#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে _স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৮
ফুল স্পিডে গাড়ী চলছে!উন্মাদের মতো ড্রাইভ করছে দীপ্ত!যে দীপ্ত কিনা একটা তুচ্ছ বিষয়কেও খুব গুরুত্ব দিয়ে হ্যান্ডেল করে! আর আজ সেই দীপ্তই কিনা এমন ক্ষিপ্ত হয়ে ড্রাইভিং করছে!এমন ভাবে ড্রাইভ করছে যেন রাস্তাটা ওর চিরশত্রু!অনুষ্ঠানে থাকাকালীন আহসান ইসলাম দীপ্তকে কল দিয়েছিলেন আর বলে ছিলেন আহান ওর জন্য অপেক্ষা করছে!সিঙ্গাপুর থেকে স্পেশাল গেস্ট আসছে তাদেরকে এয়ারপোর্ট থাকে পিক-আপ করতে ওকে আর আহানকে যেতে হবে।কে বা কারা আসছে এই রকম কোনো প্রশ্ন দীপ্ত করে নি।শুধু আহান কোথায় সেটাই জানতে চেয়েছিল!
তাই তখন ওইরকম তাড়াহুড়ো করে সাজিকে নিয়ে অনুষ্ঠান শেষ না করেই চলে এসেছিল!
সাজিকে বাড়ির সামনে নামিয়ে দিয়েই দীপ্ত আহানকে কল করে জেনে নেয় আহান কোথায় আছে?তারপর ওইখান থেকে আহানকে পিক করে নিয়ে এয়ারপোর্টে চলে যায়।যাওয়ার পথে আহানকে দীপ্ত জিজ্ঞেস করলো,
– এই আহান সিঙ্গাপুর থেকে কারা আসছে রে ?
তখন আহান বলল,
– স্পেশাল গেস্ট!
– আরে বাবা স্পেশাল গেস্ট এর কি কোনো পরিচয় নেই নাকি?তখন বড় মামুও বলল স্পেশাল গেস্ট! তা কে এই স্পেশাল গেস্ট শুনি?
– আচ্ছা তাহলে বলেই দেই!
– আহান!হেয়ালি না করে বল তো!
– বোনের জন্য হবু বরকে আনতে যাচ্ছি!
– ও আচ্ছা এই ব্যাপার! তাই এত স্পেশাল স্পেশাল লাগিয়ে রেখেছে সবাই!
– অবশ্যই স্পেশাল! আমার বোনের বিয়ে বলে কথা!
তখন দীপ্ত ভেবেছিল হয়তো আদিবার বিয়ে।আর সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?বাড়ির বড় মেয়ে বলে কথা ইনফ্যাক্ট সকল কাজিনদের থেকেও বড়!সেই হিসেবে তো তারই বিয়ে হওয়ার কথা।কিন্তু না!কনে ঠিকই এলো কিন্তু সেটা গোধূলি!আর সেটা দেখেই দীপ্তের মাথা গরম যায়!গোধূলির বিয়ে?তাও আবার দীপ্ত বেঁচে থাকতে?আচ্ছা তাও ঠিক ছিল!কাউকে দেখতে আসলেই তো আর বিয়ে হয়ে যায় না।এটা ভেবেই দীপ্ত ওর রাগ আর ক্ষোভ যাই ছিল না কেন তা কন্ট্রোল করার চেষ্টা করছিল।কিন্তু বনির বলা কথাটা আগুনে ঘি দেওয়ার জন্য যতেষ্ট ছিল।আর সহ্য করতে না পেরে ওখান থেকে বেড়িয়ে আসে।বাহিরে এসেও ওর রাগ কমছিল না।ভেবেছিল যতক্ষণ না পর্যন্ত এই বনিকে কয়েক ঘা দিচ্ছে ততক্ষণ পর্যন্ত ওর এই রাগ কমার নয়।যা হবে পরে দেখা যাবে।আগে ওই বনিকে ওর বলা কথার ফল টা বুঝিয়ে দিয়ে আসি!চরম রাগ আর ক্ষোভ নিয়ে যখন বাড়ির ভিতরে ঢুকতে যাচ্ছিল ঠিক তখনই রায়ান এর বলা কথায় ওর পা স্তব্ধ হয়ে যায়!পাথরের থেকেও কঠিন অবস্থায় পরিনত হয়েছিল!আর তখন দীপ্ত আর কোনো কিছু না শুনেই ওইখান থেকে বেড়িয়ে আসে!
