তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমা র পর্ব ২৩+২৪

#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৩

–“বেলা । সুইটহার্ট । সাঁঝ মৃদু স্বরে ডেকে যাচ্ছে বেলা কে।
.
–” উ..মম। বেলা ঘুম ঘুম গলায় বিরক্তি ভাবে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর বুকের ওপর ঘুমিয়ে আছে বেলা। দু হাতে সাঁঝ কে জড়িয়ে রেখে আছে। সকাল বেলায় রৌদের আলো পড়তে সাঁঝ এর ঘুম ভেঙে যায়। শুধু সকাল বলে নয় তার আরো একটা কারণে ঘুম ভেঙ্গে গেছে। সে চিন্তিত হয়ে আছে। তাই বেলা কে টেনে তোলার চেষ্টা করছে কিন্তু সেতো ঘুমিয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ এবার বেলা কে জড়িয়ে নিয়ে উঠে হেলান দিয়ে বসে। বেলা কে জড়িয়ে রেখে সোজা করে বসায়। মুখ টা উচু করে তুলে ধরে। মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরিয়ে দিয়ে নাকে বাইট বসিয়ে দেয় একটা।
.
–“উমম । জিন্দেগি কি হচ্ছে এটা সকাল সকাল কামড় কেনো। বেলা মৃদু চিৎকার করে বলে ওঠে পিট পিট করে তাকিয়ে ওঠে।
.
–” আমার কিছু কথা বলার আছে তোমাকে। সাঁঝ একদম সিরিয়াস হয়ে বলে ওঠে।
.
–“ওকে । বেলা মুখ কাচুমাচু করে বলে ওঠে।
.
–” জান বলছি যে। তোমার এই আজকের প্রোগ্রাম টা ক্যানসেল করলে হয় না। না মানে বলতে চাইছি যে সামনে তোমার এক্সাম যদিও মিউজিক নিয়ে তাই ওদিকে এখন কন্সেনট্রেট করলে ভালো হয় না। আর তাছাড়া আমাদের কোম্পানী তো রয়েছে তাহলে বাইরে কেনো। সাঁঝ বোঝানোর মত করে বলে ওঠে।
.
–” সাঁঝ ওটা তোমার কোম্পানী। আমাদের নয়। আর তাছাড়া আমাদের ট্রাস্ট বোর্ড চেঞ্জ হয়েছে সেখানে আর.এম পুরোটাই ওনার তাই আমাদের সাথে রেকর্ড করতে চাইছেন। এর থেকেও তো আমরা আমাদের লক্ষে পৌঁছাবো আর তাছাড়া এগুলো আমাদের এক্সাম এর সাথে সিলেক্ট হবে। বেলা ও কৈফিয়েত দেয়ার মত করে বলে ওঠে।
.
–“আচ্ছা আমি তো তোমার নাকি। তাহলে এস. আর কোম্পানী তোমার নয় কেনো। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ এর বলা আমি তো তোমার নাকি কথায় বেলা অনেক খুশি হয়েছে। চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে যায়। কিন্তু সাঁঝ এর মুখে কিছু একটা দুশ্চিন্তা ফুটে আছে। বেলা বুঝতে পারে সমস্যা টা কি নিয়ে।
.
–” কিছু কি হয়েছে? আর আপনার আর. এম কে নিয়ে কি সমস্যা? বেলা দু হাত দিয়ে সাঁঝ এর গলা জড়িয়ে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ কিছুক্ষণ চুপ করে থাকে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে। বেলা যে তার মনের দুশ্চিন্তা ধরতে পেরেছে সেটা সাঁঝ বুঝতে পারে।
.
–” আর এম আমার বিজনেস রাইভ্যাল। রনি মেহতা। হটাৎ করে তোমাদের সাথে প্রোগ্রাম করতে চাইছে এতদিন তো ওর এইসব নিয়ে কোনো ইন্টারেস্ট ছিল না। নিশ্চয়ই কোনো প্ল্যান আছে রনির। আমার সাথে রনি ও ব্যাঙ্গালোর লিডার শিপ এর জন্য ফাইট করে ছিল। আর এখন তোমার ইউনিভার্সিটি তে। সেই জন্য বলছি। সাঁঝ চিন্তিত মুখে বলে ওঠে।
.
–“আচ্ছা ঠিক আছে আমি আর. এম থেকে দূরে থাকবো। আর আমার সাথে ওম বেদ রুহি নিশান ও তো আছে। ওরা ও তো আশা করে আছে এই রেকর্ড এর জন্য। বেলা সাঁঝ এর দুশ্চিন্তা কম করার জন্য বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ কোনো কথা না বলে বেলা কে নিজের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে রেখেছে। বেলা যতো বুঝাক কেনো তাকে সে তো জানে নিশ্চিত কোনো প্ল্যান বানিয়ে রেখেছে এই আর. এম।

—————-

–“দেখো তুমি সাবধানে থাকবে….
.
–” আর. এম থেকে দূরে থাকবো। মনে আছে আমার। তুমি বাড়ি থেকে গাড়িতে আসতে আসতে এতবার বলে ফেলেছ যে আমার মুখস্ত হয়ে গেছে। বেলা সাঁঝ কে পুরো কথা বলতে না দিয়ে বলে ওঠে।
.
. ইউনিভার্সিটি গেটের সামনে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ভিতরে বসে আছে সাঁঝ বেলার হাত শক্ত করে ধরে।
.
–” আচ্ছা ঠিক আছে তুমি সাবধানে থাকবে। আর আমি এসে তোমাকে নিয়ে যাব। সাঁঝ বেলার কপালে চুমু দিয়ে বলে ওঠে।
.
–” ওকে এবার আমি যেতে পারি। বেলা মাথা নাড়িয়ে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ কোনো কথা না বলে বেলা কে শক্ত করে জড়িয়ে বেলার ঠোঁটে আলতো একটা চুমু দিয়ে ছেড়ে দেয়। বেলা গাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। যতক্ষণ না পর্যন্ত বেলা চোখের আড়াল হয়ে যায় সাঁঝ দাঁড়িয়ে দেখতে থাকে। তার পর সাঁঝ ও বেরিয়ে যায় গাড়ি নিয়ে।

