দেশলাই পর্ব ২+৩

দেশলাই – ( ২য় পর্ব )

আমি নববধূর পাশেই বসা৷ ফুপুর কথাবার্তা শুনে আমার কান দিয়ে যেন গরম ভাপ বেরুচ্ছে। কি করবো বুঝে উঠতে পারছি না।
তবে মেয়েটির স্থানে নিজেকে ভাবলেই গা কাটা দিয়ে উঠছে। এমন পরিস্থিতি আসলেই কষ্টকর, অপমানজনক। তাছাড়া প্রকৃতি মেয়েটির সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে৷ এখানে তো ওর কোনো দোষ নেই। তাই না?
কিন্তু এই জগৎ-সংসার তো অন্যের কষ্ট দেখে চলে না। আমি আপাতত মেয়েটিকে রক্ষা করার জন্য ফুপুকে টেনে বারান্দায় এনেছি। তবুও হুলুস্থুল কাণ্ড বাঁধাচ্ছেন। মাটিতে পড়ে কপাল চাপড়ে সুর দিয়ে কান্নাকাটি করে বলছেন, ‘আল্লা গো, এতো টাকাপয়সা খরচ কইরা আমি ছেলের লাইগা বন্ধ্যা মাইয়া আনলাম। এখন কি হইব আল্লা। আমার ছেলের এখন কি হইব গো।’

কেউই মেয়েকে রাখতে চাচ্ছে না। ছেলের একটা ভবিষ্যৎ আছে। অন্য সবার মতো তাদেরও নাতি-নাতনির শখ হয়। এতো বড় ব্যাপার কনেপক্ষ গোপন রেখে বিয়ে দেবে কেন?
ফুপু এই পরিবারের সবার মুরব্বি বলা চলে। রাফসান ভাইয়ের বাবা ছাড়াও তিনজন চাচা। তাদেরকে ফুফা সৌদি আরব নিয়েছিলেন। চার ভাই এক সঙ্গে কাজ করতেন। কয়েক বছর আগে ফুফা কাজের সাইট থেকে নিচে পড়ে মারা যান। সে এক ভয়াবহ মৃত্যু। শরীর ছিন্নভিন্ন আর রক্তারক্তি কাণ্ড। নিচে খাঁড়া থাকা একটি রট পিঠের দিকে ঢুকে এফোঁড়ওফোঁড় হয়ে গিয়েছিল। রাফসান ভাই তখন কেবল মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে দিন-রাত মধুশ্বেরী পাব্লিক লাইব্রেরিতে নাক ডুবিয়ে উপন্যাস পড়ে। আমার বই পড়ার অভ্যাস হয়তো কোনোভাবে রাফসান ভাইয়ের কাছ থেকেই হয়েছে। কোনো ভালো বই বা সিনেমা দেখলে আমার সঙ্গে এসে গল্প করতো৷ কিছু ছেলেরা থাকে না, যারা আল্লাহর দুনিয়ার সর্ববিষয়ে সমান পারদর্শী? রাফসান ভাই সেরকম একটা ছেলে। পড়ালেখায় অত্যন্ত মেধাবী। পাড়ার ফুটবল ক্রিকেট খেলা তাকে ছাড়া ঠিক জমতো না। দেখতে তখন ভীষণ সুদর্শন ছিল। খানিকটা লম্বাটে মেদহীন মুখ। মাথায় কালো ঝাঁকড়া চুল। ভীষণ চঞ্চল স্বভাবের। রাফসান ভাইয়ের মধ্য আগের কোনো কিছুই এখন আর নেই। নারিকেল গাছের সতেজ কচি ডাব থেকে শুকিয়ে যাওয়া কিংবা গাছের সবুজ পাতা মাটিতে পড়ে মরে যাওয়ার মতোন একটা সময় ভেতর থেকে ক্রমশ রসকষ শুকিয়ে গিয়েছিল তার।
রাফসান ভাই কলেজে ভর্তি হয়ে মেসে যাওয়ার আগের একটা স্মৃতি আমার মনে আছে। অবশ্য কেউ শুনলে আমাকে খারাপ মেয়েও ভাবতে পারে। কিন্তু আমি যতটুকু জানি প্রেম ছাড়াও আমাদের কাজিনদের সঙ্গে এরকম মাঝে মাঝে হয়ে যায়। উপন্যাস আর সিনেমায় প্রেম ছাড়া নায়ক-নায়িকারা চুমু না খেতে পারে। কিন্তু বাস্তবে উঠতি বয়সে প্রেম ছাড়াও অনেক কিছু হয়। একবার আমাদের বকুল পুর হাই স্কুলে অনুষ্ঠান ছিল। আমি শাড়ি পরে গিয়েছি। ফিরতে রাত হচ্ছে দেখে বাবা রাফসান ভাইকে পাঠিয়েছিলেন। সে তখন ভীষণ দুষ্ট ছিল। আসার পথে বলল,
‘তোর জন্য আমার এতদূর হেঁটে আসতে হলো।’

‘তুমি আসো কেন, আমি বলছি না-কি আসতে?’

