দ্বিতীয় বাসর পর্ব ৪৯+৫০

দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৪৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

“বাবু কোন বাবু?’মিতুর জিজ্ঞাসা।
“বুঝতে পারছেন না কোন বাবু?’
“জ্বী না।’
“তোমাকে তো বুদ্ধিমতি বলেই জানতাম।’
মিতুর শরীরের পশম জ্বলে গেলো কথাটা শুনে,কোনরকম হজম করে বল্ল।
“আপনি কে বলুন তো?আমাকে তুমি করে বলছেন কেন?’
“কারন তুমি আমার চেয়ে ছোট।যাই হোক বাবু কোথায় জানতে পারি।’
“উনি এখনো ফেরেন নি।’
“তাই বুঝি?বাবুটা এমনই,ঘরে সুন্দরী বউ তারপরও এত রাত করে বাসায় ফেরে..আসলে…’
“কি আসলে?’মিতুর জিজ্ঞাসা।
“কিছুনা,তুমি বুঝবেনা,যাক তুমি নিশ্চুই মিতালী রহমান?’
“হ্যা।’ পুরো নামও জানে দেখছি,বিড়বিড় করে বলে মিতু।
“আচ্ছা ছাড়ছি।ও একটা কথা…’
“বলুন?’
“ওকে এখন মোবাইলে ফোন করলে পাওয়া যাবে নাকি অনেক ব্যস্ত?’
মিতু কিছুক্ষণ ভেবে ফের উত্তর করে,
“সেটা আপনিই ফোন করে দেখুন,নাকি এত রাতে আপনার নাম্বার দেখে বাবু ফোনই ধরছেন না?’
“মানে?’
“মানে আপনি তো নিজেকে অনেক স্মার্ট ভাবেন,তাহলে মানে আবার বুঝতে পারছেন না কেন?’
“হাহাঃ হাঃ তুমি দেখছি রেগে গেছো?’
“রেগে যাওয়াটাই কি স্বাভাবিক নয়?হই আমি আপনার চেয়ে ছোট,বাট প্রথম পরিচয়ে তুমি করে বলছেন,নাম জানতে চাইলাম সেটাও বলেননি।
“আমি পাপিয়া। ‘
“ও আচ্ছা।’
“আর কিছু জানতে চাও?’
“না আর কি জানতে চাইবো?’
“আমি বাবুর কি হই,কেন ফোন করেছি এসব?’
“জ্বি না।রাত অনেক হয়েছে ছাড়ছি।’
মিতুর প্রচণ্ড বিরক্ত লাগতে লাগলো।মনে মনে ভাবলো,এই সেই পাপিয়া?কিন্তু কথা শুনে মনে হচ্ছিল মাতাল।নইলে এত রাতে এভাবে কেউ ফোন করে?সারা শরীর কাঁপছে মিতুর ক্ষোভে।
বন্ধনকে প্রায় সাথে সাথে ফোন দেয় মিতালী।মোবাইলটা বিজি পায়,ফের রেগে যায় মিতু।
“বাবুর ফোন বিজি কেন?তবে কি ঐ পাপিয়ার সাথে কথা বলছে?ওফ্হ…’
তার একটু পরে বন্ধন কলব্যাক করে,
“হ্যালো মিতু ,আই এম সো সরি সোনা,তোমাকে সময় দিতে পারছিনা।’
“ফোন বিজি ছিল কেন বলেন? কার সাথে কথা বলছিলেন এতক্ষণ?’
“আরে বাবা,আমার স্যারের সাথে।’
“স্যারের সাথে নাকি পাপিয়ার সাথে?’ক্ষিপ্ত মিতু।
“কি বলছো মিতু?পাপিয়া এল কোত্থেকে?’
“সে আমি জানি না,সে এত রাতে বাসায় ফোন করে আপনাকে চেয়েছে।কে এই পাপিয়া বলেন?কি সম্পর্ক ওর সাথে আপনার?ওর একটা ছবিতে তার পেছনে জান লেখা,ও আপনার জান?’