—————-

বেলা বেদ ওম রুহি নিশান স্টেজ দাঁড়িয়ে আছে। ইউনিভার্সিটি অডিটোরিয়ম রুমে এখন ইউনিভার্সিটি প্রিন্সিপাল প্রফেসর স্যার ম্যাম বসে আছে আর গেস্ট সিটে বসে আছে আর এম অর্থাৎ রনি মেহতা। এক সাইটে সারা জাকিয়া টুসুন দাঁড়িয়ে আছে ওরা বেদ ওম নিশান এর সাথে এসেছে। পুরো প্রোগ্রাম কভার করা হবে তাই দূর থেকে ক্যামেরা সেট করা আছে। একজন মুখে মাস্ক মাথায় টুপি আর পুরো ব্ল্যাক গেট আপ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
.
. বেলা বেদ ওম রুহি নিশান নিজেদের পজিশন নিয়ে নেয়। শুরু করে প্রোগ্রাম আজকে সিলেক্ট হলে ওদের রেকর্ডিং চান্স পাবে। বেলা নিজের জন্য আর বাকিদের পারফরম্যান্স খারাপ করতে পারে না তাই পুরো কন্সেনট্রেট করে। গিটার নিয়ে টিউন প্লে করতে থাকে।
.
. 🎶 সাঁস মে তেরি সাঁস মিলি ত
মুঝে সাঁস আয়ি মুঝে সাঁস আয়ি
মুঝে সাঁস আয়ি

সাঁস মে তেরি সাঁস মিলি ত
মুঝে সাঁস আয়ি মুঝে সাঁস আয়ি
মুঝে সাঁস আয়ি 🎶
.
. বেলা চোখ বন্ধ করে গেয়ে ওঠে। গান টা এত টা ফিল দিয়ে গেয়েছে। সব সাঁঝ এর সাথে কাটানো মুহূর্তে গুলো ভাবতে ভাবতে। গানের প্রতি দরদ টা আরো বেশি করে পড়ছে। চোখের সামনে ভেসে ওঠে তার করা পাগলামি গুলো সাঁঝ এর করা পাগলামি গুলো।
.
. 🎶 রুহ নে ছু লি জিসম কি খূশবু
তু জো পাস আয়ি তু জো পাস আয়ি
তু জো পাস আয়ি
.
. বেদ সারা দিকে তাকিয়ে গেয়ে ওঠে। তার চোখের সামনে ভাসছে সারা সাথে প্রথম দেখা। সারা লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসা কোনা চোখে তাকানো। সব কিছুই তার চোখের সামনে স্লাইড করছে এই রোমান্টিক গানের সাথে।
.
. 🎶 সাঁস মে তেরি সাঁস মিলি ত
মুঝে সাঁস আয়ি মুঝে সাঁস আয়ি
মুঝে সাঁস আয়ি🎶
.
. গেস্ট সিটে বসা আর এম অর্থাৎ রনি বেলার দিকে এক কমনীয় মোহনীয় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। বেলা কে পা থেকে মাথা পর্যন্ত স্ক্যান করে যাচ্ছে। ব্ল্যাক জিন্স । ব্লু অফ শোল্ডার টপ। চুল গুলো সাইট পনিটৈইল করা। কপালের ওপর ছোটো ছোটো চুল পড়ে আছে। মুখে চোখ বোলানোর পর ঠোঁটের কাছে থেমে যায় ওয়াইন কালার লিপস্টিক পড়া এতেই বেশ আকর্ষণীয় লাগছে। রনি বেলার ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে নিজের ঠোঁটের ওপর জীব বুলিয়ে নেয়।
.
. 🎶 কাবতাক হোস সামহালে কই
হোস উড়ে তো উড় জানে দো🎶
.
. পাশে থেক ওম গেয়ে ওঠে।
.
. 🎶 দিল কাব সিধি রাহ চালে হে
রাহ মুড়ে তো মুড় জানে দো 🎶
.
. বেলা আবার গেয়ে ওঠে
.
. 🎶 তেরি খেয়াল মে ডুব কে আকসার
আচ্ছি লাগি তানহায়ি
সাঁস মে তেরি সাঁস মিলি ত
মুঝে সাঁস আয়ি মুঝে সাঁস আয়ি
মুঝে সাঁস আয়ি🎶
.
. বৃষ্টির মধ্যে দু হাত ছাড়িয়ে ভিজে যাচ্ছে বেলা। আকাশের দিকে মুখ করে ঘুরছে। হটাৎ পিছন দিকে থেকে বেলা কে জড়িয়ে ধরে কাঁধে মুখ ঘষতে থাকে। আর বেলা ছাড়াতে গেলে বেলা কে ঘুরিয়ে নিজের দিকে করে নেয়। বেলা ঘুরে চোখ খুলে তাকায়। রনি তার দিকে কামনা ভরা চোখে তাকিয়ে আছে এক ঘোর লাগা দৃষ্টি। বেলার মুখ উচু করে ধরে সারা মুখে কিস করতে থাকে রনি। এক হাত দিয়ে পিট আর পেটে স্লাইড করে যাচ্ছে।গলায় থেকে মুখ তুলে আসতে আসতে বেলার ঠোঁটের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে রনি। আর বেলা পিছিয়ে যাচ্ছে।
.
. হটাৎ হাত তালির শব্দে রনির ঘোর কেটে যায়। চোখ ঘুরিয়ে দেখতে থাকে অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে পাশে প্রিন্সিপাল প্রফেসর স্যার ম্যাডামরা বসে আছে। সামনে স্টেজ বেলারা সব দাঁড়িয়ে আছে। ও তার মানে সে এতক্ষণ বেলা কে নিয়ে স্বপ্ন দেখছিল। সে বেলা কে নিয়ে এতক্ষণ স্বপ্নের মধ্যে রোমান্স করছিলো। সেটা বুঝতে পারে রনি। তার আরো আগ্রহ বেড়ে যায়। এবার যেনো রনি আরো বেশি উত্তেজিত হয়ে পড়ে বেলা কে কাছে পাওয়ার জন্য।
.
. এদিকে স্টেজ দাঁড়িয়ে আছে বেলা ওম বেদ নিশান রুহি । বাকিরা সবাই হাততালি দিচ্ছে। সবার মুখে হাসি ফুটে আছে।
.
–“রেনবো ব্র্যান্ড রাইট? তো আমরা কি কন্ট্রাক্টড সাইন করতে পারি। তোমাদের পারফরম্যান্স দেখে আমি মুগ্ধ হয়ে গেছি। রনি হেসে বলে ওঠে।
.
–” থ্যাঙ্কস স্যার সবাই এক সাথে বলে ওঠে।
.
.বেলা শুধু চুপচাপ দেখে যাচ্ছে আর রনি কে পর্যবেক্ষণ করছে। সাঁঝ বলেছিলো এর থেকে দূরে থাকতে কোনো প্ল্যান করে এখানে এসেছে। কিন্তু এত ভালো মানুষের মত কথা বলছে। তার দিকে কোনো স্পেশাল ভাবে দেখেনি বা কথা বলার চেষ্টা ভি করে নি তাহলে। আসলে বেলা যখন গাই ছিল তখন চোখ বন্ধ ছিল পুরো টা সময়ে তাই বেলা জানে না রনি তার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে রোম্যান্স ও করে নিয়েছে মনে মনে। বেলার ফোন বেজে উঠতে বেলা হল থেকে বেরিয়ে পাশের রুমে ঢুকে যায়।
.
. ফোন রিসিভ করতে না করতে ওপারে থেকে সাঁঝ এর উত্তেজিত আওয়াজ শুনতে পায়।
.
–“হ্যালো! তুমি ঠিক আছো তো।
.
–” হ্যাঁ রে বাবা আমি ঠিক আছি। বেলা হেসে বলে ওঠে।
.
–“আমি তোমার বাবা নয়। তোমার বর। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–” হুম হুম জানি তো। বেলা হেসে ফেলে।
.
–“তোমার হয়ে গেছে কি? আমি তাহলে আসছি। তোমাকে নিতে। সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–” ওকে । আমাদের হয়ে গেছে। রাখছি। বলে ফোন কেটে হেসে ফেলে বেলা।
.
. বেলা পিছন ঘুরতে চমকে যায়। বেলার পিছনে রনি দাঁড়িয়ে আছে। মুখে ফুটে আছে বাঁকা হাসি। বেলা পিছনে সরে যেতে গিয়ে পড়ে যেতে নিলে বেলার কোমর আকড়ে ধরে রনি। বেলার কোমরে হাত রেখে নিজের দিকে টেনে আনে বেলা কে। আর বেলা হঠাৎ এমন হওয়ায় পুরো বেকুব বনে গেছে। মুখের ওপর চুলে এসে পড়েছে। রনি এক হাতে বেলার কোমরে রেখে নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। আর এক হাত দিয়ে বেলার মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দেয়। পিছন থেকে তাদের কে দেখে মনে হচ্ছে একে অপরের মধ্যে ডুবে আছে মনে হচ্ছে কিস করছে। দরজার বাইরে থেকে এতক্ষণ এই পুরো ভিডিও টা করছিলো কেউ। এবার সরে যায়।
.
. এদিকে বেলার মুখে হাত রাখতে বেলার ঘোর কেটে যায় ধাক্কা দিয়ে রনি কে সরিয়ে দেয় নিজের থেকে বেলা। চোখ মুখ পুরো শক্ত হয়ে গেছে বেলার। তার সাঁঝ এর কথা গুলো বারবার মাথায় আসছে। “দূরে থাকবে” রনি থেকে। “তোমার গায়ে যেনো কেউ হাত না দেয়” বেলার কানে বাজছে বারবার এগুলো। আর তার সাথে বেলার চোখ লাল হতে শুরু করে হাত দুটো মুঠো করে নেয়। রনি কিছু বলতে তার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে বেলা পাশ কাটিয়ে বাথরুমে চলে যায়।
.
–“উফফ । তোমাকে পুরো আগুন লাগছে। তোমার শরীর টা সত্যি আমার কল্পনার থেকেও অনেক নরম তুল তুলে। তোমাকে জড়িয়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করছিলো। তোমার ওই কোমর মুখ উফ। আমি পাগল হয়ে যাব। তোমাকে তো এবার আমি আমার করে নেবো যে কোনও উপায়ে। তোমার সাথে সাঁঝ এর কাটাকাটি ব্যবস্থা করে দিয়েছি। সাঁঝ তোমার থেকে এবার দূরে চলে যাবে। তখন আমি তোমাকে পেয়ে যাব বেবি। রনি তার যে হাত বেলার মুখে আর কোমরে রেখেছিলো ওই হাত দুটো নিয়ে নিজের মুখে আর ঠোঁটে বুলিয়ে বলে ওঠে।

