#তোলপাড়💓
#পর্বঃ১৮
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
রঞ্জিত বাড়িতে এসেই অপার সাথে তর্ক বির্তক শুরু করে দেয়।
-তোমার জন্য আমার ছেলেটার জীবন নরক হয়ে যাচ্ছে দেখছি।
-আমি আবার কি করলাম?
রঞ্জিত মাথায় ব্যথার মলম লাগাতে লাগাতে বলল,কি করোনি তাই বলো!কাদের মধ্যে পাঠিয়েছো আমার ছেলেকে?যতসব ছোটলোক শ্রেণির মানুষ।না আছে ভালো থাকার জায়গা আর না আছে ভালো স্ট্যাটাস।ওই মেয়ের গুডলাক যে আমার বাড়ির বউ হতে পেরেছে।যাকে বলে কাঙালির ঘরে জন্ম হয়ে রাজারহালের খোঁজ পাওয়া।
-তুমি এতো অহংকারী কেন গো?মানুষ তো মানুষই।কাঙালি আর রাজা কোথা আসছে এখানে?তুমি বিত্তশালী বলে রক্ত মাংসে গড়া,আর গরীবরা পায়ের জুতা দিয়ে তৈরি নাকি?
-তোমার সাহস দেখে আমি দিনকে দিন অবাক হচ্ছি অপা!তুমি কিনা আমার উপর চোখ রাঙিয়ে কথা বলছো?
-তোমার খারাপ লাগলে আমি দুঃখিত।কিন্তু কারো ভুল ধরিয়ে দেওয়া অপরাধ কিছু বলে আমি মনে করছি না।
-কিহ!তুমি আমার ভুল ধরিয়ে দেবে?ইদানীং কটা কথা কি শুনলাম তুমি দেখছি মাথায় চড়ে নাচতে শুরু করে দিয়েছো!এতো সাহস তো আগে ছিলো না তোমার।তাহলে এখন কিভাবে এতো সাহস পেলে?বুঝেছি ওই মিডিলক্লাস মেয়ের খপ্পরে পড়েছো মনে হচ্ছে।বেশ বুঝেছি মেয়েটি খুব কম সময়েই ওই মেয়েটা তোমার ব্রেনওয়াশ করে ফেলেছে দেখছি।মেয়ে তো নয় যে পাক্কা খেলোয়ার।নয়তো প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত অভিনেত্রী।(বেশ মজা নিয়ে বললেন কথাগুলো)
-তোমার সাথে তর্কে যাওয়া মানে পাথরের গায়ে ঢিল ছুড়া।আমার ঢের হয়েছে মাফ করে দিন।একটা সুস্থ আমি তাই আর বেশি কথা বাড়াতে পারলাম না এই বলে উল্টো দিক ফিরে শুয়ে পড়লেন অপা।
এদিকে রঞ্জিত মনে মনে অন্য কথা ভেবে যাচ্ছে।
-এই মেয়ে দেখছি আহসানের আম্মুকে হাতিয়ে নিয়েছে।বেশ ধুরিবাজ মেয়ে দেখছি।সাথে গুটিবাজিও জানে দেখছি।এর থেকে আহসানকে সাবধানে রাখতে হবে আমায়।খুব দেড়ি নেই এই মেয়ের আমার আহসানকে বশ করে ফেলার।তার আগেই আমাকে কিছু একটা করতে হবে।আমার আহসান আমার কথায় ওঠবস করে।আমার ছেলে আমার ছিলো,আমারি থাকবে।একদম আমার হাতের পুতুল হয়ে।তাই যে করেই হোকনা কেন ওই মিডিলক্লাস ফ্যামিলির মেয়েকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এই বাড়ি থেকে এবং আমার আহসানের জীবন থেকে সরাতে হবে।তবে এখন উচিত সময় নয়।আর মাত্র কিছু মাসের অপেক্ষা।তারপরই প্রথম এবং শেষ খেলাটা খেলবো আমি।শুধু একটা দান খেলবো আমি।ব্যাস একটা দানেই ক্লিন বোল্ড করে দেব মেয়েটাকে। জাস্ট ওয়েট এন্ড সি!
