দীপ্ত গোধূলি পর্ব -০৬+৭

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে-স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৬

সাজির মা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।আর দরজা খুলতেই তো অবাক!রায়ানরা চলে এসেছে।রনিত চৌধুরী আর রেখা চৌধুরীকে ছাড়া আর কাউকেই চিনতে পারে নি।কেননা উনারা ছাড়াও আরো দুই ছেলে আরো দুই মেয়ে এসেছে!ওদের মধ্যে রায়ান কে? বা রাহা কে কাউকেই চিনতে পারে নি!সাজির মা সবাইকে ভিতরে আসতে বলে জাকিয়া বেগমকে (আদিবার মা) ডাক দেয়,

– বড়বু দেখো কারা এসেছে!

আহান আর দীপ্ত অনেকটা পথ ড্রাইভ করে এসেছে তাই জামা কাপড় ছেড়ে ফ্রেশ হতে আহান এর রুমে গেলো।লাজুক মেহমানদের দেখতে পেয়েই মেহমানরা ওকে দেখার আগেই আদিবার ঘরে চলে যায়!জাকিয়া বেগম উপর থেকে সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললেন,

– কে এসেছে?

রনিত সাহেবকে দেখতে পেয়ে উনি তাড়াতাড়ি করে নেমে এসে বললেন,

– কেমন আছেন ভাইজান!ভাবী আপনি কেমন আছেন?আপনাদের আসতে কোনো অসুবিধা হয় নি তো?

রনিত চৌধুরী বললেন,

– আরে ভাবী এতো ব্যস্ত হবেন না তো! আগে আমি ভালো ছিলাম না এখন দিব্যি ভালো হয়ে গেছি!

– আসুন ভাইজান আগে একটু বসুন তো বাকি কথা পড়ে শুনা যাবেক্ষণ!এই ছোট কোথায় গেলি? দেখ কারা এসেছে বলে হাক ছাড়েন জাকিয়া বেগম! তা ভাবী আমাদের রায়ান রাহা কে তো চিনতেই পারছি না!এখানে তো চারজন আছে!

রেখা বেগম মুচকি হেসে বললো,

– সরাসরি বললেই পারেন আমার মেয়ের জামাই কে!বলতে লজ্জা কিসের?আপনারই তো মেয়ের জামাই বলে কথা!

জাকিয়া বেগম একটু লজ্জা পেয়ে বলে,

– না ভাবী ঠিক তেমন না! অনেক ছোট বেলায় দেখছি এখন তো অনেক পরিবর্তন হয়ে গেছে তাই চিনতে পারছিনা।

– এই যে আমার ছেলে রায়ান আর মেয়ে রাহা!

রায়ান আর রাহা কে দেখিয়ে বললেন রেখা চৌধুরী।রায়ান আর রাহা উঠে এসে জাকিয়া বেগমকে সালাম করে!

– আর এই যে দেখছেন ওরা হচ্ছে বনি আর বহ্নি।ওরা দুইজন রায়ান এর বন্ধু।

বনি আর বহ্নিও জাকিয়া বেগমকে সালাম দেয়!জাকিয়া বেগমও সালাম এর জবাব দেন।

– ওরাও বাংলাদেশের কিন্তু স্থায়ী ভাবেই সিঙ্গাপুর থাকে!এই দেশের বংশধর হয়েও নিজের পৈতৃক জন্মভূমি কখনো দেখার সু্যোগ হয় নি!তাই রায়ান এর বিয়ের উছিলায় রায়ান ওদের নিয়ে এসেছে!এক ঢিলে দুই পাখি মারা যাকে বলে আরকি!

– খুব ভালো হয়েছে!নিজের দেশ ছাড়া কি থাকতে ভালো লাগে! আর শিখড়ের টান বলেও তো একটা কথা আছে!!নিজের দেশকে মায়ের সাথে তুলনা করা হয়!মায়ের সাথে যেমন সন্তানের নাঁড়ির টান থাকে ঠিক নিজ দেশের প্রতিও শিখড়ের টান থাকে!যাকগে!ওইসব কথা বাদ দেই।যতদিন খুশি ততদিন থাকো কেমন!