মিতু প্রায় এক নিঃশ্বাসে ফোঁপাতে ফোঁপাতে বল্ল এসব।
“ছিছিঃ মিতালী এসব তুমি কি বলছো?এই চিনেছো আমাকে?’
“তাহলে ওর ছবির পেছনে জান লেখা কেন?’
“আহা বাবু ওইটা তো ও লিখেছে শোন ও আমাকে অনেক আগে থেকে পছন্দ করতো,ওর কথায় কানে নিও না ওতো সাইকো একটা।’
“তাই হবে,কিসব উলটোপালটা কথা বলছিল।’
“কি বলছিল?’
“আমি কেন জানতে চাইছিনা,তার সাথে আপনার কি সম্পর্ক?সুন্দরী বউ থাকতে আপনি রাতে বাসায় ফেরেন এসব।’
“কি এসব বলেছে?কেয়াকেও বলতো এসব,ওর মাথাটা আসলে গেছে,দাঁড়াও ব্যবস্থা করছি।’
“আপনি আবার কি করবেন?’
“ওর নাম্বার ব্লক করবো।’
“তাতে কি বাসায় তো ঠিকই করবে।’
“ওলরেডি ডান।’
“কি?’
“ওর নাম্বার ব্লক করে দিয়েছি,নাও হেপি?আর শোন ল্যানড ফোনে ও কল দিলে সোজা রেখে দিবে।’
“আচ্ছা বাবু একটা কথা জিজ্ঞেস করি?’
“বলো?’
“আপনি যখন তাকে এত ইগনর করেন,তাহলে সে তো এত আপনাকে ডিষ্টার্ব করে কেন?’
“বিকজ সি ডেম লাভ মি।’
“কি বল্লেন?’
মিতু প্রায় কাঁদো কাঁদো হয়ে যায়।
“আরে বাবু কাঁদছো কেন?আমি শুধু তোমার ওকে অনলি ফর ইউ। শোন এসব উন্মাদের জন্যে একদম টেনশন করবে না।’
মিতু খেয়াল করলো তার ফোনে অন্য নাম্বার থেকে অনেকগুলো কল আসছে।বন্ধনের সাথে কথা বলার ফাঁকে ফোনটা রিসিভ করেনি।
ফের বন্ধন বলে,
“শোন আমাদের ছোটবাবু আসছে তাকে নিয়ে ভাবো,কোরআন তেলাওয়াত করো,সুন্দর সুন্দর চিন্তাভাবনা করো,আর খেয়ে লক্ষীমেয়ের মতো আমার সোনামনিকে নিয়ে ঘুমাও।আর ওষুধ খেতে একদম ভুলবেনা।’
বন্ধনের শেষের কথা গুলো খুব ভালো লাগে মিতুর সবসময় মিতুকে খাওয়া আর ওষুধ খাওয়ার কথা বলতে কখনোই ভোলে না।
“আচ্ছা কবে আসবেন আপনি?’
“আসবো সোনা,আমার এক্সামটা মিশন রিলেটেড তাই এখানে থাকতে হচ্ছে।আমার কি কম কষ্ট হচ্ছে বলো,তোমাদের ছাড়া থাকতে?’
“কিন্তু আপনার বুক না হলে আমার যে ঘুম আসে না।’
“এমন করে না সোনামনি আমি আসবো খুব তাড়াতাড়ি ইন শা আল্লাহ।নামাজ পড়েছো? ‘
“না এখন পড়বো।’
“ঠিক আছে তাড়াতাড়ি সব শেষ করে ঘুমাও এন্ড নো মোর টেনশন।’
“হুম।’
ফোনটা রেখে দেয় মিতালী।
রাতের নামাজটা আদায় করে খেতে বসে এবার।
“বাবাই,নানু খেয়েছে?’বুয়ার কাছ থেকে জানতে চায় মিতু।
“ও আফামনি খাইছে।আফামনি একখান কথা জিগাই?’
“বলো?’
“আপনের নুপূরটা পাইসেন?নীবিড় ভাইজানে ফেরত দিসে আপনেরে?’
কথাটা শুনে বিষম খায় মিতু।
“তুমি জানলে কি করে বুয়া?’
