দীপ্ত গোধূলি পর্ব -১০+১১

#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে-স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-১০

গোধূলি চলে যেতেই দীপ্ত অনুশোচনায় ওর হাতে অনবরত প্রহার করতে থাকে!ও তো ইচ্ছে করে গোধূলিকে আঘাত করতে চায় নি!অনিচ্ছাকৃত হলেও আঘাতটা তো ওই করেছে!

– যেই হাত দিয়ে আমি আজ আমার গোধূলিকে রক্তাক্ত করেছি সেই হাত আমি রাখব না বলেই দীপ্ত দেয়ালে নন-স্টপ ঘুষি মারতে থাকে!এক পর্যায়ে দীপ্তের হাত থেকে প্রচুর ব্লিডিং হতে শুরু করে!ক্লান্ত হয়ে শেষে দেয়াল ঘেষে নিচে বসে পড়ে।এক ধ্যানে নিজের হাতের দিকে তাকিয়ে থেকে বললো,

– এই হাতে দুটি মানুষের রক্ত তো একি!কোনো ফারাক তো আমি দেখছি না!তাহলে আমার কেন গোধূলির রক্ত দেখে মনটা অস্তির হয়ে গেছে!আমার নিজের হাত থেকেও তো রক্ত ঝড়ছে কই আমার তো ব্যাথা লাগে না!তাহলে ওর রক্ত দেখে কেন আমার কষ্ট হচ্ছে?

কথা গুলো ভাবতে ভাবতে হাটুর ভাজে মাথা রেখে অতীতে ডুব দিলো দীপ্ত!

ফ্ল্যাশব্যাক _______

– আব্বু এই ট্রাফিক-জ্যাম কখন ছাড়বে?সেই কখন থেকে বসে আছি।ধ্যাৎ!

বিরক্ত হয়ে কথাটা বলে দীপ্ত।দীপ্ত গাড়ির জানালার কাঁচ নামিয়ে মাথা বের করে দেখছিল জ্যাম ছাড়ছে কিনা!দেখা শেষ হলে আবার যখন গাড়ির কাঁচ তুলতে যাবে ঠিক তখনই কারো খিলখিল করে হাসার আওয়াজ ভেসে আসে ওর কানে!

– দীপ্ত বাহিরে প্রচুর ধূলাবালি জানালার কাচঁটা তুলে দাও।

ধীর কন্ঠে জামাল চৌধুরী(দীপ্তের বাবা) বললেন। দীপ্ত ক্ষানিকটা মন খারাপ করেই জালানার কাঁচটা আবার তুলে দেয়।কিন্তু কিছুতেই ওর মন মানছিল না!খিলখিল করে হাসা সেই হাসির আওয়াজ বার বার ওর মনকে অশান্ত করে তুলছিল!তাকে এক পলক দেখার প্রবল ইচ্ছা জাগে দীপ্তের!দীপ্ত নিষ্পাপ কণ্ঠে বলে,

– আম্মু জানালাটা একটু খুলি?প্লিজ!

– না দীপ্ত! তোমার আব্বু দেখলে বকা দিবে!

– আব্বু তো সামনে বসে আছে দেখতে পাবে না!তুমি কিছু বলো না ঠিক আছে!

– দীপ্ত কেন কথা শুনছো না বলো তো?শুনতে পাও নি তোমার আব্বু কি বলল?বাহিরে অনেক ধূলাবালি আছে।তোমার না ডাস্ট অ্যালার্জি আছে?

– প্লিজ আম্মু!বেশি না এক মিনিট!
প্লিজ প্লিজ প্লিজজজ!

– ঠিক আছে! তবে কিন্তু এক মিনিট এই!

– ওকে!

