দিওয়ানা পর্ব ৯

#দিওয়ানা
#Sabiya_Sabu_Sultana(Saba)
#পর্ব_৯

আমন এর হঠাৎ এমন ঝাঁপ দেয়ার জন্য সোহা ভয় পেয়ে যায়। নিজের মাথা ঘুরিয়ে নিতে গেলে ও পারে না। আমন এখনও সোহার মুখের ভিতরে নিজের মুখ দিয়ে রেখেছে আর সোহা কে নিজের সাথে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে রেখেছে। সোহা ভয় পেয়ে গিয়ে আমন কে নিজের সব শক্তি দিয়ে জড়িয়ে ধরে। সোহা জানে না এখন কি হতে চলেছে। আর নিচেই বা কি আছে। নিশ্চয়ই এখন এখান থেকে ঝাঁপ দেয়ার একদম সোজা ওপরে চলে। আল্লাহ আর বাঁচা হলো না এবার এই পাগল এর জন্য মরতে বসেছে। এই সব ভাবছে সোহা সাথে চোখ গুলো চেপে বন্ধ করে নিয়েছে আদেও বেঁচে থাকবে তো আর বেঁচে থাকলে নিশ্চয়ই হাত পা ভেঙে যাবে একই সে দুর্বল হয়ে আছে। এগুলো ভাবতেই আমন ঠোঁটের জোর জোর কামড় বসিয়ে দেয়।

ছাদের ওপর থেকে ঝাঁপ দিয়ে নীচে পড়ে। সাথে সাথে ঝপাস করে একটা আওয়াজ ভোরে যায় চারিদিকে। সোহার মনে হলো সে যেনো পানির মধ্যে ডুবে যাচ্ছে। কিন্তু পানি কোথায় থেকে এলো ওপর থেকে নিচে পড়লে তো একদম সোজা ওপরে চলে যাওয়ার কথা ছিল তাহলে কি ওপরে কি পানি হয়ে ভেসে ভেসে যাবে। এই সব আবোল তাবোল ভেবে যাচ্ছে নিজের চোখ বন্ধ করে। হটাৎ অনুভব করে সে আস্তে আস্তে পানির থেকে ওপরে উঠে গেছে। তার গলা পর্যন্ত পানি আর মাথা বাইরে সে এবারে নিঃশ্বাস নিতে পারছে। এটা ভাবতেই সোহা চোখ খুলে ফেলে। প্রথমে এক চোখ বন্ধ রেখে এক চোখ খুলে তাকায়। চাঁদের হাল্কা আলো আর কিছু দূর থেকে ভেসে আসা আলো থেকে চারিদিকে একটা সুন্দর পরিবেশ লাগছে। পুরোপুরি চোখ খুলতে দেখতে পায় তার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে এক দৃষ্টিতে আমন। মুখে রয়েছে দুষ্টু হাসি। এবার নিজেকে পানির মধ্যে অনুভব করতে মাথা ঘুরিয়ে চারিদিকে দেখতে বুঝতে সে পানির মাঝে দাঁড়িয়ে আছে। পুল এর মাঝে দাঁড়িয়ে আছে আমন তাকে কোলে নিয়ে। আমন এর সারা মুখে আছে বিন্দু বিন্দু পানি। চুল গুলো ও ভিজে আছে পুরো। কপালের ওপর ছিটিয়ে আছে। চাঁদনী এই রাতে আর গার্ডেন থেকে ভেসে আসা আলোয় পরিবেশ আরো নেশাকীয় করে তুলেছে।

-“ওপরে চলে যাওনি এখনও নিচেই আছো। আমি থাকতে এত তাড়াতাড়ি তোমাকে আমার কাছে থেকে কেউ কেড়ে নিতে পারবে না জান। আমন নেশা ভরা মৃদু আওয়াজে বলে ওঠে।

সোহা কোনো কথা না বলে এক দৃষ্টিতে আমন এর দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে রয়েছে একটা মুগ্ধ কর হাসি। আমন সোহাকে তার দিকে এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে। আমন সোহার নাকে নাক ঘষে নাকে একটা বাইট বসিয়ে দেয়।

-“তুমি কি ভেবেছিলে তোমাকে নিয়ে আমি মরার জন্য ছাদ দিয়ে ঝাঁপ দিয়েছি। আমন বলে ওঠে।

