দীপ্ত গোধূলি পর্ব -০৪+৫

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৪

সাজির কিছুই বোধগম্য হলো না!কি সুন্দর অনুষ্ঠানটা দেখছিল মাঝেখান থেকে এলিয়েনটা নিয়ে চলে এলো!
দীপ্তের চলে যাওয়া পথের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সাজি বাসার ভিতরে চলে আসে। ভিতরে এসে দেখে ড্রয়িং রুমে এলাহিকান্ড!একদিকে ছোটদের গোল টেবিল বৈঠক চলছে আর অন্যদিকে বড়দের।সাজির যত কাজিন আছে সবাই এখানে উপস্থিত!
শুধু আহান আর ভাইয়া ছাড়া!সাজির বড় চাচ্চুর দুই ছেলে এক মেয়ে,ছোট চাচ্চুর টুইন দুই ছেলে! তাছাড়াও সাজির একমাত্র মামার এক ছেলে ও এক মেয়ে!সবাই আছে শুধু ওই দুইজন ছাড়া!সাজির বড় চাচ্চুর মেয়েই সবার বড় আর ওর নাম হচ্ছে আদিবাl দুই ছেলের নাম হলো আহান আর ইহান।ছোট চাচ্চুর দুই ছেলের নাম হলো আলিফ আর আলবী। সাজির মামার মেয়ের নাম লাজুক আর ছেলের নাম হলো মিহির। লাজুক!যেমন নাম তার ঠিক তেমন তার চলনবলন।লাজুককে দেখা মাত্রই সাজি দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরে বললো,

– লাজুবু তুমি কখন এলে?

সাজি লাজুককে লাজুবু বলেই ডাকে!অর্থাৎ সাজিকে বলা হয়েছিল লাজুককে বুবু ডাকতে।আর ও সেটার শর্টফর্ম করে দিলো লাজুবু!সাজি মুখ ফুলিয়ে বলে,

– লাজুবু তোমরা কখন এসেছ?কই আমাকে তো কেউ কিছু বলে নি তোমারা যে আসবে!ইনফ্যাক্ট কাল রাতে তোমার সাথে কথা হয়েছে তখনও তো বলো নি।

– আমরা এসেছি তা অনেকক্ষণ!সকালেই বড়মা ফোন করে বললো আসতে।রাতে তোকে কিভাবে বলতাম?আচ্ছাএখন তুই গিয়ে আগে ফ্রেশ হয়ে আয়।তোর জন্য অনেক বড় সারপ্রাইজ অপেক্ষা করছে!

– সারপ্রাইজ!তাও আবার আমার জন্য!ও লাজুবু বলো না প্লিজ বলো না।

– না এখন বলা যাবে না আগে তুই তোর ঘরে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয় তারপর বলছি!সারপ্রাইজ বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে?

– এ্যাএ!

সাজি অলরেডি ন্যাকা কান্না শুরু করে দিয়েছে।

– না না না এই সব ড্রামা করে কাজ হবে না!যা বলেছি তাই কর।

– ও বাবাই(বড় চাচ্চু) বলো না কি সারপ্রাইজ? না বললে আমি কিন্তু এখন খুব জোড়ে কান্না করবো!

– আরে সাজি মা বলে দিলে কি আর সারপ্রাইজ থাকে?তুই বরং ওরা যা বলছে তাই কর!

আহসান সাহেব স্বাভাবিক ভাবেই বললেন।

– ও দাদু বলো না কি সারপ্রাইজ?

– আরে আমার সাজু বুড়ি আমি কি করে বলি দেখোনি!সারপ্রাইজ বলে দিলে আর তা সারপ্রাইজ থাকে!তুমি না খুব বুদ্ধিমতি তোমার বাবাই বলে! তো এই সহজ জিনিসটা তোমার মাথায় ঢুকছে না?

– হুম!

– এই ছোটদা এইদিকে আয়!ইহানকে আস্তে করে ডাক দিলো সাজি ইহানও এলো! কিন্তু ওকে জিজ্ঞাসা করে কোনো লাভই হলো না বরঞ্চ না শুনার ভান করে চলে গেলো!