দীপ্ত আবার জানালার কাঁচটা নামিয়ে এদিক সেদিক তাকিয়ে সেই মধু মাখা হাসি দেয়া মালিককে খুঁজতে থাকে! কিন্তু যতক্ষণে দীপ্ত তাকে খুঁজতে গেল ততক্ষণে ট্রাফিক জ্যামও ছেড়ে দিয়েছে!ফলে একরাশ বিষন্নতা নিয়ে দীপ্ত আবার জানালার কাঁচটা বন্ধ করে চুপচাপ বসে পড়ে!মনে মনে আওড়াচ্ছে,তাহলে কি তাঁকে হারিয়ে ফেললাম?কন্ঠ শুনে যা মনে হলো যতেষ্ট পিচ্চি একটা মেয়ে!বয়স আর কত হবে এই দশ বা এগারো!এই পিচ্চি একটা মেয়ের হাসি এতোটা মাধুর্য্য মাখা হতে পারে?আমার কেন এতোটা অস্বস্তি হচ্ছে!তার সাথে আমার কি কখনো আবার দেখা হবে? নাকি না!

– দীপ্ত কি এতো ভাবছিস বল তো?

– কিছু না আম্মু!

– তাহলে তোকে এমন অন্যমনষ্ক দেখাচ্ছে কেন?

– কই?এমনি ভালো লাগছে না! আচ্ছা আম্মু…

– হুম,কিছু বলবি?

– না থাক!

– কিছু বলার থাকলে বলতে পারিস!

– আচ্ছা আম্মু! আমরা যদি মন থেকে কাউকে চাই তাহলে কি পাবো?

দীপ্তি বেগম সন্দিহান চোখে তাকিয়ে থেকে বলে,

– এমম.. কাউকে মানে?

দীপ্ত গলা খাঁকারি দিয়ে বলে,

– না মানে ধরো, আমি যদি মন থেকে কিছু চাই তাহলে কি আমার উইশ ফুলফিল হবে?

– হুম হতে পারে!যদি তুমি সত্যি সত্যি চাও!তবে তার জন্য তোমাকে অবশ্যই অধ্যাবসায়,সাধনা,ধৈর্য্য,
চেষ্টা-পরিশ্রম করতে হবে!কেননা,কষ্ট ছাড়া জীবনে কোনো কিছুই অর্জিত হয় না!

– হুম,বুঝলাম!

– তা কি মনে করে হঠাৎ এইসব প্রশ্ন করছিস তুই?

– না এমনি!

– আচ্ছা ঠিক আছে! তুই বলতে না চাইলে আমি জোর করবো না!

– আরে আম্মু তেমন কিছু না!আসলে আমরা যখন জ্যাম এ আটকে ছিলাম তখন একটা মেয়ের হাসির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলাম!জানো আম্মু মেয়েটার হাসিটা না খুব সুন্দর। কিন্তু মেয়েটাকে আমি দেখতে পাই নি!দেখার আগেই জ্যাম ছেড়ে দিয়েছে!

– হুম!তা আমার ছেলে কি সেই হাসি ওয়ালীর প্রেমে পড়ে গেছে নাকি?

দীপ্তের গাল টিপে আহ্লাদী গলায় বললো দীপ্তি বেগম। দীপ্ত লজ্জিত মুখে বলে,

– আরে না আম্মু! তুমি এই সব কি বলছো!

– হুম বুঝি বুঝি সব বুঝি!

– আরে না! আম্মু চুপ করো তো আব্বু শুনতে পাবে!

– আমি অলরেডি শুনে নিয়েছি মাই সান!

কথাটা বলে জামাল সাহেব মিটিমিটি হাসছে।দীপ্ত চমকে উঠে বাবার কথায়।আদুরে গলায় বললো,

– আব্বু!

– কি?বল প্রেমে পড়ে গেলি না তো আবার?

– আব্বু তুমিও!

দীপ্তি বেগম ছেলের লজ্জার অবসান ঘটিয়ে প্রসঙ্গ পরিবর্তন করতে বললেন,

– আল্লাহ চাইলে আবার দেখা হবে!এখন ওই সব বাদ দিয়ে বল তো অনেক দিন পর নানুর বাড়ি যাচ্ছিস কেমন লাগছে?

– খুব ভালো লাগছে আম্মু!আই এম সো এক্সাইটেড!

– তাই?

– হুম!

