#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৩৬
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
খুব জোর বৃষ্টি হতে শুরু করলো।থেমে থেমে বাজ পড়ছে।রাত ও কম না।প্রায় ১২টা।পৌঁছাতে এখনো অনেক সময় লাগবে।এতো রাতেও রাস্তায় জ্যাম।দেড় ঘন্টা এই জ্যামেই ফেঁসে আছে ওরা।এতক্ষণে বাড়ি পৌঁছে ঘুমিয়েও যেত ওরা।একে জ্যাম তারউপর বৃষ্টি।জ্যামে ফেঁসে যাওয়ায় বৃষ্টি ফেস করতে হচ্ছে ওদের।জ্যামে ফাঁসার মূল কারণ সামনে এক্সিডেন্ট হয়েছে।পুলিশ ইনভেস্টিগেট করছে এই জন্য সব গাড়ি সামনে যেতে পারছে না।চারিদিকে পুলিশের কড়া নজরদারি চলছে।গাড়িতে বসে বসে আহসান ও রিমি বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে।আর সহ্য করতে না পেরে রিমি বলেই দিল,
-আর কত সময় এভাবে বসে থাকতে হবে?আমার আর ভালো লাগছে না।
-তো আমার কি ভালো লাগছে এভাবে বসে থাকতে?তোমার এতো সমস্যা হলে পুলিশকে গিয়ে বলো আমাদের যেতে দিতে।(দাঁতে দাঁত চেপে)
-রাগ করছেন কেন?আমি তো আমার অনুভূতির বহিঃপ্রকাশ করলাম।
আহসান শান্ত গলায় বলল,সেম আমিও ওটাই করলাম।যাও গিয়ে ইন্সপেক্টরের সাথে কথা বলে এসো।
-এটা কি সম্ভব নাকি!উনি ওনার কাজ করছে।আর আমি কি প্রাইম মিনিস্টার নাকি যে আমার জন্য পুরো রাস্তা ফাঁকা করে দেবেন?আমাদের গাড়ি তো মনে হচ্ছে খুব পেছনে।নিশ্চয়ই খুব গুরুতর এক্সিডেন্ট হয়েছে।তাইতো এতগুলো গাড়ি জ্যামে আটকা।
-কথা তো ঠিক বলেছো।আমি বরং বাহিরে গিয়ে দেখে আসি।
-না না,এটা করবেন না।বাহিরে বাজ পড়ছে।গায়ে পড়লে খবর হয়ে যাবে।তাছাড়া আপনি ভিজে যাবেন বৃষ্টি হচ্ছে তো।
-গাড়িতে আমার রেইনকোর্ট আছে প্লাস ছাতাও।আর এখন বৃষ্টির গতি কমে গেছে।সামান্য drizzling হচ্ছে আমার প্রবলেম হবে না।তুমি বসো আমি আসছি।এই বলে ছাতা নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে আহসান।বেশ কিছু সময় অতিবাহিত হয়ে গেছে এখনো আহসান আসছে না।রিমি এবার খুব টেনশন করতে শুরু করে দিল।আহসান হুট করে চলে আসায় রিমির আহসানকে ঘিরে সব টেনশন যেন নিমিষেই উবে গেল।আহসানকে দেখেই রিমি বলে ওঠে,
-কোথায় ছিলেন?আমি কতটা ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-ভয় পাওয়ার কি আছে বলোতো?আমি মাত্র দেখে আসলাম এক্সিডেন্ট হওয়া গাড়ি দুটো সরানোর জন্য লোক আনা হয়েছে।ওই গাড়ি দুটো সরিয়ে ফেললেই জ্যামে আটকা পড়া গাড়িগুলো সামনে এগোতে পারবে।
-ও,
-হুম এই নাও (আহসান একটা থলে এগিয়ে দিল রিমির সামনে)
-এসব কি?
