দীর্ঘ রজনী পর্ব -২৭+২৮

গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৭

সাদের পুরো শরীর হিম ধরে গেলো। চোখ জ্বা*লা করছে খুব,গলা থেকে বুক ওবদি জায়গাটা প্রচন্ড ব্যা*থা করছে। সাদ বুক ফুলিয়ে শ্বাস নিলো, অনবরত ঠোঁট জোড়া কেঁপে চলেছে,বাম হাত কোমরে চেপে দাঁড়ালো। দাঁত দিয়ে ডান হাতের তর্জনী কা*ম*ড়ে ধরে কান্না আটকানোর চেষ্টা বৃথা চালাচ্ছে। দীর্ঘ প্রতিক্ষার পর এই চোখ জোড়া দেখে নিজেকে সামলানোটা মুশকিল ঠেকছে। এই চোখ জোড়া যে তার বড্ডো বেশি প্রিয়। সাদ বিশ্বাস করতে পারছেনা তার সাজবাতির ঘুম ভেঙ্গেছে।সাদ বুকে হাত চেপে আসফাস করে মনে মনে পন করে বসলো, এই মেয়েকে আর ঘুমাতে দেবে না। কখনোই ঘুমাতে দেবে না। আজ থেকে নির্ঘুম রাখবে।

জুবায়ের সাদের অবস্থা বুঝতে পেরে সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে সেঁজুতিকে ইশারায় উঠে যেতে বললো। সেঁজুতি বিনা বাক্যে সাজির মাথায় স্নেহের পরশ বুলিয়ে উঠে পড়লো। জুবায়ের আর সেঁজুতি যেতেই অনিলা ছেলের হাত ধরে টেনে সাজির পাশে বসিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। রেনু এতক্ষণ দরজায় দাঁড়িয়ে সবটা দেখছিলো। রেনু জানে সাদ ভাইয়ার মতো রাগী মানুষটা তার সাজি আপাকে ঠিক কতোটা ভালোবাসে। রেনু বুক ফুলিয়ে প্রশান্তি ভরা নিঃশ্বাস নিলো। অতঃপর মুচকি হেসে দরজা টেনে বন্ধ করে দিলো। রেনুর আজ মন ভীষণ ভালো তাই সব রকমের রান্না আজ নিজ হাতে করবে বলে হেলেদুলে কিচেনে চলে গেল। রেনুর পেছনে পেছনে ড্রাইভারের মেয়ে লতাও ছুটলো। লতা এতো দিনে এইবাড়ির সব কিছু রপ্ত করে ফেলেছে। লতা এখন বুঝতে পারছে কেন তার বাবা এই বাড়ির মানুষের এতো ভক্ত ছিলো।লতার মতে এমন মানুষজনের ছায়াতলে আশ্রয় পাওয়াও ভাগ্যের ব্যাপার।

সাজি নিঃপলক দৃষ্টিতে সাদকে দেখছে। যাকে বলে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা। সাদের এমন পরির্বতন দেখে বুক কেঁপে উঠলো। এই মলিন নিঃপ্রাণ সাদ ভাইকে সাজি চেনে না। সাদ ভাই কেমন জানি হয়ে গেছে। চোখের নিচে কালসিটে দাগ পড়ে গেছে, মুখটা কেমন শুকিয়ে গেছে, চোখ জোড়ায় আগের সেই তেজ নেই বরং চোখ জোড়া স্থীর হয়ে আছে। উঁহু! এই সাদ ভাইকে সাজি একটুও চেনে না। মোটেও চেনেনা।

সাদ অধীর আগ্রহে সাজির দিকে তাকিয়ে আছে। সাদ চায় তার সাজবাতি তার সাথে দু’দন্ড কথা বলুক। জিজ্ঞেস করুক তাকে ছাড়া এই সাদ কেমন আছে।সাদ আসফাস করে টাইয়ের নট ঢিলে করলো। বার বার পলক ফেলে চোখের জল গড়িয়ে পড়া থেকে আটকানোর চেষ্টা চালাতে লাগলো। সাজি সাদের অবস্থা বুঝতে পেরে আস্তে করে ডেকে উঠলো,, সাদ ভাই!