“আফা মনে রাগ লইয়েন না,ছোট ভাইয়ের রুমে ঝাড়ু দিতে গিয়া দেইখ্যা ফালাইসিলাম।আমার দিকে এমন চোখ ঘুরাইছিল আমি ভয়ে কিসু কই নাই।আমি গরীব মানুষ কিসু কইতে গেলে ফানদে পড়তাম,হেই ডরে….’
“তাহলে এখন কেন বলছো?’মিতুর কৌতুহল।
“নুপূরটার আপনের অনেক পসন্দের আমি মনে মনে চাইতাম আল্লাহ যেন আপনের জিনিস ফিরায় দেয়।’
“হুম আল্লাহ তাহলে তোমার দোয়া শুনেছেন।’
কথা শেষ না হতেই আবার মিতালীর ফোনে বেজে ওঠে সেই আন নোন নাম্বার।
“কে এত রাতে পাপিয়া নাতো?রাবিশ একটা….'(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

আবারও ফোনটা বেজে ওঠে মিতালীর।যখন খাচ্ছিল,তার ল্যান্ডফোনটাও বেজে উঠেছিল। মিতু ভেবেছিল পাপিয়া কিনা।
ফের ওর মোবাইলফোনটা বেজে উঠতেই মিতু রিসিভ করে।
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।’
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আপু আমি আঁখি।’
“আঁখি,মুহিনের বন্ধু?হ্যা বলো এত রাতে?’
“আপু কিভাবে যে বলবো?’
“কি হয়েছে আঁখি?গলা কাঁপছে কেন?’
“আপু বিপদ হয়ে গেছে?’
“কি বলছো?কার বিপদ?’মিতুর আশংকা।
“আপু মুহিনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’
“কি বল্লে?কেন?কি করেছে মুহিন?’
“ও কিছু করেনি আপু,ওর এক বন্ধু আছে,ধাপ্পাবাজি,চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।ওর নাম বেলাল।’
“কিন্তু মুহিনকে কেন পুলিশে ধরেছে?’
“বেলাল, মুহিনের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রায়ই টাকা ধার নিতো।ফেরত দিবে বলে দিতো না।মুহিন বেশ কয়েকবার মাফও করে দিয়েছে।শেষবারে ও কোচিং এ পড়িয়ে বাড়ী ফিরছিল,কোচিং থেকে যখন টাকা পেল আবারও বেলাল তাতে বাহানা করে বসে।এতে মুহিনের আপত্তি।’
“তারপর?’
“তারপর পাগলা কুকুরের মতো হয়ে যায় বেলাল।’
“কিন্তু ও তো মুহিনের বড়, ও কি করে ওর বন্ধু হবে?’
“আপু,সে কথাই বলছি।বেলাল মহল্লার বড় ভাই বলে সবাই জানে,মুহিন তো একইসাথে ভার্সিটি কোচিং করছে আর জুনিয়দের পড়ায়,সে ব্যবস্থায় বেলাল তাকে সাহায্য করেছিল ছাত্র পড়াতে।’
“সেই সুযোগে আমার ভাইয়ের সব টাকা নিয়ে যেত তাই ঐ শয়তানটা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।’
“হ্যা আপু শুধু তাই নয়, আপনি আসার দু,তিন দিন আগে আমার সামনেই বেলাল ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।ওর গলায় ছুরি পর্যন্ত ধরেছিল, এই বলে আমি তোকে দেখে নেব,মাটিতে পুঁতে দিব, যা খুশি তাই বলেছিল।আমাকে ও মুহিনকে নিয়েও আজেবাজে কথা বলেছিল।’
মিতু সোফায় ঠা্স করে বসে পড়ে।ওর ও এখন হাত পা কাঁপছে থরথর করে।
“কি বলছো আঁখি এতকিছু হয়ে গেছে আর আমাকে জানাও নি।’
“আপু বিশ্বাস করেন,আমি বলতে চেয়েছিলাম,মুহিন আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল,ও বলতো,আপু প্রেগন্যান্ট ভুলেও এসব বলবে না ও সহ্য করতে পারবে না।’
মিতু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে,
“আমার ভাইটা এত টেনশনে আছে আর ও আমাকেই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি?’