-আশেপাশে কোনো ফাস্টফুডের দোকান পাইনি তাই একটা ছোট বেকারির দোকান থেকে তোমার জন্য কিছু স্ন্যাকস কিনে আনলাম।এভাবে বসে বসে বোর হচ্ছো তুমি।
-এসব আনতে কে বলেছে?এসবের জন্য প্রায় ভিতে গেলেন আপনি।রেইনকোর্ট আছে তো ছাতা নিয়ে কেন গেলেন?ওটা পড়েই যেতেন।
-ওটা ব্যাগডালায় আছে।আর কিভাবে পড়তাম?ঝামেলা লেগেছে তাই আর পড়িনি।আমার ভেজার কারণ আছে।বাহিরে বাতাস বইছে খুব।বাতাসের ঝোঁকায় ছাতা উল্টে যায়।ফলে ভিজে যেতে হলো।
-ছাতা নিয়েও কোনো লাভ নেই।ভিজে যেতে হয় ই হয়।।আচ্ছা আমি মুছে দিচ্ছি এই বলে নিজের রুমালটা দিয়ে আহসানের চুলগুলো মুছে দিতে লাগলো।রিমি আহসানের চুল মুছতে ব্যস্ত আর আহসান রিমিকে দেখতে।রিমি আহসানের চাহনি দেখে থেমে গেল।ওরা আবারও একে অপরের দিকে তাকিয়ে থাকলো এক দৃষ্টিতে।দুজনের ধ্যান ভাঙে পেছনের গাড়ির হর্ন শুনে।আহসান সামনে তাকিয়ে দেখলো রাস্তা পুরো ফাঁকা।তাই দেখে আহসান তরিঘরি করে গাড়ি স্টার্ট দিল।বাড়িতে ঢুকেই রঞ্জিতের মুখোমুখি হতে হবে সেটা ভাবতে পারেনি আহসান ও রিমি।
-বাপি তুমি এখানে!জেগে আছো যে?
-কিছুই বলবো না যা ইচ্ছে করো জাস্ট এতটুকুই বলে নিজ রুমের দিকে পা বাড়ায় রঞ্জিত।আহসান বুঝতে পারলো রঞ্জিত কথাটা ওভাবে কেন বললো।ভোরে উঠেই রিমি ওর বালিশের পাশে একটা গিফট দেখতে পেল।গিফট খুলতেই সেখানে একটা সুন্দর শাড়ি দেখতে পেল।একটা পিংক কালারের কাতান শাড়ি।একটা কার্ড ও পেল।তাতে বাংলায় লেখা “হ্যাপি বার্থডে রিমি”।রিমি ওর কপালে হাত ছুঁইয়ে বলল,ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাক যে আজ আমার বার্থডে।কিন্তু এই কার্ড আর শাড়ি কে রাখলো এখানে?আহসান?নামটা নিতেই রিমির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠে।কিন্তু পরক্ষণেই বলে ওঠে,উনি আমার বার্থডে কিভাবে জানলো?আমাকে কদিন চেনে?আমি তো ওনাকে বলিনি যে আজ আমার বার্থডে।তাহলে?রিমি ওর ফোনটা হাতে নিতেই আরেকবার চমকে ওঠে।ওর বাবা ও আপুর নাম্বারে অনেকগুলো মিসডকল লেখা আছে।ফোন সাইলেন্ট থাকায় টের পায়নি।দুটো আননোন নাম্বার থেকে ম্যাসেজ ও এসেছে।দুটোই অচেনা নাম্বার।রিমি বেশ কিছুক্ষণ নাম্বার টার দিকে তাকিয়ে থেকে বলল,কার নাম্বার এগুলো?আমি তো চিনি না।আহসান হবে কি?হয়তো উনি হবে কিন্তু দুটো নাম্বার থেকেই ম্যাসেজ কেন দিল?উনি তো হসপিটালে চলে গেছে মনে হচ্ছে।কিন্তু কার্ড দেওয়ার পর ম্যাসেজ এ বার্থডে উইশ!