এই সব ভাবতে ভাবতে খুব জোড়ে গাড়ির ব্রেক কষে দীপ্ত!তাল সামলাতে না পেরে স্ট্রেয়ারিং গিয়ে দীপ্তের মাথা বারি খায়!কপালের বাম পাশটায় বেশ ক্ষানিকটাই কেটেছে!ওইসবে ওর কিচ্ছু আসে যায় না!নিজের জখমের কোনো পাত্তা না দিয়ে গাড়ি থেকে বেড়িয়ে এসে খুব জোড়ে দরজার লাগিয়ে একটা লাথি মারে!রাগ তো কিছুতেই কমছেই না বরং শুধু বেড়েই যাচ্ছে!গাড়ির পিছনের ডিকিতে থাকা হকি স্টিকটা নিয়ে এসে গাড়ির সামনের কাঁচটায় বারি দিতেই ঝনঝন শব্দে কাঁচের টুকরো গুলো নিমিষেই নিচে গড়িয়ে পরে ঠিক ওর মনটার মতো!এতেও দীপ্তের রাগ এতটুকুও কমে নি!রাগটা যেন চড়াও হয়ে উঠেছে!হকি স্টিকটা ফেলে দিয়ে হাইওয়ের মাঝখান দিয়ে হাটা শুরু করে!বেখেয়ালি হয়ে হাটছে দীপ্ত!তাও আবার যেই সেই রাস্তা না হাইওয়ে!রাত হয়ে গেছে অনেকটা!হাইওয়ের এই দিকটায় লাইটও নেই।রাস্তার পাশে অনেক গুলো খুটি দাঁড়িয়ে আছে ঠিকই কিন্তু লাইটশূন্য!তারউপর এই রাস্তার এইখানে অনেকটা মোড়ও নিয়েছে!বিপদজনক স্পট গুলোর মধ্যে এইটা একটা!দিনের বেলায়ই এখানে অনেক এক্সিডেন্ট হতে শুনা যায় রাতের বেলায় তো কোনো কথায় নেই!
কিন্তু দীপ্ত এই সবে তোয়াক্কা না করে হেটেই যাচ্ছে!কোনো এক ঘোর এর মধ্যে রয়েছে ও!সেটা ও নিজেই জানে না! তাই কি করছে বুঝতেই পারছে না!
– দীপ্ত!
আহানের ডাক আর হাতে টান পেয়ে দীপ্তের ঘোর কাটে! আহান বেশ জোরেই দীপ্তের বাহু ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
– কি করছিসটা কি তুই?এইভাবে হাইওয়ের মাঝখান দিয়ে কেউ হাটে?আমি যদি ঠিক সময় মতো না আসতাম?তাহলে কি হতো ভাবতে পারছিস?এক্ষুনি তো বড়সড় একটা এক্সিডেন্ট হয়ে যেতো।
…….
ট্রাক ড্রাইভার যে এতো হর্ণ দিচ্ছিলো তুই শুনতে পাস নি?আর তোর কপাল কাটলো কিভাবে?অনেকটাই তো কেটে গেছে প্রচুর রক্তও বের হয়েছে!
…….
তোর গাড়ি কোথায়?তুই কি এক্সিডেন্ট করে এসেছিস?
দীপ্ত আহানের কোনো প্রশ্নেরই উত্তর দিচ্ছে না দেখে আহান বিরক্ত হয়ে বলে,
– আরে ইয়ার কিছু তো বল?