‘আচ্ছা এই কথা, কবর গলির দিকে অন্ধকার আছে। চল, দেখাবো মজা।’

‘একদম ভয় দেখাবে না রাফসান ভাই। আর রিকশা নাও তো৷ হেঁটে হেঁটে যাব কেন?’

‘রিকশা নিতে হবে না। গল্প করতে করতে চলে যাব।’

‘আচ্ছা তাইলে ভয় দেখাবে না।’

অনেক্ষণ দু’জন চুপচাপ হেঁটে এসেছি। এদিকটায় বাম পাশে কবরস্থান। ডান দিকে হলদে রঙের বাউন্ডারি ফেরানো বাড়ি। রাস্তায় আবছা আলো।

রাফসান ভাই তখন অস্ফুটে বলল,
‘শাড়ী পরায় মনে হচ্ছে তুই অনেক বড় হয়ে গেছিস৷’

‘আমি তো বড়োই। আমার ক্লাসমেট দুইটার এইটে থাকতে বিয়ে হয়ে গেছে। জানো?’

‘বাব্বাহ বড়ো হয়ে গেছিস।’ বলেই রাফসান ভাই এক হাত আমার পেছনদিকে নিয়ে কোমরের ধরে টেনে কাছে আনে। আমার গালে এক হাত দিয়ে ঠোঁটে চুমু খায়। কি যে লজ্জা করেছিল। শুধু মুখে বললাম,
– ‘তুমি একটা বদমাইশ। রাতে আমারে একা পেয়ে এমন করলে কেন?’

– ‘গালাগালি করলে আরও দেবো।’

আমি আর কিছু না বলে ফিক করে হেঁসে ফেলি।
– ‘হাসবি না একদম। আমি মুভি দেখায় ছিলাম। মামা তখন ফোন দিয়ে বললেন তোকে আনতে যেতে হবে। রাগে তোকে কাঁচা খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছিল।’

– ‘নাম কি মুভির?’

– ‘বলবো না। তবে অনেক রোমান্টিক। তোকে যেরকম দিলাম। সেরকম সিনে আঁটকে রেখে এসেছি৷ তাই প্রতিশোধ নিলাম।’

– ‘তুমি একটা বদমাশ।’

– ‘আবার!’

– ‘আচ্ছা আচ্ছা আর বলবো না।’

দু’জন নানান গল্প করে হাটছি। কবর গলি পেরিয়ে প্রায় বাসার কাছাকাছি এসে আবছা আলোতে রাফসান ভাইয়ের মুখ দেখে আবার আমি হাসতে শুরু করলাম। ঠোঁটে লিপস্টিক লেগে আছে। আমার কেন জানি তাকাতে লজ্জা করছিল। অন্যদিকে তাকিয়ে বললাম, ‘তোমার ঠোঁট মুছো।’
সে হাত দিয়ে মুছতে গিয়ে আরও লেপ্টে গেল। আমার হাসি থামছে না। মুখ চেপে হাসছি।
– ‘এতো হাসিস না তো। একটু পেছনে এসে মুছে দে। এভাবে বাসায় যাব কীভাবে?’

