তোলপাড় পর্ব ৩৪+৩৫

#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৩৪
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

বেলা ৩টের পর ওরা বেরিয়ে পড়ে রিসোর্ট ভ্রমণে।তানিয়া খুব বেশি কথা বলছে আহসানের সাথে।ননস্টপ কথা বলেই যাচ্ছে।বিষয়টা রিমির খুব বেশিই বিরক্ত লেগেছে।কোনোমতে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণে রেখেছে রিমি।ওরা সর্বপ্রথম যেখানে বিভিন্ন প্রকারের রাইড ছিল সেখানে গেল।রোলার কোস্টারের কাছে যাওয়ার পর তানিয়া বলে ওঠে,

-চলো রোলার কোস্টারে আগে ওঠা যাক।আহসান ও তাহসিন দুজনই সন্মতি দিল তবে রিমি ছাড়া।ও বলল,তোমরা চড়লে চড়ো আমি এর মধ্যে নেই বলে রাখলাম।

-থাক ওর মাথা এমনিতেই ব্যাথা এটাতে চড়লে চক্কর দিয়ে মাটিতে পড়ে যাবে উপর থেকে।
আহসানের কথায় তানিয়া ও তাহসিন সায় মেলালো।তানিয়া রিমির হাতে একটা ক্যামেরা দিয়ে বলল ওদের পিক তুলতে।তারপর রিমিকে রেখেই ওরা রোলার কোস্টারে উঠে গেল।আহসান আর তানিয়া একসাথে বসেছে।রোলারকোস্টার চালু হতেই ওরা হাওয়ায় চিল্লাতে শুরু করল।ওরা খুব এঞ্জয় করছে।আর রিমি রাগে ফুসছে।

-একবার বলেছি চড়বো না তাই বলে জোর করলো না কেউ!আমার কি সত্যি সত্যি মাথায় ব্যাথা করছিল নাকি!আমি তো এমনি বলেছিলাম রাগ হচ্ছিলো কোনো উপায় না পেয়ে ওটাই বলে দিয়েছিলাম।কেমন হাসবেন্ড আমার?বিবাহিত একটা মহিলার পাশে বসে রাইড এঞ্জয় করছে।ওনাকে তো আদালতে যত মামলা আছে সব কিছুর উত্তরাধিকারী বানানো উচিত।এক নাম্বারের ৪২০ উনি।খুবই পঁচা উনি।পিক তুলবো তাইনা?ঘোড়ার ডিম তুলে দেব আমি এই বলে ক্যামেরাটা হাতেই ধরে রাখলো।৫ মিনিট পর আহসানরা নিচে নেমে রিমির কাছে আসলো।
এসেই আহসান রিমিকে বলল,তুমি না গিয়ে কতো কিছু যে মিস করলে বোলার বাহিরে।

রিমি মুখ বাকিয়ে বলল,থাক আমার এসব ভালো লাগেনা।আপনারাই মজা করুন।

তানিয়া বলল,চল এবার হর্স রাইড করি।

-নাহ আর না অনেক হয়েছে এতো রাইডে চড়লে পেটের ভেতর যা আছে সব জায়গা বদল করে নেবে।

-তুমি আসলেই একটা ভীতুর ডিম।আহসান চল তুই আর আমি যাই।

-হুম চল এই বলে আহসান আর তানিয়া চলে গেল হর্স রাইড করতে।

তাহসিন আর রিমি গেল না।রিমির মন চাচ্ছে রিসোর্টের রুমে চলে যেতে কিন্তু আহসানকে তানিয়ার হাতে ছেড়ে দিয়ে যেতেও পারছে না।রিমি আরেক ধাপ অবাক হলো তাহসিন কে দেখে।ওর বউ অন্য একজনের সাথে রাইডে চড়ছে এতো বেশি হাসাহাসি করছে আর ও কিনা হাসি মুখে সব মেনে নিচ্ছে।এমনকি ছবিও তুলছে আহসান ও তানিয়ার।রিমির মন চাচ্ছে তাহিসিনকে দু চারটা কথা শোনাতে।কিন্তু সেটাও পারলো না।কারণ ওর বর ওতো একই কাজ করছে।আহসান আর তানিয়া হর্স রাইড শেষ করল।এরপর আহসান তানিয়াকে জিজ্ঞেস করল,এবার কোনটায় চড়বি?