দীপ্তকে ফোনে পাওয়া যাচ্ছিল না! কারণ ও কারো ফোনেই তুলছিল না।পরে উপায় না পেয়ে আহান দীপ্তের লোকেশন ট্রেস করে ওর কাছে পৌঁছায়।
দীপ্তের ঘোর কাটিয়ে উঠতে কয়েক সেকেন্ড সময় লাগে।পর মুহূর্তেই আহানের কন্ঠ শুনেই দীপ্তের মাথায় রক্ত উঠে গেছে!আহানের এতো গুলো প্রশ্নের উত্তর দেওয়ার প্রয়োজন মনে করলো না দীপ্ত!ওই দৃষ্টি তো ওর বাহুতে ধরে থাকা আহানের হাতের উপর! রাগী চোখে তাকিয়ে দাঁত কড়মড় করে বলে,
– হাত ছাড় আহান!
– কি!
– শুনতে পাস নি কি বললাম?আমার হাতটা ছাড়!
– না।আগে তুই বল তোর কপালে এতোটা জখম কিভাবে হলো? আর..
আহানকে আর কোনো কথার সুযোগ না দিয়েই আহানের নাক বরাবর এক ঘুষি মেরে বসে দীপ্ত!ঘটনাটা আহানের কাছে এতোটাই অপ্রত্যাশিত ছিল যে নিজেকে সামলাতে না পেরে মাটিতে পড়ে যায়!আহান কিছু বুঝে উঠার আগেই দীপ্ত এলোপাতাড়ি পিটিয়ে চলেছে আহানকে!আহানও নিজের আত্মরক্ষার্থে দীপ্তিকে মারতে থাকে!ব্যাস!শুরু হয়ে গেছে দুইজনের দস্তাদস্তি!কেউ কাউকে ছাড়তেই না!অবশেষে দুইজনই ক্লান্ত হয়ে সারা শরীরে ধূলাবালি লাগিয়ে হাইওয়ের ধারে বসে পরে!আহানের মাথায় কিছুই ঢুকছে না!সবকিছু মাথার উপর দিয়ে চলে গেল!আর দীপ্তই বা কেন ওকে ওইভাবে মারলো!তাই দীপ্তিকে জিজ্ঞেস করে,
– এবার বলতো কি হয়েছে?
আহান যেন দীপ্তের কাটা গায়ে নুন ছিটে দিয়েছে!দীপ্ত আবার রেগেমেগে আহানের উপর হামলে পড়ে!শার্টের কলা চেপে ধরে ঝাকাতে ঝাকাতে বলে,
– তুই কেন বলিস নি বাড়িতে গোধূলির বিয়ের কথা চলছে?তুই কেন বলিস নি যে আজ গোধূলিকে ওরা দেখতে আসছে?বল কেন বলিস নি বল?
শেষে কথাটা আহানকে ঝাকিয়ে চিৎকার দিয়ে জিজ্ঞেস করলো দীপ্ত!আহান হাঁসবে না কাঁদবে ভেবে কোল পাচ্ছে না।
– বিয়ে!দাঁড়া করাচ্ছি বিয়ে!ওই শালা রায়ানের বাচ্চাকে এমন ডোজ দিবো না আমি সারা জীবনের জন্য বিয়ে করার স্বাদ মিটে যাবে!
কথাটা বলে যেই না দীপ্ত উঠতে যাবে আহান হুহু করে হেঁসে উঠে।যেটা দেখে দীপ্ত রেগে আরো জ্বলে উঠে।চোখ রাঙিয়ে বললো,
– একদম হাসবি না বলে দিলাম কিন্তু!তোকে তো আমি পরে দেখে নিচ্ছি আগে ওই শালাকে শায়েস্তা করে আসি!
আহান ওর হাসি থামিয়ে কড়া গলায় বললো,
– এই সাবধান! আমার বোনের বরের গায়ে হাত দিবি না কিন্তু বলে দিলাম!আর তুই শালা বলছিস কাকে রে?আমার বোনের বর তোর শালা হয় না!শালা তো হবি তুই!সো সম্মান দিয়ে কথা বল।
দীপ্ত তাচ্ছিল্যের সুরে বলে,
– সম্মান?হাহ্!সম্মান মাই ফুট!