——————

সাঁঝ কার ড্রাইভ করছে আর মুচকি মুচকি হাসছে বেলা কে ভেবে। বেলার সাথে কাটানো মুহুর্ত। আর বেলার পাগলামি । বেলার করা রাগ ঝগড়া তুইতুকারি করা তাকে। রেগে গিয়ে নাক ফুলিয়ে তাকানো। লজ্জা পেয়ে মুচকি হাসি কোনা চোখে তাকানো। আর দুষ্টুমি গুলো এইসব গুলো ভাবতে ভাবতে বেলার ইউনিভার্সিটি এর দিকে যাচ্ছে।
.
. পাশের পড়ে থাকা ফোন টা হঠাৎ আলো জ্বলে বেজে ওঠে। আননোন নাম্বার থেকে একটা ভিডিও ক্লিপ এসেছে। সাঁঝ ফোনটা নিয়ে ভিডিও ক্লিপ টা ওপেন করে। সাথে সাথে বাজ পড়ে মাথায়। গাড়ি জোরে ব্রেক করে দেয়। চোখে থেকে যেনো আগুন এর গোলা বেরোচ্ছে। মাথার রগ গুলো ফুলে উঠেছে। দাঁত মুখ খিঁচে আছে হাত মুঠো করে গাড়ির স্টেয়ারিং এর ওপরে জোরে ঘুষি মারে। ফোনের স্ক্রিন এর ওপর জল জল করছে বেলা আর রনির ছবি যেখানে বেলার কোমর চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে রেখেছে। অন্য টা তে বেলার কোমরে হাত রেখে বেলার মুখের ওপর থেকে চুল সরিয়ে দিচ্ছে। আর তার পর চোখে মুখে হিংস্র হয়ে ওঠে। কারণ এখন পিছন থেকে দেখা যাচ্ছে আর এটা মনে হচ্ছে যেনো তারা চুমু খাচ্ছে।
.
. সাঁঝ ফোন টা ছুড়ে ফেলে দেয় গাড়ির স্টেয়ারিং এর ওপর জোরে জোরে হাত দিয়ে বাড়ি মারতে থাকে। চোখ মুখ পুরো হিংস্র থেকে হিংস্র হয়ে উঠছে। গাড়ি স্টার্ট করে জোরে ড্রাইভ করতে থাকে। চোখ মুখ পুরো টক টকে লাল হয়ে আছে।