তানিয়া উত্তর দিল,গলা শুকিয়ে গেছে চিল্লাতে চিল্লাতে।চল আমরা আইসক্রিম খাই।

-এখন আবার হোটেলে ফিরে যাবো আমরা?

আহসান কথাটা শেষ করতেই রিমি বলে ওঠে,হুম এটাই বেস্ট হবে।আমরা বরং হোটেলেই ফিরে যাই।

-আমাদের কোথাও যেতে হবে না।এখান থেকেই আইসক্রিম খাব আমরা।
আহসান আর রিমি যেন বুঝতে পারলো না তাহসিনের কথা।তাই ওরা দুজন একসাথে জিজ্ঞেস করে ওঠে,কিভাবে?

তানিয়া চোখ মেরে বললো, চল আমাদের সাথে দেখতে পারবি কিভাবে।তানিয়া আর তাহসিন পাশেই একটা আইসক্রিম পার্লারে নিয়ে গেল ওদের।সেখানে ঢুকে রিমির চোখ ধাধিয়ে গেল।আইসক্রিম পার্লারের ভেতরের চারিদিকে হরেকরকম আইসক্রিমের ছবি আর্ট করা।যারা যারা আইসক্রিম বিক্রি করছে তারা সবাই আইসক্রিমের ডিজাইনের ড্রেস পড়া।তারা আমাদের দেখে ওয়েলকাম জানালো।এই ওয়েলকাম পর্বটা সেই যে শুরু হয়েছে,এখনো শেষ হচ্ছে না।না হওয়ারই কথা।তাহসিন আর তানিয়া এই রিসোর্টের মালিক।ওরা রিসোর্টের যেখানেই যাক না কেন সম্মান তো পাবেই।আর ওদের গেস্ট হচ্ছে আহসান ও রিমি।তাই ওদের সাথেও সবাই খুব আন্তরিকতার সঙ্গে কথা বলছে।অন্যান্য লোকজনদের সাথে সুন্দর ব্যবহার করলেও মালিক ও তাদের গেস্টরাই সবচেয়ে বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করে সবার।রিমির আইসক্রিম অসম্ভব ভালো লাগে।আইসক্রিম দেখে ওর মন আচমকাই খুশিতে ভরে ওঠে।রিমি ওর পছন্দের চকলেট আইসক্রিম নিয়েছে।আহসান ও চকলেট আইসক্রিম নিয়েছে।যদিও আহসানের
চকলেট আইসক্রিম পছন্দ না।তবুও রিমি নিয়েছে বলে আহসান ও নিল।

তাহসিন আহসানকে উদ্দেশ্য করে বলল,কিরে তুই চকলেট আইসক্রিম নিলে কেন?তুইতো ভানিলা ফ্লেভার লাইক করিস।

আহসান রিমির দিকে তাকিয়ে বলল,প্রিয় মানুষের পছন্দ টাই নিজের পছন্দে পরিণত হয়ে যায়।তখন নিজের পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকে না।রিমি আইসক্রিম খেতে ব্যস্ত আহসানের কথা তাই ওর মাথায় গেল না।সবাই আইসক্রিম খাচ্ছে এমন সময় তানিয়া আহসানের গালে আইসক্রিম লাগিয়ে দিল।তারপর আহসানও তানিয়ার পুরো মুখে আআইসক্রিম লেপ্টে দিল।তাহসিন ও ওদের সাথে যোগ দিল।আর রিমি নাক ফুলিয়ে ওদের কান্ড দেখে যাচ্ছে।