রনিত চৌধুরী বললেন,

– ভাবী অনেকক্ষণ তো হলো আসলাম!তা আমার বন্ধুটি কোথায়?তাকে তো কোথাও দেখতে পাচ্ছি না!

– এই তো বন্ধু আমি এখানে!

স্টোর রুমে যাওয়ার করিডোরটার দিক থেকে এগিয়ে এসে আহসান ইসলাম(আদিবার বাবা)বললেন।রনিত চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে আহসান ইসলামকে জড়িয়ে ধরতেই আহসান ইসলামও একি ভাবে প্রানপ্রিয় বন্ধুকে জড়িয়ে ধরেন!দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে লাফাচ্ছে রীতিমতো! অনেকক্ষণ হয়ে গেছে কেউ কেউকে ছাড়তেই না!তাদের এই কান্ড দেখে সবাই হেসে উঠলো।কিন্তু রেখা চৌধুরীকে চোখ মুছতে দেখে জাকিয়া বেগম একটু না অনেকটা বেশিই অবাক হলেন!বললেন,

– কি হলো ভাবী আপনি কাঁদছেন কেন?

– এটা খুশির কান্না ভাবী!আনন্দে অশ্রু!জানেন ভাবী,এই মানুষটাকে কতগুলো বছর পর এইভাবে হাসতে দেখছি!বিদেশের গত কয়েকটি বছর যেন বিষাদে রূপান্তরিত হয়ে উঠেছিল উনার জন্য। আমাকে উনি বলতেন জানো রেখা, বিদেশের মাটিতে একেকটা দিন আমার কাছে না একেকটা যুগ এর সমান মনে হয়! নিজের আপন মানুষগুলোকে ছাড়া নিজের জন্মভূমিকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না!আমি শুধু তাকে আশ্বাস দিতাম!কারণ তখনও রাহার পড়াশোনা শেষ হয় নি!

– আগে যখন বিজনেস নিয়ে ব্যস্ত থাকতো তখন তো নিজেকে নিয়ের ভাবার একদমই সময় ছিল না!কিন্তু ইদানীং আদিবার আব্বুকেও তো দেখি রোজ বিকালে সময় করে স্টোর রুমে গিয়ে কি যেন করে!কাউকে ঢুকতেও দেয় না!কিছু জিজ্ঞেস করলেই বলে বন্ধুর সাথে ছিলাম!পরে একদিন জানতে পারলাম সেখানে নাকি তাদের দুই বন্ধুর অনেক স্মৃতি জড়িয়ে আছে!ওই স্টোররুমে গেলেই নাকি তাদের শৈশবে কাটানো দিনগুলো চোখে ভেসে উঠে!তাই নাকি তিনি প্রতিদিন তার বন্ধুর সাথে কাটানো দিনগুলোর কথা মনে রাখতেই..

এতটুকু বলেই থেমে গেলেন জাকিয়া বেগম। রনিত আর আহসান ইসলাম এর উদ্দেশ্য বললেন,

– এমন বুড়ো বয়সে কাউকে এইভাবে লাফালাফি দেখেছেন কখনো?অনেক হয়েছে এবার থামুন!নয়তো এই বয়সে হাড়গোড় ভেঙ্গে দুই বন্ধুকে বাকিজীবনটা হাসপাতালে কাটাতে হবে!

এইকথা শুনার পর সবাই হেসে দেয়!আর অন্যদিকে দুই বন্ধু তাদের বাচ্চাসুলভ আচার-আচরণে ক্ষানিকটা লজ্জায় পড়ে গেছে!আহসান ইসলাম বলে উঠলেন,

– তাও ভালো!অন্তত বাকি জীবনটা তো দুই বন্ধু একসাথে কাটাতে পারবো!

– আয় বন্ধু বস এখানে!

আহসান ইসলাম সোফায় নিয়ে বসালেন রনিত চৌধুরীকে।

– কে রে?