আমন সোহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চুল থেকে পানি গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁটের ওপর থেকে বিন্দু বিন্দু পানি গড়িয়ে পড়ছে। সাথে ঠোঁট দুটো হালকা হালকা কেঁপে কেঁপে উঠছে। গায়ের লাইট পিঙ্ক কুর্তি ভিজে গিয়ে শরীরের সাথে চেপে বসে আছে। গায়ের থাকা ওড়না টা ঝাঁপ দেয়ার উড়ে গিয়ে কিছুটা পুল এর পানিতে আছে আর কিছুটা ওপরে ভেসে আছে। তাই এখন ওড়না বিহীন সোহা কে আরো বেশি আবেদনময়ী লাগছে ।নেশা লেগে যাচ্ছে সোহা কে এই অবস্থায় দেখে। আমন চেয়েও নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারছে না। দুজন যেনো এখন একে অপরের চোখের মাঝে ডুবে আছে। তাদের আর কোনো কিছু কথা মাথায় নেই শুধু তৃষ্ণার্থ ভাবে একে অপরের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে।

🎶আ্যাইসা লাগা মুঝে প্যাহলে দাফা
তানহা মে হো গেয়ি ইয়ারা
হোও.. আ্যাইসা লাগা মুঝে প্যাহলে দাফা
তানহা মে হো গেয়ি ইয়ারা
হু পারেসান সি মে
আব এ কেহনে কে লিয়ে
তু জরুরি সা হে মুঝকো
জিন্দা রেহনে কে লিয়ে
হোও.. তু জরুরি সা হে মুঝকো
জিন্দা রেহনে কে লিয়ে🎶

আমন এতক্ষণ নিজেকে আটকে রাখলেও সোহার ওই কেঁপে ওঠা ঠোঁট দুটো আমন কে নিয়ন্ত্রণ হারা করে দিয়েছে। আমন হাত এনে সোহার মুখ টেনে এনে সোহার ঠোঁটে ঠোঁট বসিয়ে দেয়। সোহা ও আবেশে চোখ বন্ধ করে নেয়। সোহা আমন এর মাথায় চুলের মাঝে হাত চেপে নিজেকে আরো বেশি এগিয়ে নিয়ে যায়। আমন এর সাথে সেও তাল মিলিয়ে প্যাশনেট ভাবে কিস করতে থাকে। দুজন দুজন কে। দুজনই উন্মত্ত হয়ে যায় একে অপরের ঠোঁটের মাঝে। পুরো জোশ এর সাথে শুষে নিতে থাকে একে অপরের ঠোঁটের রস। ওই অবস্থায় আমন পিছনের দিকে সরে যেতে যেতে গিয়ে পুল এর দেয়ালে গিয়ে ঠেকে যায়। আমন ঘুরে দাঁড়িয়ে সোহাগ কে নিজের কোলের ওপরে রেখে সোহার মাথা ওপরে রাখে। আমন নিজেও ঝুঁকে যায় সোহার ওপরে। সোহা ঠোঁট ছেড়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে দেয় আমন। পুরো গলায় ঠোঁটের স্পর্শ আর লিক করতে থাকে। ঘাড়ের তিল এর কাছে এসে আলতো ভাবে চুমু দিতে দিতে সেটা গভীরে পরিণত হয় শেষে হালকা হালকা বাইট করে। কারণ এটা তার বাইট জন্য যেনো সোহার শরীরে এই তিল টা আছে। সোহা চোখ বন্ধ রেখেই বড় বড় নিঃশ্বাস নিয়েই আমন কে দুই হাত দিয়ে জড়িয়ে রাখে।