সিঁড়ি থেকে রাবিয়া বেগম বললেন,

– কলিং বেলটা সেই কখন থেকে বাজছে! এই আদিবা দেখ তো তোর ফুপি মনে হয় চলে এসেছে!

– যাচ্ছি দাদু!

আদিবা গিয়ে দরজা খুলে দিলো।সত্যিই দীপ্তি আর জামাল সাহেব এসে গেছেন!

– কেমন আছেন ফুপা?ফুপি তুমি কেমন আছো?

– ভালো।

– মা কেমন আছেন?

জামাল সাহেব রাবিয়া বেগমকে জিজ্ঞাসা করেন।

– ভালো বাবা,তোমারা কেমন আছো?

– জ্বি আলহামদুলিল্লাহ।

– তা আমার দীপ্ত নানুভাই কোথায়?ও আসে নি?ওর না আসার কথা?

– এসেছে!

– কোথায় তাহলে?দেখতে পাচ্ছি না তো!

– মা তোমার নাতি মোড নিয়ে গাড়িতে বসে আছে!তাকে নাকি এই বাড়ির কাউকে গিয়ে রিসিভ করে নিয়ে আসতে হবে!সে এতো বছর পর তার নানুর বাড়িতে আসছে বলে কথা!

– কেন?তোমার ছেলে কি এই বাড়ির জামাই নাকি?

দীপ্তি বেগম অবাক হয়েই বললেন,

– এই কে রে?

– আমি!গোধূলি!

উপরে সিঁড়ির কাছে গোধূলি দাঁড়িয়ে ছিল গোধূলি।ওর ফুপির বলা কথার পিছনে ও এই কথা বলে দেয়!দীপ্তি বেগম হেসে বললো,

– আচ্ছা পাকনা বুড়ি! তা তোর এমন মনে হওয়ার কারণ?

– না নয়তো কি!জামাইদেরকেই তো গাড়ি থেকে রিসিভ করতে হয়!আমি টিভিতে দেখেছি!

– তা আপনি ওইখানে কি করছেন শাশুড়ী?এইদিকে আসেন।

জামাল সাহেব বললেন।

– আসছি আসছি! কেমন আছো তোমরা?

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে গোধূলি জিজ্ঞাসা করলো।

– আমরা ভালো আছি,আপনি কেমন আছেন শাশুড়ী ?

– ভালো!

– জানো মা দীপ্তের এমন কথায় আমিও বেশ অবাকেই হয়েছিলাম!যা নাতি তোমার!তাঁর এক কথা!অথচ আসার সময় বলছিল সে নাকি খুব এক্সাইটেড!
আমি বলে এসেছি তুই তোর মোড নিয়ে বসে থাক!আমি গেলাম আমার বাপের বাড়ি!
#দীপ্ত_গোধূলি
#লেখনীতে-স্বর্ণালী তালুকদার
#পর্ব-১১

– আম্মু!

– ওই তো দীপ্ত চলে এসেছে!

আদিবা ওকে আনতে যাচ্ছিল!তার আর প্রয়োজন হয় নি।তার আগেই দীপ্ত নিজেই চলে এসেছে!অনেকক্ষণ বসে থাকার পরও যখন কেউ যাচ্ছে না তখন দীপ্ত গাড়ি থেকে বের হয়ে দেখছিল কেউ আসছে কিনা!কিন্তু হঠাৎ করেই কোথা থেকে একজন ভিক্ষুক চলে আসে!ওনার সাথে একটা ছোট বাচ্চাও আছে।দীপ্তের কাছে টাকা চাইছিলো কিন্তু ওর কাছে তো টাকা ছিল না!দীপ্তের ভিক্ষুককে দেখে খুব মায়া হয়েছিল।তাই টাকা নিতেই তার মোডকে বিসর্জন দিয়ে বাড়ির ভেতরে চলে আসে!দীপ্তকে দেখে দীপ্তি বেগম মুখ টিপে হেসে বললো,

– তোর মোড আর ধরে রাখতে পারলি না?

দীপ্ত গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

– আম্মু ওই সব কথা রাখো তো!নেহাতি বাধ্য হয়েছি আসতে নয়তো আমি আসতাম না!