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে রাবিয়া বেগন(সাজির দাদু) বললেন।

– রনি এসেছিস নাকি?এই বুড়ো মাটাকে তো ভুলেই গেছিস!

রনিত চৌধুরী এগিয়ে গিয়ে রাবিয়া বেগমকে সালাম করে জড়িয়ে ধরলো!

– তুমি কেমন আছো মা?

– যেমন রেখে গেছিলি!

– হুম আমার মা তো এখনো অনেক ইয়াং এই আছে দেখছি!

রাবিয়া বেগমকে হাত ধরে সোফার দিকে নিয়ে যেতে যেতে রনিত চৌধুরী বললেন,

– তা আহসান আমি চলে যাওয়ার পর মা কি সেই আগের মতো এখনো তোকে কানমলা দেয়!

– না রে!তুই চলে যাওয়ার পর থেকে তো আর ওইসব করাই হয় না!

– নানুজান,মামু কি এমন করতো?যার জন্য তোমার হাতের কানমলা খেতে হতো?

দীপ্ত সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে বললো।

– সেইসব অনেক পুরাতন স্মৃতি জড়িয়ে থাকা কথা!এখন বলে শেষ করা যাবে না!অন্যসময় বলবক্ষন!বউমা তুমি কেমন আছো?

রেখা চৌধুরী এসে সালাম করে বললেন,

– ভালো আছি মা।আপনি কেমন আছেন?

– ওইতো আছি কোনোরকম!দাদুভাইরা কোথায়?

– এইযে দাদু আমরা!

রাহা আর রায়ানও এসে রাবিয়া বেগমকে সালাম করলো।আর উনি দুজনকেই দোয়া আর আদর করে দিলেন!দীপ্তি, সাজ্জাদ ইসলাম,ইমরুল ইসলাম(সাজির ছোট চাচ্চু) শিখা (সাজির মা), জ্যোতি(সাজির ছোট কাকি) একে একে সবাই এসে বসেছে। আলিফ আলবী ঘুমিয়ে পরেছিল। ওরাও মাত্র ঘুম থেকে উঠে আসলো।আর বাকি রইলো ইহান!ওকে সাজি জানি কি কাজে একটু বাইরে পাঠিয়েছিল!একটু আগে ইহানও চলে এদেছে!সবাই বসে নিজের মাঝে আলাপ-আলোচনা করছিল তার মধ্যেই রনিত চৌধুরী বলে উঠলেন,

– যাকে দেখার জন্য এসেছিল,আমার ঘরের লক্ষী সে কোথায়?

– এই আলিফ আলবী যা গিয়ে তোর লাজুক আপুকে বল মেয়েকে নিয়ে আসতে!

জাকিয়া বেগমের কথায় আলিফ আলবী দুইজনেই আদিবার ঘরে চলে গেল!

– ওই তো চলে এসেছে!

ইহানের কথায় সবাই সিঁড়ির দিকে তাকায়!দীপ্ত ভাবছে অন্যকথা!কি ব্যাপার কখন আসলাম বাসায়! একবারও গোধূলিকে দেখলাম না তো!এমনিতে তো সাড়া বাড়ি মাথায় করে রাখে!আজ হঠাৎ এতো ভদ্র হয়ে গেল কিভাবে! এইসব ভাবতে ভাবতেই লাজুক সবাইকে সালাম দেয়!কারণ আগে ও কারো সাথে দেখা না করেই উপরে চলে গিয়েছিল!তারপর আদিবাকে দাদুর পাশে বসিয়ে দেয়! রেখা চৌধুরী আদিবাকে বললেন,

– ঘোমটাটা তুলো তো মা।আজ কাল মেয়েরা এই সব নিয়ম-কানুন মানে নাকি!তার থেকেও বড় কথা আমরা কি তোমার অপরিচিত কেউ যে এতো লজ্জা পেতে হবে!

লাজুক আস্তে করে মাথার ঘোমটাটা সড়িতে দেয়।ঘোমটা সড়াতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় দীপ্ত!