আমরা একটু পেছনের অন্ধকারে গেলাম। শেওলা পড়া একটা দেয়ালের সামনে দাঁড়াল। আমি ওড়না দিয়ে আলগোছে মুছে দিলাম ওর ঠোঁট। সত্যি কথা বলতে চুমু থেকেও ঠোঁট মুছে দিতে আমার এতো ভালো লেগেছিল কেন জানি না। খানিক্ষণের জন্য রাফসান ভাইকে আমার ভীষণ আপন মনে হচ্ছিল। আমাদের মধ্যে প্রেম-টেম কিছু নেই। কখনও সে বলেনি ভালো-টালো বাসে। এজাতীয় কোনো প্রেমের স্লোগান আমাদের মধ্যে আদান-প্রদান হয়নি। তবুও ঠোঁট মুছে দেওয়ার ক্ষণে যদি আমার কোমর জড়িয়ে টেনে কাছে নিতো আমি ওর বুকে মাথা গুঁজে দিতাম। সামান্য এই ঠোঁট মুছে দেওয়ার মুহূর্ত আমি প্রায়ই জানালার পাশে বসে আকাশ দেখতে দেখতে ভাবি৷ বাড়ির এই জানালাটি উত্তরদিকে। বাউন্ডারির দেয়ালে রোজ একটি কালো ফিঙে এসে বসে থাকতে দেখা যায়। তার বোধহয় জায়গাটা ভীষণ পছন্দের। ওর কাছে কি আমি পরিচিত? অবশ্যই ফিঙেটি আমাকে চেনে। আমার সঙ্গে কি সে নীরবে বন্ধুত্ব করেছে? দেয়ালের ভেতরে কয়েকটি পেঁপে গাছ আছে। পেঁপে গাছে নানান ধরনের পাখির আনাগোনা। তবে দুপুর বেলা জানালায় চড়ুই পাখিরা বেশ হৈচৈ করে। বাড়িতে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে উত্তরের এই জানালা।
দেশলাই – ৩য় পর্ব

বাউন্ডারির দেয়ালে রোজ একটি কালো ফিঙে এসে বসে থাকতে দেখা যায়। জায়গাটি বোধহয় তার ভীষণ পছন্দের। আচ্ছা ওর কাছে কি আমি পরিচিত? অবশ্যই ফিঙেটি আমাকে চেনে। দেয়ালের ভেতরে কয়েকটি পেঁপে গাছ আছে। পেঁপে গাছে নানান ধরনের পাখির আনাগোনা। তবে দুপুর বেলা জানালায় চড়ুই পাখিরা বেশ হৈচৈ করে। বাড়িতে আমার সবচেয়ে প্রিয় জায়গা হচ্ছে উত্তরের এই জানালা।