-কি লাগিয়ে রেখেছে এই তানিয়া মেয়েটা!একটুও কি লজ্জা বলতে কিছু নাই ওর?হতে পারে ও আহসানের বেস্টফ্রেন্ড কিন্তু আমি যে ওর ওয়াইফ সেটা তো জানে।আমার সামনে এসব কি লাগিয়েছে!আমি অনেক টিকটিকি দেখেছি কিন্তু এই তানিয়ার মতো গায়ে পড়া টিকটিকি আজ প্রথম দেখলাম।হুহ!হঠাৎ রিমির চোখ গেল কিছু মানুষের দিকে।তারা আইসক্রিমের ড্রেস পড়ে বাচ্চাদের সাথে মজা করছে।বাচ্চাদের আইসক্রিম দিতে গিয়েও দিচ্ছে না।বাচ্চারা কতো চেষ্টা করছে আইসক্রিম নিজের কব্জায় নেওয়ার জন্য।কিন্তু পারছেই না।রিমি কাছে গিয়ে বাচ্চাদের হয়ে খেলতে শুরু করে দিল।রিমিও পেরে উঠছে না তাদের চালাকির সাথে।বেশ কয়েকবার ট্রাই করার পর রিমি সফল হলো আইসক্রিম নিজের দখলে নিতে।রিমির সাথে সব বাচ্চারা খুশি হয়ে গেল।গিফট হিসেবে রিমি এক বক্স আইসক্রিম পেল।সব আইসক্রিম রিমি বাচ্চাদের মধ্যে বিতরণ করে দিল।ওদিকে আহসানের দুটো চোখ শুধু রিমিকেই দেখে যাচ্ছে অপলক দৃষ্টিতে।তাহসিন আহসানের মুখের সামনে তুড়ি বাজাতেই আহসান ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে আসলো।

-নিজের বউয়ের দিকে নজর দিস কেন রে!এভাবে আড়চোখে না তাকিয়ে নিজের মনের কথা বলে দিলেই তো পারিস।

-কিভাবে বলি বল,আমি তো জানি না রিমি আমাকে নিয়ে কি ভাবে।আমি যদি বলে দেই তাহলে ও যদি আমাকে ভুল বোঝে!তাই আমি চাই রিমি আগে ফিল করুক ও আমাকে ভালবাসে,তারপর আমি বলবো।

-ফিল করবে কি,ও তোকে ভালবাসেই বাসে।দেখছিস না কিভাবে জ্বলছে তোকে আর আমাকে একসাথে দেখে।(তানিয়া)

-কিছুই হচ্ছে না।বরং আমার মনে হচ্ছে রিমি আমাকে খারাপ ভাবছে।ও হয়তো ভাবছে আমি কিভাবে একটা ম্যারিড মেয়ের সাথে এতো ক্লোজলি কথা বলছি।তাইতো এখনো ওর মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা বের হচ্ছে না।কারণ ওর মনে আমার জন্য যতটাই রেস্পেক্ট ছিল সব শেষ হয়ে গেছে।সব হয়েছে তোর এই নাটকটার জন্য।আমি আর তোর কোনো প্লেন ইনভলভ থাকতে পারছি না।

-একদম ঠিক বলেছিস আহসান।আমারও তাই মনে হচ্ছে।(তাহসিন)

-তোমরা আমাকে আরেকটা সুযোগ দাও আমি এবার রিমির মুখ থেকে ভালবাসি কথাটা বলিয়েই ছাড়বো।প্লিজ আরেকটা সুযোগ দাও।আহসান ও তাহসিন দুজনেই বলল,ওকে জাস্ট একটা সুযোগ।

-ওকে,আজ সন্ধ্যার পার্টিতেই আমি আমার লাস্ট প্লান এপ্লাই করবো।আর এইবার বাজিমাত করবোই করবো।

-অপা,আহসান কোথায়?ওকে দেখছি না কেন?(রান্না ঘরের দিকে আসতে আসতে বলল রঞ্জিত।

অপা কিচেন থেকে বেরিয়ে আসলো হাত মুছতে মুছতে।তারপর বলল,বউমাকে নিয়ে একটু ঘুরতে গেল বাহিরে।
কথাটা শুনে রঞ্জিতের চোখ কপালে উঠে গেল।রাগে বিস্ফোরিত হয়ে বলল,কখন গেল?আমাকে কেন বলে গেলনা?