বিষয়টা বুঝলাম না ঠিক।আর আমার নাম্বারই বা উনি কোথা থেকে পেলেন?ওনার মায়ের থেকে কি?আমি তো দেইনি নাম্বার।পেয়েছে হয়তো কোথাও থেকে।উনিই হবে।কি অদ্ভুত ওনার নাম্বার টাও তো কখনো দেখা হলোনা!তাইতো চিনতে পারছি না।আমি রিপ্লাই দেব কি?হুম দিয়েই দেই।রিমি থ্যাংকস লিখে সেন্ড করে দিল দুটো নাম্বারেই।তারপর বাবা আর আপুর সাথে কথা বলে রেডি হয়ে কলেজে চলে গেল।কলেজে দিনটা ভালোই যাচ্ছিলো।ভেবেছিলো আজ কোনো স্টুডেন্টের সাথে রাগারাগি করবে না।কিন্তু সামির সেটা আর হতে দিল না।রিমি লেজার টাইমে কলেজ ক্যান্টিনে বসে খাবার খাচ্ছিল।ওমন সময়ে সামির আর ওর চামচা রাফি সেখানে গিয়ে হাজির হলো।
-গুড নুন ম্যাম।বিশাল এক হাসিরসহিত বলল সামির।
রিমিও মুখে হাসির রেখা টেনে উত্তর দিল,সেম টু ইউ।কোনো কাজ আছে তোমাদের আমার সাথে?
-হুম ম্যাম আপনার জন্য একটা গিফট এনেছি।(গিফট এর প্যাকেট এগিয়ে দিল সামির)
রিমি অবাক দৃষ্টিতে বলল,গিফট কেন?
-আপনার আজ বার্থডে তাই।হ্যাপি বার্থডে ম্যাম।আর গিফট টা নিলে খুশি হবো।
রিমি বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-তুমি কিভাবে জানলে আজ আমার বার্থডে?
-ম্যাম আপনার আইডি কার্ডে দেখেছিলাম।ড্যাডের ক্যাবিনে আপনার আইডি কার্ডের ফটোকপি দেখেছিলাম।সেই থেকে জানা।
-এতো কেন জানতে গিয়েছো?পড়াশোনায় মন দাও এসবে মাথা কম ঘামানোর চেষ্টা করবে।
-আমি তো আগের তুলনায় অনেক মনোযোগী হয়েছি পড়াশোনায়।আপনি তো দেখছেনই আপনার সব কথা আমি অক্ষরে অক্ষরে পালন করছি এখন।আপনি কেন সব টিচারদের সাথেই আমি এখন ভালো ব্যবহার করি।তাদের কথা মেনে চলি।
-হুম তা ঠিক।কিন্তু তাই বলে আমার বার্থডে!আচ্ছা বাদ দাও।তুমি এবার ক্লাসে যাও সময় হয়ে আসছে নেক্সট ক্লাসের।
-ওকে,কিন্তু গিফট টা নিন না ম্যাম।আমি অনেক খুঁজে বিশেষ করে আপনার জন্য কিনেছি।প্লিজ ম্যাম।আমি আপনার স্টুডেন্ট।সেই হিসেবে আপনাকে বার্থডে গিফট তো দিতেই পারি।
-প্লিজ ম্যাম না করবেন না।স্যাম বস খুব ভালোবেসে আপনার জন্য কিনেছে।আমাকেও খুব জ্বালিয়েছে এই গিফট কেনা নিয়ে।
-ওকে নিলাম তবে এতো বেশি ভাবতে বা জানতে যাবে না আমাকে নিয়ে।আর কখনো গিফট দেওয়ার কথা স্বপ্নেও ভাববে না।এই শেষ কিন্তু!
সামির খুশি হয়ে বলল,ওকে ম্যাম।থ্যাঙ্কিউ ফর এক্সেপ্টিং মাই গিফট।
-এবার তোমরা যাও।সামির আর রাফি চলে যাচ্ছিলো কি রিমি ওদের ডাক দেয়।
-শোনো!