সেদিন সন্ধ্যার মুহূর্তটি আমার কাছে খুব বেশি নতুন না।
এরকম ঘটনা আমার সঙ্গে অনেকবার রাফসান ভাই করেছে। তবে সবকিছুই শহরে চলে যাবার আগে। তারপর তো সে ভিন্ন এক রাফসান। এর আগে অনেকবার আমাকে জড়িয়ে ধরে চুমু খেয়েছে। ধরুন বাড়িতে আমি ইয়ারফোন কানে গুঁজে একা মুভি দেখছি। হঠাৎ রাফসান ভাই কোত্থেকে এসে আমার পাশে শুয়ে পা ওপরে তুলে গলায় নাক ডুবিয়ে দেবে। আমি আর কি করবো তখন? শুধু ‘এই বদমাশ, ছাড়ো, ছাড়ো’ বলে প্রতিবাদ করি। প্রতিবাদ না ছাঁই। যুগ যুগ ধরে আমাদের পূর্বনারীরাও প্রতিবাদ করার নামে এভাবে পুরুষদের আরও তাতিয়ে তোলার চেষ্টা করেছেন।
তারপর ছেড়ে দিয়ে একদম স্বাভাবিকভাবে বলতো, ‘কোন মুভি দেখছিস?’
যেন কিছুই হয়নি। অথচ আমাদের মধ্য প্রেম-টেম কিছুই ছিল না। তবে আমার আর কোনো ভাই না থাকায় আব্বু-আম্মু নানান কাজে তাকে ডাকেন। প্রায় সময় রাফসান ভাইকে দিয়ে আমাকে নানাবাড়ি, খালার বাড়িও পাঠিয়ে দেন। আম্মু অসুস্থ। আব্বু কোনো কাজে ব্যস্ত থাকায় যেতে পারছেন না, রাফসান ভাইকে আম্মুর সঙ্গে ডাক্তারে পাঠিয়ে দেবেন। মাঝে মাঝে বাজার করাও। পরিবারের সঙ্গে এভাবে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে থাকায় আমাদের বন্ধুত্ব বোধহয় আরও গাঢ় হয়েছে।
একটা সময় রাফসান ভাইয়ের এইসব প্রেমহীন চুমু আর জড়িয়ে ধরার ব্যাখ্যা আমি খোঁজে পেয়েছি। এই যে অনেক পুরুষ মানুষরা পতিতালয়ে যায়। সেখানে তো ওই নারীকে সে ভালোবাসেনি। ওর সঙ্গে তার প্রেমও নেই। তবুও কীভাবে শারীরিক চাহিদা মেটায়? তারমানে সিনেমা আর উপন্যাসের মতো কেবল প্রেমিক-প্রেমিকা বা স্বামী-স্ত্রী এসব করে তা না। বাস্তব অনেক ভিন্ন। এবং সেটা আমরা গোপনে জানি। কিন্তু সেভাবে আলাদা করে ভাবি না। কৈশোরে আমরা যখন এসবের সঙ্গে নতুন পরিচিত হই, তখন খেলার ছলে, কোলাহলে, নানানভাবে সমবয়সীদের সঙ্গে এই জড়াজড়ি, চুমাচুমি হয়। সবার না হোক, যারা এইসব পরিবেশে বড় হয় তারা সভ্য সমাজ আর বড়দের বুড়ো আঙুল দেখিয়ে এগুলো করে বেড়ায়। রাফসান ভাইয়ের সঙ্গে কৈশোরে আমার এরকম সম্পর্ক ছিল। বউ বউ খেলা। পুতুল খেলা। লুকোচুরি খেলা। কত কিছুর ছলে এগুলো আমাদের হয়েছে৷ কিন্তু একটু বড় হওয়ার পর নিজেদের মধ্যখানে লজ্জা দেয়াল হয়ে দাঁড়িয়েছিল। তখন নিজেদের গুটিয়ে নিয়েছি। কিন্তু ওইদিন রাতে হঠাৎ রাফসান ভাই চুমু খাবে আমি ভাবিনি। তখন তো আমরা মোটামুটি অনেক বড় হয়ে গেছি। তবে বড় হওয়ার পরও মুখে মুখে সবই গল্প করতাম। যেমন রাফসান ভাইয়ের সবকিছু আমি জানি। তার বন্ধুদের প্রেমের কাহিনী। আমার সব বান্ধবীরও। এজাতীয় সবকিছু নিয়ে আমাদের বড় হওয়ার পরও গল্প হতো। রাফসান ভাইয়ের ব্যাপারে আমি নিজের অবস্থান পরিষ্কার করে বলি, তাকে আমি ভালোবাসি না। আমাদের মধ্যে কোনো প্রেম-টেমের সম্পর্ক নেই। শুধু ভালো লাগে এটা বলতে পারি। রাফসান ভাইও আমাকে ভালোবাসেনি। যখন সে পড়ালেখা করতে সিলেট মেসে গিয়েছিল তখন সেটা আরও পরিষ্কার হয়ে যায়। একদিন হোয়াটসঅ্যাপে তার সঙ্গে একটা মেয়ের ছবি দিয়ে বললো প্রেমিকা। আমি আঁতকে উঠেছি। ওইদিন সন্ধ্যায় আমাকে চুমু খাওয়ায় খানিকটা হলেও ভেবেছিলাম রাফসান ভাই হয়তো আমাকে ভালোবাসে। কিন্তু এই মুহূর্তে পরিষ্কার বুঝতে পেরেছিলাম সবকিছু প্রেমহীন ছিল। মেয়েটির ছবি দেখে আমার কাছে তার থেকে বয়স্ক মনে হলো। তবে দেখতে অনেক রূপবতী। কীভাবে প্রেম হলো জানার জন্য আমি আগ্রহে মরে যাচ্ছিলাম। কল দিয়ে জিজ্ঞেস করি, ‘রাফসান ভাই কীভাবে প্রেম করলে? আর মেয়েটি তো তোমার বয়সে বড় হবে।’
সে জানাল, ‘হ্যাঁ বড়োই। অনার্স ফাস্ট ইয়ারে পড়ে আর আমি ইন্টার ফাস্ট ইয়ার।’
আমি অবাক হয়ে বললাম, ‘বলো কি? এটাও সম্ভব? কীভাবে পরিচয় হলো?’

