দ্বাবিংশতি পর্ব -১১

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_১১

২১.🐙

এক সপ্তাহ পর,

রাই ফাইজার চিন্তায় অনেকটাই শুকিয়ে গেছে এই কয়েকদিনে।সে কয়েকবার নানা জিনিস প্ল্যান করলেও কিছুতেই কি করবে বুঝে উঠতে পারছেনা।এখন অবশ্য সেক্রেটারি বসু সাহেব এখন অনেকটাই সুস্থ আছেন।হাটাচলা করতে পারেন।

এদিকে,ফাইজার খবর নেওয়ার উদ্দেশ্যে রাইয়ের পরিবার অনেকবার সায়ানের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলেও কোনো লাভ হয়নি।আর এসব বিষয়ে কোনো আইনিপদক্ষেপ নিলেই সেটা যে দেশে বো*মার মত ছড়িয়ে পড়বে এটা ভালো মতই জানে রাই।আর কোনো পদক্ষেপ না নিলে তার বোনের ক্ষতি হবে এটাও সে জানে।তাই রাইয়ের এমন কিছু করতে হবে যাতে সাপ ও মরে লাঠিও না ভাঙে।

এই কয়েকদিনে ফাইজারও অনেক কিছুর সম্মুখীন হতে হয়েছে।রান্না-বান্না তো শুধু ছুতো মাত্র!পান থেকে চুন খসলেই এখন ফাইজার বড় আম্মু তাকে ইচ্ছামতো কথা শোনায়।কথার পিঠে জবাব দিলেই সায়ানকে বলে তাকে সায়ানের হাতে মার খাওয়ায়।

সায়ানও আগের মতো নেই।সেও এখন ফাইজাকে কষ্ট দিয়ে পাশবিক শান্তি পায়।ফাইজার চিৎকার গুলো খান বাড়িতেই সীমাবদ্ধ থাকে।ফাইজা ছোটবেলা থেকেই বড্ড চুপচাপ প্রকৃতির।সে বড্ড আদুরী ধরনের।যা এই বাসায় আসার পর থেকে ফাইজা ভুলেই গেছে প্রায়।এখন তো তার তিনবেলা খাবারের আগে পরে শুধুই তার কপালে মাইরই থাকে।

২২🐙

সায়ান যদি ফাইজাকে মেরে তার ক্ষোভ প্রকাশ করা পর্যন্ত সীমাবদ্ধ থাকত তাও একটা কথা ছিলো।কিন্তু এখন সে রাতে ফাইজার পশুর ন্যায় সাথে শারীরিক সম্পর্কও করে থাকে।ফাইজা বাধা দিতে চাইলেও তাতে কোনো লাভই হয়না।

নয়দিনের মাথায় সেদিন বিকালে রাই নিজের বাড়ির রুফটপে দাঁড়িয়ে আছে।হঠাৎ রাইয়ের ফোনে একটা কল আসলো,

“রাই?”

“শুদ্ধ?”

“কেমন আছ?”

“ভালোই,তুমি?”

“ভালো।”

রাই আর কোনো কথাই খুজে পাচ্ছেনা।সেদিন হাসপাতাল থেকে আসার পরই রাই শুদ্ধকে বলেছিলো যে সে কিছুদিনের মাথায়ই তাকে ডিভোর্স পেপার পাঠিয়ে দিবে।কথাটা শুনে শুদ্ধ বিমোহিত দর্শকের মত রাইকে একবার দেখে রেগে বাসায় চলে গেছিলো।

রাই আর কথা খুজে না পাওয়ায় কল কেটে দিলো।সে এসবে শুদ্ধকে জড়াতে চায় না আর।এসব তার পারিবারিক ব্যাপার!এখানে যত শুদ্ধ ইনভলভ হবে তত ওর ওপর দিয়ে ঝড় ঝাপটা যাওয়ার সম্ভাবনা থাকবেই।

রাই রুফটপে দাঁড়িয়ে ভাবছিলো যে আসলে কি এমন হয়েছে যার জন্য সায়ান এমন করছে?কেই বা এসব তাকে বললো!যে রাইয়ের বাবা তার বাবাকে মেরেছে!
রাই ল’ এর স্টুডেন্ট যার জন্য সে ইজিলি নিজের মধ্যে একটা ইমাজিনারি প্লট সাজিয়ে সব দেখতে লাগলো।
এন্ড এট দ্যাট পয়েন্ট রাই বুঝেও গেল আসলে কে সকল নষ্টের গোড়া।রাই নিজের ল্যাপটপ আর ফোন নিয়ে কাজ শুরু করে দিলো।তার ধারণা ঠিক হলে শুধু আজকের দিনটাই!এরপরই রাই যাবে তার বোনকে ওই নরক থেকে নিয়ে আসতে।

২৩🐙

সকাল থেকেই আমেনা বেগম ফাইজার সাথে অশালীন ভাষা ব্যবহার করছে।কথায় আছে না!

