দ্বাবিংশতি পর্ব -১০

#দ্বাবিংশতি
#লিখনে_মৃত্তিকা_চৌধুরী
#পর্ব_১০

১৮.🐙

ফাইজা পুরো রাস্তা সায়ানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।সে জানে সায়ান এমন ধরনের ছেলে না।তাহলে কি জন্য সায়ান রাইয়ের সাথে এমন করলো?কেনই বা তাদের পরিবার সবার মাথায় বন্দুক ধরলো?ফাইজা এসব সায়ানের মুখ থেকেই শোনার অপেক্ষায় বসে আছে সায়ানের রুমে।সায়ানের রুমে বাসর ঘরের কোনো শোভাই নেই।বরং রুমটা সম্পূর্ণ নিরবতা আর নিস্তব্ধতায় ঘেরা।

সায়ান বেশ খানিকক্ষণ পর ঘরে ঢুকে দরজা ভিরিয়ে দিলো।ফাইজা বসেই আছে মাথায় ঘোমটা দিয়ে।সায়ান ফাইজাকে উদ্দেশ্য করে বললো,

“এভাবে বসে থেকে লাভ নেই!তোকে আমি বিয়ে করে এই বাড়ির বউ বানিয়ে রাখার জন্য আনিনি!”

ফাইজা সায়ানের মুখে তুই তুকারি শুনে বেশ অবাক হয়ে গেল।সায়ান তো তুই-তুকারি করার মত ছেলে নয়।তবে আজকে কেন?আর কি এমন হয়েছে যে তার ফাইজাকে জোর করে বিয়ে করতে হবে?

ফাইজা তো এমনিতেই সায়ান বলতে পাগল!

ফাইজা ঘোমটা সড়াচ্ছে না বলে সায়ান ফাইজার দিকে ঘৃণার দৃষ্টিতে তাকিয়ে তার মাথায় থাকা ঘোমটা সরিয়ে দিলো।সায়ান জানে ফাইজার বাবার কাজে ফাইজার কোনো দোষ নেই।কিন্তু ফাইজাই সে তার দাবার সেই গুটি যা দিয়ে সে তার বাবার সম্পত্তিগুলোকে আবার নিজের করে নিতে পারবে।

ফাইজা সায়ানের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে রইলো। কারণ সে সায়ানের এমন দৃষ্টির কারণ জানে না।সায়ান ফাইজাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উঠে যেতে নিতেই ফাইজা তার হাত ধরে তাকে খাটে বসালো।

১৯.🐙

“হাত ছাড়,ফাইজা।”

“কি হয়েছে,সায়ান ভাইয়া?”

“কি হবে?কিছুই না।আমাকে ধরিস না!এর ফল ভালো হবেনা।কাকি আসবে একটু পর!উনি যা বলবে তাই করিস।”বলেই ওয়াশরুমে চলে গেল সায়ান।

ফাইজা তাড়াহুড়োর কারণে নিজের জামাকাপড় কিছুই আনতে পারেনি তার বাসা থেকে।শুধু হাতড়ে ফোনটাই পেয়েছে সে হাতের কাছে।তাই নিয়ে সায়ান ভাইয়ার সাথে চলে এসেছে সে।ফাইজা জানে তার সায়ান ভাইয়া তাকে অনেক ভালোবাসে।

সায়ান ওয়াশরুমে দেখে ফাইজা করার মত কিছুই খুজে পেল না।তাই সে নিজের ফোন থেকে রাইকে কল দিলো।

রাই ফাইজার কল দেখে তাড়াতাড়ি কল রিসিভ করলো।

“হ্যালো,রাই?”

“ফাইজা?তুই ঠিক আছিস?”

“এভাবে জিজ্ঞেস করলে যেন সায়ান ভাইয়ারা আমাকে ঝাড়ুপেটা করবে?”

“এর থেকেও বেশি কিছু করতে পারে,ফাইজা।আমার কথা শোন তুই…”

রাইয়ের কথা শেষ হওয়ার আগেই ফাইজার হাত থেকে মোবাইলটা হাতে নিয়ে ছুড়ে মাটিতে ফেলে ভেঙে ফেললো সায়ানের কাকি।

“বড় আম্মু?”

“কে তোর বড় আম্মু?কাকে ফোন দিয়েছিলি তুই?” (চোখ রাঙিয়ে)

“কি হয়েছে তোমার?আর আমার ফোন!রাইকে কল দিয়েছিলাম।”(আজব দৃষ্টিতে)

“চুপ,কর।তুই আর তোর বোনই যত নষ্টের মূল।যা গিয়ে রান্না ঘরের কাজ কর।”(রেগে)

ফাইজা তার বড় আম্মুর এসব আজগুবি কথা শুনে বলদের মত দাঁড়িয়ে রইলো।তার দৃষ্টি মাটির দিকে নিবদ্ধ।এদিকে সায়ান ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে এসে এই দৃশ্য দেখেও পাত্তা দিলোনা।যার ফলস্বরূপ ঘর ভর্তি মেহমানের সামনে লেহেঙ্গা পরিহিত নতুন বউ রান্নাঘরে ঢুকে গেল রান্না করার উদ্দেশ্য নিয়ে।ফাইজার পেছনে থাকা আফজাল সাহেবের বউয়ের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সবাই।রান্নাঘর থেকে ফিরে এসে আমেনা বেগমের কোনো পরোয়া না করেই শান্তিতে গালগল্প করতে লাগলো উপস্থিত মেহমানদের সাথে।

২০.🐙

রান্নাঘরে ফাইজাকে এভাবে দেখে চমকে উঠলো মেঘলার মা (রাধুনি)।

“আপামনি,আপনি এইখানে?”