রাত তিনটায় কারেন্ট আসলো।আহসানও যেন প্রাণ ফিরে পেল।হাতপাখা ঘোরাতে ঘোরাতে বেচারা নেয়ে গেছে প্রায়।হাতে প্রচুর ব্যথা অনুভব হচ্ছে ওর।হাতপাখাটা এক সাইডে রেখে ঘুমে তলিয়ে গেল।বেলা ১০ টা হয়ে আসছে তবুও আহসানের ঘুম ভাঙছে না।আম্বিয়া নাস্তা রেডি করে বারবার রিমিকে বলছে আহসানকে নিয়ে আসতে।রিমি কিছুক্ষণ পর পরই দেখে যাচ্ছে আহসান ঘুম থেকে উঠেছে কিনা।কিন্তু প্রতিবারই ফেরত যেতে হচ্ছে।ডাক দিচ্ছে না কারণটা রিমি বেশ ভালো করেই জানে যে আহসান ঘুম নিয়ে বড্ড সিরিয়াস।এ কয়দিনে রিমি যার যা-ই বুঝুক না বুঝুক এটা বেশ ভালো করেই বুঝে গেছে।
-এই ভ্যাম্পায়ার টা এখনো উঠছে না কেন হু?নিজে খাবেনা,আমাকেও কি খেতে দেবেনা!ওনাকে ছাড়া খেলে তো অন্যায় হয়ে যাবে।আফটার-অল উনি এই বাড়ির জামাই আর আমার অসহ্যকর হাসবেন্ড।কি যে করি?আবার গিয়ে দেখি।রিমি দেখলো আহসান এখনো দিব্বি ঘুমোচ্ছে।বারান্দার গ্রিল ঘেঁষে কয়েক ফালি রোদ এসে ঘিরে নিয়েছে আহসানকে।রিমি বিষয়টা লক্ষ্য করে বারান্দার দরজাটা লাগিয়ে দিল।তারপর বলল,এনার গরম কি সাধে লাগে!এখনো চাদর মুড়িয়ে আছে।নিশ্চয়ই ঘেমে গেছে উনি!চাদরটা বরং সরিয়ে দেই আমি।এই ভেবে চাদরটা এক টানে সরিয়ে ফেললো রিমি।চাদরটা সরানো মাত্র রিমির চোখ কপালে উঠে গেল।আহসান খালি গায়ে শুয়ে আছে।আর টি-শার্টটা দু হাটুর ভাজে দিয়ে রেখেছে।রিমি বিষয়টা বোঝার চেষ্টা করে বলল,উনি কি গরমের জন্য টি-শার্টটি খুলে ঘুমিয়েছিলেন?হয়তো তাই হবে।নিশ্চয়ই রাতে ঠিক করে ঘুম হয়নি ওনার।থাক উনি তাহলে মন ভরে ঘুমাক।আমি নাহয় আম্মুকে বুঝিয়ে বলে দেব।রিমি একা একা কথা বলছিল,আচমকাই রিমির চোখ চলে গেল আহসানের ফর্সা ধবধবে বুকটার দিকে।বুকের মাঝ বরাবর নজরকাড়া কালো লোমও রয়েছে।রিমি আসতে আসতে হাত বাড়িয়ে আহসানের বুকের লোমগুলো ছুঁইয়ে দিল।তারপর বলল,ঘুমের মধ্যে আপনাকে খুব নিষ্পাপ দেখা যায়।মনেই হয়না আপনার মধ্যে এক দাম্ভিক,অহংকারী ভ্যাম্পায়ার বাস করে।আপনি কি আমি এখনো পর্যন্ত বুঝে উঠতে পারিনি সেটা।মাঝে মাঝে এতো রেগে যান যে আস্তো এক দানব হয়ে যান।আবার মাঝে মাঝে পানির মতো সরল হয়ে যান।যদিও এটা খুব কম তবুও আগের তুলনায় অনেকটাই রাগ কমেছে আপনার।কখনো তো খুব কাছে চলে আসেন আমার।কিন্তু জানেন,আপনার এই রাগ করার বিষয়টা মেনে নেওয়া যায় তবে কাছে আসার বিষয়টা কেন জানি বুঝতে পারছি না আমি।আপনার মতলব টা আসলে কি?এসব শুধুই কি মনের খামখেয়ালি নাকি অন্য কিছু আছে আপনার মনে?কি চান আপনি?রিমির শেষ বাক্যটার সাথে সাথে আহসান বলে ওঠে,তোমাকে।কথাটা শুনে রিমির মনটা যেন ধক করে উঠে।রিমি ভাবলো আহসান মনে হয় ওর কথা গুলো শুনে ফেলেছে কিন্তু ওর ধারণা পালটে দিয়ে আহসান পুনরায় বলে ওঠে, তোমাকে আমি দেখে নেব।
I will see you Rimi…ঘুমের মধ্যে বিরবির করে যাচ্ছে আহসান।তেমন স্পষ্ট করে না বললেও রিমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পেরেছে আহসানের কথাটা।রিমি একটা স্বস্তির হাপ ছেড়ে বলল,যাক বাবা বাঁচা গেল।উনি ঘুমের মধ্যে কথা বলছেন।তবে কুয়েশ্চন টা হলো,উনি ঘুমের মধ্যেও আমাকেও ছাড়লো না!আমি কি ওনার জম্ম শত্রু নাকি?