দীপ্ত চলে যেতে নিলেই আহান ওকে থামিয়ে দিয়ে সন্দিহান চোখে তাকিয়ে বলে,
– এই এই এক সেকেন্ড দাঁড়া!সাজির বিয়ে তো তোর কি হয়েছে?তুই এমন করছিস কেন?মেয়ে বড় হয়েছে ওকে কি বিয়ে দিবে না?ওকে কি সারাজীবন শোকেসে সাজিয়ে রাখবে রাখ..!
– আমি রাখবো!
আহানকে বলতে না দিয়ে দীপ্ত প্রত্যুত্তর করে।আহান কপাল কুচকে তাকায়।বিস্মিত কন্ঠে বলল,
– মানে?
– মানে কিছু না!
দীপ্ত চলে যেতে নিলেই আহান ওকে আবার থামিয়ে দেয়!
– আরে পুরো কথাটা তো শুনে যাবি!
দীপ্ত রেগে গিয়ে আহানের হাত ঝাড়া দিয়ে ফেলে দিয়ে বলে,
– তুই আর কি শুনাবি আমায়?
আহান রিনরিনে স্বরে বলে,
– সামনের শুক্রবার বুবুর এনগেজমেন্ট!
দীপ্ত আশ্চর্য হয়ে বলে,
– মানে?
– মানে কি তুই বুঝতে পারছিস না বুদ্দু!রায়ান ভাইয়ারাই বুবুকে দেখতে এসেছিল!
দীপ্ত শক্ত গলায় বললো,
– তাহলে ওখানে গোধূলি কি করছিল?
– আরে ওটা সাজি দুষ্টুমি করেছিল!
– তাহলে রায়ান ভাইয়া যে বলল গোধূলিকে উনার পছন্দ হয়েছে?
– ওটাও দুষ্টুমি ছিল!সাজি যখন ওইভাবে রায়ান ভাইয়াকে বোকা বানিয়েছে ইনফ্যাক্ট সবাইকেই।তখন রায়ান ভাইয়া সাজির জালে সাজিকেই ফেলতে বলেছিল কথাটা!
আহানের কথা শুনে দীপ্ত রেগে আগুন হয়ে যাচ্ছে।দাঁত কড়মড় করে মনে মনে বলে,
– গোধূলি!দুষ্টুমি করারও একটা লিমিট আছে!তুই আজকে সব লিমিট ক্রস করে গেছিস!এর ফল তো তোকে ভোগ করতেই হবে!আমি আসছি!
দীপ্ত চলে আসার জন্য পা বাড়াতেই আহান বললো,
– কোথায় যাচ্ছি?
– বাসায়!
– পায়ে হেঁটে যাবি বুঝি?এতদূর এসে এখন বাড়ি ফিরবি তুই পায়ে হেঁটে সিরিয়াসলি দীপ্ত?তোর গাড়ি কোথায়?
দুইজনেই গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।আহানের তো মাথায় হাত।আহান করুণ স্বরে বললো,
– দীপ্ত!ভাই গাড়িটার তুই এ কি হাল করেছিস?এই গাড়িটা না কালকে নতুন কিনলি?
– তো কি হয়েছে?
ভাবলেশহীন জবাব দেয় দীপ্ত।আহান উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,
– কি হয়েছে মানে?তুই এক্সিডেন্ট করেছিস এইটা ফুপি জানতে পারলে কি হবে ভাবতে পারছিস?
– আমি এক্সিডেন্ট করি নি!
গম্ভীর কণ্ঠে বলে দীপ্ত।আহান অবাক হয়ে বললো,
– তাহলে?গাড়ির কাঁচ ভাঙলো কিভাবে?
– আমি ভেঙ্গেছি!
দীপ্তের উত্তরে আহান মোটেও অবাক হয় নি।বরং মনে মনে এই রকমই উত্তর আশা করছিল।কারণ এই ছেলের ভাঙাচোরার হাত বেশ পোক্ত।আহান ফোস করে একটা তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,
– ও তাহলে ঠিক আছে!
– দে!
কপাল কুচকে তাকায় আহান।দীপ্ত হাত পেতে আছে।কিন্তু কারণ বুঝতে না পেরে বললো,
– কি দিবো?
দীপ্ত কর্কশভাবে বললো,
– আরে দে তো?