– ঘোমটার আড়ালে এটা কে?গোধূলি!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-৭

শরীরের সবটুকু শক্তি দিয়ে হাতগুলো মুষ্টিবদ্ধ করে রেখেছে দীপ্ত!ওরনাটা সড়াতেই সাজির বাম গালের তিলটাই এক ঝলক দেখেছিল দীপ্ত!দীপ্ত সাজির বাম পাশেই বসেছিল!তবে একদম কাছে না একটু দূরেই!আহান আর ও বসে ল্যাপটপে কিছু একটা করছিল!কনের মুখ দেখতে বলায় দীপ্তও তাকিয়ে ছিল!তাও শুধু এক সেকেন্ড হবে হয়তো!মানে এক পলক যাকে বলে আরকি!পুরো মুখটাও দেখে নি ঠিকমতো!দেখার প্রয়োজনও ওর পরে না!এক পলকেই যদি চিনতে না পারে তাহলে হাজার বছর তপস্যা করেও মনে হয় কারো চেহেরা মনে রাখা সম্ভব!

– মাশাল্লাহ!

রেখা চৌধুরী বললেন!রায়ান সাজির দিকে তাকায় নি!মুখোমুখি বসেছে দুজন তাই হয়তো সবার সামনে তাকাতে লজ্জা করছে!

– Wow! She is very beautiful and hot!

বনির এই কথাটা রায়ানকে বলতে আর কেউ না শুনলেও দীপ্তের কর্ণগোচর ঠিকই হলো!তবে বনি কিন্তু কথাটা যথেষ্ট ফিসফিসিয়েই বলেছিল!কারণ রায়ান লজ্জায় বেশ লাল-নীল হচ্ছিল!যতই পূর্ব পরিচিত হোক না কেন নিজের বিয়ে বলে কথা!লজ্জা পাওয়াটাই যথার্থ যুক্তিসঙ্গত!কিন্তু দীপ্ত তো দীপ্তই!
যার নামই দীপ্ত তার মেজাজটাও তো তেমনই হবে!সেটাই স্বাভাবিক নয় কি?বনির কথাটা শুনা মাত্রই দীপ্ত ওর হাতদুটো আরো শক্ত করে মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়!চোখ গুলো যেন আগ্নেয়গিরির ভয়ানক জলন্ত লাভার ন্যায় লাল হয়ে গেছে!দীপ্ত আর কোনোদিক না তাকিয়ে সোজা ওখান থেকে বেড়িয়ে যায়!

– তুই আবার কোথায় যাচ্ছিস?

জাকিয়া বেগমের কথায় থেকে যায় আহান!আহানও পিছন পিছন চলে যাচ্ছিল দেখার জন্য দীপ্ত কোথায় গেলো?কিন্তু মায়ের ডাকে ওর আর যাওয়া হয় নি!
কথা নেই বার্তা নেই দীপ্ত এই ভাবে চলে গেল কেন?সবাই একটু অবাকেই হয়েছে!তবে ততটাও নয়! হয়তো কোনো কাজের কথা মনে পরে গেছে!এই ছেলে এমনি! হুটহাট কোথায় গায়েব হয়ে যায় কাউকে কিছু বলেও যায় না!

– সাজি!

সাজ্জাদ সাহেবের কথায় সবার দৃষ্টি এতক্ষণে সাজির উপরে!

– তুই এখানে কেন?আদিবা কোথায়?

এবার রায়ানও তাকায়!আসলেই তো এটা তো আদিবা নয়!এ তো একটা পিচ্চি মেয়ে! বয়স আর কতই বা হবে এই আঠারো বা ঊনিশ!তাহলে আদিবা কি এই বিয়েটা করতে চায় না! ওকে কি আদিবার পছন্দ নয়!তাহলে কি আর বিয়েটা হচ্ছে না!রায়ানের মাথায় অনেক গুলো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে!

– ও কি আমাদের আদিবা না?