– বুবু!(আদিবা)এই বুবু!তুমি কোনো কথা বলছ না কেন?তুমি তো আমার ভালো বোন বলো!তাহলে কেন শুধু শুধু তোমার এই পিচ্চি বোনটাকে টেনশন দিচ্ছো?বলে দাও না!

আদিবা কোনো কথাই বলছে না!শুধু ব্লাশিং করছে!

– লে!এ আমি কাকে কি জিজ্ঞেস করছি!কোনো কথা তো বলছেই না উল্টো লজ্জা পেয়ে টমেটোর মতো মুখ করে বসে আছে।ধ্যাৎ।

সাজি কারো কাজে কোনো কিছু জানতে না পেরে চলে আসছিল কিন্তু হঠাৎ করেই মাথায় একটা দুষ্ট বুদ্ধি চলে আসে আর একটা ফন্দি আঁটে আলিফ আর আলবীর জন্য!সাজি হাক ছাড়ে বললো,

– মা…. ও মা মাআ আমার এই চকলেট গুলো ফ্রিজে রাখছি দেখো যেন কেউ ফ্রিজের ধারে কাছেও না আসে।

কথাটা বলে এক দৌড়ে সিঁড়ির কাছে চলে আসে!
সিঁড়িতে পা রাখতেই আলিফ আর আলবী সাজিবু বলে ডাক দিতেই সাজির কি যে খুশি লাগছিল তা বলার বাহিরে!ভেবেছে এবার হয়তো ওর কাজ হবে!ওদের ডাক শুনে যেইনা পেছনে ফেরে আলিফ আর আলবী অনেক গুলো চকলেট সাজির সামনে তুলে ধরে দাঁত খেলাতে থাকে !সাজি বুঝে গেছে ওর টোটকায় কাজ হয় নি!এদেরকে আগে থেকেই কেউ ঘুষ দিয়ে রেখেছে!সাজি চোখ রাঙিয়ে বলে,

– নন্টে-ফন্টে(সাজি আদর করে ওদের নন্টে-ফন্টে ডাকে)তোদেরকে তো আমি পরে দেখে নেবো।

কথা বলেই সাজি উপরে চলে যায় ফ্রেশ হতে।সাজি চলে যেতেই সবাই হেঁসে দিলো!সাজির ফুপি বলে উঠল,

– বুঝলি সাজ্জাদ তোর মেয়েকে যদি অভিনয়ে দিতি তাহলে দেখতি অনেক নাম-যশ করতে পারতো!

আরেক দফা হেঁসে দিলো সবাই।তাদের হাসির শব্দ সাজির কান পর্যন্ত ঠিকই গেছে!লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বেড়িয়ে আসে সাজি।এসে দেখে ওর ঘরে লাজুক শাড়ি পড়ে বসে আছে।দেখে মনে হচ্ছে ওর জন্যই এতক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছিল!সাজি বেড়িয়ে আসতেই লাজুক তাড়াতাড়ি হেয়ার-ড্রায়ারটা নিয়ে আসে সাজির চুল শুকানোর জন্য!সাজি অবাক হয়ে বললো,

– লাজুবু তুমি হেয়ার-ড্রায়ার কেন আনলে আমি তো এখন কোথাও যাবো না যে তাড়াতাড়ি চুল শুকাতে হবে!

– দরকার আছে বলেই তো নিয়েছি! তুই একদম কথা বলবি না!চুপচাপ বসে থাকবি।এই দিকে আয় তো দেখি চুলটা শুকিয়ে দেই।

সাজি কপালে চিন্তার ছাপ ফেলে বললো,

– আচ্ছা লাজুবু একটু আগেই তো দেখলাম তোমার পড়নে থ্রিপিস তাহলে এখন হঠাৎ করে শাড়ি পড়েছ কেন?

– সারপ্রাইজ!

– উম!আবার?সেই এক কথা সারপ্রাইজ!এখন আমার মাথা খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্ত!

সাজি এখন বিলাপ শুরু করেদিয়েছে!