-এটা কি বলে যাওয়ার বিষয়?নিজের বউকে নিয়ে ঘুরে বেড়াবে এতে বলার কি আছে?চিন্তা করো না আজ রাতের মধ্যেই চলে আসবে বলেছে।তুমি একটু বসো গিয়ে আমার রান্না হয়ে এসেছে।

-এই বাড়িতে কি আমার কোনোই দাম নেই?আমি যে এই বাড়ির মেইন কর্তা তাকি তোমরা মানো না?আমি আহসানের বাবা।ও কোথায় যাবে না যাবে সেটা সম্পুর্ণ আমার উপর ডিপেন্ড করে।

-এভাবে কেন বলছো।এটা সিম্পল একটা বিষয়।সিম্পল ভাবেই নাও।আহসান তো এখন বড় হয়েছে।নিজের ডিসিশন নিজেই নিতে পারে।ভালো মন্দ বোঝে।আমাকে যাওয়ার সময় বলেছে ওরা বেরুচ্ছে।আমার পারমিশন ও নেয়নি।এতে কি আমি রাগ করেছি?না একদমই রাগ করিনি।কারণ এটা রাগ করার বিষয়ই না।তুমি একটু বুঝতে চেষ্টা করো প্লিজ।
রঞ্জিত এই বিষয় টা নিয়ে আর কথা বাড়ালো না।মুখ ভাড় করে সোফায় গিয়ে বসে রইলো।
#তোলপাড়💓
#পর্বঃ৩৫
#শান্তনা_আক্তার(Writer)

বিকেল বেলা একজন ওয়েটার আহসানদের রুমে দুটো ব্যাগ নিয়ে আসলো।আহসান জিজ্ঞেস করতেই ওয়েটারটা বলল তাহসিন স্যার পাঠিয়েছে।রিমি বিছানার এক কোণে বসে ফোন ঘাটছে।আহসানের সাথে তেমন কথা বলছে না প্রয়োজন ছাড়া।রিমি যেহেতু আহসানের কোনো কথারই ঠিক করে উত্তর দিচ্ছে না সেহেতু আহসান ও তেমন কথা বলছে না রিমির সাথে।আহসান ব্যাগ গুলো খুলে দেখলো ওটার মধ্যে ব্লু কালারের সুট আর একটা ব্লু কালারের একটা গাউন।
আহসান সুট টা হাতে নিয়ে বলল,আই থিংক এটা পার্টির জন্য।কিন্তু আমার সাইজ এ ঠিক হবে তো?আহসানকে আয়নার সামনে গিয়ে সুট জড়াতে দেখে রিমি আড়চোখে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলো আহসান কি করছে।

-ঠিকই আছে।তাহসিন তাহলে আমার মাপটা মনে রেখেছে।সুট খুলে রিমিকে উদ্দেশে করে বলল,তোমার জন্য একটা ড্রেস পাঠিয়েছে দেখে নাও হয় কিনা।

রিমি ফোনের দিকে চেয়েই উত্তর দিল,দুপুরে আপনার ফ্রেন্ড তানিয়া আমার মাপ জানতে চেয়েছিল,আমি বলেছিলাম।রিমি এতটুকু বলল আর আহসান বুঝে নিল যে রিমির মাপ অনুযায়ী ড্রেস বানানো হয়েছে।