– না রে রনিত!ও হচ্ছে আমাদের সাজ্জাদ এর মেয়ে সাজি!

আহসান সাহেবে বললেন।রাহা,বহ্নি, বনি সবাই হা করে তাকিয়ে আছে!সাজি উৎকন্ঠিত স্বরে বললো,

– সরি আঙ্কেল!আপনি কিছু মনে করবেন না!আসলে বিকাল থেকে আমার সাথে সারপ্রাইজ এর নাম করে অনেক জ্বালিয়েছে!আমার বুবুর বিয়ে অথচ আমি জানি না ভাবা যায়?যখন আমি সবটা জানতে পারলাম পরে ভাবলাম এবার না হয় আমিও একটু সারপ্রাইজ দেই!লাজুবু যখন বুবুকে আনতে যাচ্ছিল তখন লাজুবুকে আমার প্ল্যান এর কথা সবটা বলি!কিন্তু লাজুবু কিছুতেই রাজি হচ্ছিল না।তাই তো আসতে একটু দেরি হলো!বুবু কিন্তু এই সব এর কিছুই জানে না!এখন বলো সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম!

সাজিকে আর কিছু বলতে না দিয়ে রায়ান বলে দিলো,

– বাবা আমার মেয়ে পছন্দ হয়েছে!আমি এই বিয়েটা করতে রাজি!

কথাটা শুনা মাত্রই বাড়ির ভিতরে পা টা রাখার আর সাহসই পায় নি দীপ্ত!পা গুলো যেন ওদের চলন শক্তি হারিয়ে ফেলেছে!ধীরে ধীরে পিছিয়ে গেলো সদর দরজা থেকে কেউ দেখার আগেই!কিছু একটা ভেবে দীপ্ত আবার ফিরে এসেছিল!কিন্তু রায়ানের এই কথা শুনার পর ওর আর বাড়ির ভিতরে ঢুকতে ইচ্ছে হলো না!এবার যেন রাগটা সপ্তম-আসমান বেধ করলো!দেয়ালে জোরে একটা ঘুষি মেরে ওখান থেকে বেড়িয়ে গেল!

– এইসব তুই কি বলছিস রায়ান?

– আমি ঠিকই বলছি বাবা!আমি যদি বিয়ে করি তাহলে একেই বিয়ে করবো!

উপস্থিত সবাই হা হয়ে গেলো!রায়ান তো জানে ওর সাথে আদিবার বিয়ে হওয়ার কথা তাহলে ও এখন এইসব বলছে কেন?রনিত আর রেখা চৌধুরী বেশ অবাকেই হলেন!যে ছেলে তাদের কথার উপরে কখনো কথা বলে না!আর আজ কিনা সেই ছেলে এই ভাবে ওনাদের সাথে কথা বলছে!সাজির চোখ দুটো বেরিয়ে আসার উপক্রম!ও ভাবতেই পারে নি রায়ান এই রকম কিছু বলতে পারে!ড্যাবড্যাব করে শুধু তাকিয়ে আছে।
সবার নজর তখন রায়ানের উপর!রায়ান চোখে ইশারা করে বুঝালো ও দুষ্টুমি করছে!তখন কিছু একটা ভেবে আহসান ইসলাম বলে উঠলেন,

– ঠিক আছে বাবা আমার কোনো আপত্তি নেই!আদিবা যেমন আমার মেয়ে ঠিক সাজিও!তোমার যখন ওকে পছন্দ হয়েছে আর সাজিও যখন….

কথাটা শেষ করেই বলে দিলেন,

– আমরা এই বিয়েতে রাজি!

রায়ান মনে মনে বলছে,

– কি শালিকা? এইবার আমি সারপ্রাইজটা কেমন দিলাম?খুব তো এসেছিলে আমাদের সারপ্রাইজ করতে!এবার?এবার তো নিজের ফাঁদে নিজেই ধরা পড়লে!

রায়ান এগুলো ভাবছে আর মিটমিটিয়ে হাসছে!

– এ্যাএ!