“আপু প্লিজ কাঁদবেন না,শরীর খারাপ করবে।’
“শরীরের যা হবার হবে,কিন্তু ও জেলে ঢুকলো কি করে?’
“বেলাল ভাই আর তার চেলা বাহিনী এক মহিলার মোবাইল ছিনতাই করে মুহিনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
“সেটা কিভাবে?’
“মুহিন কোচিং এ ছিল,কে বা কারা ঐ মহিলার মোবাইল ফোন মুহিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ঐ মহিলা আবার পুলিশের আইজির ওয়াইফ,পুলিশ তো সিম কার্ড ট্রেক করে আজ মুহিনকে গ্রেফতার করে কাল নাকি কোর্টে চালান করে দিবে।’মিতু খেয়াল করলো আঁখিও কাঁদছে।
“ওর কোন বন্ধুরা ওকে সাহায্য করতে আসেনি।’
“এসেছিল আপু,বন্ধুদের সাথেও বেলাল ভাই আর তার চেলাদের হাতাহাতি হয়েছে,কোচিং এ আজ ভাংচুর হয়েছে।’
“কোন থানায় আছে আমার ভাই বলোতো?আমি এখনই যাবো।’
“শ্যামলী থানায় আপু আপনি এত রাতে এখন যেয়ে কিছু করতে পারবেন না,দুলাভাইকে বরং পাঠিয়ে দিন।’
এবার সত্যি প্রবল কেঁদে ওঠে মিতালী।
“তোমার দুলাভাই এখন বাসায় নেই,সে মিশনে।’
“আপু আর একটা কথা….।’আমতা আমতা করছে আঁখি।
“কি হয়েছে বলো?’
“খালু… ‘
“কি? কি হয়েছে আবার আব্বুর?’
“খালুজানও হঠাৎ স্ট্রোক করেছেন,আমি, মুহিনের বন্ধুরা মিলে ঢাকা ম্যাডিকেলে নিয়ে গেছি।.’
মিতু প্রায় চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“কি বল্লে আব্বু স্ট্রোক করেছে।’
মিতুর বুকের ভেতরটা অনবরত লাফাতে থাকে।রাত প্রায় একটার মতো বেজে গিয়েছে।দু,দুটো বিপদ একইসাথে,বন্ধনও কাছে নেই।সেতারা দেশের বাইরে থাকে।আর নীবিড় তো চলেই গেছে।
“হ্যালো আপু….।’
“কখন নিয়ে গেছো হাসপাতালে?আরও আগে জানাওনি কেন?’
“আপু আমি,মুহিনের বন্ধুরা সবাই ফোন দিচ্ছিলাম আপনার মোবাইলে,ল্যান্ডফোনে…’
“আব্বুর কি অবস্থা আঁখি,কে আছে উনার কাছে?আমি যে কি করবো?’
“আপনাদের বাসায় থাকেন যে,রশিদ চাচা আছে,মুহিনের বন্ধুরাও ছিল…’
“ওকে আমি আসছি….।’
মিতু ফোনটা রেখে দিতেই চাচী ফোন করেন,
“হ্যালো মা মিতু?’
“চাচী আমার যে বিপদ হয়ে গেল,আপনাদের জামাইও কাছে নেই,আমি যে এখন কি করবো?’