সময় মতো আহসান ও রিমি রেডি হয়ে রিসোর্টের বিশাল এক মাঠে পৌঁছে গেল।খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে গ্রাউন্ডটাকে।রিমির বেশ লাগলো ডেকোরেশনটা।ও তেমন সাজেনি জাস্ট গাউন পরে মাথায় উঁচু করে হিজাব পরেছে।রিমি ফর্সা হওয়াতে নীল রঙ টা বেশ ফুটেছে ওর গাঁয়ে।আহসানকেও কম হ্যান্ডসাম লাগছে না।আহসান ও রিমিকে পাশাপাশি খুব সুন্দর মানিয়েছে।বলতে গেলে ওরা দুজনই সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। তানিয়া আর তাহসিনও ম্যাচিং করে ড্রেস পড়েছে।পার্টি নাচ গানে মেতে উঠেছে।সবাই যার যার কাপলের সাথে নাচছে।শুধু আহসান রিমি ছাড়া।আহসান রিমিকে ওর সাথে নাচতে বলার সাহসই পাচ্ছে না।বারবার রিমিকে বলতে গিয়েও নিজেকে আটকে নিচ্ছে।রিমি চারিদিকের ঝলমলে আলো উপভোগ করছে।মন চাইলে দু তিবটা ছবি তুলে নিচ্ছে ওর ফোনে।আহসান যে ওর সাথে ডান্স করতে চাচ্ছে সেটা ও বুঝতেই পারছে না।রিমি তো আহসানকে ভুলেই গিয়েছে প্রায়।ওতো নিজেকে নিয়ে ব্যস্ত।ওদের দুজনকে এভাবে বসে থাকতে দেখে তাহসিন ও তানিয়া নাচ থামিয়ে ওদের কাছে আসে।তাহসিন এসেই জিজ্ঞেস করল,কিরে তোরা ডান্স করছিস না কেন?

আহসান হতাশাভরা ফেস নিয়ে বলল,তোরাই ডান্স কর।আমারতো কোনো পার্টনার নেই।কথাটা যেন রিমির গায়ে গিয়ে লাগলো।রিমি রেগেমেগে বলল,পার্টনার কিভাবে নেই?তানিয়া আপু আছে না!আপনি ওনার সাথে ডান্স করুন।

-তানিয়ার হাত পা ১০-১২ টা না যে ও একসাথে অনেকজনের সাথে ডান্স করবে।আহসানও কড়া গলাতেই বলল।
পরিস্থিতি স্বাভাবিক না দেখে তানিয়া বলে ওঠে,থাক ঝগড়া করতে হবে না।রিমি একদম ঠিক বলেছে তুই চল আমরা দুজন ডান্স করি।আর তাহসিন তুমি একটু বসে রিমির সাথে গল্প করো।

-ওকে ক্যারি অন।
আহসান ডান্স করতে চায়নি কিন্তু তানিয়া এক প্রকার জোর করে আহসানকে নিয়ে ডান্স করতে শুরু করে দেয়।রিমি রাগটা মুখে প্রকাশ না করলেও মনে মনে খুব বকছে আহসান ও তানিয়াকে।রিমি যেন আর দেখতে পারছে আহসান ও রিমির নাচের দৃশ্য।ওদের উপর রাগ ঝাড়তে না পেরে ফোনের উপর রাগ দেখাচ্ছে।ফোনটাকে দু একবার বারি দিল টেবিলের সাথে।তাই দেখে তাহসিন বলল,এনি প্রবলেম রিমি?

রিমি জোর করে ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বলল,না ভাইয়া কোনো প্রবলেম নেই।জাস্ট নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না ফোনে তাই আরকি রাগ হচ্ছে।

-তুমি কি সিম ইউজ করো যে এখানে নেটওয়ার্ক পাচ্ছে না?

-রবি সিম।

-আমি ওতো রবি সিম চালাই।কিন্তু আমার ফোনে তো পুরো ফোর-জি নেটওয়ার্ক।(ফোনটা দেখিয়ে)

-ওওও,এখন মেবি পাচ্ছে।এইতো আমার ফোনেও ফুল নেটওয়ার্ক চলে আসছে।

-আসল প্রবলেম টা কি আমি আমি খুব ভালো করেই বুঝতে পারছি।তাহসিন কথাটা অস্পষ্ট করে বলায় রিমি শুনতে পেলনা।রিমির নজর যাতে আহসানদের দিকে না যায় তাই মন পার্স থেকে ইয়ারফোনে বের করে মন ভালো করা একটা গান শুনতে শুরু করে দিল।তাহসিন দেখলো নিমিষেই রিমির মুডটা চেঞ্জ হয়ে গেল।ওদিকে আহসাব ও বিরক্ত হয়ে বলল,তানিয়া ছাড়তো আমার আর ভালো লাগছে না এভাবে ডান্স করতে।এই বলে তানিয়ার হাত ছেড়ে দিল আহসান।