আহান বিরক্ত হয়ে বলে,
– আরে কি দিবো সেটা তো বলবি?
– চাবি!
– কিসের চাবি?
– তোর গাড়ির চাবিটা দে আমাকে!হয়েছে এবার!বুঝে গেছিস!
ধমকে বলে দীপ্ত।আহান নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে,
– তাহলে আমি কিভাবে বাসায় যাবো?
– কেন?আমার গাড়ি করে!এটা নিয়ে আসতে হবে না!
আহানের হাতে দীপ্তের গাড়ির চাবি ধরিয়ে দিয়ে দীপ্ত আহানের গাড়ি নিয়ে চলে যায়!আর এইদিকে আহান বেচারা ক্যাবলাকান্তের মতো দীপ্তের ভাঙ্গা গাড়ির সামনে হা করে দাঁড়িয়ে আছে।
#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৯
হঠাৎ করে হাত ধরে কেউ টান দেওয়ায় ভয় পেয়ে গিয়ে সাজি যেইনা চিল্লাতে যাবে ওমনি কেউ ওর মুখটা সজোড়ে চেপে ধরলো!পকেট থেকে রুমালটা বের করে মুখটা বাঁধতে লাগলো!ভয়ে সাজির জান বেরিয়ে আসার উপক্রম!অন্ধকার তাই কিছু দেখতেও পাচ্ছে না!তবে এটা ঠিকই বুঝতে পাচ্ছে ওর পিছনে থাকা বলিষ্ঠ হাতের অধিকারী কোনো পুরুষ মানুষ!মুখটা তাড়াতাড়ি বেঁধে নিয়েই হাতগুলো পিছনে মুচড়ে নিয়ে ধরে রেখেছে!একেবারে ছাদে এসে সিঁড়ির সামনের দরজাটা লাগিয়ে পরে ছাড়লো!হাত ছাড়া পেয়ে সাজি যেই না ওর মুখের বাধন খুলতে যাবে দীপ্ত তড়িৎ গতিতে এসে হাতগুলো ঘুরিয়ে পিছনে নিয়ে সাজিকে সিঁড়ির কাছের দেওয়ালটার সাথে চেপে ধরলো!আজ পূর্ণিমা!ছাদে লাইট না থাকলেও দীপ্তকে চিনতে সাজির এক সেকেন্ডেও লাগে নি!দীপ্তকে দেখে সাজির পঞ্চআত্মা উড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা!চোখ গুলো তো পালানোর রাস্তা খুজতেই ব্যস্ত!
একটু আগে……
বড়রা ছাড়া ছোটরা সবাই ডিনার করার পর আদিবার ঘরে গিয়ে আড্ডা জমায়!আর সেখানে আড্ডা বসানোর দুটি কারণ!এক সাজির আজকে ভার্সিটিতে প্রথম দিন প্লাস নবীন-বরন কেমন কাটলো সেটা সবাই শুনতে চায়!আর দুই হলো আদিবার এনগেজমেন্ট এর প্ল্যানিং করা!সাজির সাথে ঘটে যাওয়া প্রত্যেকটি মুহূর্তের পুঙ্খানুপুঙ্খ বর্ণনা দিলো!আর সাজির ওইসব কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছিল!সাজি হতাশার সুর টেনে বললো,
– কোথায় ভাবলাম তোমরা হয়তো আমার দুঃখের কথা শুনে হয়তো আমাকে একটু হলেও সান্ত্বনা দিবে!তা না করে সবাই এমন ভাবে হাসছো যেন আমি কোনো জোকস বলছি!ধুর আমি তোমাদের প্ল্যানিং এ থাকবোই না!তোমাদের যা খুশি তাই করো গিয়ে!এমনিতেও তো ছোট বলে আমাকে কেউ পাত্তাই দেয় না!