‘ফেইসবুকে ওর বান্ধবীর সঙ্গে পরিচয় ছিল। তার কাছ থেকে ওর সঙ্গে পরিচয়। আচ্ছা তোকে সবকিছু বাড়িতে এলে বলবো।’

মাস কয়েক পর রাফসান ভাই বকুল পুরে এলো। আমি তখন দশম শ্রেণীতে পড়ি। সে পড়ে ইন্টার ফাস্ট ইয়ার। আমি চলে গেলাম তাদের ওখানে থাকতে। পনেরো-ষোল বছর বয়স। এটা না-কি মেয়েদের জন্য খুব ভয়াবহ সময়। আমি তখন সেই সময় পার করছিলাম। ফুপুর বাড়ি যৌথ পরিবার হলেও আলাদা ঘর। ফুপুরা থাকেন একেবারে মাথায়। সন্ধ্যার দিকে এলো বৃষ্টি। আমি রাফসান ভাইয়ের ঘরে। ফুপু রান্না-বান্নায় ব্যস্ত। শুরু হলো গল্প। আমি এক অসাধারণ শ্রোতা৷ নিজে বেশি কথা বলি এবং অন্যদের প্রেমের কাহিনী শুনতে সব সময় ভীষণ আগ্রহী। আর শুনেছি প্রথম প্রেমে জগতের সকল প্রেমিকই না-কি নিজের প্রেমের গল্প, প্রেমিকার গল্প করে বন্ধুদের নির্যাতন করতে একপায়ে খাড়া থাকে। সারাক্ষণ তাদের ঠোঁটে ফুটে প্রেমিকার প্রশংসা। ব্যাটে-বলে মিলে যাওয়ায় সেদিন এক অসাধারণ গল্পের আসর জমে উঠেছিল।
রাফসান ভাই তাদের প্রেমের কিছুই আমার কাছে আড়াল রাখতে পারেনি। গল্প করায় একটা মজা আছে। এই মজায় তার ভেতর থেকে সবই বের হয়ে গিয়েছিল। একপর্যায়ে প্রেমিকার সঙ্গে একই বিছানার অন্তরঙ্গ ছবি দেখালো রাফসান ভাই৷ ছবিতে কেবল তাদের দু’জনের মুখ দেখা যাচ্ছে না।
রাফসান ভাই কোলে বালিশ নিয়ে পালঙ্কে বসেছে। আমিও দেয়ালে হেলান দিয়ে বসা। তার চোখমুখ ঝলমল করছে। যেন স্বর্গ সুখ হাতের মুঠোয় পেয়ে গেছে৷ প্রথমে জিজ্ঞেস করলাম, ‘তোমাদের প্রেম কীভাবে হলো? আর এতো তাড়াতাড়ি অন্তরঙ্গ ছবি, মেলামেশা। কীভাবে সম্ভব?’

রাফসান ভাই মোবাইলে একটি ফেইসবুক আইডি দেখালো, নাম সুলতানা জান্নাত।
তারপর বলল,
– ‘সুলতানা জান্নাত আমার ফেইসবুক ফ্রেন্ড ছিল। মেয়েটি অনেক ফ্রী মাইন্ডের। আমাদের ইনবক্সে কথা হতো। একদিন জিজ্ঞেস করলাম সিঙ্গেল কি-না। ‘

হাসির ইমুজি দিয়ে বলল,
— ‘কয়েকটা প্রেমিক আছে৷’

বুঝতেই পারছিস কিরকম খোলা মনের মেয়ে।
আমি বললাম,
— ‘এদিকে আমার একটাও প্রেমিকা নাই স্যাড লাইফ।’

সে রসিকাতা করে স্যাড ইমুজি দিয়ে বলল,
— ‘আহারে।’

আমি রিপ্লাইয়ে বললাম,
–‘তোমার কোনো বান্ধবী সিঙ্গেল থাকলে দাওনা পরিচয় করিয়ে।’

সে হাসির ইমুজি দিয়ে বলল,
— ‘তোমরা ছেলেরা কিন্তু অনেক ছ্যাঁচড়া আছো। নতুন মোবাইল বের হওয়ার পর ছেলেরা ভুলবাল নাম্বার তুলে মেয়েদের সন্ধানে কল দিতো, হা-হা-হা।’

আমি আর কি বলবো। তবুও বললাম, –‘আরে এতো কথা না বলে কারও সাথে দাও না সেটিং করিয়ে।’

সে আশ্বাস দিলো,
–‘আচ্ছা আমার এক বান্ধবী আছে প্রেম করেনি এখনও। তবে তোমার সিনিয়র হবে। কাল ওর বাসায় গিয়ে থাকবো। তাকে বলে দেখবো। সে চাইলে তুমি ওর সঙ্গে বন্ধুত্ব করতে পারবে।’

আমি মহাখুশি হয়ে বললাম,
— ‘ধন্যবাদ বাডি।’
……চলবে..
লেখা: MD Jobrul Islam
—–চলবে—
লেখা: MD Jobrul Islam

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here