-এভাবে ডান্স করতে থাক দেখবি রিমি কিভাবে ছুটে চলে আসে তোর কাছে আর আমার হাত ছাড়িয়ে নিজেই তোর সাথে নাচতে শুরু করে।

-কতো যে নাচবে!ওই দেখ দিব্বি গান শুনছে।আর ওর চোখে মুখে একটুও রাগের চিহ্নটুকু নেই।তোর এই প্লানটাও ফ্লপ হয়ে গেল।

-হুম ঠিক বলেছিস রে।

-এবার তোর এই রিমিকে জেলাস করার সব প্লান ছাড় মেরি মা।আমি তোকে ১ মাস কেন ১ বছর টানা আইসক্রিম পাঠাবো তাও তুই এসব বাদ দে।

-কিন্ত আমি যে এখন আমার ধামাকাদার আইডিয়াটা কাজে লাগাইনি।

-আমি তোর কাছে চার হাত পা জোড় করে মাফ চাচ্ছি তুই আর আমাদের মাঝে আসিস না।যা করার আমিই করবো।তুই অনেক হেল্প করেছিস আর না।এসব করে কোনোই লাভ হবে না।উল্টো আমার আর রিমির মাঝে দূরত্ব বেড়ে যাবে।আমাকে আর তোকে খারাপ ভাববে।এবার যা করার আমিই করবো।এই বলে আহসান রিমির কাছে গেল।রিমির কান থেকে ইয়ারফোন গুলো খুলে রিমির সামনে হাটু মুড়ে বসলো।রিমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে রইলো।আহসান আচমকা এমন কিছু করবে তা ওর কল্পনার ও বাহিরে।বেশ বিভ্রান্তি সৃষ্টি হচ্ছে ওর মনে।বুঝতে পারছে না আহসান কি করতে চাচ্ছে।আহসান ওর ডান হাত রিমির দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,Will you dance with me?
রিমি ভাবছে ও যা দেখছে সবই যেন স্বপ্ন।নিজের চোখকে যেন ও বিশ্বাস করতে পারছে না।তানিয়া আর তাহসিন রিমির দুদিক দিয়ে বলছে হাত বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য।রিমি যেন তব্দা খেয়ে গেছে।কারো কোনো কথাই ওর কান অবধি যাচ্ছে না।রিমি প্রায় তিন মিনিট তাকিয়ে থাকার পর আস্তে আস্তে নিজের হাত বাড়ালো।দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।আহসান আর রিমি কাপল ডান্স করছে।আর বাকিরা ওদের চারপাশে ঘেরাও দিয়ে আছে।আহসান রিমি কাউকে তোয়াক্কা না করে নিজেদের মতো নাচছে একে অপরের সাথে তাল মিলিয়ে।ওদের চোখ জোড়া আবদ্ধ হয়ে আছে।চোখ যেন অনেক কথা বলছে।সেটা কারো বোঝার কাম্য নয়।আবদ্ধ চোখ জোড়াই যেন ভাষা হয়ে নিজেদের অনুভূতির জানান দিচ্ছে।গান স্টপ হতেই সবাই হাতে তালি দিতে লাগলো।তালির শব্দে আহসান রিমি চারিদিকে তাকালো।রিমি যেন বেশ লজ্জা পেয়ে গেল এতো মানুষের চাহনি দেখে।চট করে আহসানের হাত ছেড়ে দিয়ে দূরে চলে আসলো।আহসান মিটমিটিয়ে হাসছে শুধু।এমন ভাবে হাসছে যেন বিশাল কিছু জয় করে ফেলেছে।ডিনার শেষে আহসান ও তাহসিন আবারও আড্ডায় বসে গেল।আহসান আর তাহসিন এক জায়গায় বসে গল্প করছে।আর রিমি তানিয়া অন্য জায়গায়।

-দোস্ত তুই তো আজ ফাটিয়ে দিলি।কিন্তু প্রপোজ করলে আরও বেশি ইন্টারেস্টিং হতো ব্যাপারটা।(তাহসিন)

-আজ নয়।সঠিক সময় আসুক নিজের মতো করে প্রপোজ করবো রিমিকে।আর সেখানে কেউ থাকবে না আমি আর রিমি ছাড়া।

-কি বলছিস তুই!এতো সুন্দর একটা পরিবেশ আর তুই কিনা প্রপোজ করবি না!