-জ্বি ম্যাম।(সামির)
-তুমি কি আমায় ম্যাসেজ দিয়েছিলে আজ?
সামির চুপ হয়ে গেল।রাফিও ভয়ে চুপসে গেল কথাটা শুনে।
-কি হলো চুপ করে আছো কেন?আন্সার দাও!ম্যাসেজ দিয়েছিলে কি?
সামির ভয়াতুর গলায় বলল,ইয়েস ম্যাম।
-তোমার এতো সাহস কি করে হলো আমায় ম্যাসেজ দেওয়ার?তোমাদের দুজনের আজ হচ্ছে।
-এই না না ম্যাম আমি কিছুই করিনি।আপনাকে স্যাম ম্যাসেজ দিয়েছে আমি না।(রাফি)
-এটা কোন ধরনের কাজ সামির?তুমি জানো এটা কত বড় অপরাধ?
-আর কখনো দেব না ম্যাম।শুধু আজই দিয়েছি।আপনার নাম্বার অনেক আগে থেকেই আমার কাছে ছিলো।আমি কিন্তু তখন কিছুই করিনি। না ফোন না ম্যাসেজ।কোনোটাই না।আজ আপনার বার্থডে বলে ভুল করে দিয়ে দিলাম ম্যাসেজ(মাথা নিচু করে)
-তাহলে ওই দুটো নাম্বার তোমাদের?
-আমি তো একটা নাম্বার দিয়ে ম্যাসেজ করেছি।গ্রামিণ নাম্বার দিয়ে।অন্যটা মেবি রাফির হবে।কিরে তুই দিয়েছিস নাকি?
-না আমি কোনো ম্যাসেজ দেইনি আপনাকে।আমার তো কাউকে মিসড কল দেওয়ার ই টাকা নেই।ম্যাসেজ তো অনেক দূরের ব্যাপার।
-ও আচ্ছা তোমরা তাহলে যেতে পারো এখন।আর কখনো এমন কিছুই করবে না মনে যেন থাকে।নইলে আমাকে তো চেনোই।(চোখ রাঙিয়ে)
-ওকে ম্যাম মনে থাকবে এই বলে সামির আর রাফি চলে যায়।
-গ্রামিণ নাম্বার টা যদি সামিরের হয় তাহলে বাংলালিংক নাম্বার টা কি তবে আহসানের?হুম তাই হবে।আজকে বিকেলে বাসায় আসলে জিজ্ঞেস করা যাবে।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৩৭
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
রিমি প্রতিদিনের মতো বাসায় এসে বই নিয়ে বসলো।দুপুরের খাবার টা কলেজেই খেয়ে আসে তাই আর বাড়িতে খাওয়া পড়েনা শুক্রবার ছাড়া।আহসান মাঝে মাঝে দুপুরের লাঞ্চ বাসায় করে।কারণ রোজ সে দুপুরের দিকে বাড়িতে আসেনা।বই পড়াটা রিমির একটা প্যাশন বলতে গেলে।ওর হাতে বই মানে দুনিয়া এক দিকে,বই আর ওর সম্পর্ক অন্যদিকে।স্বভাবটা বাবার মতো।দুজনেই বই পড়ুয়া।রিমির মনোযোগে বিঘ্ন ঘটে অপার আগমনে।
-কি করছে রিমি মা আমার!রিমি বরাবরই অপাকে দেখে খুশি হয়ে যায়।এবারও তার ব্যতিক্রম নয়।
-বই পড়ছিলাম গো।জানোই তো আমি কতটা বইভক্ত।যেকোনো সিচুয়েশনে আমি বই পড়তে ভালবাসি।আমার সকল রোগের মহৌষধী হচ্ছে বই আর বই।
অপা খাটের কোণে রিমির পাশ ঘেঁষে বসলো।
-এ কদিনে বেশ বুঝেছি তুই কতটা বই পরায়ণ মেয়ে।এমনি এমনি তো কলেজের শিক্ষিকা হসনি!তো খুব কি ইম্পর্ট্যান্ট কিছু পড়ছিস নাকি?