– উম..কেউ আমাকে ভালোবাসে না!একটুও ভালোবাসে না! আমি থাকবে না এই বাড়িতে। চলে যাব আর আসবই না!

লাজুক সাজির কথা শুনে মুখ টিপে হেসে বললো,

– তা কোথায় যাবি শুনি?

– সারপ্রাইজ! বলব না! সারপ্রাইজ বলা যায় না!

সাজি একরোখা উত্তর দিলো।লাজুক ওর কান ধরে বললো,

– ওরে দুষ্ট! আমার কথা আমাকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে তাই না?দিনে দিনে খুব ফাজিল হয়ে যাচ্ছিস তো তুই।ডান!চুল শুকানো শেষ।এবার আয় তো তোকে এই শাড়ীটা পড়িয়ে দেই!

শাড়ির কথা শুনে সাজির চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসার উপক্রম।বললো,

– কি?শাড়ী!শাড়ী কেন?তাও আমি?কোনোদিন আমাকে শাড়ী পড়তে দেখছো তুমি লাজুবু?

– কোনোদিন দেখি নি বলে কি হয়েছে?আজকে দেখব!আমিও তো কখনো শাড়ী পড়ি না তাই বলে কি আজকে আমি পড়ি নি? ফুপি,কাকিয়া,বড় মা সবাই বলল পড়তে তাই পড়েছি।আর তোকেও পড়াতে বলেছে!তাই তো আমি এলাম। আমাকে তো ফুপিই পড়িয়ে দিল।আমি তো সবাইকেই শাড়ী পড়াতে জানি নিজে পড়তে পারি না!

সাজির এত কথা মাথায় ঢুকছে না।ও শুধু শুধু শাড়ি কেন পড়বে?সাজি নাক টেনে বলে,

– না লাজুবু আমি শাড়ি পড়বো না। আমি শাড়ী সামলাতে পারি না।শাড়ি পড়ে হাটতে পারি না।

– আমি মনে হয় খুব পারি!আমি নিজেও বাধ্য হয়েই শাড়ী পড়েছি!আর কথা না বাড়িয়ে এইদিকে আয় তাড়াতাড়ি বেশি সময় নেই! ওরা হয়তো এতক্ষণে এয়ারপোর্ট থেকে বেড়িয়ে গেছে!

বিস্মিত হয়ে লাজুকের দিকে তাকায় সাজি।জিজ্ঞাস করলো,

– ওরা মানে?কারা?আর এয়ারপোর্ট থেকে কারা আসছে?

– আসলেই দেখতে পাবি!

– হেয়ালি না করে বলো না।

– ছেলেপক্ষ!আরে নড়িস না!শাড়ীটা পিন-আপ করতে দিবি তো নাকি?

ছেলেপক্ষের কথা শুনে সাজির চোখ কপালে।উচ্চস্বরে বলে উঠে,

– কি? ছেলেপক্ষ!কেন?

– আরে আস্তে!

– না মানে কার জন্য? আমাদের বাড়িতে কেন?

– চুপ একদম চুপ আর একটা কথাও বলবি না! এতক্ষণ ধরে অনেক কথা বলেছিস!এখন এইখানে শান্ত হয়ে বস তো দেখি!

লাজুকের ধমক শুনে সাজি একদম নড়াচড়া বন্ধ করে দিয়েছে আর শান্ত হয়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসলো।লাজুক মুচকি হেসে ওকে হালকা সাজিয়ে দিয়ে চুলটা আঁচড়ে সুন্দর একটা গাজরা দিয়ে খোপা করে দিলো।

– কমপ্লিট!দেখ তো তোকে কেমন লাগছে?নতুন কনের মতো লাগছে না?

সাজি মুখ গোমড়া করে বলে,

– ছেলেপক্ষ কি আমাকে দেখতে আসছে লাজুবু?
আমি কিন্তু বিয়ে টিয়ে করবো না বলে দিচ্ছি!তুমি সবাইকে বলে দাও সাজির বিয়ে করবে না!আরে ইয়ার আমার বড়দেরই তো এখনো বিয়ে হয় নি!তাহলে আব্বু আমাকে কেন আগে বিয়ে দিয়ে দিবে?