সবাই কত ডাকলো কিন্তু কারো ডাকে সাড়া না দিয়ে গোধূলি চলেই এলো!রুমে যাওয়ার সময় মনে পড়লো ওর ফোনটা আদিবার ঘরে রয়ে গেছে!তাই ফোনটা আনার জন্য ঘুরে আবার যখন আদিবার ঘরের দিকে যাবে ঠিক তখনই কারেন্টটা চলে যায়!অন্ধকার গোধূলি খুব ভয় পায় তাই আস্তে আস্তে আদিবার ঘরের দিকে এগোচ্ছিল!ওই রুমে সবাই আছে। কিন্তু যখনই রুমে ঢুলতে যাবে ঠিক তখনই দীপ্ত ওকে আটকে দেয়!
বর্তমান……
– তোর সাহস কি করে হলো তখন সবার সামনে ওইভাবে যাওয়ার?
মুখ বাঁধা অবস্থাতেই গোধূলির মুখটা এক হাতে চেপে ধরে দীপ্ত চিৎকার দিয়ে বলল!
– কি হলো কথা বলছিস না কেন?
গোধূলি কিছু বুঝতে পারছে না!তাতে কি হয়েছে?এই লোকের এইভাবে রিয়েক্ট করার কি আছে আজব!গোধূলি মনে মনে বলছে,আমার মুখটা তো বেঁধে রাখা হয়েছে তো আমি কথা বলব কি করে?একে তো বেঁধে রেখেছে তার উপর মুখটা চেপেও ধরেছে!আর এক হাতে তো আমার হাত গুলো গুড়িয়েই দিচ্ছে!
গোধূলি মুখে উম উম শব্দ করছে! মানে ওর মুখের বাধন খুলতে বলছে!এক টানে মুখের রুমালটা খুলে ফেলে গোধূলিকে ছেড়ে দিয়ে একটু সড়ে দাঁড়ায় দীপ্ত!
গোধূলি বুকে হাত দিয়ে বড় বড় শ্বাস নিচ্ছে!ও ছাড়া পেয়ে চলে আসতে নিলেই দীপ্ত ওকে এক হেচকা টানে দেয়ালের সাথে দুই হাত দিয়ে আটকে ধরে!
– আমার কথার উত্তর না দিয়ে তুই চলে যাচ্ছিস?তোর সাহস তো দেখছি বেশ বেড়ে গেছে!কি হলো কথা বলছিস না কেন?
ধমক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো দীপ্ত।দীপ্তের ধমক শুনে গোধূলি কেঁপে ওঠে!গোধূলির নিস্তব্ধতা দীপ্তের রাগ বাড়িয়ে দেওয়ার জন্য যতেষ্ট ছিল!দীপ্ত শক্ত হাতে গোধূলির দুই বাহু ধরে ঝাকিয়ে বলল,
– কি হলো আমার কথার উত্তর দিচ্ছিস না কেন?
গোধূলি মিনমিনে স্বরে বলে,
– আমার হাতে লাগছে!হাতটা ছাড়ুন!
দীপ্ত কঠোর গলায় বললো,
– লাগুক!আমার যখন লাগে!তখন তো আমি কাউকে বলতে পারি না!
গোধূলি দীপ্তের কথার মানে বুঝতে না পেরে বিস্মিত হয়ে বলে মনে,
– মানে?
দীপ্ত চোখ রাঙিয়ে বলে,
– আমাকে প্রশ্ন করার জন্য তোকে আমি এখানে আনি নি!আমার কথার উত্তর কিন্তু এখনো পেলাম না!
গোধূলি ভয়ে কথা বলতে পারছে না! তার পরেও তোতলানোর ভঙ্গিমায় বলল,
– কিকি ব্ বলব?
– বাহ বাহ বাহ!
গোধূলিকে ছেড়ে দিয়ে হাতে তালি দিয়ে দীপ্ত বলল!আবার গোধূলির বাহুদ্বয় খুব শক্ত করে চেপে বেশ রাগী কন্ঠে বলল,
– তারমানে তুই শুনতেই পাস নি আমি কি বললাম?
গোধূলিকে ছেড়ে দিয়ে দীপ্ত শান্ত কন্ঠে বলল,
– আচ্ছা যা আবার বলছি!আদিবা আপুর জায়গায় তুই কেন গিয়েছিলি?