—————-

ওম বেদ নিশান সবাই একসাথে অডিটোরিয়াম রুমে বসে আছে রনি এর সাথে কথা বলছে আর মাঝে মাঝে বেলার ফোন ট্রাই করে যাচ্ছে কিন্তু ফোন বেজে বেজে কেটে যাচ্ছে কিন্তু কেউ ধরছে না। সবাই কথা বলতে থাকলেও তাদের মুখে চোখে চিন্তার ছাপ ফুটে আছে।
.
.
. এদিকে বেলা ওয়াশরুমে ঢুকে ইচ্ছা মত নিজের মুখে পানি দিচ্ছে। রনির ওই স্পর্শ যেনো তার গায়ে কাঁটার মত বিধছে। জালা জালা করছে যেখানে যেখানে স্পর্শ করেছ তাকে। মুখ ঘোষে ঘোষে লাল হয়ে গেছে তবুও বেলা থামছে না। তার বারবার মনে পড়ছে ওই চোখের দৃষ্টি ওই স্পর্শ আর এতেই যেনো আরো বেশি করে তার গায়ে জালা পোড়া শুরু হয়েছে। তার সাঁঝ এর কথা মাথায় ঘুরছে “তোমাকে যেনো কেউ না স্পর্শ করে। তুমি শুধু আমার” বেলা মুখ ঘোষে পুরো রক্তের মত লাল করে ফেলেছে। কোমরে কাছে টপ গুটিয়ে নট বেঁধেছে। উন্মুক্ত থাকা পেটে ও ঘোষে ঘোষে পানি দিচ্ছে। ফোর্সা পেট পুরো লাল হয়ে গেছে কোথাও ছোড়ে গেছে। অতিরিক্ত ঘোষার ফলে। এদিকে যে পাশে থাকা ফোন টা রিং হয়ে যাচ্ছে সেদিকে বেলার হুস নেই। তার পরে মাথায় আসে সাঁঝ তাকে নিতে আসছে। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ড্রেস ঠিক করে নেয়। ওয়াশরুমে থেকে বেরোতে বেলা আতকে ওঠে পুরো রুমের চারিদিকে আগুন লেগে গেছে জ্বলতে শুরু করে দিয়েছে।
.
. বেলার দম আটকে আসছে। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। কোনোরকম করে দরজার সামনে এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলতে গেলে দেখে দরজা বাইরে থেকে বন্ধ হয়ে আছে। বেলা চারিদিকে ঘুরতে থাকে না সব দরজা জানালা বন্ধ। আর এদিকে আগুনের রেস বাড়তে থাকে। চারিদিকে আগুন ছড়িয়ে পড়েছে। বেলার চোখ দিয়ে পানি পড়ছে গড়িয়ে বেলা চিৎকার দিতে নিয়ে ও পারছে না। তার মাথা ঘুরছে চোখের সামনে ভেসে আসছে সেই দৃশ্য যেখানে তার বাবা মা গাড়ি অ্যাক্সিডেন্ট করার জ্বলে গিয়েছিলো। চোখ ঝাপসা হয়ে আসছে। বেলা কোনোরকম করে মাঝখানে এসে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে কারণ রুমের চারিদিকে আগুন ছাড়িয়ে গেছে। বেলার চোখ মুখ রক্ত শূন্য হয়ে গেছে। দম নিতে পারছে না। নিশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে বড় বড় করে দম নিচ্ছে। চোখের থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। চোখে ওপরে ভেসে আসছে তার আর সাঁঝ এর সুন্দর সুন্দর দৃশ্য গুলো আর তারপরই চোখ ঝাপসা হয়ে যায় পুরো অন্ধকারে ঢেকে যায়। আসতে আসতে বেলা ঢোলে পড়ে যায় মেঝেতে। চোখের থেকে শেষ বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ে। মুখ থেকে অতি কষ্টে অস্পষ্ট ভাবে উচ্চারিত হয়।
.
–“সাঁ…ঝ ।