আমন সোহা আবারো কোলে তুলে নিয়ে নিজে পানির ওপরে ভেসে গিয়ে বুকের ওপর সোহা কে তুলে নেয়। আকাশ এর দিকে মুখ রেখেই আর সোহা কে বুকের ওপর রেখেই পুরো পুল সাঁতার কাটতে থাকে। আজ দুজন সেই আগের মত করে আনন্দ করছে। ছোটোবেলায় তাদের এই রকম আরো অনেক স্মৃতি আছে। তবে এখন কার মধ্যে পার্থক্যটা একটাই এখনকার প্রতিটা মুহূর্তের মধ্যে আছে ভালোবাসা আর আদরে ছোঁয়া। সোহা আমন এর বুকের ওপরে শুয়ে দু দিকে থেকে হাত নিয়ে পানি কাটিয়ে যাচ্ছে। আর মাঝে মাঝে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে আমন এর মুখে। পুল এর সিঁড়ির কাছে আসতেই সোহা আমন কে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। আমন পানির মাঝে ডুবে যায় আর এই সুযোগে সোহা পুল থেকে উঠে যায়। আমন পানি থেকে মাথা তুলতে দেখতে পায় সোহা পানি থেকে উঠে যাচ্ছে। আমন ডুব দিয়ে গিয়ে একদম দেয়াল ঘেঁষে উঠে হাত বাড়িয়ে সোহার পায়ে টান মারতে সোহা তাল সামলাতে না পেরে উল্টে পানির মধ্যে পড়ে যায়। সোহা কে পড়ে যেতে দেখেই আমন এর মুখে ফুটে দুষ্টু হাসি। আবারও ডুব দিয়ে গিয়ে পানির ভিতর থেকে সোহা কে কোলে নিয়ে তোলে।

সোহার কোমরে হাত দিয়ে ধরে একদম উঁচু করে তুলে ধরে পানির মধ্যে দাঁড়িয়ে ঘুরতে থাকে। সোহা ওই ভাবেই তার মাথা নিচু করে আমন এর ঠোঁটে নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। কিছুক্ষণ পর আমন এর ঠোঁটের ওপর একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে ছেড়ে দেয়। আমন সোহার লাল লাল চোখ দেখে সোহা কে নিজের কাঁধের ওপরে তুলে নেয়। আসতে আসতে আমন সোহা কে কাঁধে নিয়েই পানির ওপরে উঠে যায়। ওপরে পড়ে থাকা ওড়নাটা তুলে নিয়েই বাড়ির ভিতরে চলে যায়।

আমন সোহা কে রুমে এনে কাঁধের থেকে নামিয়ে দিয়ে দেয়ালে পিঠ ঠেকিয়ে দাঁড় করিয়ে দেয়। আমন সোহার দিকে গভীর ভাবে তাকিয়ে আছে।সোহা চোখ নিচু করে রেখেছে আমন এর দৃষ্টি যেনো তাকে পুরো আসক্তি করে ফেলছে। ওই চোখের দিকে তাকালে সে নিজেও আমন এর মাঝে ডুবে যাবে। তাই এখন লজ্জা মাখা মুখে মুখ নিচু করে আছে। আমন সোহার এমন লজ্জা পাওয়া দেখে মাথা নিচু করে ঠোঁটে চুমু খেয়ে ওড়না টা সোহার গায়ে জড়িয়ে দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর সোহা এখনও দাঁড়িয়ে আছে ওই ভাবে তার একটু আগের কথা ভেবেই গাল দুটো লাল হয়ে উঠছে ।

—————-

লিভিং রুমে কটমট চোখে দাঁড়িয়ে আছে আভা দেবী তার চোখে মুখে ফুটে আছে স্পষ্ট রাগের ছাপ। তার পাশে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে অ্যাস। আর তাদের থেকে কিছুটা দূরেই দাঁড়িয়ে আছে সম্রাট চৌধুরী। সবার মুখেই এখন ফুটে আছে রাগ। তিনজনই কটমট করে তাকিয়ে আছে সামনে সোফায় বসে থাকা আমন আর সোহার দিকে। তারা দুজনেই এখন নাক টানতে রয়েছে। চোখ লাল আর মুখ ফ্যাকাশে হয়ে আছে । আর সাথে আছে হাচির বহর। আমন এর থেকে তো সোহার অবস্থা করুণ। চোখ মুখ ফুলে আছে ঠান্ডা লেগে । সোহার ঠান্ডার ধাত আছে একটুতেই ঠান্ডা লেগে যায়। আর এখন তো সোহার অবস্থা করুণ হয়ে আছে। একই শরীর দুর্বল মাথায় হাতে পায়ে চোট লেগে আছে আর তার সাথে আবারো ঠান্ডা লাগিয়েছে। তাই বাড়ির সবাই এখন রাগ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