“শান্ত মানুষদের খেপাতে নেই!”

সেটাই হলো।রাইয়ের সম্পূর্ণ বিপরীত চরিত্রের অধিকারী ফাইজাও আজ মুখ খুললো।

“খেতে ইচ্ছা করলে খাবেন!নাহলে নিজে রেধে নিন।”
খাবার টেবিলে ফাইজার এই কথা শুনে সায়ানসহ আমিনা বেগমের গলায় খাবার আটকে গেল।আফজাল সাহেব আড়চোখে একবার ফাইজাকে দেখলেন।

“না,মেয়েটা প্রতিবাদও করতে জানে।কিন্তু এখন কোনো লাভ নেই এসব করে!”

সায়ান কোনো মতে খাবার গলাধঃকরণ করে হাত ধোয়ার জন্য উঠে পড়লো।ফাইজা অপেক্ষা করছে সায়ানের শক্ত হাতের থাপ্পড়ের জন্য।কিন্তু আজ সায়ান ফাইজাকে থাপ্পড় দিলোনা।বরংচ সে ফাইজার চুলের মুঠি ধরে তাকে নিচতলার সিড়ির সাথে কয়েকবার আঘাত করতেই ফাইজার কপালের সামনের অনেকটা জায়গায়ই কেটে রক্ত পড়তে লাগলো।

দুভার্গ্যবশতঃ তখনি খান বাড়িতে প্রবেশ ঘটলো রাইয়ের।রাই ফাইজার এমন অবস্থা দেখে ছুটে গিয়ে সায়ানকে একটা থাপ্পড় দিলো।সায়ান রাইয়ের থাপ্পড়ে ছিটকে গিয়ে দূরে পড়লো।এরপর একে একে খান বাড়িতে প্রবেশ করলো রিজভী এবং বসু সাহেব।সায়ান এসে রাইকে চড় মারার আগেই রিজভী সাহেব তার হাত মুচড়ে ভেঙে দেওয়ার অবস্থা করলেন।

“আহ,আহ!”

“ফাইজা,তুই ঠিক আছিস?”

ফাইজা মাথা নাড়িয়ে বললো,”হুম,তুমি এখানে?”

“আমি না এলে কি জীন-পরি আসবে?”

” উহু!”

“হাসপাতালে চল আগে।”

“হুম,চলো।”

ফাইজা রাইয়ের কাধে হাত দিয়ে দাড়ানোর চেষ্টা করতেই তার মাথা ঘুরিয়ে গেল।রাই ফাইজাকে পড়তে দিলোনা।সে বসু সাহেবকে ইশারা করতেই সেও ফাইজার হাত ধরলো।রিজভী সাহেব সায়ানকে দু গালে সজোরে চড় দিয়ে বের হওয়ার সময় সেখানে সায়ানদের এরিয়ার পুলিশ টিম হানা দিলো।

২৪.🐙

“এখানে কি হয়েছে?” (এসপি আজাদ)

“কই কিছু না তো,স্যার।”(রাই)

“আপনি কে?আর ইনি কে?আমি এদের বাড়ির বউকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”

এসপি আজাদের এমন সঠিক সময়ের এন্ট্রিতে আফজাল সাহেবের মুখে হাসি ফুটে উঠলো।সে জানে তার বন্ধু তাকে নিরাশ করবেনা।

কিন্তু রাইও তো কম কিছুনা।

“আমি ওর বড় বোন।আমি আমার অসুস্থ বোনকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি কোন সমস্যা?”

রাইয়ের এমন ঠাস ঠাস কথায় বিরক্ত হলো এসপি আজাদ।সে মুখটাকে কুচকিয়ে বলে উঠলো,

“মাইয়া মানুষের এত তেজ ভালো না,ম্যাডাম।”

“আমারো তো একই কথা মেয়ে মানুষের তো এত তেজ থাকা ভালো না!তাহলে আজাদ সাহেব (নেমপ্লেটে নাম দেখে) আপনার ক্ষেত্রে বিষয়টা আলাদা কেন?”

রাইয়ের কথার অর্থ দেরিতে বুঝতে পেরে গর্জে উঠলেন এসপি আজাদ।ততক্ষণে রাই ফাইজাকে নিয়ে হাসপাতালে উদ্দেশ্য খান বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেছে।

ফাইজার মাথায় ব্যান্ডেজ করে ক্ষতের জায়গাগুলো দেখে ডাক্তার দুটো মলম আর কিছু ওষুধের নাম লিখে দিলো।এরপর তাকে বাসায় গিয়ে রেস্ট নিতে বললো।রিজভী সাহেব আর বসু সাহেব বাহিরে খাবার কিনতে যাওয়ায় রাই আর ফাইজা ডাক্তারের কেবিন থেকে বের হয়ে করিডোরে একাই হাটছিলো।

“ফাইজা?”(হঠাৎ করে)

