দীর্ঘ রজনী পর্ব -০৬+৭

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৬
,
,
,
,
,

সাজি ভ*য়ে ভ*য়ে পেছনে তাকাতে যাবে এমন সময় পেছন থেকে কারো চি*ৎ*কা*র শুনলো। ভ*য়ে কেঁ*পে উঠলো সাজি। কেউ হয়তো আ*ঘা*ত পেয়েছে তাই ব্যা*থ্যা*য় কাতর কন্ঠে চি*ৎ*কা*র করছে।
সাজি কিছু বলবে তার আগেই পেছন থেকে চেনা পরিচিত গলা শোনা গেলো,, মুখ না চালিয়ে পা চালা। তা না হলে কাঁধে করে নিতে হবে।

গলার স্বর শুনেই বুকটা ধ*ড়া*স করে উঠল।ভ*য় দ্বিগুণ মাত্রায় বেড়ে উঠলো। আজ সাদ ভাই নামক ব্যাক্তির হাত থেকে কে বাঁ*চা*বে তাকে! ভাবতে ভাবতে ভ*য়ে সামনে এগিয়ে যেতে লাগলো।

সাদ সাজির দুপাশে হাত ছড়িয়ে দিয়ে সাজিকে সবার ধা*ক্কা থেকে প্রোটেক্ট করছে।
রা*গে পুরো শরীর টগবগ করছে সাদের। ইচ্ছে করছে এই দু আঙুলে মেয়েকে দুইটা আ*ছা*ড় দিতে। তবে এতে নিজের সব চেয়ে বড় ক্ষ*তি হবে ভেবেই চুপ করে আছে। সময় মত না এলে কি যে হতো ভেবেই ফে*টে পড়ছে সাদ।

সাজি যখন গেইটের বাইরে বের হয়ে মানুষের জটলায় দাঁড়ালো তখনই বি*প*ত্তি শুরু হয়েছে। একটা ছেলে বারবার সাজিকে ছোঁয়ার চেষ্টা করছে। সাদ তখন ভীড় ঠেলে ভেতরে ঢুকছিলো কেবল। সাদ জানতো মেয়েটা একটা না একটা গ*ন্ড*গো*ল ঠিকই পাকাবে। তাইতো এই ভিড়ের মধ্যে ডুকে পড়লো তাকে খুঁজতে। ছেলেটা যখন সাজির কোমর হাত ছোঁয়াতে যাবে তখনই সাদ সাজিকে আগলে নিয়ে ছেলেটার পায়ে স্বজোরে লা*থি দেয়। এতেই ছেলেটা চি*ৎ*কা*র করে উঠে। আশেপাশের পরিস্থিতি এমন না হলে আজ ছেলেটাকে জানে মে*রে দিতো সে।

ভীড় পেরুতেই সাজির হাত ধরে গাড়ি ওবদি নিয়ে গেলো। সাজিও লক্ষী মেয়ের মতো সাজের সঙ্গ দিচ্ছে। গাড়িতে উঠে বসতেই টাইয়ের বাঁধন আলগা করে পেছনের সিটে ছু*ড়ে ফেললো। সিটে শরীর এলিয়ে চোখ বুজে নিলো। সাজি ভ*য়ে ভ*য়ে সাদের দিকে তাকিয়ে মাথা নিচু করে ফেললো।

সাদ চোখ বুজে নিরেট স্বরে সুধালো,, পরীক্ষা কেমন হয়েছে?

এই স্বরে কথা বলা মানেই মহাবিপদ সেটা সাজি ভালো করেই জানে। তাইতো কিছু বলতে চেয়েও পারছে না। কথা সব গলায় দ*লা পাকিয়ে গেছে। আর এই দ্বিধা সংকোচ নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বলে দেওয়া মানেই দুই গালে থা*প্প*ড় খাওয়ার ডিল ফাইনাল করা।
আগে পিছে সবটাতেই বি*প*দ দেখে দুইহাত দুইগালে চে*পে চোখ মুখ খিচে ফেললো। যাক বিপদ সব মাথার উপর দিয়ে যাক। গালে না পড়লেই হবে।