সাজির এইটুকু আওয়াজ সাদের জন্য যথেষ্ট ছিলো। সাদ তৎক্ষণাৎ সাজির গলায় মুখ লুকিয়ে ডুকরে কেঁদে উঠলো। সাজি স্তব্ধ হয়ে গেছে সাদের কান্না দেখে। সাদ ছোট বাচ্চাদের মতো করে কাঁদছে। সাদের চোখের পানিতে সাজির গলার পাশ পুরো ভিজে গেছে। সাজি চাইছে সাদের মাথায় হাত বুলিয়ে কান্না থামাতে কিন্তু চেয়েও পারছে না।ডাক্তার বলেছে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে সপ্তাহ খানেক সময় তো লাগবেই। সাজি তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে ধরা গলায় বলে উঠলো,, দুঃ*খে কাঁদছেন নাকি সুখে? আমি যাওয়ার পর নতুন গার্লফ্রেন্ড হয়েছে বুঝি? আমি চলে এসেছি না!এখন-ত তাকে আবার ছাড়তে হবে সেই দুঃ*খেই কাঁদছেন আমি জানি।

সাজির কথা কর্ণগোচর হতেই সাদ সাজি থেকে সরে বসলো। দুহাতে চোখ মুছতে মুছতে কম্পিত গলায় সুধালো,, মানে? কি বলতে চাইছিস?

সাজি মুচকি হেসে কিছুটা ক*টাক্ষ করে বললো,, যদিও সন্দেহ হচ্ছে!আধো কি কেউ পটেছে? অবশ্য গার্লফ্রেন্ড থাকলে চেহারা এমন হতো না। সত্যি করে বলুন নতুন কাউকে গার্লফ্রেন্ড বানাননি তো?রাত জেগে কথা বলে বলে চেহারা এমন হয়েছে তাইনা? বাইদা ওয়ে গার্লফ্রেন্ড বানালেও পস্তাতে হবে ।কারন আমি ছাড়া আপনার মতো বদরাগী ,ঘাড় ত্যাড়া মানুষকে কেউ সয্য করবে না। এখনো সময় আছে তাড়াতাড়ি ব্রেকআপ করে ফেলুন।

সাদ সাজির মুখের দিকে তাকিয়ে কথা গুলো শুনছিলো।সাদ রাগ করলো না বরং মুচকি হেসে সাজির দুহাত নিজের মুঠোবন্দী করে নিলো। সাজির দিকে ঝুঁকে পর পর কয়েকবার সাজির ললাটে অধর ছুঁইয়ে নাকে নাক ঘসতে ঘসতে আদুরে গলায় বলল,, আমি অমন ছেলে নই সাজবাতি। আমার অলরেডি একজন আছে তাই অন্য কারো প্রয়োজন পড়েনি। তাছাড়া আমার মতো ব*দরা*গী,ঘাড় ত্যাড়া মানুষকে সয্য করার ক্ষমতা শুধু একজনের আছে। তবে এইটা ঠিক যে তার সাথে রাত জেগে কথা বলতে বলতে চেহারা এমন হয়েছে। বাট স্যরি তার সাথে ব্রেকআপ করা কখনো পসিবল না। তুই চাইলে থাকতে পারিস,তার পাশে একটু জায়গা খালি আছে।