রিমি বইটা সাইডে রেখে বললো,তোমার থেকে ইম্পর্ট্যান্ট নয়।কি বলবে বলো।আমি শুনছি।
-তোর সাথে একটু গল্প করতাম।কিছু কথা জানার ছিলো।
-হুম অবশ্যই।
-তোর শ্বশুর মানে আমার বরটা তোর মতে কেমন মানুষ?
রিমির মুখে কালো অন্ধকার ভর করলো।চঞ্চলতা হারিয়ে গেল।তারপরও উত্তর দিল,বড়দের জাজ করার ক্ষমতা বা আস্পর্ধা কোনো টাই আমার নেই।তাদের সমতুল্য হওয়া যায়না।তারা বোধবুদ্ধিতে ছোটদের থেকে এগিয়ে।তাই বলতে পারলাম না উনি কেমন মানুষ।
-আমি জানি তোর সাথে আহসানের বাবা কখনো ভালো ব্যবহার করেনি।কেন যে তোর সাথে এতো বাজে ব্যবহার করে বুঝিনা আমি।এ নিয়ে প্রায়ই আমাদের কথা কাটাকাটি বেঁধেই থাকে।কিছুতেই বোঝাতে পারি না ওনাকে।
-যে বুঝতে চেষ্টা করে তাকে বোঝানো যায়।কিন্তু যে বুঝতেই চায়না তাকে বোঝাতে গেলে বিবাদ বেড়ে যায়।তুমি আর বোঝাতে যেওনা বাবাকে।
-বাবা!বাহ শুনে ভালো লাগলো।এতো কিছুর পরও যে বাবার সম্মান পায়,আমি মনে করি তার থেকে ভাগ্যবান লোক আর একটাও নেই।একদিন উনি তোকে কাছে টেনে নেবে দেখিস।সেদিন বউমা নয়,মেয়ের সম্মান পাবি।আমি আশা করি সেদিন যেন খুব নিকটে আসুক।আমি যে খুব আগ্রহ নিয়ে আছি রে।
-আমি বাবার মনের মতো না মা।তাই বাবা কখনোই আমাকে মেনে নেবেন না।
-আহসান কিভাবে মেনে নিল তোকে?
রিমির মুখ যেন তালাবদ্ধ হয়ে গেল।বলার ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না।
কিরে বল?আহসান এতো কম সময়ে কিভাবে তোকে মেনে নিল?আহসান ওতো ওর বাবার শিক্ষাতেই বড় হয়েছে।ও যখন পালটে যেতে পারে তবে ওর বাবা কেন নয়?আমি জানি তুই পারবি আহসানের বাবার ওই নিষ্ঠুরতম মনটাকে মমের মতো নরম করে দিতে।
-আমি পারবো না মা।
-আহসানের ক্ষেত্রে কিভাবে পারলি তাই বল?আমি এত বছরেও যা পারিনি তা তুই কটা দিনেই পেরে গেলি!এর মানে তোর মধ্যে অলৌকিক কোনো শক্তি যা আছে যা মানুষকে সঠিক শিক্ষা দিতে সক্ষম।
-আমি তা মনে করিনা।আহসান নিজের ইচ্ছেতে ভালো মানুষ হয়েছে।জানিনা আমি নিজে কতটা ভালো কিন্তু তবুও বলবো আমার মধ্যে যতটুকু মনুষ্যত্ব আছে তার সবটুকু আমি আহসানের মধ্যে দেওয়ার চেষ্টা করবো।
-শুধু আহসান কেন?ওর বাবাকেও দে।
-আমি কিভাবে পারবো বলো তো?আহসান নিজ ইচ্ছেতেই ধরা দিয়েছিল বলে তাকে জীবনের পাঠ পড়ালাম এখনো পড়াই।কিন্তু বাবা তো আমাকে দু চোখেও দেখতে পারেনা।তার ত্রিসীমানায় ও আমাকে দেখতে চায়না।এমতাবস্থায় কিভাবে সম্ভব?