—————

বেদ নিশান ওম রুহি সারা জাকিয়া শান্তা সবাই এবার বেলা কে খুঁজতে বেরোয়। সবাই ছড়িয়ে ছিটিয়ে চারিদিকে খুঁজতে লেগে গেছে বেলা কে। এদিকে বেলা একদম অডিটোরিয়াম এর অপোজিট সাইট রুমে বন্দি হয়ে আছে যার জন্য কেউ খুঁজে পাচ্ছে না। আর ওদিকে সাধারণত কেউ যায় না। পুরো ইউনিভার্সিটি ছান মারতে শুরু করেছে সবাই। কিন্তু বেলার দেখা নেই। ওদের সাথে রনি ও চিন্তিত হয়ে খুঁজছে।
.
. সাঁঝ গাড়ি নিয়ে ইউনিভার্সিটি ঢুকে পার্কিং করে ছুটে বেরিয়ে যায়। চারিদিকে থেকে সবাই তাকে দেখতে আছে। কিন্তু সাঁঝ এর সেদিকে কোনো হুস নেই। তার এই মুহূর্তে চোখ মুখ দেখে সবাই ভয় পেয়ে আছে কেউ কাছে আসে না। সাঁঝ মিউজিক বিল্ডিং এ ঢুকেই রনি কে দেখতে পায়। সাঁঝ সেদিকে গিয়ে সরাসরি রনি মারতে থাকে। হটাৎ এমন আক্রমণে রনি হকচকিয়ে গেছে। হটাৎ এমন হওয়াতে সে বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে তার সাথে।
.
. এদিকে সাঁঝ তাকে পুরো হিংস্র ভাবে মারতে থাকে। সবাই চারিদিকে ছুটে এসেও কেউ সাঁঝ এর থেকে রনি কে আলাদা করতে পারে না। যে ছাড়াতে যাচ্ছে তাকেই ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিচ্ছে।
.
–“এখন কেমন লাগছে মিস্টার রনি মেহতা। আমাকে খুব অপমান করেছিলে তাই না। এবার দেখ তুমি আজ এই হিংস্র বাঘ এর থেকে বাঁচতে পার কি না। আজকে তুমি এখানেই শেষ হবে। খুব শখ ছিল না বেলা কে পাওয়ার এবার বোঝ কেমন মজা লাগে। দিশা ওদের থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে মনে মনে শয়তানি হেসে বলে ওঠে।
.
. দিশা সাঁঝ এর পিছন পিছন এসেছে এখানের বিনোদন দেখতে নিজের চোখে বেলার অপমান আর মৃত্যু দেখতে কিন্তু অপমান টা দেখা হল না। কিন্তু বিষ তো ভোরে দিয়েছে সাঁঝ এর মনে এটাই বা কম কি।
.
–“এখানে তোমার শেষ বেলা চলছে। আর ওদিকে একজন পুড়ে ছাই হচ্ছে। বলেছিলাম না তোকে পুড়িয়ে মারার কথা দেখ কথা রেখেছি। আমি কখনো আমার কথার খেলাপ করি না। আমি যা বলি তা করে দেখায়। তোকে মারার মজা টা আমি কি করে ছাড়ি বল। তোর জন্য আমি সাঁঝ কে পেয়েও হারিয়েছি। আবারও তুই সাঁঝ এর জীবনে ফিরে এসেছিস তাও একেবারে বিয়ে করে নিয়েছিস। তোর জন্য আমার ভাই কে হারাতে হয়েছে। শুধু মাত্র তোর জন্য আজ আমি আমার ভাই এর কোনো খবর জানি না সে বেঁচে আছে নাকি মরে গেছে সেটাও জানি না। তোকে কি করে আর বাঁচিয়ে রাখি বল। আজই তোর দিন শেষ। এখন তুই পুড়ে ছাই হয়ে যাবি। আর তার পরে সাঁঝ সারাজীবন এর জন্য আমার। দিশা মনে মনে হেসে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ রনি কে মেঝেতে ফেলে মারতে আছে। চারিদিকে লোক দাঁড়িয়ে আছে। জায়গা টা পুরো ভিড় জমে গেছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সবাই দেখে যাচ্ছে। কেউ কাছে আসছে না।
.
. বেদ ওম নিশান ছুটে এসেছে সাঁঝ এর কাছে। তারা এতক্ষণ থেকে বেলা কে খুঁজছিল কিন্তু হঠাৎ সাঁঝ কে দেখতে পেয়ে তার কাছেই আসছিল কিন্তু তারপরেই দেখে রনি এর সাথে মারপিট লেগে গেছে। ওরা এসে ও ছাড়াতে পারে না।
.
–“জিজ বেলা কে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। নিশান অসহায় হয়ে বলে ওঠে সাঁঝ কে।
.
. নিশান এর কথা শেষ হতে না হতে সাঁঝ এর হাত থেমে গেছে। ঘুরে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে নিশান এর দিকে। নিশান এতক্ষণ এর কথা বলে তারা কোথাও খুঁজে পায়না সেটা। সাঁঝ কোনো কথা না বলে অডিটোরিয়াম রুমের দিকে ছুটে যায়। পর পর সব রুম গুলো খুঁজতে থাকে আর বেলার নাম নিয়ে চিৎকার করে ডাকতে থাকে। এদিকে সাঁঝ এর সাথে বাকিরা ও ছুটতে থাকে। সাঁঝ পাগল এর মত এই রুমে ওই রুমে করতে থাকে। অডিটোরিয়াম রুম পেরিয়ে অপোজিট সাইট ঢুকে যায়। তারপর পর পর রুম গুলো চেক করতে থাকে। শেষের রুমের সামনে গিয়ে দেখে তালা বন্ধ হয়ে পড়ে আছে।
.
. সাঁঝ ফিরে আসতে নিয়ে ও কি মনে আবার ও ফিরে যায় রুমের সামনে। ধাক্কা দিতে থাকে রুমের দরজায়। লাথি মেরে জোরে দরজা খুলে ভেঙে পড়ে। সাথে সাথে একটা আগুনের হাউলি বেরিয়ে আসে চারিদিকে ধোঁয়া ভোরে যায়। সাঁঝ এক পাশে হয়ে যায়। ধোঁয়া কমে যেতে সাঁঝ ঘুরে এসে দরজার সামনে দাঁড়ায়। সাথে সাথে তার পায়ের নিচে থেকে মাটি সরে যায়। যেনো পুরো আকাশটা তার মাথার ওপর ভেঙে পড়েছে।
.
–“বেলা…… সাথে সাথে এক চিৎকার করে ডেকে ওঠে হাঁটু মুড়ে বসে পড়ে সাঁঝ। তার পুরো দুনিয়া টা যেনো অন্ধকার হয়ে আসছে।
.
.
.
. 💝💝💝
.#তোর_আসক্তি_পাগল_করেছে_আমায়
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_২৪
.
.হসপিটালে সাঁঝ চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে আছ চোখ মুখ পুরো ফ্যাকাশে হয়ে আছে। পুরোই বিধ্বস্ত লাগছে। জামাকাপড় পুরো বিবর্ণ হয়ে গেছে । মাথার চুল গুলো উস্ক খুস্ক। মুখে স্পষ্ট যন্ত্রণার ছাপ ফুটে আছে। চোখ বন্ধ করে মাথা উপরে দিকে করে বসে আছে। পাশে সারা বসে আছে। আর বাকিরা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে চারিদিকে। সবার চোখ এখন শুধুমাত্র সামনে থাকা অপারেশন থিয়েটার এর দিকে। যেখানে এখন বেলার মৃত্যুর সাথে লড়াই করছে। বেলার অবস্থা ক্রিটিক্যাল হয়ে আছে। হাত আর পায়ের দিকে অনেক খানি পুড়ে গেছে। পুরো শরীরে চাপ চাপ রক্ত ছিল যখন তারা বেলা কে নিয়ে আসে এখানে।