-“এই ঠান্ডা লাগিয়েছিস কি করে দুটো এক সাথে। আভা চৌধুরী জিজ্ঞেস করে ওঠে।

-” হ্যাঁ ভাই বল তোদের একসাথে ঠান্ডা লাগলো কি করে? তাহলে কি এটা ধরে নেবো যে তোরা দুজন একসাথে ভিজেছিস? অ্যাস মুখে ফাজিল হাসি নিয়ে বলে ওঠে।

-“রোদ কোনো কথা বলছিস না কেনো? এটা নিশ্চয়ই তোর কাজ তাই না? তুই মেয়েটা কে নিয়ে ভিজিয়েছিস? সম্রাট চৌধুরী গম্ভীর ভাবে বলে ওঠে।

সোহা কোনো কথা বলতে পারে না। তার গলা বসে গেছে। আর তার ওপরে হাচি দেয়ার জন্য পুরো করুন অবস্থা হয়ে আছে। সোহা চোখ ছলছল করে তার মণি মায়ের দিকে তাকিয়ে আছে। আভা চৌধুরী সোহার এই ভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে তাড়াতাড়ি করে কিচেনে চলে যায়। কিছুক্ষণ হাতে করে দুটো মশলা চায়ের মগ নিয়ে বেরিয়ে আসে। একটা আমন এর হাতে দিয়ে সোহার পাশে বসেই সোহার মুখের কাছে তুলে ধরে আর এক হাত দিয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সোহা ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে তার মণি মায়ের দিকে। আজ বারো বছর পর আবারো আগের মত সেই মায়ের ভালোবাসার স্বাদ পাচ্ছে। এই এত গুলো বছরে প্রায় ভুলতে বসে ছিল মায়ের ভালোবাসার স্বাদ ঠিক কেমন ছিল। আজ হঠাৎ করে এত বছর পর আবারো মায়ের ভালোবাসা পেয়েই চোখে পানি চলে আসে। সোহা কখনো ভাবতে পারিনি আবারো সে তার মণি মায়ের ভালোবাসা ফিরে পাবে। সোহার চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ে। সাথে সাথে আভা দেবী কে জড়িয়ে ধরে ফুফিয়ে কেঁদে ওঠে সোহা। আভা দেবী হাতের মগ পাশে টেবিলে রেখে দিয়ে সোহা কে নিজের বুকে টেনে নেয়। তিনি জানেন এত বছরের ক্ষত এত তাড়াতাড়ি পূরণ হবে না। তার মনের ভিতরে যে এক পাশে অভিশপ্ত দিকটা এখনও দগদগে ঘা এর মত হয়ে আছে। মেয়েটা কে এখন সব সময়ে চোখে cokhe রাখতে হবে আর তার সাথে সবাই এর ভালোবাসা দিয়ে মুড়ে রাখতে হবে। সবার ভালোবাসা দিয়ে সোহার মনের ওই সব ক্ষত গুলো সারিয়ে তুলতে হবে। বের করে আনতে হবে মনের এক দিকের ওই অভিশপ্ত দিক টা। এগুলো সবাই ভাবতে থাকে। সোহা কে এই ভাবে কাঁদতে দেখে বুঝতে পারে সোহার মনের অবস্থা। সম্রাট চৌধুরী ও এসে সোহার পাশে বসিয়ে সোহার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আভা চৌধুরী আর সম্রাট চৌধুরী এক সাথে সোহা তাদের ভালোবাসা দিয়ে মুড়ে নেয়। আর ওদের থেকে কিছুটা দূরে অ্যাস আর আমন মুখে হাসি নিয়ে সোহা আর তাদের মা বাবা কে দেখছে। সাথে সাথে তারা দুজন ও একে অপরের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে তারা ও গিয়ে জড়িয়ে নেয় ওদের কে। সবাই মিলে একসাথে একটা গ্রুপ হাগ করে যেটার মধ্যে কোনো লোক দেখানো নেই। আছে একরাশ ভালোবাসার ছোঁয়া।
.
.
.
. 💚💚💚
. চলবে….

ভুল ত্রুটি মার্জনা করবেন । প্লিজ সবাই নিজেদের মতামত জানাবেন। 😊 😊 😊

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here