁঝ বেলার মুখ নিজের কাঁধের থেকে তুলে নিয়ে নিজের ঠোঁট দ্বারা বেলার ঠোঁট আটকে দেয়। আসতে আসতে শুষে নিতে থাকে সমস্ত ঝাল। বেলা ও ঝাল এর জন্য আরো বেশি করে সাঁঝ কে আকড়ে ধরে সাঁঝ এর ঠোঁটে ওপরে সব ঝাল মেটাতে থাকে। এখন তার মাথায় ও নেই যে তাদের আশে পাশে কেউ আছে। বেলা সাঁঝ এর ঠোঁটের মধ্যে নিজের সব ঝাল মিটিয়ে নিয়ে সরে আসতে নিলেই সাঁঝ বেলার ঠোঁটে জোরে একটা কামড় বসিয়ে দেয়। বেলা সাঁঝ এর বুকে খামচি দিয়ে সরে এসে বড় বড় করে শ্বাস নিতে থাকে।
.
–“বলছিলাম কি বেলা জিজ তোমাদের হল ঝাল মিষ্টি এর আদান প্রদান। রুহি দুষ্টু হেসে বলে ওঠে।
.
–” একদম ।সাঁঝ বাঁকা হেসে নিজের ঠোঁট মুছে বলে ওঠে।
.
. আর এদিকে বেলার চোখ গুলো বড় বড় হয়ে গেছে। সে ভুলেই গেছিল যে শয়তান গুলো এখানে হাজির ছিল। এখন তার মনে সাঁঝ কে ইচ্ছা মত কামড় আর খামচি দিতে। সাঁঝ বেলার দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপে দেয়। মুখে রয়েছে বাঁকা হাসি।
.
–“বলছি যে বেলা তোর ঝাল কমেছে তো নাকি? রুহি চোখে মুখে দুষ্টুমি নিয়ে বলে ওঠে।
.
–” আরে রু কি যে বলিস না আমাদের বেলা এমন মিষ্টি খেয়েছে যে ঝাল আপনাআপনি পালিয়ে গেছে এখন শুধু মিষ্টি মিষ্টি। শান্তা হেসে বলে ওঠে।
.
–“টুসুন । চোখ গরম করে বলে ওঠে বেলা।
.
–” আরে মিষ্টি তোমার গাল গুলো পুরো লাল লাল হয়ে গেছে দেখো আবার কেউ স্ট্রবেরী ভেবে কামড় না বসিয়ে দেয়। জাকিয়া হেসে বলে ওঠে।
.
–“আচ্ছা তাই না। এখন আমাকে নিয়ে পড়েছ। বলব নাকি তোমাদের কেস গুলো হুম হুম। বেলা চোখ পাকিয়ে বলে ওঠে।
.
–“আরে না না আমরা তো কিছুই বলছি না। রুহি হাসার চেষ্টা করে বলে ওঠে।
.
. এদিকে সাঁঝ এতক্ষণ বসে বসে মজা দেখছিল। আর দেখছিল বেলার লজ্জা পাওয়া মুখ। গাল দুটো পুরোই লাল লাল হয়ে গিয়েছিলো। নাকে জমে ছিল বিন্দু বিন্দু ঘাম। যা দেখে সাঁঝ এর দম আটকে আসার উপায় হয়েছিল। শরীরে রক্ত চলাচল দ্রুত গতিতে ছুটছে। সবার চোখের আড়ালে বেলার দিকে চেপে বসে বেলার কোমর জড়িয়ে নেয়। বেলার কোমরে হাত চেপে রেখে নিজেকে কন্ট্রোল করার চেষ্টা করতে থাকে।
.
. আর এদিকে সব কোটা কোনা চোখে একে অপরের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। আর ছেলে গুলো তো দুষ্টুমি চোখে তাকাচ্ছে। আর এদিকে সাঁঝ ও বেলার সাথে দুষ্টুমিতে মেতে আছে সবার চোখের আড়ালে। মাঝে মাঝে বাঁকা চোখে তাকাচ্ছে। আর বেলা আগুন চোখ নিয়ে তাকিয়ে আছে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
.চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊
.
. 💝💝💝
.
. চলবে….
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here