-সব সম্ভব।তোর সবচেয়ে বড় শক্তি কি জানিস?
-কি?
-ক্ষমা,সহ্য করার ক্ষমতা।প্রতিশোধ নিতে জানিস না তুই।আর এটার জন্যই শেষ জয়টা তোরই হয়।তুই বলবি আমি তোকে কতদিন চিনি।আমি বলব মানুষ চিনতে যুগের পর যুগ লাগে না।কয়েক মুহুর্তই যথেষ্ট।আচ্ছা বাদ দে।আমি যে জন্য এসেছি সেটাই যাই নাহয়।
রিমি কপাল জোড়া হালকা ঘোচালো।
-কি জন্য মা?
অপা শাড়ির আঁচল থেকে লুকানো হাতটা বের করলো।হাতে তার গয়নার বাক্স।বাক্সটা খুলল।তার মধ্যে এক জোড়া কানের দুল।
একটা দুল হাতে নিয়ে রিমির কানের দিকে হাত বাড়ালো।
-কি করছো মা?
-পড়াতে দে বলছি আমি।অপা রিমির দু কানে দুল পড়িয়ে বলল,শুভ জন্মদিন মা।
-আপনি ও জানেন?কে বলল?আহসান?
-হুম আহসান বলেছে।
-আমি বুঝলাম না উনি কিভাবে আমার বার্থডে জানলেন।
-এটা জানা এমন কি ব্যাপার!তোর হাসবেন্ড তোর বার্থডে জানবে এটাই তো স্বাভাবিক।আচ্ছা বল কেমন লেগেছে দুলটা?
-ভালো লেগেছে তবে এটা তো স্বর্ণের!এতো দামি গিফট দেওয়ার কি দরকার ছিল?
-আমি তো তোকে কিছু দেইনি এই পর্যন্ত তাই মন চাইলো জন্মদিনের উদ্দেশ্যে দেই।
-বিয়েতে বউভাতে কতকিছু দিলে আর বলছো কিছু দাওনি আমায়!তুমি কি ভেবে বলছো!নাকি সব ভুলে গেছ?
-সবই মনে আছে।কিন্তু তুই যা পেয়েছিস তার সবটাই তো স্রুতিকে দেওয়ার জন্য বানানো।ও চলে যাওয়ায় তুই আহসানের বউ হলি আর সব গহনা তুই পেলি।তোর নাম করে তো বানাইনি ওইগুলো তাই দিলাম।
-তুমি এতো নিঃস্বার্থ কেন গো?বাবার মতো তুমি ওতো আমার উপর রাগ করতে পারতে।স্রুতির পালিয়ে যাওয়া নিয়ে আমি সবই জানতাম তা সত্ত্বেও তুমি আমার সাথে খুব স্বাভাবিক ও সুন্দর আচরণ করে এসেছো।আমি খুব বেশি অবাক তুমি এতো সহজে আমাকে কিভাবে আপন করে নিলে।
-এইযে বললাম তোর মধ্যে প্রতিশোধ নেওয়ার ক্ষমতা নেই।আছে শুধু ক্ষমা করার।আমি সেদিন হয়তো এই জিনিসটা বুঝতে পারিনি। সেদিন স্রুতি আর আহসানের দিকটা বিচার করেছিলাম।বিয়েটা হলে আহসান বা স্রুতি কেউই খুশি হতো না।তাই যা হয়েছে ভালো হয়েছে এই ভেবে আহসানের বাবাকে বলি সম্মান যেহেতু গিয়েছি বিয়েটা হলেই ভালো হতো।
-তার মানে আমাদের বিয়ে তোমার কথায় হয়েছে?