“আহা মিতু শান্ত হও মা,তোমার চাচাজান আছে,আমার ছেলেও আছে তোমার আব্বুর কাছে।’
“কি করে শান্ত হবো চাচী,আব্বুর এই অবস্থা,মুহিন থানায় কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
“মিতু শোন মা,এভাবে ভেঙে পড়ো না,আল্লাহকে ডাকো,আর দেখি কানন বলছিল ওর কোন বন্ধুর বাবা নাকি এমপি।ও ওখানে যেতে পারে।’
“প্লিজ চাচী,ভাইয়াকে কিছু করতে বলেন,আমি আগে হাসপাতালে আসি তাহলে,তারপর মুহিনের কাছে যাবো।’
“না মিতু একদম না এই শরীরে এত রাত্রে তুমি কিভাবে দৌড়াদুড়ি করবে,উপরে আল্লাহ আছেন,আর আমরা আছি না?এত দুশ্চিন্তা করিস না মা,বাচ্চাটার ক্ষতি হবে।আর শোন এখন ঘুমিয়ে পড়ো।কাল আমি আসবো,তুমি আমার সাথে যাবে।যাও ঘুমিয়ে পড়ো।’
মাথা ঘুরছে মিতুর,মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙে পড়েছে।এত বিপদ একসাথে কি করে মোকাবিলা করবে সে।কাঁপা কাঁপা হাতে বন্ধনকে ফোন করে কেঁদেই ফেলে মিতু।
“কই আপনি আমার অনেক বিপদ।’
“আহা বাবু এভাবে ভেঙে পড়োনা আমি সব শুনেছি,বড় চাচা ফোন করেছিলেন।’
“আমার ভাইকে বের করেন বাবু,ও কখনো জেলে যায়নি,জেলের চৌদ্দ শিকায় না জানি কি টর্চার করবে মুহিনকে….’
মিতু প্রায় পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
“আহা সোনা এমন করোনা,বাচ্চাটার ক্ষতি হয়ে যাবে তো?শোনো আমি কি মরে গেছি,মুহিন কি আমার ভাই নয়?’
“আপনি কিভাবে কি করবেন?আমি একটু আমার আব্বু, ভাইকে দেখে আসতে চাই,আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই বাবু…’
“সবাই আছে,আর তোমার স্বামী আছে ওকে,আর খবরদার মিতু এই শরীরে এত রাত করে কোথাও যাবে না।আমি কালই আসছি…..’
মিতু কথাটা শুনে স্বস্তি পায় এবার।
বিছানায় কোনরকম শুয়ে পড়ে।মাথা ঘুরছিল ওর বুয়া ওকে ধরে শুইয়ে দিয়েছিল।
পেটে হাত দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।ঘুম কি আর আসে?অপেক্ষা করে কখন ভোর হবে….
ভোরে হকচকিয়ে উঠে যায় মিতালী।ওযু করে নামাজের প্রার্থনায় আল্লাহর দরবারে ক্রন্দনরত হয় সে….
“হে আল্লাহ আমার তো মা নাই,আজ আমাকে তুমি মা হবার সৌভাগ্য দিয়েছো,তুমি তো রাহমানুর রাহীম,গর্ভবতী মায়ের দোয়া তো তুমি কবুল কর, আজ আমার পরিবারের বড় বিপদ,তুমি রক্ষা করো দয়াময়….’
কিছুক্ষন পায়চারী করে মিতু,কিছুক্ষন আবার শোয়।
খুব ক্ষুধাও লাগে তার।ফ্রিজের কাছে যায় কিছু খাবার আছে কিনা দেখতে।রানুর সাথে দেখা হয় তার অনেকদিন পর।মেজাজটা ফের বিগড়ে যায় মিতুর।
“কিছু লাগবো ভাবীজান।’
“না আমি নিয়ে নিচ্ছি।’
কোনরকম পাউরুটিটাতে জেলী মেখে খায় অসহায়ভাবে ভাবে,”আজ আম্মু থাকলে আমাকে এসময় যত্ন করে খাওয়াতো,আপুটাও কাছে নেই।আব্বুর কি অবস্থা কে জানে?মুহিনটাকে ওরা মারেনি তো।’
মনটা ভীষন অস্থির করে তার,ফের ঘড়ীর দিকে তাকায়।
সকাল প্রায় সাড়ে নটার মতো বেজে যায়।মিতুর ঘরের সদর দরজার কলিংবেলটা আচমকা বেজে ওঠে।
প্রায় দৌড়ে যায় মিতু।
“বাবু বোধহয়, ওকে দেখলেই বুকে সাহস পাবো এই তো…’
কিন্তু দরজা খুলতেই আরো বেশী অবাক হয় সে, পুরোপুরি অনাকাক্ষিতই কেউ,চমকে যায় পুরোই, মিতালী সে আগন্তুককে দেখে….(চলবে)দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৫০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা

আবারও ফোনটা বেজে ওঠে মিতালীর।যখন খাচ্ছিল,তার ল্যান্ডফোনটাও বেজে উঠেছিল। মিতু ভেবেছিল পাপিয়া কিনা।
ফের ওর মোবাইলফোনটা বেজে উঠতেই মিতু রিসিভ করে।
“হ্যালো,আসসালামু আলাইকুম।’
“ওয়ালাইকুম আসসালাম,আপু আমি আঁখি।’
“আঁখি,মুহিনের বন্ধু?হ্যা বলো এত রাতে?’