.
. সাঁঝ এর মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না। তারা বাইরে বসে আছে এক ঘন্টা প্রায় হতে চললো কিন্তু কোনো খবর নেই। সাঁঝ মাথা তুলে একবার সামনের দিকে তাকিয়ে নিয়ে দু হাতে মাথা চেপে ধরে বসে আছে। ওম বেদ বরাবর পায়চারি করছে এ মাথা ও মাথায়। সারা জাকিয়া শান্তা সবাই চিন্তিত হয়ে বসে আছে। নিশান দাঁড়িয়ে আছে। নিশান এর কাঁধে মাথা রেখে দাঁড়িয়ে আছে রুহি। আর একপাশে আকাশ সারিফ দাঁড়িয়ে আছে। কারোর মুখে কোনো কথা নেই।
.
–“বেলা । কি হয়েছে? কোথায় আছে বেলা? আলিয়া চিৎকার করে ডাকতে ডাকতে ছুটে আসছে তাদের দিকে।
.
–” এখানে বস দিয়া। বেলা ভিতরে। বেদ আলিয়া কে ধরে বসিয়ে দেয়।
.
–“ঠিক আছে ও? কি করে হল এমন? হ্যাঁ কিছু হয়নি তো ওর? এমনিতে ও আগুনে ভয় পায়। চিন্তা আর উদ্বিগ্ন মুখে জিজ্ঞেস করে যায় আলিয়া।
.
–“সব ঠিক হয়ে যাবে দিয়া তুই একটু শান্ত হয়ে বস। শান্তা আলিয়া কে জড়িয়ে নিয়ে বলে ওঠে।
.
. ওদের কথার মাঝে ডাক্তার বেরিয়ে আসে। সাথে সাথে সাঁঝ উঠে দাঁড়িয়ে ছুটে যায় সেদিকে। বাকিরা যায়।
.
–” ডক্টর বেলা? সাঁঝ বলে ওঠে।
.
–“বলুন না ও কেমন আছে। ঠিক আছে তো? আলিয়া কাঁদতে কাঁদতে বলে ওঠে।
.
–“আরে আপনি চুপ করে আছেন কেনো বলুন না। সারা বলে ওঠে।
.
–” দেখুন মিসেস বেলা এখন আউট ওফ ডেন্জার। তবে যতক্ষণ না পর্যন্ত ওনার জ্ঞান ফিরছে কিছু বলতে পারছি না। ওনার হাত ও পায়ের দিকে অনেকখানি পুড়ে গেছে। সাথে মাথায় কোনো কিছুতে চোট পেয়েছে। ওনার শরীর থেকে অনেক রক্ত বেরিয়ে গেছে। আর আধা ঘন্টা মত উনি আগুনের মধ্যে আটকে ছিলেন তাই এর জন্য ওনার শরীরে মধ্যে ধোঁয়া চলে গেছে। ফুসফুস এর মধ্যে ও তো তার জন্য শর্ট নেস ব্রেথ হতে পারে। আর তাছাড়া মনে হয় ওনার আগুনে ফোবিয়া বা এরকম কিছু ছিল যার জন্য ট্রমাটাইজ হয়ে আছেন। তাই যতক্ষন না জ্ঞান ফিরছে কিছু বলা যাচ্ছে না। বলে ওঠে ডক্টর।
.
–“ওকে দেখতে পারি। সাঁঝ অসহায় হয়ে বলে ওঠে।
.
–” একটু পরেই ওনাকে আই সি ইউ তে সিফ্ট করা হবে। ওনার জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত অভজারভেশনে রাখতে হবে। একটু পরেই দেখা করতে পারেন। বলেই ডক্টর চলে যায়।
.
. কিছুক্ষণ পর সাঁঝ গুটি গুটি পায়ে কেবিনে ঢুকে। সামনে তাকাতে দেখে বেলা নিঃপ্রান ভাবে বেডে শুয়ে আছে। স্যালাইন চলছে আর তার সাথে রক্ত দেয়া হচ্ছে। মুখে অক্সিজেন মাস্ক পরানো মাথায় ব্যান্ডেজ পায়ে হাতে ও ব্যান্ডেজ করা মুখ পুরো ফ্যাকাশে হয়ে আছে । ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। সাঁঝ আসতে আসতে গিয়ে বেলার পাশে বসে পড়ে। খুব সাবধানে বেলার একটা হাত নিজের মুঠি ভোরে নিয়ে নিজের মুখের কাছে লাগিয়ে নেয়। চুপ চাপ এক দৃষ্টিতে বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। বেলা কে এই ভাবে সাঁঝ এর বুকের মধ্যে রক্তপাত শুরু হয়ে গেছে। চোখ মুখ পুরো লাল হয়ে আছে। চোখের কোণে পানি ছলছল করছে সাঁঝ এর। ক্রমাগত বেলার হাতে নিজের ঠোঁট ছুঁয়ে যাচ্ছে। সাঁঝ চোখ বন্ধ করতে একটু আগের ভয়ংকর দৃশ্য ভেসে ওঠে।
.
. কিছুক্ষণ আগেই…
.
. সাঁঝ দরজায় লাথি দিয়ে দিয়ে দরজা ভেঙে ফেলে। সামনে তাকাতে সাঁঝ এর হার্টবিট থেমে যায়। মেঝেতে বেলা পড়ে আছে। চারিদিকে আগুন আর ধোঁয়ায় ভোরে তার মাঝে পড়ে আছে বেলা। হাতে পায়ের দিকে পুরো ঝলসে গেছে। শরীরে চাপ চাপ রক্ত ফুটে আছে। সাঁঝ তাড়াতাড়ি ভিতরে ঢুকে যায় আগুন কাটিয়ে। মেঝেতে বসে বেলার মাথা নিজের কোলে তুলে নেয়। মাথার থেকে রক্ত পড়ছে। মুখের এক সাইট রক্ত লেগে আছে। হাত আর পায়ের দিকে তাকাতেই সাঁঝ এর দম আটকে আসে। ততক্ষণে বাকিরা ও চলে আসে ভিতরে।
সাঁঝ বেলার মাথা নাড়িয়ে ডাকতে থাকে কিন্তু বেলার কোনো সাড়া পাওয়া যায় না। বেলা কে নিজের বুকের সাথে লাগিয়ে চেপে ধরে থাকে সাঁঝ। চোখের কোন বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে কয়েক বিন্দু।
.
–“বেলা এই চোখ খোলা দেখো আমি আছি তোমার সাথে বেলা। সাঁঝ চিৎকার করে ডেকে ওঠে।
.
. সাঁঝ নিজের কোর্ট খুলে বেলার গায়ে জড়িয়ে বেলা কে কোলে তুলে নিয়েই ছুটতে শুরু করে তার সাথে বাকিরা ও । গাড়িতে বসিয়ে হসপিটাল এর দিকে ছুটে যায়। তার এখন কোনো দিকে হুস। সে কে? কি তার পরিচয়? সব কিছু ভুলে গিয়ে ছুটতে থাকে সাঁঝ। হসপিটাল পৌঁছে ও বেলা কে কোলে নিয়েই ভিতরে ঢুকে যায় চিৎকার করে ডক্টর নার্স কে ডাকে। বাকিরা শুধু দাঁড়িয়ে দেখে গেছে সাঁঝ এর উৎকন্ঠা তার অসহায়তা। সাঁঝ কে পাগলের মত আচরণ করতে। যে সাঁঝ সব সময়ে পরিপাটি তার আরোগেন্ট ভাব এর জন্য পরিচিত সেই সাঁঝ এখন পুরো অসহায় হয়ে আছে।
.
.
. এইসব ভাবতে ভাবতে সাঁঝ এর চোখের কোণে থেকে পানি গড়িয়ে পড়ে। সাঁঝ বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে এক হাত উঠিয়ে বেলার মুখে স্লাইড করতে থাকে। সাঁঝ বেলার মুখের ওপর ঝুঁকে গিয়ে বেলার কপালে ব্যান্ডেজ এর ওপর চুমু খায়। তারপরে দু চোখের পাতায়। বেলার শুকনো ঠোঁটের ওপর হাত বুলিয়ে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয় বেলার শুকনো ঠোঁটে। শুষে নেয় কিছুক্ষণ বেলার শুকনো ঠোঁট। বেলার মুখের গড়িয়ে পড়ে কয়েক বিন্দু তরল। তারপরেই হুট করে বেরিয়ে যায় সাঁঝ বেলার রুমে থেকে।