“হুম,বলো রাই।”

“তোমাকে কিছু জিনিস বলার ছিলো।”

“হুম বলো।”

রাই জানে ফাইজার এমন অবস্থায় ফাইজা সায়ানের বাবার কাহিনি জানলে আঁতকে উঠবে। তাই সে আগেই রাইয়ের হাত শক্ত করে ধরে বসলো।এরপর ধীরে ধীরে সে ফাইজাকে সব খুলে বললো।ফাইজা একদিকে ফিজিক্যালি শেষ আরেক দিকে এসব শুনে সে ভীষণ ঘাবড়ে গেল।সে বিস্মিত হয়ে রাইকে জিজ্ঞেস করলো,

“রাই,তোমার কি মনে হয় বাবা করেছে এমন?আমার কেন যেন মনে হয় বাবা এমনটা কখনোই করবেনা সামির আঙ্কেলের সাথে।আর এই জন্যই কি সায়ান ভাইয়া আমার সাথে এমন করছিলো!”

“হুম!আমিও জানি আব্বু এসব করেনি।আর এটাও জানি কে এসব করিয়েছে।আমার শুধু একটু সময় লাগবে এরপরই সব ঠিক হয়ে যাবে।”

“হুম।আচ্ছা,এসব বাদ দাও!আমার তোমার ওপর বিশ্বাস আছে।আমি জানি তুমি সব ভেবেই করবে।এখন বলো,প্রফেসর শুদ্ধ?ওনার কি অবস্থা?”

“ভালোই মনে হয়।আমাদের ডিভোর্স হয়ে যাবে কিছুদিনের মধ্যেই হয়তো।তাই,উনার নাম আমার সামনে না নিলেই ভালো হয়।”

“কিহ!!কেন?প্রফেসর তো তোমাকে অনেক ভালোবাসে।তুমি হয়তো জানো না তুমি অসুস্থ থাকার সময়..”

“আমি জানি,ফাইজা।তাই আমি ওনাকে নিয়ে রিস্ক নিতে চাই না।আই থিংক তুমি বুঝবে।আর আপাতত তুমি ওই বাসায় যেও না।পরিস্থিতি ঠান্ডা হলে যেও।”

“আমি আর এমনিতেও যাচ্ছিনা তোমাকে ছেড়ে।আর কোন মুখেই বা যাবো,রাই!যেখানে সায়ানের বদ্ধ ধারণা আব্বু ওর বাবাকে খু/ন করিয়েছে!”

“ফাইজা জানিস,সেদিন তুই চলে যাওয়ার পর রাতে আমার ঘরে আম্মু এসেছিলো।”

“হুম তো?”

“আম্মুর হাতে একটা ছবি ছিলো।সেখানে আম্মু আর আফজাল খান বেশ হেসেই ছবি তুলেছিলেন।আম্মু আর আফজাল সাহেবের মধ্যে এট দ্যাট টাইম কিছু একটা ছিলো।কিন্তু পরে আম্মুর বাবার সাথে হূট করেই বিয়ে হয়ে যায়।”

আম্মু এসব বলার আগে আমিও কোনো কূল-কিনারা পাচ্ছিলাম না।আসলে আমিও অবাক হয়েছিলাম এই ভেবে যে বাবাই এসব না করলে কে করবে এসব!একমাত্র বাবার আর সামির আঙ্কেলের সম্পত্তিই একত্রে ছিলো।তাই আমি প্রথমে ভেবেছিলাম হয়তো বাবা আঙ্কেলকে মে/রে এসব কিছু একাই আত্মসাৎ করতে চেয়েছিলো।কিন্তু আম্মুর সাথে আফজাল সাহেবের ছবি দেখে আমার কাছে সবই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছিলো যে কাহিনি তো এখানে অন্য কিছুই।”

আমার যতটুকু মনে হয় সেদিন সায়ানের আব্বু এমন কিছু আন্দাজ করতে পেরেছিলো যার কারণবশতই তাকে প্রাণ হারাতে হয়েছিলো।আর বাকি সব কিছু তো আমরা আফজাল খানের মুখ থেকেই জানবো যে সেদিন ওখানে কি হয়েছিলো আসলে।রাই আর ফাইজার এসব কথার মাঝেই হুট করে রাইয়ের ফোন বেজে উঠলো।রাই ফোনে দেখল একটা আননোন নাম্বার!কে হতে পারে এসব ভেবে কল রিসিভ করেই ভড়কে গেল সে।

চলবে,

(অনেকের অনেক অভিযোগ এই গল্পকে ঘিরে।কারো এমন চাই তো কারো ওমন!এভাবে তো গল্প লেখা যায় না।আর আমি চাইলেও সবার মন যুগিয়ে লিখতে পারবোনা।ওটা তাহলে আসলে আমার কম তাদের লেখা বেশি হবে!তাই ভালো না লাগলে ইগ্নোর করুন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here