“হুম,রান্না করতে পাঠালো বড় আম্মু।” (হাসির চেষ্টা করে)

“কি?ওহ আইচ্ছা বুঝতে পারছি।আইচ্ছা,আপনের কিছু করা লাগবোনা।আমি যেগুলার নাম কমু আপনে ওইগুলা আমার হাতে দিয়েন তাইলে হইবো।”

মেঘলার মায়ের কথা শুনে শান্তির নিঃশ্বাস নিলো ফাইজা।নিজের বাসায় কখনো পানি ভরে না খাওয়া ফাইজা এত বড় বাড়ির রান্না কিভাবে সামলাবে?তাও মাঝে মাঝে রান্নাঘরে যাওয়ায় কিছু রান্নার সরঞ্জামাদির নাম জানে সে।মেঘলার মায়ের কথা মতন সব এগিয়ে তাকে সাহায্য করলো ফাইজা।

রান্না শেষ হতে হতে রাত দশটা বেজে গেল ফাইজার।খাবার টেবিলে বসে কয়েকজন মেহমান আমেনা বেগমকে বলেই ফেললো মুখ ফসকে,

“বড় লোকের মেয়ে আপা!এখনি এত কঠিন হলে পরে তো সমস্যা হবে।”

“আরেহ,কোনো সমস্যাই নেই,আপা!আপনারা খান তো।”

আমেনা বেগমের কথায় সবাই আবার খাবারে মনোযোগ দিলো।ফাইজার এত খাবার দেখে বেশ ক্ষুধা পেল।সায়ানকেও বড় আম্মু খাইয়ে দিলো।কিন্তু তাকে একবারও ডাকলোনা।

উল্টো তাকে বললো,

“খাইয়ে খাইয়ে গাধা পালার সময় নেই আমার।কাজ করলেই এবাড়িতে খাবার মিলবে।নাহলে খাওয়ার আশা বাদ দিয়ে দিতে বলবি,সায়ান।বুঝলি?”

সায়ান আমেনা বেগমের কথায় তার দিকে অবাক ভাবে তাকালো।অন্তত খাবার নিয়ে কষ্ট দিতে চায় না সে ফাইজাকে।কারণ ফাইজা বেশ বাচ্চা ধরনের।সে খাবার ছাড়া একদমই থাকতে পারেনা।

খাবার শেষে সায়ান উঠে যেতেই ফাইজা সায়ানের রুমে চলে গেল।সে জানে আজকে তাকে খেতে দেওয়া হবেনা।তাই শুধু শুধু আশা রেখে লাভ নেই।আমেনা বেগমও সায়ানের খাবার পরে ডাইনিং রুমের লাইট অফ করে নিজের রুমে চলে গেলেন।

আমেনা বেগমের বিয়ের এতবছরেও কোনো বাচ্চা হয়নি।তাই সে সায়ানকেই নিজের বাচ্চার মত মানুষ করেছে।আফজাল সাহেবও সায়ানকে বেশ ভালোবাসে।নিজের ছেলের মতই মনে করে।সায়ানের ক্ষেত্রেও একই।

সায়ান নিজের রুমে ঢুকে ফাইজাকে না দেখে বেশ অবাক হলো।ফাইজা বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে।রুমে সায়ানের উপস্থিতি টের পেতেই সে সুড়সুড় করে রুমে এসে সায়ানের পাশে দাড়ালো।

আদুরে ভাবে সায়ানকে বললো,

“সায়ান ভাইয়া!আমার ক্ষুধা লেগেছে।”

সায়ান ভ্রু কুচকে ফাইজাকে বললো,

“তো গিয়ে খেয়ে নে!নিচে খাবার আছে।”

“বড় আম্মু বকবে না?এমনিতেও বিয়ের দিন নাকি মেয়েদের কিছু খেতে হয় না?”

“এমন কিছুইনা!ক্ষুধা পেলে খেয়ে নে।”

“আসলে,তুমি যদি একটু এনে দিতে?আমি এখনো এই বাড়িটা ভালো মত চিনিনা তো তাই।”

“পারবোনা।”বলেই খাটে শুয়ে পড়লো সায়ান।

ফাইজা বেশ অবাক হলো সায়ানের ব্যবহারে।আজ এই সায়ানকে সে চিনতে পারছেনা।আসলেই কি এটাই তার সায়ান ভাইয়া?তার তো মনে হয় না।

(এটা আসলে আমার প্রথম ধারাবাহিক গল্প।এর আগে এভাবে আমি কখনো গল্প লিখিনি।তাই অগোছালো,খাপছাড়া লাগতে পারে।তাই আগেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।এরপরও আপনাদের পড়তে ইচ্ছা করলে আমি বাকি পর্বগুলো দিবো।যদি বেশিই খারাপ লাগে তাহলে কমেন্ট করে জানানোর অনুরোধ রইলো।)

চলবে,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here