—————–

–“তোমার সাহস কি করে হল এই কাজটা করার হ্যাঁ। তোমাকে বলেছিলাম আমি বেলার থেকে দূরে থাকতে তাহলে সাহস কি করে হল। রনি চিৎকার করে ওঠে।
.
. দিশার গলা চেপে দেয়ালে সাথে আটকে ধরে রনি। তার মুখের জিওগ্রাফী পুরো পাল্টে দিয়েছে সাঁঝ। ঠোঁটের কোন বেয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। নাক ফুলে আছে। কপালে রক্তের ছাপ লেগে আছে। তবুও সে দিশার ওপরে ক্ষ্যাপা হয়ে আছে। সে জানত এই কাজটা দিশা ছাড়া আর কারোর হতে পারে না।
.
–“তোমাকে আমি শুধু বলেছিলাম আমাদের দুজনের ক্লোজ ছবি আর ভিডিও পাঠাতে আর তুমি কি করলে। বেলার যদি কিছু হয়ে যায় না তাহলে আমি তোমাকে বাঁচতে দেবো না। আর তোর সাথে ওই সাঁঝ কে ও মেরে ফেলব। তুমি এখনও আমাকে চেন না। হুংকার ছেড়ে বলে ওঠে রনি।
.
–“তুমি ওকে আগুনের মাঝে ছেড়ে দিয়েছ। তুমি জানতে ও আগুনে ভয় পায় তার পরেও তুমি ওকে মেরে ফেলার প্ল্যান করেছো। তোমাকে তো আমি ছাড়ব না। বলে ওঠে রনি।
.
. দিশা কে টান মেরে মেঝেতে ফেলে দেয় রনি। পাশে থাকা টেবিল থেকে ছুরি তুলে নিয়ে দিশার হাতে আর পায়ে চালাতে থাকে আর সাথে সাথে দিশা চিৎকার দিতে থাকে। দিশার এই চিৎকার শুনে রনি ঘর কাঁপিয়ে হাসতে থাকে। কাটার ওপরে লবণ ছড়িয়ে দেয় রনি।
.
–“এটা শুধুমাত্র তোমাকে বোঝানোর জন্য বেলার গায়ে হাত দিলে কি হয়। এর আগের বারে ও তুমি একই ভুল করেছিলে কিন্তু আমি তোমাকে কিছু বলিনি কিন্তু আজ তুমি সব হাদ পার করে দিয়েছ তাই তোমাকে এটা বোঝানোর জন্য ছিল। বেলার যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে এটা তোমার গলায় চালিয়ে দেবো। বলেই রনি রুমে থেকে বেরিয়ে যায়।
.
. এদিকে মেঝেতে পড়ে চিৎকার করছে দিশা। কাটার ওপর লবণ ছড়িয়ে দিয়েছে তাই অসহ্য জ্বলছে। চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে আর তার সাথে এবারে মুখে ফুটে আছে হিংস্রতার ছায়া।
.
–“দু দু বার আমার হাত থেকে তুই বেঁচে গেছিস। আর নয় এবারে আমি তোকে নিজে হাতে শেষ করব। তোর জন্য আজ আমার গায়ে এই নিশান হয়েছে। এর জন্য তো তোকে এর হিসাব চুকাতে হবে। আসছি আমি। দিশা দাঁতে দাঁত চেপে চিৎকার করে বলে ওঠে।