কয়েক সেকেন্ড কেটে গেছে গোধূলির কোনো সাড়াশব্দ না পেয়ে দীপ্ত এবার ধমকে বলল,
– কি হলো এখনো শুনতে পাস নি আমি কি বললাম?
আঁতকে উঠে গোধূলি।নিচের দিকে তাকিয়ে রিনরিনে স্বরে বলে,
– না মানে আমি একটু রায়ান ভাইয়ার সাথে মজা করতেই তখন ওমন করেছিলাম!
– ওহ আচ্ছা!তাহলে তোর যদি মন চায় মানুষের জীবন নিয়েও মজা করবি?
অনেকটা চিল্লিয়ে কথাটা বলল দীপ্ত!
গোধূলিরও রাগ উঠে গেছে এবার।একটু তেজ দেখিয়ে গোধূলি বলল,
– এতো ওভাররিয়েক্ট করার কি আছে?একটু মজাই তো করেছে।দরকার হলে আরো করবো!
সজোরে চড় পরে গোধূলির গালে!তাল সামলাতে না পেরে পাশের দেয়ালে গিয়ে পড়ায় কপালটা কেটে যায়।কপাল থেকে রক্ত পড়ছে!
– আহ!
আর্তনাদ করে উঠে গোধূলি!বেশ ক্ষানিকটাই কেটেছে ফলে গাল বেয়ে রক্ত গড়িয়ে নিচে পরছে! কিন্তু দীপ্তকে বুঝতে দেয় নি ও।তবে এইবার গোধূলির আর সহ্য হলো না!ওই জখমের কোনো পাত্তা না দিয়ে বেশ রাগী স্বরেই চিল্লিয়ে বলল,
– কি সমস্যা কি আপনার?আমি না হয় একটু দুষ্টুমিই করেছি!তার জন্য এইভাবে আমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে এসে পুচগাচ করার মতো তো বিশাল কোনো অপরাধ করে ফেলি নি আমি!যেখানে বাড়ির বড়রা আমাকে কিছুই বলে নি!সেখানে আমি আপনাকে কৈফত দিতে বাধ্য নৈই মিঃ দীপ্ত চৌধুরী!
কথাটা শেষ করার সাথে সাথেই অন্য গালেও চড় পড়ে গোধূলির! চড় গুলো খুবই অপ্রত্যাশিত ছিল গোধূলির কাছে!কেননা আজ পর্যন্ত একটা ফুলের টুকাও কেউ দেয় নি ওকে!সেই জায়গায় আজ দীপ্ত নিরদ্বিধায় সাধারণ একটা তুচ্ছ বিষয়ে ওর গায়ে হাত তুলছে!গালে হাত দিয়ে নিচের দিকে প্রচন্ড রাগ নিয়ে তাকিয়ে আছে গোধূলি।রাগে শরীর থরথর করে কাঁপছে!নিরবে নোনা জল গড়িয়ে পরছে চোখ থেকে!চড় দেওয়ার পর হাতে ভেজা আর আঠালো কোনো কিছুর উপস্থিতির টের পেয়ে দীপ্ত হাতের দিকে তাকায়।যদিও অন্ধকার তবু্ও চাঁদের আলোয় স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে এটা রক্ত!দীপ্তের হাত কাপছে।অস্পষ্ট স্বরে উচ্চারণ করলো,
– রক্ত!
পর মুহূর্তেই দীপ্ত ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে দীপ্ত।চটজলদি গোধূলির কাছে গিয়ে বলে,
– গোধূলি তোর কপাল কেঁটে গেছে?
……
গোধূলি চুপ করে আছে।
– দেখি কোথায় কেঁটেছে……
বলে গোধূলির কপালে হাত দিতে গেলেই গোধূলি দীপ্তকে থামিয়ে দিয়ে দিয়ে শক্ত গলায় বলল,
– নো!ডোন্ট টাচ!আমাকে টাচ করার অধিকার আমি আপনাকে দেই নি মিঃ দীপ্ত চৌধুরী!
দীপ্ত কিছু বলতে যাচ্ছিল কিন্তু এই মুহুর্তেই কারেন্ট চলে আসে আর গোধূলিও ওখান থেকে কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়!
#চলবে…….
.