সাজির সাড়া শব্দ না পেয়ে চোখ মেলে তাকালো সাদ। সাজিকে এই অবস্থায় দেখে রা*গ*বে না হাসবে বুঝতে পারছে না। তবে রা*গ টিকলো না বেশিক্ষন। বাইরের দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসলো সাদ। সাদ ভেবে পায় না ,এতোই যখন ভ*য় পায় তাহলে উল্টো পাল্টা কাজ করে কেন? মেয়েটা বড্ডো বেশি বেখেয়ালী। ভাবতেই অবাক লাগে এই বেখেয়ালি মেয়েটাকেই ভালোবেসে বসে আছে সে।

_____

কাল অর্থনীতি পরীক্ষা। আর আজ সকাল থেকে খাটে গড়াগড়ি দিয়ে কাঁ*দ*ছে সাজি। পুরো বইটাকেই অপরিচিত লাগছে তার। সেঁজুতি হাসান দুইবার এসে মেয়েকে দেখে গেছেন। অনেক বুঝিয়ে বলেছেন কিন্তু সাজি সেই বই বুকে জড়িয়ে ফ্যাচ ফ্যাচ করে কাঁ*দ*ছে।
এতেও খান্ত হয়নি সাজি। বাবাকে কল দিয়ে বলে দিয়েছে সে ফেল করবে শিওর। কেউ যেন তার পাশের আশা না করে।
বইয়ের চিত্র থেকে শুরু করে সবটাতে তালগোল পাকিয়ে গেছে। এমন এক সময় টিচার ওবদি খুঁজে পাওয়া দু*ষ্ক*র। সাজির ইচ্ছে করছে চি*ৎ*কা”র করে পুরো বাড়ি মাথায় তুলে নিতে। এতে যদি ক*ষ্ট কিছু কম হয়। আপাতত বই বুকে নিয়ে সুয়ে আছে।

সেঁজুতি হাসান মেয়ের এমন কান্ডে হা হুতাশ করছে। রেনু কাল থেকে সাজিকে দেখছে গড়াগড়ি কাঁ*দ*তে আর আজ সেঁজুতিকে দেখছে।যদিও সেঁজুতি গড়াগড়ি করছে না। তবে তা করতেও দেরি নেই বলে ধারণা করছে রেনু।

সেঁজুতি মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসে আছে।

রেনু পা টিপে টিপে সেঁজুতির পাশে বসে মিনমিনে গলায় বললো,, খালাম্মা আমার মনে হয় আপনার সমস্যার সমাধান সাদ ভাইয়া দিতে পারবে।

সেঁজুতি হাসান মাথা থেকে হাত সরিয়ে কয়েক সেকেন্ড রেনুর দিকে তাকিয়ে তড়িৎ গতিতে জড়িয়ে ধরলো।

সেঁজুতির এহেন কান্ডে চমকে উঠলো রেনু। ভাবছে খালাম্মার মাথায় সমস্যা দেখা দিলো নাকি!

সেঁজুতি জড়িয়ে ধরে চপলা কন্ঠে বলে উঠলো,, রেনুরে তোর এই বুদ্ধি আরো আগে দিলে কি হতো বলতো! পড়া লেখা করলে তুই এতোদিনে উপদেষ্টা পরিষদের চেয়ারম্যান হয়ে যেতি। সে যাইহোক! তুই আমার জন্য কড়া করে এক কাপ চা করতো। আমি কথা বলে আসছি। এর পর আমি আর তুই চা খাবো।

রেনু বে*কু*বে*র মত তাকিয়ে আছে আর ভাবছে।
,, উপদেষ্টা আবার কি? এইটা দিয়ে কি হয় ?
এই ভাবতে ভাবতে কিচেনে চলে গেল।

সেঁজুতি এতক্ষণে A to Z সব কিছু সাদকে বলে দিলো। সাদ আসছে বলে কল কেটে দেয়।

সাদের আজ একটা মিটিং আছে তাও AK গ্ৰুপের সাথে। কিন্তু ছোট মামুনীর কল আসাতেই বি*পা*কে পড়েছে। এই ডিলটা ফাইনাল হলে কোম্পানির জন্য সাফল্য বয়ে আনবে বলে ধারনা করা যায়।

সাদ তার পিএ রায়হান কে কল দিয়ে কেবিনে আসতে বললো ।

রায়হান ডোর নক করতেই, ভেতরে আসতে বলে।

,, রায়হান! আজকের মিটিংটা ক্যানসেল করে দাও। কাল এগারোটায় টাইম ফিক্সড করো।

সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই ললাট কুঁচকে এলো রায়হানের।

সাদ ফাইল থেকে চোখ সরিয়ে রায়হানের দিকে তাকিয়ে বলল,, এনি প্রবলেম রায়হান?