সাজি চোখ বন্ধ করে সাদের কথা গুলো শুনছিলো। সাজি উপলদ্ধী করতে পারছে এই নরম গরম মানুষটা তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে।সাদকে দেখে সাজি বুঝতে পেরেছে এতো দিন সাদ ভাই নামক মানুষটা ভালো ছিল না। একটুও ভালো ছিল না। সাজির দুই চোখের কোন বেয়ে নোনা জল গড়িয়ে পড়ছে। সাদ সেই জল আলগোছে মুছে দিলো। অতঃপর সাজির পিঠের নিচে হাত গ*লিয়ে সাজিকে বুকের সাথে চেপে ধরে পুনরায় বলে উঠলো,, এইখানটা শূন্য ছিলো সাজি। এইখানটা শূন্য ছিলো।কতো শতো না বলা কথা জমা হয়েছে এইখানে। কতো ব্যা*থা জমাট বেঁধেছে এইখানে। শুধু তুই জেগে ছিলিনা বলে। তোর নিস্তেজ হয়ে থাকা ঠিক কতোটা পু*ড়ি*য়েছে জানিস!তোর জেগে উঠার অপেক্ষা যে কতো লম্বা ছিল আমার জন্য, সেটা আমি ছাড়া কেউ জানেনা। তুই ছাড়া আমার এইখানটা শূন্য লাগে। সব কিছু বি*দঘু*টে লাগে। নিজেকে খুব বেশি অসহায় মনে হয় সাজি। খুব বেশি অসহায় মনে হয়।

সাদের কথা শেষ হওয়ার আগেই সাজি শব্দ করে কেঁদে উঠলো। সাদ কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আলতো করে সাজির পিঠ চাপড়াতে চাপড়াতে বললো,, কেন কাদছিস তুই!একদম কাদবিনা।কেঁদে কেঁদে আমার কোট শার্ট সব কেন ভেজাচ্ছি? তুই ধুয়ে দিবি নাকি?
সাদের এমন কথা শুনে ফুঁসে উঠলো সাজি। দাঁতে দাঁত চেপে সাদের বুকের সাথে নাক মুখ ঘষে বললো,, এইবার ঠিক আছে। এখন ময়লা হয়েছে।

সাজির এহেন কান্ডে হকচকিয়ে গেল সাদ। সাজি মুখ ফুলিয়ে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাদ ভ্রু কুঁচকে বললো,, তুই কি কখনো বড় হবি না!
সাজি দুই ভ্রু নাচিয়ে বলল,, আমি বড়-ই আছি ।আপনি বুড়ো বলে আমাকে চোখে লাগে না নাকি?

~ কি!আমি বুড়ো?

সাজি মুখ বাঁকিয়ে বললো, ছেহ্ চেহারার যে অবস্থা দেখে বুড়োই লাগছে।

সাদ সাজিকে বিছানায় সুইয়ে দিতে দিতে বললো,, যে চেহারা দেখবে সে তো নাক ডেকে ঘুমাচ্ছিলো তাই এই অবস্থা। যাষ্ট এক সপ্তাহ! এক সপ্তাহে দেখবি আগের মতো হয়ে গেছি। তখন শুধু বুড়ো বলে দেখিস। থা*প্পড় মে*রে দাঁত ফে*লে দিবো।

সাজি ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে বিড়বিড় করে বললো,, থা*প্প*ড় মা*রা*টা ভোলেনি। ঘাড় ত্যাড়া লোক!

সাজি বিড়বিড়িয়ে বললেও সাদ সাজির কথাটা স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে।সাজির কথায় মুচকি হাসলো অতঃপর দরজার দিকে যেতে যেতে গম্ভীর গলায় বললো,, আমি সব শুনতে পাই কিন্তু।

সাজি জিভ কামড়ে চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলল। ইস! শুনে ফেলেছে।ভাগ্যিস অ*সুস্থ নয়তো দাঁ*ত ফেলে দিতো।

সাদ বুক ফুলিয়ে প্রশান্তি ভরা নিঃশ্বাস নিয়ে সিঁড়ি বেয়ে উপরে সাজির আগের রুমে চলে গেল। যেখানে প্রায় একটা বছর ধরে সাদ থাকে।

জুবায়ের আর সেঁজুতি সাদের মুখের দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো। সেঁজুতি জুবায়েরকে চিমটি কে*টে বললো,, জুবায়ের আমি যা দেখছি তুমি কি তা দেখতে পাচ্ছো?

জুবায়ের মুচকি হেসে সেঁজুতির বাহু জড়িয়ে ধরে বললো, হুম! সাদের হাসি খুশি মুখ দেখতে পাচ্ছি। কতোদিন পর দেখলাম বলো!