সাজির এই কথা শুনার পর লাজুক হাঁসতে হাঁসতে শেষ!হাসি থামিয়ে বলে,

– আগে তুই আদিবা আপুর ঘরে চল তাহলেই বুঝতে পারবি!

– কেন?বুবুর ঘরে কেন?

– আরে চল না!গেলেই তো দেখতে পাবি!

– না আমি যাব না!আমি বিয়ে করবো না!

আবার বিলাপ করতে করতে ন্যাকা স্বরে কান্না শুরু করে দিয়েছে সাজি!

– আরে কি করছিস তুই সাজি?সাজটা তো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে!

বিরক্ত হয়ে লাজুক বললো।সাজি ধরা গলায় বললো,

– যাক নষ্ট হয়ে!সাজ নষ্ট হয়ে যাবে বলে আমার কান্না পেয়েছে আমি কাঁদবো না?

– আল্লাহ এই মেয়েকে নিয়ে কি করি তুমিই বলে দাও?

লাজুক হতাশ স্বরে বলল।সাজির পাশের রুমটাই আদিবার।সাজির কান্নার আওয়াজ শুনে আদিবা ছুটে এলো।আদিবাকে দেখে সাজির কান্না থামিয়ে বলে উঠে,

– বুবু তোমারও বিয়ে?#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে -স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব -৫

– আমারও বিয়ে মানে?সাজি এইসব কি বলছে লাজুক? আর ও এইভাবে কাঁদছেই বা কেন?

আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞাস করলো আদিবা।লাজুক স্মিত হেসে বললো,

– আপু আর বলো না। আমি যেই বলেছি ছেলেপক্ষ আসছে ওমনি ও কান্না শুরু করে দিয়েছে!আরো কি সব বলছে জানো?ও নাকি বিয়ে করবে না! ভাবা যায়?দেখছো মেয়ে কত এডভান্স!

– ও তো কিছু ভুল বলে নি লাজুক!ঠিকই তো বলেছে!ছেলেপক্ষ আসলে তো বিয়েই হয়!

আদিবার কথা শুনে লাজুক হতবাক।সাজি আদিবার কথায় সায় দিয়ে বলে,

– হুম তাই তো বুবু! আমি কি কিছু ভুল বলেছি?দেখো লাজুবু আমাকে একদম বউ এর মতো করে সাজিয়ে দিয়েছে!আর এখন দেখছি তুমিও বউ এর মতো করেই সেজেছো!তাই তো আমি জিজ্ঞেস করলাম তোমারও বিয়ে কিনা!

– হুম বিয়েই তো!আমারও আর তোরও!

কথা বলেই মিটিমিটি হাসছে আদিবা।সাজি আবারও ন্যাকা স্বরে বলে,

– এ্যা!আমি বিয়ে করবো না।আমার কত আশা ছিল আমার ভাই-বোনদের বিয়েতে কত্ত আনন্দ করবো!ও বুবু তুমি সবাইকে বলে দাও আমি কিন্তু বিয়ে করবো না!আমার কথা না শুনলে আমি কিন্তু কারো সাথে কথা বলবো না আর কিছু খাবোও না বলে দিলাম!

– সে তুই যা কিছুই করিস না কেন আজকে তোকে বিয়ে দিয়ে দিলে পরে তুই কারো সাথে কথা না বললেও কারো কিছু এসে যাবে না!কারণ তখন তুই থাকবি শ্বশুর বাড়িতে! আর রইলো বাকি খাওয়ার কথা? ও তো আর আমরা দেখতে যাবো না!তুমি না খেলে আমরা না খেয়ে বসে থাকবো নাকি?খাবি, না খাবি না সেটা তোর পেট তোর মাথা ব্যাথা আমাদের কি!না কিরে লাজুক?

আদিবা কথা বলে লাজুকের দিকে চোখ মারে।লাজুক মুচকি হেসে সায় দিয়ে বলে,

– হুম সেটাই তো!