“আপু কিভাবে যে বলবো?’
“কি হয়েছে আঁখি?গলা কাঁপছে কেন?’
“আপু বিপদ হয়ে গেছে?’
“কি বলছো?কার বিপদ?’মিতুর আশংকা।
“আপু মুহিনকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে।’
“কি বল্লে?কেন?কি করেছে মুহিন?’
“ও কিছু করেনি আপু,ওর এক বন্ধু আছে,ধাপ্পাবাজি,চাঁদাবাজি করে বেড়ায়।ওর নাম বেলাল।’
“কিন্তু মুহিনকে কেন পুলিশে ধরেছে?’
“বেলাল, মুহিনের সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রায়ই টাকা ধার নিতো।ফেরত দিবে বলে দিতো না।মুহিন বেশ কয়েকবার মাফও করে দিয়েছে।শেষবারে ও কোচিং এ পড়িয়ে বাড়ী ফিরছিল,কোচিং থেকে যখন টাকা পেল আবারও বেলাল তাতে বাহানা করে বসে।এতে মুহিনের আপত্তি।’
“তারপর?’
“তারপর পাগলা কুকুরের মতো হয়ে যায় বেলাল।’
“কিন্তু ও তো মুহিনের বড়, ও কি করে ওর বন্ধু হবে?’
“আপু,সে কথাই বলছি।বেলাল মহল্লার বড় ভাই বলে সবাই জানে,মুহিন তো একইসাথে ভার্সিটি কোচিং করছে আর জুনিয়দের পড়ায়,সে ব্যবস্থায় বেলাল তাকে সাহায্য করেছিল ছাত্র পড়াতে।’
“সেই সুযোগে আমার ভাইয়ের সব টাকা নিয়ে যেত তাই ঐ শয়তানটা ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।’
“হ্যা আপু শুধু তাই নয়, আপনি আসার দু,তিন দিন আগে আমার সামনেই বেলাল ভাইয়ের সাথে কথা কাটাকাটি হয়।ওর গলায় ছুরি পর্যন্ত ধরেছিল, এই বলে আমি তোকে দেখে নেব,মাটিতে পুঁতে দিব, যা খুশি তাই বলেছিল।আমাকে ও মুহিনকে নিয়েও আজেবাজে কথা বলেছিল।’
মিতু সোফায় ঠা্স করে বসে পড়ে।ওর ও এখন হাত পা কাঁপছে থরথর করে।
“কি বলছো আঁখি এতকিছু হয়ে গেছে আর আমাকে জানাও নি।’
“আপু বিশ্বাস করেন,আমি বলতে চেয়েছিলাম,মুহিন আমাকে সাবধান করে দিয়েছিল,ও বলতো,আপু প্রেগন্যান্ট ভুলেও এসব বলবে না ও সহ্য করতে পারবে না।’
মিতু কাঁদো কাঁদো কন্ঠে,
“আমার ভাইটা এত টেনশনে আছে আর ও আমাকেই জানানোর প্রয়োজন মনে করেনি?’
“আপু প্লিজ কাঁদবেন না,শরীর খারাপ করবে।’
“শরীরের যা হবার হবে,কিন্তু ও জেলে ঢুকলো কি করে?’