সাজি ন্যাকা স্বরে কান্না শুরু করে দিয়েছি!ন্যাকা স্বরেই বললো,

– আমি তো একটু মজাই করছিলাম!আমি কেন বিয়ে করবো?বাবাই তুমি এইসব কি বলছ?আমি বিয়ে করবো না!

– কেন! আমাকে পছন্দ হয় নি?

সবাই রায়ান এর সাথে সাই দিয়ে বলছে,

– ওর যাকে পছন্দ তাকেই তো বিয়ে করবে!আর আদিবার জায়গায় তুই এসেছিস!সেটা তো আর রায়ান জানে না!তোকে তো ওর পছন্দ হয়ছে এখন আমাদের কি দোষ বল?তুই নিজেই তো এলি!

এখন সবার সামনেই খুব জোরেশোরেই কান্না করে দিয়েছে সাজি!সাজির কান্ড দেখে সবাই অট্টহাসিতে সারা বাডি মাথায় তুলছে।হতবাক হয়ে যায় সাজি।

– কি শালিকা!আমার সারপ্রাইজটা কেমন লাগলো?

– মানে?

কান্না থামিয়ে সাজি বলল।

– মানে কিছুই না!সারপ্রাইজ কি শুধু তুমিই দিতে পারো?আমরা পারি না?

– তারমানে এতক্ষণ তোমরা আমার সাথে মজা করছিলে?

– Exactly!অনেক হয়েছে এবার যা তো!আদিবা আপুকে নিয়ে আয় গিয়ে!

মিহির বলল।

সাজি এক দৌড় দিয়ে চলে গেল!অনেকটা লজ্জা পেয়েছে তার কান্ডে!তার সাথে সারপ্রাইজও!
আদিবার ঘরে গিয়ে হাক ছাড়ে লাজুবু একটু উপরে আসো তো!লাজুকও গেলো!

– কি রে তুই এমন হাফাচ্ছিস কেন?আর এমন ঘেমেছিস কিভাবে?

– বেশি পাকনামি করলে যা হয় আরকি!

ঘরে ঢুকতে ঢুকতে লাজুক বলল।লাজুকের কথা বুঝতে না পেরে কপাল কুচকে তাকায় আদিবা।লাজুক বলে,

– মানে তোমার বোন ড্রয়িং রুমে সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে গিয়েছিল!তারপর সে নিজেই সারপ্রাইজড আরকি!

– মানে?আমি তো কিছুই বুঝলাম না!

– এখন এত কিছু বলার সময় নেই বুবু!তুমি আগে নিচে যাও সবাই ডাকছে তোমাকে! নয়তো তোমার হবু জামাই বিয়েটা আমাকেই করে ফেলবে

আদিবা ফিচেল হেসে বললো,

– মানে?

লাজুক হেঁসে বলল,

– চলো তোমাকে যেতে যেতে বলছি!

আদিবা বললো,

– সাজি তুই যাবি না!

– না বাবা আজ আর নিচে যাচ্ছি না!আগে তোমার বিয়েটা ফিক্সড হোক তারপর ওই জামাইবাবুকে বুঝাবো মজা!

অন্যদিকে দীপ্তি বেগমের অন্য চিন্তা!দীপ্ত হঠাৎ কাউকে কিছু না বলে কোথায় চলে গেল?কল করছে বার বার কিন্তু দীপ্ত ফোনটা রিসিভই করছে না!চিন্তা হচ্ছে খুব! অফিসে আবার কোনো সমস্যাই হলো কিনা!এরমধ্যেই আদিবাকে নিয়ে লাজুক চলে এসেছে! রায়ান তো এক ধ্যানেই তাকিয়ে ছিল!আদিবা ছোট বেলা থেকেই অনেক ফর্সা ছিল!আর এখন তো পূর্ণ বয়স!তাই এখন চোখ ধাঁধানো গায়ের রং হয়েছে!চোখ ফেরানোই দায়!

– উহুম!