-কিছুটা আমার জন্য।আহসানের বাবা খুব ভেঙে পড়েছিল।এতো এতো লোকজনের নানান কথা তার সহ্য হচ্ছিলো না।কখনো অপমানিত হয়নি উনি তাই ওইদিনটাকে মেনে নিতে পারছিলেন না।আমি শুধু বলেছিলাম বিয়েটা অন্য কারো সাথে হলে ভালো হতো কিন্তু তোর সাথে হোক এটা বলিনি।উনি নিজেই বলেছিলেন শ্রুতির বান্ধবী মানে তোর সাথেই আপাতত বিয়েটা হোক।আমি বলেছিলাম আহসান মানবে তো?
-তারপর?
-উনি বলেছিলেন আহসান আমার কথা শুনতে বাধ্য।ওকে মানানোর দায়িত্ব আমার।তারপর তোদের বিয়ে হলো।
-ও বুঝলাম।
-হুম আরেকটা কথা।
-হুম বলো।
-রেডি হয়ে নে।আহসান ছাদে তোর জন্য একটা ছোট করে পার্টি অ্যারেঞ্জ করা করেছে।১ ঘন্টার মধ্যে চলে আসিস।
-কিন্তু এসবের কি দরকার ছিল?বাবা জানলে খুব রাগ করবেন।
-ওনার আসতে খুব দেড়ি ভয় পাসনা।বাহিরের কেউ আসছে না।আহসান,আমি, তুই আর সম্পা।
-কিন্ত মা,,
-কোন কিন্তু না।আমিও একটু রেডি হই আফটার অল ছেলের বউয়ের জন্মদিন বলে কথা।আমি গেলাম।
অপা চলে গেলে রিমি পুরো রুমের পাইচারি করতে শুরু করে দিল।
-আমি এখন কি করবো?খুব ভয় করছে।একবার যদি ওনার বাবা চলে আসে তাহলে আমি শেষ।এত বাড়াবাড়ি কে করতে বলেছিল ওনাকে?কোনো উপায় ও দেখছি নেই।এখন যদি ছাদে না যাই তাহলে আহসান খুব রাগ করবে।আমার জন্য পার্টির আয়োজন করলো আর আমিই যদি না যাই তাহলে বিষয় টা ভালো দেখাবে না।মা আহসান দুজনেই অভিমান করবে।আমি বরং যাই।রিমি আহসানের দেওয়া শাড়িটা পড়ে নিল।বাঁকা সিঁতি তুলে চুলগুলো ছেড়ে রাখলো।আর হালকা করে পিংক লিপ্সটিক সাথে চোখ ভর্তি কাজল।রেডি হয়ে পা চালালো।ছাদের দরজা টা খুলতেই উপর থেকে গোলাপের পাপড়ির বর্ষণ হতে শুরু করলো রিমির উপর।রিমি সারপ্রাইজড হয়ে গেল।সামনে তাকাতেই আহসান,অপা আর সম্পাকে দেখতে পেল।সবাই রিমির জন্য হ্যাপি বার্থডে গান গাচ্ছে।আহসান রিমির দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়ে বললো,Welcome my party mrs.birthday girl…রিমি আহসানের হাত ধরে নিল।চারিদিকে চোখ বোলাতেই আরেক দফা সারপ্রাইজড হলো রিমি।খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে ছাদটাকে।চারিদিকে হরেক রকমের লাইট।পুরো ছাদ জুড়ে বেলুনের সমাহার।ছাদের মাঝখানে বড় একটা টেবিল রাখা সেখানে বিশাল একটা কেক আর মিষ্টিজাতীয় খাবার সাজানো।আহসান ইশারা করে রিমিকে আকাশের দিকে তাকাতে বললো।রিমি আকাশের দিকে তাকাতেই ওর চোখ বড় হয়ে গেল।কারণ আকাশে happy birthday Rimi লেখা ভেসে উঠেছে।কয়েক সেকেন্ড পর সেটা হাওয়ায় মিলিয়ে গেল।রিমি যেন ওর চোখকে বিশ্বাস করাতে পারছে না।ফ্রিজড হয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