সাজির চোখ দুটো পানিতে টলমল করছে।দেখে মনে হচ্ছে এই বুঝি ঝুম বৃষ্টি শুরু হবে!সাজির এই অবস্থা দেখে আদিবা দৌড়ে এসে সাজিকে জড়িয়ে ধরলো আর বললো,

– একদম না! একদম কাঁদবি না।সাজটা নষ্ট হয়ে যাবে তো!

সাজি অভিমানী স্বরে বললো,

– হোক!আমার কথা কেউ ভাবে না!আমাকে কেউ ভালোবাসে না!সবাই আমাকে পর করে দিতে চাচ্ছে!

– হয়েছে? তোর বলা শেষ?এবার থাম!এখন আমি বলছি তুই শুনবি!

আদিবা চোখ রাঙিয়ে বলে।সাজি ফ্যালফ্যাল করে ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আদিবা আবার বলে,

– আজকে সকালে তুই ভার্সিটিতে চলে যাওয়ার পর পরেই আব্বুর ছোট বেলার বন্ধু আছে না রনিত চৌধুরী!রনিত আঙ্কেল?সাজি মাথা নাড়িয়ে হুম বলল। আঙ্কেল ফোন করে বললেন তারা নাকি আজকে দেশে ফিরছেন!আর আজকেই নাকি আমাকে দেখতে আসবেন।আব্বু আর আঙ্কেল যখন ভার্সিটিতে পড়তেন তখন ঠিক করেছিলেন যে, রনিত আঙ্কেল এর যদি ছেলে অথবা মেয়ে হয় তাহলে আব্বুর ছেলে অথবা মেয়ের সাথে উনার ছেলে বা মেয়ের সাথে বিয়ে দিবেন! ভার্সিটি শেষ করার পর আঙ্কেল পারিবারিক ভাবেই বিয়ে করে তাদের নিজেদের বিজনেস এ জয়েন করেন।অন্যদিকে আব্বুকেও দাদু বিয়ে করিয়ে বিজনেস এ ঢুকিয়ে দেয়!তারপর রনিত আঙ্কেল এর এক ছেলে হয়।আর তার নাম রাখা হয় রায়ান চৌধুরী।পরে এক মেয়েও হয় তার নাম রাখা হয় রাহা।
রায়ান ভাইয়া আমার থেকে চার বছরের বড়।ছোট বেলায় আমাদের বাড়িতে কত এসেছে!তুই তখন অনেক ছোট দেখলেও তোর মনে থাকার কথা না।এখন সিঙ্গাপুর থাকে!রনিত আঙ্কেল ছেলেমেয়ের পড়াশোনা জন্য সিঙ্গাপুর চলে গিয়েছিল স্বপরিবারে !অনেক বছর পর তারা দেশে ফিরছে।পড়াশোনা শেষ করে রায়ান ভাইয়া এখন তার বাবার বিজনেস সামলাচ্ছে আর রাহা সবে গ্রেজুয়েশন কমপ্লিট করলো। আঙ্কেল দেশে এসে ছেলেমেয়ের বিয়ে দিয়ে এইখানেই বাকি জীবনটা কাটাতে চান। বিদেশি জীবন ভালো লাগে না তার।নিজের জন্মভূমিকে ছেড়ে কি থাকা যায়!আমাদের আগের বাসাটা ছিল ছোট! যেখানে সবাই থাকা সম্ভব হতো না তাই পাল্টে এখানে এসে বড় বাসা করা হয়।আর আমরা এখানে চলে আসার পর তারা আর আমাদের বাসায় আসে নি!কারণ তখন তারা বিদেশে!আর তাই তাদের এয়ারপোর্ট থেকে পিক করতেই আহান আর দীপ্ত গেছে!

– ওহ্! তারমানে তখন বাবাই ফোন করেছিল!তাই এলিয়েনটা আমাকে ওই রকম টানতে টানতে নিয়ে চলে এসেছিল!কেমন ফাজিল! বদ শয়তান লোক!এলিয়েন! আমাকে বললে কি হতো?