– তাই বুঝি?

– হুম!আব্বু কিছু টাকা দাও তো!

– কেন?

– বাহিরে একজন ভিক্ষুক এসেছে তাকে দিবো।

জামাল সাহেব আস্ত ওয়ালেটটাই ছেলের হাতে ধরিয়ে দিয়ে বললেন,

– তার যতটা প্রয়োজন দিয়ে আসো!

দীপ্ত ওর মাকে ওয়ালেটটা দেখিয়ে বলে,

– আম্মু এইটাই নিতেই আমাকে বাড়ির ভিতরে আসতে হয়েছে!

দীপ্তি চৌধুরী ছেলের এহেন কান্ডে খুশি হয়ে তৃপ্তির হাসি দিয়ে ছেলেকে চোখে ইশারা করেন টাকাটা দিয়ে আসার জন্য! দীপ্ত ফিরে এসে ওর আব্বুকে ওয়ালেটটা ফেরত দেয়। বারিয়া বেগমের দিকে এগিয়ে এসে বলল,
– নানুজান কেমন আছো তুমি?

রাবিয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরলো দীপ্ত সাথে রাবিয়া বেগমও অনেক দিন পর নাতিকে কাছে পেয়ে আবেশে জড়িয়ে ধরলেন!

– আমি ভালো আছি।এতো দিনে বুঝি এই বুড়ী নানুর কথা মনে পরলো?

– কি করবো বলো পড়াশোনার প্রচুর চাপ ছিল!তোমাদের কথা প্রতিটি মুহূর্ত স্মরণ করেছি!আর এত দূর থেকে তো বললেই চলে আসা যায় না বলো!

– তা ইয়াং ম্যান এখন তোমার কি ইচ্ছে?বিডিতেই থেকে যাবে নাকি আবার উড়াল দিবে!

– নানাজন!

নানাভাইয়ে গলার আওয়াজ শুনতে পেয়েই বেশ উল্লাসে দীপ্ত দৌঁড়ে গিয়ে আনোয়ার ইসলামকে জড়িয়ে ধরলো!

– লন্ডন ফিরে যাওয়ার কোনো ইচ্ছে আপাতত নাই!ভার্সিটি লেভেলটা এইখানেই কমপ্লিট করার ইচ্ছা!তাই চলে এলাম তোমাদের কাছে!আর তুমি ইয়াং ম্যান কাকে বলছো?আমি সেই দশ বছর আগে তোমাকে যেমন দেখে গিয়েছিলাম তুমি তো দেখছি এখনো তেমনি আছো!কি ব্যাপার নানাজান?রহস্যটা কি বলো তো?

শেষ কথাটা আনোয়ার সাহেবের কানে কানে বলল দীপ্ত!

– পরিস্থিতি সামাল দিতে আনোয়ার সাহেব গলা ঝেড়ে দীপ্তের কানে কানে বলেন,

– এটা টপ সিক্রেট!তোমায় পরে বলবো!

– পাক্কা!প্রমিজ!

– হুম!হুম পাক্কা!

– ঠিক আছে তাহলে!

– নানা-নাতি মিলে সেই কখন থেকে কি গুজুরফুসুর করা হচ্ছে শুনি!

রাবিয়া বেগম সন্দিহান চোখে তাকিয়ে দেখে বললেন।দীপ্ত বললো,

– কিছু না নানুজান!ওই নানাভাইকে একটু ভালো মন্দ জিজ্ঞাস করলাম আরকি!তা নানুজান বাড়ির বাকি সবাই কোথায়?আলিফ আলবী নিশ্চয় অনেক বড় হয়ে গেছে?ওরা দেখতে কি এক রকমই হয়েছে?

– হুম!এই বছর নার্সারিতে!ওরা সবাই একটা বিয়ে বাড়িতে গেছে!গেছে সেই সকালে এতক্ষণে তো চলে আসার কথা!

– এসে গেছি এসে গেছি!