অপা বলল,কেমন লেগেছে সারপ্রাইজ?এইসব কিছু আহসানের প্লান করা।রিমি আহসানের দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দিয়ে বলল,ধন্যবাদ।আমি সত্যি আজ খুব খুশি হয়েছি।
-ধন্যবাদ দিতে হবে না।তোমার জন্য আরেকটা সারপ্রাইজ আছে এখন কেকটা কাটো।আহসান রিমির হাতে ছুরিটা গুজে দিল।রিমি কেক কেটে সর্বপ্রথম অপাকে খাওয়াতে নিল কিন্তু অপা আটকে নিল।
-আগে আমি নই যে এতসব আয়োজন করেছে আগে তাকে খাইয়ে দে।রিমি আহসানকে কেক খাইয়ে দেওয়ার পর আহসানও খাইয়ে দিল।তারপর অপা ও সম্পাকে খাওয়ালো।
-চল সম্পা আমরা এখন যাই।
-হুম চলেন খালাম্মা।
-তোমরা চলে যাচ্ছো কেন?একসাথেই যাই আমরা।(রিমি)
-সেটা তো হয়না মা।আমাদের খুব কাজ আছে তোরা পার্টি এঞ্জয় কর এই বলে অপা আর সম্পা চলে গেল।
রিমি অবাক হয়ে বলল,ওনারা এভাবে চলে গেল কেন?
আহসান ঠোঁট উলটে বলল,আই ডোন্ট নো।এই বলে আহসান পকেট থেকে একটা ডাইমন্ড নেকলেস বের করে রিমিকে বলল পড়িয়ে দেব?
রিমি ওর পিঠের চুলগুলো সামনে এনে উল্টো দিক ফিরে দাঁড়ালো।আহসান বাঁকা হেসে রিমির গলায় নেকলেস টা পড়িয়ে দিল।তারপর রিমিকে ওর দিকে ফিরিয়ে বলল,তোমাকে কিছু বলতে চাই।
-তার আগে আমার কিছু প্রশ্নের উত্তর দিন।
-আমি তোমার বার্থডে কিভাবে জানলাম?আমি তোমার বায়ো দেখে তোমার বার্থডে জেনেছি।হয়েছে?
রিমি আনমনে বলল,সবাই এটা দেখেই জানে নাকি?
-সবাই বলতে আর কে কে জেনেছে?
-কিছু না।আরেকটা প্রশ্ন আপনি কি আমাকে ম্যাসেজ দিয়েছিলেন?
-না কেন?কি ম্যাসেজ?
-আপনি তাহলে কোনো ম্যাসেজ দেননি আমায়?
-আমি কোন ম্যাসেজ দেইনি তোমায়।তোমার নাম্বার টাইতো নেই আমার কাছে।কেন কেউ কি ম্যাসেজ দিয়েছে তোমাকে?
-হুম দুটো নাম্বার থেকে বার্থডে ম্যাসেজ এসেছিল একটা আমার স্টুডেন্ট আরেকটা জানি না।
-ওটাও কোনো স্টুডেন্ট হবে হয়তো।তুমি কিন্তু আমার মুডটাই নষ্ট করে দিলে।আমি আর বলছি না।বায় বলে আহসান চলে যেতে নেয়।কিন্তু রিমি গিয়ে আহসানের সামনে দাঁড়িয়ে ওকে আটকে নেয়।
#চলবে,,?
(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#চলবে,,?
(নিজের ফোন না এটা।বাবার ফোন।তাই চাইলেও বড় করে লিখতে পারিনা।তাছাড়া আমি ১ ঘন্টার বেশি ফোনের দিকে তাকিয়ে থাকতে পারি না।সবাই আমার ভুলগুলোকে ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)