রায়হান ইতস্তত বোধ করে বললো,, স্যার এতে সমস্যা হয়ে যাবে। তারা চাইছে অতিসত্বর মিটিং রাখতে। কিন্তু আপনি বলছেন আরো দেরী করতে।

সাদ মুচকি হেসে বলল,, তাড়াতাড়ির কাজ স*য়*তা*নে*র হয় রায়হান। তুমি এই নিয়ে ভেবো না। যা বলছি তাই করো। তারা যদি আমাদের কম্পানির সাথে collaborate করতে না চায়,, তো বাদ দিয়ে দাও। বাইদা ওয়ে, কম্পানির ডিটেইলস আমাকে মেইল করে দিও। ইচ এন্ড এভরিথিং রায়হান কিছুই যেন বাদ না পড়ে।

~ ঠিক আছে স্যার।কিন্তু চেয়ারম্যানকে কি জবাব দিবেন। উনি হঠাৎ AK কম্পানির সব কিছুর উপরই ইন্টারেস্ট দেখাচ্ছে। ইভেন মিটিং কবে হচ্ছে,কি ভাবে হচ্ছে এই বিষয়ে ম্যানেজার থেকে খোঁজ খবর নিচ্ছে। এমডি কে টপকে ম্যানেজার থেকে খবর নিচ্ছে ব্যাপারটা ঘোলাটে লাগছে আমার কাছে।

,,সেই নিয়ে ভেবো না। আমি ম্যানেজ করে নিবো।তবে এইটাই ভাববার বিষয় যে আমাকে টপকে ম্যানেজার থেকে খোঁজ খবর নিচ্ছে কেন!
রায়হান তুমি বরং আমি যা বলেছি তা করো। আমি কাল একেবারে মিটিংএ উপস্থিত হবো।

,, ঠিক আছে স্যার। আপনি যান আমি সবটা সামলে নিবো।

সাদ মোবাইল নিয়ে বেরিয়ে পড়লো। চেয়ারম্যান হঠাৎ এইসব করছে কেন সেটাই বুঝতে পারছেনা সাদ। আপাতত সব চিন্তা বাদ দিয়ে সাজির চিন্তা করছে সাদ। মেয়েটা কেঁ*দে কেঁ*দে না জানি কি অবস্থা করছে। এই বিষয়টাকে এতো ভ*য় পায় কেন কে জানে! সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে গাড়িতে উঠে পড়লো।

এইদিকে রায়হান কুটিল দৃষ্টিতে ম্যানেজারকে পরখ করছে। মনে মনে ভেবে রেখেছে সাদ স্যারকে নিয়ে উল্টোপাল্টা কিছু বললেই, রাতের আঁধারে নর্দমার পানিতে ফে*লে দিবে এই দুই মুখো সা*প*কে।
———-

মাথা বিছানার বাইরে ঝু*লি*য়ে দিয়ে চিৎপটাং হয়ে ঘুমিয়ে আছে সাজি। তার আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বইখাতা। সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থা।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন। ব্যাস্ততার মাঝে লিখছি।তাই মতামত আশা করছি।)গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:৭
,
,
,
,
,

মাথা বিছানার বাইরে ঝু*লি*য়ে দিয়ে চিৎপটাং হয়ে ঘুমিয়ে আছে সাজি। তার আশে পাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রেখেছে বইখাতা। সব মিলিয়ে এলোমেলো অবস্থা।

দরজায় দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসলো সাদ। প্রেমে ব্যর্থ হলেও কেউ বোধহয় এতোটা ভে*ঙে পড়ে না। যতটা অর্থনীতি না পারার ব্যর্থতায় সাজি পড়েছে। সাদ হাঁসি কন্ট্রোল করতে না পেরে পেছনে ঘুরে গেলো। নিজেকে যথা সাধ্য স্বাভাবিক করে সাজির রুমে ঢুকলো।