মনে মনে বলে সাজি।

– বুদ্ধু!এবার কিছু বুঝলি?কাউকে শাড়ি পড়িয়ে সাজালেই কি তার বিয়ে হয়ে যায়?

– হুম!তারমানে শুধু তোমার বিয়ে?আমার কোনো বিয়ে টিয়ে না!

হুড়রে বলেই এক চিৎকার দেয় সাজি!

– এ আমি কি শুনছি?আমার বুবুর বিয়ে!আমার যে কি আনন্দ হচ্ছে তোমাদের বলে বুঝাতে পারবো না!

এই কথা শুনার পর সাজি খুশিতে পাগলপ্রায় অবস্থা!সারা ঘর জুড়ে নেচে চলেছে! বিছানায় দাঁড়িয়ে লাফালাফি করছে!সাজির এইসব কান্ড দেখে আদিবা আর লাজুকের হাঁসতে হাঁসতে এখন পেট ব্যাথা করছে!অবশেষে লাজুক বলল,

– হয়েছে হয়েছে বোন আমার!এবার থাক!
বিছানা থেকে নাম এবার!অনেক লাফালাফি করেছিস আর না!

– হুম হুম ঠিক আছে! আমার লাফালাফি থামালাম।
এখন তো অন্য কেউ লাফাবে!আর তার ব্যবস্থা করবো আমি!এতক্ষণ তো সবাই মিলে আমাকে খুব ভয়ে আর টেনশনে রেখেছিলে না?আব আয়েগা মাজা!আগে আগে দেখো হোতা হে কেয়া!

আদিবা আর লাজুক একসাথে বলে উঠল,

– মানে?তুই কি করবি?

– উহু তা তো এখন বলা যাবে না! ক্রমশ প্রকাশ্য!
আগে সময় হোক তারপর বলবো!

সাজির কথার উত্তরে লাজুক বলল,

– তোর যা খুশি কর।উল্টা-পাল্টা কিছু করিস না কিন্তু বলে দিলাম!

– আচ্ছা! তোমরা এখন আমাকে একা ছেড়ে দাও তো! আমার এখন অনেক প্ল্যান করতে হবে!অনেক হিসাব নিকাশ করতে হবে!

সাজির কথা শুনে আদিবা হেঁসে দিয়ে টেবিল থেকে ক্যালকুলেটরটা সাজিকে দিয়ে বলল,

– এই নে তোর সব হিসাব-নিকেশ শেষ হলে পরে আমার রুমে চলে আসিস!

লাজুক আর আদিবা দুজনেই চলে গেলো!বোকা বনে গেল সাজি!ক্যালকুলেটর!ওকে কি হিসেব করতে হলে ক্যালকুলেটর লাগবে!আরে ক্যালকুলেটর দিয়ে ও কি হিসেব করবে!

– বুবু!

বলে চিল্লাতে শুনা গেলো সাজিকে!নিচ থেকে সবাই শুনলো।সাজির মা লাজুককে জিজ্ঞাসা করল,

– কি হলো রে লাজুক?সাজি এইভাবে আদিবাকে ডাকছে কেন?

– ডাকছে না ফুপি!সারপ্রাইজ পাওয়ার পর তোমার মেয়ে হিসাব-নিকাশ করতে বসেছে!

– কিসের হিসাব?

– তা তোমার মেয়েই জানে!আল্লাহ জানে তোমার মেয়ে কি করে!

– মানে?

– কিছু না! ও তুমি বুঝবে না!আচ্ছা ফুপি কাকিয়া কোথায় গো?

– দেখ রান্না ঘরেই আছে।

আচ্ছা বলে লাজুক চলে গেল।সাজির মায়ের মাথায় কিছুই ঢুকলো না!বোকার মতো লাজুকের চলে যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো!ওইদিকে কলিং বেল বেজেই যাচ্ছে!সাজির মায়ের কোনো খবর নাই!

– কিরে ছোট কোন সময় থেকে কলিং বেলটা বাজছে শুনতে পাস নি?যা গিয়ে দেখ!

উপর থেকে আদিবার মা বলল।

#চলবে………

👉.

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here