বিকেলে রিমির মেসেঞ্জারে একটা এসএমএস আসলো।এসএমএস টা পড়তেই রিমির মনটা যেন খুশিতে ভরে ওঠে।রিমি এক দৌঁড়ে ওর বাবা মায়ের রুমের দিকে ছুটে গেল।গিয়েই নাজমুল আর আম্বিয়াকে সালাম জানালো।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ১৯(বোনাস পার্ট৬)
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
রিমিকে এভাবে দৌঁড়ে আসতে দেখে আম্বিয়া চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,কিরে কি হয়েছে?ব্যাঙের মতো লাফাচ্ছিস কেন এভাবে?আর হঠাৎ সালাম দিলি যে!
-আমি আজ খুব খুশি আম্মু।এই বলে আম্বিয়ার দু বাহু ধরে ঘোরাতে লাগলো রিমি।
আম্বিয়া রিমিকে থামিয়ে বলে,কি হয়েছে সেটা তো বল?এতো খুশির কারণটা কি?
আম্বিয়ার সাথে নাজমুল ও বলল,কি এমন খুশির কারণ বল আগে।
-বলছি বলছি।আগে তোমরা গেস করো তারপর।
-এতো গেস টেস করতে পারবো না সিধে সিধে বল নইলে মার খাবি আমার হাতে।(আম্বিয়া)
আম্বিয়ার কথাটা নাজমুলের একদমই পছন্দ হলো না।
-তুমি সবসময় মারামারির কথা কেন বলো বলোতো!বাচ্চাদের সাথে একটু নম্রতার সাথেও তো কথা বলতে পারো নাকি!
-বাচ্চা!তুমি বাচ্চা কোথায় পেলে?তোমার এই ঢেঙি মেয়েকে বাচ্চা বলছো!
-হ্যাঁ অনেক বড় হয়ে গেছে তাইনা?যেভাবে বলছো মেয়েটা যেন ৮০ তে পা রেখেছে।
-তুমি কিন্তু তর্ক করতে এসোনা না বলে দিলাম।নইলে খুব খারাপ হয়ে যাবে কিন্তু?
