দ্বিতীয় বসন্ত ❤️ পর্ব -২৪

#দ্বিতীয়_বসন্ত-২৪
Zannatul Eva

রুহি মাহিরের হাতটা ধরে একটান দিয়ে সোজা নিজের ঘরে নিয়ে এলো। বলল, আপনি আলমারির পেছনে লুকিয়ে থাকুন আমি বাইরের দিকটা সামলে আসছি।

আরে রুহি….এই রুহি……

রুহি বাইরে গিয়ে আজমল খানকে বলল, কী হয়েছে চাচ্চু? কোথায় চোর?

আরে এই মাত্র দেখলাম একটা চোর চাদর মুড়ি দিয়ে আমাদের বাড়ির ভেতরে ঢুকে গেল। শীগগিরে ওকে ধরতে হবে সর তুই। চশমাটা নেই বলে চোরটার মুখটা দেখতে পারলাম না স্পষ্ট করে।

রুহি ভয়ে ভয়ে বলল, কোথায় চোর!! আমি তো মাত্রই ঘর থেকে বেরিয়ে এলাম। কাউকে তো দেখতে পেলাম না। মনে হয় তুমি ভুল দেখেছো।

আজমল খান বলল, না না এতো বড় ভুল হতেই পারে না। এতোদিন পুকুর থেকে মাছ চুরি করেছে আর আজ আমার জন্য মাছ চুরি করতে না পেরে সোজা ঘরের ভেতরে ঢুকে পরেছে চুরি করার জন্য৷ আজ এই চোরাকে হাতে নাতে ধরবো আমি। সর তো তুই আমাকে দেখতে দে।

রুহি প্রচন্ড ভয় পেয়ে আমজল খানের পেছন পেছন আসতে লাগলো। ওদিকে মাহির আলমারির পেছনে লুকিয়ে মশার কামড় খাচ্ছে।

কী মশা রে বাবা! নিজের শ্বশুরবাড়ি, নিজেরই বউয়ের রুমে চোরের মতো লুকিয়ে আছি। কী সুন্দর কপাল আমার! রুহিটা যে কখন আসবে!!

বাহির থেকে চেচামেচির আওয়াজ শুনতে পেলো মাহির।

বেরিয়ে আয় ছেচোর কোথাকার। কী ভেবেছিস ঘরের ভেতরে ঢুকে সব লুটপাট করে নিয়ে যাবি! আজমল খানের চোখে ফাঁকি দেয় এমন কোনো চোর এখনও জন্মায় নি।

রুহি মুখ টিপে হেসে বলল, তাহলে এতোদিন মাছ চুরি করলো কোন চোর চাচ্চু?

আজমল খান আমতা আমতা করে বলল, সে তো আমি টের পাইনি বলে। আজ যখন টের পেয়েছি তখন ওকে হাতে নাতে ধরে ধোলাই দেবো। বেরিয়ে আয় চোরের বাচ্চা।

মাহির মনে মনে বলছে, বাহ কী কপাল আমার! নিজের শ্বশুরবাড়ি চোরের তকমা গায়ে লাগিয়ে বসে আছি। আমি নাকি চোর? ভাবা যায়! রুহি যে কখন আসবে! এতো ভয় পাওয়ার কী আছে আমি বুঝতে পারছি না। ইচ্ছে তো করছে এক্ষুনি বেরিয়ে গিয়ে ব্যাটার মুখটা বন্ধ করে দিয়ে রুহিকে নিয়ে বাড়ি চলে যেতে। কিন্তু রুহি তো যাবে না। পৃথিবীর সব বউ গুলোই কী এমন হয়! বরদের নাকানিচুবানি না খাওয়ালে তাদের পেটের ভাত হজম হয় না।

আজমল খানের চিৎকার চেঁচামেচি শুনে বাড়ির সবার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আশরাফ খান চোখ ডলতে ডলতে নিজের ঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। বললেন, কী হয়েছে? এতো চেঁচামেচি কিসের? চোর কোথায়?

চোর আমাদের বাড়ির ভেতরেই আছে ভাইজান। এখনি সবার রুমে রুমে সার্চ করতে হবে। কোথাও একটা ঘাপটি মেরে বসে আছে ব্যাটা। চলেন ভাইজান আপনাদের ঘরটাই আগে সার্চ করি।

প্রত্যেকের ঘরে তল্লাশি চালিয়েও চোরের সন্ধান মিললো না। বাকি রইলো রুহির ঘরটা। আজমল খান বলল, এই রুহি তোর ঘরটা তো দেখা হয় নি। চল তো একবার ভালো করে খুঁজে দেখি।

রুহির বুকের ভেতরে ধুকপুক করতে শুরু করলো। আমতা আমতা করে বলল, আরে আমার ঘরে চোর আসবে কো থেকে! তুমি যখন চোর চোর বলে চিল্লাচ্ছিলে তখনই তো আমি আমার রুম থেকে বেরোলাম। কাউকেই তো দেখতে পেলাম না। আমার মনে হচ্ছে তুমি চশমা পরতে ভুলে গেছো তাই কী দেখতে কী দেখেছো।