এলোমেলো জামা ঠিক করে গায়ে ওড়না জড়িয়ে দিলো। বিছানার উপর ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা বইখাতা গুছিয়ে টেবিলে রাখলো। লম্বা শ্বাস নিয়ে সাজির মাথার পাশে বসে পড়লো সাদ। মুখের উপর পড়ে থাকা চুল গুলো আলগোছে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে কপালে লম্বা সময় ধরে চুমু আকলো।
সাদ ভেবে পায় না মেয়েটাতে কি আছে এমন?সব ব্যাপারে এলোমেলো আর চঞ্চল। সব সময় উৎকণ্ঠা হয়ে কথা বলে , ঠিক করে হাঁটতে ওবদি পারে না, হাঁটার চাইতে উষ্ঠা খেয়ে প*ড়ে বেশি।তার থেকে বড় কথা মেয়েটা তাকে জ*মে*র মতো ভয় পায় ভেবেই হাসলো সাদ।

মাথায় হাত বুলিয়ে মিহি কন্ঠে ডেকে উঠলো,

,,সাজি!! এই সাজি উঠ!

সাজি ঘুরে সাদের কোলে মাথা রেখে পেট জড়িয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়লো।

সাজির এহেন কান্ডে সাদ চমকে উঠলো। বুকটা ইষৎ কেঁ’পে উঠে, হাত পা জমে যাওয়ার জোগাড়, ইতিমধ্যে গা ঘামতে শুরু করে দিল। অদ্ভুত অনুভূতি হলো হৃদসরোবরে।মেয়েটাকে না হয় দুই একটা ধমকই দেয়,তাই বলে এই ভাবে প্রতিশোধ নিবে!
কাঁপা কাঁপা হাতে সাজির হাত দুটো ছাড়িয়ে ,কোল থেকে মাথা সরিয়ে পুনরায় তাঁকে বিছানায় শুইয়ে দেয়। মেয়েটার স্পর্শ ভয়ানক, মূহুর্তে বেসামাল করে দিচ্ছিলো।

বিছানা থেকে খানিকটা দূরে সরে দাড়ালো। সাদ ভালো করেই জানে জেগে উঠে নিজেকে সাদের এতোটা কাছে দেখলে হা*র্ট ফেইল করেই শেষ হয়ে যাবে সাজি। তাই নিঃশব্দে উঠে পড়লো।

ঘেমে যাওয়া কপাল হাতের উল্টো পিঠে মুছে তড়িঘড়ি করে বের হয়ে এলো। আর কিছুক্ষণ থাকলে নিঃসন্দেহে দ*ম আটকে ম*রে যাবে বলে ধারণা করছে সাদ। দরজার বাইরে দাঁড়িয়ে বড় বড় করে নিঃশ্বাস নিয়ে নিজেকে ধাতস্থ করলো। এই মেয়ে ভ’য়ং’ক’র, প্রচন্ড রকমের ভ’য়ং’ক’র। এই মেয়ে প্রেমে পড়েছে মানে জটিল রোগ বুকের ভেতরটায় নিজের সংসার পেতেছে।এই মেয়ের প্রতি হওয়া অনুভূতি গুলো তী*ক্ষ্ণ, ধা*রা*লো ছু*রি*র মতো। হালকা স্পর্শে হৃৎপিণ্ড এফাড় ওফাড় হ*য়ে যাওয়ার যোগার। না জানি এই মেয়ের কারনে কখন প*রলোক গমন করে বসে।

রেনু বালতিতে ভেজা জামাকাপড় নিয়ে ছাদের উদ্দেশ্যে হাঁটা ধরলো। যদিও এইটাকে ঠিক হাঁটা বলে না। এক প্রকার লাফিয়ে ঝাঁপিয়ে চলা বলে।

ধুপধাপ শব্দ শুনে সাদ সেই দিকে তাকালো। রেনুর এই কেঙ্গারু টাইপের চাল দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো সে। মামুনীর কথা সত্য ব-ই মিথ্যা না।

মামুনী বলেছিলেন,” জানিস সাদ আমাদের রেনু বেচারি যদি মানুষ না হতো তাহলে ঠিকই আফ্রিকার বিখ্যাত ক্যাঙ্গারু হতো।” সাদ তখন ব্যাপারটা হেসে উড়িয়ে দিলেও এখন সত্যতার প্রমাণ তার সামনেই।

সাদ বিরক্ত ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে রেনুকে ডাকলো,,

~~ এই রেনু! এই দিকে আয়!

রেনু হকচকিয়ে চার পাশে দেখতে লাগলো। সাদ ভাইয়ের নামে এতো ভ’য়ং’ক’র ভ’য়ং’ক’র কথা শুনেছে যে , এখন আশে পাশে ভুতের মতো হা*না দিচ্ছে এই সাদ ভাইয়া।

সাদ বিরক্ত হয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, এই দিকে!