জুবায়েরের কথায় বিরক্ত হলো সেঁজুতি। লোকটা এতো বেরসিক কেন? উফ্ অ*সয্য!
সেঁজুতি দাঁতে দাঁত চেপে বললো,, আমি সেটা দেখিনি। বরং আমি আমার মেয়ে জামাই দেখতে পাচ্ছি।
সেঁজুতির কথায় জুবায়ের হ*তা*শা ভরা নিঃশ্বাস ফেললো। তার বউযে অন্য জগতের মহিলা সে প্রায় ভুলেই গেছিলো।

সেঁজুতি খুশিতে গদগদ হয়ে চপলা কন্ঠে বললো,,ভাবতেই অবাক লাগে এতো তাড়াতাড়ি শ্বাশুড়ি হয়ে যাবো জুবায়ের।তাও আমার খুব বেশি পছন্দের ছেলেটাই আমার মেয়ে জামাই হবে। আজকেই আপার সাথে কথা বলে ফেলি ?

জুবায়ের তীব্র হ*তা*শা ভরা নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, সেঁজুতি একটু আস্তে! মেয়েটা এখনো ওবদি পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। ডাক্তার কি বলেছে শোনোনি! স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে। তাছাড়া সাজির মতামত ছাড়া কিছুই হবেনা। এই মূহুর্তে আমি আমার মেয়েকে কোনো প্রকার স্ট্রেস দিতে চাই না।আমি জানি সাদ সাজির জন্য বেষ্ট চয়েস। কিন্তু ওদের একটু সময় দিতে হবে। বুঝেছো?

জুবায়েরের কথা ঠিক হলেও সেঁজুতি পাত্তা দিলো না। বরং মুখ বেঁকিয়ে কিচেনের দিকে ছুটলো। লোকটা আসলেই বেরসিক টাইপের। কোথায় মেয়েটাকে ছেলেটার প্রেমে কি করে ফেলবে সেই প্ল্যান করবে! তা না করে লেকচার ঝাড়তে আসছে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল গুলো সুধরে দিবেন।)গল্পের নাম:#দীর্ঘ_রজনী।
লেখনীতে:#সাদিয়া_আফরোজ।
পর্ব:২৮

রাত প্রায় বারোটা। সেঁজুতি,আনিলা আর রেনু মিলে কালকের জন্য সব কিছু আগাম তৈরি করে রাখছে। সাজির জ্ঞান ফিরেছে শুনে সবাই দেখতে আসবে কাল। এতো এতো মেহমান আসবে তাই সব কিছুই গুছিয়ে রাখছে তিনজন মিলে।

এইদিকে সাদ অফিসের পাট চুকিয়ে বাড়ি ফিরলো। মামুনী আর মাকে কিচেনে ব্যাস্ত দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেললো। এতো রাত ওবদি এই দুই রমনী কিচেনে খুন্তি নাড়ছে কেন সেটাই ভেবে পায় না সাদ। নিশ্চয়ই কোনো কারন আছে।
সাদ কিচেনের দরজায় দাঁড়িয়ে গলা খাকিয়ে বললো,, কি হচ্ছে এইখানে? তোমরা এখনো ঘুমাওনি কেন? দিনে সময় পাওনা না-কি?রাত জেগে খুন্তি নাড়ছো কেন?

সাদের প্রশ্নের বহর দেখে বিরক্ত হলো অনিলা। ছেলেটা এতো ইন্টারোগেট করছে কেন ভেবে পায় না?

সেঁজুতি কষানো মাংসের পাতিল চুলা থেকে নামিয়ে রেখে বললো,, কাল মেহমান আসবে।সেই জন্য আগ থেকে মাং*স গুলো কষিয়ে সব ঠিক করে রাখছি।

মেহমান আসবে শুনেই সাদের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়লো। সরু চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,, কোন মেহমান?