-যতই সুন্দর মনোরম পরিবেশ থাকুক না কেন,এসব তো আমার অরগানাইজ করা না।আমি চাই আমাদের প্রথম ভালবাসার দিনটা নিজ হাতে সাজাতে।রিমি যেন খুব খুশি হয়ে যায় সেটা দেখে।আর সেদিনই আমি রিমিকে প্রপোজ করবো।এক কথায় দিনটাকে নিজের মতো করে স্মরণীয় করে তুলতে চাই।কারো হেল্প ছাড়া।

-বুঝেছি ভাই।গ্রেট আইডিয়া এটা।বেস্ট অফ লাক।আমিও ওয়েট করে থাকবো তোকে আর রিমিকে রোমান্টিক কাপল হিসেবে দেখার জন্য।

-আমাকে মাফ করে দাও রিমি।আমি আসলে তোমাকে জেলাস ফিল করানোর জন্য এতসব ড্রামা করেছিলাম।আহসান আর আমি বন্ধু মাত্র।আমাদের মধ্যে তেমন কিছুই কখনো ছিলো না।আর এসব আমার প্লান করা।আহসান শুধু একটু হেল্প করেছে।তবুও ও আমাকে প্রথম প্রথম হেল্প করতে চায়নি।আমি বাজি ধরেছিলাম তাই মানতে রাজি হয়েছে।এই পুরো কারসাজি আমার।আহসানের কোনো দোষ নেই।তানিয়া এক নিঃশ্বাসে বলে ফেলল সবটা।

-কিন্তু তুমি এই নাটকটা কেন করলে?কি লাভ হলো?

-আমি দেখছিলাম তুমি আহসানকে ভালবাসো কিনা।আর তুমি যেন আহসানকে প্রপোজ করো তাই এসব করা।

-মানে?আমি কেন ওনাকে প্রপোজ করতে যাব?আর কেনোই বা ভালবাসবো?আমাদের কয়েকমাস পর ডিভোর্স হয়ে যাবে তারপর উনি ওনার রাস্তায় আর আমি আমার রাস্তায়।

-কথাটা মনে হলো মনের বিরুদ্ধে গিয়ে বললে!

-বুঝলাম না।মনের বিরুদ্ধে বলতে?

-কিছু না।বাদ দাও।তুমি তো খুব ভালো নাচতে পারো রিমি!কোথায় শিখলে?ওই ফাজিলটাও তো ভালোই কাপল ডান্স জানে দেখছি।কিন্তু আমার সাথে এতো খারাপ করে কেন নাচলো?মনে হলো নাচের ন ও জানে না।আর তোমার সাথে দিব্বি নাচলো।কোনো প্রকার সংকোচ ছাড়াই।স্ট্রেঞ্জ!কিভাবে হলো এসব?

-আমি সব ধরনের নাচ একটু আধটু জানি।কিন্তু উনি কিভাবে পারলেন সেটা আমার জানা নেই।উনি তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড তাই ওনার সব কিছু তোমার ভালো জানার কথা।

-তুমি এখানো আমার উপর রাগ করে আছো আমি বুঝতে পেরেছি।

-আরে না।আমি একটুও রাগ করে নেই।সত্যি বলছি।

-সত্যি!থ্যাঙ্কিউ রিমি।তোমরা কিন্তু যখন মন চাইবে এখানে চলে আসবে।

-আহসান যদি আসে তাহলে অবশ্যই আসবো।

-হুম ওই ফাজিলটার উপরই সব নির্ভর করে।

তাহসিন আর তানিয়ার থেকে বিদায় নিয়ে আহসান ও রিমি বাড়ির পথে রওনা দিল।

#চলবে,,,!
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন।ভুল গুলো ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন)
#চলবে,,?
(সবাই গঠনমূলক মন্তব্য করুন।ভুল ত্রুটিগুলো মাফ করে দিবেন।ধন্যবাদ)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here