ইমরুল সাহেব বাড়িতে ঢুকতে ঢুকতে বললেন।

– এই দেখ বলতে না বলতেই চলে এসেছে!

ব্যাস!সবাই হৈচৈ শুরু করে দিয়েছে!এতো বছর পর বোন-বোনজামাই ভাগ্নে এসেছে বলে কথা!গোধূলি আড়াল থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে!ফুপা-ফুপির সাথে দেখা হলেও দীপ্তের সাথে ওর আগে কখনো দেখা নি!হয়েছে বলতে সেই ছোট বেলা!গোধূলি বয়স যখন এক-দুই তখন দীপ্তরা লন্ডনে চলে যায়!বিদেশে চলে যাওয়ার কারণও আছে!একটা হলো দীপ্তের পড়াশোনা অন্যটি হলো দীপ্তের চাচারাও ওইখানে চলে যাওয়ার জন্য খুব জোর করছিল জামাল সাহেবকে!তারা জামাল সাহেবকে ছাড়া বিজনেস সামলাচ্ছে হিমশিম খাচ্ছিলেন!তাই আরকি চলে যেতে হয়েছিল!দীপ্তি বেগম আর জামাল সাহেব বাংলাদেশে কয়েক বার আসলেও দীপ্ত কখনো আসে নি!দীপ্ত বলেছিল ওই দেশের সবকিছু চুকিয়ে তবেই দেশে ফিরবে যাতে আবার কোনো কারণে লন্ডন যেতে না হয়!আর এই জন্যই দীপ্তকে গোধূলি কখনো দেখে নি!

– গোধূলি, আমার এই নামটা যে রেখেছে তাকে দেখার জন্য সেই ছোট্ট বেলা থেকে আমি কত এক্সাইটেড ছিলাম!আমার এই সুন্দর নাম যে দিয়েছে না জানি সে দেখতে কত সুন্দর!কিন্তু না! এই ছেলে তো দেখছি আস্ত একটা এলিয়েন!সবার সাথেই তো দেখা করলো কই আমার কথা তো একবারো জিজ্ঞাস করলো না!আর আমি কিনা ভেবেছিলাম সবার আগে হয়তো আমার কথায় জিজ্ঞাস করবে!ফুপিরা আসবে বলেই তো বুবুকে নিয়ে আগে বাগেই বিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছিলাম!শুধু শুধু এতোটা দৌড়ে এলাম!আমিও সামনে যাবো না হু!

গোধূলি কথা গুলো নিজে নিজে বলেই নাক ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো!

– মা, আদিবা আর সাজি তো সেই কখন বিয়ে বাড়ি থেকে চলে এসেছে!তাহলে ওদের দেখতে পাচ্ছি না কেন?

জাকিয়া বেগম রাবিয়া বেগমকে জিজ্ঞাস করলো। আদিবা রান্নাঘর থেকে বেড়িয়ে এসে বললো,

– এই তো মা আমি এখানে!

– তুই এখানে তাহলে সাজি কোথায়?

– ও তো এতক্ষণ নিচেই ছিলো!ফুপা ফুপির সাথেও তো দেখা করে গেল।মনে হয় ওর রুমে আছে!

– বিয়ে বাড়িতে তো ঠিক মতো কিছু খেয়েও আসে নি মেয়েটা!গিয়ে দেখ তো কোথায় আছে?

– বড় মামি, সাজি কে?

দীপ্ত অবাক হয়ে জিজ্ঞাস করে।

– বাবাবাহ বাহ ভালোই!এই ছেলে দেখছি আমাকে চিনেই না!তার মেজো মামার যে একটা মেয়ে আছে যার নাম গোধূলি ইসলাম সাজি সেটা মনে হয় এই দশ বছরে ভুলেই গেছে!

কথাগুলো বিড়বিড় করে বলে রাগে বেগুনির মতো ফুলছে গোধূলি!

– ধূর আমি আর এখানে থাকবোই না!

– দেখো ছেলের কান্ড!তুই কি সাজির কথা ভুলে গেলি নাকি?ও তো তোর মেজো মামার মেয়ে!