“বেলাল ভাই আর তার চেলা বাহিনী এক মহিলার মোবাইল ছিনতাই করে মুহিনকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।’
“সেটা কিভাবে?’
“মুহিন কোচিং এ ছিল,কে বা কারা ঐ মহিলার মোবাইল ফোন মুহিনের ব্যাগে ঢুকিয়ে দিয়েছিল,ঐ মহিলা আবার পুলিশের আইজির ওয়াইফ,পুলিশ তো সিম কার্ড ট্রেক করে আজ মুহিনকে গ্রেফতার করে কাল নাকি কোর্টে চালান করে দিবে।’মিতু খেয়াল করলো আঁখিও কাঁদছে।
“ওর কোন বন্ধুরা ওকে সাহায্য করতে আসেনি।’
“এসেছিল আপু,বন্ধুদের সাথেও বেলাল ভাই আর তার চেলাদের হাতাহাতি হয়েছে,কোচিং এ আজ ভাংচুর হয়েছে।’
“কোন থানায় আছে আমার ভাই বলোতো?আমি এখনই যাবো।’
“শ্যামলী থানায় আপু আপনি এত রাতে এখন যেয়ে কিছু করতে পারবেন না,দুলাভাইকে বরং পাঠিয়ে দিন।’
এবার সত্যি প্রবল কেঁদে ওঠে মিতালী।
“তোমার দুলাভাই এখন বাসায় নেই,সে মিশনে।’
“আপু আর একটা কথা….।’আমতা আমতা করছে আঁখি।
“কি হয়েছে বলো?’
“খালু… ‘
“কি? কি হয়েছে আবার আব্বুর?’
“খালুজানও হঠাৎ স্ট্রোক করেছেন,আমি, মুহিনের বন্ধুরা মিলে ঢাকা ম্যাডিকেলে নিয়ে গেছি।.’
মিতু প্রায় চিৎকার দিয়ে ওঠে,
“কি বল্লে আব্বু স্ট্রোক করেছে।’
মিতুর বুকের ভেতরটা অনবরত লাফাতে থাকে।রাত প্রায় একটার মতো বেজে গিয়েছে।দু,দুটো বিপদ একইসাথে,বন্ধনও কাছে নেই।সেতারা দেশের বাইরে থাকে।আর নীবিড় তো চলেই গেছে।
“হ্যালো আপু….।’
“কখন নিয়ে গেছো হাসপাতালে?আরও আগে জানাওনি কেন?’
“আপু আমি,মুহিনের বন্ধুরা সবাই ফোন দিচ্ছিলাম আপনার মোবাইলে,ল্যান্ডফোনে…’
“আব্বুর কি অবস্থা আঁখি,কে আছে উনার কাছে?আমি যে কি করবো?’
“আপনাদের বাসায় থাকেন যে,রশিদ চাচা আছে,মুহিনের বন্ধুরাও ছিল…’
“ওকে আমি আসছি….।’
মিতু ফোনটা রেখে দিতেই চাচী ফোন করেন,
“হ্যালো মা মিতু?’
“চাচী আমার যে বিপদ হয়ে গেল,আপনাদের জামাইও কাছে নেই,আমি যে এখন কি করবো?’