গলা খাকড়িয়ে রায়ানকে ধাক্কা দিলো বনি।কানে কানে ফিসফিস করে বললো,

– বউটা তো তোরই এই ভাবে তাকিয়ে তাকার কি আছে?এখানে আমরা সবাই আছি একটু তো লজ্জা পাবি নাকি?

– কিসের লজ্জা রে? আমার বউকে আমি দেখবো সেখানে লজ্জা পাওয়ার কি আছে?

রায়ানের কথাটা রাহা শুনে ফেলে।মুখ টিপে হেসে রায়ানকে ফিসফিসিয়ে বললো,

– আরে বা ভাইয়া! তোর তো দেখছি আর ত সইছে না!বাবাকে বলি আজকেই বিয়েটা সেড়ে ফেলতে?

– চুপ কর তুই!

রায়ানের এবার লজ্জা লাগছে।রাহা মিটমিটিয়ে হাসছে ভাইয়ের অবস্থা দেখে।আদিবা এসে সবাইকে সালাম দেয়।তারপর রায়ানের পাশে বসানো হয় ওকে।রনিত সাহেব বললেন,

– মাশাল্লাহ!আহসান দেখ দুইজনকে কি সুন্দর মানিয়েছে না?মা তুমি কিছু বলো?

রাবিয়া বেগমে জিজ্ঞেস করলেন।রাবিয়া বেগম ধীরে কন্ঠে বললেন,

– না মানানোর তো কোনো কারণ নাই!আমার নাতনি কম কিসে বল তো!রুপে গুনে কোনো দিক দিয়েই কম যায় না। নিজের নাতনি বলে বলছি না।তাও তোর ছেলে তোর ছেলের বউ!তুই নিজেই যাচাই করে নে!

– যাচাই কেন করতে যাবো মা।আমি কি আমার ছেলের বউ নিতে এসেছি?আমার ঘরে আরেকটা মেয়ে নেবো বলে এসেছি!

রেখা চৌধুরী বললেন,

– তাহলে আর দেরি কেন?যত তাড়াতাড়ি সম্ভব বিয়ের তারিখটা ফাইনাল করো!

– আরে দাঁড়াও! আগেই বিয়েতে চলে যাচ্ছ!বিয়ের আগে তো এনগেজমেন্টটা করতে হবে নাকি?

রনিত চৌধুরী বললেন।

– হুম তা তো অবশ্যই!

সাজ্জাদ ইসলাম বলেন

– আহসান তাহলে তুই এনগেজমেন্ট এর ডেইট টা ঠিক কর!

রনিত চৌধুরী বললেন।

– না আমি না!মা ঠিক করুক!মা তুমি একটা দিন বলো তো!

– আগামী শুক্রবার হলে কেমন হয়?

– খুব ভালোই হয় মা।রনিত তাহলে আগামী শুক্রবারেই এনগেজমেন্টটা করা হোক?রায়ান তোমার কোনো আপত্তি আছে বাবা?

– না আঙ্কেল!আপনারা যা সিদ্ধান্ত নিবেন তাই হবে!

– আলহামদুলিল্লাহ!আচ্ছা তাহলে ওই কথাই রইলো! আগামী শুক্রবারই রায়ান আর আদিবার এনগেজমেন্ট হচ্ছে!

– আদিবা এইদিকে আসো তো মা!

রেখা চৌধুরী আদিবাকে কাছে ডেকে ওনার হাতেও ডায়মন্ড এর বালা দুটো পড়িয়ে দিতে দিতে বললেন,

– খালি হাতে আমি আমার বউমাকে কেন আর্শীবাদ করবো!এটা কেমন দেখায় না?

বালা দুটো আদিবার হাতে পড়িয়ে দিয়ে একটা তৃপ্তির হাসি দিলেন রেখা চৌধুরী! রায়ানদের বাড়ির সবাই আরো কিছুক্ষণ ছিল সাজিদের বাড়িতে।সন্ধ্যার পরেই তারা তাদের বাসার উদ্দেশ্য বেড়িয়ে পড়ে!

#চলবে……
.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here