সায়েদা বেগম রাগি স্বরে বললেন, রাইত বিরাইতে এইসব কী হইতাছে আজমল!! শান্তিতে একটু ঘুমাইতেও দিবি না! যা গিয়া শুইয়া পর। ঘরের মধ্যে কোনো চোর নাই৷ তোর মাথাডা গেছে। যা ঘুমাইতে যা।

বলেই সবাই যার যার রুমে চলে গেল।

আজমল খান একদম বোকা বনে গেল। মাথা চুলকাতে চুলকাতে বিড়বিড় করে বলল, আমার দেখায় এতো ভুল হতে পারে! স্পষ্ট দেখলাম একটা চোর……

রুহি হাই তুলতে তুলতে বলল, ভীষণ ঘুম পাচ্ছে আমি গেলাম।

আজমল খান বলল, যা তুই গিয়ে ঘুমা। কিন্তু আমি আজকে দরজার সামনেই বসে পাহারা দেবো। চোরটা
বেরোনোর সময় একদম চেপে ধরবো। আজ আমি ঘুমাচ্ছি না।

রুহি যেতে যেতে হঠাৎ থেমে গেল আজমল খানের কথা শুনে।

এই রে! ছোট চাচ্চু দরজার সামনে থাকবে! তাহলে মাহিরকে বের করবো কী করে!!

কী রে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?

ভাবলাম তুমি এতোক্ষন বাইরে মাছ পাহারা দিয়েছো এখন তো তোমার ঘুমের দরকার। তুমি যাও আমি আছি। চোর দেখলেই একদম চেপে ধরবো।

মাহির রুহির কথা শুনে কপাল চাপড়াতে চাপড়াতে বলল, সেই সৌভাগ্য কী আমার হবে কোনোদিন! কে জানে?

আজমল খান বলল, বাচ্চা মেয়ে একটা তুই পারবি না চোরের সাথে। তুই গিয়ে ঘুমা। আমি চোর ব্যাটাকে পেলেই ধরবো। তাছাড়াও আমাকে মাছ পাহারা দিতে হবে। পুকুর থেকে মাছ কমে যাচ্ছে দিনদিন।

রুহি নিজের ঘরে চলে গেল এবং কপালে উঠে যাওয়ার মতো দৃশ্য দেখলো।

এ কী! আপনি খাটের উপর শুয়ে আছেন কেনো?

তাহলে কী করতাম! আলমারির পেছনে এতো মশা। মনে হচ্ছিলো একেকটা মশা আমাকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। মশার কামড়ে রীতিমতো হাত পা জ্বলছে।

তা বলে আপনি আলমারির পেছন থেকে বেরিয়ে আসবেন! যদি কেউ চলে আসতো? তখন! ছোট চাচ্চু তো চলেই আসছিলো। আমি কোনো রকম মিথ্যে বলে আটকে দিয়েছি। কিন্তু মনে হচ্ছে আজ রাতে আপনি বেরোতে পারবেন না।

মাহির অবাক না হয়ে স্বাভাবিকভাবেই বলল, ও আচ্ছা ঠিক আছে।

রুহি মনে মনে বলল, শখ কত! একটু অবাক ও হলো না। মনে হচ্ছে এখানে থাকার খুব শখ।

একটু পরে মাহির বলল, তুমি যেনো তখন আমায় কী বললে?

বললাম আজকে সারারাত বোধহয় এখানেই থাকতে হবে আপনাকে। কারন বাইরে চাচ্চু পাহারা দিচ্ছে। সকাল না হতে বেরোতে পারবেন না।

মাহির মনে মনে প্রচন্ড খুশি হলো। কিন্তু এমন ভান ধরলো যেনো তাকে এক্ষুনি যেতে হবে।

আমাকে বাড়িতে ফিরতে হবে। তুমি ডায়রিটা দাও আমি কোনো ভাবে চলে যাবো।

রুহি বলল, পাগল নাকি আপনি! আমি এখন আপনাকে যেতে দেই আর ছোট চাচ্চু আপনাকে দেখে নিক। তারপর এটা নিয়ে বাড়িতে আরেক অশান্তি বাঁধুক। না না আর কোনো ঝামেলা বাঁধাতে পারবো না আমি। সকাল পর্যন্ত আপনাকে এখানেই থাকতে হবে।

মাহির অন্যদিকে ফিরে একটু হেসে নিলো। মনে মনে বলল, জয় ছোট চাচ্চুর জয়। ইশশ আগের দিনও যদি এমন হতো!

রুহি মাহিরের দিকে তাকাতেই মাহির হাসি চেপে মুখ ভার করে বলল, তো সারারাত কী করবো আমরা?

কী করবো মানে? রাতে মানুষ কী করে? ঘুমোবো।

মাহির বলল, এতো সুন্দর একটা রাত ঘুমিয়ে নষ্ট করবো?

রুহি বলল, তো? আর রাতের মধ্যে সুন্দরের কী দেখলেন আপনি হঠাৎ? রোজই তো রাত হয়।

কিন্তু রোজ রাতে তো তুমি পাশে থাকো না।

চলবে……….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here