“আহা মিতু শান্ত হও মা,তোমার চাচাজান আছে,আমার ছেলেও আছে তোমার আব্বুর কাছে।’
“কি করে শান্ত হবো চাচী,আব্বুর এই অবস্থা,মুহিন থানায় কি করবো আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।’
“মিতু শোন মা,এভাবে ভেঙে পড়ো না,আল্লাহকে ডাকো,আর দেখি কানন বলছিল ওর কোন বন্ধুর বাবা নাকি এমপি।ও ওখানে যেতে পারে।’
“প্লিজ চাচী,ভাইয়াকে কিছু করতে বলেন,আমি আগে হাসপাতালে আসি তাহলে,তারপর মুহিনের কাছে যাবো।’
“না মিতু একদম না এই শরীরে এত রাত্রে তুমি কিভাবে দৌড়াদুড়ি করবে,উপরে আল্লাহ আছেন,আর আমরা আছি না?এত দুশ্চিন্তা করিস না মা,বাচ্চাটার ক্ষতি হবে।আর শোন এখন ঘুমিয়ে পড়ো।কাল আমি আসবো,তুমি আমার সাথে যাবে।যাও ঘুমিয়ে পড়ো।’
মাথা ঘুরছে মিতুর,মনে হচ্ছে আকাশ ভেঙে পড়েছে।এত বিপদ একসাথে কি করে মোকাবিলা করবে সে।কাঁপা কাঁপা হাতে বন্ধনকে ফোন করে কেঁদেই ফেলে মিতু।
“কই আপনি আমার অনেক বিপদ।’
“আহা বাবু এভাবে ভেঙে পড়োনা আমি সব শুনেছি,বড় চাচা ফোন করেছিলেন।’
“আমার ভাইকে বের করেন বাবু,ও কখনো জেলে যায়নি,জেলের চৌদ্দ শিকায় না জানি কি টর্চার করবে মুহিনকে….’
মিতু প্রায় পাগলের মতো কাঁদতে লাগলো।
“আহা সোনা এমন করোনা,বাচ্চাটার ক্ষতি হয়ে যাবে তো?শোনো আমি কি মরে গেছি,মুহিন কি আমার ভাই নয়?’
“আপনি কিভাবে কি করবেন?আমি একটু আমার আব্বু, ভাইকে দেখে আসতে চাই,আমি ছাড়া ওদের কেউ নেই বাবু…’
“সবাই আছে,আর তোমার স্বামী আছে ওকে,আর খবরদার মিতু এই শরীরে এত রাত করে কোথাও যাবে না।আমি কালই আসছি…..’
মিতু কথাটা শুনে স্বস্তি পায় এবার।
বিছানায় কোনরকম শুয়ে পড়ে।মাথা ঘুরছিল ওর বুয়া ওকে ধরে শুইয়ে দিয়েছিল।
পেটে হাত দিয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করে।ঘুম কি আর আসে?অপেক্ষা করে কখন ভোর হবে….
ভোরে হকচকিয়ে উঠে যায় মিতালী।ওযু করে নামাজের প্রার্থনায় আল্লাহর দরবারে ক্রন্দনরত হয় সে….
“হে আল্লাহ আমার তো মা নাই,আজ আমাকে তুমি মা হবার সৌভাগ্য দিয়েছো,তুমি তো রাহমানুর রাহীম,গর্ভবতী মায়ের দোয়া তো তুমি কবুল কর, আজ আমার পরিবারের বড় বিপদ,তুমি রক্ষা করো দয়াময়….’
কিছুক্ষন পায়চারী করে মিতু,কিছুক্ষন আবার শোয়।
খুব ক্ষুধাও লাগে তার।ফ্রিজের কাছে যায় কিছু খাবার আছে কিনা দেখতে।রানুর সাথে দেখা হয় তার অনেকদিন পর।মেজাজটা ফের বিগড়ে যায় মিতুর।
“কিছু লাগবো ভাবীজান।’
“না আমি নিয়ে নিচ্ছি।’
কোনরকম পাউরুটিটাতে জেলী মেখে খায় অসহায়ভাবে ভাবে,”আজ আম্মু থাকলে আমাকে এসময় যত্ন করে খাওয়াতো,আপুটাও কাছে নেই।আব্বুর কি অবস্থা কে জানে?মুহিনটাকে ওরা মারেনি তো।’
মনটা ভীষন অস্থির করে তার,ফের ঘড়ীর দিকে তাকায়।
সকাল প্রায় সাড়ে নটার মতো বেজে যায়।মিতুর ঘরের সদর দরজার কলিংবেলটা আচমকা বেজে ওঠে।
প্রায় দৌড়ে যায় মিতু।
“বাবু বোধহয়, ওকে দেখলেই বুকে সাহস পাবো এই তো…’
কিন্তু দরজা খুলতেই আরো বেশী অবাক হয় সে, পুরোপুরি অনাকাক্ষিতই কেউ,চমকে যায় পুরোই, মিতালী সে আগন্তুককে দেখে….(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here