রেনু সাজির ঘরের দিকে তাকিয়ে সটান হয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। সাদকে দেখে মনে হচ্ছে ভু*ত দেখেছে। অবশ্য রেনুর কাছে সাদ মানেই ভুতের চাইতে ভ’য়ং’ক’র কিছু। রেনু শুকনো ঢোক গিলে গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে গেলো।

সাদ দুহাত পকেটে গুঁজে বললো,, আজ থেকে হাঁটা শিখবি। আর যদি এমন লাফিয়ে বা দৌড় দিতে দেখি! তো তোর পা গুলো সুন্দর করে হাতে ধরিয়ে দিবো। বুঝেছিস?

রেনু সাদের ঠান্ডা ধ*মকে কেঁপে উঠলো। ভয়ে ভয়ে বে*হুঁ*শ হওয়ার জোগাড়।এই প্রথম সাদ ভাইয়া তাকে ধমক দিচ্ছে। তাও আবার পা হাতে ধরিয়ে দেয়ার মতো ধ*মক। রেনু ভ*য়ের চোটে এক নাগাড়ে সাত,আট বার মাথা উপর নিচ করে বললো, বুঝেছি।

~~ এতো ঘন মাথা নাড়ালে খু*লে পড়ে যাবে। নিজের বি*প*দ না ডেকে সাজিকে জাগিয়ে তোল। বলবি সাদ ভাইয়া এসেছে।

রেনু দাঁড়ালো না। বরং এক ছুটে সাজির রুমে ঢুকে পড়লো।

সাদ নিজের কপাল নিজে চাপড়াতে চাপড়াতে বির বির করে বলে উঠলো,, এইটা মানুষ হবে না। এর চলা ফেরা এর বিপদ ডেকে আনবে। তখন বাচ্চা গুলোর কি হবে কে জানে।
,
,

রেনু সাজিকে জোরে জোরে ঝা*কা*তে লাগলো। সাজি ক্ষিপ্ত হয়ে চোখ খুলে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। ঘড়িতে তখন সময় মাত্র এগারোটা। সময় দেখে বিরক্ত হলো সাজি। কপাল কুঁচকে কিছু বলবে তার আগেই

রেনু কাঁদো কাঁদো মুখ করে বললো,, ও সাজি আপা! সাদ ভাইয়া আসছে তাড়াতাড়ি উঠো। তোমার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।

সাজি “সাদ ভাইয়া” শুনতেই লাফিয়ে উঠে বসলো। বাকিটা শুনে ঢোক গিলে ফিসফিস করে বললো,, কেন আসছে রেনু দি?

রেনু দ্বিগুণ অসহায়ত্ব নিয়ে বললো,, আমার পা হাতে ধরিয়ে দেয়ার জন্য।

~~ মানে?? কি আবোল তাবোল বলছো?

~~ বেঁ*চে থাকলে ঠিক করে বলবো, এখন আমি গেলাম।

সাজির প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে সাদের সামনে দাঁড়ালো রেনু।

সাদ জিজ্ঞেস করার আগেই হড়বড় করে বললো,, ভাইয়া সাজি আপা উঠে গেছে। আপনি এখন যেতে পারেন।

সাদ একপলক রেনুকে দেখে লম্বা কদমে সাজির রুমে ঢুকে গেলো।

রেনু বেকুবের মত সাদের যাওয়ার পানে তাকিয়ে আছে। পরক্ষনে বেঁ*চে আছে ভেবেই বড় করে নিঃশ্বাস ফেললো। আল্লাহ আল্লাহ করতে করতে বালতি নিয়ে দৌড়ে ছাদে উঠে গেলো।
,
,
,
বিছানায় গুটিসুটি মেরে বসে আছে সাজি। তার সামনে দাঁড়িয়ে আছে সাদ। সাদ হঠাৎ অফিস টাইমে এইখানে কেন এসেছে সেটাই বুঝে পাচ্ছে না সাজি। ভয়ে ভয়ে বিগত একমাসে করা সকল অপরাধের কথা আরেকবার স্বরন করলো । কিন্তু তেমন কোন অপরাধ পেলো না,যার জন্য সাদ এই সময় তাকে খু*ন করতে আসবে।
আচ্ছা তাহলে সাদ ভাই এলো কেন?
আমিকি নিজের অজান্তেই কোনো অ*প*রা*ধ করলাম?
না না তা কেন হবে। আমার মতো মাসুম বাচ্চা ভুল করতেই পারে না। তাহলে কেন এলো? মা কিছু বলেনিতো? নিশ্চয়ই বলেছে।মা এমন দু নম্বরি কাজ করেছে ভেবেই কান্না পাচ্ছে।