অনিলা রহমান ছেলের প্রশ্নের কারন বুঝতে পেরে বললো,, বাইরের কেউ না। তোর নানু বাড়ি থেকে সবাই আসবে। সাথে সাজির নানু বাড়ি থেকে ওর নানু ,মামা, মামী আসবে।

মায়ের কথা শুনেই হাত মুষ্টিবদ্ধ করলো সাদ। রাগে দাঁতে দাঁত চে*পে বললো,, এতো মানুষ কেন আসবে? তোমরা জানো না, সাজি এখনো পুরোপুরি সুস্থ হয়নি। এর ভিতরে বাড়িতে এতো ঝা*মে*লার কি দরকার?

সেঁজুতি সাদের রাগ কিছুটা আন্দাজ করতে পেরে বললো,, নিশান আসবে না সাদ। মা , ভাইয়া আর ভাবী আসবে শুধু।

সাদ সেঁজুতির দিক থেকে চোখ সরিয়ে মায়ের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে হনহন করে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে গেল।

অনিলা সাদের রাগটা বুঝতে পারছে।সাদ চায়না তার নানুর বাড়ি থেকে এমন কেউ আসুক যে সাজির ক্ষ*তি*র কারণ হবে। অনিলা নিজেও চায় না। কিন্তু কিছুই করার নেই সবাই তো সবটা জানে না।
অনিলা ফোঁস করে নিঃশ্বাস ফেলে সেঁজুতিকে উদ্দেশ্য করে বলল,, ইহান যেন সাজির আশেপাশে ঘেঁষতে না পারে সেঁজুতি। সাজির জন্য ইহানের উপস্থিতি সেইফ না!

অনিলার কথায় আচম্বিত হলো সেঁজুতি। সাজির জন্য ইহান সেইফ না! তার মানে ইহান তার মেয়ের কোনো ক্ষ*তি করেনি নিতো? উৎকণ্ঠা হয়ে অনিলার হাত ধরে জিজ্ঞেস করল সেঁজুতি,, কি বলছো আপা? ইহান কি করেছে আমার মেয়ের সাথে?

অনিলা সেঁজুতির হাত ধরে আস্বস্ত করে বললো,, কিছুই করেনি এখনো ওবদি। তবে ইহান সাজিকে অপ্রস্তুত করে তোলে। সাজির প্রতি ইহানের হাবভাব ভালো না। সাদ ব্যাপারটা প্রথম থেকেই জানে তাই তো এতো রেগে আছে।

~আগে বলোনি কেন আমাকে?

~ বললে তুই ওইবাড়িতে যেতি? এমনিতেই এতো তিক্ততা তার উপর এমন কিছু শুনলে সেই তিক্ততা বাড়তো ব-ই কমতো না। তাছাড়া একজনের জন্য সবাইকেতো আর দো*ষী করা যাবে না বল!

সেঁজুতি ফুঁসে উঠলো,কষা মাংসের পাতিলের খুন্তিটা জোরে আ*ছাড় মে*রে বললো,, সবাই আর কোথায় আপা? ওই বাড়িতে আম্মা আর বড় ভাইয়া ছাড়া কেউ আমাদের কথা ভেবেছে কখনো? আমাকে কোন ঠাসা করতে করতে ফুরসত পায়নি তোমার বড় ভাইয়ের বউ। শেষে নিজের বাপের বাড়ি থেকে মা বোন ডেকে এনে আমার পিছু পড়েছিলো। আমি সব সয্য করেছি সামনেও করতে পারবো। কিন্তু আমার মেয়ে গায়ে একটা আঁ*চ*ড় লাগলে তখন আমি সব কটাকে মে*রে পুঁ*তে দিবো বলে রাখলাম।
সেঁজুতি হন হন করে কিচেন থেকে বেরিয়ে গেলো। এইদিকে অনিলা আর রেনু পড়েছে মহা বিপাকে। অনিলা রেনুর দিকে তাকিয়ে তপ্ত নিঃশ্বাস ফেলে বললো,, কি আর করা চল সব কিছু গুছিয়ে নেই। সকাল ওবদি রাগ পড়ে যাবে।