দীপ্তি বেগম বললেন।

– ওহ!ওর কথা তো আমার মাথা থেকে বেড়িয়েই গেছিলো আম্মু!কিন্তু ওর নাম তো আমি গোধূলি দিয়েছিলাম না!

– হুম!

– তাহলে?

– বাড়ির সবাই ওকে সাজি বলেই ডাকে!

– ওহ আচ্ছা!তাহলে কোথায় সে?সেই ছোট্টবেলায় দেখেছিলাম এখন হয়তো অনেক বড় হয়ে গেছে?

– হুম!এখন সেভেন এ পড়ে!

আদিবা বললো।

– ব্বাবাহ!অনেক বড়ই হয়ে গেছে তাহলে!আমার সাথে তো দেখা করতে এলো না যে?

দীপ্তের কথার প্রত্যুত্তরে দীপ্তি বেগম বললেন,

– এসেছিলো তো!তখন তুই গাড়িতে ছিলি।তোকে কি বলে জানিস!

কৌতূহলী হয়ে দীপ্ত বললো,

– কি বলে?

তখন গোধূলির বলা কথা দীপ্তি বেগম সবাইকে বলে দেয়।সাজির বলা কথা শুনে সবাই হাসতে হাসতে লুটোপুটি খাচ্ছিল।অন্যদিকে দীপ্ত রাগ আর লজ্জায় ওখান থেকে কোনো মতে পালিয়ে আহানকে নিয়ে ওর ঘরে চলে যায়!

দীপ্ত রাগে গজগজ করতে করতে রুমে ঢুকলো!মেয়ের সাহস দেখেছো আমাকে অপমান করা!এই দীপ্ত চৌধুরীকে!তোকে আমি পরে দেখো নেবো!

– কি হলো কি ভাবছিস দীপ্ত!

আহানের ডাকে দীপ্ত ধ্যান ভেঙে বলে,

-হুমম!কিছু না!আহান তুইও তো এই বছর ভার্সিটিতে এডমিশন নিবি?

– আমার ভর্তি শেষ!

– ওহ তাই!আচ্ছা কোন ভার্সিটিতে?আমিও তোর ভার্সিটিতেই পড়বো!আমাকে কালকে তোর ভার্সিটিতে নিয়ে যাস!

– ওকে!এখন তুই একটু বিশ্রাম নে।অনেকটা পথ জার্নি করে এসেছিস!

– হুম আগে একটা লম্বা শাওয়ার নেই তারপর একটা লম্বা ঘুম দেবো!

– ঠিক আছে।

শাওয়ার নিয়ে এসে দীপ্ত ঘুমিয়ে পড়ে।যখন ঘুম ভাঙ্গে
তখন সূর্য প্রায় ডুবো ডুবো অবস্থায়!ছোট বেলা থেকেই এই সময়টা দীপ্তের খুব পছন্দের।সূর্যাস্তের পর মুহুর্তের সময়টা দীপ্ত খুব উপভোগ করে!তাই আর দেরি না করে এক লাফে বিছানা থেকে উঠে সোজা দৌঁড় লাগায় ছাদের উদ্দেশ্যে!

দীপ্ত ছাদের সিঁড়ির কাছে যেতেই দেখতে পেলো ছাদের পশ্চিম দিকটায় দাড়িয়ে আছে কেউ!কোমড় ছাড়িয়ে যাওয়া চুল সন্ধ্যার বাতাসে উড়ছে!সেই দিকে আর বিন্দুমাত্র ভ্রুক্ষেপ নেই!সে বেখেয়ালি মনে আকাশের পানে তাকিয়ে আকাশের সৌন্দর্য্য উপভোগ করতেই ব্যস্ত!দীপ্ত ধীর পায়ে এগিয়ে যায় সম্মুখে।সেই তরুণীর ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে নেশালো কন্ঠে বলে উঠলো,

– চুলের জন্য খোঁপা আছে,তেমন করেই না হয় রেখো!
মেঘকালো চুল ছড়িয়ে কেন, সূর্যটাকে ঢাকো?

#চলবে…..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here