সাদ তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে চেয়ার টেনে বই নিয়ে বসলো। মেয়েটা সেই মিনিট পাঁচেক ধরে ভাবনার জগৎতে আটকে আছে। চোখ মুখ ছোট,বড় করে ভাবনার জগতে বিভোর। সাদ জানে এখন তাকে নিয়েই ভাবছে।
নিশ্চই সব অপরাধের ভীড়ে আমার সাথে করা অ*পরাধ গুলো খুঁজছে। এই মেয়েকে চিনতে বাকি নেই।গলা ঝেড়ে সাজিকে উদ্দেশ্য করে বলল,,” একেতো অ*পরাধ করেছিস তার উপর আমি আসার পরেও বিছানায় বসে আছিস। থা*প্প*ড় কি দুই গালেই দিবো !নাকি একটা গালেই দুটো দিবো সেটা ভাবছি।”

সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই লাফিয়ে উঠে চেয়ার টেনে বসলো। বিনা বাক্যে বই খুললো,ভয়ে ভয়ে বই যে উল্টো খুলে রেখেছে সেটা বুঝতেই পারেনি।

চোখ বইয়ের দিকে থাকলেও মন মস্তিষ্ক জুড়ে সাদের কথাটাই বেজে উঠছে। মনে মনে নিজেকে নিজে জিজ্ঞেস করলো ,কি অপরাধ ছিল সেটা?যেটা করে ভুলে বসে আছি!

সাদ কোট খুলে চেয়ারের উপর রাখলো। টাইয়ের নট ঢিলে করতে করতে সাজির দিকে তাকায়।

ঘুমানোর কারনে চোখ মুখ ফুলে আছে। ঘুম জড়ানো চোখ দুটো আধো আধো খুলে রাখা। কোঁকড়ানো চুল গুলো হাত খোঁপা করে রাখলেও অবাধ্য কয়েকটা চুল তার চোখ মুখ স্পর্শ করতে ব্যাস্ত।আর এতেই তাকে বেশ আদুরে লাগছে।

আচ্ছা মেয়েটাকি আসলেই এতোটা সুন্দর! নাকি শুধু আমার চোখেই এতোটা সুন্দর”!
শুধু আমার চোখে সুন্দর হলে ঠিক আছে। অন্য কারো চোখে সুন্দর লাগার দরকার নেই। কেউ যদি এই ঘুমু ঘুমু চোখের সাজঁবাতিকে দেখে ফেলে তখন??
তাহলে তার কাছেও নিশ্চই সুন্দর লাগবে!সেও আমার মতই বেসামাল হবে! উঁহু তা কিছুতেই হতে দেওয়া যাবে না। ভেবেই রেগে গেলো সাদ।
হাত মুঠ করে চেয়ারে হেলান দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, এইভাবে বসে আছিস কেন? দেখেতো রাস্তার পাশের পা*গ*ল গুলোর মতো লাগছে। যা গিয়ে মুখ ধুয়ে আয়। খবরদার ঘুম থেকে উঠেই এই পা*গ*ল বেশে কারো সামনে যাবি তো। লোকে এইভাবে তোকে দেখলে আমার মামা মামুনীর মাথা কা*টা যা*বে।

পা*গ*ল বললে ভুল হবে পাগলের মতোই কাজ সব। বই উল্টো ধরে বসে আছে। তাড়াতাড়ি মুখে পানি দিয়ে আয়।

সাজি সাদের কথায় প্রথমে চমকে উঠলো ঠিকই। পরে এক বুক অভিমান নিয়ে ঠোঁট ফুলিয়ে উঠে পড়লো। এতক্ষণে সাদ ভাই নামক লোকটা কালো মেঘের মতো ছেয়ে গেছে মন আকাশে।

সাজি যেতেই মুখ টিপে হাসলো সাদ। তার সাজঁবাতি মনে মনে তাকে হাজার খানেক গা*লি দিচ্ছে সেটা দিব্যি বুঝতে পারছে। কিন্তু কিছুই করার নেই। আদুরে মেয়েটা জ্বা*লা*চ্ছে ভীষণ।