রেনু মশলার কৌটা গুছিয়ে রেখে অসহায় হয়ে বললো,, আমিও খালাম্মার দলে। খালাম্মা ওই ব*দমা*শটাকে পুঁ*তে রাখতে চাইলে মাটি আমি খুড়ে দিবো। আমি কম সময় মাটি খোঁড়ার জন্য আমার গ্ৰামে সেরা ছিলাম।

রেনুর কথা শুনে ফুঁসে উঠলো অনিলা। কাকে কার কথা বলছিলো এতক্ষণ! এইটাও যে আরেক পা*গ*ল সেটাই তো ভুলে গেছিলো। অনিলা দাঁতে দাঁত চেপে হিস হিস করে রেনুকে বলে উঠলো,, সেঁজুতি আর সাদ কি কম ছিল? এখন তুই এসে পা*গ*লের সংখ্যা বাড়াচ্ছি! সেঁজুতিকে এইসব যুক্তি দিবি সবার আগে তোকে পুঁ*তে ফেলবো। সব কটা পা*গ*ল এই ঘরে বাসা বেঁধেছে।

রেনু ভয় পেলো না বরং অনিলার কথা শুনে গভীর চিন্তায় মগ্ন হয়ে গেল। অনিলা যদি তাকে পুঁ*তে ফেলতে চায় তাহলে মাটি খুড়বে কে? বয়স হয়েছে এই বয়সে সাদ ভাইয়ের মাকে দিয়েতো আর মাটি খোঁড়ার কাজ করানো যাবে না। বেচারি কোদাল ধরতেই হাঁপিয়ে উঠবে।

অনিলা রেনুকে গভীর চিন্তায় পড়তে দেখে প্লেট বাটি শব্দ করে রেখে হন হনিয়ে কিচেন থেকে বেরিয়ে পড়লো। এই মেয়ে যে তার কথা সিরিয়াসলি নেয় নি তার ডের বুঝতে পেরেছে অনিলা। আপাতত শা*স্তি হিসেবে কিচেন গুছানোর দায়িত্ব দিয়ে গেল।
________

ঘড়িতে ঘন্টার কাটা সবে মাত্র একটায় এসে থমকালো। সাদ মোবাইল হাতে নিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। কোলাহল বিহীন নিস্তব্ধ চারপাশ। অন্য দিন এই সময়ে বুকের ভেতরটায় ইষৎ ব্যা*থ্যা অনুভব করলেও আজ সেই ব্যাথ্যা নেই। আজ সমস্ত হৃদয় জুড়ে প্রশান্তি বিরাজ করছে। প্রতিটি নিঃশ্বাসে বুকের ভেতরটা ঠান্ডা হয়ে আসছে। একদিন আগেও এই সময়টা সাদ সাজির সাথে গল্প করে কাটিয়েছিলো।সাদ সেই গল্প করাটা মনে করতে চায় না ,আর না চায় এমন সময় আবার কখনো আসুক। আচ্ছা আজ কি সাজি ঘুমোচ্ছে?
সাজির কথা মনে পড়তেই সাজির রুমে লাগানো সিসিটিভি ক্যামেরার কথা মনে পড়লো। তৎক্ষণাৎ মোবাইল অন করে সাজির রুমের ফুটেজ বের করলো। না সাজি ঘুমায়নি। বরং হাত বাড়ানোর চেষ্টা করছে। সাদ খেয়াল করে দেখলো সাজি পানির গ্লাস নিতে চাইছে। অপেক্ষা করলো না বরং বিছানার উপর থেকে অন্য মোবাইটাও হাতে নিয়ে ছুটলো।
সিঁড়ি বেয়ে ফটাফট নেমে সাজির রুমে হাজির। হড়বড়িয়ে কেউ রুমে প্রবেশ করছে বুঝতে পেরেই চমকালো সাজি। ভয়ে জড়সড় হয়ে চোখ মুখ খিচে বন্ধ করলো। সাদ ঘন ঘন নিঃশ্বাস ফেলে ধীর পায়ে এগিয়ে এসে সাজির মাথার পাশে বসে। একটা মোবাইল সাজির মাথার পাশে রেখে অন্যটা পকেটে পুরে নেয়। তখনও সাজি চোখ বন্ধ করা। সাদ সাজির মুখের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,, আমি ছাড়া কারো এতো সাহস নেই এই রুমে প্রবেশ করার। চোখ খোল বলছি।

সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই তৎক্ষণাৎ চোখ মেলে তাকালো সাজি।সাদ পানির গ্লাসে পানি ঢেলে সাজির মাথার নিচে হাত দিয়ে হালকা উঁচু করে গ্লাসটা মুখের সামনে ধরল।
সাজি অবাক চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে আছে। সাজি বুঝে পায় না এই লোকটা কি করে বলতে পারবে তার এখন পানির তৃষ্ণা পেয়েছে? আচ্ছা সত্যিকি উনি মানুষ?নাকি কোনো জিন ভুত টাইপের কেউ? যদিও জিন ভুতের এতো ঠেকা পড়েনি এতো রাতে এসে আমাকে পানি খাওয়াবে।তাহলে?

সাজিকে ভাবনার জগৎতে খাবি খেতে দেখে গলা খাকিয়ে বললো,, ভাবনকুমারী ভাবনার জগৎ থেকে বাস্তবে ফিরে আসুন।

সাজি ভীতু চোখে সাদের দিকে তাকিয়ে গ্লাসে চুমুক দিয়ে পানি পান করলো। সাদ পানির গ্লাস রেখে সাজিকে আবার সুইয়ে দিলো। সাজি চোখ জোড়া ছোট ছোট করে বললো,, আপনি কি করে জানলেন ?

সাদ কাঁথা টেনে সাজির গলা ওবদি ঢেকে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো। সাজির করা প্রশ্ন শুনে বললো,, কিসের কথা বলছিস?

~এইযে এখন আমার পানির প্রয়োজন ছিল সেটা। সত্যি করে বলুন আপনি কোনো জিনটিন নাতো? দেখুন আমি এতো দিন কোমায় ছিলাম ভালো কথা কিন্তু সূরা,দোয়া সব কিন্তু মুখাস্ত। সো ফটাফট বলে ফেলুন?

সাজির এহেন কথায় মুখ চেপে হাসলো সাদ। এমন অদ্ভুত অদ্ভুত কথা শোনার জন্যইতো অপেক্ষা করেছিল।

সাজি সাদের হাঁসি দেখে ভিরু গলায় বললো,,কি হলো হাসছেন কেন?

সাদ বোকার মত মাথা চুলকাতে চুলকাতে দুই ভ্রু উঁচিয়ে বললো,, ভালোবাসি সাজঁবাতি।

সাদের কথা কর্ণগোচর হতেই ঘড়িতে সময় দেখে নিলো সাজি। পরক্ষনেই অবিশ্বাস্য নজরে সাদের দিকে তাকিয়ে বলল,, মনে হচ্ছে ভুল শুনেছি। আবার বলবেন প্লিজ!

সাদ মুচকি হেসে বললো,, অবাক হওয়ার কিছু নেই সাজঁবাতি।ওই বি*দঘুটে রাতের পর থেকে এমন কোন রাত যায়নি যখন আমি তোকে ভালোবাসি বলিনি।হাজার গল্পের ভীড়ে এই একটা কথাই বার বার বলতাম। শুধু শোনার মানুষটা নিরুত্তর ছিলো।

সাদের কথা শুনে চোখ বুজে নিলো সাজি। কম্পিত গলায় বলল,, আপনি এখন যান,আমি ঘুমাবো।

সাজির কথা শুনে উঠে দাঁড়ালো সাদ। সাজির মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, মাথার পাশে মোবাইল রেখে যাচ্ছি। প্রয়োজন পড়লেই কল দিস। আমি এসে পড়বো।সাদ জানে সাজি এখন কোনো উত্তর করবে না।তাই রুম থেকে বেরিয়ে পড়লো । সাদ এইটাও জানে সাজি এখন কাঁদবে, খুব কাঁদবে।

ইনশাআল্লাহ চলবে,,

(ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গল্প নিয়ে অবশ্যই দুই লাইন মতামত দিয়ে যাবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here