—————-

–” স্যার এই যে ফুটেজ গুলো। এখানে ইউনিভার্সিটি সব ফুটেজ গুলো আছে। আকাশ তার হাতের ট্যাব টা সাঁঝ এর দিকে এগিয়ে দিয়ে বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ আকাশ এর হাতে থেকে ট্যাব নিয়ে ফুটেজ গুলো চেক করছে। আর তার সাথেই চোখ মুখ রাগে হিংস্র হয়ে যাচ্ছে।
.
–” এর পর কি আমি তোমাকে বলে দেবো কি করতে হবে? সাঁঝ দাঁতে দাঁত চেপে ধরে বলে ওঠে আকাশ কে।
.
–” নো নো স্যার আমি অলরেডি সব ব্যবস্থা করে ফেলেছি। লোক লাগিয়ে দিয়েছি। রাতের মধ্যে ওদের সবাই কে ধরে ফেলবে। আকাশ বলে ওঠে।
.
–“স্যার বলছিলাম যে আপনি একটু জুস অন্তত খেয়ে নিন সেই সকাল থেকে না খেয়ে আছেন। আকাশ বলে ওঠে।
.
. সাঁঝ কোনো কথা না বলে ট্যাব টা আকাশ এর হাতে ফিরত দিয়ে দেয়। উঠে দাঁড়িয়ে আসতে আসতে বেলার কেবিনে ঢুকে যায়। দুপুর থেকে সন্ধে গড়িয়ে রাতের কবলে ঢোলে পড়েছে অথচ বেলার কোনো সাড়া নেই। সাঁঝ গিয়ে বেলার পাশে বসে পড়ে।
.
–“এই যে আর কতক্ষণ ঘুমিয়ে থাকবে? দেখো আমি এখনও কিছু খাইনি। কষ্ট হচ্ছে তো আমার। কথা বলবে না আমার সাথে? তুমি তোমার জিন্দেগির সাথে কথা বলবে না? রাগ দেখাবে না? দেখো আমি আর তোমার সাথে ঝগড়া করব না তোমার ওপর রাগ ও দেখাবো না। তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসা দেবো। চোখ খোলা না সোনা। আমার দম আটকে আসছে যে। তোমাকে এই অবস্থায় দেখে আমি সহ্য করতে পারছি না। তোমাকে আমার অনেক কথা বলার আছে জান উঠো না প্লিজ। বেলার হাত কপালে ঠেকিয়ে বলে ওঠে সাঁঝ। সাঁঝ এর চোখের কনের থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে বেলার ওপর।
.
. সাঁঝ বেলার পাশে থেকে উঠে কাঁচের দেয়ালের দিকে চলে যায় আলতো হাতে চোখের কোণে জমে থাকা পানি মুছে নেয়। সামনের দিকে দৃষ্টি রেখে দূরের রাস্তার চলমান গাড়ি ঘোড়া দেখতে থাকে। সে এই অবস্থায় বেলা কে কিছুতেই সহ্য করতে পারছি না।
.
. কিছুক্ষণ পর গোঙানোর শব্দ পায়। তারপরেই কিছু পড়ে যাওয়ার সাথে আগুন আগুন বলে চিৎকার।
.
. সাঁঝ তার ধ্যানে মগ্ন ছিল তাই প্রথমে বুঝতে পারিনি শেষের দিকে কিছু পড়ে যাওয়ার আওয়াজ এর জন্য পিছনে ঘুরে দেখে বেলা হাত নাড়িয়ে পাশে থাকা গ্লাস ফেলে দিয়েছে সাথে হাত পা নাড়িয়ে চিৎকার করছে আগুন আগুন করে। বেলার এই অবস্থা দেখে সাঁঝ তাড়াতাড়ি বেলার কাছে ছুটে যায়। বেলা কে টেনে নিজের বুকের মাঝে জড়িয়ে নেয় সাঁঝ।
.
–“সুসসস । জান দেখো আমি। কোথায় আগুন। দেখ কিছু নেই।শান্ত হয়ে যাও সোনা। সব ঠিক আছে সাঁঝ উদ্বিগ্ন হয়ে বলে ওঠে।
.
–” আগুন। আগুন মা বাবাই। আগুন আগুন। সাঁঝ। বলেই বেলা চোখ বন্ধ করেই চিৎকার করতে থাকে।
.
. বেলার ছটফট করার জন্য হাতের থেকে রক্ত পড়ছে। সাঁঝ কিছুতেই বেলা কে শান্ত করতে পারছে না। সাঁঝ কোনো উপায় না পেয়ে বেলা কে চেপে ধরে দু হাতে মুখ উচু করে বেলার ঠোঁটে নিজের ঠোঁট চেপে ধরে। বেলা আসতে আসতে নিসতেজ হয়ে পড়ে। সাঁঝ এর ওপর জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। ততক্ষণে ডক্টর ও চলে আসে। সাঁঝ বেলা কে নিজের বুকের থেকে সরিয়ে শুয়ে দেয়। বেলার দিকে তাকিয়ে থেকে বেরিয়ে যেতে যায়। কিন্তু হাত আটকে যায়। পিছনে মুড়ে দেখে বেলা তার হাত মুঠো করে ধরে রেখেছে। সাঁঝ আবারো আসতে আসতে বেলার পাশে চলে আসে।
.
–“মিস্টার রওশন। উনি এখন ট্রমার মধ্যে আছেন। এর আগেও মনে হয় কোনো বড় ধরণের শখ পেয়েছিলেন। আর আজকের জন্য ব্যাপার টা আরো বেশি ওনার মাথায় জেকে বসেছে। এখন উনি বিপদ মুক্ত। তবে ওনাকে ভালো কোনো সাইক্রিয়াটিস্ট দেখিয়ে নেবেন। ওনাকে এখন ঘুমের ইঞ্জেকশন দেয়া হয়েছে। আশা করছি এর পর উনি আসতে আসতে সুস্থ হয়ে যাবেন। বলে ডক্টর বেরিয়ে যায়।
.
. এদিকে সাঁঝ বেলার হাত ধরে বসে থাকে কিছুক্ষণ বেলার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে উঠে বেলার পাশে শুয়ে পড়ে। বেলা কে নিজের বুকের ওপর টেনে নেয়। জড়িয়ে রাখে নিজের বুকের সাথে শক্ত করে। চোখের কোণে থেকে দু ফোটা পানি গড়িয়ে পড়ে সাঁঝ এর। সাঁঝ মাথা উচু করে বেলার মাথায় চুমু খায়। বেলা সাঁঝ এর বুকের কাছে শার্ট খামছে ধরে রাখে। সাঁঝ মাথা নামিয়ে বেলার ঘাড়ে মুখ গুঁজে দেয়। চোখ বন্ধ করে বেলা কে নিজের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রাখে।
.
.
.
. 💝💝💝
.
. চলবে…..
.
. ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊

#
. চলবে….
.
.ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন রি-চেক করা হয়নি। সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন।

(পুরো তিন হাজার ওয়ার্ড এর লেখা পোস্ট করেছি । এর থেকে বড় এর হচ্ছে না। কাল অনেক রাতে বাড়ি ফিরেছি সাথে ছিলাম প্রচুর টায়ার্ড। তাই চেয়ে ও লিখতে পারেনি। তাই পুরো পুষিয়ে দিলাম আজকে। আর আপনারা ও বড় বড় কমেন্ট করে আমার মন টা ও একটু ভালো করে দিন না হলে বেলা তো গেয়া। গুনীত এভরিওয়ান 😊😊😊)

#

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here