মনে মনে হাজারটা গা*লি আর অ*ভি*শাপ দিতে দিতে মুখ ধুয়ে পুনরায় বসে পড়লো সাজি। এইবার বুঝেছে সাদ ভাই তাকে পড়াতে এসেছে। মা কি তাহলে তার ম*রা কান্নার কথা বলে দিলো? নিশ্চয়ই বলেছে। তাইতো হম্বিতম্বি হয়ে পড়াতে এসেছে। হতাশা ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বই খাতায় মনোযোগ দিলো। মা নামক বাবার বউটা মান সম্মান কিছুই রাখলো না।

সাদ আর কথা না বাড়িয়ে পুরো উদ্যমে সাজিকে পড়া বুঝিয়ে দিতে লাগলো। সাজিও মনোযোগ সহকারে সবটা বুঝে নিতে ব্যাস্ত হয়ে পড়লো। আপাতত সব চিন্তা সাইডে রেখে পরীক্ষায় পাশের কথা ভাবছে।
,
,

সেঁজুতি হাসান সাদ আসার খুশিতে গদগদ হয়ে ডাইনিং টেবিল সাজিয়ে ফেলেছে। একবার গিয়ে সাদের ফেবারিট পাস্তা দিয়ে এসেছে। আর এখন দুপুরের খাবার তৈরি করতে ব্যাস্ত। টেবিলে প্লেট রাখার জায়গা ছাড়া আর কোনো জায়গা অবশিষ্ট নেই। বাহারি আইটেম দিয়ে টেবিল ভরিয়ে ফেলেছে।

এইদিকে জুবায়ের বার কয়েক কল দিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছিলো। কিন্তু সেঁজুতি ব্যাতি ব্যাস্ত হয়ে বললো,, সাদ এসেছে ওর পছন্দের রান্না-বান্না করছি। আপাতত ভীষণ ব্যাস্ত আছি তাই কথা বলতে পারবো না।”

জুবায়েরের হ*তা*শ হয়ে ফোন রেখে দিল। আবার মনে মনে ভীষণ খুশিও হলো। সেঁজুতি সাদকে একটু বেশিই স্নেহ করে। মাঝে মাঝে তো আক্ষেপ করে বলে,” ইস সাদ যদি আমার ছেলে হতো জুবায়ের!”

সেঁজুতির এহেন কথায় জুবায়ের শুধু মুচকি হাসি উপহার দেয়।
একজন পুরুষের কাছে এইটা অনেক বড় প্রাপ্তি যেখানে তার অর্ধাঙ্গিনী তার পরিবারকে বিনা স্বার্থে এতো আপন করে নেয়। কোনো অভিযোগ ছাড়াই নিজের মনে ঠাঁই দেয়। এবং সর্বস্ব দিয়ে অপর পক্ষের লোকজনের মনে জায়গা করে নেয়।
জুবায়ের বুক ফুলিয়ে শ্বাস নেয়। তার অর্ধাঙ্গিনী ঠিক এমনটাই। তার অর্ধাঙ্গিনী তার কাছে শ্রেষ্ঠ প্রাপ্তির মধ্যে একটি।

দুপুরে খাবার শেষ হতেই বই খাতা নিয়ে বসে পড়লো সাজি। সাদ আর রেষ্ট নিতে পারলো না। বরং পুনরায় সাজিকে সবটা দেখিয়ে দিচ্ছে।
,
,
রাত দশটায় বাসায় পোঁছে গেলো সাদ। মায়ের কোলে মাথা রেখে আজ পুরো দিনের কর্মসূচি পুনরাবৃত্তি করলো। যদিও কিছু ব্যাপার একান্তই ব্যক্তিগত রেখে দিলো। তবে সার সংক্ষেপ ঠিক বললো। অনিলা ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। সাজির কথা মুখে আনলেই ছেলেটা তার ভীষণ খুশি হয়ে যায়। পুরো চেহারা জুড়ে অদ্ভুদ হাঁসি খিলে উঠে।

ঘুমোতে যাওয়ার আগে রায়হানের কল এলো। সাদ কল এটেন্ড করেছে ঠিকই কিন্তু এরপর আর ঘুম হলো না। ল্যাপটপ নিয়ে বসে পড়লো। একদিন সামলে উঠতে না উঠতেই আরেকদিন বেসামাল হয়ে গেলো।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here