-উফফফ তোমরা থামবে প্লিজ।আমি যেটা বলতে এসেছি সেটা কি না বলেই চলে যাব?নাজমুল ও আম্বিয়ার ঝগড়া সহ্য করতে না পেরে বেশ রেগেই কথাটা বলল।
-আমি কি কিছু বলেছি বল!তোর মাই তো শুরু করেছে।
আম্বিয়া ভেঙিয়ে বলল,আমি কি কিছু বলেছি বল তোর মাই তো শুরু করেছে!হুহ তুমি তো দুধের ধোয়া তুলসীপাতা।
-ঠিক আছে তোমরা ঝগড়াই করতে থাকো আমি গেলাম।বলে রিমি চলে যাচ্ছি কি নাজমুল,আম্বিয়া আটকে নিল।তারপর দুজনে একসাথে বলল,সরি আর হবে না তুই বল।
-আব্বু আম্মু আমার জব হয়ে গেছে(এক দমে বলে ফেলল)
(সবাই আমার গল্পের পেজ Shantona’s own Stories এ লাইক দিয়ে রাখুন)
খবরটা শুনে নাজমুল ও আম্বিয়ার মুখ খুশিতে ঝলমলিয়ে উঠেছে।
-আলহামদুলিল্লাহ,আমি বলেছিলাম না আম্বিয়া,আমার রিমি ঠিক সফল হবে একদিন।
-হুম একদম তোমার মতো হয়েছে মেয়েটা।
-তুমি ওতো খুব ভালো জব পেয়েছিলে।
-হুম পেয়েছি তবে স্কুলের।তোমাদের মতো কলেজে তো পাইনি।
-স্কুল হলেও জব তো ভালোই ছিল।কতো খ্যাতি অর্জন করেছো।
-দেখো একদম বেশি বেশি বলবা না বলে দিলাম।
– প্রশংসা করছি তাও নাকি বেশি হয়ে গেছে।আবার যখন প্রশংসা করবো না তখনও আমার দোষ।তোমরা নারীরা কি দিয়ে গড়া বলোতো?
-তোমরা আবারও শুরু করলা!ধুর ভাল্লাগে না।আমি গেলাম আমার শ্বাশুড়ি মাকে খবরটা দিতে।তোমরা ঝগড়া চালিয়ে যাও এই বলে চলে আসলো রিমি।ফোনটা হাতে নিয়েই অপার নাম্বারে কল লাগালো।তবে দুবার কল করেছে দুবারই সুইচ অফ বলছে।একি মার নাম্বার সুইচ অফ কেন বলছে?হয়তো চার্জ নেই।আমি বরং জিসানকে ফোন লাগাই।কল রিসিভ হতেই ওপাশ থেকে জিসান বলে ওঠে,হায় ভাবি,What about you…
-আমি তো খুব ভালো আছি তুমি শুনলে তুমিও ভালো হয়ে যাবে।
-আই গেস,তুমি কলেজে জব পেয়ে গেছ।
-আরে বাহ!গুড থিংকিং।আচ্ছা জিসান,মা কোথায়?দেবে একটু তার কাছে ফোনটা?
-দেব তবে তার আগে বলো আমাকে ট্রিট কবে দিচ্ছো?
-প্রথম মাইনে পাই তারপর তোমাকে বলতে হবে না আমি নিজেই ট্রিট দেব।
-ওকে কবে আসছো এখানে?তুমি নেই তাই ভালো লাগছে না।অল টাইম শুধু ফোন ঘেটে যাচ্ছি খুব বোর লাগছে আমার।
-তোমার ভাইয়ার পোর্শু পর্যন্ত ছুটি আছে তো কালকের পরের দিন আসার সম্ভাবনা আছে।তুমি যাও মাকে ফোনটা দাও।
-ওকে ওয়েট।
-হুম জলদি এই বলে পেছনে ফিরতেই আহসানকে দেখতে পেল।আহসান বেশ রাগি লুকে তাকিয়ে আছে রিমির দিকে।রিমি কিছু বলতে যাবে তখনই আহসান সেখান থেকে চলে গেল।রিমি যেন কিছু বুঝে উঠলো না।তাইতো বলদের মতো দাঁড়িয়ে রইলো সেখানে।
কি জানি হঠাৎ কি হলো ওনার!ওভাবে কেন তাকালো?রিমি আহসানকে নিয়ে ভাবছিলো তারপর ফোনে অপার কন্ঠ শুনে পুনরায় কথা বলায় মন দিল।
#চলবে,,!
#চলবে,,,!
(পার্টটা বোনাস পার্ট হিসেবে দেব বলে গতকাল ভেবেছিলাম।কিন্তু দেইনি কারণ আজ লিখবো না জানতাম মন মানসিকতা ভালো নেই বলে।তাই গতকাল আর পোস্ট করিনি।লেখার পর রিচেক করতে বিরক্ত লাগে তাই ভুল হলে ক্ষমা করে দেবেন।)